৩ . আলে-ইমরান
৩:৩৮ هُنَالِكَ دَعَا زَكَرِیَّا رَبَّهٗ ۚ قَالَ رَبِّ هَبۡ لِیۡ مِنۡ لَّدُنۡكَ ذُرِّیَّۃً طَیِّبَۃً ۚ اِنَّكَ سَمِیۡعُ الدُّعَآءِ ﴿۳۸﴾

সেখানে যাকারিয়্যা তার রবের কাছে প্রার্থনা করেছিল, সে বলল, ‘হে আমর রব, আমাকে আপনার পক্ষ থেকে উত্তম সন্তান দান করুন। নিশ্চয় আপনি প্রার্থনা শ্রবণকারী’। আল-বায়ান

ওখানেই যাকারিয়া নিজ প্রতিপালকের কাছে প্রার্থনা করে বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে তোমার পক্ষ হতে একটি সুসন্তান দান কর। নিশ্চয় তুমি প্রার্থনা শ্রবণকারী’। তাইসিরুল

তখন যাকারিয়া তার রবের নিকট প্রার্থনা করেছিল, সে বলেছিলঃ হে আমার রাব্ব! আমাকে আপনার নিকট হতে পবিত্র সন্তান প্রদান করুন, নিশ্চয়ই আপনি প্রার্থনা শ্রবণকারী। মুজিবুর রহমান

At that, Zechariah called upon his Lord, saying, "My Lord, grant me from Yourself a good offspring. Indeed, You are the Hearer of supplication." Sahih International

৩৮. সেখানেই যাকারিয়্যা তার রবের নিকট প্রার্থনা করে বললেন, ‘হে আমার রব! আমাকে আপনি আপনার নিকট থেকে উত্তম সন্তান দান করুন। নিশ্চয়ই আপনি প্রার্থনা শ্রবণকারী।(১)

(১) যাকারিয়্যা 'আলাইহিস সালাম তখনো পর্যন্ত নিঃসন্তান ছিলেন। সময়ও ছিল বার্ধক্যের- যে বয়সে স্বাভাবিকভাবে সন্তান হয় না। তবে আল্লাহর শক্তি-সামর্থের প্রতি তার অগাধ বিশ্বাস ছিল যে, অলৌকিকভাবে এহেন বার্ধক্যের মধ্যেও তিনি সন্তান দিতে পারেন। তবে অসময়ে ও অস্থানে দান করার আল্লাহর মহিমা ইতিপূর্বে তিনি কখনো প্রত্যক্ষ করেননি। কিন্তু এসময় যখন তিনি দেখতে পেলেন যে, আল্লাহ তা'আলা ফলের মওসুম ছাড়াই মারইয়ামকে ফল দান করেছেন, তখনই তার মনের সুপ্ত আকাঙ্খা জেগে উঠল এবং তার মনে হলো যে, সর্বশক্তিমান আল্লাহ মওসুম ছাড়াই যদি ফল দিতে পারেন, তবে বৃদ্ধ দম্পতিকে হয়ত সন্তানও দেবেন। বললেনঃ ‘হে আমার রব! আমাকে আপনি আপনার নিকট থেকে সৎ সন্তান দান করুন’, এতে বুঝা যায় যে, সন্তান হওয়ার জন্য দোআ করা রাসূলগণের ও নেককারদের সুন্নাত।

অপর এক আয়াতে আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ “আপনার আগে তো আমি অনেক রাসূল পাঠিয়েছিলাম এবং তাদেরকে স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দিয়েছিলাম অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যেরূপ স্ত্রী ও সন্তান দান করা হয়েছে, তদ্রুপ এই নেয়ামত পূর্ববর্তী রাসূলগণকেও দেয়া হয়েছিল। এখন কেউ যদি কোন পন্থায় সন্তান জন্মগ্রহণের পথে বাধা সৃষ্টি করে, তবে সে শুধু স্বভাবধর্মের বিরুদ্ধেই বিদ্রোহের পতাকা উত্তোলন করে না; বরং রাসূলদের একটি সার্বজনীন ও সর্বসম্মত সুন্নাহ থেকেও বঞ্চিত হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিবাহ ও সন্তানের প্রশ্নটিকে অত্যাধিক গুরুত্ব দান করেছেন। তাই যে ব্যক্তি সামর্থ থাকা সত্বেও বিবাহ কিংবা সন্তান গ্রহণে অনীহা প্রকাশ করে, তাকে তিনি স্বীয় দলে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার অনুমতি দেননি। তিনি বলেনঃ বিবাহ আমার সুন্নাহ। যে ব্যক্তি এ সুন্নাহ থেকে বিমুখ হয়, সে আমার দলভুক্ত নয়। তোমরা বিবাহ কর। কেননা, তোমাদের আধিক্যের কারণে আমি অন্যান্য উম্মতের উপর গর্ব করব। [ইবনে মাজাহঃ ১৮৪৬]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩৮) সেখানেই যাকারিয়া তার প্রতিপালকের নিকট প্রার্থনা করে বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে তুমি তোমার নিকট থেকে সৎ বংশধর দান কর। নিশ্চয় তুমি প্রার্থনা শ্রবণকারী।’

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩ . আলে-ইমরান
৩:৩৯ فَنَادَتۡهُ الۡمَلٰٓئِكَۃُ وَ هُوَ قَآئِمٌ یُّصَلِّیۡ فِی الۡمِحۡرَابِ ۙ اَنَّ اللّٰهَ یُبَشِّرُكَ بِیَحۡیٰی مُصَدِّقًۢا بِكَلِمَۃٍ مِّنَ اللّٰهِ وَ سَیِّدًا وَّ حَصُوۡرًا وَّ نَبِیًّا مِّنَ الصّٰلِحِیۡنَ ﴿۳۹﴾

অতঃপর ফেরেশতারা তাকে ডেকে বলল, সে যখন কক্ষে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছিল, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তোমাকে ইয়াহইয়া সম্পর্কে সুসংবাদ দিচ্ছেন, যে হবে আল্লাহর পক্ষ থেকে বাণীর সত্যায়নকারী, নেতা ও নারী সম্ভোগমুক্ত এবং নেককারদের মধ্য থেকে একজন নবী’। আল-বায়ান

যখন যাকারিয়া ‘ইবাদাত কক্ষে সলাতে দন্ডায়মান তখন ফেরেশতারা তাকে সম্বোধন করে বলল : আল্লাহ তোমাকে ইয়াহ্ইয়া’র সুসংবাদ দিচ্ছেন, সে হবে আল্লাহর পক্ষ হতে আগত কালেমার সত্যতার সাক্ষ্যদাতা, নেতা, গুনাহ হতে বিরত ও নেক বান্দাগণের মধ্য হতে একজন নাবী। তাইসিরুল

অতঃপর যখন সে মেহরাবের মধ্যে দাঁড়িয়ে প্রার্থনা করছিল তখন মালাইকা/ফেরেশতাগণ তাকে সম্বোধন করে বলেছিলঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাকে ইয়াহইয়া সম্বন্ধে সুসংবাদ দিচ্ছেন - তার অবস্থা এই হবে যে, সে আল্লাহর একটি বাক্যের সত্যতা প্রকাশকারী হবে, নেতা হবে, স্বীয় প্রবৃত্তিকে দমনকারী হবে এবং সৎ কর্মশীলগণের মধ্যে নাবী হবে। মুজিবুর রহমান

So the angels called him while he was standing in prayer in the chamber, "Indeed, Allah gives you good tidings of John, confirming a word from Allah and [who will be] honorable, abstaining [from women], and a prophet from among the righteous." Sahih International

৩৯. অতঃপর যখন যাকারিয়্যা ইবাদত কক্ষে সালাতে দাঁড়িয়েছিলেন তখন ফেরেশতারা তাকে আহবান করে বলল, নিশ্চয় আল্লাহ আপনাকে ইয়াহইয়ার সুসংবাদ দিচ্ছেন, সে হবে আল্লাহর পক্ষ থেকে আগমনকৃত এক কালেমাকে সত্যায়নকারী(১), নেতা(২), ভোগ আসক্তিমুক্ত(৩) এবং পূণ্যবানদের অন্তর্ভুক্ত একজন নবী।

(১) এখানে কালেমা বলতে ঈসা আলাইহিস সালামকে বোঝানো হয়েছে। পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে ঈসা আলাইহিস সালামকে ‘কালেমাতুল্লাহ’ বা আল্লাহর বাণী বলা হয়েছে, কারণ, তিনি শুধু আল্লাহর কালেমা বা নির্দেশে চিরাচরিত প্রথার বিপরীতে পিতার মাধ্যম ছাড়াই জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এখানে তাকে ‘আল্লাহর কালাম’ বলে বিশেষভাবে উল্লেখ করে সম্মানিত করাই উদ্দেশ্য। নতুবা সবকিছুই আল্লাহর কালেমার মাধ্যমেই হয়। তার কালেমা ব্যতীত কিছুই হয় না।

(২) কাতাদা বলেন, আল্লাহর শপথ তিনি ইবাদাত, সহিষ্ণুতা, জ্ঞান ও পরহেযগারীতে সবার শীর্ষ নেতা হিসেবে ছিলেন। পক্ষান্তরে মুজাহিদ বলেন, সাইয়্যেদ অর্থ হচ্ছে, তিনি আল্লাহর কাছে সম্মানিত ছিলেন। [তাবারী]

(৩) এটা ইয়াহইয়া আলাইহিস সালামের একটি গুরুত্বপূর্ণ গুণ। এর অর্থ, যিনি যাবতীয় কামনা-বাসনা থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখেন। উদাহরণতঃ উত্তম পানাহার, উত্তম পোষাক পরিধান এবং বিবাহ ইত্যাদি। এ গুণটি প্রশংসার ক্ষেত্রে উল্লেখ করায় বাহ্যতঃ মনে হয় যে, এটাই উত্তম পন্থা ৷ অথচ বিভিন্ন হাদীসে বিবাহিত জীবন-যাপন করাই যে উত্তম একথা প্রমাণিত আছে। এ সম্পর্কে সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত এই যে, যদি কারো অবস্থা ইয়াহইয়া 'আলাইহিস সালামের মত হয়- অর্থাৎ অন্তরে আখেরাতের চিন্তা প্রবল হওয়ার কারণে স্ত্রীর প্রয়োজন অনুভুত না হয় এবং স্ত্রী ও সন্তানদের হক আদায় করার মত অবকাশ না থাকে, তবে তার পক্ষে বিবাহ না করাই উত্তম। এ কারণেই যে সব হাদীসে বিবাহের ফযীলত বর্ণিত হয়েছে, তাতে এ কথাও বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি বিবাহের সামর্থ রাখে এবং স্ত্রীর হক আদায় করতে পারে, তার পক্ষেই বিবাহ করা উত্তম। [বুখারীঃ ১৮০৬, মুসলিমঃ ১৪০০] এতে বুঝা যাচ্ছে যে, এর ব্যতিক্রম হলে বিবাহ ওয়াজিব নয়।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩৯) যখন (যাকারিয়া) মিহরাবে নামাযে রত ছিল, তখন ফিরিশতাগণ তাকে সম্বোধন করে বলল, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তোমাকে ইয়াহয়্যার সুসংবাদ দিচ্ছেন,[1] সে হবে আল্লাহর এক বাণী (ঈসা)র সমর্থক,[2] সে হবে নেতা, জিতেন্দ্রিয় এবং পুণ্যবানদের মধ্যে একজন নবী।’

[1] অসময়ের ফল দেখে যাকারিয়া (আঃ)-এর অন্তরে (বার্ধক্যে পৌঁছে যাওয়া এবং স্ত্রী বাঁঝা হওয়া সত্ত্বেও) আশা জেগে উঠলো যে, তাঁকেও যেন মহান আল্লাহ এইভাবে (যেভাবে তিনি মারয়্যামকে অসময়ের ফল দিয়েছেন) কোন সন্তান দানে ধন্য করেন। সুতরাং মনের অজ্ঞাতসারে আল্লাহর সমীপে তাঁর দু’আর মুখ খুলে গেল। আল্লাহ তাঁর এই দু’আ কুবলও করলেন।

[2] আল্লাহর এক বাণীর সমর্থন ও সত্যায়ন করার অর্থ, ঈসা (আঃ)-কে সত্য বলে বিশ্বাস করা। অর্থাৎ, ইয়াহ্য়্যা (আঃ) ঈসা (আঃ)-এর চেয়ে বড় ছিলেন। তাঁরা আপোসে খালাতো ভাই ছিলেন। উভয়েই একে অপরকে সমর্থন করেছেন। سيِّد এর অর্থ সর্দার বা জননেতা। حَصور এর অর্থ পাপসমূহ থেকে পবিত্র; যে পাপের কাছেও ঘেঁষে না। অর্থাৎ তাঁকে যেন পাপ থেকে নিবারিত রাখা হবে। কেউ কেউ এর অর্থ করেছেন নপুংসক বা হিজড়া। কিন্তু তা সঠিক নয়। কারণ তা একটি দোষ, অথচ এখানে তাঁর উল্লেখ করা হয়েছে প্রশংসা ও ফযীলত হিসেবে। (অবশ্য জিতেন্দ্রিয় বা সংযমী অনুবাদ বেঠিক নয়।)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩ . আলে-ইমরান
৩:৪০ قَالَ رَبِّ اَنّٰی یَكُوۡنُ لِیۡ غُلٰمٌ وَّ قَدۡ بَلَغَنِیَ الۡكِبَرُ وَ امۡرَاَتِیۡ عَاقِرٌ ؕ قَالَ كَذٰلِكَ اللّٰهُ یَفۡعَلُ مَا یَشَآءُ ﴿۴۰﴾

সে বলল, ‘হে আমার রব, কীভাবে আমার পুত্র হবে? অথচ আমার তো বার্ধক্য এসে গিয়েছে, আর আমার স্ত্রী বন্ধা’। তিনি বললেন, ‘এভাবেই আল্লাহ যা ইচ্ছা তা করেন’। আল-বায়ান

যাকারিয়া বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমার সন্তান হবে কীভাবে, আমি তো বার্ধক্যে পৌঁছেছি এবং আমার স্ত্রীও বন্ধ্যা। তিনি বললেন, ‘এভাবেই, আল্লাহ যা ইচ্ছে করেন তা-ই সম্পন্ন করে থাকেন’। তাইসিরুল

সে বলেছিলঃ হে আমার রাব্ব! কিরূপে আমার পুত্র হবে? নিশ্চয়ই আমার বার্ধক্য উপস্থিত হয়েছে এবং আমার স্ত্রী বন্ধ্যা; তিনি বললেনঃ এইরূপে আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তা’ই করে থাকেন। মুজিবুর রহমান

He said, "My Lord, how will I have a boy when I have reached old age and my wife is barren?" The angel said, "Such is Allah; He does what He wills." Sahih International

৪০. তিনি বললেন, 'হে আমার রব! আমার। পুত্র হবে কিভাবে? অথচ আমার বার্ধক্য এসে গিয়েছে(১) এবং আমার স্ত্রী বন্ধ্যা। তিনি (আল্লাহ) বললেন, ‘এভাবেই’। আল্লাহ যা ইচ্ছা তা করেন(২)।

(১) এ আয়াতে বার্ধক্যের পরিমাণ সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। পক্ষান্তরে সূরা মারইয়ামে বার্ধক্যের পরিমাণ সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে, আমি বার্ধক্যে এমনভাবে উপনীত হয়েছি যে আমার জোড়া ও হাড়ের মজ্জাও শুকিয়ে গেছে। [সূরা মারইয়াম: ৮]

(২) যাকারিয়্যা আলাইহিস সালাম আল্লাহ্‌র শক্তি-সামর্থ্যে বিশ্বাসী ছিলেন। সন্তানের জন্য নিজে দোআও করেছিলেন। দোআ কবুল হওয়ার বিষয়ও তিনি অবগত ছিলেন। এতসবের পরেও কিভাবে ‘আমার পুত্র হবে’ বলার অর্থ, খুশী হওয়া এবং আশ্চর্যাম্বিত হওয়া। [মুয়াসসার, সাদী] তিনি পুত্র হওয়ার অবস্থা সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন যে, আমরা স্বামী-স্ত্রী বর্তমানে বার্ধক্যের যে পর্যায়ে এসে উপনীত হয়েছি, তা বহাল রেখেই পুত্র দান করা হবে, না এতে কোনরূপ পরিবর্তন করা হবে? [বাগভী] আল্লাহ্ তা'আলা উত্তরে বলেছিলেন যে, না তোমরা বাৰ্ধক্যাবস্থায়ই থাকবে এবং এ অবস্থাতেই তোমাদের সন্তান হবে। [কাশশাফ]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪০) সে (যাকারিয়া) বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমার পুত্র হবে কিরূপে? আমার তো বার্ধক্য এসেছে এবং আমার স্ত্রী বন্ধ্যা!’ তিনি বললেন, ‘এভাবেই। আল্লাহ যা ইচ্ছা তা করেন।’

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩ . আলে-ইমরান
৩:৪১ قَالَ رَبِّ اجۡعَلۡ لِّیۡۤ اٰیَۃً ؕ قَالَ اٰیَتُكَ اَلَّا تُكَلِّمَ النَّاسَ ثَلٰثَۃَ اَیَّامٍ اِلَّا رَمۡزًا ؕ وَ اذۡكُرۡ رَّبَّكَ كَثِیۡرًا وَّ سَبِّحۡ بِالۡعَشِیِّ وَ الۡاِبۡكَارِ ﴿۴۱﴾

সে বলল, ‘হে আমার রব, আমাকে দেন একটি নিদর্শন’। তিনি বললেন, ‘তোমার নিদর্শন হল, তুমি তিন দিন পর্যন্ত মানুষের সাথে ইশারা ছাড়া কথা বলবে না। আর তোমার রবকে অধিক স্মরণ কর এবং সকাল-সন্ধ্যা তার তাসবীহ পাঠ কর’। আল-বায়ান

সে বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমার জন্য কোন নিদর্শন দাও’। তিনি বললেন, ‘তোমার জন্য নিদর্শন এই যে, তিনদিন তুমি ইশারা ছাড়া লোকের সঙ্গে কথা বলতে পারবে না এবং তোমার প্রতিপালককে অধিক স্মরণ করবে এবং সকালে ও সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করবে’। তাইসিরুল

সে বলেছিলঃ হে আমার রাব্ব! আমার জন্য কোন নিদর্শন নির্দিষ্ট করুন; তিনি বললেনঃ তোমার নিদর্শন এই যে, তুমি তিন দিন ইঙ্গিত ব্যতীত লোকের সাথে কথা বলতে পারবেনা; এবং স্বীয় রাব্বকে বেশী বেশী স্মরণ কর এবং সন্ধ্যায় ও প্রভাতে তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর। মুজিবুর রহমান

He said, "My Lord, make for me a sign." He Said, "Your sign is that you will not [be able to] speak to the people for three days except by gesture. And remember your Lord much and exalt [Him with praise] in the evening and the morning." Sahih International

৪১. তিনি বললেন, হে আমার রব! আমাকে একটি নিদর্শন দিন(১)। তিনি বললেন, আপনার নিদর্শন এই যে, তিন দিন আপনি ইঙ্গিত ছাড়া কথা বলবেন না(২) আর আপনার রবকে অধিক স্মরণ করুন এবং সন্ধ্যায় ও প্রভাতে তার পবিত্রতা-মহিমা ঘোষণা করুন।

(১) প্রতিশ্রুত সেই সুসংবাদটি সম্পর্কে বিস্তারিত অবগতি এবং পুত্র জন্মগ্রহণের পূর্বেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশে মশগুল হওয়ার উদ্দেশ্যে যাকারিয়্যা আলাইহিস সালাম নিদর্শন জানতে চেয়েছিলেন। [কাশশাফ; ফাতহুল কাদীর] আল্লাহ তা'আলা তাকে এ নিদর্শন দিলেন যে, তিন দিন পর্যন্ত তুমি মানুষের সাথে ইশারা-ইঙ্গিত ছাড়া কথা বলতে সমর্থ হবে না। এ নিদর্শনের মধ্যে সূক্ষ্মতা এই যে, কৃতজ্ঞতা প্রকাশের উদ্দেশ্যে নিদর্শন চাওয়া হয়েছিল। আল্লাহ্ তা'আলা এমন নিদর্শন দিলেন যে, তাতে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা ছাড়া যাকারিয়্যা আলাইহিস সালাম অন্য কোন কাজের যোগ্যই থাকবেন না। [ফাতহুল কাদীর]

(২) এ আয়াত থেকে বুঝা যায় যে, কথা বলতে অক্ষম হলে ইশারা-ইঙ্গিত কথার স্থলাভিষিক্ত হতে পারে। এক হাদীসে বর্ণিত আছে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক দাসীকে জিজ্ঞেস করলেনঃ আল্লাহ কোথায়? উত্তরে সে আকাশের দিকে ইশারা করলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ দাসী মুসলিম। তাকে আযাদ করে দাও। [মুসলিমঃ ৫৩৭]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪১) সে বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে একটি নিদর্শন দাও।’ তিনি বললেন, ‘তোমার নিদর্শন এই যে, তিনদিন তুমি ইঙ্গিতে ব্যতীত লোকেদের সাথে কথা বলতে পারবে না। আর তুমি তোমার প্রতিপালককে অত্যধিক স্মরণ কর এবং সন্ধ্যায় ও প্রভাতে তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর।’[1]

[1] বার্ধক্যে মু’জিযা স্বরূপ সন্তান লাভের সুসংবাদ শুনে তাঁর ব্যাকুলতা বৃদ্ধি পেল এবং তিনি আল্লাহর কাছে নিদর্শন জানতে চাইলেন। মহান আল্লাহ বললেন, ‘তিন দিনের জন্য তোমার জবান বন্ধ হয়ে যাবে। আর এটাই হবে আমার পক্ষ থেকে তোমার জন্য নির্দশন। তবে তুমি এই নীরবতায় সকাল ও সন্ধ্যায় অধিকমাত্রায় আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করো। যাতে যে নিয়ামত তুমি লাভ করতে যাচ্ছ, তার শুকর আদায় হয়ে যায়।’ অর্থাৎ, তাঁকে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে যে, মহান আল্লাহ তোমার চাওয়া অনুপাতে বহু নিয়ামত দানে তোমাকে ধন্য করেছেন, অতএব সেই হিসাবে তাঁর শুকরিয়াও বেশী বেশী কর।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩ . আলে-ইমরান
৩:৪২ وَ اِذۡ قَالَتِ الۡمَلٰٓئِكَۃُ یٰمَرۡیَمُ اِنَّ اللّٰهَ اصۡطَفٰكِ وَ طَهَّرَكِ وَ اصۡطَفٰكِ عَلٰی نِسَآءِ الۡعٰلَمِیۡنَ ﴿۴۲﴾

আর স্মরণ কর, যখন ফেরেশতারা বলল, ‘হে মারইয়াম, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাকে মনোনীত করেছেন ও পবিত্র করেছেন এবং নির্বাচিত করেছেন তোমাকে বিশ্বজগতের নারীদের উপর’ । আল-বায়ান

স্মরণ কর, যখন ফেরেশতারা বলেছিল, ‘হে মারইয়াম! আল্লাহ তোমাকে বেছে নিয়েছেন এবং তোমাকে পবিত্র করেছেন, আর তামাম দুনিয়ার নারীদের উপর তোমাকে মনোনীত করেছেন’। তাইসিরুল

এবং যখন মালাক/ফেরেশতা বলেছিলঃ ওহে মারইয়াম! নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাকে মনোনীত করেছেন ও তোমাকে পবিত্র করেছেন এবং বিশ্ব জগতের নারীগণের উপর তোমাকে মনোনীত করেছেন। মুজিবুর রহমান

And [mention] when the angels said, "O Mary, indeed Allah has chosen you and purified you and chosen you above the women of the worlds. Sahih International

৪২. আর স্মরণ করুন, যখন ফেরেশতাগণ বলেছিল, হে মারইয়াম! নিশ্চয় আল্লাহ আপনাকে মনোনীত করেছেন এবং পবিত্র করেছেন আর বিশ্বজগতের নারীগণের উপর আপনাকে মনোনীত করেছেন।(১)

(১) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সবচেয়ে উত্তম মহিলা হলেন মারইয়াম বিনতে ইমরান। অনুরূপভাবে সবচেয়ে উত্তম মহিলা হলেন খাদীজা বিনতে খুয়াইলেদ। বুখারীঃ ৩৪৩২, মুসলিমঃ ২৪৩০] অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পুরুষের মধ্যে অনেকেই পূর্ণতা লাভ করেছে। মেয়েদের মধ্যে কেবলমাত্র ফিরআউনের স্ত্রী আছিয়া এবং ইমরানের কন্যা মারইয়াম পূর্ণতা লাভ করেছে আর সমস্ত নারীদের উপর আয়েশার শ্রেষ্ঠত্ব যেমন সমস্ত খাবারের উপর ‘ছারীদ’-এর শ্রেষ্ঠত্ব। [বুখারী ৩৪৩৩; মুসলিম: ২৪৩১] অন্য বর্ণনায় এসেছে, আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “সৃষ্টিকুলের মহিলাদের মধ্যে শুধু উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, মারইয়াম বিনতে ইমরান, খাদীজা বিনতে খুওয়াইলিদ, ফাতেমা বিনতে মুহাম্মাদ ও ফিরআউনের স্ত্রী আসিয়া।” [তিরমিযী: ৩৮৭৮; মুসনাদে আহমাদ ৩/১৩৫; মুসান্নাফে আবদির রাযযাক ১১/৪৩০]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪২) (স্মরণ কর) যখন ফিরিশতাগণ বলেছিল, ‘হে মারয়্যাম! আল্লাহ অবশ্যই তোমাকে মনোনীত ও পবিত্র করেছেন এবং বিশ্বের নারীদের মধ্যে তোমাকে নির্বাচিত করেছেন। [1]

[1] মারয়্যাম (আলাইহাস্ সালাম)-এর এই মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব তাঁর যুগ অনুযায়ী ছিল। কেননা, সহীহ হাদীসে মারয়্যামের সাথে সাথে খাদীজা (রাঃ) -কেও সর্বশ্রেষ্ঠা নারী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আর কোন কোন হাদীসে চারজন নারীকে সব দিক দিয়ে পূর্ণতাপ্রাপ্ত (কামেল) বলা হয়েছে। তাঁরা হলেনঃ মারয়্যাম, আসিয়া (ফিরআউনের স্ত্রী), খাদীজা এবং আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহুন্না)। আর আয়েশা (রাঃ)  সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, সমস্ত নারীদের উপর তাঁর ফযীলত ও শ্রেষ্ঠত্ব ঐরূপ, যেরূপ (রুটি, গোশত ও ঝোল মিশিয়ে প্রস্তুত এক প্রকার উপাদেয় খাদ্য) সারীদের শ্রেষ্ঠত্ব অন্য যাবতীয় খাদ্যের উপর। (ইবনে কাসীর) তিরমিযীর বর্ণনায় ফাতিমা (রাঃ) কেও শ্রেষ্ঠত্বপূর্ণ নারীদের মধ্যে শামিল করা হয়েছে। (ইবনে কাসীর) এর অর্থ এটাও হতে পারে যে, উল্লিখিত নারীগণ এমন গরীয়সী নারী, যাঁদেরকে মহান আল্লাহ অন্যান্য সমস্ত নারীদের তুলনায় বিশেষ ফযীলত, মর্যাদা ও মাহাত্ম্য দান করেছিলেন। অথবা তাঁরা সব সব যুগে এই বিশেষ ফযীলত ও শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারিণী ছিলেন। আর আল্লাহই সর্বাধিক জ্ঞাত।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩ . আলে-ইমরান
৩:৪৩ یٰمَرۡیَمُ اقۡنُتِیۡ لِرَبِّكِ وَ اسۡجُدِیۡ وَ ارۡكَعِیۡ مَعَ الرّٰكِعِیۡنَ ﴿۴۳﴾

‘হে মারইয়াম, তোমার রবের জন্য অনুগত হও। আর সিজদা কর এবং রুকূকারীদের সাথে রুকূ কর’। আল-বায়ান

হে মারইয়াম! ‘তুমি তোমার প্রতিপালকের অনুগত হও, সাজদাহ কর এবং রুকূ‘কারীদের সঙ্গে রুকূ‘ কর’। তাইসিরুল

হে মারইয়াম! তোমার রবের ইবাদাত কর এবং সাজদাহ কর ও রুকুকারীগণের সাথে রুকু কর। মুজিবুর রহমান

O Mary, be devoutly obedient to your Lord and prostrate and bow with those who bow [in prayer]." Sahih International

৪৩. হে মারইয়াম! আপনার রবের অনুগত হন এবং সিজদা করুন আর রুককারীদের সাথে ‘রুকূ’ করুন।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪৩) হে মারয়্যাম! তোমার প্রতিপালকের অনুগত হও, (তাঁকে) সিজদা কর এবং রুকুকারীদের সাথে রুকু কর।’

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩ . আলে-ইমরান
৩:৪৪ ذٰلِكَ مِنۡ اَنۡۢبَآءِ الۡغَیۡبِ نُوۡحِیۡهِ اِلَیۡكَ ؕ وَ مَا كُنۡتَ لَدَیۡهِمۡ اِذۡ یُلۡقُوۡنَ اَقۡلَامَهُمۡ اَیُّهُمۡ یَكۡفُلُ مَرۡیَمَ ۪ وَ مَا كُنۡتَ لَدَیۡهِمۡ اِذۡ یَخۡتَصِمُوۡنَ ﴿۴۴﴾

এটি গায়েবের সংবাদসমূহের অন্তর্ভুক্ত, যা আমি তোমার প্রতি ওহী পাঠাচ্ছি। আর তুমি তাদের নিকট ছিলে না, যখন তারা তাদের কলম নিক্ষেপ করছিল, তাদের মধ্যে কে মারইয়ামের দায়িত্ব নেবে? আর তুমি তাদের নিকট ছিলে না, যখন তারা বিতর্ক করছিল । আল-বায়ান

এসব অদৃশ্যের সংবাদ, আমি তোমার কাছে তা ওয়াহী দ্বারা পৌঁছে দিচ্ছি। বস্তুতঃ তুমি তাদের নিকট উপস্থিত ছিলে না যখন তাদের কোন্ ব্যক্তি মারইয়ামকে লালন-পালন করবে সেই ভাগ্য নির্ণয়ের জন্য কলম নিক্ষেপ করছিল এবং তুমি তাদের নিকট উপস্থিত ছিলে না, যখন তারা (মারইয়ামের অভিভাবক কে হবে তা নিয়ে) বাদানুবাদ করছিল। তাইসিরুল

এটা সেই অদৃশ্য বিষয়ক সংবাদ যা আমি তোমার প্রতি প্রত্যাদেশ করছি; এবং যখন তারা স্বীয় লেখনীসমূহ নিক্ষেপ করছিল যে, তাদের মধ্যে কে মারইয়ামের প্রতিপালন করবে তখন তুমি তাদের নিকট ছিলেনা; এবং যখন তারা কলহ করছিল তখনও তুমি তাদের নিকট ছিলেনা। মুজিবুর রহমান

That is from the news of the unseen which We reveal to you, [O Muhammad]. And you were not with them when they cast their pens as to which of them should be responsible for Mary. Nor were you with them when they disputed. Sahih International

৪৪. এটা গায়েবের সংবাদের অন্তর্ভুক্ত, যা আমরা আপনাকে ওহী দ্বারা অবহিত করছি। আর মারইয়ামের তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব তাদের মধ্যে কে গ্রহণ করবে এর জন্য যখন তারা তাদের কলম নিক্ষেপ করছিল(১) আপনি তখন তাদের নিকট ছিলেন না এবং তারা যখন বাদানুবাদ করছিল তখনো আপনি তাদের নিকট ছিলেন না।

(১) অর্থাৎ তারা কলম ফেলে লটারী করে মারইয়াম আলাইহাস সালাম কার তত্ত্বাবধানে থাকবেন সেটা নির্ধারণ করছিলেন। ইসলামী শরীয়তে লটারী সম্পর্কিত বিধান এই যে, যেসব হকের কারণ শরীয়তানুযায়ী নির্দিষ্ট ও জানা আছে, সেসব হকের মীমাংসা লটারীযোগে করা নাজায়েয এবং তা জুয়ার অন্তর্ভুক্ত। উদাহরণতঃ শরীকানাধীন বস্তুর মীমাংসা লটারীযোগে করা এবং লটারীতে যার নাম বের হয় তাকে সম্পূর্ণ বস্তুটি দিয়ে দেয়া অথবা কোন শিশুর পিতৃত্বে মতবিরোধ দেখা দিলে লটারযোগে একজনকে পিতা মনে করে নেয়া। পক্ষান্তরে যেসব হকের কারণ জনগণের রায়ের ওপর ন্যস্ত, সেসব হকের মীমাংসা লটারযোগে করা জায়েয। যথা- কোন শরীককে কোন অংশ দেয়া হবে, সেটা লটারীর মাধ্যমে মীমাংসা করা। এক্ষেত্রে লটারীর মাধ্যমে একজনকে পূর্বের অংশ অন্যজনকে পশ্চিমের অংশ দেয়া জায়েয। এর কারণ এই যে, লটারী ছাড়াই উভয়পক্ষ একমত হয়ে যদি এভাবে অংশ নিত অথবা বিচারকের রায়ের ভিত্তিতে এভাবে নিত, তবুও তা জায়েয হত। অর্থাৎ যে ক্ষেত্রে সব শরীকের অংশ সমান হয়, সেখানে কোন এক দিককে এক শরীকের জন্যে নির্দিষ্ট করার উদ্দেশ্যে লটারী জায়েয। [দেখুন, কুরতুবী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪৪) এ অদৃশ্যলোকের সংবাদ যা তোমাকে অহী (ঐশীবাণী) দ্বারা অবহিত করছি। তুমি তাদের নিকট ছিলে না, যখন মারয়্যামের তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব তাদের মধ্যে কে নেবে (তা দেখার জন্য) তারা তাদের কলম নিক্ষেপ করছিল এবং যখন তারা (এ ব্যাপারে) বাদানুবাদ করছিল, তখনও তুমি তাদের নিকট ছিলে না। [1]

[1] বর্তমানের বিদআতীরা নবী করীম (সাঃ)-এর ব্যাপারে অতিরঞ্জন করে তাঁকে মহান আল্লাহর মত আলেমুল গায়েব (অদৃশ্য জগতের জ্ঞানের অধিকারী) বলে মনে করে এবং বিশ্বাস করে যে, তিনি সব জায়গায় হাযির (উপস্থিত) এবং নাযির (তদারককারী)। এই আয়াত দ্বারা তাদের উভয় আকীদার পরিষ্কারভাবে খন্ডন করা হয়েছে। যদি তিনি ‘আলেমুল গায়ব’ হতেন, তাহলে আল্লাহ তাআলা এ কথা বলতেন না যে, ‘‘এ অদৃশ্যলোকের সংবাদ, যা তোমাকে অহী (ঐশীবাণী) দ্বারা অবহিত করছি।’’ কেননা, যিনি আগে থেকেই জানেন, তাঁকে এরূপ বলা হয় না। অনুরূপ যিনি হাযির (উপস্থিত) এবং নাযির (তদারককারী) তাঁকে এ কথা বলা যায় না যে, তুমি সেখানে উপস্থিত ছিলে না, যখন তারা লটারীর জন্য কলম নিক্ষেপ করছিল। লটারী করার প্রয়োজন দেখা দিয়েছিল, কারণ মারয়্যামের লালন-পালন করার দাবীদার আরো কয়েকজন ছিল। [ذَلِكَ مِنْ اَنْبَآءِ الْغَيْبِ نُوِحِيْهِ إِلَيْكَ] আয়াতে নবী কারীম (সাঃ)-এর রিসালাত এবং তাঁর সত্যতার প্রমাণও রয়েছে, যে ব্যাপারে ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানগণ সন্দেহ পোষণ করত। কেননা, শরীয়তের অহী কেবল পয়গম্বরের উপরেই আসে, অন্যের উপরে আসে না।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩ . আলে-ইমরান
৩:৪৫ اِذۡ قَالَتِ الۡمَلٰٓئِكَۃُ یٰمَرۡیَمُ اِنَّ اللّٰهَ یُبَشِّرُكِ بِكَلِمَۃٍ مِّنۡهُ ٭ۖ اسۡمُهُ الۡمَسِیۡحُ عِیۡسَی ابۡنُ مَرۡیَمَ وَجِیۡهًا فِی الدُّنۡیَا وَ الۡاٰخِرَۃِ وَ مِنَ الۡمُقَرَّبِیۡنَ ﴿ۙ۴۵﴾

স্মরণ কর, যখন ফেরেশতারা বলল, ‘হে মারইয়াম, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাকে তাঁর পক্ষ থেকে একটি কালেমার সুসংবাদ দিচ্ছেন, যার নাম মসীহ ঈসা ইবনে মারইয়াম, যে দুনিয়া ও আখিরাতে সম্মানিত এবং নৈকট্যপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত’। আল-বায়ান

(স্মরণ কর) যখন ফেরেশতারা বলল, ‘হে মারইয়াম! নিশ্চয় আল্লাহ তোমাকে তাঁর একটি কথার সুসংবাদ দিচ্ছেন। তার নাম মারইয়ামের পুত্র ঈসা-মসীহ, সে দুনিয়া ও আখেরাতে সম্মানিত ও সান্নিধ্য প্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ তাইসিরুল

যখন মালাইকা/ফেরেশতারা বলেছিলঃ হে মারইয়াম! নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর নিকট হতে একটি বাক্য দ্বারা তোমাকে সুসংবাদ দিচ্ছেন নন্দন ঈসা মসীহ - সে ইহলোক ও পরলোকে সম্মানিত এবং সান্নিধ্য প্রাপ্তগণের অন্তর্ভুক্ত। মুজিবুর রহমান

[And mention] when the angels said, "O Mary, indeed Allah gives you good tidings of a word from Him, whose name will be the Messiah, Jesus, the son of Mary - distinguished in this world and the Hereafter and among those brought near [to Allah]. Sahih International

৪৫. স্মরণ করুন, যখন ফেরেশতাগণ বললেন, হে মারইয়াম! নিশ্চয়ই আল্লাহ আপনাকে তার পক্ষ থেকে একটি কালেমার সুসংবাদ দিচ্ছেন(১)। তার নাম মসীহ, মারইয়াম তনয় ঈসা, তিনি দুনিয়া ও আখেরাতে সম্মানিত এবং সান্নিধ্যপ্রাপ্তগণের অন্যতম হবেন(২)।

(১) কালেমা দ্বারা এখানে কি বুঝানো হয়েছে? কাতাদা বলেন, কালেমা দ্বারা كُنْ বা ‘হও’ শব্দ বোঝানো হয়েছে। [তাবারী] ঈসা আলাইহিস সালামকে ‘কালেমাতুল্লাহ’ বলার কারণ হচ্ছে এই যে, তিনি আল্লাহর কালেমা দ্বারা সৃষ্টি হয়েছেন। কেননা, ঈসা আলাইহিস সালামের জন্মের ব্যাপারটি জাগতিক কোন মাধ্যম বাদেই সংঘটিত হয়েছে। আর আল্লাহ তাকে তার নিদর্শন ও আশ্চৰ্যতম সৃষ্টি হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। তিনি জিবরীল আলাইহিস সালামকে মারইয়ামের নিকট পাঠালেন। জিবরীল আলাইহিস সালাম তার জামার ফাকে ফুঁ দিলেন। এ পবিত্র ফেরেশতার পবিত্র ফুঁ মারইয়ামের গর্ভে প্রবেশ করলে আল্লাহ্ তা'আলা সে ফুঁকটিকে পবিত্র রুহ হিসেবে পরিণত করলেন। আর এ জন্যই তাঁকে সম্মানিত করে ‘রুহুল্লাহ’ বলা হয়ে থাকে। [তাফসীরে সা’দী]

(২) অর্থাৎ দুনিয়াতে তার সম্মান হবে অনেক বড়। কারণ, আল্লাহ তাকে দৃঢসংকল্প রাসূলদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। বড় শরীআত ও তার অনুসারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি করেছেন। তার স্মরণকে এমনভাবে সারা দুনিয়াব্যাপী করেছেন যে, প্রাচ্য-প্রাশ্চাত্য তার সুনামে ভরপূর করে দিয়েছেন। অনুরূপভাবে আখেরাতেও তার মর্যাদা হবে অনেক বেশী। অন্যান্য নবী-রাসূলদের সাথে তিনিও আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবেন। তাকে আল্লাহ তা'আলা দুনিয়াতে যারা তার সম্পর্কে বিভ্রান্ত হয়েছে তাদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে তার মুখ থেকে সত্য বের করে বিশেষভাবে সম্মানিত করবেন। [তাফসীরে সা’দী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪৫) (স্মরণ কর) যখন ফিরিশতাগণ বলল, ‘হে মারয়্যাম! নিশ্চয় আল্লাহ নিজের পক্ষ থেকে তোমাকে একটি কালেমা[1] (দ্বারা সৃষ্ট সন্তানে)র সুসংবাদ দিচ্ছেন; যার নাম হবে মসীহ, [2] মারয়্যাম-পুত্র ঈসা। সে হবে ইহ-পরকালে সম্মানিত এবং সান্নিধ্যপ্রাপ্তগণের অন্যতম।

[1] ঈসা (আঃ)-কে ‘কালিমাতুল্লাহ’ (আল্লাহর কালেমা) এই জন্য বলা হয়েছে যে, তাঁর জন্ম আল্লাহর অলৌকিক শক্তির প্রকাশ স্বরূপ, মানুষ সৃষ্টির নিয়ম-বহির্ভূত বিনা পিতায় মহান আল্লাহর বিশেষ কুদরতে ‘কুন’ কালেমা (বাণী) দ্বারা হয়েছে।

[2] مَسِيْحٌ (মাসীহ) مَسَحَ ধাতু থেকে গঠিত। খুব বেশী যমীনে ভ্রমণকারীকে বলা হয় مَسَحَ الأَرْضَ । অথবা এর অর্থ হল, হাত বুলিয়ে দেওয়া। কেননা, ঈসা (আঃ) রোগীদেরর উপর হাত বুলিয়ে দিলে তারা আল্লাহর নির্দেশে আরোগ্য লাভ করত। এই উভয় অর্থের দিক দিয়ে فَعِيل এখানে فَاعِل এর অর্থে ব্যবহার হয়েছে। কিয়ামতের নিকটতম সময়ে প্রকাশ লাভকারী দাজ্জালকে যে মাসীহ বলা হয়, সেটা হয় مَمسوح العَين (কানা) অর্থের দিক দিয়ে অথবা সেও যেহেতু সারা দুনিয়া ভ্রমণ করবে এবং মক্কা ও মদীনা ব্যতীত সব স্থানেই প্রবেশ করবে। (বুখারী-মুসলিম) কোন কোন বর্ণনায় বায়তুল মুক্বাদ্দাসেরও উল্লেখ আছে। এ জন্য তাকেও ‘মাসীহুদ্ দাজ্জাল’ বলা হয়। অধিকাংশ মুফাসসিরগণ এই কথাটাই লিখেছেন। কোন কোন গবেষক বলেন, ‘মাসীহ’ ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানদের পরিভাষায় আল্লাহ কর্তৃক নির্দেশপ্রাপ্ত বড় বড় পয়গম্বরদেরকে বলা হয়। অর্থাৎ, তাদের পরিভাষায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ পয়গম্বরদের কাছাকাছি অর্থে এটা ব্যবহার হয়। দাজ্জালকে ‘মাসীহ’ এই জন্য বলা হয় যে, ইয়াহুদীদেরকে বিপ্লব সৃষ্টিকারী সে মাসীহের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে এবং যার জন্য তারা এখনো পর্যন্ত ভ্রান্তিময় অপেক্ষায় রয়েছে, দাজ্জাল এই মাসীহর নাম নিয়েই আসবে। অর্থাৎ, সে নিজেকে তাদের সেই অপেক্ষিত মাসীহ বলেই প্রকাশ করবে। কিন্তু সে তার এই দাবী সহ অন্যান্য সমস্ত দাবীতে এত বড় প্রতারক ও ধোঁকাবাজ হবে যে, পূর্ববর্তী ও পরবর্তীদের মধ্যে তার কোন নজির মিলবে না। আর এই জন্য তাকে ‘দাজ্জাল’ (ভীষণ মিথ্যুক ও ধোঁকাবাজ) বলা হয়। عِيْسَى অনারবী শব্দ। কেউ কেউ বলেছেন, এটা আরবী শব্দ যা عَاسَ يَعُوْسَ ধাতু থেকে গঠিত এবং যার অর্থ হল, রাজনীতি ও নেতৃত্বদান। (ক্বুরত্বুবী ও ফাতহুল ক্বাদীর)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩ . আলে-ইমরান
৩:৪৬ وَ یُكَلِّمُ النَّاسَ فِی الۡمَهۡدِ وَ كَهۡلًا وَّ مِنَ الصّٰلِحِیۡنَ ﴿۴۶﴾

আর সে মানুষের সাথে কথা বলবে দোলনায় ও পরিণত বয়সে এবং সে নেককারদের অন্তর্ভুক্ত। আল-বায়ান

‘সে লোকেদের সাথে দোলনা থাকা অবস্থায় এবং বয়োঃপ্রাপ্ত অবস্থায় কথা বলবে এবং নেক বান্দাদের অন্তর্গত হবে। তাইসিরুল

আর সে দোলনা হতে ও পরিণত বয়সে লোকের সাথে কথা বলবে এবং সে পুণ্যবানগণের অন্তর্ভুক্ত হবে। মুজিবুর রহমান

He will speak to the people in the cradle and in maturity and will be of the righteous." Sahih International

৪৬. আর তিনি দোলনায়(১) ও বয়োঃপ্রাপ্ত অবস্থায় মানুষের সাথে কথা বলবেন(২)। এবং তিনি হবেন পূণ্যবানদের একজন।

(১) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দোলনায় মাত্র তিন জন কথা বলেছেন। ঈসা, জুরাইজের সময়ের এক ছোট বাচ্ছা আর একটি বাচ্ছা। [বুখারীঃ ২৪৮২, অনুরূপ ৩৪৩৬; মুসলিমঃ ২৫৫০] দোলনায় তিনি কি কথা কাদের উদ্দেশ্যে বলেছেন তা এখানে বর্ণনা করা হয়নি। অন্যত্র বলা হয়েছে যে, তিনি তার কাওমের লোকদেরকে তার নিজের পরিচয় দিয়ে তার মাকে বিব্রত অবস্থা থেকে রেহাই দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “আমি তো আল্লাহর বান্দা। তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন, আমাকে নবী করেছেন, যেখানেই আমি থাকি না কেন তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন, তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যতদিন জীবিত থাকে ততদিন সালাত ও যাকাত আদায় করতে। আর আমাকে আমার মায়ের প্রতি অনুগত করেছেন এবং তিনি আমাকে করেননি উদ্ধত, হতভাগ্য; আমার প্রতি শান্তি যেদিন আমি জন্ম লাভ করেছি, যেদিন আমার মৃত্যু হবে এবং যেদিন জীবিত অবস্থায় আমি উত্থিত হব। [সূরা মারইয়াম: ৩০-৩৩]

(২) আয়াতে বলা হয়েছে যে, ঈসা আলাইহিস সালাম শৈশব ও পৌঢ় বয়সে মানুষের সাথে কথা বলবেন। নিঃসন্দেহে শৈশবে পূর্ণ বয়স্কদের মত জ্ঞানীসুলভ, মেধাসম্পন্ন প্রাঞ্জল ও বিশুদ্ধভাবে কথা বলা একটি মু'জিযা। কিন্তু তার সাথে পৌঢ় বয়সে কথা বলার ব্যাপারটির কি সম্পর্ক থাকতে পারে? অধিকাংশ আলেমদের নিকট এর উত্তর এই যে, মূলত: শৈশব অবস্থায় কথা বলার মু'জিযা বর্ণনা করাই এখানে উদ্দেশ্য। তার সাথে পৌঢ় বয়সেও কথা বলবেন বলা দ্বারা উভয় অবস্থায়ই তার কথা পাণ্ডিত্যপূর্ণ ও জ্ঞানীসুলভ হবে এমনটি বোঝানো হয়েছে। কোন কোন আলেম বলেন, তিনি যেহেতু যুবক বয়সে পৌঢ় হবার পূর্বেই আসমানে উত্থিত হয়েছেন, সেহেতু এ আয়াত দ্বারা বোঝা যায় যে, তিনি পৌঢ় অবস্থায় আবার ফিরে এসে মানুষের সাথে কথা বলবেন। সুতরাং আবার ফিরে আসার ব্যাপারটি এ আয়াতের মাধ্যমেও প্রমাণিত হয়ে গেল। যা আরেকটি অলৌকিক ব্যাপার।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪৬) সে (ঈসা) দোলনায় থাকা অবস্থায় ও পরিণত বয়সে মানুষের সাথে কথা বলবে[1] এবং সে হবে পুণ্যবানদের একজন।’

[1] ঈসা (আঃ)-এর শিশু অবস্থায় দোলনায় কথা বলার ব্যাপারটা সূরা মারয়্যামেও উল্লিখিত হয়েছে। তাছাড়া সহীহ হাদীসে আরো দু’টি শিশুর কথা উল্লেখিত হয়েছে (যারা মায়ের কোলে কথা বলেছে)। একটি শিশু হল জুরায়েজ সম্পর্কিত ঘটনায় এবং অপরটি একজন ইস্রাঈলী মহিলার শিশু। (বুখারী ৩৪৩৬নং) এই বর্ণনায় যে তিনজন শিশুর কথা এসেছে, তাদের সকলের সম্পর্ক হল বানী-ইস্রাঈলদের সাথে। কারণ, সহীহ মুসলিম শরীফে ‘আসহাবে উখদুদ’ (গর্ত ওয়ালাদের) ঘটনাতেও একজন দুধের শিশুর বাক্যালাপ করার কথা এসেছে। আর ইউসুফ (আঃ)-এর ব্যাপারে ফায়সালাকারী সাক্ষীও নাকি একজন শিশু ছিল; কথাটা প্রসিদ্ধ হলেও তা সঠিক নয়। বরং সে দাঁড়িওয়ালা ছিল। (আয্যায়ীফাহ ৮৮১নং) كَهْلٌ (পরিণত বয়সে) কথা বলার অর্থ কেউ করেছেন, যখন তিনি বড় হয়ে অহী ও নবুঅত পেয়ে ধন্য হবেন তখনকার বাক্যালাপ। আবার কেউ বলেছেন, কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে যখন তিনি আসমান থেকে অবতরণ করবেন এবং তিনি ইসলামের তবলীগ করবেন, তখনকার বাক্যালাপকে বুঝানো হয়েছে; যেমন আহলে সুন্নাতের আকীদা এবং যা বহুধাসূত্রে বর্ণিত সহীহ হাদীস দ্বারা এ কথা প্রমাণিত। (ইবনে কাসীর ও ক্বুরত্ববী)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৩ . আলে-ইমরান
৩:৪৭ قَالَتۡ رَبِّ اَنّٰی یَكُوۡنُ لِیۡ وَلَدٌ وَّ لَمۡ یَمۡسَسۡنِیۡ بَشَرٌ ؕ قَالَ كَذٰلِكِ اللّٰهُ یَخۡلُقُ مَا یَشَآءُ ؕ اِذَا قَضٰۤی اَمۡرًا فَاِنَّمَا یَقُوۡلُ لَهٗ كُنۡ فَیَكُوۡنُ ﴿۴۷﴾

মারইয়াম বলল, ‘হে আমার রব, কিভাবে আমার সন্তান হবে? অথচ কোন মানুষ আমাকে স্পর্শ করেনি’! আল্লাহ বললেন, ‘এভাবেই’ আল্লাহ যা চান সৃষ্টি করেন। তিনি যখন কোন বিষয়ের সিদ্ধান্ত নেন, তখন তাকে শুধু বলেন, ‘হও’। ফলে তা হয়ে যায়। আল-বায়ান

মারইয়াম বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! কীভাবে আমার পুত্র হবে, অথচ আমাকে কোন মানব স্পর্শ করেনি’। তিনি বললেন, ‘এভাবেই’ আল্লাহ সৃজন করেন যা তিনি ইচ্ছে করেন, তিনি যখন কিছু স্থির করেন তখন বলেন, ‘‘হয়ে যাও’’ সুতরাং তা হয়ে যায়। তাইসিরুল

সে বলেছিলঃ হে আমার রাব্ব! কিরূপে আমার পুত্র হবে? কোন পুরুষ মানুষতো আমাকে স্পর্শ করেনি; তিনি বললেনঃ এরূপে আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন, সৃষ্টি করে থাকেন, যখন তিনি কোন কাজের মনস্থ করেন তখন তিনি ওকে ‘হও’ বলেন, ফলতঃ তাতেই হয়ে যায়। মুজিবুর রহমান

She said, "My Lord, how will I have a child when no man has touched me?" [The angel] said, "Such is Allah; He creates what He wills. When He decrees a matter, He only says to it, 'Be,' and it is. Sahih International

৪৭. সে বলল, হে আমার রব! আমাকে কোন পুরুষ স্পর্শ করেনি, এমতাবস্থায় আমার সন্তান হবে কিভাবে? তিনি (আল্লাহ) বললেন, ‘এভাবেই’, আল্লাহ যা ইচ্ছে সৃষ্টি করেন। তিনি যখন কিছু স্থির করেন তখন বলেন, ‘হও’, ফলে তা হয়ে যায়(১)।

(১) এ আয়াতে মারইয়াম আলাইহাস সালাম কর্তৃক ঈসা আলাইহিস সালামকে গর্ভে ধারনের বিষয়টির ইঙ্গিত রয়েছে। এর বিস্তারিত বর্ণনা সূরা মারইয়ামে বর্ণিত হয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে, “বর্ণনা করুন এ কিতাবে মারইয়ামের কথা, যখন সে তার পরিবারবর্গ থেকে পৃথক হয়ে নিরালায় পূর্ব দিকে এক স্থানে আশ্রয় নিল, তারপর তাদের থেকে সে পর্দা করল। এরপর আমরা তার কাছে আমাদের রূহকে পাঠালাম, সে তার নিকট পূর্ণ মানবাকৃতিতে আত্মপ্রকাশ করল। মারইয়াম বলল, আমি তোমার থেকে দয়াময়ের আশ্রয় প্রার্থনা করছি (আল্লাহকে ভয় কর) যদি তুমি মুত্তাকী হও, সে বলল, আমি তো তোমার রব-এর দূত, তোমাকে এক পবিত্র পুত্র দান করার জন্য। মারইয়াম বলল, “কেমন করে আমার পুত্র হবে যখন আমাকে কোন পুরুষ স্পর্শ করেনি এবং আমি ব্যভিচারিণীও নই?

সে বলল, “এ রূপই হবে। তোমার রব বলেছেন, ‘এটা আমার জন্য সহজসাধ্য এবং আমরা তাকে এজন্যে সৃষ্টি করব যেন সে হয় মানুষের জন্য এক নিদর্শন ও আমাদের কাছ থেকে এক অনুগ্রহ; এটা তো এক স্থিরীকৃত ব্যাপার। তারপর সে তাকে গর্ভে ধারণ করল; [১৬-২২] এখানেও গর্ভে ধারনের প্রক্রিয়াটি কিভাবে সম্পন্ন হয়েছে সেটা বলা হয়নি। সূরা আল-আম্বিয়ায় বলা হয়েছে যে, “অতঃপর আমরা তার (মারইয়ামের) মধ্যে আমাদের পক্ষ থেকে রূহ ফুঁকে দিয়েছিলাম” [৯১]। আর যিনি রূহ ফুঁকে দেয়ার কাজটি করেছিলেন, তিনি ছিলেন জিবরীল আলাইহিস সালাম। কারণ, সূরা আলে ইমরান ও সূরা মারইয়ামের আয়াতসমূহ থেকে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, মারইয়ামের কাছে যিনি এসেছিলেন, তিনি স্বয়ং জিবরীল আলাইহিস সালাম। এ সমস্ত বর্ণনা একত্রিত করলে ঈসা আলাইহিস সালামের জন্মকাহিনী স্পষ্ট হয়ে পড়ে।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪৭) সে বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! কেমন করে আমার সন্তান হবে? অথচ কোন পুরুষ আমাকে স্পর্শ করেনি।’ তিনি (আল্লাহ) বললেন, এভাবেই আল্লাহ যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। তিনি যখন কিছু (সৃষ্টি করবেন বলে) স্থির করেন, তখন বলেন, ‘হও’, আর তখনই তা হয়ে যায়। [1]

[1] অর্থাৎ, তোমার আশ্চর্য হওয়া ঠিকই আছে, তবে মহাশক্তির অধিকারী আল্লাহর জন্য এটা কোন কঠিন ব্যাপার নয়। তিনি ইচ্ছা করলে স্বাভাবিক নিয়ম-নীতি ও বাহ্যিক হেতু ও উপকরণাদির মাধ্যমে ঘটনাঘটনের ধারাবাহিকতা খতম করে কেবল ‘কুন’ (হও) নির্দেশ দ্বারা নিমেষে যা ইচ্ছা তা-ই করতে পারেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ ৩৩১ থেকে ৩৪০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৬২৩৬ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 · · · 31 32 33 34 35 · · · 621 622 623 624 পরের পাতা »