যেমন, আপনি হয়ত ২ নং সূরার ২০ নং আয়াত এবং ১০ নং সূরার ৫ নং আয়াত এভাবে একসাথে আরো অন্য সূরার অন্য আয়াত সার্চ করতে চাইছেন, সেক্ষেত্রে আপনাকে উপরের সার্চ বক্সে
২:২০, ১০:৫ এভাবে অথবা ২/২০, ১০/৫ এভাবে লিখে সার্চ করতে হবে।
আপনি সূরা ও আয়াত নং বাংলা অথবা ইংরেজিতে লিখতে পারেন।
তারা আরো বলেছে, ‘আমরা ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে অধিক সমৃদ্ধশালী। আর তাই আমরা আযাবপ্রাপ্ত হব না’। আল-বায়ান
তারা বলত- ধন-মাল আর বাল-বাচ্চায় আমরা বেশি, আমরা শাস্তিপ্রাপ্ত হতে পারি না। তাইসিরুল
তারা আরও বলতঃ আমরা ধনে-জনে সমৃদ্ধশালী; সুতরাং আমাদেরকে কিছুতেই শাস্তি দেয়া হবেনা। মুজিবুর রহমান
And they said, "We are more [than the believers] in wealth and children, and we are not to be punished." Sahih International
৩৫. তারা আরও বলেছে, আমরা ধনে-জনে সমৃদ্ধিশালী; আর আমাদেরকে কিছুতেই শান্তি দেয়া হবে না।(১)
(১) এখানে তাদের উক্তি বর্ণিত হয়েছেঃ আমরা ধনে-জনে সবদিক দিয়েই তোমাদের অপেক্ষা বেশী সমৃদ্ধ। সুতরাং আমরা আযাবে পতিত হব না। (বাহ্যতঃ তাদের উক্তির উদ্দেশ্য ছিল এই যে, আল্লাহ তা'আলার কাছে আমরা শাস্তিযোগ্য হলে আমাদের এই বিপুল ধনৈশ্বৰ্য্য কেন দিতেন?) ৩৬ ও ৩৭ আয়াতে তাদের জওয়াব দেয়া হয়েছে যে, দুনিয়াতে ধন-সম্পদ, মান-সম্মান ও প্রভাব প্রতিপত্তির হ্রাস-বৃদ্ধি আল্লাহর কাছে প্রিয়-অপ্রিয় হওয়ার দলীল নয়; বরং সৃষ্টিগত সুবিবেচনার ভিত্তিতে দুনিয়াতে আল্লাহ তা’আলা যাকে ইচ্ছা অগাধ ধন-সম্পদ দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা কম দেন। এর রহস্য তিনিই জানেন। ধন-সম্পদের প্রাচুর্যকে আল্লাহর প্রিয় হওয়ার দলীল মনে করা মূর্খতা। আল্লাহর প্রিয় হওয়া একমাত্র ঈমান ও সৎকর্মের উপর নির্ভরশীল। যে ব্যক্তি এগুলো অর্জন করে না, ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততির প্রাচুর্য তাকে আল্লাহর প্রিয়পাত্র করতে পারে না।
এ বিষয়বস্তুটি পবিত্র কুরআন বিভিন্ন আয়াতে ব্যক্ত করেছে। এক আয়াতে আছেঃ তারা কি মনে করে যে, আমি ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দ্বারা তাদেরকে যে সাহায্য করি, তা তাদের জন্যে পরিণাম ও আখেরাতের দিক দিয়েও মঙ্গলজনক? (কখনই নয়) বরং তারা আসল সত্য সম্পর্কে বে-খবর। [সূরা আল মুমিনুন: ৫৫–৫৬] (অর্থাৎ তারা বেখবর যে, যে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি মানুষকে আল্লাহ থেকে গাফেল করে দেয়, তা তাদের জন্যে শাস্তিস্বরূপ) এ ছাড়াও পবিত্ৰ কুরআন মজীদের বিভিন্ন স্থানে দুনিয়া পূজারীদের এ বিভ্রান্তির উল্লেখ করে তা খণ্ডন করা হয়েছে। [দৃষ্টান্ত স্বরূপ নিম্নোক্ত স্থানগুলো দেখুনঃ সূরা আল বাকারাহ ১২৬, ২১২; সূরা আত তাওবাহ ৫৫, ৬৯; সূরা হূদ ৩, ২৭; সূরা আর রা'দ ২৬; সূরা আল কাহফ ৩৪–৪৩; সূরা মার্ইয়াম ৭৩–৭৭; সূরা ত্বা-হা ১৩১; সূরা আল মুমিনুন ৫৫–৬১; সূরা আশ শু'আরা ১১১; সূরা আল কাসাস ৭৬–৮৩; সূরা আর রূম ৯; সূরা আল মুদ্দাসসির ১১–২৬; এবং সূরা আল ফাজর ১৫–২০ নং আয়াত]। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহ তোমাদের রূপ ও ধন-সম্পদ দেখেন না, তিনি তোমাদের অন্তর ও কাজকর্ম দেখেন। [মুসলিম: ২৫৬৪]
তাফসীরে জাকারিয়া(৩৫) ওরা আরও বলত, ‘আমাদের ধন-জন সবার চেয়ে বেশী; সুতরাং আমাদেরকে কিছুতেই শাস্তি দেওয়া হবে না।’ [1]
[1] অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা যখন আমাদেরকে পৃথিবীতে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততির আতিশয্য প্রদান করেছেন, তখন কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হলেও আমাদের শাস্তি হবে না। তারা ঠিক যেন কিয়ামতের দিনকেও দুনিয়ার সাথে তুলনা করেছে যে, যেমন পৃথিবীতে কাফের ও মু’মিন সকলকে আল্লাহর নিয়ামত প্রদান করা হচ্ছে, অনুরূপ আখেরাতেও প্রদান করা হবে। অথচ আখেরাত হচ্ছে ফলাফল ক্ষেত্র, সেখানে পৃথিবীতে কৃত নিজ নিজ কর্মের ফল পাওয়া যাবে; ভাল কর্মের ভাল ফল এবং মন্দ কর্মের মন্দ ফল। আর পৃথিবী হচ্ছে পরীক্ষালয়। এখানে আল্লাহ তাআলা পরীক্ষা স্বরূপ সকলকে পার্থিব-সম্পদ প্রদান করেন। অথবা তারা পার্থিব ধন-সম্পদের আতিশয্যকে আল্লাহর সন্তষ্টির বহিঃপ্রকাশ ধরে নিয়েছে; অথচ এই রকম নয়। যদি তাই হত তাহলে আল্লাহ তাআলা তাঁর অনুগত বান্দাদেরকে সর্বাধিক ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি প্রদান করতেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানবল, ‘আমার রব যার জন্য ইচ্ছা রিয্ক প্রশস্ত করেন অথবা সঙ্কুচিত করেন। কিন্তু অধিকাংশ লোক তা জানে না।’ আল-বায়ান
বল- আমার প্রতিপালক যার জন্য চান রিযক প্রশস্ত করেন বা সীমিত করেন, কিন্তু (এর তাৎপর্য) অধিকাংশ লোকই জানে না। তাইসিরুল
বলঃ আমার রাবব যার প্রতি ইচ্ছা রিয্ক বর্ধিত করেন, অথবা এটা সীমিত করেন; কিন্তু অধিকাংশ লোকই এটা জানেনা। মুজিবুর রহমান
Say, "Indeed, my Lord extends provision for whom He wills and restricts [it], but most of the people do not know." Sahih International
৩৬. বলুন, আমার রব যার প্রতি ইচ্ছে তার রিযিক বাড়িয়ে দেন অথবা সীমিত করেন; কিন্তু অধিকাংশ লোকই এটা জানে না।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৩৬) তুমি বল, ‘আমার প্রতিপালক যার জন্য ইচ্ছা তার রুযী বর্ধিত করেন অথবা তা সীমিত করেন;[1] কিন্তু অধিকাংশ লোক এ বোঝে না।’
[1] এই আয়াতে কাফেরদের উক্ত ভুল ধারণা ও সন্দেহ দূর করা হচ্ছে যে, রুযীর প্রশস্ততা ও সংকীর্ণতা আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টির বহিঃপ্রকাশ নয়; বরং তার সম্পর্ক আল্লাহর ইচ্ছা ও হিকমতের সাথে। এই জন্য তিনি সম্পদ যাকে পছন্দ করেন তাকেও দেন এবং যাকে অপছন্দ করেন তাকেও দেন। তিনি যাকে চান ধনী করেন এবং যাকে চান গরীব করেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি এমন বস্তু নয় যা তোমাদেরকে আমার নিকটবর্তী করে দেবে। তবে যারা ঈমান আনে ও নেক আমল করে, তারাই তাদের আমলের বিনিময়ে পাবে বহুগুণ প্রতিদান। আর তারা (জান্নাতের) সুউচ্চ প্রাসাদে নিরাপদে থাকবে। আল-বায়ান
ওটা না তোমাদের মাল-ধন, আর না তোমাদের সন্তান-সন্ততি যা তোমাদেরকে আমার নিকটবর্তী করবে। তবে যে কেউ ঈমান আনে আর সৎকাজ করে তাদেরই জন্য আছে বহুগুণ প্রতিদান তাদের কাজের জন্য। তারা সুউচ্চ প্রাসাদে নিরাপদে থাকবে। তাইসিরুল
তোমাদের ধন সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি এমন কিছু নয় যা তোমাদেরকে আমার নিকটবর্তী করে দিবে; যারা ঈমান আনে ও সৎ কাজ করে তারাই তাদের কর্মের জন্য পাবে বহুগুণ পুরস্কার; আর তারা প্রাসাদে নিরাপদে থাকবে। মুজিবুর রহমান
And it is not your wealth or your children that bring you nearer to Us in position, but it is [by being] one who has believed and done righteousness. For them there will be the double reward for what they did, and they will be in the upper chambers [of Paradise], safe [and secure]. Sahih International
৩৭. আর তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি এমন কিছু নয় যা তোমাদেরকে মর্যাদায় আমাদের নিকটবর্তী করে দেবে; তবে যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে, তারাই তাদের কাজের জন্য পাবে বহুগুণ প্রতিদান; আর তারা সুউচ্চ প্রাসাদে নিরাপদে থাকবে।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৩৭) তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি আমার নৈকট্য লাভের সহায়ক হবে না। [1] তবে (নৈকট্য লাভ করবে) তারাই যারা বিশ্বাস করে ও সৎকাজ করে[2] এবং তারা তাদের কাজের জন্য পাবে বহুগুণ পুরস্কার। [3] আর তারা প্রাসাদসমূহে নিরাপদে বসবাস করবে।
[1] অর্থাৎ, এই ধন-সম্পদ এই কথার প্রমাণ নয় যে, তোমাদের সাথে আমার ভালবাসা আছে এবং আমার নিকট তোমাদের বিশেষ মর্যাদা আছে।
[2] অর্থাৎ, আমার ভালবাসা ও নৈকট্য লাভ করার পন্থাই হচ্ছে ঈমান ও নেক আমল। যেমন হাদীসে মহানবী (সাঃ) বলেছেন ‘‘আল্লাহ তাআলা তোমাদের আকার-আকৃতি ও ধন-সম্পদ দেখেন না; বরং তিনি তোমাদের অন্তর ও আমল দেখে থাকেন।’’ (মুসলিমঃ কিতাবুল বির্র)
[3] মহান আল্লাহ একটি নেকীর বদলা কমপক্ষে দশ গুণ এবং ঊর্ধ্বপক্ষে সাতশ’ গুণ; বরং তার চেয়েও অধিক গুণ বর্ধিত করে থাকেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর যারা আমার আয়াতসমূহকে ব্যর্থ করে দিতে প্রচেষ্টা চালায় তাদেরকে আযাবের মধ্যে উপস্থিত করা হবে। আল-বায়ান
যারা আমার আয়াতসমূহকে ব্যর্থ করার জন্য চেষ্টা চালায়, তাদেরকে ‘আযাবে উপস্থিত করা হবে। তাইসিরুল
যারা আমার আয়াতকে ব্যর্থ করার চেষ্টা করবে তারা শাস্তি ভোগ করতে থাকবে। মুজিবুর রহমান
And the ones who strive against Our verses to cause [them] failure - those will be brought into the punishment [to remain]. Sahih International
৩৮. আর যারা আমাদের আয়াতকে ব্যর্থ করার চেষ্টা করে, তারা হবে শাস্তিতে উপস্থিতকৃত।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৩৮) যারা আমার বাক্যকে ব্যর্থ করার অপচেষ্টা করবে তাদেরকে শাস্তিতে (চিরকাল) উপস্থিত রাখা হবে।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ানবল, ‘নিশ্চয় আমার রব তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছা রিয্ক প্রশস্ত করেন এবং সঙ্কুচিত করেন। আর তোমরা যা কিছু আল্লাহর জন্য ব্যয় কর তিনি তার বিনিময় দেবেন এবং তিনিই উত্তম রিয্কদাতা।’ আল-বায়ান
বল- আমার প্রতিপালকই তাঁর বান্দাহদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছে রিযক প্রশস্ত করেন, আর যার জন্য ইচ্ছে সীমিত করেন। তোমরা যা কিছু (সৎ কাজে) ব্যয় কর, তিনি তার বিনিময় দেবেন। তিনিই সর্বশ্রেষ্ঠ রিযকদাতা। তাইসিরুল
বলঃ আমার রাবব তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার প্রতি ইচ্ছা তার রিয্ক বর্ধিত করেন অথবা ওটা সীমিত করেন। তোমরা যা কিছু ব্যয় করবে তিনি তার প্রতিদান দিবেন। তিনি শ্রেষ্ঠ রিয্কদাতা। মুজিবুর রহমান
Say, "Indeed, my Lord extends provision for whom He wills of His servants and restricts [it] for him. But whatever thing you spend [in His cause] - He will compensate it; and He is the best of providers." Sahih International
৩৯. বলুন, নিশ্চয় আমার রব তো তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার প্রতি ইচ্ছে রিযিক বাড়িয়ে দেন এবং তার জন্য সীমিত করেন। আর তোমরা যা কিছু ব্যয় করবে, তিনি তার বিনিময় দেবেন(১) এবং তিনিই শ্রেষ্ঠ রিযিকদাতা।
(১) অর্থাৎ যে ব্যক্তি আল্লাহ তা'আলার আদেশ অনুযায়ী ব্যয় করে তাকে বিনিময় দান আল্লাহ নিজ দায়িত্বে গ্রহণ করেছেন। [কুরতুবী] হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, প্রতিদিন ভোরে দু'জন ফেরেশতা নাযিল হয়। তাদের একজন এ দোআ করতে থাকে যে, হে আল্লাহ, আপনি ব্যয়কারীকে প্রতিফল দিন। আরেকজন দোআ করে যে, হে আল্লাহ, যে ব্যয় করে না তার সম্পদ ধ্বংস করে দিন’ [বুখারী ১৪৪২, মুসলিম ১০১০]
তাফসীরে জাকারিয়া(৩৯) বল, ‘আমার প্রতিপালক তাঁর দাসদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছা তার জীবিকা বর্ধিত করেন অথবা সীমিত করেন।[1] তোমরা যা কিছু ব্যয় করবে তিনি তার বিনিময় দেবেন। [2] আর তিনিই শ্রেষ্ঠ জীবিকাদাতা।’ [3]
[1] অতএব তিনি কখনো কাফেরকেও অনেক ধন দেন, কিন্তু কি জন্য? তাকে ঢিল দেওয়ার জন্য এবং কখনো মু’মিনকে অভাবগ্রস্ত রাখেন কি জন্য? তার নেকী বৃদ্ধি করার জন্য। সুতরাং ধন-সম্পদের কম ও বেশি হওয়া তাঁর সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টির কারণ বা প্রমাণ নয়। তাকীদের জন্য এ কথার পুনরুক্তি করা হয়েছে।
[2] إِخْلاَفٌ -এর অর্থ হল ‘বিনিময় বা প্রতিদান দেওয়া। এই বিনিময় ইহকালেও সম্ভব। আর পরকালে তো সুনিশ্চিত। হাদীসে কুদসীতে আছে, আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘‘তুমি খরচ কর, আমি তোমার উপর খরচ করব।’’ (অর্থাৎ তোমার খরচের বিনিময় দেব।) (বুখারীঃ তাফসীর সূরা হূদ) দুইজন ফিরিশতা প্রত্যহ ঘোষণা করেন, তাঁদের একজন বলেন, ‘‘হে আল্লাহ! (তোমার রাস্তায়) যারা খরচ করে না তাদের সম্পদ নষ্ট করে দাও।’’ আর দ্বিতীয় ফিরিশতা বলেন, ‘‘হে আল্লাহ! (তোমার রাস্তায়) খরচকারীদেরকে বিনিময় দাও।’’ (বুখারীঃ যাকাত অধ্যায়)
[3] কারণ, যদি কোন ব্যক্তি কাউকে কিছু দেয়, তবে তার এই দেওয়াটা হয় আল্লাহ তাআলার তাওফীক, প্রয়াস ও সুমতিদান এবং তার লিখিত ভাগ্যের ফল। প্রকৃতপক্ষে দানকারী কারো রুযীদাতা নয়। যেমন পিতাকে সন্তানদের বা বাদশাহকে তাঁর সৈন্যদের দায়িত্বশীল বা মালিক বলা হয়। আসলে রাজা-প্রজা ছোট-বড় সকলের রুযীদাতা প্রকৃতপক্ষে সেই আল্লাহ তাআলাই, যিনি সকলের সৃষ্টিকর্তা। অতএব যে ব্যক্তি তার ধন থেকে কাউকে কিছু দান করে, সে আসলে ঐ ধন খরচ করে, যা তাকে আল্লাহ তাআলাই প্রদান করেছেন। সুতরাং প্রকৃতপক্ষে রুযীদাতা আল্লাহই হলেন। তারপরেও তাঁর অতিরিক্ত অনুগ্রহ এই যে, তাঁর দেওয়া ধন তাঁর সন্তুষ্টি অনুযায়ী খরচ করলে তিনি তার বিনিময় ও নেকীও প্রদান করেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর স্মরণ কর, যেদিন তিনি তাদের সকলকে সমবেত করবেন তারপর ফেরেশতাদেরকে বলবেন, ‘এরা কি তোমাদেরই পূজা করত?’ আল-বায়ান
যেদিন তিনি তাদের সববাইকে একত্রিত করবেন, অতঃপর ফেরেশতাদেরকে বলবে-ওরা কি একমাত্র তোমাদেরই পূজা করত? তাইসিরুল
যেদিন তাদের একত্র করবেন এবং মালাইকা/ফেরেশতাদেরকে জিজ্ঞেস করবেনঃ এরা কি তোমাদেরই পূজা করত? মুজিবুর রহমান
And [mention] the Day when He will gather them all and then say to the angels, "Did these [people] used to worship you?" Sahih International
৪০. আর স্মরণ করুন, যেদিন তিনি তাদের সকলকে একত্র করবেন তারপর ফেরেশতাদেরকে জিজ্ঞেস করবেন, এরা কি তোমাদেরই ইবাদাত করত?(১)
(১) কিয়ামতে এ প্রশ্ন কেবল ফেরেশতাদেরকেই করা হবে না বরং দুনিয়ায় যাদের ইবাদাত ও পূজা করা হয় তাদেরকেও করা হবে। তাই অন্যত্র বলা হয়েছেঃ যেদিন আল্লাহ এদেরকে এবং যেসব সত্তার এরা ইবাদাত করতো তাদের সবাইকে একত্ৰ করবেন তারপর জিজ্ঞেস করবেন, তোমরা কি আমার এ বান্দাদেরকে পথভ্ৰষ্ট করেছিলে, না এরা নিজেরাই সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছিল? [সূরা আল ফুরকান: ১৭]
তাফসীরে জাকারিয়া(৪০) যেদিন তিনি এদের সকলকে একত্রিত করবেন এবং ফিরিশতাদেরকে জিজ্ঞাসা করবেন, ‘এরা কি তোমাদেরই পূজা করত?’ [1]
[1] মুশরিকদেরকে লাঞ্ছিত করার জন্য আল্লাহ তাআলা ফিরিশতাদেরকে এ কথা জিজ্ঞাসা করবেন। যেমন ঈসা (আঃ) সম্পর্কেও উল্লেখ হয়েছে যে, আল্লাহ তাআলা তাঁকেও জিজ্ঞাসা করবেন, ‘‘হে মারয়্যাম-তনয় ঈসা! তুমি কি লোকদেরকে বলেছিলে যে, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত আমাকে ও আমার জননীকে উপাস্যরূপে গ্রহণ কর?’’ ঈসা (আঃ) বলবেন, ‘তুমিই মহিমান্বিত! যা বলার অধিকার আমার নেই, তা বলা আমার জন্য আদৌ শোভনীয় নয়।’ (সূরা মাইদাহ ১১৬ আয়াত) অনুরূপ আল্লাহ তাআলা বাতিল উপাস্যগণকেও জিজ্ঞাসা করবেন, যেমন সূরা ফুরক্বানের ১৭নং আয়াতে বর্ণনা হয়েছে যে, ‘‘তোমরাই কি আমার বান্দাগণকে বিভ্রান্ত করেছিলে, না ওরা নিজেরাই পথভ্রষ্ট হয়েছিল?’’
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতারা (ফেরেশতারা) বলবে, ‘আপনি পবিত্র মহান, আপনিই আমাদের অভিভাবক, তারা নয়। বরং তারা জিনদের পূজা করত। এদের অধিকাংশই তাদের প্রতি ঈমান রাখত’। আল-বায়ান
ফেরেশতারা বলবে- পবিত্র মহান তুমি, তুমিই আমাদের অভিভাবক, তারা নয়। বরং তারা জ্বিনদের পূজা করত; ওদের অধিকাংশই ওদের প্রতি বিশ্বাসী ছিল। তাইসিরুল
মালাইকা বলবেঃ আপনি পবিত্র, মহান! আমাদের সাহায্যকারী আপনিই, তারা নয়, তারাতো পূজা করত জিনদের এবং তাদের অধিকাংশই ছিল তাদের প্রতি বিশ্বাসী। মুজিবুর রহমান
They will say, "Exalted are You! You, [O Allah], are our benefactor not them. Rather, they used to worship the jinn; most of them were believers in them." Sahih International
৪১. ফেরেশতারা বলবে, আপনি পবিত্র, মহান! আপনিই আমাদের অভিভাবক, তারা নয়; বরং তারা তো ইবাদাত করত জিনদের। তাদের অধিকাংশই জিনদের প্রতি ঈমান রাখত।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৪১) ফিরিশতারা বলবে, ‘তুমি পবিত্র মহান! আমাদের সম্পর্ক তোমারই সাথে; ওদের সাথে নয়।[1] বরং ওরা তো পূজা করত জ্বিনদের[2] এবং ওদের অধিকাংশই ছিল তাদেরই প্রতি বিশ্বাসী।’
[1] অর্থাৎ, ফিরিশতাগণও ঈসা (আঃ)-এর মত আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করে এ ব্যাপারে সম্পর্কহীনতার কথা প্রকাশ করবেন এবং বলবেন যে, আমরা তো তোমার বান্দা এবং তুমি আমাদের অভিভাবক, ওদের সাথে আমাদের কি সম্পর্ক?
[2] জ্বিন বলতে শয়তানকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ এরা আসলে শয়তানের পূজারী কারণ সেই তাদেরকে মূর্তিপূজা করাতো এবং তাদেরকে পথভ্রষ্ট করত। যেমন অন্য জায়গাতে বলেছেন, (إِنْ يَدْعُونَ مِنْ دُونِهِ إِلَّا إِنَاثًا وَإِنْ يَدْعُونَ إِلَّا شَيْطَانًا مَرِيدًا) অর্থাৎ, তাঁর (আল্লাহর) পরিবর্তে তারা কেবল দেবীদের পূজা করে এবং তারা কেবল বিদ্রোহী শয়তানের পূজা করে। (সূরা নিসা ১১৭ আয়াত)
তাফসীরে আহসানুল বায়ানফলে আজ তোমাদের একে অপরের কোন উপকার কিংবা অপকার করার ক্ষমতা কেউ রাখবে না। আর আমি যালিমদের উদ্দেশ্যে বলব, ‘তোমরা আগুনের আযাব আস্বাদন কর যা তোমরা অস্বীকার করতে।’ আল-বায়ান
আজ তোমাদের একে অন্যের কোন লাভ বা ক্ষতি করতে পারবে না। যারা যুলম করেছিল তাদেরকে আমি বলব- তোমরা জাহান্নামের শাস্তি আস্বাদন কর যা তোমরা মিথ্যে বলে অস্বীকার করতে। তাইসিরুল
আজ তোমাদের একে অন্যের উপকার কিংবা অপকার করার ক্ষমতা নেই। যারা যুল্ম করেছিল তাদেরকে বলবঃ তোমরা যে আগুনের শাস্তি অস্বীকার করতে তা আস্বাদন কর। মুজিবুর রহমান
But today you do not hold for one another [the power of] benefit or harm, and We will say to those who wronged, "Taste the punishment of the Fire, which you used to deny." Sahih International
৪২. ফলে আজ তোমাদের একে অন্যের উপকার বা অপকার করার মালিক হবে না। আর যারা যুলুম করেছিল আমরা তাদেরকে বলব, তোমরা যে আগুনের শাস্তিতে মিথ্যারোপ করেছিলে তা আস্বাদন কর।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৪২) (তখন আমি বলব,) আজ তোমাদের একে অন্যের কোন উপকার কিংবা অপকার করবার ক্ষমতা নেই।[1] আর যারা সীমালংঘন করেছিল[2] তাদেরকে বলব, ‘তোমরা যে অগ্নির শাস্তিকে মিথ্যা মনে করতে আজ তা আস্বাদন কর।’
[1] অর্থাৎ, পৃথিবীতে তোমরা এই ভেবে এদের ইবাদত করতে যে, এরা তোমাদের উপকার করতে পারবে, তোমাদের জন্য সুপারিশ করবে এবং আল্লাহর শাস্তি থেকে তোমাদেরকে রক্ষা করবে। (যেমন বর্তমানেও পীর পূজারী ও কবর পূজারীদের অবস্থা।) কিন্তু এখন দেখে নাও যে, এরা কোন উপকারের ক্ষমতা রাখে না।
[2] ‘যারা সীমালংঘন করেছিল’ (যালেম) বলতে গায়রুল্লাহর উপাসকদের বুঝানো হয়েছে। যেহেতু শিরক হল সবচেয়ে বড় সীমালংঘন ও সবচেয়ে বড় যুলম। আর মুশরিকরা হল সবচেয়ে বড় যালেম ও সীমালংঘনকারী।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর যখন তাদের কাছে আমার সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করা হত তখন তারা বলত, ‘এতো এমন এক ব্যক্তি যে তোমাদের বাধা দিতে চায় তা থেকে যার ইবাদাত তোমাদের পিতৃপুরুষগণ করত’। তারা আরও বলে, ‘এটি বানোয়াট মিথ্যা বৈ কিছু নয়।’ আর কাফিরদের নিকট যখনই সত্য আসে তখন তারা বলে, ‘এতো কেবল এক সুস্পষ্ট যাদু।’ আল-বায়ান
তাদের সম্মুখে যখন আমার সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করা হয় তখন তারা বলে- এটা তো এমন একজন মানুষ, যে তোমাদেরকে তোমাদের পূর্বপুরুষ যার ‘ইবাদাত করত তাত্থেকে বাধা দিতে চায়। তারা আরো বলে যে, এটা মনগড়া মিথ্যে ছাড়া আর কিছুই নয়। সত্য যখন কাফিরদের নিকট আসে তখন তারা বলে- এটা তো সুস্পষ্ট যাদু। তাইসিরুল
তাদের নিকট যখন আমার সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ আবৃত্তি করা হয় তখন তারা বলেঃ তোমাদের পূর্ব-পুরুষ যার ইবাদাত করত এই ব্যক্তিইতো তার ইবাদাতে তোমাদেরকে বাঁধা দিতে চায়। তারা আরও বলেঃ এটাতো মিথ্যা উদ্ভাবন ব্যতীত কিছু নয়। এবং কাফিরদের নিকট যখন সত্য আসে তখন তারা বলেঃ এটাতো এক সুস্পষ্ট যাদু! মুজিবুর রহমান
And when our verses are recited to them as clear evidences, they say, "This is not but a man who wishes to avert you from that which your fathers were worshipping." And they say, "This is not except a lie invented." And those who disbelieve say of the truth when it has come to them, "This is not but obvious magic." Sahih International
৪৩. আর তাদের কাছে যখন আমাদের সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করা হয় তখন তারা বলে, তোমাদের পূর্বপুরুষ যার ইবাদাত করত এ ব্যক্তিই তো তার ইবাদাতে বাধা দিতে চায়। তারা আরও বলে, এটা তো মিথ্যা উদ্ভাবন ছাড়া আর কিছুই নয়। আর কাফিরদের কাছে যখন সত্য আসে তখন তারা বলে, এ তো এক সুস্পষ্ট জাদু।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৪৩) এদের নিকট যখন আমার সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ আবৃত্তি করা হয়, তখন এরা বলে, ‘এ তো সেই ব্যক্তিই,[1] যে তোমাদের পূর্বপুরুষ যার উপাসনা করত, তার উপাসনায় বাধা দিতে চায়।’ এরা আরও বলে, ‘এ (কুরআন) তো মিথ্যা উদ্ভাবন ব্যতীত কিছু নয়।’[2] আর সত্য প্রত্যাখ্যানকারীদের নিকট যখন সত্য আসে, তখন তারা বলে, ‘এ তো এক সুস্পষ্ট যাদু।’ [3]
[1] ‘ব্যক্তি’ থেকে উদ্দেশ্য হল নবী করীম (সাঃ)। বাপ-দাদার ধর্ম তাদের নিকট সঠিক ধর্ম ছিল। যার ফলে তারা নবী (সাঃ)-এর এই অপরাধ বর্ণনা করেছে যে, এ তোমাদেরকে সেই সকল উপাস্য থেকে বিরত রাখতে চায়, যাদের ইবাদত তোমাদের বাপ-দাদারা করত।
[2] দ্বিতীয় ‘هذا’ (এ)র উদ্দেশ্য হল কুরআন কারীম। কুরআনকে তারা তৈরী করা (স্বরচিত) বা মনগড়া এবং (আল্লাহর প্রতি) মিথ্যা অপবাদ বলে আখ্যায়িত করেছে।
[3] কাফেররা কুরআনকে প্রথমে মনগড়া মিথ্যা বলেছে এবং এখানে স্পষ্ট যাদু বলেছে। প্রথম কথার সম্পর্ক কুরআনের অর্থ ও তাৎপর্যের সাথে আর দ্বিতীয় কথা কুরআনের অলৌকিক ছন্দ ও বর্ণনাভঙ্গি এবং সাহিত্য-শৈলী ও শব্দস্বাচ্ছন্দ্যের সাথে সম্পৃক্ত।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর আমি তাদেরকে কোন কিতাব দেইনি যা তারা অধ্যয়ন করত, এবং তোমার পূর্বে তাদের প্রতি আর কোন সতর্ককারীও প্রেরণ করিনি। আল-বায়ান
আমি তাদেরকে (অর্থাৎ মক্কার কুরায়শদের) কোন কিতাব দেইনি যা তারা পাঠ করত আর আমি তোমার পূর্বে তাদের কাছে কোন সতর্ককারীও পাঠাইনি। তাইসিরুল
আমি তাদেরকে পূর্বে কোন কিতাব দিইনি যা তারা অধ্যয়ন করত এবং তোমার পূর্বে তাদের নিকট কোন সতর্ককারীও প্রেরণ করিনি। মুজিবুর রহমান
And We had not given them any scriptures which they could study, and We had not sent to them before you, [O Muhammad], any warner. Sahih International
৪৪. আর আমরা তাদেরকে আগে কোন কিতাব দেইনি। যা তারা অধ্যয়ন করত। এবং আপনার আগে এদের কাছে কোন সতর্ককারীও প্রেরণা করিনি।(১)
(১) কাতাদাহ বলেন, আল্লাহ্ তা'আলা আরব জাতির কাছে কুরআনের আগে কোন কিতাব পাঠান নি এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগে (দূর অতীতে) কোন নবীও পাঠান নি। [তাবারী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৪৪) আমি পূর্বে এ (মক্কাবাসী)দেরকে কোন গ্রন্থ দিইনি, যা এরা অধ্যয়ন করতে পারে এবং তোমার পূর্বে এদের নিকট কোন সতর্ককারীও প্রেরণ করিনি। [1]
[1] এই জন্য তারা আকাঙ্ক্ষা পোষণ করত, যেন তাদের নিকটেও কোন পয়গম্বর আসেন এবং আসমানী কোন গ্রন্থ অবতীর্ণ হয়। কিন্তু যখন তা এসে গেল, তখন তারা অস্বীকার করে বসল।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান