৪ . আন-নিসা
৪:১১৮ لَّعَنَهُ اللّٰهُ ۘ وَ قَالَ لَاَتَّخِذَنَّ مِنۡ عِبَادِكَ نَصِیۡبًا مَّفۡرُوۡضًا ﴿۱۱۸﴾ۙ

আল্লাহ তাকে লা‘নত করেছেন এবং সে বলেছে, ‘অবশ্যই আমি তোমার বান্দাদের এক নির্দিষ্ট অংশকে (অনুসারী হিসেবে) গ্রহণ করব’। আল-বায়ান

আল্লাহ তাকে লা‘নাত করেছেন কারণ সে বলেছিল, ‘আমি তোমার বান্দাদের থেকে নির্দিষ্ট অংশকে আমার অনুসারী হিসেবে গ্রহণ করব।’ তাইসিরুল

আল্লাহ তাকে অভিসম্পাত করেছেন; এবং শাইতান বলেছিল, আমি অবশ্যই তোমার সেবকবৃন্দ হতে এক নির্দিষ্ট অংশ গ্রহণ করব । মুজিবুর রহমান

Whom Allah has cursed. For he had said, "I will surely take from among Your servants a specific portion. Sahih International

১১৮. আল্লাহ তাকে লা'নত করেন এবং সে বলে, আমি অবশ্যই আপনার বান্দাদের এক নির্দিষ্ট অংশকে আমার অনুসারী করে নেব।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১১৮) আল্লাহ তাকে (শয়তানকে) অভিসম্পাত করেছেন এবং সে (শয়তান) বলেছে, ‘আমি তোমার দাসদের এক নির্দিষ্ট অংশকে (নিজের দলে) গ্রহণ করবই। [1]

[1] ‘নির্দিষ্ট অংশ’ বলতে এমন নযর-নিয়াযও হতে পারে যা মুশরিকরা নিজেদের মূর্তির জন্য এবং কবরে সমাধিস্থ ব্যক্তিবর্গের নামে নিবেদন করত, আবার জাহান্নামীদের সে সংখ্যাও হতে পারে, যাদেরকে শয়তান ভ্রষ্ট করে নিজের সাথে জাহান্নামে নিয়ে যাবে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪ . আন-নিসা
৪:১১৯ وَّ لَاُضِلَّنَّهُمۡ وَ لَاُمَنِّیَنَّهُمۡ وَ لَاٰمُرَنَّهُمۡ فَلَیُبَتِّكُنَّ اٰذَانَ الۡاَنۡعَامِ وَ لَاٰمُرَنَّهُمۡ فَلَیُغَیِّرُنَّ خَلۡقَ اللّٰهِ ؕ وَ مَنۡ یَّتَّخِذِ الشَّیۡطٰنَ وَلِیًّا مِّنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ فَقَدۡ خَسِرَ خُسۡرَانًا مُّبِیۡنًا ﴿۱۱۹﴾ؕ

‘আর অবশ্যই আমি তাদেরকে পথভ্রষ্ট করব, মিথ্যা আশ্বাস দেব এবং অবশ্যই তাদেরকে আদেশ দেব, ফলে তারা পশুর কান ছিদ্র করবে এবং অবশ্যই তাদেরকে আদেশ করব, ফলে অবশ্যই তারা আল্লাহর সৃষ্টি বিকৃত করবে’। আর যারা আল্লাহর পরিবর্তে শয়তানকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে, তারা তো স্পষ্টই ক্ষতিগ্রস্ত হল। আল-বায়ান

তাদেরকে অবশ্য অবশ্যই পথভ্রষ্ট করব, তাদেরকে অবশ্য অবশ্যই বহু প্রলোভন দেব এবং তাদেরকে অবশ্য অবশ্যই নির্দেশ দেব, ফলে তারা জন্তু-জানোয়ারের কান ছেদন করবে, আমি তাদেরকে অবশ্য অবশ্যই নির্দেশ দেব, ফলে তারা অবশ্য অবশ্যই আল্লাহর সৃষ্টি বিকৃত করবে। আল্লাহকে বাদ দিয়ে যে কেউ শয়ত্বানকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করে, সে সুস্পষ্টত ক্ষতিগ্রস্ত। তাইসিরুল

এবং নিশ্চয়ই আমি তাদেরকে পথভ্রান্ত করব, তাদেরকে কু-মন্ত্রনা দিব এবং তাদেরকে আদেশ করব যেন তারা পশুর কর্ণ ছেদন করে এবং তাদেরকে আদেশ করব আল্লাহর সৃষ্ট আকৃতি পরিবর্তন করতে। যে আল্লাহকে পরিত্যাগ করে শাইতানকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করে, নিশ্চয়ই সে প্রকাশ্য ক্ষতিতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মুজিবুর রহমান

And I will mislead them, and I will arouse in them [sinful] desires, and I will command them so they will slit the ears of cattle, and I will command them so they will change the creation of Allah." And whoever takes Satan as an ally instead of Allah has certainly sustained a clear loss. Sahih International

১১৯. আমি অবশ্যই তাদেরকে পথভ্রষ্ট করব; অবশ্যই তাদের হৃদয়ে মিথ্যা বাসনার সৃষ্টি করব, আর অবশ্যই আমি তাদেরকে নির্দেশ দেব, তাদেরকে নির্দেশ দেব, ফলে তারা পশুর কান ছিদ্র করবে। আর অবশ্যই তাদের নির্দেশ দেব, ফলে তারা আল্লাহর সৃষ্টি বিকৃত করবে।(১) আর আল্লাহর পরিবর্তে কেউ শয়তানকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করলে সে স্পষ্টতঃই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

(১) আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেনঃ আল্লাহ্ তা'আলার লা'নত করেছেন সে সমস্ত মহিলাদের উপর যারা শরীর কেটে উল্কি আঁকে এবং যারা এ অংকনের কাজ করে, আরো লা'নত করেছেন যারা সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য ভ্রু কাটে এবং যারা সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য দাঁত কাটে। আল্লাহর সৃষ্টিকে পরিবর্তন করে। [বুখারীঃ ৪৮৮৬]

আয়াতে বর্ণিত, خَلْقَ اللَّهِ অর্থ উপরে করা হয়েছে, আল্লাহর সৃষ্টি। এর আরেক অর্থ, ‘আল্লাহর দ্বীন’ যা ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত হয়েছে। [তাবারী] সুতরাং দ্বীনের মধ্যে পরিবর্তন, পরিবর্ধন করার জন্যও শয়তান কিছু লোককে নিয়োজিত করবে।

তাফসীরে জাকারিয়া

(১১৯) এবং তাদেরকে পথভ্রষ্ট করবই; তাদের হৃদয়ে মিথ্যা বাসনার সৃষ্টি করবই,[1] আমি তাদেরকে নিশ্চয় নির্দেশ দেব, ফলে তারা পশুর কর্ণচ্ছেদ করবেই[2] এবং তাদেরকে নিশ্চয় নির্দেশ দেব, ফলে তারা আল্লাহর সৃষ্টি বিকৃত করবেই।’ [3] আর যে আল্লাহর পরিবর্তে শয়তানকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করবে, নিশ্চয় সে প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

[1] মিথ্যা বাসনা হল এমন আশা-আকাঙ্ক্ষা, যা মানুষের মনে শয়তানের কুমন্ত্রণা ও তার হস্তক্ষেপ দ্বারা সৃষ্টি হয় এবং মানুষের ভ্রষ্টতার কারণ হয়।

[2] এটা হল ‘বাহিরা’ এবং ‘সায়েবা’ পশুগুলোর নিদর্শন ও তাদের আকার-আকৃতি। এই পশুগুলোকে মুশরিকরা মূর্তিদের নামে উৎসর্গ করত এবং নিদর্শন স্বরূপ তাদের কান চিড়ে দিত।

[3] تَغْيِيْرُ خَلْقِ اللهِ আল্লাহর সৃষ্টির পরিবর্তন করা তিনভাবে হয়। প্রথম এটা, যা এখন আলোচিত হল। যেমন, কান কাটা, চিড়া এবং ছিদ্র করা। এ ছাড়াও আরো কয়েকভাবে তা করা হয়। যেমন, মহান আল্লাহ চাঁদ, সূর্য, পাথর এবং আগুন ইত্যাদি অনেক জিনিস বিভিন্ন উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু তাঁর সৃষ্টির উদ্দেশ্য পরিবর্তন করে সেগুলোকে উপাস্যে পরিণত করা। আবার পরিবর্তনের অর্থ প্রাকৃতিক নিয়মে পরিবর্তন এবং হালাল ও হারামের মধ্যে পরিবর্তনও হয়। পুরুষের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করা অনুরূপ মহিলাদের গর্ভাশয় তুলে ফেলে তাদের সন্তান জন্মানোর যোগ্যতা থেকে বঞ্চিত করাও এই পরিবর্তনের আওতায় পড়ে। মেকআপের নামে ভ্রূর চুল চেঁছে নিজের আকৃতির পরিবর্তন করা এবং চেহারা ও হাতে দেগে নকসা করা ইত্যাদিও এরই মধ্যে শামিল। এ সবই হল শয়তানী কার্যকলাপ, তা থেকে বিরত থাকা জরুরী। তবে পশু দ্বারা অধিক উপকৃত হওয়ার জন্য, তার ভালো গোশত লাভের জন্য অথবা এই ধরনের আরো কোন বৈধ উদ্দেশ্যে যদি তার খাসি করানো হয়, তবে তা বৈধ হবে। এর সমর্থন এ থেকেও হয় যে, নবী করীম (সাঃ) খাসি ছাগল কুরবানীতে জবাই করেছেন। যদি পশুর খাসি করানো বৈধ না হত, তাহলে তিনি (সাঃ) তার কুরবানী করতেন না। (বা খাসি হওয়া একটি ত্রুটি বলে গণ্য করতেন।)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪ . আন-নিসা
৪:১২০ یَعِدُهُمۡ وَ یُمَنِّیۡهِمۡ ؕ وَ مَا یَعِدُهُمُ الشَّیۡطٰنُ اِلَّا غُرُوۡرًا ﴿۱۲۰﴾

সে তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দেয় এবং তাদেরকে মিথ্যা আশ্বাস দেয়। আর শয়তান তাদেরকে কেবল প্রতারণামূলক প্রতিশ্রুতিই দেয়। আল-বায়ান

সে তাদেরকে আশ্বাস দেয়, মিথ্যা প্রলোভন দেয়, বস্তুতঃ শয়ত্বান তাদেরকে যে আশ্বাস দেয় তা ছলনা ছাড়া আর কিছুই নয়। তাইসিরুল

শাইতান তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দেয় ও আশ্বাস দান করে, কিন্তু শাইতান প্রতারণা ব্যতীত তাদেরকে প্রতিশ্রুতি প্রদান করেনা। মুজিবুর রহমান

Satan promises them and arouses desire in them. But Satan does not promise them except delusion. Sahih International

১২০. সে তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দেয় এবং তাদের হৃদয়ে মিথ্যা বাসনার সৃষ্টি করে। আর শয়তান তাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দেয় তা ছলনামাত্র।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১২০) সে তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দেয় এবং তাদের হৃদয়ে মিথ্যা বাসনার সৃষ্টি করে। আর শয়তান তাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দেয়, তা ছলনা মাত্র।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪ . আন-নিসা
৪:১২১ اُولٰٓئِكَ مَاۡوٰىهُمۡ جَهَنَّمُ ۫ وَ لَا یَجِدُوۡنَ عَنۡهَا مَحِیۡصًا ﴿۱۲۱﴾

এদেরই আশ্রয়স্থল জাহান্নাম। আর তারা সেখান থেকে পালাবার জায়গা পাবে না। আল-বায়ান

এরাই তারা যাদের আবাসস্থল জাহান্নাম এবং তারা তাত্থেকে নিস্কৃতি পাওয়ার কোন পথ পাবে না। তাইসিরুল

তাদেরই বাসস্থান জাহান্নাম এবং সেখান হতে তারা পালাবার কোন জায়গা পাবেনা। মুজিবুর রহমান

The refuge of those will be Hell, and they will not find from it an escape. Sahih International

১২১. এদেরই আশ্রয়স্থল জাহান্নাম, তা থেকে তারা নিস্কৃতির উপায় পাবে না।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১২১) এ সকল লোকের বাসস্থান জাহান্নাম। তা হতে তারা নিষ্কৃতির উপায় পাবে না।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪ . আন-নিসা
৪:১২২ وَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ سَنُدۡخِلُهُمۡ جَنّٰتٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِهَا الۡاَنۡهٰرُ خٰلِدِیۡنَ فِیۡهَاۤ اَبَدًا ؕ وَعۡدَ اللّٰهِ حَقًّا ؕ وَ مَنۡ اَصۡدَقُ مِنَ اللّٰهِ قِیۡلًا ﴿۱۲۲﴾

আর যারা ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে, অচিরেই তাদেরকে আমি প্রবেশ করাব জান্নাতসমূহে, যার তলদেশে প্রবাহিত হচ্ছে নহরসমূহ। সেখানে তারা হবে স্থায়ী। আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য। আর কথায় আল্লাহ অপেক্ষা অধিক সত্যবাদী কে? আল-বায়ান

আর যারা ঈমান এনেছে ও নেক কাজ করেছে অবিলম্বে আমি তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করব; যার পাদদেশে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত, তারা তাতে চিরকাল চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে, আল্লাহর ওয়া‘দা সত্য, কথায় আল্লাহ অপেক্ষা কে বেশি সত্যবাদী? তাইসিরুল

এবং যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে ও সৎ কাজ করে, আমি তাদেরকে জান্নাতে প্রবিষ্ট করাব যার নিম্নে স্রোতস্বিনীসমূহ প্রবাহিতা, তন্মধ্যে তারা চিরকাল অবস্থান করবে, আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য; এবং কে আল্লাহ অপেক্ষা বাক্যে অধিকতর সত্যপরায়ণ? মুজিবুর রহমান

But the ones who believe and do righteous deeds - We will admit them to gardens beneath which rivers flow, wherein they will abide forever. [It is] the promise of Allah, [which is] truth, and who is more truthful than Allah in statement. Sahih International

১২২. আর যারা ঈমান আনে ও সৎ কাজ করে, আমরা তাদেরকে প্রবেশ করাব জান্নাতে, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে; আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য। আর কে আল্লাহর চেয়ে কথায় সত্যবাদী?(১)

(১) বস্তুত: আল্লাহর কথা বা বাণীর উপর কারও কথা সত্য হতে পারে না। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, সবচেয়ে উত্তম বাণী হচ্ছে, আল্লাহর কিতাব। আর সবচেয়ে উত্তম পদ্ধতি হচ্ছে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দেয়া পদ্ধতি। আর সবচেয়ে খারাপ কাজ হচ্ছে, দ্বীনে প্রবর্তিত নতুন পদ্ধতিসমূহ, আর তোমাদেরকে যার ওয়াদা করা হয়েছে তা অবশ্যই আসবে, তোমরা তাকে অপারগ করে দিতে সক্ষম নও। [বুখারী: ৭২৭৭; মুসনাদে আহমাদ ৩/৩১০]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১২২) যারা বিশ্বাস করে ও সৎকাজ করে, তাদেরকে বেহেশ্তে প্রবেশাধিকার দান করব; যার পাদদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য। আর কে আছে আল্লাহ অপেক্ষা অধিক সত্যবাদী? [1]

[1] শয়তানের প্রতিশ্রুতি তো নিছক ধোকা-প্রতারণা বৈ কিছু নয়। পক্ষান্তরে আল্লাহর অঙ্গীকার যা তিনি ঈমানদারদের সাথে করেছেন তা সত্য ও যথার্থ। আল্লাহর চেয়ে অধিক সত্যবাদী কে হতে পারে? কিন্তু মানুষের ব্যাপার বড়ই বিস্ময়কর। এরা সত্যকে গ্রাহ্য কমই করে এবং মিথ্যার পিছনেই এরা বেশী চলে। তাই তো শয়তানী জিনিসের প্রচলন অতি ব্যাপক। পক্ষান্তরে আল্লাহর কর্ম সম্পাদন করার মানুষ প্রত্যেক যুগে এবং প্রত্যেক স্থানে কমই থেকেছে ও কমই পাওয়া যায়। [وَقَلِيلٌ مِنْ عِبَادِيَ الشَّكُورُ] ‘‘আমার কৃতজ্ঞ বান্দা কমই হয়।’’ (সাবাঃ ১৩)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪ . আন-নিসা
৪:১২৩ لَیۡسَ بِاَمَانِیِّكُمۡ وَ لَاۤ اَمَانِیِّ اَهۡلِ الۡكِتٰبِ ؕ مَنۡ یَّعۡمَلۡ سُوۡٓءًا یُّجۡزَ بِهٖ ۙ وَ لَا یَجِدۡ لَهٗ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ وَلِیًّا وَّ لَا نَصِیۡرًا ﴿۱۲۳﴾

না তোমাদের আশায় এবং না কিতাবীদের আশায় (কাজ হবে)। যে মন্দকাজ করবে তাকে তার প্রতিফল দেয়া হবে। আর সে তার জন্য আল্লাহ ছাড়া কোন অভিভাবক ও সাহায্যকারী পাবে না। আল-বায়ান

তোমাদের বাসনা আর আহলে কিতাবদের বাসনা কোন কাজে আসবে না। যে ব্যক্তি কোন কুকর্ম করবে, সে তার বিনিময় প্রাপ্ত হবে, সে আল্লাহ ছাড়া তার জন্য কোন অভিভাবক পাবে না, কোন সাহায্যকারীও না। তাইসিরুল

না তোমাদের বৃথা আশায় কাজ হবে, আর না আহলে কিতাবের বৃথা আশায়; যে অসৎ কাজ করবে সে তার প্রতিফল পাবে এবং সে আল্লাহর পরিবর্তে কেহকে বন্ধু অথবা সাহায্যকারী প্রাপ্ত হবেনা। মুজিবুর রহমান

Paradise is not [obtained] by your wishful thinking nor by that of the People of the Scripture. Whoever does a wrong will be recompensed for it, and he will not find besides Allah a protector or a helper. Sahih International

১২৩. তোমাদের খেয়াল-খুশী ও কিতাবীদের খেয়াল-খুশী অনুসারে কাজ হবে না(১); কেউ মন্দ কাজ করলে তার প্রতিফল সে পাবে(২) এবং আল্লাহ ছাড়া তার জন্য সে কোন অভিভাবক ও সহায় পাবে না।

(১) আয়াতে মুসলিম ও আহলে-কিতাবদের মধ্যে অনুষ্ঠিত একটি কথোপকথন উল্লেখিত হয়েছে। এরপর কথোপকথন বিচার করে উভয় পক্ষকে বিশুদ্ধ হেদায়াত দেয়া হয়েছে। অবশেষে আল্লাহর কাছে গ্রহণীয় ও শ্রেষ্ঠ হওয়ার একটি মানদণ্ড ব্যক্ত করা হয়েছে, যা সামনে রাখলে মানুষ কখনো ভ্রান্তি ও পথভ্রষ্টতার শিকার হবে না। এতে বলা হয়েছে যে, এ গর্ব ও অহংকার কারো জন্য শোভা পায় না। শুধু কল্পনা, বাসনা ও দাবী দ্বারা কেউ কারো চাইতে শ্রেষ্ঠ হয় না; বরং প্রত্যেকের কাজকর্মই শ্রেষ্ঠত্বের ভিত্তি। কারো নবী ও গ্রন্থ যতই শ্রেষ্ঠ হোক না কেন, যদি সে ভ্রান্ত কাজ করে, তবে সেই কাজের শাস্তি পাবে। এ শাস্তির কবল থেকে রেহাই দিতে পারে- এরূপ কাউকে সে খুঁজে পাবে না।

(২) এ আয়াত নাযিল হলে সাহাবায়ে কেরাম অত্যন্ত চিন্তিত হয়ে পড়েন। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ “যে কেউ কোন অসৎকাজ করবে, সে জন্য তাকে শাস্তি দেয়া হবে”। আয়াতটি যখন নাযিল হল, তখন আমরা খুব দুঃখিত ও চিন্তাযুক্ত হয়ে পড়লাম এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গিয়ে বললামঃ এ আয়াতটি তো কোন কিছুই ছাড়েনি। সামান্য মন্দ কাজ হলেও তার সাজা দেয়া হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ চিন্তা করো না, সাধ্যমত কাজ করে যাও।

কেননা, (উল্লেখিত শাস্তি যে জাহান্নামই হবে, তা জরুরী নয়) তোমরা দুনিয়াতে যে কোন কষ্ট বা বিপদাপদে পড়, তাতে তোমাদের গোনাহর কাফফারা এবং মন্দ কাজের শাস্তি হয়ে থাকে। এমনকি যদি কারো পায়ে কাটা ফুটে, তাও গোনাহর কাফফারা বৈ নয়।’ [মুসলিমঃ ২৫৭৪] অন্য এক বর্ণনায় আছে, মুসলিম দুনিয়াতে যে কোন দুঃখ-কষ্ট, অসুখ-বিসুখ অথবা ভাবনা-চিন্তার সম্মুখীন হয়, তা তার গোনাহর কাফফারা হয়ে যায়। [বুখারীঃ ৫৬৪১, মুসলিমঃ ২৫৭৩] অন্য হাদীসে এসেছে, আল্লাহ যার কল্যাণ চান, তাকে কিছু বিপদাপদ দিয়ে থাকেন। [বুখারী ৫৬৪৫]

মোটকথা, আলোচ্য আয়াতে মুসলিমদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, শুধু দাবী ও বাসনায় লিপ্ত হয়ো না; বরং কাজের চিন্তা কর। কেননা, তোমরা অমুক নবী কিংবা গ্রন্থের অনুসারী শুধু এ বিষয় দ্বারাই তোমরা সাফল্য অর্জন করতে পারবে না। বরং এ গ্রন্থের প্রতি বিশুদ্ধ ঈমান এবং তদনুযায়ী সৎকার্য সম্পাদনের মধ্যেই প্রকৃত সাফল্য নিহিত রয়েছে।

তাফসীরে জাকারিয়া

(১২৩) (শেষ পরিণতি) তোমাদের আশার উপর, আর না ঐশীগ্রন্থধারীদের মনস্কামনার উপর নির্ভর করে। (বরং) যে মন্দ কাজ করবে, সে তার প্রতিফল পাবে এবং আল্লাহ ভিন্ন সে তার জন্য কোন অভিভাবক ও সাহায্যকারী পাবে না।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪ . আন-নিসা
৪:১২৪ وَ مَنۡ یَّعۡمَلۡ مِنَ الصّٰلِحٰتِ مِنۡ ذَكَرٍ اَوۡ اُنۡثٰی وَ هُوَ مُؤۡمِنٌ فَاُولٰٓئِكَ یَدۡخُلُوۡنَ الۡجَنَّۃَ وَ لَا یُظۡلَمُوۡنَ نَقِیۡرًا ﴿۱۲۴﴾

আর পুরুষ কিংবা নারীর মধ্য থেকে যে নেককাজ করবে এমতাবস্থায় যে, সে মুমিন, তাহলে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি খেজুর বীচির আবরণ পরিমাণ যুলমও করা হবে না। আল-বায়ান

পুরুষ ও নারীর মধ্যে যে সৎকাজ করবে আর সে ঈমানদারও বটে, তাহলে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, তাদের প্রতি তিল পরিমাণও অন্যায় করা হবে না। তাইসিরুল

পুরুষ অথবা নারীর মধ্যে যারা সৎ কাজ করে এবং সে বিশ্বাসীও হয়, তাহলে তারাই জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তারা খর্জুর দানার কণা পরিমাণও অত্যাচারিত হবেনা। মুজিবুর রহমান

And whoever does righteous deeds, whether male or female, while being a believer - those will enter Paradise and will not be wronged, [even as much as] the speck on a date seed. Sahih International

১২৪. আর পুরুষ বা নারীর মধ্যে কেউ মুমিন অবস্থায় সৎকাজ করলে, তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি অণু পরিমাণও যুলুম করা হবে না।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১২৪) আর পুরুষই হোক অথবা নারীই হোক, যারাই বিশ্বাসী হয়ে সৎকাজ করবে, তারাই জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি (খেজুরের আঁটির পিঠে) বিন্দু পরিমাণও যুলুম করা হবে না। [1]

[1] যেমন পূর্বে আলোচনা হয়েছে যে, ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানরা নিজেদের ব্যাপারে সুধারণার বড় আত্মপ্রবঞ্চনায় লিপ্ত ছিল। এখানে মহান আল্লাহ তাদের সেই সুধারণার পর্দা ফাঁস করে বলেন যে, আখেরাতের সফলতা কেবল আশা ও আকাঙ্ক্ষায় পাওয়া যাবে না। তার জন্য তো ঈমান এবং নেক আমলের সম্বল প্রয়োজন। পক্ষান্তরে আমলনামা যদি মন্দ কাজে পরিপূর্ণ থাকে, তাহলে যেভাবেই হোক না কেন তার শাস্তি ভোগ করতেই হবে। সেখানে এমন কোন বন্ধু অথবা সাহায্যকারী হবে না যে মন্দ কাজের শাস্তি থেকে বাঁচিয়ে নিতে পারবে। আলোচ্য আয়াতে ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানদের সাথে সাথে মহান আল্লাহ ঈমানদারদেরকেও সম্বোধন করেছেন, যাতে তারা যেন তাদের মত বৃথা সুধারণা এবং আমলশূন্য আশা ও আকাঙ্ক্ষা থেকে নিজেদেরকে সুদূরে রাখে। কিন্তু অনুতাপের বিষয় যে, এই সতর্কতা সত্ত্বেও মুসলিমরা সেই খামখেয়ালীর মধ্যে পতিত হয়ে পড়েছে যার মধ্যে পতিত ছিল পূর্বের জাতিসমূহ। বর্তমানে বে-আমল ও বদ-আমল মুসলিমদের আলামত ও চিহ্ন হয়ে গেছে, আর তা সত্ত্বেও তারা নিজেদেরকে উম্মতে মারহুমা (রহমপ্রাপ্ত উম্মত) বলে দাবী করছে! هَدَانَا اللهُ تَعَالَى

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪ . আন-নিসা
৪:১২৫ وَ مَنۡ اَحۡسَنُ دِیۡنًا مِّمَّنۡ اَسۡلَمَ وَجۡهَهٗ لِلّٰهِ وَ هُوَ مُحۡسِنٌ وَّ اتَّبَعَ مِلَّۃَ اِبۡرٰهِیۡمَ حَنِیۡفًا ؕ وَ اتَّخَذَ اللّٰهُ اِبۡرٰهِیۡمَ خَلِیۡلًا ﴿۱۲۵﴾

আর দীনের ব্যাপারে তার তুলনায় কে উত্তম, যে সৎকর্মপরায়ণ অবস্থায় আল্লাহর কাছে নিজকে পূর্ণ সমর্পণ করল এবং একনিষ্ঠভাবে ইবরাহীমের আদর্শ অনুসরণ করল? আর আল্লাহ ইবরাহীমকে পরম বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছেন। আল-বায়ান

সে ব্যক্তি অপেক্ষা দ্বীনে কে বেশি উত্তম যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করে, অধিকন্তু সে সৎকর্মশীল এবং একনিষ্ঠভাবে ইবরাহীমের দ্বীন অনুসরণ করে। আল্লাহ ইবরাহীমকে একান্ত বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছিলেন। তাইসিরুল

আর যে আল্লাহর উদ্দেশে স্বীয় আনন সমর্পণ করেছে ও সৎ কাজ করে এবং ইবরাহীমের সুদৃঢ় ধর্মের অনুসরণ করে, তার অপেক্ষা কার ধর্ম উৎকৃষ্ট? এবং আল্লাহ ইবরাহীমকে স্বীয় বন্ধু রূপে গ্রহণ করেছিলেন। মুজিবুর রহমান

And who is better in religion than one who submits himself to Allah while being a doer of good and follows the religion of Abraham, inclining toward truth? And Allah took Abraham as an intimate friend. Sahih International

১২৫. তার চেয়ে দ্বীনে আর কে উত্তম যে সৎকর্মপরায়ণ হয়ে আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করে এবং একনিষ্ঠভাবে ইবরাহীমের মিল্লাতকে অনুসরণ করে? আর আল্লাহ ইবরাহীমকে অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছেন।(১)

(১) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, মনে রেখ, আমি প্রত্যেক অন্তরঙ্গ বন্ধুর অন্তরঙ্গতা থেকে বিমুক্ত ঘোষণা করছি, যদি আমি কাউকে ‘খলীল’ বা অন্তরঙ্গ বন্ধু গ্রহণ করতাম, তবে আবু বকরকে গ্রহণ করতাম। তোমাদের সঙ্গী (অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই) আল্লাহর খলীল বা অন্তরঙ্গ বন্ধু। [মুসলিম: ২৩৮৩] মূলত: খলীল বলা হয়, এমন বন্ধুত্বকে যার বন্ধুত্ব অন্তরের অন্তঃস্থলে জায়গা করে নিয়েছে। অন্তরের রন্ধে রন্ধে প্রবেশ করেছে। ইবরাহীম আলাইহিস সালাম যেভাবে আল্লাহ্‌র খলীল, তেমনিভাবে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও আল্লাহর খলীল।

তাফসীরে জাকারিয়া

(১২৫) আর তার অপেক্ষা ধর্মে কে উত্তম, যে বিশুদ্ধ (তওহীদবাদী) হয়ে আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করে এবং একনিষ্ঠভাবে ইব্রাহীমের ধর্মাদর্শ অনুসরণ করে? আর আল্লাহ ইব্রাহীমকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছেন। [1]

[1] এখানে সফলতার একটি মান-নির্ণায়ক এবং আদর্শ পেশ করা হচ্ছে। মান-নির্ণায়ক হল, নিজেকে আল্লাহর কাছে সমর্পণ করা, সৎকাজে নিরত থাকা এবং ইবরাহীমী ধর্মের অনুসরণ করা। আর আদর্শ ইবরাহীম (আঃ); যাঁকে আল্লাহ তাআলা নিজের খলীল বানিয়ে ছিলেন। খলীলের অর্থ হল, যার অন্তরে মহান আল্লাহর ভালোবাসা এমনভাবে বদ্ধমূল হয়ে যায় যে, তাতে আর কারো জন্য স্থান থাকে না। ‘খালীল’ فَعِيل এর ওজনে; যার অর্থ فاعل কর্তৃপদ। যেমন, ‘আলীম’ ‘আলেম’ অর্থে ব্যবহার হয়। কেউ বলেছেন, এর অর্থঃ مفعول (কর্মপদ)-এর। যেমন, ‘হাবীব’ ‘মাহবুব’ অর্থে ব্যবহার হয়। আর ইবরাহীম (আঃ) অবশ্যই আল্লাহর ‘মুহিব্ব’ (প্রেমিক) এবং তাঁর ‘মাহবুব’ (প্রিয়) দুই-ই ছিলেন। (ফাতহুল ক্বাদীর) নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, ‘‘আল্লাহ আমাকেও খলীল বানিয়েছেন, যেভাবে তিনি ইবরাহীম (আঃ)-কে খলীল বানিয়েছিলেন।’’ (সহীহ মুসলিম, মসজিদ অধ্যায়ঃ)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪ . আন-নিসা
৪:১২৬ وَ لِلّٰهِ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَ مَا فِی الۡاَرۡضِ ؕ وَ كَانَ اللّٰهُ بِكُلِّ شَیۡءٍ مُّحِیۡطًا ﴿۱۲۶﴾

আর যা আসমানসমূহে আছে এবং যা আছে যমীনে সব আল্লাহরই। আর আল্লাহ সবকিছুকে পরিবেষ্টনকারী। আল-বায়ান

আসমান ও যমীনে যা কিছু আছে সব আল্লাহরই এবং আল্লাহ সবকিছুকেই পরিবেষ্টন করে আছেন। তাইসিরুল

এবং নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডলে যা কিছু আছে সবই আল্লাহরই জন্য; আল্লাহ সর্ব বিষয়ে পরিবেষ্টনকারী। মুজিবুর রহমান

And to Allah belongs whatever is in the heavens and whatever is on the earth. And ever is Allah, of all things, encompassing. Sahih International

১২৬. আর আসমান ও যমীনে যা কিছু আছে সব আল্লাহরই এবং সবকিছুকে আল্লাহ পরিবেষ্টন করে রয়েছেন।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১২৬) আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে, সব আল্লাহরই এবং সব কিছুকে আল্লাহ (নিজ জ্ঞান দ্বারা) পরিবেষ্টন করে আছেন।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪ . আন-নিসা
৪:১২৭ وَ یَسۡتَفۡتُوۡنَكَ فِی النِّسَآءِ ؕ قُلِ اللّٰهُ یُفۡتِیۡكُمۡ فِیۡهِنَّ ۙ وَ مَا یُتۡلٰی عَلَیۡكُمۡ فِی الۡكِتٰبِ فِیۡ یَتٰمَی النِّسَآءِ الّٰتِیۡ لَاتُؤۡ تُوۡنَهُنَّ مَا كُتِبَ لَهُنَّ وَ تَرۡغَبُوۡنَ اَنۡ تَنۡكِحُوۡهُنَّ وَ الۡمُسۡتَضۡعَفِیۡنَ مِنَ الۡوِلۡدَانِ ۙ وَ اَنۡ تَقُوۡمُوۡا لِلۡیَتٰمٰی بِالۡقِسۡطِ ؕ وَ مَا تَفۡعَلُوۡا مِنۡ خَیۡرٍ فَاِنَّ اللّٰهَ كَانَ بِهٖ عَلِیۡمًا ﴿۱۲۷﴾

তারা তোমার কাছে নারীদের ব্যাপারে সমাধান চায়। বল, আল্লাহ তাদের ব্যাপারে তোমাদেরকে সমাধান দিচ্ছেন এবং সমাধান দিচ্ছে ঐ আয়াতসমূহ যা কিতাবে তোমাদেরকে পাঠ করে শুনানো হয় ইয়াতীম নারীদের ব্যাপারে। যাদেরকে তোমরা প্রদান কর না যা তাদের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে, অথচ তোমরা তাদেরকে বিবাহ করতে আগ্রহী হও। আর দুর্বল শিশুদের ব্যাপারে ও ইয়াতীমদের প্রতি তোমাদের ইনসাফ প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে। আর তোমরা যে কোন ভালো কাজ কর, নিশ্চয় আল্লাহ সে বিষয়ে পরিজ্ঞাত। আল-বায়ান

লোকেরা তোমার কাছে নারীদের সম্বন্ধে বিধান জানতে চাচ্ছে। বলে দাও, ‘আল্লাহ তাদের সম্বন্ধে তোমাদেরকে বিধান জানিয়ে দিচ্ছেন সেসব নারী সম্পর্কে যাদের প্রাপ্য তোমরা প্রদান কর না অথচ তাদেরকে বিয়ে করতে চাও এবং অসহায় শিশুদের সম্পর্কে এবং ইয়াতীমদের প্রতি তোমাদের ন্যায়বিচার করা সম্পর্কে যা কিতাবে তোমাদেরকে শুনানো হয় তাও জানিয়ে দেন।’ যা কিছু সৎ কাজ তোমরা কর, তদ্বিষয়ে আল্লাহ ভালভাবেই জ্ঞাত। তাইসিরুল

এবং তারা তোমার নিকট নারীদের সম্বন্ধে ব্যবস্থা জিজ্ঞেস করছে; তুমি বল, আল্লাহ তোমাদেরকে তাদের সম্বন্ধে ব্যবস্থা দান করেছেন এবং পিতৃহীনা নারীদের সম্বন্ধে তোমাদের প্রতি গ্রন্থ হতে পাঠ করা হয়েছে যে, তাদের জন্য যা বিধিবদ্ধ হয়েছে তা তোমরা প্রদান করছনা, অথচ তাদেরকে বিয়ে করতে বাসনা কর এবং শিশুদের মধ্যে দুর্বলদের ও পিতৃহীনদের প্রতি সুবিচার প্রতিষ্ঠা কর এবং তোমরা যে সৎ কাজ কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ তদ্বিষয়ে খুব ভাল জানেন । মুজিবুর রহমান

And they request from you, [O Muhammad], a [legal] ruling concerning women. Say, "Allah gives you a ruling about them and [about] what has been recited to you in the Book concerning the orphan girls to whom you do not give what is decreed for them - and [yet] you desire to marry them - and concerning the oppressed among children and that you maintain for orphans [their rights] in justice." And whatever you do of good - indeed, Allah is ever Knowing of it. Sahih International

১২৭. আর লোকে আপনার কাছে নারীদের বিষয়ে ব্যবস্থা জানতে চায়। বলুন, আল্লাহ্‌ তোমাদেরকে তাদের সম্বন্ধে ব্যবস্থা জানাচ্ছেন এবং ইয়াতীম নারী সম্পর্কে যাদের প্রাপ্য তোমরা প্রদান কর না, অথচ তোমরা তাদেরকে বিয়ে করতে চাও(১) এবং অসহায় শিশুদের সম্বন্ধে ও ইয়াতীমদের প্রতি তোমাদের ন্যায় বিচার সম্পর্কে যা কিতাবে তোমাদেরকে শুনান হয়, তাও পরিস্কারভাবে জানিয়ে দেন। আর যে কোন সৎকাজ তোমরা কর, নিশ্চয় আল্লাহ তা সম্পর্কে সবিশেষ জ্ঞানী।

(১) উরওয়া ইবন যুবাইর বলেন, তিনি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে এ আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, তখনকার সময় কারও কারও তত্ত্বাবধানে ইয়াতীম মেয়েরা থাকতো। তারা সে সব ইয়াতীম মেয়েদেরকে মাহর না দিয়েই বিয়ে করতে চাইতো। তখন এ সূরার প্রাথমিক আয়াতগুলো নাযিল হয়। কিন্তু এর বাইরেও কিছু ইয়াতিম থাকতো যাদের সম্পদ ও সৌন্দর্য ছিল না। তারা তাদেরকে বিয়ে করতে চাইতো না। তখন এ আয়াত নাযিল হয়। [মুসলিম: ৩০১৮] অন্য বর্ণনায় এসেছে, ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, জাহেলিয়াত যুগে কারও কাছে ইয়াতিম থাকলে সে তার উপর একটি কাপড় দিয়ে ঢেকে দিত। যাতে করে অন্যরা তাকে বিয়ে করতে সমর্থ না হয়। তারপর যদি মেয়েটি সুন্দর হতো, তাহলে সে তাকে বিয়ে করত এবং তার সম্পদ নিয়ে নিত। পক্ষান্তরে অসুন্দর হলে সে তাকে আমৃত্যু বিয়ে দিতে বাধা দিত। এভাবে সে তার মৃত্যুর পর তার সম্পদের মালিক বনে যেত। এ আয়াতে আল্লাহ তা'আলা সেটা নিষেধ করে দেন। [আত-তাফসীরুস সহীহ]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১২৭) লোকে তোমার নিকট নারীদের বিধান জানতে চায়।[1] বল, আল্লাহ তোমাদেরকে তাদের সম্বন্ধে বিধান জানাচ্ছেন। এবং যা কিতাবে তোমাদেরকে পাঠ করে শোনানো হয়, তা ঐ সকল পিতৃহীন নারীদের বিধান, যাদের নির্ধারিত প্রাপ্য তোমরা প্রদান কর না[2] অথচ তোমরা তাদেরকে বিবাহ করতে আগ্রহী (নও)।[3] আর অসহায় শিশুদের[4] সম্বন্ধে বিধান এই যে, ন্যায়পরায়ণতার সাথে তোমরা পিতৃহীনদের তত্ত্বাবধান কর। [5] এবং তোমরা যে কোন সৎকাজ কর, আল্লাহ সে সম্বন্ধে পরিজ্ঞাত আছেন।

[1] মহিলাদের ব্যাপারে যেসব জিজ্ঞাসাবাদ হত, এখান থেকে সেসবের উত্তর শুরু হচ্ছে।

[2] وَمَا يُتْلَى عَلَيْكُمْ এর সম্পর্ক হল, اللهُ يُفْتِيْكُمْ এর সাথে। অর্থাৎ, মহান আল্লাহ তাদের কথা তুলে ধরেছেন এবং তাঁর কিতাবের সেই আয়াতগুলোতেও তাদের কথা আলোচিত হয়েছে যা ইতিপূর্বে ইয়াতীম মেয়েদের ব্যাপারে নাযিল হয়েছে; অর্থাৎ, সূরা নিসার ৩নং আয়াত। যাতে এমন লোকদেরকে অবিচার করা থেকে বাধা দান করা হয়েছে, যারা ইয়াতীম মেয়েকে তার সৌন্দর্যের কারণে বিবাহ তো করে নিত, কিন্তু তাকে তার মত মেয়েদের সমপরিমাণ মোহর দিত না।

[3] এর দুইভাবে তর্জমা করা হয়েছে। এক فِي অব্যয় ঊহ্য ধরে নিয়ে, (অর্থাৎ, তোমরা তাদেরকে বিবাহ করতে আগ্রহী)। এর দ্বিতীয় অর্থ করা হয়েছে عَنْ অব্যয় ঊহ্য ধরে। অর্থাৎ, تَرْغَبُوْنَ عَنْ أَنْ تَنْكِحُوهُنَّ (তোমরা তাদেরকে বিবাহ করতে আগ্রহী নও)। رَغِبَ এর সাথে عَنْ এলে তার অর্থ হয় বিমুখ হওয়া ও কোন আগ্রহ না থাকা। যেমন, [وَمَنْ يَرْغَبُ عَنْ مِلَّةِ اِبْرَاهِبْمَ] আয়াতে রয়েছে। অর্থাৎ, (ইয়াতীম মেয়েদের) দ্বিতীয় অবস্থার কথা বলা হয়েছে যে, কখনো কোন ইয়াতীম মেয়ে কুশ্রী হয়, ফলে তার অভিভাবক বা তার সাথে শরীক অন্য ওয়ারেসরা তাকে বিবাহ করতে পছন্দ করে না এবং অন্য কোথাও তার বিবাহও দেয় না; যাতে অন্য কোন ব্যক্তি যেন তার বিষয়-সম্পত্তিতে শরীক হতে না পারে। তাই মহান আল্লাহ প্রথম অবস্থার মত যুলুমের এই দ্বিতীয় অবস্থাকেও নিষিদ্ধ করে দেন।

[4] এর সংযোগ হল يَتَامَى النِّسَاء এর সাথে। অর্থাৎ, (وَمَا يُتْلَى عَلَيْكُمْ فِي يَتَامَى النِّسَاءِ وَفِي المُسْتَضْعَفِيْنَ مِنَ الْوِلْدَانِ) ‘‘পিতৃহীনা নারীদের ব্যাপারে তোমাদের যা যা পাঠ করে শুনানো হয় (অর্থাৎ, সূরা নিসার ৩নং আয়াত) এবং অসহায় শিশুদের ব্যাপারে যা পড়ে শুনানো হয়। আর যা পাঠ করে শুনানো হয়, তা হল কুরআনের এই নির্দেশ [يُوْصِيْكُمُ اللهُ فِي اَولاَدِكُمْ] যাতে ছেলেদের সাথে মেয়েদেরকেও অংশীদার নিযুক্ত করা হয়েছে। অথচ জাহেলী যুগে কেবল ছেলেদেরকেই অংশীদার মনে করা হত। আর ছোট অসহায় শিশুরা এবং মহিলারা মীরাস থেকে বঞ্চিত হত। শরীয়ত তাদের সকলকে অংশীদার বানিয়েছে।

[5] এর সংযোগও يَتَامَى النِّسَاء এর সাথে। অর্থাৎ, আল্লাহর কিতাবের এ নির্দেশও তোমাদেরকে পড়ে শুনানো হচ্ছে যে, তোমরা ইয়াতীমদের সাথে ন্যায়পরায়ণতাপূর্ণ আচরণ করো। ইয়াতীম মেয়ে সুশ্রী হোক অথবা কুশ্রী হোক, উভয় অবস্থাতে তাদের সাথে সুবিচার করো। (পূর্বে এর বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ ৬১১ থেকে ৬২০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৬২৩৬ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 · · · 59 60 61 62 63 · · · 621 622 623 624 পরের পাতা »