১৩ সূরাঃ আর-রাদ | Ar-Ra'd | سورة الرعد - আয়াতঃ ৩৯
১৩:৩৯ یَمۡحُوا اللّٰهُ مَا یَشَآءُ وَ یُثۡبِتُ ۚۖ وَ عِنۡدَهٗۤ اُمُّ الۡکِتٰبِ ﴿۳۹﴾
یمحوا الله ما یشاء و یثبت ۚۖ و عندهٗ ام الکتب ۳۹

আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন মিটিয়ে দেন এবং যা ইচ্ছা করেন স্থির রাখেন, আর তাঁর কাছেই রয়েছে মূল কিতাব। আল-বায়ান

আল্লাহ যা ইচ্ছে করেন নিশ্চিহ্ন করে দেন আর যা ইচ্ছে প্রতিষ্ঠিত রাখেন, উম্মুল কিতাব তাঁর নিকটই রক্ষিত। তাইসিরুল

আল্লাহর যা ইচ্ছা তা নিশ্চিহ্ন করেন এবং যা ইচ্ছা তা প্রতিষ্ঠিত রাখেন এবং তাঁরই নিকট আছে কিতাবের মূল। মুজিবুর রহমান

Allah eliminates what He wills or confirms, and with Him is the Mother of the Book. Sahih International

৩৯. আল্লাহ যা ইচ্ছে তা মিটিয়ে দেন এবং যা ইচ্ছে তা প্রতিষ্ঠিত রাখেন(১) এবং তারই কাছে আছে উম্মুল কিতাব।(২)

(১) অর্থাৎ আল্লাহ্ তা'আলা যা ইচ্ছে তা পরিবর্তন করে অন্য কিছু নাযিল করেন, আবার যা ইচ্ছে তা ঠিক রাখেন। এটা সম্পূর্ণই তার ইচ্ছাধীন। শরীআতের মধ্যে পরিবর্তন পরিবর্ধন করার সম্পূর্ণ ইখতিয়ার তাঁরই। তবে কোন জিনিস পরিবর্তন করবেন আর কোনটি পরিবর্তন করবেন না, কোন হুকুমকে অন্য হুকুমের পরিবর্তে নাযিল করবেন আর কোনটিকে পুরোপুরি রহিত করবেন সে সবই তাঁর কাছে যে মূল কিতাব আছে সে অনুসারেই হবে। সেখানে কোন পরিবর্তন নেই। [ইবন কাসীর, ইবন আব্বাস ও কাতাদা হতে]

(২) এখানে (أُمُّ الْكِتَابِ) এর শাব্দিক অর্থ মূলগ্রন্থ। এর দ্বারা লওহে-মাহফুষ বুঝানো হয়েছে, যাতে কোনরূপ পরিবর্তন-পরিবর্ধন হতে পারে না। চাই সেটা শরীআত সম্পর্কিত হোক অথবা তাকদীর সম্পর্কিত হোক। অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা তার শরীআতের মধ্য থেকে যা ইচ্ছা তা রহিত করেন। আর যা ইচ্ছে তা নাযিল করেন। কিন্তু মূলটি উম্মুল কিতাব তথা লাওহে মাহফুযে আছে। সেখানে কোন পরিবর্তন পরিবর্ধন নেই। অনরূপভাবে প্রত্যেক ব্যক্তির তাকদীর সম্পর্কে লাওহে মাহফুজে যা লিখা আছে তাতে কোন পরিবর্তন পরিবর্ধন নেই। [ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩৯) (তার মধ্য হতে) আল্লাহ যা ইচ্ছা তা মুছে দেন এবং যা ইচ্ছা তা বহাল রাখেন। আর তাঁর নিকট রয়েছে মূল গ্রন্থ।[1]

[1] এর একটি অর্থ এই যে, তিনি স্বীয় ইচ্ছা মোতাবেক কোন হুকুমকে রহিত করেন এবং কোন হুকুমকে বহাল রাখেন। দ্বিতীয় অর্থ এই যে, তিনি যে ভাগ্য লিখে রেখেছেন তাতে পরিবর্তন করতে থাকেন। কতিপয় হাদীস দ্বারা এর সমর্থন হয়, তন্মধ্যে একটি হাদীস হলো, ‘‘মানুষকে পাপের কারণে রুযী থেকে বঞ্চিত করা হয়, দু‘আর মাধ্যমে ভাগ্য পরিবর্তন হয় এবং আত্মীয়তা বন্ধন বজায় রাখার কারণে আয়ু বৃদ্ধি পায়।’’ (মুসনাদ আহমাদ ৫/২৭৭) কতিপয় সাহাবা থেকে নিম্নলিখিত দু‘আটি বর্ণিত হয়েছে,(اللَّهُمَّ إنْ كُنْتَ كَتَبْتَنَا أشْقِيَاءَ فَامْحُنَا وَاكْتُبْنَا سُعَدَاءَ، وَإنْ كُنْتَ كَتَبْتَنَا سُعَدَاءَ فَأثْبِتْنَا، فَإنَّكَ تَمْحُوْ مَا تَشَاءُ وَتُثْبِتُ وَعِنْدَكَ أُمُّ الْكِتَابِ) । অর্থাৎ, হে আল্লাহ! যদি তুমি আমাদেরকে দুর্ভাগ্যবান বলে লিখে দিয়েছ, তাহলে তা মিটিয়ে দিয়ে আমাদেরকে সৌভাগ্যবান বলে লিখে দাও। আর যদি সৌভাগ্যবান বলে লিখেছ, তাহলে সেটাই বহাল রাখো, কেননা তুমি যা চাও মিটিয়ে দাও আর যা চাও বহাল রাখ এবং তোমার কাছেই রয়েছে লওহে মাহফূয বা সংরক্ষিত ফলক। উমার (রাঃ) সম্বন্ধে উল্লেখ আছে যে, তিনি তাওয়াফ কালীন সময়ে কাঁদতেন এবং এই দু‘আ পড়তেন: (اللَّهُمَّ إنْ كُنْتَ كَتَبْتَ عَلَيَّ شَقْوَةً أوْ ذَنْبًا فَامْحُهُ، فَإنَّكَ تَمْحُوْ مَا تَشَاءُ وَتُثْبِتُ، وَعِنْدَكَ أُمُّ الْكِتَابِ، فَاجْعَلْهُ سَعَادَةً وَمَغْفِرَةً)। অর্থাৎ, হে আল্লাহ! যদি তুমি আমার ব্যাপারে দুর্ভাগ্য বা পাপ লিখে দিয়েছ, তাহলে তা মিটিয়ে দাও, কেননা তুমি যা চাও মিটিয়ে দাও আর যা চাও বহাল রাখ, আর তোমার কাছেই রয়েছে লওহে মাহফূয বা সংরক্ষিত ফলক, সুতরাং তা তুমি সৌভাগ্য ও ক্ষমায় পরিবর্তন করে দাও। (ইবনে কাসীর) এই অর্থের উপর আপত্তি আসতে পারে যে, অন্য হাদীসে তো এসেছে, (جَفَّ الْقَلَمُ بِمَا هُوَ كَائِنٌ) অর্থাৎ, যা কিছু ঘটবে, তা লিখে কলম শুকিয়ে গেছে। (বুখারী, হাদীস নং ৫০৭৬) এর জবাব এই দেয়া হয়েছে যে, এই পরিবর্তনও ভাগ্যে লিখিত বিষয়াবলীর অন্তর্ভুক্ত। (ফাতহুল কাদীর)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান