যেমন, আপনি হয়ত ২ নং সূরার ২০ নং আয়াত এবং ১০ নং সূরার ৫ নং আয়াত এভাবে একসাথে আরো অন্য সূরার অন্য আয়াত সার্চ করতে চাইছেন, সেক্ষেত্রে আপনাকে উপরের সার্চ বক্সে
২:২০, ১০:৫ এভাবে অথবা ২/২০, ১০/৫ এভাবে লিখে সার্চ করতে হবে।
আপনি সূরা ও আয়াত নং বাংলা অথবা ইংরেজিতে লিখতে পারেন।
তখন সে ঊর্ধ্ব দিগন্তে। আল-বায়ান
আর সে ছিল ঊর্ধ্ব দিগন্তে, তাইসিরুল
তখন সে ঊর্ধ্ব দিগন্তে। মুজিবুর রহমান
While he was in the higher [part of the] horizon. Sahih International
৭. আর তিনি ছিলেন ঊর্ধ্বদিগন্তে(১),
(১) এ আয়াতে জিবরীলকে আসল আকৃতিতে দেখার বিষয় বর্ণনা করা হয়েছে। দিগন্ত অর্থ আসমানের পূর্ব প্রান্ত যেখানে সূর্য উদিত হয় এবং দিনের আলো ছড়িয়ে পড়ে। সূরা আত-তাকভীরের ২৩ আয়াতে একেই পরিষ্কার দিগন্ত বলা হয়েছে। দুটি আয়াত থেকেই পরিষ্কার বুঝা যায় যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রথমবার যখন জিবরীল আলাইহিস সালামকে দেখেন তখন তিনি আসমানের পূর্ব প্রান্ত থেকে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। মূলত: মহাশক্তিশালী, সহজাত শক্তিসম্পন্ন বা প্রজ্ঞাবান, সৌন্দর্যমণ্ডিত, সোজা হওয়া, এবং নিকটবর্তী হওয়া এগুলো সব জিবরীলের বিশেষণ। এই তফসীরের পক্ষে অনেক সঙ্গত কারণ রয়েছে। ঐতিহাসিক দিক দিয়েও সূরা আন-নাজম সম্পূর্ণ প্রাথমিক সূরাসমূহের অন্যতম। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদের বর্ণনা অনুযায়ী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কায় সর্বপ্রথম যে সূরা প্রকাশ্যে পাঠ করেন তা সূরা আন-নাজম। বাহ্যত মে'রাজের ঘটনা এরপরে সংঘটিত হয়েছে।
দ্বিতীয় কারণ এই যে, হাদীসে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসব আয়াতের যে তফসীর করেছেন, তাতে জিবরীলকে দেখার কথা উল্লেখিত আছে। ইমাম শা'বী তার উস্তাদ মাসরূক থেকে বর্ণনা করেন- তিনি একদিন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার কাছে ছিলেন এবং আল্লাহ তা'আলাকে দেখা সম্পর্কে আলোচনা চলছিল। মাসরূক বলেন, আমি বললাম, আল্লাহ তা'আলা বলেছেন, (وَلَقَدْ رَآهُ بِالْأُفُقِ الْمُبِينِ) এবং (وَلَقَدْ رَآهُ نَزْلَةً أُخْرَىٰ) আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, মুসলিমদের মধ্যে সর্বপ্রথম আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে এই আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি। তিনি উত্তরে বলেছেন, আয়াতে যাকে দেখার কথা বলা হয়েছে, সে জিবরীল আলাইহিস সালাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে মাত্র দু’বার আসল আকৃতিতে দেখেছেন। আয়াতে বর্ণিত দেখার অর্থ এই যে, তিনি জিবরীলকে আকাশ থেকে ভূমির দিকে অবতরণ করতে দেখেছেন। তার দেহাকৃতি আসমান ও যমীনের মধ্যবর্তী শূন্যমণ্ডলকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছিল। [বুখারী: ৪৬১২, ৪৮৫৫, মুসলিম: ১৭৭/২৮৭, ২৮৮, ২৮৯, তিরমিযী: ৩০৬৮, মুসনাদে আহমাদ: ৬/২৪১]
অন্য বর্ণনায় আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেনঃ এই আয়াত সম্পর্কে সর্বপ্রথম আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করেছি যে, আপনি আপনার পালনকর্তাকে দেখেছেন কি? তিনি বললেনঃ না, বরং আমি জিবরীলকে নিচে অবতরণ করতে দেখেছি। [মুসনাদে আহমাদ: ৬/২৩৬] অনুরূপভাবে শায়বানী বর্ণনা করেন যে, তিনি আবু যরকে এই আয়াতের অর্থ জিজ্ঞাসা করেন, তিনি জওয়াবে বলেনঃ আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু আমার কাছে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিবরীলকে ছয়শত ডানাবিশিষ্ট দেখেছেন। [বুখারী: ৪৮৫৬] ইবনে জারীর রাহেমাহুল্লাহ আবদুল্লাহ ইবনে-মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে এ আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিবরীলকে রফরফের পোশাক পরিহিত অবস্থায় দেখেছেন। তাঁর অস্তিত্ব আসমান ও যমীনের মধ্যবর্তী শূন্যমণ্ডলকে ভরে রেখেছিল। [তাফসীর তাবারী: ৩২৪৭০]
এ সব বর্ণনা থেকে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, সূরা নাজমের উল্লেখিত আয়াতসমূহ দেখা ও নিকটবর্তী হওয়া বলে জিবরীলকে দেখা ও নিকটবর্তী হওয়া বোঝানো হয়েছে। আয়েশা, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ, আবু যর গেফারী, আবু হুরায়রা প্রমুখ সাহাবীর এই উক্তি। তাই ইবনে-কাসীর আয়াতসমূহের তফসীরে বলেনঃ আয়াতসমূহে উল্লেখিত দেখা ও নিকটবর্তী হওয়ার অর্থ জিবরীলকে দেখা ও জিবরাঈলের নিকটবর্তী হওয়া। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে প্রথমবার আসল আকৃতিতে দেখেছিলেন এবং দ্বিতীয়বার মে'রাজের রাত্রিতে সিদরাতুল-মুন্তাহার নিকটে দেখেছিলেন। প্রথমবারে দেখা নবুওয়তের সম্পূর্ণ প্রাথমিক যমানায় হয়েছিল।
তখন জিবরীল সূরা ইকরার প্রাথমিক আয়াতসমূহের প্রত্যাদেশ নিয়ে প্রথমবার আগমন করেছিলেন। এরপর একদিন জিবরীল আলাইহিস সালাম মক্কার উন্মুক্ত ময়দানে তার আসল আকৃতিতে আত্মপ্রকাশ করলেন। তার ছয়শত বাহু ছিল এবং তিনি গোটা দিগন্তকে ঘিরে রেখেছিলেন। এরপর তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট আসেন এবং তাকে ওহী পৌছান। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে জিবরাঈলের মাহাত্ম্য এবং আল্লাহ তা’আলার দরবারে তার সুউচ্চ মর্যাদার স্বরূপ ফুটে ওঠে। সারকথা এই যে, এই প্রথম দেখা এ জগতেই মক্কার দিগন্তে হয়েছিল। দ্বিতীয়বার দেখার কথা (وَلَقَدْ رَآهُ نَزْلَةً أُخْرَىٰ) আয়াতে ব্যক্ত হয়েছে। মে'রাজের রাত্ৰিতে এই দেখা হয়।
উল্লেখিত কারণসমূহের ভিত্তিতে সুস্পষ্টভাবে এটাই বলা যায় যে, সূরা আন-নাজমের শুরুভাগের আয়াতসমূহে আল্লাহ তা’আলাকে দেখার কথা আলোচিত হয়নি; বরং জিবরীলকে দেখার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। জিবরীলকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার নিজস্ব আকৃতিতে দু’বার দেখেছেন। প্রথমবার নবুওয়াতের প্রারম্ভে। আর দ্বিতীয়টি মি'রাজের রাত্ৰিতে, সিদরাতুল মুন্তাহার নিকটে। [দেখুন: বুখারী: ৪৮৫৫, ৪৮৫৬]
তাফসীরে জাকারিয়া(৭) তখন সে ঊর্ধ্বদিগন্তে। [1]
[1] অর্থাৎ, জিবরীল (আঃ)। অর্থাৎ, অহী শিক্ষা দেওয়ার পর আকাশের দিগন্তে গিয়ে দাঁড়ালেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতারপর সে নিকটবর্তী হল, অতঃপর আরো কাছে এল। আল-বায়ান
অতঃপর সে (নবীর) নিকটবর্তী হল, অতঃপর আসলো আরো নিকটে, তাইসিরুল
অতঃপর সে তার নিকটবর্তী হল, অতি নিকটবর্তী। মুজিবুর রহমান
Then he approached and descended Sahih International
৮. তারপর তিনি তার কাছাকাছি হলেন, অতঃপর খুব কাছাকাছি,
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৮) অতঃপর সে তার (রসূল)এর নিকটবর্তী হল, অতি নিকটবর্তী। [1]
[1] অর্থাৎ, অতঃপর যমীনে অবতরণ করলেন এবং ধীরে ধীরে নবী করীম (সাঃ)-এর নিকটবর্তী হলেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতখন সে নৈকট্য ছিল দু’ ধনুকের পরিমাণ, অথবা তারও কম। আল-বায়ান
ফলে [নবী (সাঃ) ও জিবরাঈলের মাঝে] দুই ধনুকের ব্যবধান রইল অথবা আরো কম। তাইসিরুল
ফলে তাদের মধ্যে দুই ধনুকের ব্যবধান রইল, অথবা তারও কম। মুজিবুর রহমান
And was at a distance of two bow lengths or nearer. Sahih International
৯. ফলে তাদের মধ্যে দু ধনুকের ব্যবধান রইল অথবা তারও কম।(১)
(১) دَنَا শব্দের অর্থ নিকটবর্তী হল এবং فَتَدَلَّىٰ শব্দের অর্থ বুলে গেল। অর্থাৎ ঝুঁকে পড়ে নিকটবর্তী হল। ধনুকের কাঠ এবং এর বিপরীতে ধনুকের সুতার মধ্যবর্তী ব্যাবধানকে قاب বলা হয়। এই ব্যবধান আনুমানিক একহাত হয়ে থাকে। [কুরতুবী] আলোচ্য আয়াতসমূহে জিবরীল আলাইহিস সালাম-এর অধিকতর নিকটবর্তী হওয়ার বিষয়টি বর্ণনা করার কারণ এদিকে ইঙ্গিত করা যে, তিনি যে ওহী পৌঁছিয়েছেন তা শ্রবণে কোন সন্দেহ ও সংশয়ের অবকাশ নেই। [দেখুন: কুরতুবী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৯) ফলে তাদের মধ্যে দুই ধনুকের ব্যবধান রইল অথবা তারও কম। [1]
[1] কেউ কেউ অনুবাদ করেছেন দুই হাত পরিমাণ। এখানে নবী করীম (সাঃ) এবং জিবরীল (আঃ)-এর পারস্পরিক নিকটবর্তিতার কথা উল্লেখ করা হচ্ছে। মহান আল্লাহ এবং নবী করীম (সাঃ)-এর কাছাকাছি হওয়ার কথা বলা হচ্ছে না। যেমন কেউ কেউ এটাই বুঝাতে চেষ্টা করেন। আয়াতগুলোর প্রাসঙ্গিক আলোচনা থেকে একথা স্পষ্ট যে, এতে কেবল জিবরীল এবং নবী করীম (সাঃ)-এর বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। এই নিকটবর্তিতার সময়ই নবী করীম (সাঃ) জিবরীল (আঃ)-কে তাঁর আসল আকৃতিতে দেখেন। আর এটা হল নবুঅত প্রাপ্তির প্রথম দিকের সেই ঘটনা, যার আলোচনা এই আয়াতগুলোতে করা হয়েছে। দ্বিতীয়বার আসল আকৃতিতে দর্শন করেন মি’রাজের রাতে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানঅতঃপর তিনি তাঁর বান্দার প্রতি যা ওহী করার তা ওহী করলেন। আল-বায়ান
তখন (আল্লাহ) তাঁর বান্দাহর প্রতি ওয়াহী করলেন যা ওয়াহী করার ছিল। তাইসিরুল
তখন আল্লাহ তাঁর বান্দার প্রতি যা অহী করার তা অহী করলেন। মুজিবুর রহমান
And he revealed to His Servant what he revealed. Sahih International
১০. তখন আল্লাহ তাঁর বান্দার প্রতি যা ওহী করার তা ওহী করলেন।(১)
(১) এখানে أوْحٰى (বা ওহী প্রেরণ করেন) ক্রিয়াপদের কর্তা স্বয়ং আল্লাহ তা'আলা এবং عَبْدُه (বা তার বান্দা) এর সর্বনাম দ্বারা আল্লাহ্ তা'আলাকেই বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ জিবরীল আলাইহিস সালাম-কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে প্রেরণ করে আল্লাহ তা'আলা তার প্রতি ওহী নাযিল করলেন। [দেখুন: আত-তাহরীর ওয়াত তানওয়ীর, তাবারী]। এক হাদীসে এসেছে, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তিনটি জিনিস দেয়া হয়। পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, সূরা আল-বাকারাহ এর শেষ আয়াতসমূহ এবং তার উম্মতের মধ্যে যারা আল্লাহর সাথে শির্ক করবে না তাদের জন্য ক্ষমার ঘোষণা। [মুসলিম: ১৭৩]
তাফসীরে জাকারিয়া(১০) তখন আল্লাহ তাঁর দাসের প্রতি যা অহী করার তা অহী করলেন। [1]
[1] এর দ্বিতীয় অর্থঃ জিবরীল (আঃ) আল্লাহর বান্দা মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর জন্য যে অহী অথবা বার্তা নিয়ে এসেছিলেন, সেটা তিনি তাঁর কাছে পৌঁছে দিলেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানসে যা দেখেছে, অন্তকরণ সে সম্পর্কে মিথ্যা বলেনি। আল-বায়ান
(নবীর) অন্তঃকরণ মিথ্যে মনে করেনি যা সে দেখে ছিল। তাইসিরুল
যা সে দেখেছে তার অন্তকরণ তা অস্বীকার করেনি। মুজিবুর রহমান
The heart did not lie [about] what it saw. Sahih International
১১. যা তিনি দেখেছেন, তার অন্তঃকরণ তা মিথ্যা বলেনি(১);
(১) فؤاد শব্দের অর্থ অন্তঃকরণ। উদ্দেশ্য এই যে, চক্ষু যা কিছু দেখেছে, অন্তঃকরণও তা যথাযথ উপলব্ধি করতে কোন ভুল করেনি। (مَا رَأَىٰ) শব্দের অর্থ যা কিছু দেখেছে। এখানে উদ্দেশ্য তিনি জিবরীল আলাইহিস সালাম-কে আসল আকৃতিতে দেখেছেন। [মুয়াস্সার, কুরতুবী]
এ আয়াতে فؤاد বা অন্তঃকরণকে উপলব্ধি করার কর্তা করা হয়েছে। অথচ অনেকের মতে উপলব্ধি করা বোধশক্তি বা عقل এর কাজ। [আততাহরীর ওয়াত তানওয়ীর] এই প্রশ্নের জওয়াব এই যে, পবিত্র কুরআনের অনেক আয়াত দ্বারা জানা যায় যে, উপলব্ধির আসল কেন্দ্ৰ অন্তঃকরণ। তাই কখনও বোধশক্তিকেও ‘কলব’ (অন্তঃকরণ) শব্দ দ্বারা ব্যক্ত করে দেয়া হয়; যেমন (لِمَن كَانَ لَهُ قَلْبٌ) আয়াতে কলব বলে عقل বা বিবেক ও বোধশক্তি বোঝানো হয়েছে। পবিত্র কুরআনের (لَهُمْ قُلُوبٌ لَّا يَفْقَهُونَ بِهَا) ইত্যাদি আয়াত এর পক্ষে সাক্ষ্য দেয়।
তাফসীরে জাকারিয়া(১১) যা সে দেখেছে তার হৃদয় তা অস্বীকার করেনি। [1]
[1] অর্থাৎ, নবী করীম (সাঃ) জিবরীল (আঃ)-কে তাঁর আসল আকৃতিতে দেখেন যে, তাঁর ছয়শত ডানা রয়েছে। তাঁর প্রসারিত ডানা পূর্ব ও পশ্চিমের (আকাশ ও পৃথিবীর) মধ্যবর্তী স্থানকে ঘিরে রেখেছিল। এ দর্শনকে নবী করীম (সাঃ)-এর অন্তর মিথ্যা মনে করেনি। বরং আল্লাহর এই বিশাল ক্ষমতাকে স্বীকার করে নিয়েছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানসে যা দেখেছে, সে সম্পর্কে তোমরা কি তার সাথে বিতর্ক করবে? আল-বায়ান
সে যা দেখেছে সে বিষয়ে তোমরা কি তার সঙ্গে বিতর্ক করবে? তাইসিরুল
সে যা দেখেছে তোমরা কি সে বিষয়ে তার সংগে বিতর্ক করবে? মুজিবুর রহমান
So will you dispute with him over what he saw? Sahih International
১২. তিনি যা দেখেছেন তোমরা কি সে বিষয়ে তার সঙ্গে বিতর্ক করবে?
-
তাফসীরে জাকারিয়া(১২) সে যা দেখেছে তোমরা কি সে বিষয়ে তার সঙ্গে বিতর্ক করবে?
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর সে তো তাকে* আরেকবার দেখেছিল। আল-বায়ান
অবশ্যই সে [অর্থাৎ নবী (সা.)] তাকে [অর্থাৎ জিবরাঈল (আঃ)-কে] আরেকবার দেখেছিল তাইসিরুল
নিশ্চয়ই সে তাকে আরেকবার দেখেছিল। মুজিবুর রহমান
And he certainly saw him in another descent Sahih International
* জিবরীলকে।
১৩. আর অবশ্যই তিনি তাকে আরেকবার দেখেছিলেন।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(১৩) নিশ্চয়ই সে তাকে আরেকবার দেখেছিল।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ানসিদরাতুল মুনতাহার* নিকট। আল-বায়ান
শেষসীমার বরই গাছের কাছে, তাইসিরুল
সিদরাতুল মুনতাহার নিকট, মুজিবুর রহমান
At the Lote Tree of the Utmost Boundary - Sahih International
* সিদরাতুল মুনতাহা হল সপ্তম আকাশে আরশের ডান দিকে একটি কুল জাতীয় বৃক্ষ, সকল সৃষ্টির জ্ঞানের সীমার শেষ প্রান্ত। তারপর কি আছে, একমাত্র আল্লাহই জানেন।
১৪. সিদরাতুল মুন্তাহা তথা প্রান্তবর্তী কুল গাছ এর কাছে(১),
(১) এর অর্থ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক জিবরীলকে দ্বিতীয়বারের মত তার আসল আকৃতিতে দেখা। [বুখারী: ৩২৩৪, মুসলিম: ১৭৪] দ্বিতীয়বারের এই দেখার স্থান সপ্তম আকাশের ‘সিদরাতুল-মুন্তাহা’ বলা হয়েছে। বলাবাহুল্য, মে'রাজের রাত্রিতেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সপ্তম আকাশে গমন করেছিলেন। এতে করে দ্বিতীয়বার দেখার সময়ও মোটামুটিভাবে নির্দিষ্ট হয়ে যায়। অভিধানে ‘সিদরাহ' শব্দের অর্থ বদরিকা বৃক্ষ। মুন্তাহা শব্দের অর্থ শেষপ্রান্ত। সপ্তম আকাশে আরশের নিচে এই বদরিকা বৃক্ষ অবস্থিত। মুসলিমের বর্ণনায় একে যষ্ঠ আকাশে বলা হয়েছে। উভয় বর্ণনার সমন্বয় এভাবে হতে পারে যে, এই বৃক্ষের মূল শিকড় ষষ্ঠ আকাশে এবং শাখা প্রশাখা সপ্তম আকাশ পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। সাধারণ ফেরেশতাগণের গমনাগমনের এটাই শেষ সীমা। তাই একে মুন্তাহা বলা হয়। [ইবন কাসীর; কুরতুবী; আত-তাহরীর ওয়াত তানওয়ীর; ফাতহুল কাদীর]
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আল্লাহ তা'আলার বিধানাবলি প্রথমে ‘সিদরাতুলমুন্তাহায়’ নাযিল হয় এবং এখান থেকে সংশ্লিষ্ট ফেরেশতাগণের কাছে সোপর্দ করা হয়। যমীন থেকে আসমানগামী আমলনামা ইত্যাদিও ফেরেশতাগণ এখানে পৌছায় এবং এখান থেকে অন্য কোন পন্থায় আল্লাহ তা'আলার দরবারে পেশ করা হয়। [মুসলিম: ১৭৩, মুসনাদে আহমাদ: ১/৩৮৭, ৪২২]
তাফসীরে জাকারিয়া(১৪) সিদরাতুল মুনতাহার নিকট।[1]
[1] এটা হল মি’রাজের রাতে যে জিবরীল (আঃ)-কে তাঁর আসল আকৃতিতে দেখেছিলেন, তারই বর্ণনা। এই ‘সিদরাতুল মুন্তাহা’ হল ষষ্ঠ বা সপ্তম আসমানে অবস্থিত একটি কুল (বরই) গাছ। আর এটাই শেষ সীমা। এর উপরে কোন ফিরিশতা যেতে পারেন না। ফিরিশতাকুল আল্লাহর বিধানাদিও এখান থেকেই গ্রহণ করেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানযার কাছে জান্নাতুল মা’ওয়া* অবস্থিত। আল-বায়ান
যার কাছে অবস্থিত বসবাসের জান্নাত। তাইসিরুল
যার নিকট অবস্থিত বাসোদ্যান। মুজিবুর রহমান
Near it is the Garden of Refuge - Sahih International
* ফেরেশতা, শহীদদের রূহ ও মুত্তাকীদের অবস্থানস্থল।
১৫. যার কাছে জান্নাতুল মা’ওয়া(১) অবস্থিত।
(১) الْمَأْوَىٰ শব্দের অর্থ ঠিকানা, বিশ্রামস্থল। জান্নাতকে مَأْوَىٰ বলার কারণ এই যে, এটাই মুমিনদের আসল ঠিকানা। [দেখুন, ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(১৫) যার নিকট অবস্থিত (জান্নাতুল মা’ওয়া) বাসোদ্যান। [1]
[1] এটাকে ‘জান্নাতুল মা’ওয়া’ এই কারণে বলা হয় যে, এটাই ছিল আদম (আঃ)-এর আশ্রয়স্থল ও বাসস্থান। আবার কেউ কেউ বলেছেন, আত্মাসমূহ এখানে এসে জমায়েত হয়। (ফাতহুল কাদীর)
তাফসীরে আহসানুল বায়ানযখন কুল গাছটিকে যা আচ্ছাদিত করার তা আচ্ছাদিত করেছিল। আল-বায়ান
যখন গাছটি যা দিয়ে ঢেকে থাকার তা দিয়ে ঢাকা ছিল, (যার বর্ণনা মানুষের বোধগম্য নয়) তাইসিরুল
যখন বৃক্ষটি, যদ্বারা আচ্ছাদিত হবার তদ্বারা ছিল আচ্ছাদিত, মুজিবুর রহমান
When there covered the Lote Tree that which covered [it]. Sahih International
১৬. যখন কুল গাছটিকে যা আচ্ছাদিত করার তা আচ্ছাদিত করেছিল(১),
(১) অর্থাৎ যখন বদরিকা বৃক্ষকে আচ্ছন্ন করে রেখেছিল আচ্ছন্নকারী বস্তু। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তখন বদরিকা বৃক্ষের উপর স্বর্ণ নির্মিত প্রজাপতি চতুর্দিক থেকে এসে পতিত হচ্ছিল। [মুসলিম: ১৭৩, মুসনাদে আহমাদ: ১/৩৮৭, ৪২২] মনে হয়, আগন্তুক মেহমান রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্মানার্থে সেদিন বদরিকা বৃক্ষকে বিশেষভাবে সজ্জিত করা হয়েছিল। [কুরতুবী]
তাফসীরে জাকারিয়া(১৬) যখন (বদরী) বৃক্ষটিকে, যা আচ্ছাদিত করার ছিল তা আচ্ছাদিত করল, [1]
[1] এখানে ‘সিদরাতুল মুন্তাহা’র সেই দৃশ্য ও অবস্থার বর্ণনা দেওয়া হচ্ছে, যা নবী করীম (সাঃ) মি’রাজের রাতে দর্শন করেছিলেন। সোনার প্রজাপতি তার চতুস্পার্শেব উড়ে বেড়াচ্ছিল। ফিরিশতামন্ডলীও সে বৃক্ষকে ঘিরে রেখেছিলেন এবং মহান প্রভুর জ্যোতির দৃশ্যও ছিল সেখানে। (ইবনে কাসীর প্রভৃতি) এই স্থানেই নবী করীম (সাঃ)-কে তিনটি জিনিস প্রদান করা হয়। আর তা হল, পাঁচ ওয়াক্ত নামায, সূরা বাক্বারার শেষের আয়াতগুলো এবং সেই মুসলিমের ক্ষমার প্রতিশ্রুতি, যে শিরকের মলিনতা থেকে পবিত্র থাকবে। (মুসলিমঃ কিতাবুল ঈমান, সিদরাতুল মুন্তাহা পরিচ্ছেদ)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান