৪১ . হা-মীম আস-সাজদা (ফুসসিলাত)
৪১:৩৩ وَ مَنۡ اَحۡسَنُ قَوۡلًا مِّمَّنۡ دَعَاۤ اِلَی اللّٰهِ وَ عَمِلَ صَالِحًا وَّ قَالَ اِنَّنِیۡ مِنَ الۡمُسۡلِمِیۡنَ ﴿۳۳﴾

আর তার চেয়ে কার কথা উত্তম, যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে এবং বলে, অবশ্যই আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত’? আল-বায়ান

কথায় ঐ ব্যক্তি থেকে কে বেশি উত্তম যে (মানুষকে) আল্লাহর দিকে আহবান করে, আর সৎ কাজ করে এবং বলে, ‘আমি (আল্লাহর প্রতি) অনুগতদের অন্তর্ভুক্ত’। তাইসিরুল

ঐ ব্যক্তি অপেক্ষা কথায় কে উত্তম যে আল্লাহর প্রতি মানুষকে আহবান করে, সৎ কাজ করে এবং বলেঃ আমিতো আত্মসমর্পনকারীদের অন্তর্ভুক্ত। মুজিবুর রহমান

And who is better in speech than one who invites to Allah and does righteousness and says, "Indeed, I am of the Muslims." Sahih International

৩৩. আর তার চেয়ে কার কথা উত্তম যে আল্লাহর দিকে আহবান জানায় এবং সৎকাজ করে। আর বলে, অবশ্যই আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত।(১)

(১) এটা মুমিনদের দ্বিতীয় অবস্থা। তারা কেবল নিজেদের ঈমান ও আমল নিয়েই সস্তুষ্ট থাকে না, বরং অপরকেও দাওয়াত দেয়। বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকে, তার চেয়ে উত্তম কথা আর কার হতে পারে? মুমিনদের সান্ত্বনা দেয়া এবং মনোবল সৃষ্টির পর এখন তাদেরকে তাদের আসল কাজের প্রতি উৎসাহিত করা হচ্ছে। আগের আয়াতে তাদের বলা হয়েছিলো, আল্লাহর বন্দেগীর ওপর দৃঢ়পদ হওয়া এবং এই পথ গ্রহণ করার পর পুনরায় তা থেকে বিচ্যুত না হওয়াটাই এমন একটা মৌলিক নেকী যা মানুষকে ফেরেশতার বন্ধু এবং জান্নাতের উপযুক্ত বানায়। এখন তাদের বলা হচ্ছে, এর পরবর্তী স্তর হচ্ছে, তোমরা নিজে নেক কাজ করো, অন্যদেরকে আল্লাহর বন্দেগীর দিকে ডাকো এবং ইসলামের ঘোষণা দেয়াই যেখানে নিজের জন্য বিপদাপদ ও দুঃখ-মুসিবতকে আহবান জানানোর শামিল এমন কঠিন পরিবেশেও দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করে: আমি মুসলিম। মানুষের জন্য এর চেয়ে উচ্চস্তর আর নেই।

কিন্তু আমি মুসলিম বলে কোন ব্যক্তির ঘোষণা করা, পরিণামের পরোয়া না করে সৃষ্টিকে আল্লাহর বন্দেগীর দিকে আহবান জানানো এবং কেউ যাতে ইসলাম ও তার ঝাণ্ডাবাহীদের দোষারোপ ও নিন্দাবাদ করার সুযোগ না পায় এ কাজ করতে গিয়ে নিজের তৎপরতাকে সেভাবে পবিত্র রাখা হচ্ছে পূর্ণ মাত্রার নেকী। এ থেকে বোঝা গেল যে, মানুষের সেই কথাই সর্বোত্তম ও সর্বোৎকৃষ্ট যাতে অপরকে সত্যের দাওয়াত দেয়া হয়। এতে মুখে, কলমে, অন্য কোনভাবে সর্বপ্রকার দাওয়াতই শামিল রয়েছে। আযানদাতাও এতে দাখিল আছে। কেননা, সে মানুষকে সালাতের দিকে আহবান করে। এ কারণেই আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, আলোচ্য আয়াত মুয়াযযিন সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। কোন কোন মুফাসসির বলেন, এখানে (دَعَا إِلَى اللَّهِ) বাক্যের পর (وَعَمِلَ صَالِحًا) বলে আযান-ইকামতের মধ্যস্থলে দুরাকাআত সালাত বোঝানো হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আযান ও একমাতের মাঝখানে যে দোআ হয়, তা প্রত্যাখ্যাত হয় না। [আবু দাউদ: ৫২১]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩৩) যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি মানুষকে আহবান করে, সৎকাজ করে এবং বলে, ‘আমি তো আত্মসমর্পণকারী (মুসলিম)’ তার অপেক্ষা কথায় উত্তম আর কোন্ ব্যক্তি? [1]

[1] অর্থাৎ, মানুষকে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেওয়ার সাথে সাথে সে নিজেও হিদায়াতপ্রাপ্ত, দ্বীন-পালনে যত্নবান এবং আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণকারী অনুগত বান্দা।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪১ . হা-মীম আস-সাজদা (ফুসসিলাত)
৪১:৩৪ وَ لَا تَسۡتَوِی الۡحَسَنَۃُ وَ لَا السَّیِّئَۃُ ؕ اِدۡفَعۡ بِالَّتِیۡ هِیَ اَحۡسَنُ فَاِذَا الَّذِیۡ بَیۡنَكَ وَ بَیۡنَهٗ عَدَاوَۃٌ كَاَنَّهٗ وَلِیٌّ حَمِیۡمٌ ﴿۳۴﴾

আর ভাল ও মন্দ সমান হতে পারে না। মন্দকে প্রতিহত কর তা দ্বারা যা উৎকৃষ্টতর, ফলে তোমার ও যার মধ্যে শত্রুতা রয়েছে সে যেন হয়ে যাবে তোমার অন্তরঙ্গ বন্ধু। আল-বায়ান

ভাল আর মন্দ সমান নয়। উৎকৃষ্ট দিয়ে মন্দকে দূর কর। তখন দেখবে, তোমার আর যার মধ্যে শত্রুতা আছে সে যেন অন্তরঙ্গ বন্ধু। তাইসিরুল

ভাল কাজ এবং মন্দ কাজ সমান হতে পারেনা। মন্দ প্রতিহত কর উৎকৃষ্ট দ্বারা; ফলে তোমার সাথে যার শত্রুতা আছে সে হয়ে যাবে অন্তরঙ্গ বন্ধুর মত। মুজিবুর রহমান

And not equal are the good deed and the bad. Repel [evil] by that [deed] which is better; and thereupon the one whom between you and him is enmity [will become] as though he was a devoted friend. Sahih International

৩৪. আর ভাল ও মন্দ সমান হতে পারে না। মন্দ প্রতিহত করুন তা দ্বারা যা উৎকৃষ্ট; ফলে আপনার ও যার মধ্যে শক্ৰতা আছে, সে হয়ে যাবে অন্তরঙ্গ বন্ধুর মত।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩৪) ভাল ও মন্দ সমান হতে পারে না।[1] উৎকৃষ্ট দ্বারা মন্দ প্রতিহত কর; তাহলে যাদের সাথে তোমার শত্রুতা আছে, সে হয়ে যাবে অন্তরঙ্গ বন্ধুর মত। [2]

[1] বরং এ উভয়ের মধ্যে বিরাট তফাত।

[2] এ হল অতীব গুরুত্বপূর্ণ এক চারিত্রিক শিক্ষা যে, মন্দকে দূরীভূত কর ভাল দ্বারা। যা উৎকৃষ্ট তা দিয়ে নিকৃষ্ট প্রতিহত কর। অর্থাৎ, অন্যায়ের বদলা নাও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করে, যুলুমের বদলা নাও ক্ষমা করে, ক্রোধের বদলা নাও ধৈর্যধারণ করে, বেআদবীর বদলা নাও দৃষ্টিচ্যুত করে এবং মূর্খতা বা অশ্লীল কথার উত্তর দাও সহ্য করে নীরব থেকে। এর ফল এই হবে যে, তোমার শত্রু দেখবে তোমার বন্ধু হয়ে গেছে। তোমার থেকে দূরে দূরে থাকত এমন ব্যক্তি তোমার নিকটে হয়ে যাবে এবং তোমার রক্ত-পিপাসু ব্যক্তি তোমার বশীভূত ও প্রেম-পিপাসু হয়ে যাবে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪১ . হা-মীম আস-সাজদা (ফুসসিলাত)
৪১:৩৫ وَ مَا یُلَقّٰهَاۤ اِلَّا الَّذِیۡنَ صَبَرُوۡا ۚ وَ مَا یُلَقّٰهَاۤ اِلَّا ذُوۡحَظٍّ عَظِیۡمٍ ﴿۳۵﴾

আর এটি তারাই প্রাপ্ত হবে যারা ধৈর্যধারণ করবে, আর এর অধিকারী কেবল তারাই হয় যারা মহাভাগ্যবান। আল-বায়ান

এ গুণ কেবল তারাই লাভ করে যারা ধৈর্যশীল, এ গুণ কেবল তারাই লাভ করে যারা মহা ভাগ্যবান। তাইসিরুল

এই গুণের অধিকারী করা হয় শুধু তাদেরকেই যারা ধৈর্যশীল, এই গুণের অধিকারী করা হয় শুধু তাদেরকেই যারা মহা ভাগ্যবান। মুজিবুর রহমান

But none is granted it except those who are patient, and none is granted it except one having a great portion [of good]. Sahih International

৩৫. আর এটি শুধু তারাই প্রাপ্ত হবে যারা ধৈর্যশীল। আর এর অধিকারী তারাই হবে কেবল যারা মহাভাগ্যবান।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩৫) এ চরিত্রের অধিকারী কেবল তারাই হয় যারা ধৈর্যশীল,[1] এ চরিত্রের অধিকারী তারাই হয় যারা মহাভাগ্যবান। [2]

[1] অর্থাৎ, মন্দের পরিবর্তে ভালো করার গুণ যদিও অনেক উপকারী ও ফলপ্রসূ, কিন্তু এর উপর আমল সেই করতে পারবে, যে ধৈর্যশীল হবে। রাগকে দমন করতে পারবে এবং অপছন্দনীয় কথাবার্তা সহ্য করতে পারবে।

[2] حَظٍّ عَظِيْمٍ (বড় সৌভাগ্য বা মহাভাগ্য) বলতে জান্নাতকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, উল্লিখিত গুণাবলীর অধিকারী সেই হয়, যে বড় সৌভাগ্যবান। অর্থাৎ, যার ভাগ্যে জান্নাতে যাওয়া লিখে দেওয়া হয়েছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪১ . হা-মীম আস-সাজদা (ফুসসিলাত)
৪১:৩৬ وَ اِمَّا یَنۡزَغَنَّكَ مِنَ الشَّیۡطٰنِ نَزۡغٌ فَاسۡتَعِذۡ بِاللّٰهِ ؕ اِنَّهٗ هُوَ السَّمِیۡعُ الۡعَلِیۡمُ ﴿۳۶﴾

আর যদি শয়তানের পক্ষ থেকে কোন কুমন্ত্রণা কখনো তোমাকে প্ররোচিত করে, তাহলে তুমি আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করবে। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাতা। আল-বায়ান

শয়ত্বানের পক্ষ থেকে যদি তুমি কুমন্ত্রণা অনুভব কর, তাহলে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা কর। তিনি সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞ। তাইসিরুল

যদি শাইতানের কু-মন্ত্রণা তোমাকে প্ররোচিত করে তাহলে আল্লাহকে স্মরণ করবে; তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। মুজিবুর রহমান

And if there comes to you from Satan an evil suggestion, then seek refuge in Allah. Indeed, He is the Hearing, the Knowing. Sahih International

৩৬. আর যদি শয়তানের পক্ষ থেকে কোন কুমন্ত্রণা আপনাকে প্ররোচিত করে, তবে আপনি আল্লাহর আশ্রয় চাইবেন, নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।(১)

(১) বলা হয়েছে, শয়তানের প্রতারণার ব্যাপারে সাবধান থাকো। সে অত্যন্ত দরদী ও মঙ্গলকামী সেজে এই বলে তোমাদেরকে উত্তেজিত করবে যে, অমুক অত্যাচার কখনো বরদাশত করা উচিত নয়, অমুকের কাজের দাঁতভাঙ্গা জবাব দেয়া উচিত এবং এই আক্রমণের জবাবে লড়াই করা উচিত। তা না হলে তোমাদেরকে কাপুরুষ মনে করা হবে, এবং তোমাদের আদৌ কোন প্রভাব থাকবে না। এ ধরনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তোমরা যখন নিজেদের মধ্যে কোন অযথা উত্তেজনা অনুভব করবে তখন সাবধান হয়ে যাও। কারণ, তা শয়তানের প্ররোচনা। সে তোমাদের উত্তেজিত করে কোন ভুল সংঘটিত করাতে চায়। সাবধান হয়ে যাওয়ার পর মনে করো না, আমি আমার মেজাজকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রাখছি, শয়তান আমাকে দিয়ে কোন ত্রুটি করাতে পারবে না। নিজের ইচ্ছা শক্তির বিভ্রম হবে শয়তানের আরেকটি বেশী ভয়ংকর হাতিয়ার। এর চেয়ে বরং আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা উচিত। কারণ তিনি যদি তাওফীক দান করেন ও রক্ষা করেন তবেই মানুষ ভুল-ত্রুটি থেকে রক্ষা পেতে পারে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে একবার এক ব্যক্তি  আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু আনহুকে অকথ্য গালিগালাজ করতে থাকলো।

আবু বকর চুপচাপ তার গালি শুনতে থাকলেন আর তার দিকে চেয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুচকি হাসতে থাকলেন। অবশেষে আবু বকর সিদ্দীক জবাবে তাকে একটি কঠোর কথা বলে ফেললেন। তার মুখ থেকে সে কথাটি বের হওয়া মাত্র নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর চরম বিরক্তি ভাব ছেয়ে গেল এবং ক্রমে তা তার পবিত্র চেহারায় ফুটে উঠতে থাকলো। তিনি তখনই উঠে চলে গেলেন। আবু বকরও উঠে তাকে অনুসরণ করলেন এবং পথিমধ্যেই জিজ্ঞেস করলেন, ব্যাপার কি? সে যখন আমাকে গালি দিচ্ছিলো তখন আপনি চুপচাপ মুচকি হাসছিলেন। কিন্তু যখনই আমি তাকে জবাব দিলাম তখনই আপনি অসন্তুষ্ট হলেন? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ তুমি যতক্ষণ চুপচাপ ছিলে ততক্ষণ একজন ফেরেশতা তোমার সাথে ছিল এবং তোমার পক্ষ থেকে জবাব দিচ্ছিলো। কিন্তু যখন তুমি নিজেই জবাব দিলে তখন ফেরেশতার স্থানটি শয়তান দখল করে নিল। আমি তো শয়তানের সাথে বসতে পারি না। [মুসনাদে আহমাদ: ২/৪৩৬]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩৬) যদি শয়তানের কুমন্ত্রণা তোমাকে প্ররোচিত করে, তবে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা কর।[1] নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। [2]

[1] অর্থাৎ, শয়তান যদি শরীয়তের কার্যকলাপ থেকে তোমাকে ফিরিয়ে দিতে চায় অথবা উত্তম পন্থায় অন্যায়ের প্রতিকার করার ব্যাপারে সে বাধা সৃষ্টি করে, তবে তার অনিষ্ট থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা কর।

[2] আর যে সত্তা এ রকম যে, তিনি সকলের কথা শোনেন এবং প্রত্যেক কথা জানেন, তিনিই আশ্রয়প্রার্থীদের আশ্রয় দিতে পারেন। এটা হল পূর্বোক্ত বিষয়ের কারণ স্বরূপ। এরপর পুনরায় কিছু এমন নিদর্শন উল্লেখ করা হচ্ছে, যা আল্লাহর একত্ব, তাঁর অসীম ক্ষমতা এবং তাঁর সুনিপুণ নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা শক্তির কথা প্রমাণ করে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪১ . হা-মীম আস-সাজদা (ফুসসিলাত)
৪১:৩৭ وَ مِنۡ اٰیٰتِهِ الَّیۡلُ وَ النَّهَارُ وَ الشَّمۡسُ وَ الۡقَمَرُ ؕ لَا تَسۡجُدُوۡا لِلشَّمۡسِ وَ لَا لِلۡقَمَرِ وَ اسۡجُدُوۡا لِلّٰهِ الَّذِیۡ خَلَقَهُنَّ اِنۡ كُنۡتُمۡ اِیَّاهُ تَعۡبُدُوۡنَ ﴿۳۷﴾

আর তাঁর নিদর্শনসমূহের মধ্যে রয়েছে রাত ও দিন, সূর্য ও চাঁদ । তোমরা না সূর্যকে সিজদা করবে, না চাঁদকে। আর তোমরা আল্লাহকে সিজদা কর যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন, যদি তোমরা কেবলমাত্র তাঁরই ইবাদাত কর। আল-বায়ান

তাঁর নিদর্শনগুলোর মধ্যে হল রাত, দিন, সূর্য আর চন্দ্র। সূর্যকে সেজদা করো না, চন্দ্রকেও না। সেজদা কর আল্লাহকে যিনি ওগুলোকে সৃষ্টি করেছেন যদি সত্যিকারভাবে একমাত্র তাঁরই তোমরা ইবাদাত করতে চাও। তাইসিরুল

তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে রাত ও দিন, সূর্য ও চাঁদ। তোমরা সূর্যকে সাজদাহ করনা, চাঁদকেও নয়; সাজদাহ কর আল্লাহকে, যিনি এগুলি সৃষ্টি করেছেন, যদি তোমরা প্রকৃতই তাঁর ইবাদাত কর। মুজিবুর রহমান

And of His signs are the night and day and the sun and moon. Do not prostrate to the sun or to the moon, but prostate to Allah, who created them, if it should be Him that you worship. Sahih International

৩৭. আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে রাত ও দিন, সূর্য ও চাঁদ। তোমরা সূর্যকে সিজদা করো না, চাঁদকেও নয়(১); আর সিজদ কর আল্লাহকে, যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন, যদি তোমরা কেবলমাত্র তাঁরই ইবাদত কর।

(১) অর্থাৎ এসব আল্লাহর প্রতিভূ নয় যে এগুলোর আকৃতিতে আল্লাহ নিজেকে প্রকাশ করছেন বলে মনে করে তাদের ইবাদত করতে শুরু করবে। বরং এগুলো আল্লাহর নিদর্শন এসব নিদর্শন নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করলে তোমরা বিশ্ব জাহান ও তার ব্যবস্থাপনার সত্যতা ও বাস্তবতা উপলব্ধি করতে পারবে এবং এ কথাও জানতে পারবে যে নবী-রাসূল আলাইহিমুস সালাম আল্লাহ সম্পর্কে যে তাওহীদের শিক্ষা দিচ্ছেন তাই প্রকৃত সত্য। সূর্য ও চাঁদের উল্লেখের পূর্বে দিন ও রাতের উল্লেখ করা হয়েছে এ বিষয়ে সাবধান করে দেয়ার জন্য যে রাতের বেলা সূর্যের অদৃশ্য হওয়া ও চাঁদের আবির্ভূত হওয়া এবং দিনের বেলা চাঁদের অদৃশ্য হওয়া ও সূর্যের আবির্ভূত হওয়া সুস্পষ্ট ভাবে এ কথা প্রমাণ করে যে, এ দুটির কোনটিই আল্লাহ বা আল্লাহ প্রতিভূ নয়। উভয়েই তাঁর একান্ত দাস।

তারা আল্লাহর আইনের নিগড়ে বাধা পড়ে আবর্তন করছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চাঁদ ও সূর্য সম্পর্কে মানুষের আকীদা-বিশ্বাসকে পরিশুদ্ধ করার জন্য বিভিন্নভাবে প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সন্তান ইবরাহীম মারা গেলে সেদিনই সূর্যগ্রহণ হয়। লোকেরা বলাবলি করতে লাগলো যে, ইব্রাহীমের মৃত্যুর কারণেই সূর্যগ্ৰহণ হয়েছে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন যে, সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ করো মৃত্যু বা জীবনের জন্য হয় না। বরং এ দুটি আল্লাহর নিদর্শনাবলী থেকে দুটি নিদর্শন; যা তিনি তাঁর বান্দাদের দেখিয়ে থাকেন। সুতরাং যখন তোমরা এরূপ কিছু দেখবে, তখন সালাতের দিকে ধাবিত হবে ৷ [বুখারী: ১০৫৮]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩৭) তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে রাত ও দিন, সূর্য ও চন্দ্র।[1] তোমরা সূর্যকে সিজদা করো না, চন্দ্রকেও নয়;[2] বরং সিজদা কর আল্লাহকে, যিনি এগুলি সৃষ্টি করেছেন,[3] যদি তোমরা তাঁরই ইবাদত (দাসত্ব) কর।

[1] অর্থাৎ, রাতকে অন্ধকার দিয়ে ঢেকে দেওয়া যাতে মানুষ তাতে বিশ্রাম নিতে পারে এবং দিনকে আলোক-উজ্জ্বল করা যাতে জীবিকা উপার্জনে কোন অসুবিধা না হয়। অতঃপর পালাক্রমে রাত ও দিনের আগমন-প্রত্যাগমন। কখনো রাতের বড় ও দিনের ছোট হওয়া, আবার কখনো এর বিপরীত দিনের বড় ও রাতের ছোট হওয়া। অনুরূপ সূর্য ও চাঁদের নির্ধারিত সময়ে উদিত হওয়া ও অস্ত যাওয়া। তাদের স্ব স্ব কক্ষপথে নিজের নিজের পথ অতিক্রম করা এবং তাদের আপসে কোন সংঘর্ষ ঘটা থেকে সুরক্ষিত থাকা ইত্যাদি সবই প্রমাণ করে যে, তাদের অবশ্য অবশ্যই কোন স্রষ্টা এবং মালিক আছেন। অনুরূপ তিনি এক ও একক এবং সারা বিশ্বজগতে কেবল তাঁরই কর্তৃত্ব ও নির্দেশ চলে। যদি পরিচালনা করার ও নির্দেশ দেওয়ার অধিকারী একাধিক হত, তবে সারা জগতের এ সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা এত মজবুত এবং সুনিয়ন্ত্রিতভাবে টিকে থাকত না।

[2] কারণ, এরাও তোমাদের মত আল্লাহর সৃষ্ট। প্রভুত্বের কোন এখতিয়ার তাদের মধ্যে নেই। অথবা তাতে তারা শরীকও নয়।

[3] خَلَقَهُنَّ তে সর্বনাম স্ত্রীলিঙ্গ বহুবচন এই জন্য এসেছে যে, হয় তো خَلَقَ هَذِه الأَرْبَعَةَ الْمَذْكُوْرَةَ অর্থের ভিত্তিতে। কেননা, জ্ঞানহীন বস্তুর বহুবচনের ক্ষেত্রে (ব্যাকরণগত) বিধান হল এটাই। অথবা এই সর্বনামের লক্ষ্য কেবল চাঁদ এবং সূর্য। আর কোন কোন ব্যাকরণ-শাস্ত্রবিদের কাছে দ্বিবচনও বহুবচনরূপে গণ্য হয়। কিংবা এর উদ্দিষ্ট হল, آيات নিদর্শনাবলী। (ফাতহুল ক্বাদীর)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪১ . হা-মীম আস-সাজদা (ফুসসিলাত)
৪১:৩৮ فَاِنِ اسۡتَكۡبَرُوۡا فَالَّذِیۡنَ عِنۡدَ رَبِّكَ یُسَبِّحُوۡنَ لَهٗ بِالَّیۡلِ وَ النَّهَارِ وَ هُمۡ لَا یَسۡـَٔمُوۡنَ ﴿ٛ۳۸﴾ (سُجود‎‎)

অতঃপর যদি এরা অহঙ্কার করেও তবে যারা তোমার রবের নিকটে রয়েছে তারা দিন-রাত তাঁরই তাসবীহ পাঠ করছে এবং তারা ক্লান্তি বোধ করে না। [সাজদাহ] ۩ আল-বায়ান

অতঃপর তারা যদি অহংকার করে তবে (তারা জেনে নিক যে), তোমার প্রতিপালকের নিকটে যারা রয়েছে তারা দিন-রাত তাঁর মাহাত্ম্য বর্ণনায় লিপ্ত আছে, আর তারা কখনও ক্লান্তিবোধ করে না। [সাজদাহ] ۩ তাইসিরুল

তারা অহংকার করলেও যারা তোমার রবের সান্নিধ্যে রয়েছে তারাতো দিন ও রাতে তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে এবং তারা ক্লান্তিও বোধ করেনা। [সাজদাহ] ۩ মুজিবুর রহমান

But if they are arrogant - then those who are near your Lord exalt Him by night and by day, and they do not become weary. Sahih International

৩৮. অতঃপর যদি তারা অহংকার করে, তবে যারা আপনার রবের নিকটে রয়েছে তারা তো দিন ও রাতে তাঁর পবিত্ৰতা, মহিমা ঘোষণা করে এবং তারা ক্লান্তি বোধ করে না। [সাজদাহ] ۩

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩৮) ওরা অহংকার করলেও যারা তোমার প্রতিপালকের সান্নিধ্যে রয়েছে তারা তো দিন-রাত তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে এবং তারা ক্লান্তিবোধ করে না। [1] [সাজদাহ] ۩

[1] (এই আয়াত পাঠ করার পর সিজদা করা মুস্তাহাব। সিজদার আহকাম জানতে সূরা আ’রাফের শেষ আয়াতের টীকা দেখুন।)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪১ . হা-মীম আস-সাজদা (ফুসসিলাত)
৪১:৩৯ وَ مِنۡ اٰیٰتِهٖۤ اَنَّكَ تَرَی الۡاَرۡضَ خَاشِعَۃً فَاِذَاۤ اَنۡزَلۡنَا عَلَیۡهَا الۡمَآءَ اهۡتَزَّتۡ وَ رَبَتۡ ؕ اِنَّ الَّذِیۡۤ اَحۡیَاهَا لَمُحۡیِ الۡمَوۡتٰی ؕ اِنَّهٗ عَلٰی كُلِّ شَیۡءٍ قَدِیۡرٌ ﴿۳۹﴾

তাঁর আরেকটি নিদর্শন হল এই যে, তুমি যমীনকে দেখতে পাও শুষ্ক-অনুর্বর, অতঃপর যখন আমি তার উপর পানি বর্ষণ করি তখন তা আন্দোলিত ও স্ফীত হয়। নিশ্চয়ই যিনি যমীনকে জীবিত করেন তিনি মৃতদেরও জীবিতকারী। নিশ্চয় তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান। আল-বায়ান

তাঁর নিদর্শনগুলোর মধ্যে হল এই যে, তুমি যমীনকে দেখ শুষ্ক অনুর্বর পড়ে আছে। অতঃপর আমি যখন তার উপর বৃষ্টি বর্ষণ করি তখন তা সতেজ হয় ও বেড়ে যায়। যিনি এ মৃত যমীনকে জীবিত করেন, তিনি অবশ্যই মৃতদেরকে জীবিত করবেন। তিনি সকল বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান। তাইসিরুল

আর তাঁর একটি নিদর্শন এই যে, তুমি ভূমিকে দেখতে পাও শুষ্ক উষর, অতঃপর আমি তাতে বৃষ্টি বর্ষণ করলে তা আন্দোলিত ও স্ফীত হয়; যিনি জীব দেন তিনিই মৃতের জীবন দানকারী। তিনিতো সর্ব বিষয়ে সর্ব শক্তিমান। মুজিবুর রহমান

And of His signs is that you see the earth stilled, but when We send down upon it rain, it quivers and grows. Indeed, He who has given it life is the Giver of Life to the dead. Indeed, He is over all things competent. Sahih International

৩৯. আর তাঁর একটি নিদর্শন এই যে, আপনি ভূমিকে দেখতে পান শুষ্ক ও উষর, অতঃপর যখন আমরা তাতে পানি বর্ষণ করি তখন তা আন্দোলিত ও স্ফীত হয়। নিশ্চয় যিনি যমীনকে জীবিত করেন তিনি অবশ্যই মৃতদের জীবনদানকারী। নিশ্চয় তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩৯) আর তাঁর একটি নিদর্শন এই যে, তুমি ভূমিকে দেখতে পাও শুষ্ক,[1] অতঃপর আমি ওতে বৃষ্টি বর্ষণ করলে তা শস্য-শ্যামলা হয়ে আন্দোলিত ও স্ফীত হয়;[2] নিশ্চয় যিনি ভূমিকে জীবিত করেন, তিনিই জীবিত করবেন মৃতকে।[3] নিশ্চয়ই তিনি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।

[1] خَاشِعَةً এর অর্থ হল, শুখো-অনাবৃষ্টি অর্থাৎ, মৃত বা উদ্ভিদশূন্য।

[2] অর্থাৎ, বিভিন্ন প্রকারের সুস্বাদু ফল ও ফসলাদি উৎপন্ন করে।

[3] মৃত ভূমিকে বৃষ্টি দ্বারা এভাবে জীবিত করে দেওয়া এবং তাকে উৎপন্ন করার যোগ্য বানিয়ে দেওয়া প্রমাণ করে যে, তিনি মৃতদেরকে অবশ্যই জীবিত করবেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪১ . হা-মীম আস-সাজদা (ফুসসিলাত)
৪১:৪০ اِنَّ الَّذِیۡنَ یُلۡحِدُوۡنَ فِیۡۤ اٰیٰتِنَا لَا یَخۡفَوۡنَ عَلَیۡنَا ؕ اَفَمَنۡ یُّلۡقٰی فِی النَّارِ خَیۡرٌ اَمۡ مَّنۡ یَّاۡتِیۡۤ اٰمِنًا یَّوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ ؕ اِعۡمَلُوۡا مَا شِئۡتُمۡ ۙ اِنَّهٗ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ بَصِیۡرٌ ﴿۴۰﴾

নিশ্চয় যারা আমার আয়াতসমূহ বিকৃত করে তারা আমার অগোচরে নয়। যে অগ্নিতে নিক্ষিপ্ত হবে সে কি উত্তম, না যে কিয়ামত দিবসে নিরাপদভাবে উপস্থিত হবে? তোমাদের যা ইচ্ছা আমল কর। নিশ্চয় তোমরা যা আমল কর তিনি তার সম্যক দ্রষ্টা। আল-বায়ান

যারা আমার আয়াতসমূহের অর্থকে ভিন্নপথে পরিচালিত করে, তারা আমার থেকে লুক্কায়িত নয়। যাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে সেই উত্তম না ঐ ব্যক্তি যে ক্বিয়ামতের দিন সম্পূর্ণ নিরাপদ হয়ে হাজির হবে? তোমাদের যা ইচ্ছে হয় করতে থাক। তোমরা যা কর তা তিনি (খুব ভালভাবেই) দেখেন। তাইসিরুল

যারা আমার আয়াতসমূহকে বিকৃত করে তারা আমার অগোচর নয়। শ্রেষ্ঠ কে? যে ব্যক্তি জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে সে, নাকি যে কিয়ামাত দিবসে নিরাপদে থাকবে সে? তোমাদের যা ইচ্ছা তা কর; তোমরা যা কর তিনি তার দ্রষ্টা। মুজিবুর রহমান

Indeed, those who inject deviation into Our verses are not concealed from Us. So, is he who is cast into the Fire better or he who comes secure on the Day of Resurrection? Do whatever you will; indeed, He is Seeing of what you do. Sahih International

৪০. নিশ্চয় যারা আমার আয়াতসমূহে ইলাহাদ করে, তারা আমার অগোচরে নয়। যে অগ্নিতে নিক্ষিপ্ত হবে সে কি শ্ৰেষ্ঠ, না যে কিয়ামতের দিন নিরাপদে উপস্থিত হবে সে? তোমরা যা ইচ্ছে আমল কর। তোমরা যা আমল কর, নিশ্চয় তিনি তার সম্যক দ্রষ্টা।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪০) নিশ্চয় যারা আমার আয়াতসমূহে বক্রপথ অবলম্বন করে[1] তারা আমার অগোচর নয়।[2] যে ব্যক্তি জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে সে শ্রেষ্ঠ; না যে কিয়ামতের দিন নিরাপদে উপস্থিত হবে সে?[3] তোমাদের যা ইচ্ছা কর,[4] নিশ্চয় তোমরা যা কর, তিনি তার দ্রষ্টা।

[1] অর্থাৎ, সেগুলোকে মানে না, বরং সেগুলো থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং তা মিথ্যা ভাবে। ইবনে আববাস (রাঃ) إلحاد  এর অর্থ করেছেন, বিকৃত বা অপব্যাখ্যা করা। যার ভিত্তিতে এতে সেই ভ্রষ্ট দলগুলোও চলে আসে, যারা নিজেদের ভ্রান্ত আকীদা ও মতবাদকে সাব্যস্ত করার জন্য আল্লাহর আয়াতসমূহের অপব্যাখ্যা করে এবং তার অর্থে বিকৃতি সাধন ও হেরফেরও করে।

[2] এটা হল আল্লাহর আয়াতে সর্বপ্রকার বাঁকাপথ অবলম্বনকারীদের জন্য কঠিন ধমক।

[3] অর্থাৎ, এরা উভয়ে কি সমান হতে পারে? না, কক্ষনো না। তাছাড়াও এখানে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, বাঁকাপথ অবলম্বনকারীরা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে এবং ঈমানদাররা কিয়ামতের দিন নিরাপদে ভয়শূন্য থাকবে।

[4] এ বাক্য আজ্ঞা ও সম্মতিসূচক, কিন্তু এর উদ্দেশ্য ভয় দেখানো ও ধমকি দেওয়া। এতে কুফরী, শিরক এবং পাপাচরণের অনুমতি ও তার বৈধতার ঘোষণা দেওয়া হয়নি।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪১ . হা-মীম আস-সাজদা (ফুসসিলাত)
৪১:৪১ اِنَّ الَّذِیۡنَ كَفَرُوۡا بِالذِّكۡرِ لَمَّا جَآءَهُمۡ ۚ وَ اِنَّهٗ لَكِتٰبٌ عَزِیۡزٌ ﴿ۙ۴۱﴾

নিশ্চয় যারা উপদেশ [কুরআন] আসার পরও তা অস্বীকার করে [ তাদেরকে অবশ্যই এর পরিণাম ভোগ করতে হবে]। আর এটি নিশ্চয় এক সম্মানিত গ্রন্থ। আল-বায়ান

যারা তাদের কাছে উপদেশ বাণী আসার পর তা প্রত্যাখ্যান করে (তারা আমার থেকে লুক্কায়িত নয়)। এটা হল অবশ্যই এক মহা শক্তিশালী গ্রন্থ। তাইসিরুল

যারা তাদের নিকট কুরআন আসার পর তা প্রত্যাখ্যান করে তাদের মধ্যে চিন্তা ভাবনার অভাব রয়েছে। ইহা অবশ্যই এক মহিমাময় গ্রন্থ। মুজিবুর রহমান

Indeed, those who disbelieve in the message after it has come to them... And indeed, it is a mighty Book. Sahih International

৪১. নিশ্চয় যারা তাদের কাছে কুরআন আসার পর তার সাথে কুফরী করে(১) (তাদেরকে কঠিন শাস্তি দেয়া হবে); আর এ তো অবশ্যই এক সম্মানিত গ্রন্থ—

(১) এ আয়াতে ذكر বলে কুরআনকে বোঝানো হয়েছে। [তবারী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪১) নিশ্চয় যারা তাদের নিকট কুরআন আসার পর তা প্রত্যাখ্যান করে, (তাদেরকে কঠিন শাস্তি দেওয়া হবে।)[1] আর এ অবশ্যই এক মহিমময় গ্রন্থ।[2]

[1] বন্ধনীর মাঝে শব্দগুলো হল, إِنَّ এর ঊহ্য খবর (বিধেয় পদ) এর অনুবাদ। কেউ কেউ অন্য শব্দও ঊহ্য মেনেছেন। যেমন, يُجَازَوْنَ بِكُفْرِهِمْ তাদের কুফরীর শাস্তি দেওয়া হবে। অথবা هَالِكُوْنَ তারা ধ্বংস হবে।

[2] অর্থাৎ, যে গ্রন্থ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে, সে গ্রন্থ সমালোচনা ও নিন্দার অনেক ঊর্ধ্বে এবং প্রত্যেক দোষ ও ত্রুটি থেকে পাক ও পবিত্র।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪১ . হা-মীম আস-সাজদা (ফুসসিলাত)
৪১:৪২ لَّا یَاۡتِیۡهِ الۡبَاطِلُ مِنۡۢ بَیۡنِ یَدَیۡهِ وَ لَا مِنۡ خَلۡفِهٖ ؕ تَنۡزِیۡلٌ مِّنۡ حَكِیۡمٍ حَمِیۡدٍ ﴿۴۲﴾

বাতিল এতে অনুপ্রবেশ করতে পারে না, না সামনে থেকে, না পিছন থেকে। এটি প্রজ্ঞাময়, সপ্রশংসিতের পক্ষ থেকে নাযিলকৃত। আল-বায়ান

মিথ্যা এর কাছে না এর সামনে দিয়ে আসতে পারে, না এর পিছন দিয়ে। এটা অবতীর্ণ হয়েছে মহাজ্ঞানী, সকল প্রশংসার যোগ্য (আল্লাহ)’র পক্ষ হতে। তাইসিরুল

কোন মিথ্যা এতে অনুপ্রবেশ করবেনা। সম্মুখ হতেও নয়, পশ্চাৎ হতেও নয়; এটা প্রজ্ঞাময় প্রশংসা আল্লাহর নিকট হতে অবতীর্ণ। মুজিবুর রহমান

Falsehood cannot approach it from before it or from behind it; [it is] a revelation from a [Lord who is] Wise and Praiseworthy. Sahih International

৪২. বাতিল এতে অনুপ্রবেশ করতে পারে না—সামনে থেকেও না, পিছন থেকেও না। এটা প্রজ্ঞাময়, চিরপ্ৰশংসিতের কাছ থেকে নাযিলকৃত।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪২) সম্মুখ অথবা পশ্চাৎ হতে মিথ্যা এতে প্রক্ষিপ্ত হতে পারে না। এ প্রজ্ঞাময়, প্রশংসার্হ আল্লাহর নিকট হতে অবতীর্ণ।[1]

[1] অর্থাৎ, সব দিক দিয়ে সর্বপ্রকার ত্রুটি থেকে সুরক্ষিত। ‘সম্মুখ হতে মিথ্যা’ অর্থ হ্রাস এবং ‘পশ্চাৎ হতে মিথ্যা’ অর্থ, বৃদ্ধি। অর্থাৎ, বাতিল বা মিথ্যা তার সামনের দিক দিয়ে এসে না তা হতে কোন কিছু হ্রাস করতে পারবে, আর না তার পিছন দিক দিয়ে এসে তাতে কোন কিছু বৃদ্ধি সাধন করতে পারবে এবং না তাতে কোন পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করতে সফল হবে। কারণ, এটা তাঁর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ, যিনি তাঁর যাবতীয় কথা ও কাজে সুকৌশলী ও প্রশংসিত। অথবা তিনি যেসব কাজের নির্দেশ দেন এবং যেসব কাজ থেকে নিষেধ করেন, পরিণাম ও লক্ষ্যের দিক দিয়ে সবই প্রশংসনীয়। অর্থাৎ, সবই ভাল ও উপকারী। (ইবনে কাসীর)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ ৪২৫১ থেকে ৪২৬০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৬২৩৬ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 · · · 423 424 425 426 427 · · · 621 622 623 624 পরের পাতা »