যেমন, আপনি হয়ত ২ নং সূরার ২০ নং আয়াত এবং ১০ নং সূরার ৫ নং আয়াত এভাবে একসাথে আরো অন্য সূরার অন্য আয়াত সার্চ করতে চাইছেন, সেক্ষেত্রে আপনাকে উপরের সার্চ বক্সে
২:২০, ১০:৫ এভাবে অথবা ২/২০, ১০/৫ এভাবে লিখে সার্চ করতে হবে।
আপনি সূরা ও আয়াত নং বাংলা অথবা ইংরেজিতে লিখতে পারেন।
আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে আসমান ও যমীনের সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও তোমাদের বর্ণের ভিন্নতা। নিশ্চয় এর মধ্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে জ্ঞানীদের জন্য । আল-বায়ান
তাঁর নিদর্শনের মধ্যে হল, আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বিভিন্নতা। জ্ঞানীদের জন্য অবশ্যই এতে আছে বহু নিদর্শন। তাইসিরুল
এবং তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য। এতে জ্ঞানীদের জন্য অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে। মুজিবুর রহমান
And of His signs is the creation of the heavens and the earth and the diversity of your languages and your colors. Indeed in that are signs for those of knowledge. Sahih International
২২. আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্ৰ্য। এতে তো অবশ্যই বহু নিদর্শন রয়েছে জ্ঞানীদের জন্য।(১)
(১) আল্লাহর কুদরতের তৃতীয় নিদর্শনঃ তৃতীয় নিদর্শন হচ্ছে আকাশ ও পৃথিবী সৃজন, বিভিন্ন স্তরের মানুষের বিভিন্ন ভাষা ও বর্ণনাভঙ্গি এবং বিভিন্ন স্তরের বর্ণবৈষম্য; যেমন কোন স্তর শ্বেতকায়, কেউ কৃষ্ণকায়, কেউ লালচে এবং কেউ হলদে। এখানে আকাশ ও পৃথিবী সৃজন তো শক্তির মহানিদর্শন বটেই, মানুষের ভাষার বিভিন্নতাও আল্লাহর বিস্ময়কর ব্যাপার। ভাষার বিভিন্নতার মধ্যে অভিধানের বিভিন্নতাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আরবী ফারসী, হিন্দী, তুর্কী, ইংরেজী ইত্যাদি কত বিভিন্ন ভাষা আছে। এগুলো বিভিন্ন ভূ-খণ্ডে প্রচলিত। তন্মধ্যে কোন কোন ভাষা পরস্পর এত ভিন্নরূপ যে, এদের মধ্যে পারস্পরিক কোন সম্পর্ক আছে বলেই মনে হয় না। স্বর ও উচ্চারণভঙ্গির বিভিন্নতাও ভাষার বিভিন্নতার মধ্যে শামিল। [দেখুন: কুরতুবী; ইবন কাসীর]
আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক পুরুষ, নারী বালক ও বৃদ্ধের কণ্ঠস্বরে এমন স্বাতন্ত্র্য সৃষ্টি করেছেন যে, একজনের কণ্ঠস্বর অন্য জনের কণ্ঠস্বরের সাথে পুরোপুরি মিল রাখে না। কিছু না কিছু পার্থক্য অবশ্যই থাকে। অথচ এই কণ্ঠস্বরের যন্ত্রপাতি তথা জিহবা, ঠোঁট, তালু ও কণ্ঠনালী সবার মধ্যেই অভিন্ন ও একরূপ। [সা’দী] এমনিভাবে বর্ণ-বৈষম্যের কথা বলা যায়। একই পিতা-মাতা থেকে একই প্রকার অবস্থায় দুই সন্তান বিভিন্ন বর্ণের জন্মগ্রহণ করে। এ হচ্ছে সৃষ্টি ও কারিগরির নৈপুণ্য। [ফাতহুল কাদীর; বাগভী]
তাফসীরে জাকারিয়া(২২) তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে একটি নিদর্শনঃ আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বিভিন্নতা।[1] এতে জ্ঞানীদের জন্য অবশ্যই বহু নিদর্শন রয়েছে।
[1] পৃথিবীতে নানা ভাষা সৃষ্টিও আল্লাহর কুদরতের এক মহানিদর্শন। আরবী, তুর্কী, ইংরেজী, উর্দু, হিন্দী, পশতু, ফারসী, সিন্ধী, বেলুচী, ইত্যাদি বিভিন্ন ভাষা রয়েছে পৃথিবীতে। আবার প্রত্যেক ভাষার ভাব ও উচ্চারণভঙ্গীর (আঞ্চলিক) বিভিন্নতা আছে। সহস্র ও লক্ষ মানুষের মাঝেও একজন মানুষকে তার ভাষা ও উচ্চারণভঙ্গী দ্বারা চিনতে পারা যায় যে, এ ব্যক্তি অমুক দেশের বা অমুক এলাকার। শুধু ভাষাই তার পূর্ণ পরিচয় বলে দেয়। অনুরূপভাবে একই পিতা-মাতা (আদম ও হাওয়া) থেকে জন্মলাভের পরেও রঙ ও বর্ণে এক অপর থেকে পৃথক। কেউ কৃষ্ণকায়, কেউ শ্বেতকায়, কেউ নীলবর্ণের, আবার কেউ শ্যাম ও গৌরবর্ণের। অতঃপর কালো-সাদার মাঝেও এত স্তর রয়েছে যে, অধিকাংশ মানুষ এই দুই রঙে বিভক্ত হয়েও অনেক ভাগে বিভক্ত হয়ে আছে এবং এক অপর থেকে একেবারেই ভিন্ন ও পৃথক মনে হয়। অতঃপর মানুষের চেহারার আকারও শ্রী, শরীরের গঠন এবং উচ্চতাতেও এমন পার্থক্য রাখা হয়েছে যে, বিভিন্ন দেশের মানুষকে আলাদাভাবে সহজেই চেনা যায়। একজন অপরজনের সাথে কোন মিল নেই; এমনকি সহোদর ভাই আপন ভাই থেকে আলাদা। এ সত্ত্বেও আল্লাহর কুদরতের পরিপূর্ণতা এই যে, কোন এক দেশের বসবাসকারী অন্য দেশের বসবাসকারী থেকে পৃথক হয়।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে রাতে ও দিনে তোমাদের নিদ্রা এবং তাঁর অনুগ্রহ থেকে তোমাদের (জীবিকা) অন্বেষণ। নিশ্চয় এর মধ্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে সে কওমের জন্য যারা শোনে। আল-বায়ান
তাঁর নিদর্শনের মধ্যে হল রাতে ও দিনে তোমাদের ঘুম এবং তোমাদের (দ্বারা) তাঁর অনুগ্রহ তালাশ করা। মনোযোগী লোকেদের জন্য অবশ্যই এতে আছে অনেক নিদর্শন। তাইসিরুল
এবং তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে রাত ও দিনে তোমাদের নিদ্রা এবং তাঁর অনুগ্রহ অন্বেষণ। এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে শ্রবণকারী সম্প্রদায়ের জন্য। মুজিবুর রহমান
And of His signs is your sleep by night and day and your seeking of His bounty. Indeed in that are signs for a people who listen. Sahih International
২৩. আর তার নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে রাতে ও দিনে তোমাদের নিদ্রা এবং তোমাদের অন্বেষণ তার অনুগ্রহ হতে। নিশ্চয় এতে বহু নিদর্শন রয়েছে সে সম্প্রদায়ের জন্য, যারা শোনে।(১)
(১) আল্লাহর কুদরতের চতুর্থ নিদর্শনঃ মানুষের রাত্রে ও দিবাভাগে নিদ্ৰা যাওয়া এমনিভাবে রাত্রে ও দিবাভাগে জীবিকা অন্বেষণ করা। এই আয়াতে দিনে-রাত্ৰে নিদ্ৰাও বর্ণনা করা হয়েছে এবং জীবিকা অন্বেষণও। অন্য কতক আয়াতে নিদ্রা শুধু রাত্রে এবং জীবিকা অন্বেষণ শুধু দিনে করা হয়েছে। কারণ এই যে, রাত্রের আসল কাজ নিদ্রা যাওয়া এবং জীবিকা অন্বেষণের কাজও কিছু চলে। দিনে এর বিপরীতে আসল কাজ জীবিকা অন্বেষণ করা এবং কিছু নিদ্রা ও বিশ্রাম গ্রহণেরও সময় পাওয়া যায়। তাই উভয় বক্তব্যই স্ব স্ব স্থানে নির্ভুল। [ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(২৩) এবং তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে একটি নিদর্শনঃ রাত্রে ও দিবাভাগে তোমাদের নিদ্রা এবং আল্লাহর অনুগ্রহ অন্বেষণ।[1] এতে অবশ্যই শ্রবণশীল সম্প্রদায়ের জন্য বহু নিদর্শন রয়েছে ।
[1] নিদ্রার কারণে শান্তি ও আরাম হয়; তা রাতেই হোক বা দিনে। আর দিনে ব্যবসা-বাণিজ্য ও নানা কর্ম ইত্যাদি দ্বারা আল্লাহর অনুগ্রহ (জীবিকা) অন্বেষণ করা হয়। এ বিষয়টি কুরআন কারীমের কয়েক জায়গায় আলোচিত হয়েছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে তিনি তোমাদেরকে ভয় ও ভরসাস্বরূপ বিদ্যুৎ দেখান, আর আসমান থেকে পানি বর্ষণ করেন। অতঃপর তা দ্বারা যমীনকে তার মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত করেন। নিশ্চয় এর মধ্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে সে কওমের জন্য যারা অনুধাবন করে। আল-বায়ান
তাঁর নিদর্শনের মধ্যে হল এই যে, তিনি তোমাদেরকে দেখান বিদ্যুৎ ভীতি ও ভরসা সঞ্চারীরূপে, আর তিনি আকাশ হতে পানি বর্ষণ করেন যা দিয়ে যমীনকে তার মৃত্যুর পর আবার জীবিত করেন, জ্ঞানবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষদের জন্য অবশ্যই এতে বহু নিদর্শন আছে। তাইসিরুল
এবং তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদেরকে প্রদর্শন করেন বিদ্যুৎ, ভয় ও ভরসা সঞ্চারক রূপে এবং তিনি আকাশ হতে বারি বর্ষণ করেন এবং তদ্বারা ভূমিকে ওর মৃত্যুর পর পুনরুজ্জীবিত করেন, এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে বোধশক্তি সম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য। মুজিবুর রহমান
And of His signs is [that] He shows you the lightning [causing] fear and aspiration, and He sends down rain from the sky by which He brings to life the earth after its lifelessness. Indeed in that are signs for a people who use reason. Sahih International
২৪. আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে, তিনি তোমাদেরকে প্রদর্শন করান বিদ্যুৎ ভয় ও আশার সঞ্চারকরূপে এবং আসমান থেকে পানি নাযিল করেন। অতঃপর তা দিয়ে যমীনকে পুনর্জীবিত করেন সেটার মৃত্যুর পর; নিশ্চয় এতে বহু নিদর্শন রয়েছে এমন সম্প্রদায়ের জন্য, যারা অনুধাবন করে।(১)
(১) আল্লাহর কুদরতের পঞ্চম নিদর্শনঃ পঞ্চম নিদর্শন এই যে, আল্লাহ তাআলা মানুষকে বিদ্যুতের চমক দেখান। এতে উহার পতিত হওয়ার এবং ক্ষতি করারও আশংকা থাকে এবং এর পশ্চাতে বৃষ্টির আশাবাদও সঞ্চয় হয়। তিনি এই বৃষ্টির দ্বারা শুষ্ক এবং মৃত মৃত্তিকাকে জীবিত ও সতেজ করে তাতে রকমারি প্রকারের বৃক্ষ ও ফল-ফুল উৎপন্ন করেন। [ইবন কাসীর, ফাতহুল কাদীর] কাতাদাহ বলেন, এখানে যে ভয়ের কথা বলা হয়েছে তা সাধারণত মুসাফিরদের মনে উদ্রেক হয়। আর যে আশার কথা বলা হয়েছে সেটা সাধারণত: মুকীম বা স্থায়ী অবস্থানকারীদের মনে উদ্রেক হয়। [তাবারী]
তাফসীরে জাকারিয়া(২৪) এবং তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে একটি নিদর্শনঃ তিনি তোমাদেরকে আশঙ্কা ও আশা স্বরূপ বিদ্যুৎ দেখান[1] এবং আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষণ করেন ও তা দিয়ে ভূমিকে ওর মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত করেন; এতে অবশ্যই বোধশক্তিসম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য বহু নিদর্শন রয়েছে ।
[1] অর্থাৎ, আসমানে বিদ্যুৎ চমকায় এবং মেঘের গর্জন শোনা যায়, তখন তোমরা বজ্রপাত হওয়ার এবং অতিবৃষ্টির ফলে ফসলের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা করে থাক। আর আশাও করে থাক যে, বৃষ্টি হলে ফসল ভাল হবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে, তাঁরই নির্দেশে আসমান ও যমীন স্থিতিশীল থাকে। তারপর তিনি যখন তোমাদেরকে যমীন থেকে বের হয়ে আসার জন্য একবার আহবান করবেন তখনই তোমরা বের হয়ে আসবে। আল-বায়ান
তাঁর নিদর্শনের মধ্যে হল এই যে, আকাশ ও পৃথিবী তাঁর হুকুমেই দাঁড়িয়ে আছে। অতঃপর তিনি যখন তোমাদেরকে মাটি থেকে উঠার জন্য ডাক দেবেন একটি ডাক, তখন তোমরা উঠে আসবে। তাইসিরুল
তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তাঁরই আদেশে আকাশ ও পৃথিবীর স্থিতি; অতঃপর তিনি (আল্লাহ) যখন তোমাদেরকে মাটি হতে উঠার জন্য একবার আহবান করবেন তখন তোমরা উঠে আসবে। মুজিবুর রহমান
And of His signs is that the heaven and earth remain by His command. Then when He calls you with a [single] call from the earth, immediately you will come forth. Sahih International
২৫. আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তাঁরই আদেশে আসমান ও যমীনের স্থিতি থাকে; তারপর আল্লাহ যখন তোমাদেরকে যমীন থেকে উঠার জন্য একবার ডাকবেন তখনই তোমরা বেরিয়ে আসবে।(১)
(১) আল্লাহর কুদরতের ষষ্ঠ নিদর্শনঃ ষষ্ঠ নিদর্শন এই যে, আকাশ ও পৃথিবী আল্লাহ তাআলারই আদেশে কায়েম আছে। এতে নেই কোন খুঁটি। [তাবারী] হাজার হাজার বছর সক্রিয় থাকার পরও এগুলোতে কোথাও কোন ক্ৰটি দেখা দেয় না। আল্লাহ তাআলা যখন এই ব্যবস্থাপনাকে ভেঙ্গে দেয়ার আদেশ দেবেন, তখন এই মজবুত ও অটুট বস্তুগুলো নিমেষের মধ্যে ভেঙ্গে-চুরে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। আর এ যমীনের পরিবর্তে অন্য যমীন ও আসমান তৈরী হবে। অতঃপর তাঁরই আদেশে সব মৃত পুনরুজ্জীবিত হয়ে হাশরের মাঠে সমবেত হবে। [ইবন কাসীর]।
যেমন অন্য আয়াতে বলেছেন, “যেদিন তিনি তোমাদেরকে ডাকবেন এবং তোমরা তার প্রশংসার সাথে তাঁর ডাকে সাড়া দেবে এবং তোমরা মনে করবে, তোমরা অল্পকালই অবস্থান করেছিলো।” [সূরা আল-ইসরা: ৫২] অন্য আয়াতেও এসেছে, “অতঃপর তা তো একটিমাত্র প্রচণ্ড ধমক—আর তখনই তারা দেখবে।” সূরা আস-সাফফাত: ১৯] আরও এসেছে, “এ তো শুধু এক বিকট আওয়াজ, তখনই ময়দানে তাদের আবির্ভাব হবে।” [সূরা আন-নাযি'আত: ১৩–১৪] অন্যত্র বলা হয়েছে, “এটা হবে শুধু এক বিকট শব্দ; তখনই এদের সকলকে উপস্থিত করা হবে আমাদের সামনে” [সূরা ইয়াসীন: ৫৩]
উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন কোন ব্যাপারে কঠিন শপথ করতে চাইতেন তখন বলতেন, لا والذي تقوم السماء والارض بأمره অর্থাৎ শপথ তাঁর যাঁর নির্দেশে আসমান ও যমীন স্ব স্ব স্থানে প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(২৫) এবং তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে একটি নিদর্শনঃ তাঁরই আদেশে আকাশ ও পৃথিবীর স্থিতি। অতঃপর আল্লাহ যখন তোমাদের মাটি হতে ওঠার জন্য আহবান করবেন, তখন তোমরা উঠে আসবে।[1]
[1] অর্থাৎ, যখন কিয়ামত সংঘটিত হবে, তখন আকাশ ও পৃথিবীর সকল নিয়ম-শৃঙ্খল; যা বর্তমানে তাঁর আদেশে কায়েম আছে -- সব ভেঙ্গে-চুরে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে এবং সমস্ত মৃত পুনরুজ্জীবিত হয়ে কবর থেকে বের হয়ে এসে (হাশরের মাঠে সমবেত হবে)।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর আসমানসমূহ ও যমীনে যা কিছু আছে সব তাঁরই। সব কিছুই তাঁর অনুগত। আল-বায়ান
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা আছে সব তাঁরই, সকলই তাঁর প্রতি অনুগত। তাইসিরুল
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা তাঁরই। সবাই তাঁর আজ্ঞাবহ। মুজিবুর রহমান
And to Him belongs whoever is in the heavens and earth. All are to Him devoutly obedient. Sahih International
২৬. আর আসমানসমূহ ও যমীনে যা কিছু আছে তা তারই। সবকিছু তারই অনুগত।(১)
(১) এ আনুগত্য কারও পক্ষ থেকে ঐচ্ছিক, আবার কারও পক্ষ থেকে তাদের ইচ্ছার বাইরে। ঈমানদারগণ ইচ্ছাকৃতভাবে আল্লাহর আনুগত্য করে, পক্ষান্তরে কাফিররা ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁর আনুগত্য করে না। কিন্তু তারা কখনো তাঁর ফয়সালাকে লঙ্ঘন করতে পারে না। [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(২৬) আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা তাঁরই; সকলেই তাঁর আজ্ঞাবহ।[1]
[1] অর্থাৎ, আল্লাহর সৃষ্টিগত আদেশের সামনে সবকিছু ক্ষমতাহীন ও নিরুপায়। যেমন জীবন-মৃত্যু, সুস্থতা-অসুস্থতা, সম্মান-অসম্মান ইত্যাদি।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর তিনিই সৃষ্টির সূচনা করেন তারপর তিনিই এর পুনরাবৃত্তি করবেন। আর এটা তো তাঁর জন্য অধিকতর সহজ। আসমান ও যমীনে সর্বোচ্চ মর্যাদা তাঁরই এবং তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। আল-বায়ান
তিনিই সৃষ্টির সূচনা করেন, অতঃপর তার পুনরাবৃত্তি করবেন আর তা তার জন্য খুবই সহজ। আকাশ ও পৃথিবীতে সর্বোচ্চ দৃষ্টান্ত তাঁর জন্যই, তিনিই মহাপরাক্রমশালী, বড়ই হিকমতওয়ালা। তাইসিরুল
তিনিই প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনি এটাকে সৃষ্টি করবেন পুনর্বার; এটা তাঁর জন্য অতি সহজ। আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে সর্বোচ্চ মর্যাদা তাঁরই, এবং তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। মুজিবুর রহমান
And it is He who begins creation; then He repeats it, and that is [even] easier for Him. To Him belongs the highest attribute in the heavens and earth. And He is the Exalted in Might, the Wise. Sahih International
২৭. আর তিনি-ই, যিনি সৃষ্টিকে শুরুতে অস্তিত্বে আনয়ন করেন, তারপর তিনি সেটা পুনরাবৃত্তি করবেন; আর এটা তার জন্য অতি সহজ।(১) আসমানসমূহ ও যমীনে সর্বোচ্চ গুণাগুন তারই(২); এবং তিনিই পরাক্রমশালী, হিকমতওয়ালা।
(১) হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “মহান আল্লাহ বলেন, আদম সন্তান আমার প্রতি মিথ্যারোপ করে অথচ এটা করা তার জন্য উচিত ছিল না। অনুরূপ সে আমাকে গালি দেয়। অথচ সেটা তার জন্য ঠিক নয়। তার মিথ্যারোপ হচ্ছে এটা বলা যে, “আমাকে যেভাবে পূর্বে সৃষ্টি করেছেন সেভাবে সৃষ্টি করবে না। অথচ প্রথম সৃষ্টি থেকে দ্বিতীয় সৃষ্টি আরো সহজ। আর তার গালি হচ্ছে সে বলে আল্লাহ সন্তান গ্ৰহণ করেছেন, অথচ আমি একক, অমুখাপেক্ষী, জন্ম দেইনি, জন্ম নেইনি। আর আমার সমকক্ষ কেউ নেই।” [বুখারী: ৪৯৭৪]
(২) যত সুন্দর সুন্দর গুণ সবই মহান আল্লাহর রয়েছে। [ফাতহুল কাদীর] তাঁর মত কোন কিছুই নেই। [তাবারী]
তাফসীরে জাকারিয়া(২৭) আর তিনিই যিনি প্রথমবার সৃষ্টি করেন, অতঃপর তিনি পুনর্বার একে সৃষ্টি করবেন; এ তাঁর জন্য সহজ। আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে সর্বোচ্চ গুণ তাঁরই[1] এবং তিনিই পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
[1] অর্থাৎ, এমন পরিপূর্ণ ও সুন্দর গুণগ্রাম এবং পূর্ণ ক্ষমতার অধিপতি যে, তিনি সর্বপ্রকার দৃষ্টান্তের বহু ঊর্ধ্বে।
لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ তাঁর মত কোন কিছু নেই। (সূরা শূরা ১১ আয়াত)
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে একটি উপমা বর্ণনা করেছেন; আমি তোমাদেরকে যে রিয্ক দিয়েছি তাতে তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীরা কি অংশীদার? ফলে তোমরা কি এ বিষয়ে সমান? তোমরা কি তাদেরকে তেমনভাবে ভয় কর যেমনভাবে ভয় কর তোমাদের পরস্পরকে*? এভাবেই আমি নিদর্শনাবলী বিস্তারিত বর্ণনা করেছি সে কওমের জন্য যারা উপলব্ধি করে। আল-বায়ান
আল্লাহ তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য হতেই একটা দৃষ্টান্ত পেশ করছেনঃ আমি তোমাদেরকে যে রিযক দিয়েছি তাতে তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসদাসীরা কি অংশীদার যার ফলে তাতে তোমরা সমান? তোমরা কি তাদেরকে তেমনভাবে ভয় কর যেমন ভয় কর তোমাদের নিজেদের পরস্পরকে? এভাবে বোধশক্তিসম্পন্ন মানুষদের জন্য আমি নিদর্শনাবলী বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করি। তাইসিরুল
(আল্লাহ) তোমাদের জন্য তোমাদের নিজেদের মধ্যে একটি দৃষ্টান্ত পেশ করছেনঃ তোমাদেরকে আমি যে রিয্ক দিয়েছি তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের কেহ কি তাতে তোমাদের সমান অংশীদার? তোমরা কি তাদেরকে সেরূপ ভয় কর যেরূপ তোমরা পরস্পরকে ভয় কর? এভাবেই আমি বোধশক্তি সম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য নির্দেশনাবলী বিবৃত করি। মুজিবুর রহমান
He presents to you an example from yourselves. Do you have among those whom your right hands possess any partners in what We have provided for you so that you are equal therein [and] would fear them as your fear of one another [within a partnership]? Thus do We detail the verses for a people who use reason. Sahih International
* দাস-দাসীরা মনিবের সম্পদের অংশীদার হয় না এবং মনিবরা তাদেরকে ভয়ও করে না। তেমনিভাবে সারা জাহানের মালিক আল্লাহর সাথে কারো অংশিদারিত্ব হতে পারে না।
২৮. আল্লাহ তোমাদের জন্য তোমাদের নিজেদের মধ্যে একটি দৃষ্টান্ত পেশ করেছেনঃ তোমাদেরকে আমরা যে রিযক দিয়েছি, তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের কেউ কি তাতে অংশীদার? ফলে তোমরা কি এ ব্যাপারে সমান? তোমরা কি তাদেরকে সেরূপ ভয় কর যেরূপ তোমরা পরস্পর পরস্পরকে ভয় কর? এভাবেই আমরা নিদর্শনাবলী বিস্তারিত বর্ণনা করি সে সম্প্রদায়ের জন্য, যারা অনুধাবন করে(১)।
(১) আলোচ্য আয়াতসমুহে তাওহীদের বিষয়বস্তু বিভিন্ন সাক্ষ্য-প্রমাণ ও বিভিন্ন হৃদয়গ্রাহী শিরোনামে ব্যক্ত করা হয়েছে। প্রথমে একটি উদাহরণ দ্বারা বোঝানো হয়েছে যে, তোমাদের গোলাম-চাকর তোমাদের মতই মানুষ; আকার-আকৃতি, হাত-পা, মনের চাহিদা ইত্যাদি সব বিষয়ে তোমাদের শরীক। কিন্তু তোমরা তাদেরকে ক্ষমতায় নিজেদের সমান কর না যে, তারাও তোমাদের ন্যায় যা ইচ্ছা করবে এবং যা ইচ্ছা ব্যয় করবে। নিজেদের পুরোপুরি সমকক্ষ তো দূরের কথা, তাদেরকে তোমাদের ধন-সম্পদ ও ক্ষমতায় সামান্যতম অংশীদারিত্বেও অধিকার দাও না। কোন ক্ষুদ্র ও মামুলী শরীককেও তোমরা ভয় কর যে, তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোন কাজ করলে সে আপত্তি করবে। গোলাম-চাকরদেরকে তোমরা এই মর্যাদাও দাও না। অতএব, চিন্তা কর, ফেরেশতা, মানব ও জিনসহ সমগ্র সৃষ্টজগত আল্লাহর সৃজিত ও তাঁরই দাস, গোলাম। তাদেরকে তোমরা আল্লাহর সমকক্ষ অথবা তাঁর শরীক কিরূপে বিশ্বাস কর? [দেখুন: কুরতুবী; ইবন কাসীর, ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(২৮) আল্লাহ তোমাদের জন্য তোমাদেরই মধ্য হতে দৃষ্টান্ত উপস্থিত করছেনঃ তোমাদেরকে আমি যে রুযী দিয়েছি, তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীগণ কি তাতে অংশীদার? যাতে ওরা তোমাদের সমান হতে পারে[1] এবং তোমরা তোমাদের সমকক্ষদের যেরূপ ভয় কর, তোমরা কি ওদের সেরূপ ভয় কর?[2] এভাবেই আমি বোধশক্তিসম্পন্ন সম্প্রদায়ের নিকট নিদর্শনাবলী বিবৃত করি।[3]
[1] অর্থাৎ, যখন তোমাদের গোলাম-চাকর তোমাদের মতই মানুষ, অথচ তোমরা তাদেরকে তোমাদের ধন-সম্পদে নিজেদের শরীক ও সমান করতে অপছন্দ কর, তখন আল্লাহর কোন বান্দা; ফিরিশতা, পয়গম্বর, ওলী, নেক ব্যক্তি অথবা বৃক্ষ ও পাথরের তৈরি উপাস্য ইত্যাদি কিভাবে আল্লাহর সমকক্ষ ও শরীক হতে পারে। অথচ এ সকল বস্তু আল্লাহর সৃষ্টি এবং তাঁরই দাস বা গোলাম। অর্থাৎ, যেমন (তোমাদের বিচারেই) প্রথম বিষয়টি হয় না, অনুরূপ দ্বিতীয় বিষয়টিও হতে পারে না। অতএব আল্লাহর ইবাদতে অন্যকে শরীক করা এবং তাকেও বিপদ দূরকারী, প্রয়োজন পূরণকারী ভাবা নেহাতই ভ্রষ্টতা।
[2] তোমরা কি নিজেদের অধীনস্থ দাসকে সেরূপ ভয় কর যেরূপ স্বাধীন ব্যক্তিরা এক অপরকে ভয় করে থাকে? অর্থাৎ, যেমন শরীকানার ব্যবসা-বাণিজ্য বা সম্পত্তি ইত্যাদি থেকে খরচ করতে দ্বিতীয় শরীকের জিজ্ঞাসাবাদের আশঙ্কা করে থাক অনুরূপ তোমরা কি আপন দাস থেকে সেই ভয় করে থাক? অর্থাৎ, ভয় কর না। কারণ, তোমরা তাদেরকে তোমাদের ধন-সম্পদে শরীক করে নিজেদের সমমর্যাদা দিতেই চাইবে না, তবে তাদের ব্যাপারে আর ভয় কিসের?
[3] কারণ, তারা নিজেদের জ্ঞান-বুদ্ধি ব্যবহার করে অবতীর্ণকৃত আয়াত ও সৃষ্টিজগতের নিদর্শনাবলী দ্বারা উপকৃত হয়। আর যারা নিজেদের জ্ঞান-বুদ্ধিকে কাজে লাগায় না, তওহীদের মত সাফ ও পরিষ্কার বিষয়ও তাদের জন্য বোঝা অসম্ভব।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানবরং যালিমরা জ্ঞান ছাড়াই তাদের খেয়াল খুশীর অনুসরণ করে। সুতরাং যাকে আল্লাহ পথভ্রষ্ট করেন কে তাকে হিদায়াত করবে? আর তাদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই। আল-বায়ান
বরং সীমালঙ্ঘনকারীরা কোন জ্ঞান ছাড়াই তাদের খেয়াল-খুশির অনুসরণ করে; কাজেই আল্লাহই যাকে পথভ্রষ্ট করেন তাকে সৎপথ দেখাবে কে? তাদের কোন সাহায্যকারী নেই। তাইসিরুল
বস্তুতঃ সীমালংঘনকারীরা অজ্ঞতা বশতঃ তাদের খেয়াল খুশীর অনুসরণ করে, সুতরাং আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, কে তাকে সৎ পথে পরিচালিত করবে? তাদের কোন সাহায্যকারী নেই। মুজিবুর রহমান
But those who wrong follow their [own] desires without knowledge. Then who can guide one whom Allah has sent astray? And for them there are no helpers. Sahih International
২৯. বরং যালিমরা অজ্ঞতাবশত তাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে, কাজেই আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন কে তাকে হিদায়াত দান করবে? আর তাদের কোন সাহায্যকারী নেই।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(২৯) অজ্ঞানতাবশতঃ সীমালংঘনকারীরা তাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে থাকে;[1] সুতরাং আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেছেন কে তাকে সৎপথে পরিচালিত করবে?[2] তাদের কোন সাহায্যকারী নেই।[3]
[1] অর্থাৎ, তারা এ প্রকৃতত্ব সম্বন্ধে অবগতই নয় যে, তারা জ্ঞান থেকে বঞ্চিত ও ভ্রষ্টতায় নিমজ্জিত। আর এই অজ্ঞতা ও পথভ্রষ্টতার কারণে তারা নিজেদের বুদ্ধিকে কাজে লাগাতে সক্ষম হয় না এবং নিজেদের প্রবৃত্তি ও বাতিল মতের অনুসারী হয়ে থাকে।
[2] কারণ, আল্লাহর পক্ষ থেকে হিদায়াত তাদেরই ভাগ্যে জোটে যারা হিদায়াত অনুসন্ধানী ও তার আকাঙ্ক্ষী হয়। পক্ষান্তরে যারা তার সত্য অনুসন্ধিৎসা থেকে বঞ্চিত হয়, তাকে ভ্রষ্টতার মাঝে ছেড়ে দেওয়া হয় ।
[3] অর্থাৎ, সেই সকল পথভ্রষ্ট ব্যক্তিদের কোন এমন সাহায্যকারী হবে না, যে তাদেরকে হিদায়াত দেবে অথবা তাদেরকে আযাব থেকে রক্ষা করবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানঅতএব তুমি একনিষ্ঠ হয়ে দীনের জন্য নিজকে প্রতিষ্ঠিত রাখ। আল্লাহর প্রকৃতি*, যে প্রকৃতির উপর তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই। এটাই প্রতিষ্ঠিত দীন; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না। আল-বায়ান
কাজেই দ্বীনের প্রতি তোমার মুখমণ্ডল নিবদ্ধ কর একনিষ্ঠভাবে। এটাই আল্লাহর প্রকৃতি, যে প্রকৃতি তিনি মানুষকে দিয়েছেন, আল্লাহর সৃষ্টি কার্যে কোন পরিবর্তন নেই, এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত দ্বীন, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না। তাইসিরুল
তুমি একনিষ্ঠ হয়ে নিজেকে দীনের উপর প্রতিষ্ঠিত কর। আল্লাহর প্রকৃতির অনুসরণ কর, যে প্রকৃতি অনুযায়ী তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন; আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই। এটাই সরল দীন। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানেনা। মুজিবুর রহমান
So direct your face toward the religion, inclining to truth. [Adhere to] the fitrah of Allah upon which He has created [all] people. No change should there be in the creation of Allah. That is the correct religion, but most of the people do not know. Sahih International
* فطرة স্বভাব, প্রকৃতি। মহান আল্লাহ মানুষকে যে সহজাত প্রকৃতি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। তাকেই فطرة الله বলা হয়েছে। আর فطرة الله এর মর্মার্থ হল ইসলাম।
৩০. কাজেই আপনি একনিষ্ঠ হয়ে নিজ চেহারাকে দ্বীনে প্রতিষ্ঠিত রাখুন।(১) আল্লাহর ফিতরাত (স্বাভাবিক রীতি বা দ্বীন ইসলাম)(২), যার উপর (চলার যোগ্য করে) তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন; আল্লাহ্র সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই।(৩) এটাই প্রতিষ্ঠিত দ্বীন; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না।
(১) অর্থাৎ একনিষ্ঠ হয়ে নিজের চেহারাকে এদিকে স্থির নিবদ্ধ করো, এরপর আবার অন্যদিকে ফিরে যেও না। জীবনের জন্য এ পথটি গ্রহণ করে নেবার পর অন্য কোন পথের দিকে দৃষ্টিও দেয়া যাবে না। [ফাতহুল কাদীর]
(২) অর্থাৎ এ দ্বীনকে আঁকড়ে থাকো৷ অন্য কোন মতবাদে বিশ্বাসী হয়ে নিজেদেরকে কলুষিত করো না। পরবর্তী বাক্যে বলা হয়েছে যে, আল্লাহর ফিতরত বলে সেই ফিতরত বোঝানো হয়েছে, যার উপর আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। তবে এখানে ফিতরত বলে কি বোঝানো হয়েছে। এ সম্পর্কে তফসীরকারদের অনেক উক্তির মধ্যে দুইটি উক্তি প্ৰসিদ্ধ।
(এক) ফিতরত বলে ইসলাম বোঝানো হয়েছে। উদ্দেশ্য এই যে, আল্লাহ তা'আলা প্রত্যেক মানুষকে প্রকৃতিগতভাবে মুসলিম সৃষ্টি করেছেন। যদি পরিবেশ কোন কিছু খারাপ না করে, তবে প্রতিটি জন্মগ্রহণকারী শিশু ভবিষ্যতে মুসলিমই হবে। কিন্তু অভ্যাসগতভাবেই পিতা-মাতা তাকে ইসলামবিরোধী বিষয়াদি শিক্ষা দেয়। ফলে সে ইসলামের উপর কায়েম থাকে না। এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘প্রতিটি শিশুই ফিতরাতের উপর জন্মগ্রহণ করে। তারপর তার পিতামাতা তাকে ইয়াহুদী বানায় বা নাসারা বানায় অথবা মাজুসী বানায়। যেমন কোন জন্তুকে তোমরা সম্পূর্ণ দোষমুক্ত জন্ম নিতে দেখ, সেখানে তোমরা তাকে নাক কাটা অবস্থায় পাও না। তারপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ আয়াত তেলাওয়াত করলেন। [বুখারী: ৪৭৭৫, মুসলিম: ২৬৫৮]
(দুই) ফিতরত বলে যোগ্যতা বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা সৃষ্টিগতভাবে প্রত্যেক মানুষের মধ্যে স্রষ্টাকে চেনার ও তাঁকে মেনে চলার যোগ্যতা নিহিত রেখেছেন। এর ফলে মানুষ ইসলাম গ্ৰহণ করে যদি সে যোগ্যতাকে কাজে লাগায়। [ফাতহুল কাদীর; কুরতুবী]
(৩) এ আয়াতের কয়েকটি অর্থ হতে পারে, এক. তোমরা আল্লাহর সৃষ্টিকে পরিবর্তন করো না। [ফাতহুল কাদীর] দুই. এখানে আল্লাহর সৃষ্টি বলে আল্লাহর দ্বীনকে বুঝানো হয়েছে। তখন অর্থ হবে, তোমরা আল্লাহর এ দ্বীনকে পরিবর্তন করো না। তিনি মানুষকে ইসলামের উপর সৃষ্টি করেছেন, তোমরা তাদেরকে অন্যান্য মানব মতবাদে দীক্ষিত করো না। [বাগভী| তিন. অথবা আয়াতের অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ মানুষকে নিজের বান্দায় পরিণত করেছেন। কেউ চাইলেও এ কাঠামোয় কোন পরিবর্তন সাধন করতে পারে না। মানুষ বান্দা থেকে অ-বান্দা হতে পারে না এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ইলাহ বানিয়ে নিলেও প্রকৃতপক্ষে সে মানুষের ইলাহ হতে পারে না। [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৩০) তুমি একনিষ্ঠভাবে নিজেকে ধর্মে প্রতিষ্ঠিত রাখ।[1] আল্লাহর সেই প্রকৃতির অনুসরণ কর; যে প্রকৃতি অনুযায়ী তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন।[2] আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই।[3] এটিই সরল ধর্ম; [4] কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না। [5]
[1] অর্থাৎ, আল্লাহর একত্ব ও তাঁর ইবাদতের উপর প্রতিষ্ঠিত থাক এবং বাতিল ধর্মসমূহের প্রতি ভ্রূক্ষেপও করো না।
[2] فطرت শব্দের মৌলিক অর্থ হল সৃষ্টি। এখানে আল্লাহর সৃষ্টি বা প্রকৃতি বলে ইসলাম ও তওহীদকে বুঝানো হয়েছে। উদ্দেশ্য এই যে, আল্লাহ তাআলা মু’মিন-কাফের প্রত্যেক মানুষকে ইসলাম ও তওহীদের প্রকৃতি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। এই জন্য তওহীদ মানুষের প্রকৃতি অর্থাৎ সহজাত ও স্বভাব-ধর্ম। যেমন যে সময় আল্লাহ তাআলা মানুষের আত্মা সৃষ্টি করেন তখন বলেন, ‘আমি কি তোমাদের প্রতিপালক নই?’ তার উত্তরে মানুষ বলেছিল, অবশ্যই। এ থেকেও পরিষ্কার বুঝা যায় যে, মানুষের আসল ধর্ম হল একত্ব। পরে অবশ্য বিভিন্ন খারাপ পরিবেশ অথবা অন্য কোন প্রতিবন্ধক অনেককে সেই প্রকৃতি (ইসলামে) প্রতিষ্ঠিত থাকতে বাধা দান করে; ফলে তারা কাফের হয়েই থাকে। যেমন নবী (সাঃ) হাদীসে বলেছেন, ‘‘প্রত্যেক শিশু (ইসলামের) প্রকৃতির উপর জন্ম নেয়। কিন্তু তার পিতা-মাতা তাকে ইয়াহুদী, খ্রিষ্টান অথবা অগ্নিপূজক বানিয়ে দেয়।’’ (বুখারীঃ তাফসীর সূরা রূম, মুসলিমঃ কিতাবুল ক্বাদার)
[3] অর্থাৎ, আল্লাহর সেই সৃষ্টি বা প্রকৃতিকে পরিবর্তন করো না; বরং সঠিক তরবিয়ত দিয়ে তার লালন-পালন ও বড় কর। যাতে ঈমান ও তওহীদ কচি-কাঁচা শিশুদের মনে-প্রাণে বদ্ধমূল হয়ে যায়। এখানে বাক্যটি খবর স্বরূপ প্রয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু ব্যবহার হয়েছে আজ্ঞার অর্থে। অর্থাৎ, নেতিবাচক বাক্য নিষেধাজ্ঞার অর্থে ব্যবহার হয়েছে। (‘আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই’ অর্থাৎ, ‘আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন করো না।’)
[4] অর্থাৎ, যে দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে বলা হয়েছে অথবা যে দ্বীন মানুষের প্রকৃতিগত, সেটাই হচ্ছে সরল ও সুপ্রতিষ্ঠিত দ্বীন।
[5] এই জন্যই তারা ইসলাম ও তওহীদের ব্যাপারে অজ্ঞ থেকে যায়।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতাঁর অভিমুখী হয়ে তাঁকে ভয় কর, সালাত কায়েম কর, আর মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। আল-বায়ান
তাঁর অভিমুখী হও, আর তাঁকে ভয় কর, নামায প্রতিষ্ঠা কর, আর মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। তাইসিরুল
বিশুদ্ধ চিত্তে তাঁর অভিমুখী হয়ে তাঁকে ভয় কর, সালাত কায়েম কর এবং মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়োনা। মুজিবুর রহমান
[Adhere to it], turning in repentance to Him, and fear Him and establish prayer and do not be of those who associate others with Allah Sahih International
৩১. তোমরা বিশুদ্ধ চিত্তে তাঁরই অভিমুখী হয়ে থাক আর তাঁরই তাকওয়া অবলম্বন কর এবং সালাত কায়েম কর। আর অন্তর্ভুক্ত হয়ো না মুশরিকদের,
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৩১) তোমরা বিশুদ্ধ-চিত্তে তাঁর অভিমুখী হও; তাঁকে ভয় কর। যথাযথভাবে নামায পড় এবং অংশীবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না; [1]
[1] অর্থাৎ, ঈমান, আল্লাহর ভয় (তাকওয়া ও পরহেযগারী) এবং নামায ত্যাগ করে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যেয়ো না।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান