১১ সূরাঃ হূদ | Hud | سورة هود - আয়াতঃ ৮৫
১১:৮৫ وَ یٰقَوۡمِ اَوۡفُوا الۡمِکۡیَالَ وَ الۡمِیۡزَانَ بِالۡقِسۡطِ وَ لَا تَبۡخَسُوا النَّاسَ اَشۡیَآءَهُمۡ وَ لَا تَعۡثَوۡا فِی الۡاَرۡضِ مُفۡسِدِیۡنَ ﴿۸۵﴾
و یقوم اوفوا المکیال و المیزان بالقسط و لا تبخسوا الناس اشیاءهم و لا تعثوا فی الارض مفسدین ۸۵

‘আর হে আমার কওম, মাপ ও ওযন পূর্ণ কর ইনসাফের সাথে এবং মানুষকে তাদের পণ্য কম দিও না; আর যমীনে ফাসাদ সৃষ্টি করে বেড়িও না, আল-বায়ান

হে আমার সম্প্রদায়! মাপ ও ওজন ইনসাফের সঙ্গে পূর্ণ করো, লোকদেরকে তাদের প্রাপ্য কম দিও না, আর যমীনে ফাসাদ সৃষ্টি করে বেড়িও না। তাইসিরুল

আর হে আমার কাওম! তোমরা পরিমাপ ও ওযনকে পুরাপুরিভাবে সম্পন্ন কর এবং লোকদেরকে তাদের দ্রব্যাদিতে কম করনা, আর ভূ-পৃষ্ঠে ফাসাদ সৃষ্টি করে সীমা অতিক্রম করনা। মুজিবুর রহমান

And O my people, give full measure and weight in justice and do not deprive the people of their due and do not commit abuse on the earth, spreading corruption. Sahih International

৮৫. হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা ন্যায়সঙ্গতভাবে মাপো ও ওজন করো, লোকদেরকে তাদের প্রাপ্য বস্তু কম দিও না এবং যমীনে বিপর্যয় সৃষ্টি করে বেড়িও না।(১)

(১) এখানে শু'আইব আলাইহিস সালাম নিজ জাতিকে প্রথমে একত্ববাদের প্রতি আহবান জানালেন কেননা, তারা মুশরিক ছিল। কোন কোন মুফাসসির বলেন, তারা গাছপালার পুজা করত। এজন্যই মাদইয়ানবাসীকে আসহাবুল-আইকা বা জঙ্গলওয়ালা উপাধি দেয়া হয়েছে। আর কোন কোন মুফাসসিরের মতে তাদের বাসস্থানে গাছপালার অবিচ্ছিন্ন ছায়া বিরাজ করছিল বলে তাদেরকে “আসহাবুল আইকাহ” বলা হয়েছে। এহেন কুফরী ও শেরেকীর সাথে সাথে আরেকটি মারাত্মক দোষ ও জঘন্য অপরাধ ছিল যে, আদান-প্রদান ও ক্রয়-বিক্রয় কালে ওজন-পরিমাপে হের-ফের করে লোকের হক আত্মসাৎ করত। শু'আইব আলাইহিস সালাম তাদেরকে এরূপ করতে নিষেধ করলেন। এখানে বিশেষ প্রণিধানযোগ্য যে, কুফর ও শেরেকীই সকল পাপের মূল। যে জাতি তাতে লিপ্ত, তাদেরকে প্রথমেই তাওহীদের দাওয়াত দেয়া হয়।

সাধারণত: ঈমান আনয়নের পূর্বে আমল ও কায়-কারবারের প্রতি দৃষ্টি দেয়া হয় না। কুরআনে বর্ণিত পূর্ববতী নবীগণ ও তাদের জাতিসমূহের ঘটনাবলী এর প্রমাণ। তবে শুধু দুটি জাতি এমন ছিল, যাদের উপর আযাব নাযিল হওয়ার ব্যাপারে কুফরীর সাথে সাথে তাদের বদ-আমলেরও দখল ছিল। প্রথম, লুত আলাইহিস সালাম এর জাতি যাদের কাহিনী ইতিপূর্বে বর্ণিত হয়েছে। দ্বিতীয় শু'আইব আলাইহিস সালামের জাতি। যাদের উপর আযাব নাযিল হওয়ার জন্য কুফর ও মাপে কম দেয়াকে কারণ হিসাবে নির্দেশ করা হয়েছে। এতে করে বুঝা যায় যে, পুংমৈথুন ও মাপে কম দেয়া আল্লাহ তা'আলার কাছে সবচেয়ে জঘন্য ও মারাত্মক অপরাধ। কারণ তা এমন দুটি কাজ যার ফলে সমগ্র মানব জাতির চরম সর্বনাশ সাধিত হয় এবং সারা পৃথিবীতে বিশৃংখলা বিপর্যয় সৃষ্টি হয়।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৮৫) হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা মাপ ও ওজনকে পুরোপুরিভাবে সম্পন্ন কর এবং লোকদেরকে তাদের প্রাপ্য বস্তু কম দিয়ো না,[1] আর পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে বেড়ায়ো না। [2]

[1] নবীগণের দাওয়াত দুটি গুরুতত্ত্বপূর্ণ ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। প্রথমঃ আল্লাহর হক আদায় করা এবং দ্বিতীয়ঃ বান্দার হক আদায় করা। ‘তোমরা আল্লাহর উপাসনা কর’ বাক্য দ্বারা প্রথম এবং ‘তোমরা মাপে ও ওজনে কম করো না’ বাক্য দ্বারা দ্বিতীয় হকের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। এখন তারই তাকীদস্বরূপ তাদেরকে ইনসাফের সাথে পূর্ণমাত্রায় ওজন ও পরিমাপ দেওয়ার আদেশ দেওয়া হচ্ছে এবং লোকদেরকে কোন বস্তু কম দেওয়া থেকে নিষেধ করা হচ্ছে। কারণ আল্লাহ তাআলার নিকট এটা একটা বড় অন্যায় এবং আল্লাহ তাআলা পূর্ণ একটি সূরাতে উক্ত অন্যায়ের জঘন্যতা ও আখেরাতে তার শাস্তির কথা বর্ণনা করেছেন। وَيْلٌ لِلْمُطَفِّفِينَ، الَّذِينَ إِذَا اكْتَالُوا عَلَى النَّاسِ يَسْتَوْفُونَ، وَإِذَا كَالُوهُمْ أَوْ وَزَنُوهُمْ يُخْسِرُونَ অর্থাৎ, মন্দ পরিণাম তাদের জন্য যারা মাপে কম দেয়, যারা লোকের নিকট হতে মেপে নেওয়ার সময় পূর্ণ মাত্রায় গ্রহণ করে এবং যখন তাদের জন্য মেপে অথবা ওজন করে দেয়, তখন কম দেয়।’’ (সূরা মুত্বাফফিফীন ১-৩)

[2] আল্লাহর অবাধ্যতা করে, বিশেষ করে মানুষের অধিকার নষ্ট করে; যেমন ওজন ও পরিমাপে কম বেশি করাতে পৃথিবীতে অবশ্যই ফাসাদ সৃষ্টি করা হয়, যা করতে তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছিল।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান