যেমন, আপনি হয়ত ২ নং সূরার ২০ নং আয়াত এবং ১০ নং সূরার ৫ নং আয়াত এভাবে একসাথে আরো অন্য সূরার অন্য আয়াত সার্চ করতে চাইছেন, সেক্ষেত্রে আপনাকে উপরের সার্চ বক্সে
২:২০, ১০:৫ এভাবে অথবা ২/২০, ১০/৫ এভাবে লিখে সার্চ করতে হবে।
আপনি সূরা ও আয়াত নং বাংলা অথবা ইংরেজিতে লিখতে পারেন।
মন্দ কথার প্রচার আল্লাহ পছন্দ করেন না, তবে কারো উপর যুলম করা হলে ভিন্ন কথা। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী। আল-বায়ান
খারাপ কথার প্রচার প্রপাগান্ডা আল্লাহ পছন্দ করেন না, তবে যার প্রতি অন্যায় করা হয়েছে (তার কথা আলাদা), আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। তাইসিরুল
আল্লাহ কোন মন্দ কথার প্রচারণা ভালবাসেন না, তবে কেহ অত্যাচারিত হয়ে থাকলে তার কথা স্বতন্ত্র; এবং আল্লাহ শ্রবণকারী মহাজ্ঞানী। মুজিবুর রহমান
Allah does not like the public mention of evil except by one who has been wronged. And ever is Allah Hearing and Knowing. Sahih International
১৪৮. মন্দ কথার প্রচারণা আল্লাহ পছন্দ করেন না; তবে যার উপর যুলুম করা হয়েছে(১)। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।
(১) এ আয়াতে দুনিয়া হতে জোর-যুলুমের অবসান ঘটানোর এক অপূর্ব বিধান পেশ করা হয়েছে। যার মধ্যে একদিকে ইনসাফ ও ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠা ও অপরাধ দমনের জন্য মযলুমকে অত্যাচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করে তাকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর আধিকার দিয়েছে। অন্যদিকে প্রতিশোধ নিতে গিয়ে আবার যুলুম ও বাড়াবাড়ি করা থেকে নিষেধ করা হয়েছে। অন্য আয়াতে আল্লাহ তা'আলা বলেন, “যদি তোমরা প্রতিশোধ নিতে চাও, তবে তোমাদের উপর যে পরিমাণ যুলুম করা হয়েছে, তোমরা ঠিক ততটুকুই প্রতিশোধ নিতে পার [সূরা আন-নাহ্ল: ১২৬] সাথে সাথে এ কথাও বলে দেয়া হয়েছে যে, প্রতিশোধ গ্রহণ করার ক্ষমতা ও অধিকার থাকা সত্বেও যদি তোমরা ধৈর্য ধারণ কর এবং ক্ষমা করে দাও, তবে নিঃসন্দেহে তা তোমাদের জন্য অতি উত্তম। মোটকথাঃ আয়াত থেকে বোঝা যায় যে, মযলুম ব্যক্তি যদি অত্যাচারীর অন্যায়-অত্যাচারের কাহিনী লোকদের কাছে প্রকাশ করে বা আদালতে অভিযোগ করে, তবে তা হারাম গীবতের আওতায় পড়বে না। কারণ যালিম নিজেই মযলুমকে অভিযোগ উত্থাপন করতে সুযোগ করে দিয়েছে, বরং বাধ্য করেছে।
তাফসীরে জাকারিয়া(১৪৮) মন্দ কথা প্রকাশ করাকে আল্লাহ পছন্দ করেন না; তবে যার উপর যুলুম করা হয়েছে তার কথা স্বতন্ত্র।[1] আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।
[1] কারো মধ্যে যদি কোন ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়, তাহলে তার প্রকাশ্যে সমালোচনা না করার প্রতি শরীয়তে খুবই গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে, বরং তাকে নির্জনে বুঝাতে বলা হয়েছে। কিন্তু যদি ধর্মীয় কোন কল্যাণ থাকে, তাহলে প্রকাশ্যে সমালোচনা করায় কোন অসুবিধা নেই। এমনিভাবেই জনসমক্ষে প্রকাশ্যে কোন কুকর্ম করা নিতান্ত অপছন্দনীয়। একে তো কুকর্মে লিপ্ত হওয়াটাই নিষিদ্ধ, যদিও তা পর্দার অন্তরালে হয়, তার উপর সেটা জনসমক্ষে প্রকাশ্যে করা অতিরিক্ত আর একটি অপরাধ। আর তার জন্য ঐ কুকর্মের অপরাধ দ্বিগুণ হতে পারে। উক্ত দুই ধরনের অপরাধের কথা এই আয়াতে উল্লিখিত হয়েছে। আর তাতে এটাও বলা হয়েছে যে, কারো কৃত বা অকৃত অপরাধের কারণে তাকে প্রকাশ্যে ভৎর্সনা করো না। অবশ্য যালেমের যুলুমের কথা জনসমক্ষে বর্ণনা করার ব্যাপারটা ব্যতিক্রম। যালেমের যুলুমের কথা প্রকাশ্যে ব্যক্ত করার মাঝে কয়েকটি মঙ্গল নিহিত আছে। যেমন, সম্ভবতঃ সে যুলুম করা থেকে বিরত হতে পারে অথবা সে আত্মশুদ্ধির চেষ্টা করবে। দ্বিতীয়তঃ লোকে তার ব্যাপারে সাবধান ও সতর্ক থাকবে। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, একজন লোক রসূল (সাঃ)-এর দরবারে উপস্থিত হয়ে বলল, ‘আমার প্রতিবেশী আমাকে কষ্ট দেয়।’ রসূল (সাঃ) তাকে বললেন, ‘‘তুমি তোমার ঘরের জিনিসপত্র বের করে রাস্তার উপর রেখে দাও।’’ লোকটি তাই করল। তারপর যেই রাস্তা দিয়ে পার হয়ে যায়, সেই তার কারণ জিজ্ঞাসা করে। আর সে প্রতিবেশীর অত্যাচারের কথা বলতেই প্রত্যেকেই তাকে অভিশাপ করে। প্রতিবেশী এই পরিস্থিতি দেখে নিজের ভুল স্বীকার করল এবং ‘ভবিষ্যতে আর কোনদিন কষ্ট দেবে না’ বলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হল। আর প্রতিবেশীকে নিজ জিনিসপত্রগুলিকে ঘরে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করল। (আবু দাউদ, আদব অধ্যায়)
তাফসীরে আহসানুল বায়ানযদি তোমরা ভালো কিছু প্রকাশ কর, কিংবা গোপন কর অথবা মন্দ ক্ষমা করে দাও, তবে নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, ক্ষমতাবান। আল-বায়ান
তোমরা যদি ভাল কাজ প্রকাশ্যে কর কিংবা তা গোপনে কর কিংবা মন্দকে ক্ষমা কর তবে আল্লাহও দোষত্রুটি মোচনকারী, ক্ষমতার অধিকারী। তাইসিরুল
যদি তোমরা সৎ কাজ প্রকাশ্যে কর অথবা গোপনে কর অথবা যদি তোমরা অপরাধ ক্ষমা করে দাও তাহলে জেনে রেখ যে, আল্লাহ নিজেও ক্ষমাকারী, সর্বশক্তিমান। মুজিবুর রহমান
If [instead] you show [some] good or conceal it or pardon an offense - indeed, Allah is ever Pardoning and Competent. Sahih International
১৪৯. তোমরা সৎকাজ প্রকাশ্যে করলে বা গোপনে করলে কিংবা দোষ ক্ষমা করলে তবে আল্লাহও দোষ মোচনকারী, ক্ষমতাবান।(১)
(১) আল্লাহ তা'আলা একদিকে মযলুমকে তার প্রতি যুলুমের সমতুল্য প্রতিশোধ গ্রহণ করার অনুমতি দিয়েছেন। অপরদিকে প্রতিশোধ গ্রহণ করার পরিবর্তে উন্নত চরিত্রের শিক্ষা ও ক্ষমার মনোভাব সৃষ্টি করার জন্য আখেরাতের উত্তম প্রতিদানের আশ্বাস শুনিয়ে ক্ষমা ও ত্যাগের আদর্শ গ্রহণ করার জন্য উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করেছেন। এ আয়াতে মুখ্য উদ্দেশ্য কারো অন্যায়কে ক্ষমা করার আদর্শ শিক্ষা দেয়া। প্রকাশ্যে বা গোপনে নেক কাজ করার উল্লেখ করে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, ক্ষমা করাও একটি বিশিষ্ট সৎকার্য।
যে ব্যক্তি অন্যের অপরাধ মার্জনা করবে, সে আল্লাহ তা'আলার ক্ষমা ও করুণার যোগ্য হবে। আয়াতের শেষে আল্লাহর দুটি গুণবাচক নাম উল্লেখ করে বলে দেয়া হয়েছে যে, আল্লাহ তা'আলা সর্বশক্তিমান, যাকে ইচ্ছা তিনি শাস্তি দিতে পারেন এবং যখন ইচ্ছা প্রতিশোধ গ্রহণ করতে পারেন। তথাপি তিনি অতি ক্ষমাশীল। আর মানুষের শক্তি ও ক্ষমতা যখন সামান্য ও সীমাবদ্ধ, তাই ক্ষমা বা মার্জনার পথ অবলম্বন করা তার জন্য অধিক বাঞ্ছনীয়।
এ হচ্ছে অন্যায়-অত্যাচার প্রতিরোধ ও সামাজিক সংস্কার সাধনের ইসলামী মূলনীতি এবং অভিভাবকসুলভ সিদ্ধান্ত। একদিকে ন্যায়সঙ্গত প্রতিশোধ গ্রহণের অধিকার প্রদান করে ইনসাফ ও ন্যায়নীতিকে সমুন্নত রাখা হয়েছে, অপরদিকে উত্তম চরিত্র ও নৈতিকতা শিক্ষা দিয়ে ক্ষমা বা মার্জনা করতে অনুপ্রাণিত করা হয়েছে। যার অনিবার্য ফলশ্রুতি সম্পর্কে কুরআনুল কারীমের অন্য আয়াতে এরশাদ হয়েছেঃ “তোমার ও অন্য যে ব্যক্তির মধ্যে দুশমনী ছিল, এমতাবস্থায় সে ব্যক্তি আন্তরিক বন্ধু হয়ে যাবে।” [সূরা ফুসসিলাতঃ ৩৪]
আইন-আদালত বা প্রতিশোধ গ্রহণ করার মাধ্যমে যদিও অন্যায়-অত্যাচার প্রতিরোধ করা যায়, কিন্তু এর দীর্ঘস্থায়ী প্রতিক্রিয়া অব্যাহত থাকে। যার ফলে পারস্পরিক বিবাদের সূত্রপাত হওয়ার আশংকা বিদ্যমান থাকে। কিন্তু কুরআনুল কারীম যে অপূর্ব নৈতিকতার আদর্শ শিক্ষা দিয়েছে, তার ফলে দীর্ঘকালের শক্রতাও গভীর বন্ধুত্বে রূপান্তরিত হয়ে থাকে। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সাদকাহ দ্বারা সম্পদ কমে না এবং কোন বান্দার মধ্যে ক্ষমা প্রবণতার গুণের কারণে আল্লাহ তা'আলা কেবল তার মর্যাদাই বৃদ্ধি করেন। আর যে কেউ আল্লাহর জন্য বিনয়ী হয়, আল্লাহ তাকে উচ্চ মর্যাদায় আসীন করেন। [মুসলিম: ২৫৮৮]
তাফসীরে জাকারিয়া(১৪৯) যদি তোমরা সৎকাজ প্রকাশ্যে কর অথবা গোপনে কর অথবা অপরাধ ক্ষমা কর,[1] তাহলে নিশ্চয় আল্লাহও পরম ক্ষমাশীল, মহা শক্তিমান।
[1] কোন ব্যক্তি যদি কারো উপর যুলুম বা অন্যায়-উৎপীড়ন করে, তাহলে শরীয়তে মযলুম ব্যক্তির জন্য ততটুকু পরিমাণে প্রতিশোধ নেওয়ার অনুমতি আছে, যতটুকু পরিমাণ যুলুম তার প্রতি করা হয়েছে। নবী (সাঃ) বলেন, ‘‘আপোসের মধ্যে গালিগালাজ করে এমন দুই ব্যক্তি যা কিছু বলে পাপ সূচনাকারী ব্যক্তির উপরই বর্তায়; যদি না অত্যাচারিত ব্যক্তি (অর্থাৎ যাকে প্রথমে গালি দেওয়া হয়েছে এবং প্রতিশোধে সেও গালি দিয়েছে সে) সীমালংঘন করে।’’ (মুসলিম ৪৫৮৭নং) কিন্তু প্রতিশোধ গ্রহণের অনুমতির সাথে সাথে ক্ষমা প্রদর্শন করার প্রতি অধিক অনুপ্রাণিত করা হয়েছে। কেননা আল্লাহ তাআলা প্রতিশোধ নেওয়ার ব্যাপারে পূর্ণাঙ্গরূপে ক্ষমতাবান, তা সত্ত্বেও তিনি ক্ষমা করে দেন। এই জন্য তিনি বলেন, {وَجَزَاء سَيِّئَةٍ سَيِّئَةٌ مِّثْلُهَا فَمَنْ عَفَا وَأَصْلَحَ فَأَجْرُهُ عَلَى اللهِ إِنَّهُُ لَا يُحِبُّ الظَّالِمِينَ} অর্থাৎ, মন্দের প্রতিফল তো অনুরূপ মন্দই। কিন্তু যে ক্ষমা করে দেয় ও আপোস-নিষ্পত্তি করে, তার পুরস্কার আল্লাহর নিকট আছে। নিশ্চয় তিনি অত্যাচারীদেরকে ভালবাসেন না। (সূরা শূরা ৪০) আর হাদীসে মহানবী (সাঃ) বলেছেন, ‘‘অপরাধ মার্জনা করার কারণে, আল্লাহ (মার্জনাকারীর) সম্মান ও ইজ্জত বাড়িয়ে দেন।’’ (মুসলিম)
তাফসীরে আহসানুল বায়াননিশ্চয় যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের সাথে কুফরী করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের মধ্যে পার্থক্য করতে চায় এবং বলে, ‘আমরা কতককে বিশ্বাস করি আর কতকের সাথে কুফরী করি’ এবং তারা এর মাঝামাঝি একটি পথ গ্রহণ করতে চায় । আল-বায়ান
যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলদেরকে অস্বীকার করে আর আল্লাহ ও রসূলদের মাঝে পার্থক্য সৃষ্টি করতে চায় আর বলে (রসূলদের) কতককে আমরা মানি আর কতককে মানি না, আর তারা তার (কুফর ও ঈমানের) মাঝ দিয়ে একটা রাস্তা বের করতে চায় । তাইসিরুল
নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের প্রতি অবিশ্বাস করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের মধ্যে পার্থক্য করতে ইচ্ছা করে এবং বলে, আমরা কতিপয়কে বিশ্বাস করি ও কতিপয়কে অবিশ্বাস করি এবং তারা এর মধ্যবর্তী পথ অবলম্বন করতে ইচ্ছা করে । মুজিবুর রহমান
Indeed, those who disbelieve in Allah and His messengers and wish to discriminate between Allah and His messengers and say, "We believe in some and disbelieve in others," and wish to adopt a way in between - Sahih International
১৫০. নিশ্চয় যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের সাথে কুফরী করে এবং আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলগণের মধ্যে (ঈমানের ব্যাপারে) তারতম্য করতে চায় এবং বলে, ‘আমরা কতক-এর উপর ঈমান আনি এবং কতকের সাথে কুফরী করি’(১)। আর তারা মাঝামাঝি একটা পথ অবলম্বন করতে চায়।
(১) কাতাদা বলেন, এরা হচ্ছে, আল্লাহর দুশমন ইয়াহুদ ও নাসারা সম্প্রদায়। কারণ, তাদের মধ্যে ইয়াহুদীরা তাওরাত ও মূসার উপর ঈমান আনে কিন্তু ইঞ্জীল ও ঈসার উপর ঈমান আনে না। আর নাসারারা ইঞ্জীল ও ঈসার উপর ঈমান আনে কিন্তু কুরআন ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর ঈমান আনে না। এভাবে এ দু’টি সম্প্রদায় ইয়াহুদী ও নাসারা হয়েছে। অথচ এ দুটি মতই বিদ'আত বা নব উদ্ভাবিত। যা আল্লাহর পক্ষ থেকে নয়। এভাবে তারা সমস্ত নবী-রাসূলদের মাধ্যমে আল্লাহ প্রদত্ত দ্বীন ইসলামকে পরিত্যাগ করেছে। [তাবারী]
তাফসীরে জাকারিয়া(১৫০) নিশ্চয় যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলগণকে অবিশ্বাস করে আর আল্লাহ ও রসূলদের মধ্যে পার্থক্য করতে ইচ্ছা করে এবং বলে, ‘আমরা কতককে বিশ্বাস করি ও কতককে অবিশ্বাস করি’ এবং তারা এর মধ্যবর্তী এক পথ অবলম্বন করতে চায়।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতারাই প্রকৃত কাফির এবং আমি কাফিরদের জন্য প্রস্তুত করেছি অপমানকর আযাব। আল-বায়ান
তারাই হল প্রকৃত কাফির আর কাফিরদের জন্য আমি অবমাননাকর শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি। তাইসিরুল
ওরাই প্রকৃত অবিশ্বাসী, এবং আমি অবিশ্বাসীদের জন্য অবমাননাকর শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি। মুজিবুর রহমান
Those are the disbelievers, truly. And We have prepared for the disbelievers a humiliating punishment. Sahih International
১৫১. তারাই প্রকৃত কাফির। আর আমরা প্রস্তুত রেখেছি কাফিরদের জন্য লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।(১)
(১) পবিত্র কুরআনের উপরোক্ত স্পষ্ট ঘোষণা ঐসব বিভ্রান্ত লোকদের হীনমন্যতা ও গোজামিলকেও ফাঁস করে দিয়েছে, যারা অন্যান্য ধর্মানুসারীদের প্রতি উদারতা প্রদর্শন করতে গিয়ে নিজেদের দ্বীন ও দ্বীনী বিশ্বাসকে বিজাতির পদমূলে উৎসর্গ করতে ব্যগ্র। যারা কুরআন ও হাদীসের স্পষ্ট ফয়সালাকে উপেক্ষা করে অন্যান্য ধর্মানুসারীদেরকেও মুক্তি লাভ করবে বলে বুঝাতে চায়। অথচ তারা অধিকাংশ রাসূলকে অথবা অন্তত কোন কোন নবীকে অমান্য করে। যার ফলে তাদের কাফের ও জাহান্নামী হওয়ার কথা অত্র আয়াতে স্পষ্ট ঘোষণা করা হয়েছে।
অমুসলিমদের প্রতি ইনসাফ, ন্যায়নীতি, সমবেদনা,সহানুভূতি, উদারতা ও ইহসান বা হিতকামনার দিক দিয়ে ইসলাম নজীরবিহীন। ইসলাম একদিকে মুসলিমদের প্রতি সদ্ব্যবহার ও পরমসহিষ্ণুতার ক্ষেত্রে যেমন উদার ও অবারিত দ্বার, অপরদিকে স্বীয় সীমারেখা সংরক্ষণের ব্যাপারে অতি সতর্ক, সজাগ ও কঠোর। ইসলাম অমুসলিমদের প্রতি উদারতার সাথে সাথে কুফর ও কু-প্রথার প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করে। ইসলামের দৃষ্টিতে মুসলিম ও অমুসলিমরা দুটি পৃথক জাতি এবং মুসলিমদের জাতীয় প্রতীক ও স্বাতন্ত্র্য সযত্নে সংরক্ষণ করা একান্ত প্রয়োজন। শুধু ইবাদাতের ক্ষেত্রেই স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখলে চলবে না, বরং সামাজিকতার ক্ষেত্রেও স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে হবে। এ কথা কুরআন ও হাদীসে বার বার উল্লেখ করা হয়েছে।
কুরআনুল কারীম ও ইসলামের অভিমত যদি এই হতো যে, যে কোন ধর্মমতের সাহায্যে মুক্তি লাভ করা সম্ভব, তাহলে ইসলাম প্রচারের জন্য জীবন উৎসর্গ করার কোন প্রয়োজন ছিল না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও খেলাফায়ে রাশেদীনের জিহাদ পরিচালনা করা এমনকি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়ত ও কুরআন নাযিল করারও কোন প্রয়োজন থাকতো না। পবিত্র কুরআনের এক জায়গায় বলা হয়েছে, “নিশ্চয় যারা সত্যিকারভাবে ঈমান এনেছে (মুসলিম হয়েছে) এবং যারা ইয়াহুদী হয়েছে এবং নাসারা (খৃষ্টান) ও সাবেয়ীনদের মধ্যে যারা আল্লাহ তা'আলা প্রতি ও কেয়ামতের দিনের প্রতি ঈমান এনেছে আর সৎকাজ করেছে, তাদের পালনকর্তার সমীপে তাদের জন্য পূর্ণ প্রতিদান সংরক্ষিত রয়েছে। তাদের কোন শঙ্কা নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না।” [সূরা আল-বাকারাহ: ৬২]
এ আয়াত থেকেও ভুল বোঝার কোন অবকাশ নেই। কেননা, কুরআনের পরিভাষায় আল্লাহ তা'আলার প্রতি ঈমান শুধু তখনই গ্রহণযোগ্য ও ধর্তব্য হয় যখন তার সাথে নবী-রাসূল, ফিরিশতা ও আসমানী কিতাবের প্রতিও ঈমান আনা হয়। তাই তাদের প্রত্যেককে সাধারণ মুসলিমদের মত পুরোপুরি ঈমান আনতে হবে। আল্লাহ্ তা'আলার প্রতি ঈমানের পাশাপাশি নবী-রাসূলগণের প্রতিও ঈমান আনা অপরিহার্য। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, “আর যদি তারা বিমুখ হয়, তবে (চিনে রাখুন যে) তারা আল্লাহ ও রাসূলের মধ্যে প্রভেদ সৃষ্টি করতে সচেষ্ট। অতএব, আপনার পক্ষ থেকে আল্লাহ তা'আলাই তাদের মোকাবেলায় যথেষ্ট এবং তিনি সবকিছু শোনেন ও জানেন।” [সূরা আল বাকারাহঃ ১৩৭]
সূরা আন-নিসার আলোচ্য আয়াতে আরো স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, আল্লাহ তা'আলার প্রেরিত কোন একজন নবীকেও যে ব্যক্তি অস্বীকার করবে সে প্রকাশ্য কাফের, তার জন্য জাহান্নামের চিরস্থায়ী আযাব অবধারিত রাসূলের প্রতি ঈমান ছাড়া আল্লাহ তা'আলার প্রতি সত্যিকার ঈমান সাব্যস্ত হয় না। শেষ আয়াতে পুনরায় দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করা হয়েছে যে, আখেরাতের মুক্তি ও কামিয়াবী শুধু ঐসব লোকের জন্যই সংরক্ষিত যারা আল্লাহ তা'আলার প্রতি ঈমানের সাথে সাথে তার নবী ও রাসূলগণের প্রতি যথার্থ ঈমান রাখে। বস্তুত: কুরআনের এক আয়াত অন্য আয়াতের ব্যাখ্যা ও তাফসীর করে। কুরআনী তাফসীরের পরিপন্থী কোন তাফসীর বর্ণনা কারো জন্য জায়েয নয়।
তাফসীরে জাকারিয়া(১৫১) তারাই হল প্রকৃতপক্ষে অবিশ্বাসী।[1] আর আমি অবিশ্বাসীদের জন্য লাঞ্ছনাকর শাস্তি প্রস্তুত রেখেছি।
[1] আহলে কিতাবদের সম্পর্কে প্রথমেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, তারা কিছু নবীগণের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, আর কিছু নবীগণকে অমান্য করে। যেমন, ইয়াহুদীরা ঈসা (আঃ) ও মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর প্রতি এবং খ্রিষ্টানরা মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে না। আল্লাহ তাআলা বলেন, নবীগণের মধ্যে পার্থক্যকারীগণ (ঈমানদার নয়); বরং পুরোপুরি কাফের।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমান এনেছে এবং তাদের কারো মধ্যে পার্থক্য করেনি, তাদেরকে অচিরেই তিনি তাদের প্রতিদান দিবেন এবং আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আল-বায়ান
আর যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে আর তাদের কারো মধ্যে কোন পার্থক্য করে না, তিনি অবশ্যই তাদেরকে তাদের পুরস্কার দান করবেন, আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল, বড়ই দয়ালু। তাইসিরুল
এবং যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাঁর রাসূলগণের মধ্যে কোন পার্থক্য করেনা - আল্লাহ শীঘ্রই তাদের প্রতিদান প্রদান করবেন এবং আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়। মুজিবুর রহমান
But they who believe in Allah and His messengers and do not discriminate between any of them - to those He is going to give their rewards. And ever is Allah Forgiving and Merciful. Sahih International
১৫২. আর যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলগনের প্রতি ঈমান এনেছে এবং তাদের একের সাথে অপরের পার্থক্য করেনি, অচিরেই তাদেরকে তিনি তাদের প্রতিদান দেবেন। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(১৫২) পক্ষান্তরে যারা আল্লাহ এবং তাঁর রসূলগণে বিশ্বাস করে এবং তাদের কোন একজনের সাথে অন্য জনের পার্থক্য করে না, তাদেরকেই তিনি পুরস্কার দেবেন।[1] আর আল্লাহ চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
[1] এই আয়াতে ঈমানদারদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে যে, তাঁরা সকল নবীগণের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে। যেমনটি মুসলিমরা কোন নবীকে অমান্য করে না। কুরআন কারীমের উপরোক্ত স্পষ্ট ঘোষণায় ঐ সব বিভ্রান্ত লোকদের মতবাদ খন্ডন করা হয়েছে, যারা বলে, ‘সব ধর্ম সমান।’ যারা অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতি উদারতা প্রদর্শন করতে গিয়ে নিজেদের ধর্মমত ও ধর্মীয় বিশ্বাসকে বিজাতির পদমূলে ‘উৎসর্গ’ দিতে চায়। যারা কুরআনের স্পষ্ট বিধানকে উপেক্ষা করে অন্যান্য ধর্মানুসারীদেরকে বুঝাতে চায় যে, ইসলামই একমাত্র মুক্তির সনদ নয়, বরং অমুসলিমরাও তাদের নিজ নিজ ধর্মে-কর্মে স্থির থেকে পরকালে পরিত্রাণ লাভ করতে পারে! অথচ কুরআনের এই আয়াতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপনের সাথে সাথে মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা জরুরী। সুতরাং কেউ যদি শেষ রসূলের রিসালতকে অমান্য করে, তাহলে আল্লাহর উপর তার ঈমান গ্রহণযোগ্য হবে না। (আরো দেখুন সূরা বাক্বারার ৬২নং আয়াতের টীকা)
তাফসীরে আহসানুল বায়ানকিতাবীগণ তোমার নিকট চায় যে, আসমান থেকে তুমি তাদের উপর একটি কিতাব নাযিল কর। অথচ তারা মূসার কাছে এর চেয়ে বড় কিছু চেয়েছিল, যখন তারা বলেছিল, ‘আমাদেরকে সামনাসামনি আল্লাহকে দেখাও’। ফলে তাদেরকে তাদের অন্যায়ের কারণে বজ্র পাকড়াও করেছিল। অতঃপর তারা বাছুরকে (উপাস্যরূপে) গ্রহণ করল, তাদের নিকট স্পষ্ট প্রমাণসমূহ আসার পরও। তারপর আমি তা ক্ষমা করে দিয়েছিলাম এবং মূসাকে দিয়েছিলাম সুস্পষ্ট প্রমাণ। আল-বায়ান
কিতাবধারীগণ তোমাকে আসমান থেকে তাদের সামনে কিতাব নিয়ে আসতে বলে। তারা তো মূসার কাছে এর চেয়েও বড় দাবী পেশ করেছিল। তারা বলেছিল- আমাদেরকে প্রকাশ্যে আল্লাহকে দেখাও। তখন তাদের অন্যায় ও বাড়াবাড়ির কারণে বিদ্যুৎ তাদের উপর আঘাত হেনেছিল। অতঃপর তাদের কাছে স্পষ্ট প্রমাণ আসার পরেও তারা গো-বৎসকে (উপাস্য) গ্রহণ করেছিল, তাও আমি ক্ষমা করে দিয়েছিলাম, আর মূসাকে সুস্পষ্ট কর্তৃত্ব দান করেছিলাম। তাইসিরুল
আহলে কিতাব তোমার নিকট আবেদন জানায় যে, তুমি তাদের প্রতি আকাশ হতে কোন গ্রন্থ নাযিল কর - পরন্ত তারা মূসার নিকট এটা অপেক্ষাও বৃহত্তর দাবী করেছিল। তারা বলেছিল, আল্লাহকে প্রকাশ্যভাবে প্রদর্শন কর; অতঃপর তাদের অবাধ্যতার জন্য বজ্রপাত তাদেরকে আক্রমণ করেছিল, অতঃপর তাদের নিকট নিদর্শনাবলী আসার পরেও তারা গো-বৎসকে উপাস্য হিসাবে গ্রহণ করেছিল। কিন্তু ওটাও আমি ক্ষমা করেছিলাম, এবং মূসাকে প্রকাশ্য প্রভাব প্রদান করেছিলাম। মুজিবুর রহমান
The People of the Scripture ask you to bring down to them a book from the heaven. But they had asked of Moses [even] greater than that and said, "Show us Allah outright," so the thunderbolt struck them for their wrongdoing. Then they took the calf [for worship] after clear evidences had come to them, and We pardoned that. And We gave Moses a clear authority. Sahih International
১৫৩. কিতাবীগণ আপনার কাছে তাদের জন্য আসমান হতে একটি কিতাব নাযিল করতে বলে; তারা মূসার কাছে এর চেয়েও বড় দাবী করেছিল। তারা বলেছিল, আমাদেরকে প্রকাশ্যে আল্লাহকে দেখাও। ফলে তাদের সীমালংঘনের কারণে তাদেরকে বজ্র পাকড়াও করেছিল; তারপর স্পষ্ট প্রমাণ তাদের কাছে আসার পরও তারা বাছুরকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করেছিল; অতঃপর আমরা তা ক্ষমা করেছিলাম এবং আমরা মূসাকে স্পষ্ট প্রমাণ প্রদান করেছিলাম।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(১৫৩) গ্রন্থধারিগণ তোমাকে তাদের জন্য আকাশ থেকে কোন কিতাব (ধর্মগ্রন্থ) অবতীর্ণ করতে বলে,[1] কিন্তু তারা মূসার কাছে এর থেকেও বড় দাবী করেছিল; তারা বলেছিল, ‘প্রকাশ্যে আমাদেরকে আল্লাহ দেখাও।’ তাদের সীমালংঘনের জন্য তারা বজ্রাহত হয়েছিল। অতঃপর স্পষ্ট প্রমাণ তাদের নিকট প্রকাশ হওয়ার পরও তারা গো-বৎসকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করেছিল, এটাও আমি ক্ষমা করেছিলাম। এবং মূসাকে প্রদান করেছিলাম সুস্পষ্ট প্রমাণ (ও প্রভাব)।
[1] অর্থাৎ, যেমন মূসা ত্বুর পাহাড়ে গিয়ে ফলকের উপর লিখিত তাওরাত নিয়ে এসেছিল, তেমনি তুমিও আসমানে গিয়ে লিখিত কুরআন নিয়ে এস। তাদের এ দাবী নিছক শত্রুতা, হঠকারিতা ও হঠধর্মিতার উপর ভিত্তি করে ছিল।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর তাদের অঙ্গীকার গ্রহণের জন্য তূরকে তাদের উপর তুলে ধরেছিলাম এবং তাদেরকে বলেছিলাম, ‘দরজায় প্রবেশ কর অবনত হয়ে’। তাদেরকে আমি আরও বলেছিলাম, ‘শনিবারে সীমালঙ্ঘন করো না’ এবং আমি তাদের কাছ থেকে দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়েছিলাম। আল-বায়ান
তাদের নিকট হতে অঙ্গীকার গ্রহণের জন্য আমি তূর পাহাড়কে তাদের ঊর্ধ্বে তুলে ধরেছিলাম, আর তাদেরকে বলেছিলাম- অবনত মস্তকে (নগর) দ্বারে প্রবেশ কর আর তাদেরকে বলেছিলাম শনিবারের আইন ভঙ্গ করো না, আর তাদের নিকট থেকে নিয়েছিলাম পাকা প্রতিশ্রুতি। তাইসিরুল
এবং আমি তাদের প্রতিশ্রুতির জন্য তাদের উপর তূর পর্বত সমুচ্চ করেছিলাম এবং তাদেরকে বলেছিলাম অবনত শিরে দ্বারে প্রবেশ কর। এবং তাদেরকে আরও বলেছিলাম, শনিবারের সীমা অতিক্রম করনা। এভাবে তাদের নিকট হতে কঠোর প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছিলাম। মুজিবুর রহমান
And We raised over them the mount for [refusal of] their covenant; and We said to them, "Enter the gate bowing humbly", and We said to them, "Do not transgress on the sabbath", and We took from them a solemn covenant. Sahih International
১৫৪. আর তাদের অঙ্গীকার গ্রহণের জন্য ‘তুর’ পর্বতকে আমরা তাদের উপর উত্তোলন করেছিলাম এবং তাদেরকে বলেছিলাম, নত শিরে দরজা দিয়ে প্রবেশ কর(১)। আর আমরা তাদেরকে আরও বলেছিলাম, শনিবারে সীমালংঘন করো না; এবং আমরা তাদের কাছ থেকে দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়েছিলাম।
(১) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বনী ইসরাঈলকে বলা হয়েছিল যে, তোমরা (প্রস্তাবিত শহরে) সিজদারত অবস্থায় প্রবেশ কর এবং বল, (হে আল্লাহ!) আমাদেরকে ক্ষমা করে দিন। তারা তা পরিবর্তন (সিজদারত অবস্থায় প্রবেশ না করে) নিতম্বের উপর ভর করে এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন এর পরিবর্তে যবের দানা চাই বলতে বলতে প্রবেশ করল। [বুখারীঃ ৩৪০৩]
তাফসীরে জাকারিয়া(১৫৪) আর তাদের অঙ্গীকার নেবার সময় তূর পর্বতকে তাদের উপর উচ্চ করে ধরেছিলাম এবং তাদেরকে বলেছিলাম, ‘নতশিরে (নগরের) দ্বার প্রবেশ কর’ এবং তাদেরকে বলেছিলাম, ‘শনিবারে (বিশ্রামের দিন মাছ ধরে) সীমালংঘন করো না’ এবং তাদের নিকট থেকে দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়েছিলাম।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ানঅতঃপর (তাদের শাস্তি দেয়া হয়েছিল) তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গ, আল্লাহর আয়াতসমূহের সাথে কুফরী করা, অন্যায়ভাবে নবীগণকে হত্যা করা এবং এ কথা বলার কারণে যে, ‘আমাদের অন্তরসমূহ আচ্ছাদিত’। বরং আল্লাহ তাদের কুফরীর কারণে অন্তরের উপর মোহর এঁটে দিয়েছিলেন। সুতরাং স্বল্পসংখ্যক ছাড়া তারা ঈমান আনবে না। আল-বায়ান
(তাদের প্রতি আল্লাহর অসন্তোষ নেমে এসেছে) তাদের ওয়া‘দা ভঙ্গের কারণে, আর আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করার কারণে, অন্যায়ভাবে নাবীগণকে তাদের হত্যা করার কারণে, আর ‘আমাদের হৃদয়গুলো আচ্ছাদিত’ তাদের এ কথা বলার কারণে- বরং তাদের অস্বীকৃতির কারণে আল্লাহ তাদের হৃদয়গুলোতে মোহর মেরে দিয়েছেন। যে কারণে তাদের অল্পসংখ্যক ছাড়া ঈমান আনে না। তাইসিরুল
কিন্তু তারা লা‘নতগ্রস্ত হয়েছিল তাদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ এবং আল্লাহর নিদর্শনাবলীর প্রতি তাদের অবিশ্বাস ও অন্যায়ভাবে তাদের নাবীদের হত্যা এবং ‘‘তাদের স্ব স্ব অন্তরসমূহ আচ্ছাদিত’’ এই উক্তি করার জন্য; হ্যাঁ - তাদের অবিশ্বাস হেতু আল্লাহ ওদের অন্তরে মোহর এঁটে দিয়েছেন, এ কারণে তারা অল্প সংখ্যক ব্যতীত বিশ্বাস করেনা । মুজিবুর রহমান
And [We cursed them] for their breaking of the covenant and their disbelief in the signs of Allah and their killing of the prophets without right and their saying, "Our hearts are wrapped". Rather, Allah has sealed them because of their disbelief, so they believe not, except for a few. Sahih International
১৫৫. অতঃপর (তারা অভিসম্পাত পেয়েছিল)(১) তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গের জন্য, আল্লাহর আয়াতসমূহের সাথে কুফরী করার জন্য, নবীগণকে অন্যায়ভাবে হত্যা করার জন্য এবং ‘আমাদের হৃদয় আচ্ছাদিত’ তাদের এ উক্তির জন্য। বরং তাদের কুফরীর কারণে আল্লাহ তার উপর মোহর মেরে দিয়েছেন। সুতরাং কেবল অল্প সংখ্যক লোকই ঈমান আনবে।
(১) বলা হয়েছে, ‘আর তাদের অঙ্গিকার ভঙ্গের কারণে এবং---’ কিন্তু এর কারণে কি হয়েছে সেটা বলা হয় নি। বরং উত্তরটি উহ্য রাখা হয়েছে। সূরা আল-মায়িদাহ এর ১৩ নং আয়াতে বলা হয়েছে, আর তাদের অঙ্গিকার ভঙ্গের জন্য আমরা তাদেরকে লা'নত করেছিলাম। সুতরাং এখানেও একই অর্থ গ্রহণ করা যায়। যাজ্জাজ বলেন, আয়াতের উত্তর হচ্ছে, তাদের অঙ্গিকার ভঙ্গের কারণে তাদের উপর আমরা অনেক হালাল বস্তু হারাম করেছি। কারণ, ১৬০ নং আয়াতে তা-ই বর্ণিত হয়েছে। কোন কোন মুফাসসিরের মতে, এ আয়াতের শেষে বর্ণিত, বরং আল্লাহ তাদের উপর মোহর করেছেন এ কথাটিই উপরোক্ত কথার উত্তর। আবার কারও কারও মতে, আয়াতের শেষে বর্ণিত, কেবল অল্প সংখ্যকই ঈমান আনবে এটাই হচ্ছে পূর্ববর্তী কথার উত্তর। [ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(১৫৫) (তারা অভিশপ্ত হয়েছিল) কারণ, তারা তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছিল, আল্লাহর আয়াতসমূহকে অবিশ্বাস করেছিল, নবীগণকে অন্যায়ভাবে হত্যা করেছিল[1] এবং বলেছিল, ‘আমাদের হৃদয় আচ্ছাদিত।’ বরং তাদের অবিশ্বাসের জন্য আল্লাহই তাদের (হৃদয়ে) মোহর মেরে দিয়েছেন, ফলে তাদের অল্প সংখ্যকই বিশ্বাস করে।
[1] প্রকৃত বাক্য এই রকম হবে; (فَبِنَقْضِهِمْ مِيْثَاقَهُمْ لَعَنَّاهُم) অর্থাৎ আমি তাদেরকে অঙ্গীকার ভঙ্গ, আল্লাহর নিদর্শনাবলীকে অস্বীকার ও অন্যায়ভাবে নবীগণকে হত্যা করার কারণে অভিশপ্ত করেছিলাম বা শাস্তি দিয়েছিলাম।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর তাদের কুফরীর কারণে এবং মারইয়ামের বিরুদ্ধে মারাত্মক অপবাদ দেয়ার কারণে। আল-বায়ান
(তাদের প্রতি আল্লাহর অসন্তোষ নেমে এসেছে) তাদের কুফরীর জন্য আর মারইয়ামের প্রতি তাদের গুরুতর অপবাদপূর্ণ কথা উচ্চারণের জন্য। তাইসিরুল
এবং তাদের কুফরী ও মারইয়ামের প্রতি তাদের ভয়ানক অপবাদের জন্য। মুজিবুর রহমান
And [We cursed them] for their disbelief and their saying against Mary a great slander, Sahih International
১৫৬. আর তাদের কুফরীর জন্য এবং মারইয়ামের বিরুদ্ধে গুরুতর অপবাদের জন্য।(১)
(১) মারইয়ামের উপর চাপানো তাদের গুরুতর অপবাদ কি ছিল তা এখানে বর্ণনা করা হয় নি। অন্যত্র এসেছে যে, তারা মারইয়ামকে ব্যভিচারের অপবাদ দিতে ক্রটি করে নি। আল্লাহ বলেন, “তারপর সে সন্তানকে নিয়ে তার সম্প্রদায়ের কাছে উপস্থিত হল; তারা বলল, ‘হে মারইয়াম! তুমি তো এক অদ্ভুত জিনিস নিয়ে এসেছ’। [সূরা মারইয়াম: ২৭] এখানে অঘটন বলতে তারা ব্যভিচারের দিকেই অঙ্গুলি নির্দেশ করছিল। কারণ পরবর্তী আয়াতে মারইয়ামের বাবা খারাপ লোক না হওয়া এবং মা-ও বেশ্যা না হওয়া বলার মাধ্যমে সেটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। [আদওয়াউল বায়ান]
তাফসীরে জাকারিয়া(১৫৬) এবং তারা তাদের অবিশ্বাসের জন্য ও মারয়্যামের প্রতি জঘন্য অপবাদ আরোপ করার জন্য (অভিশপ্ত হয়েছিল)। [1]
[1] এই আয়াতের লক্ষার্থ হল, ইউসুফ নাজ্জার (যোসেফ) নামক একজন লোকের সঙ্গে মারয়্যাম (‘আলাইহাস্ সালাম)-এর ব্যভিচারের যে মিথ্যা অপবাদ আরোপ করা হয়েছিল তার খন্ডন। আজও কিছু তথাকথিত তত্ত্বানুসন্ধানী এই মস্তবড় মিথ্যা অপবাদকে একটি ‘প্রামাণ্য সত্য’ বলে বিশ্বাস করে এবং ইউসুফ নাজ্জারকে ঈসা (আঃ)-এর পিতা প্রমাণ করার অপচেষ্টা করে। (نَعُوْذُبِاللهِ) এমনকি তারা ঈসা (আঃ)-এর অলৌকিক জন্মকেও অস্বীকার করে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানএবং তাদের এ কথার কারণে যে, ‘আমরা আল্লাহর রাসূল মারইয়াম পুত্র ঈসা মাসীহকে হত্যা করেছি’। অথচ তারা তাকে হত্যা করেনি এবং তাকে শূলেও চড়ায়নি। বরং তাদেরকে ধাঁধায় ফেলা হয়েছিল। আর নিশ্চয় যারা তাতে মতবিরোধ করেছিল, অবশ্যই তারা তার ব্যাপারে সন্দেহের মধ্যে ছিল। ধারণার অনুসরণ ছাড়া এ ব্যাপারে তাদের কোন জ্ঞান নেই। আর এটা নিশ্চিত যে, তারা তাকে হত্যা করেনি। আল-বায়ান
আর ‘আমরা আল্লাহর রসূল মাসীহ ঈসা ইবনু মারইয়ামকে হত্যা করেছি’ তাদের এ উক্তির জন্য। কিন্তু তারা না তাকে হত্যা করেছে, না তাকে ক্রুশবিদ্ধ করেছে, কেবলমাত্র তাদের জন্য (এক লোককে) তার সদৃশ করা হয়েছিল, আর যারা এ বিষয়ে মতভেদ করেছিল তারাও এ সম্পর্কে সন্দেহে পতিত হয়েছিল। শুধু অমূলক ধারণার অনুসরণ ছাড়া এ ব্যাপারে তাদের কোন জ্ঞানই ছিল না। এটা নিশ্চিত সত্য যে, তারা তাকে হত্যা করেনি। তাইসিরুল
এবং ‘‘আল্লাহর রাসূল ও মারইয়াম নন্দন ঈসাকে আমরা হত্যা করেছি’’ বলার জন্য। অথচ তারা না তাকে হত্যা করেছে আর না শুলে চড়িয়েছে; বরং তারা ধাঁধাঁয় পতিত হয়েছিল। তারা তদ্বিষয়ে সন্দেহাচ্ছন্ন ছিল, কল্পনার অনুসরণ ব্যতীত এ বিষয়ে তাদের কোন জ্ঞান ছিলনা। প্রকৃত পক্ষে তারা তাকে হত্যা করেনি। মুজিবুর রহমান
And [for] their saying, "Indeed, we have killed the Messiah, Jesus, the son of Mary, the messenger of Allah." And they did not kill him, nor did they crucify him; but [another] was made to resemble him to them. And indeed, those who differ over it are in doubt about it. They have no knowledge of it except the following of assumption. And they did not kill him, for certain. Sahih International
১৫৭. আর আমরা আল্লাহর রাসূল মারইয়াম তনয় ‘ঈসা মসীহকে হত্যা করেছি’ তাদের এ উক্তির জন্য। অথচ তারা তাকে হত্যা করেনি এবং ক্রুশবিদ্ধও করেনি; বরং তাদের জন্য (এক লোককে) তার সদৃশ করা হয়েছিল।(১) আর নিশ্চয় যারা তার সম্বন্ধে মতভেদ করেছিল, তারা অবশ্যই এ সম্বন্ধে সংশয়যুক্ত ছিল; এ সম্পর্কে অনুমানের অনুসরণ ছাড়া তাদের কোন জ্ঞানই ছিল না। আর এটা নিশ্চিত যে, তারা তাকে হত্যা করেনি,
(১) এখানে স্পষ্ট ঘোষণা করা হয়েছে যে, ওরা ঈসা আলাইহিস সালাম-কে হত্যাও করতে পারেনি, শুলেও চড়াতে পারেনি, বরং আসলে ওরা সন্দেহে পতিত হয়েছিল। কিন্তু তাদের সন্দেহ কি ছিল এ ব্যাপারে বিভিন্ন বর্ণনা এসেছে, সব বর্ণনার সার কথা হচ্ছে, ইয়াহুদীরা যখন ঈসা আলাইহিস সালাম-কে হত্যা করতে বদ্ধপরিকর হলো, তখন তার ভক্ত-সহচরবৃন্দ এক স্থানে সমবেত হলেন। ঈসা আলাইহিস সালামও সেখানে উপস্থিত হলেন। তখন চার হাজার ইয়াহুদী দূরাচার একযোগে গৃহ অবরোধ করলো। তখন ঈসা আলাইহিস সালাম স্বীয় ভক্ত অনুচরগণকে সম্বোধন করে বললেন, তোমাদের মধ্য থেকে কেউ এই ঘর থেকে বের হতে ও নিহত হতে এবং আখেরাতে জান্নাতে আমার সাথী হতে প্রস্তুত আছো কি? জনৈক ভক্ত আত্মোৎসর্গের জন্য উঠে দাঁড়ালেন। ঈসা আলাইহিস সালাম নিজের জামা ও পাগড়ী তাকে পরিধান করালেন। অতঃপর তাকে ঈসা আলাইহিস সালাম-এর সাদৃশ করে দেয়া হলো। যখন তিনি ঘর থেকে বের হলেন, তখন ইয়াহুদীরা ঈসা আলাইহিস সালাম মনে করে তাকে বন্দী করে নিয়ে গেল এবং শুলে চড়িয়ে হত্যা করলো। অপরদিকে ঈসা আলাইহিস সালাম-কে আল্লাহ্ তা'আলা আসমানে তুলে নিলেন।
অন্য এক বর্ণনায় পাওয়া যায় যে, ইয়াহুদীরা এক লোককে ঈসা আলাইহিস সালাম-কে হত্যা করার জন্য পাঠিয়েছিল। কিন্তু ইতোপূর্বে আল্লাহ্ তা'আলা তাকে আকাশে তুলে নেয়ায় সে তার নাগাল পেল না। বরং ইতিমধ্যে তার নিজের চেহারা ঈসা আলাইহিস সালাম-এর মত হয়ে গেল। ব্যর্থ মনোরথ হয়ে সে যখন ঘর থেকে বেরিয়ে এল তখন অন্যান্য ইয়াহুদীরা তাকেই ঈসা আলাইহিস সালাম মনে করে পাকড়াও করলো, এবং শুলে বিদ্ধ করে হত্যা করলো। উক্ত বর্ণনা দুটির মধ্যে যে কোনটিই সত্য হতে পারে। কুরআনুল কারীম এ সম্পর্কে স্পষ্ট কিছু ব্যক্ত করেনি। অতএব, প্রকৃত ঘটনার সঠিক খবর একমাত্র আল্লাহ্ তা'আলাই জানেন। অবশ্য কুরআনুল কারীমের আয়াত ও তাফসীর সংক্রান্ত বর্ণনার সমন্বয়ে সিদ্ধান্ত করা যায় যে, প্রকৃত ঘটনা ইয়াহুদী-খৃষ্টানদেরও অজ্ঞাত ছিল। তারা চরম বিভ্রান্তির আবর্তে নিক্ষিপ্ত হয়ে শুধু অনুমান করে বিভিন্ন উক্তি ও দাবী করছিল।
ফলে উপস্থিত লোকদের মধ্যেই চরম মতভেদ ও বিবাদের সৃষ্টি হয়েছিল। তাই কুরআনুল কারীমে বলা হয়েছে যে, যারা ঈসা আলাইহিস সালাম সম্পর্কে নানা মত পোষন করে নিশ্চয় এ ব্যাপারে তারা সন্দেহে পতিত হয়েছে। তাদের কাছে এ সম্পর্কে কোন সত্যনির্ভর জ্ঞান নেই। তারা শুধু অনুমান করে কথা বলে। আর তারা যে ঈসা আলাইহিস সালাম-কে হত্যা করেনি, এ কথা সুনিশ্চিত। বরং আল্লাহ্ তা'আলা তাকে নিরাপদে নিজের কাছে তুলে নিয়েছেন। কোন কোন বর্ণনায় এসেছে যে, সম্বিত ফিরে পাওয়ার পর কিছু লোক বললো, আমরা তো নিজেদের লোককেই হত্যা করে ফেলেছি। কেননা, নিহত ব্যক্তির মুখমণ্ডল ঈসা 'আলাইহিস সালাম-এর মত হলেও তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অন্য রকম। তদুপরি এ ব্যক্তি যদি ঈসা আলাইহিস সালাম হয়, তবে আমাদের প্রেরিত লোকটি গেল কোথায়? আর এ ব্যক্তি আমাদের হলে ঈসা আলাইহিস সালামই বা কোথায় গেলেন? মোটকথা: ঈসা আলাইহিস সালাম সম্পর্কে ইয়াহুদী ও নাসারা যারাই কথা বলে তারাই বিভ্রান্তিতে লিপ্ত। তাদের কাছে এ ব্যাপারে কোন জ্ঞান নেই।
তাফসীরে জাকারিয়া(১৫৭) আর ‘আমরা আল্লাহর রসূল মারয়্যাম-পুত্র ঈসা মসীহকে হত্যা করেছি’ তাদের এ উক্তির জন্য (অভিশপ্ত হয়েছিল)। অথচ তারা তাকে হত্যা করেনি এবং ক্রুসবিদ্ধও করেনি,[1] বরং তাদের জন্য (অন্য একজনকে ঈসার) আকৃতি দান করা হয়েছিল।[2] নিঃসন্দেহে যারা তার সম্বন্ধে মতভেদ করেছিল, বস্তুতঃ তারা এ সম্বন্ধে সংশয়যুক্ত ছিল এবং অনুমানের অনুসরণ ছাড়া এ সম্পর্কে তাদের কোন জ্ঞানই ছিল না।[3] আর এ নিশ্চিত যে, তারা তাকে হত্যা করেনি।
[1] এই আয়াত থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ইয়াহুদীরা ঈসা (আঃ)-কে হত্যা করতে বা শূলে চড়াতে (ক্রুসবিদ্ধ করতে) কোনটিতেই সফল হয়নি যেমনটি তাঁদের উদ্দেশ্য, পরিকল্পনা ও অভিপ্রায় ছিল। এ প্রসঙ্গে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা সূরা আলে-ইমরানের ৫৫নং আয়াতের টীকায় বর্ণনা করা হয়েছে।
[2] এর ব্যাখ্যা হলো, যখন ঈসা (আঃ) ইয়াহুদীদের হত্যা করার চক্রান্তের কথা জানতে পারলেন, তখন তাঁর ভক্ত ও সহচরবৃন্দকে এক স্থানে সমবেত করলেন, যাদের সংখ্যা ১২ অথবা ১৭ ছিল। এবং তাঁদেরকে বললেন, তোমাদের মধ্যে কে আমার স্থানে নিহত হুতে প্রস্তুত আছ? যাকে আল্লাহ তা'আলা আমার মত আকার-আকৃতি দান করবেন। তাঁদের মধ্যে একজন যুবক প্রস্তুত হয়ে গেলেন। সুতরাং ঈসা (আঃ)-কে আল্লাহর নির্দেশে আসমানে উঠিয়ে নেওয়া হল। এরপর ইয়াহুদীরা এসে ঐ যুবককে নিয়ে গেল এবং ক্রুসবিদ্ধ করল, যাঁকে মহান আল্লাহ ঈসা (আঃ)-এর মত আকৃতি দান করেছিলেন। আর ইয়াহুদীদের ধারণা হল যে, তারা ঈসাকেই ক্রুসবিদ্ধ করতে কৃতকার্য ও সক্ষম হয়েছে। অথচ তিনি ঐ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন না; বরং তাঁকে জীবিত অবস্থায় সশরীরে নিরাপদে আসমানে উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। (ফাতহুল ক্বাদীর, ইবনে কাসীর)
[3] ঈসা (আঃ)-এর মত আকৃতিবিশিষ্ট লোকটিকে হত্যা করার পর ইয়াহুদীদের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়; একদল বলে, ঈসাকে হত্যা করা হয়েছে। অন্য একদল বলে, ক্রুসবিদ্ধ ব্যক্তি ঈসা নয়; বরং অন্য কোন ব্যক্তি। এরা ঈসা (আঃ)-কে হত্যা ও ক্রুসবিদ্ধ করার কথা অস্বীকার করে। আবার অন্য একদল বলে, তারা ঈসা (আঃ)-কে আসমানে চড়তে স্বচক্ষে দেখেছে। কিছু মুফাসসির বলেন, উক্ত মতভেদ থেকে উদ্দেশ্য হল, স্বয়ং নাসারাদের নাস্তরিয়া নামক একটি ফির্কা বলে যে, ঈসা (আঃ)-কে তাঁর মানবিক দেহ হিসাবে ক্রুসবিদ্ধ করা হয়েছে; কিন্তু ঈশ্বর হিসাবে নয়। আবার মালকানিয়া নামক একটি ফির্কা বলে, মানবিক ও ঐশ্বরিক উভয়ভাবেই তাঁকে হত্যা ও ক্রুসবিদ্ধ করা হয়েছে। (ফাতহুল ক্বাদীর) যাই হোক তারা মতবিরোধ, সংশয় ও সন্দেহের শিকার।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান