যেমন, আপনি হয়ত ২ নং সূরার ২০ নং আয়াত এবং ১০ নং সূরার ৫ নং আয়াত এভাবে একসাথে আরো অন্য সূরার অন্য আয়াত সার্চ করতে চাইছেন, সেক্ষেত্রে আপনাকে উপরের সার্চ বক্সে
২:২০, ১০:৫ এভাবে অথবা ২/২০, ১০/৫ এভাবে লিখে সার্চ করতে হবে।
আপনি সূরা ও আয়াত নং বাংলা অথবা ইংরেজিতে লিখতে পারেন।
কসম এই নিরাপদ নগরীর। আল-বায়ান
আর (ইবরাহীম ও ইসমাঈল কর্তৃক নির্মিত কা‘বার) এই নিরাপদ নগরীর শপথ, তাইসিরুল
এবং শপথ এই নিরাপদ বা শান্তিময় নগরীর – মুজিবুর রহমান
And [by] this secure city [Makkah], Sahih International
৩. শপথ এই নিরাপদ নগরীর(১)-
(১) এ সূরায় কয়েকটি বস্তুর শপথ করা হয়েছে। (এক) তীন অর্থাৎ আঞ্জির বা ডুমুর এবং যায়তুন। (দুই) সিনাই প্রান্তরস্থ তুর পর্বত। (তিন) নিরাপদ শহর তথা মক্কা মোকাররমা। এই বিশেষ শপথের কারণ এই হতে পারে যে, তুর পর্বত ও মক্কা নগরীর ন্যায় ডুমুর ও যায়তুন বৃক্ষও বিপুল উপকারী বস্তু। অথবা এটাও সম্ভবপর যে, এখানে তীন ও যায়তুন উল্লেখ করে সে স্থানকে বোঝানো হয়েছে, যেখানে এ বৃক্ষ প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হয়। আর সে স্থান হচ্ছে সিরিয়া ও ফিলিস্তিন অঞ্চল, যা অগণিত রাসূলগণের আবাসভূমি। বিশেষ করে তা ঈসা আলাইহিস সালামের নবুয়ত-প্ৰাপ্তিস্থান। আর তুর পর্বত মূসা আলাইহিস সালাম-এর আল্লাহর সাথে বাক্যালাপের স্থান। সিনীন অথবা সীনা- তুর পর্বতের অবস্থানস্থলের নাম। পরবর্তীতে উল্লেখ করা নিরাপদ শহর হল পবিত্র মক্কা; যা শেষনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্মস্থান ও নবুয়ত প্ৰাপ্তিস্থান। [বাদাইউত তাফসীর, ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া৩। এবং শপথ এই নিরাপদ নগরী (মক্কা)র। [1]
[1] এখানে ‘নিরাপদ নগরী’ বলে মক্কা নগরীকে বোঝানো হয়েছে। যেখানে কোন প্রকার যুদ্ধ বা হত্যাকান্ড বৈধ নয়। এ ছাড়াও যে ব্যক্তি এই শহরে প্রবেশ করে যাবে সেও নিরাপত্তার অধিকারী হবে। কিছু ব্যাখ্যাকারীগণ বলেছেন যে, আসলে এখানে আল্লাহ তিনটি জায়গার কসম খেয়েছেন; যে জায়গাগুলিতে সুখ্যাতিসম্পন্ন, শরীয়তপ্রাপ্ত পয়গম্বর প্রেরণ হয়েছেন। ‘তীন’ ও ‘যায়তুন’ থেকে সেই এলাকা বোঝান হয়েছে যেখানে এসব ফল (অধিকাধিক) উৎপন্ন হয়। আর সেটা হল ‘বাইতুল মাকদিস’ এলাকা। যেখানে ঈসা (আঃ) পয়গম্বর হয়ে প্রেরিত হয়েছিলেন। ‘ত্বুরে সীনা’ অথবা সিনাই পর্বতে মূসা (আঃ)-কে নবুঅত দান করা হয়েছিল। আর মক্কা নগরীতে নবীকূল শিরোমণি মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে প্রেরণ করা হয়েছিল। (ইবনে কাসীর)
তাফসীরে আহসানুল বায়ানঅবশ্যই আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি সর্বোত্তম গঠনে। আল-বায়ান
আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি অতি উত্তম আকার আকৃতি দিয়ে, (এবং জ্ঞান ও যোগ্যতা দিয়ে যার সুন্দরতম নমুনা হল নবী রসূলগণ)। তাইসিরুল
আমিতো সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতম গঠনে, মুজিবুর রহমান
We have certainly created man in the best of stature; Sahih International
৪. অবশ্যই আমরা সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতম গঠনে(১),
(১) তীন ও যায়তুন বা এগুলো উৎপন্ন হওয়ার এলাকা- অর্থাৎ সিরিয়া ও ফিলিস্তান; তূর পর্বত এবং নিরাপদ শহর তথা মক্কার কসম এ কথাটির উপরই করা হয়েছে। বল হয়েছে, মানুষকে সর্বোত্তম কাঠামোয় সৃষ্টি করা হয়েছে। একথার মানে হচ্ছে এই যে, তাকে এমন উন্নত পৰ্যায়ের দৈহিক সৌষ্ঠব দান করা হয়েছে যা অন্য কোন প্ৰাণীকে দেয়া হয়নি। আয়াতে বর্ণিত تَقْوِيم এর অর্থ কোন কিছুর অবয়ব ও ভিত্তিকে যেরূপ করা উচিৎ, সে-রকমভাবে পরিপূর্ণ আকারে গঠন করা। তা দ্বারা উদ্দেশ্য এই যে, আল্লাহ্ তা'আলা মানুষকে দৈহিক অবয়ব এবং আকার-আকৃতি ও আচার-ব্যবহার ও মানুষ্যত্বের মাধ্যমে অন্যান্য সব প্রাণী অপেক্ষা সুন্দরতম করেছেন। [বাদা’ই’উত তাফসীর, আদওয়াউল বায়ান] আকার আকৃতির বাইরেও আল্লাহ তা'আলা তাকে জ্ঞানী, শক্তিবান, বক্তা, শ্রোতা, স্রষ্টা, কুশলী এবং প্রজ্ঞাবান করেছেন। [ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া৪। আমি তো সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতম গঠনে। [1]
[1] এটা হল কসমের জওয়াব। আল্লাহ তাআলা প্রতিটি প্রাণীকে সৃষ্টি করেছেন নিচুমুখী করে। কেবলমাত্র মানুষকে সৃষ্টি করেছেন আলম্বিত দেহ সোজা করে; যে নিজের হাত দিয়ে পানাহার করে। তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে যথোপযোগী বানিয়েছেন। তাতে পশুর মত বেমানান ও অসামঞ্জস্য নেই। প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জোড়া জোড়া সৃষ্টি করেছেন এবং তার মাঝে উচিত ব্যবধানও রেখেছেন। তাতে বিবেক-বুদ্ধি, চিন্তা-চেতনা, বোঝশক্তি, প্রজ্ঞা, শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি দান করেছেন। যার ফলে মানুষ আসলে তাঁর কুদরতের প্রকাশস্থল এবং তাঁর শক্তিমত্তার প্রতিবিম্ব। কিছু উলামা إن الله خلق آدم على صورته (অর্থাৎ, নিশ্চয় আল্লাহ আদমকে তাঁর নিজ আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন।) হাদীসে উক্ত অর্থ গ্রহণ করেছেন।(মুসলিম নেকী ও আত্মীয়তা এবং আদব অধ্যায়)
মানুষের সৃষ্টিতে উক্ত সকল জিনিসের ব্যবস্থা করাটাই হল ‘আহসানি তাকবীম’ (সুন্দরতম গঠন) যা মহান আল্লাহ তিনটি বস্তুর কসম খাওয়ার পর উল্লেখ করেছেন। (ফাতহুল কাদীর)
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতারপর আমি তাকে ফিরিয়ে দিয়েছি হীনদের হীনতম রূপে। আল-বায়ান
আবার উল্টোদিকে তাকে করেছি হীনদের হীনমত (যেমন আল্লাহ বিদ্রোহী কাফির, অত্যাচারী রাজা-বাদশা-শাসক, খুনী, পুতুল পূজারী ইত্যাদি)। তাইসিরুল
অতঃপর আমি তাকে হীনতাগ্রস্তদের হীনতমে পরিণত করি – মুজিবুর রহমান
Then We return him to the lowest of the low, Sahih International
৫. তারপর আমরা তাকে হীনতাগ্রস্তাদের হীনতমে পরিণত করি—(১)
(১) মুফাস্সিরগণ সাধারণত এর দু'টি অর্থ বর্ণনা করেছেন। এক, আমি তাকে যৌবনের পর বার্ধক্যের এমন এক অবস্থার দিকে ফিরিয়ে দিয়েছি যেখানে সে কিছু চিন্তা করার, বুঝার ও কাজ করার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলে; ছোট শিশুর মত হয়ে যায়। দুই. আয়াতের দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে, আমি তাকে জাহান্নামের সর্বনিম্ন পর্যায়ের দিকে ফিরিয়ে দিয়েছি। সর্বোত্তম কাঠামোয় সৃষ্টি করার পর যখন মানুষ নিজের দৈহিক ও মানসিক শক্তিগুলোকে দুস্কৃতির পথে ব্যবহার করে তখন আল্লাহ তাকে এর উপযুক্ত প্রতিদান হিসেবে জাহান্নামকে তার আবাসস্থল বানিয়ে দেন। [কুরতুবী]
তাফসীরে জাকারিয়া৫। অতঃপর আমি তাকে হীনতার সবচেয়ে নিম্নস্তরে ফিরিয়ে দিয়েছি।[1]
[1] এখানে মানুষের স্থবিরতা ও অন্তিম আয়ুর প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। যে সময়ে যুবক অবস্থা ও শক্তিমত্তার পর বার্ধক্য ও দুর্বলতা এসে পড়ে। আর তখন মানুষের জ্ঞান-বুদ্ধি ও বোধশক্তি শিশুদের মত হয়ে যায়। কেউ কেউ এখানে সেই হীনতার অর্থ গ্রহণ করেছেন যাতে মানুষ পতিত হয়ে অতিরিক্ত নীচতা এবং সাপ-বিছা থেকেও বেশী নিকৃষ্ট হয়ে যায়। আবার কেউ বলেন, এ আয়াত দ্বারা সেই লাঞ্ছনাকর আযাবকে বোঝানো হয়েছে যা জাহান্নামে কাফেরদের জন্য অপেক্ষা করছে। অর্থাৎ, মানুষ আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য না করে নিজেকে ‘আহ্সানি তাকবীম’-এর উচ্চ মর্যাদা থেকে জাহান্নামের নিম্নদেশে ঠেলে দেয়।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতবে যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে, তাদের জন্য রয়েছে নিরবচ্ছিন্ন পুরস্কার। আল-বায়ান
কিন্তু তাদেরকে নয় যারা ঈমান আনে ও সৎ কাজ করে, তাদের জন্য তো আছে অফুরন্ত প্রতিদান। তাইসিরুল
কিন্তু তাদের নয় যারা মু’মিন ও সৎ কর্মপরায়ণ; তাদের জন্যতো আছে নিরবিচ্ছিন্ন পুরস্কার। মুজিবুর রহমান
Except for those who believe and do righteous deeds, for they will have a reward uninterrupted. Sahih International
৬. কিন্তু তাদেরকে নয় যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে; এদের জন্য তো আছে নিরবচ্ছিন্ন পুরস্কার।(১)
(১) এ আয়াতে মুমিন সৎকর্মশীলগণ এর ব্যতিক্রম বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যেসব মুফাসসির “আসফালা সাফেলীন” এর অর্থ করেছেন, বার্ধক্যের এমন একটি অবস্থা যখন মানুষ নিজের চেতনা ও স্বাভাবিক জ্ঞান-বুদ্ধি হারিয়ে ফেলে, তারা এই আয়াতের অর্থ এভাবে বর্ণনা করেছেন যে, বয়সের এই পর্যায়েও তারা ঐ ধরনের সৎকাজগুলো করেনি বলে তাদের ভালো প্রতিদান দেবার ক্ষেত্রে কোন হেরফের হবে না, কমতি হবে না। বাৰ্ধক্যজনিত বেকারত্ব ও কর্মহ্রাস পাওয়া সত্বেও তাদের আমলানামায় সেসব কর্ম লিখিত হয়, যা তারা শক্তিমান অবস্থায় করত। [তাবারী] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “কোন মুসলিম অসুস্থ হয়ে পড়লে অথবা মুসাফির হলে আল্লাহ তা'আলা আমল লেখক ফেরেশতাগণকে আদেশ দেন, সুস্থ অবস্থায় সে যেসব সৎকর্ম করত, সেগুলো তার আমলনামায় লিপিবদ্ধ করতে থাক।” [বুখারী: ২৯৯৬, মুসনাদে আহমাদ: ২/১৯৪, ৩/২৫৮]
পক্ষান্তরে যেসব মুফাস্সির “ফিরিয়ে দেবার” অর্থ ‘জাহান্নামের নিম্নতম স্তরে নিক্ষেপ করা’ করেছেন তাদের মতে, মহান আল্লাহ তা'আলা মানুষকে সুন্দর গঠনে সৃষ্টি করে তাকে অনেক নেয়ামত দান করেছেন, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করে দুনিয়ায় খেল-তামাশায় মত্ত হয়ে যায়। এই অকৃতজ্ঞতার শাস্তি হিসেবে তাদেরকে জাহান্নামের হীনতম ও নিম্নতম পর্যয়ে পৌছে দেয়া হবে। কিন্তু যারা মুমিন ও সৎকর্মী, তাদেরকে নিকৃষ্টতম পর্যায়ে পৌছানো হবে না; বরং তারা জান্নাতে এমন পুরস্কার পাবে যার ধারাবাহিকতা কোনদিন শেষ হবে না, যে পুরষ্কারের কোন কমতি হবে না। [বাদা'ই'উত তাফসীর, সা’দী]
তাফসীরে জাকারিয়া৬। কিন্তু তাদেরকে নয় যারা বিশ্বাস করেছে ও সৎকর্ম করেছে, তাদের জন্য তো আছে নিরবচ্ছিন্ন পুরস্কার। [1]
[1] এ আয়াতটি পূর্বের আয়াতের প্রথম অর্থের বিশদ বিবরণ। অর্থাৎ, এ দিয়ে মু’মিনদের অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে; (তারা অন্তিম বার্ধক্যে পৌঁছলেও তাদের জন্য রয়েছে নিরবচ্ছিন্ন পুরস্কার)। আর দ্বিতীয় ও তৃতীয় অর্থের দিক দিয়ে এটি পূর্বের বাক্যেরই তাকীদ। অবশ্য এই পরিণাম থেকে মু’মিনদেরকে পৃথক করা হয়েছে। (ফাতহুল ক্বাদীর)
তাফসীরে আহসানুল বায়ানসুতরাং এরপরও কিসে তোমাকে কর্মফল সম্পর্কে অবিশ্বাসী করে তোলে? আল-বায়ান
(ভাল কাজের পুরস্কার দেয়া আর অন্যায় কাজের শাস্তি দেয়াই ইনসাফপূর্ণ কথা) কাজেই শেষ বিচারের দিনকে অস্বীকার করতে কিসে তোমাদেরকে উদ্বুদ্ধ করছে? তাইসিরুল
সুতরাং এরপর কিসে তোমাকে কর্মফল সম্বন্ধে অবিশ্বাসী করে? মুজিবুর রহমান
So what yet causes you to deny the Recompense? Sahih International
৭. কাজেই (হে মানুষ!) এরপর কিসে তোমাকে কৰ্মফল দিন সম্পর্কে অবিশ্বাসী করে?(১)
(১) এতে কেয়ামতে অবিশ্বাসীদেরকে হুশিয়ার করা হয়েছে যে, আল্লাহর কুদরাতের উপরোক্ত দৃশ্য ও পরিবর্তন দেখার পরও তোমাদের জন্যে আখেরাত ও কেয়ামতকে মিথ্যা মনে করার কি অবকাশ থাকতে পারে? তোমাদেরকে আল্লাহ তা'আলা সুন্দর করে সৃষ্টি করেছেন, তিনি ইচ্ছা করলে হীনতম ও নিম্নতম পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারেন, তারপরও কেন তোমরা তা অস্বীকার করবে? এর আরেকটি অনুবাদ এও হতে পারে, এসব প্রমাণের পর (হে রাসূল) শাস্তি ও পুরষ্কারের ব্যাপারে কে আপনাকে মিথ্যা বলতে পারে? [কুরতুবী] এই কথাটিকেই কুরআনের অন্যান্য স্থানে এভাবে বলা হয়েছে, “আমি কি অনুগতদেরকে অপরাধীদের মতো করে দেবো? তোমাদের কি হয়ে গেছে? তোমরা কেমন ফয়সালা করছো? [সূরা আল-কলম: ৩৫–৩৬] আরো এসেছে, “দুষ্কৃতকারীরা কি একথা মনে করেছে, আমি তাদেরকে এমন লোকদের মতো করে দেবো যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে? উভয়ের জীবন ও মৃত্যু এক রকম হবে? খুবই খারাপ সিদ্ধান্ত যা এরা করছে। [সূরা আল-জাসিয়াহ: ২১]
তাফসীরে জাকারিয়া৭। সুতরাং এরপর কিসে তোমাকে (হে মানুষ) কর্মফল দিবস সম্বন্ধে অবিশ্বাসী করে? [1]
[1] এ দিয়ে কিয়ামতের অবিশ্বাসীদেরকে হুমকির সাথে হুঁশিয়ার করা হয়েছে যে, আল্লাহ তোমাকে সুন্দরতম অবয়বে সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি তোমাকে তার বিপরীত হীনতার অতল তলে নিক্ষেপ করতেও সক্ষম। আর তার মানেই হল, তোমাকে পুনর্বার সৃষ্টি করা তাঁর পক্ষে কোন কঠিন কাজ নয়। সুতরাং এরপরেও কি তুমি কিয়ামত ও প্রতিফল দিবসকে অবিশ্বাস করবে?
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআল্লাহ কি বিচারকদের শ্রেষ্ঠ বিচারক নন? আল-বায়ান
আল্লাহ কি বিচারকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম (বিচারক) নন? তাইসিরুল
আল্লাহ কি বিচারকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ নন? মুজিবুর রহমান
Is not Allah the most just of judges? Sahih International
৮. আল্লাহ কি বিচারকদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ বিচারক নন?(১)
(১) আল্লাহ তা'আলা কি সব বিচারকের মহাবিচারক নন? তিনি কি সকল শাসকবর্গের মধ্যে সর্বোত্তম শাসক নন? এই ন্যায় বিচারের অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল প্রত্যেক অপরাধীকে তার শাস্তি ও প্রত্যেক সৎকর্মীকে তার উপযুক্ত পুরস্কার প্রদান করা। বিচারকদের শ্রেষ্ঠবিচারক আল্লাহ্ তা'আলা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন, এক পর্যায় থেকে অন্য পর্যায়ে উপনীত করেছেন পরিপূর্ণ ন্যায় ও প্রজ্ঞার সাথে; তবুও কি তিনি মানুষের কৃতকর্মের উপযুক্ত প্রতিদানও দেবেন না? [বাদাইউত তাফসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া৮। আল্লাহ কি বিচারকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বিচারক নন? [1]
[1] অর্থাৎ, আল্লাহ কারো প্রতি অবিচার করেন না। আর তাঁর সুবিচারের দাবী এই যে, তিনি কিয়ামত সংঘটিত করবেন এবং যাদের উপর দুনিয়ায় যুলুম করা হয়েছে তাদেরকে পূর্ণ বদলা দিয়ে দেওয়া হবে।
প্রকাশ থাকে যে, এই সূরার শেষে ‘বালা অআনা আলা যা-লিকা মিনাশ শাহিদীন’ বলার হাদীস সহীহ নয়। (তিরমিযী)
তাফসীরে আহসানুল বায়ানপড় তোমার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। আল-বায়ান
পাঠ কর তোমার প্রতিপালকের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন, তাইসিরুল
তুমি পাঠ কর তোমার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। মুজিবুর রহমান
Recite in the name of your Lord who created - Sahih International
১. পড়ুন আপনার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন(১)—
(১) শুধু বলা হয়েছে, “সৃষ্টি করেছেন” কাকে সৃষ্টি করেছেন তা বলা হয়নি। এ থেকে আপনা-আপনিই এ অর্থ বের হয়ে আসে, সেই রবের নাম নিয়ে পড় যিনি স্রষ্টা সমগ্র বিশ্ব-জাহানের, সমগ্র সৃষ্টিজগতের। [আদওয়াউল বায়ান]
তাফসীরে জাকারিয়া১। তুমি পড় তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। [1]
[1] এটাই সর্বপ্রথম অহী যা নবী (সাঃ)-এর উপর ঐ সময় অবতীর্ণ হয় যখন তিনি হিরা গুহায় আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন ছিলেন। ফিরিশতা (জিবরীল) তাঁর নিকট এসে বললেন, ‘পড়।’ তিনি বললেন, ‘আমি তো পড়তে জানি না।’ ফিরিশতা তাঁকে জড়িয়ে ধরে শক্তভাবে চেপে ধরলেন এবং বললেন, ‘পড়।’ তিনি পুনর্বার একই উত্তর দিলেন। এইভাবে ফিরিশতা তিনবার করলেন। (এ ব্যাপারে বিস্তারিত দেখুনঃ সহীহ বুখারী অহী অধ্যায়, মুসলিম ঈমান অধ্যায় ও অহীর প্রারম্ভিক সূচনার পরিচ্ছেদ।)
اِقْرَأْ অর্থাৎ, যা আপনার প্রতি অহী করা হয়েছে তা পড়। خَلَق শব্দের অর্থ হল যিনি সমস্ত সৃষ্টিকে সৃষ্টি করেছেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষকে 'আলাক' থেকে। আল-বায়ান
সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট-বাঁধা রক্তপিন্ড হতে। তাইসিরুল
সৃষ্টি করেছেন মানুষকে রক্তপিন্ড হতে। মুজিবুর রহমান
Created man from a clinging substance. Sahih International
২. সৃষ্টি করেছেন মানুষকে আলাক হতে।(১)
(১) পূর্বের আয়াতে সমগ্র সৃষ্টিজগত সৃষ্টির বর্ণনা ছিল। এ আয়াতে সৃষ্টিজগতের মধ্য থেকে বিশেষ করে মানব সৃষ্টির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ বলেছেন, মানুষকে ‘আলাক’ থেকে সৃষ্টি করেছেন। ‘আলাক’ হচ্ছে ‘আলাকাহ’ শব্দের বহুবচন। এর মানে জমাট বাঁধা রক্ত। সাধারণভাবে বিশ্ব-জাহানের সৃষ্টির কথা বলার পর বিশেষ করে মানুষের কথা বলা হয়েছে যে, মহান আল্লাহ কেমন হীন অবস্থা থেকে তার সৃষ্টিপর্ব শুরু করে তাকে পূর্ণাংগ মানুষে রূপান্তরিত করেছেন। [কুরতুবী]
তাফসীরে জাকারিয়া২। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে রক্তপিন্ড হতে। [1]
[1] এই আয়াতে সমস্ত সৃষ্টির মধ্যে বিশেষ করে মানুষের জন্মের কথা উল্লেখ হয়েছে; যাতে মানুষের মর্যাদা স্পষ্ট।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানপড়, আর তোমার রব মহামহিম। আল-বায়ান
পাঠ কর, আর তোমার রব বড়ই অনুগ্রহশীল। তাইসিরুল
পাঠ করঃ আর তোমার রাব্ব মহা মহিমান্বিত, মুজিবুর রহমান
Recite, and your Lord is the most Generous - Sahih International
৩. পড়ুন, আর আপনার রব মহিমান্বিত(১)
(১) এখানে পড়ার আদেশের পুনরুল্লেখ করা হয়েছে। কেউ কেউ বলেন, প্রথম আদেশটি নিজে পাঠ করার আদেশ, আর দ্বিতীয়টি অন্যকে পাঠ করানো বা অন্যের নিকট প্রচারের নির্দেশ। [ফাতহুল কাদীর] অতঃপর মহান রব আল্লাহর সাথে أَكْرَم বিশেষণ যোগ করার মধ্যে এ ইঙ্গিত রয়েছে যে, মানুষ সৃষ্টি করা এবং তাদের শিক্ষাদান করার নেয়ামতের মধ্যে আল্লাহ তা'আলার নিজের কোন স্বার্থ ও লাভ নেই; বরং এগুলো তাঁরই অনুগ্রহ, তাঁরই দান। তিনি সর্বমহান দানশীল ও মহামহিমান্বিত। [আদওয়াউল বায়ান, মুয়াস্সার]
তাফসীরে জাকারিয়া৩। তুমি পড়। আর তোমার প্রতিপালক মহামহিমান্বিত। [1]
[1] এ বাক্যটি তাকীদের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। এ দ্বারা বড় অলঙ্কারপূর্ণ ভঙ্গিমায় নবী (সাঃ) এর ওযরের জওয়াব দেওয়া হয়েছে, যা তিনি ‘আমি পড়তে জানি না’ বলে পেশ করেছিলেন। আল্লাহ বললেন, আল্লাহ মহামহিমান্বিত; তুমি পড়। অর্থাৎ, মানুষের ভুল-ত্রুটি উপেক্ষা করা তাঁর বিশেষ গুণ।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানযিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। আল-বায়ান
যিনি শিক্ষা দিয়েছেন কলম দিয়ে, তাইসিরুল
যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। মুজিবুর রহমান
Who taught by the pen - Sahih International
৪. যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন(১)-
(১) মানব সৃষ্টির কথা বর্ণনার পর এখানে মানুষের শিক্ষার প্রসঙ্গটি উল্লেখিত হয়েছে। মহান আল্লাহর অশেষ মেহেরবানী যে, তিনি মানুষকে কলমের মাধ্যমে তথা লেখার শিক্ষা দান করেছেন। তা না হলে মানুষের মধ্যে জ্ঞানের উন্নতি, বংশানুক্রমিক ক্ৰমবিকাশ সম্ভব হত না। জ্ঞান, প্রজ্ঞা, পূর্ববর্তদের জীবন-কাহিনী, আসমানী-কিতাব সব কিছুই সংরক্ষিত হয়েছে লেখনির মাধ্যমে। কলম না থাকলে, দ্বীন এবং দুনিয়ার কোন কিছুই পূর্ণরূপে গড়ে উঠত না। [ফাতহুল কাদীর] হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আল্লাহ তা'আলা যখন প্রথম সবকিছু সৃষ্টি করেন, তখন আরশে তার কাছে রক্ষিত কিতাবে একথা লিপিবদ্ধ করেন যে, আমার রহমত আমার ক্রোধের উপর প্রবল থাকবে।” [বুখারী: ৩১৯৪, ৭৫৫৩, মুসলিম: ২৭৫১] হাদীসে আরও বলা হয়েছে, “আল্লাহ তা'আলা সর্বপ্রথম কলম সৃষ্টি করেন এবং তাকে লেখার নির্দেশ দেন। সেমতে কলম কেয়ামত পর্যন্ত যা কিছু হবে, সব লিখে ফেলে।” [মুসনাদে আহমাদ: ৫/৩১৭]
তাফসীরে জাকারিয়া৪। যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। [1]
[1] قَلم অর্থ হল কাটা, চাঁছা বা ছিলা। পূর্ব যুগে লোকেরা কেটে বা চেঁছে কলম তৈরী করত। এই জন্য লেখার যন্ত্রকে কলম বলা হয়। কিছু ইলম (জ্ঞান) তো মানুষের স্মৃতিতে থাকে, কিছু আবার জিহবা দ্বারা প্রকাশ করা হয়, আর কিছু ইলম মানুষ কলম দ্বারা কাগজে লিখে হিফাযত করে থাকে। মস্তিষ্ক ও স্মৃতিতে যা থাকে তা মানুষের সাথে চলে যায়। জিহ্বা দ্বারা যা প্রকাশ করা হয়, তাও সংরক্ষিত।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান