১২ সূরাঃ ইউসুফ | Yusuf | سورة يوسف - আয়াতঃ ১০৬
১২:১০৬ وَ مَا یُؤۡمِنُ اَکۡثَرُهُمۡ بِاللّٰهِ اِلَّا وَ هُمۡ مُّشۡرِکُوۡنَ ﴿۱۰۶﴾
و ما یومن اکثرهم بالله الا و هم مشرکون ۱۰۶

তাদের অধিকাংশ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস করে, তবে (ইবাদাতে) শিরক করা অবস্থায়। আল-বায়ান

অধিকাংশ মানুষ আল্লাহতে বিশ্বাস করে, কিন্তু সাথে সাথে শিরকও করে। তাইসিরুল

তাদের অধিকাংশ আল্লাহকে বিশ্বাস করে, কিন্তু তাঁর সাথে শরীক করে। মুজিবুর রহমান

And most of them believe not in Allah except while they associate others with Him. Sahih International

১০৬. তাদের বেশীর ভাগই আল্লাহর উপর ঈমান রাখে, তবে তার সাথে (ইবাদতে) শির্ক করা অবস্থায়।(১)

(১) এখানে এমন লোকদের সম্পর্কে বলা হচ্ছে, যারা আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাসী, কিন্তু তার সাথে অন্য বস্তুকে অংশীদার সাব্যস্ত করে। বলা হয়েছেঃ (وَمَا يُؤْمِنُ أَكْثَرُهُمْ بِاللَّهِ إِلَّا وَهُمْ مُشْرِكُونَ) অর্থাৎ তাদের মধ্যে যারা আল্লাহর উপর বিশ্বাস করে, তারাও শির্কের সাথে করে। তারা আল্লাহ্ তা'আলাকে রব, জীবনদাতা, মৃত্যুদাতা স্বীকার করে, কিন্তু তা সত্বেও তারা ইবাদাত করার সময় আল্লাহর সাথে অন্যান্যদেরও ইবাদাত করে। [তাবারী; কুরতুবী; বাগভী; ইবন কাসীর; সাদী] তাদের ঈমান হল আল্লাহর প্রভূত্বের উপর, আর তাদের শির্ক হল আল্লাহর ইবাদাতে। এ আয়াতের মধ্যে ঐ সমস্ত নামধারী মুসলিমও অন্তর্ভুক্ত, যারা আল্লাহ্‌র ইবাদতের পাশাপাশি পীর, কবর ইত্যাদির ইবাদাতও করে থাকে।

ইবনে কাসীর বলেনঃ যেসব মুসলিম ঈমান সত্ত্বেও বিভিন্ন প্রকার শির্কে লিপ্ত রয়েছে, তারাও এ আয়াতের অন্তর্ভুক্ত। এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ আমি তোমাদের জন্য যেসব বিষয়ের আশঙ্কা করি, তন্মধ্যে সবচাইতে বিপজ্জনক হচ্ছে ছোট শির্ক। সাহাবায়ে কেরামের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বললেনঃ রিয়া (লোক দেখানো ইবাদাত) হচ্ছে ছোট শির্ক। [মুসনাদে আহমাদ ৫/৪২৯] এমনিভাবে অন্য এক হাদীসে আল্লাহ ব্যতীত অন্যের কসম করাকেও শির্ক বলা হয়েছে। [সহীহ ইবনে হিব্বানঃ ১০/১৯৯, হাদীস নং ৪৩৫৮]

আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে মান্নত করা এবং যবেহ্ করা শির্কের অন্তর্ভুক্ত। হাদীসে আরও এসেছে, মুশরিকরা তাদের হজের তালবিয়া পাঠের সময় বলত: ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইক লা শারীকা লাকা, ইল্লা শারীকান হুয়া লাকা তামলিকুহু ওমা মালাক। (অর্থাৎ আমি হাযির আল্লাহ আমি হাযির, আমি হাযির, আপনার কোন শরীক নেই, তবে এমন এক শরীক আছে যার আপনি মালিক, সে আপনার মালিক নয়) এটা বলত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের এ শির্কী তালবিয়া পড়ার সময় যখন তারা (লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইক লা শারীকা লাকা) পর্যন্ত বলত, তখন তিনি বলতেন যথেষ্ট এতটুকুই বল। [মুসলিম: ১১৮৫] কারণ এর পরের অংশটুকু শির্ক। তারা ঈমানের সাথে শির্ক মিশ্রিত করে ফেলেছে। [ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১০৬) তাদের অধিকাংশই আল্লাহকে বিশ্বাস করে; কিন্তু তাঁর অংশী স্থাপন করে। [1]

[1] এটা সেই বাস্তবতা যার বর্ণনা কুরআন সুস্পষ্টাকারে বিভিন্ন স্থানে করেছে। আর তা এই যে, মুশরিকরা তো স্বীকার করত, আকাশ ও পৃথিবীর স্রষ্টা, সবকিছুর মালিক, রুযীদাতা এবং পরিচালক শুধু মহান আল্লাহই। কিন্তু তা সত্ত্বেও ইবাদতে আল্লাহর সাথে অন্যকেও শরীক করত। আর এইভাবেই অধিকাংশ মানুষই মুশরিক। অর্থাৎ প্রত্যেক যুগে লোকেরা তাওহীদে রবূবিয়্যাত (প্রতিপালকত্বের তাওহীদ)-কে তো মেনে নেয়; কিন্তু তাওহীদে উলূহিয়্যাত (উপাসত্বের তাওহীদ)-কে মানতে প্রস্তুত হয় না। বর্তমান যুগের কবর পূজারীদের শিরকও ঠিক এই ধরণের যে, তারা কবরস্থ ব্যক্তিদেরকে উলূহিয়্যাতের গুণাবলীর অধিকারী মনে করে তাদেরকে সাহায্যের জন্য আহবানও করে এবং ইবাদতের বেশ কিছু অনুষ্ঠানও তাদের উদ্দেশ্যে পালন করে। আল্লাহ আমাদেরকে এত্থেকে বাঁচান। আমীন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান