১২ সূরাঃ ইউসুফ | Yusuf | سورة يوسف - আয়াতঃ ১০২
১২:১০২ ذٰلِکَ مِنۡ اَنۡۢبَآءِ الۡغَیۡبِ نُوۡحِیۡهِ اِلَیۡکَ ۚ وَ مَا کُنۡتَ لَدَیۡهِمۡ اِذۡ اَجۡمَعُوۡۤا اَمۡرَهُمۡ وَ هُمۡ یَمۡکُرُوۡنَ ﴿۱۰۲﴾
ذلک من انۢباء الغیب نوحیه الیک ۚ و ما کنت لدیهم اذ اجمعوا امرهم و هم یمکرون ۱۰۲

এগুলো গায়েবের সংবাদ, যা আমি তোমার কাছে ওহী করছি। তুমি তো তাদের নিকট ছিলে না যখন তারা তাদের সিদ্ধান্তে একমত হয়েছিল অথচ তারা ষড়যন্ত্র করছিল। আল-বায়ান

অদৃশ্য জগতের খবর থেকে এটা তোমাকে ওয়াহী করে জানালাম। ষড়যন্ত্র করার সময় যখন তারা তাদের কাজে জোটবদ্ধ হয়েছিল তখন তুমি তো তাদের কাছে ছিলে না। তাইসিরুল

এটা অদৃশ্যলোকের সংবাদ যা তোমাকে আমি অহী দ্বারা অবহিত করছি, ষড়যন্ত্রকালে যখন তারা মতৈক্যে পৌঁছেছিল তখন তুমি তাদের সাথে ছিলেনা। মুজিবুর রহমান

That is from the news of the unseen which We reveal, [O Muhammad], to you. And you were not with them when they put together their plan while they conspired. Sahih International

১০২. এটা গায়েবের সংবাদ যা আপনাকে আমরা ওহী দ্বারা জানাচ্ছি(১) ষড়যন্ত্রকালে যখন তারা মতৈক্যে পৌছেছিল, তখন আপনি তাদের সাথে ছিলেন না।(২)

(১) বলা হয়েছে, এগুলো গায়েবের সংবাদ, যা আমি আপনাকে ওহীর মাধ্যমে বলি। এ বিষয়বস্তুটি প্রায় এমনি ভাষায় সূরা আলে-ইমরানের ৪৩তম আয়াতে ব্যক্ত হয়েছে। সূরা হুদের ৪৯ তম আয়াতে নূহ আলাইহিস সালাম-এর ঘটনা প্রসঙ্গেও তাই বলা হয়েছে। এসব আয়াত থেকে জানা যায় যে, আল্লাহ তা’আলা ওহীর মাধ্যমে নবীগণকে গায়েবের সংবাদ বলে দেন। বিশেষ করে আমাদের শ্রেষ্ঠতম নবী মুহাম্মাদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে এসব গায়েবের সংবাদের বিশেষ অংশ দান করা হয়েছে, যার পরিমাণ পূর্ববতী নবীগণের তুলনায় বেশী। এ কারণে তিনি উম্মতকে এমন অনেক ঘটনা বিস্তারিত অথবা সংক্ষেপে বলে দিয়েছেন, যেগুলো কেয়ামত পর্যন্ত সংঘটিত হবে। ‘কিতাবুল-ফিতান’ শিরোনামে ভবিষ্যতে সংঘটিত হবে এমন বর্ণনা সম্বলিত বহুসংখ্যক ভবিষ্যদ্বাণী হাদীসের গ্রন্থসমূহে মওজুদ রয়েছে। এ সমস্ত গায়েবের জ্ঞান আল্লাহ্‌ তাঁর রাসূলকে দান করেছেন।

(২) ইউসুফ আলাইহিস সালাম-এর কাহিনী পুরোপুরি বর্ণনা করার পর আলোচ্য আয়াতসমূহে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে সম্বোধন করে বলা হয়েছে, এই কাহিনী ঐসব গায়েবী সংবাদের অন্যতম, যেগুলো আমি ওহীর মাধ্যমে আপনাকে বলেছি। আপনি ইউসুফ-ভ্রাতাদের কাছে উপস্থিত ছিলেন না, যখন তারা ইউসুফকে কূপে নিক্ষেপ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এবং এজন্য কলা-কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছিল। এ বর্ণনার উদ্দেশ্য এই যে, ইউসুফ আলাইহিস সালাম-এর কাহিনীটি পূর্ণ বিবরণসহ ঠিক ঠিক বলে দেয়া আপনার নবুওয়াত, রিসালাত ও ওহীর সুস্পষ্ট প্রমাণ। [ইবন কাসীর] কেননা, কাহিনীটি হাজারো বছর পূর্বেকার। আপনি সেখানে বিদ্যমান ছিলেন না যে, স্বচক্ষে দেখে বিবৃত করবেন এবং আপনি কারো কাছে শিক্ষাও গ্রহণ করেননি যে, ইতিহাস গ্রন্থ পাঠ করে অথবা কারো কাছে শুনে বর্ণনা করবেন। অতএব, আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহী ব্যতীত এ সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করার দ্বিতীয় কোন পথ নেই।

তাফসীরে জাকারিয়া

(১০২) এটা অদৃশ্য লোকের সংবাদ যা তোমাকে আমি অহী দ্বারা অবহিত করছি; ষড়যন্ত্রকালে যখন তারা মতৈক্যে পৌঁছেছিল, তখন তুমি তাদের নিকট ছিলে না। [1]

[1] অর্থাৎ ইউসুফ (আঃ)-এর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকালে, যখন তারা তাকে কূপে নিক্ষেপ করে এসেছিল। অথবা উদ্দেশ্য ইয়াকূব (আঃ)-এর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকালে, যাতে তারা তাকে এই বলেছিল যে, ইউসুফ (আঃ)-কে নেকড়ে বাঘে খেয়ে নিয়েছে এবং এই হল রক্তরঞ্জিত তার জামা। এই বলে তার সাথে ছলনা করা হয়েছিল। মহান আল্লাহ এ স্থানেও এ বিষয়ের খন্ডন করেছেন যে, নবী কারীম (সাঃ) গায়বের এলেম (অদৃশ্যের জ্ঞান) রাখতেন। তবে এখানে খন্ডন সাধারণ জ্ঞানের নয়, কেননা মহান আল্লাহ তাঁকে অহীর মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন। এ খন্ডন প্রত্যক্ষ দর্শনের, যেহেতু সেই সময়ে তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। অনুরূপ এমন লোকদের সাথেও তাঁর সম্পর্ক ছিল না, যাদের কাছ থেকে তিনি তা শুনতে পারেন। এ তো শুধু আল্লাহই, যিনি তাঁকে এই অদৃশ্য ঘটনার সংবাদ দিয়েছেন, যা এ কথার প্রমাণ বহন করে যে, তিনি আল্লাহর সত্য নবী এবং তাঁর পক্ষ থেকে তাঁর উপর অহী অবতীর্ণ হয়। মহান আল্লাহ আরো কয়েক স্থানে অনুরূপ অদৃশ্যের জ্ঞানের এবং প্রত্যক্ষ দর্শনের কথা খন্ডন করেছেন। (উদাহরণ স্বরূপ দেখুনঃ সূরা আলে ইমরান ৭ ও ৪৪নং আয়াত, সূরা ক্বস্বাস্ব ৪৫-৪৬নং আয়াত এবং সূরা স্বা-দ ৬৯-৭০নং আয়াত)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান