সূরাঃ আল-বাকারা | Al-Baqara | سورة البقرة - আয়াতঃ ১৯৫
২:১৯৫ وَ اَنۡفِقُوۡا فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ وَ لَا تُلۡقُوۡا بِاَیۡدِیۡکُمۡ اِلَی التَّهۡلُکَۃِ ۚۖۛ وَ اَحۡسِنُوۡا ۚۛ اِنَّ اللّٰهَ یُحِبُّ الۡمُحۡسِنِیۡنَ ﴿۱۹۵﴾
و انفقوا فی سبیل الله و لا تلقوا بایدیکم الی التهلکۃ ۚۖۛ و احسنوا ۚۛ ان الله یحب المحسنین ۱۹۵

আর তোমরা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় কর এবং নিজ হাতে নিজদেরকে ধ্বংসে নিক্ষেপ করো না। আর সুকর্ম কর। নিশ্চয় আল্লাহ সুকর্মশীলদেরকে ভালবাসেন। আল-বায়ান

তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় কর এবং স্বহস্তে নিজেদেরকে ধ্বংসে নিক্ষেপ করো না এবং কল্যাণকর কাজ করে যাও, নিশ্চয়ই আল্লাহ কল্যাণকারীদেরকে ভালবাসেন। তাইসিরুল

এবং তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় কর এবং স্বীয় হস্ত ধ্বংসের দিকে প্রসারিত করনা এবং কল্যাণ সাধন করতে থাকো, নিশ্চয়ই আল্লাহ কল্যাণ সাধনকারীদের ভালবাসেন। মুজিবুর রহমান

And spend in the way of Allah and do not throw [yourselves] with your [own] hands into destruction [by refraining]. And do good; indeed, Allah loves the doers of good. Sahih International

১৯৫. আর তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় করা(১) এবং স্বহস্তে নিজেদেরকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিও না(২)। আর তোমরা ইহসান কর(৩), নিশ্চয় আল্লাহ মুহসীনদের ভালবাসেন।

(১) এই আয়াত থেকে ফোকাহশাস্ত্রবিদ আলেমগণ এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, মুসলিমদের উপর ফরয যাকাত ব্যতীত আরও এমনকিছু দায়-দায়িত্ব ও ব্যয় খাত রয়েছে, যেগুলো ফরয। কিন্তু সেগুলো স্থায়ী কোন খাত নয় কিংবা সেগুলোর জন্য কোন নির্ধারিত নেসাব বা পরিমাণ নেই। বরং যখন যতটুকু প্রয়োজন তখন ততটুকুই খরচ করা প্রত্যেক মুসলিমের উপর ফরয। আর যদি প্রয়োজন না হয়, তবে কিছুই ফরয নয়। জিহাদে অর্থ ব্যয়ও এই পর্যায়ভুক্ত। [মা'আরিফুল কুরআন]

(২) এ আয়াতে স্বেচ্ছায় নিজেকে ধ্বংসের মুখে নিক্ষেপ করতে নিষেধ করা হয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো যে, ‘ধ্বংসের মুখে নিক্ষেপ করা’ বলতে এক্ষেত্রে কি বোঝানো হয়েছে? এ প্রসঙ্গে মুফাসসিরগণের অভিমত বিভিন্ন প্রকার। ১. আবু আইয়ুব আনসারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, এই আয়াত আমাদের সম্পর্কেই নাযিল হয়েছে। আমরা এর ব্যাখ্যা উত্তমরূপেই জানি। কথা হলো এই যে, আল্লাহ্ তা'আলা ইসলামকে যখন বিজয়ী ও সুপ্রতিষ্ঠিত করলেন, তখন আমাদের মধ্যে আলোচনা হলো যে, এখন আর জিহাদ কি প্রয়োজন? এখন আমরা আপন গৃহে অবস্থান করে বিষয়-সম্পত্তির দেখা-শোনা করি। এ প্রসঙ্গেই এ আয়াতটি নাযিল হল। [আবু দাউদ: ২৫১২, তিরমিযী: ২৯৭২] এতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে, ‘ধ্বংসের দ্বারা এখানে জিহাদ পরিত্যাগ করাকেই বোঝানো হয়েছে”।

এর দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে যে, জিহাদ পরিত্যাগ করা মুসলিমদের জন্য ধ্বংসেরই কারণ। সে জন্যই আবু আইয়ুব আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু সারা জীবনই জিহাদ করে গেছেন। শেষ পর্যন্ত ইস্তাম্বুলে শহীদ হয়ে সেখানেই সমাহিত হয়েছেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু, হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু আনহু, কাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু এবং মুজাহিদ ও যাহহাক রাহিমাহুমুল্লাহ প্রমূখ তাফসীর শাস্ত্রের ইমামগণের কাছ থেকেও এরূপই বর্ণিত হয়েছে। ২. বারা ইবনে আযেব ও নুমান ইবনে বশীর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেছেন, পাপের কারণে আল্লাহর রহমত ও মাগফেরাত থেকে নিরাশ হওয়াও নিজ হাতে নিজেকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়ার নামান্তর। [মাজমাউয যাওয়ায়িদ: ৬/৩১৭] এ জন্যই মাগফেরাত সম্পর্কে নিরাশ হওয়া হারাম। ইমাম জাসসাস রাহিমাহুল্লাহ-এর ভাষ্য অনুযায়ী উপরোক্ত দুটি অর্থই এ আয়াত থেকে গ্রহণ করা যেতে পারে।

(৩) এ বাক্যে প্রত্যেক কাজই সুন্দর সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করার জন্য উৎসাহ দান করা হয়েছে। সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে কাজ করাকে কুরআন ইহসান শব্দের দ্বারা প্রকাশ করেছেন। ইহসান দুরকমঃ (১) ইবাদাতে ইহসান ও (২) দৈনন্দিন কাজকর্ম, পারিবারিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে ইহসান। ইবাদাতের ইহসান সম্পর্কে স্বয়ং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘হাদীসে জিবরীল’-এ ব্যাখ্যা দিয়েছেন যে, এমনভাবে ইবাদাত কর, যেন তুমি আল্লাহকে দেখছ। আর যদি সে পর্যায় পর্যন্ত পৌছতে না পার, তবে এ বিশ্বাস রাখা অপরিহার্য যে, স্বয়ং আল্লাহ তোমাকে দেখছেন। [মুসলিমঃ ৮] এছাড়া দৈনন্দিন কাজকর্ম এবং পারিবারিক ও সামাজিক ব্যাপারে ইহসানের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে মুআয ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত মুসনাদে আহমাদের এক হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘তোমরা নিজেদের জন্য যা কিছু পছন্দ কর, অন্যান্য লোকদের জন্যেও তা পছন্দ করো। আর যা তোমরা নিজেদের জন্য পছন্দ কর না, অন্যের জন্যেও তা পছন্দ করবে না’। [মুসনাদে আহমাদঃ ৫/২৪৭]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৯৫) তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় কর এবং (ব্যয় না করে) নিজেরা নিজেদের সর্বনাশ করো না।[1] আর তোমরা সৎকর্ম কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ সৎকর্মশীলদেরকে ভালবাসেন।

[1] কারো নিকট এর অর্থ হল, (আল্লাহর পথে) ব্যয় না করা। কেউ বলেছেন, জিহাদ না করা। আবার কেউ বলেছেন, অব্যাহতভাবে পাপ করা। আর এ সবগুলোই ধ্বংস ডেকে আনে। যদি জিহাদ ত্যাগ কর অথবা জিহাদে সম্পদ ব্যয় করা থেকে বিরত থাকো, তাহলে শত্রুরা শক্তিশালী হবে এবং তোমরা হবে দুর্বল, ফলে ধ্বংস হতে হবে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান