যেমন, আপনি হয়ত ২ নং সূরার ২০ নং আয়াত এবং ১০ নং সূরার ৫ নং আয়াত এভাবে একসাথে আরো অন্য সূরার অন্য আয়াত সার্চ করতে চাইছেন, সেক্ষেত্রে আপনাকে উপরের সার্চ বক্সে
২:২০, ১০:৫ এভাবে অথবা ২/২০, ১০/৫ এভাবে লিখে সার্চ করতে হবে।
আপনি সূরা ও আয়াত নং বাংলা অথবা ইংরেজিতে লিখতে পারেন।
অতঃপর সে মূর্তিগুলোকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিল তাদের বড়টি ছাড়া, যাতে তারা তাঁর দিকে ফিরে আসে। আল-বায়ান
তারপর সে মূর্তিগুলোকে টুকরো টুকরো করে দিল, ওগুলোর বড়টি ছাড়া, যাতে পূজারীরা ওটার প্রতিই মনোযোগী হয়। তাইসিরুল
অতঃপর সে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিল মূর্তিগুলিকে, তাদের বড় (প্রধান) মূর্তিটি ব্যতীত, যাতে তারা তার দিকে ফিরে আসে। মুজিবুর রহমান
So he made them into fragments, except a large one among them, that they might return to it [and question]. Sahih International
৫৮. অতঃপর তিনি চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিলেন মূর্তিগুলোকে, তাদের প্রধানটি ছাড়া(১); যাতে তারা তার দিকে(২) ফিরে আসে।
(১) অর্থাৎ ইবরাহীম আলাইহিস সালাম মুর্তিগুলোকে ভেঙ্গে খণ্ডবিখণ্ড করে দিলেন। শুধু বড় মুর্তিটিকে ভাঙ্গার কবল থেকে রেহাই দিলেন। এটা হয় দৈহিক আকার আকৃতিতে অন্য মুর্তিদের চাইতে বড় ছিল [কুরতুবী] না হয় আকার আকৃতিতে সমান হওয়া সত্বেও পূজারীরা তাকে বড় বলে মান্য করত। [ইবন কাসীর]
(২) এখানে إليه বা ‘তার দিকে’ বলে কাকে বুঝানো হয়েছে। এ ব্যাপারে দুটি মত রয়েছেঃ (এক) এখানে তার দিকে বলে ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে বোঝানো হয়েছে। [ফাতহুল কাদীর] অর্থাৎ ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এ আশায় কাজটি করলেন যে তাদের উপাস্য মুর্তিদেরকে খণ্ড-বিখণ্ড দেখলে এরা যে পুজার যোগ্য নয় এ জ্ঞান তাদের মধ্যে ফিরে আসবে। এরপর তারা ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এর দ্বীনের দিকে প্রত্যাবর্তন করবে। [কুরতুবী] (দুই) কোন কোন মুফাসসিরের মতে, এখানে ‘তার দিকে’ বলে- كبيرهم বা তাদের প্রধান মুর্তিকে বোঝানো হয়েছে। অর্থ এই যে, তারা ফিরে এসে যখন সবগুলো মুর্তিকে খণ্ড বিখণ্ড এবং বড় মুর্তিকে আস্ত অক্ষত ও কাঁধে কুড়াল রাখা অবস্থায় দেখবে, তখন সম্ভবত: এই মুর্তিটির দিকেই প্রত্যাবর্তন করবে এবং তাকে জিজ্ঞেস করবে যে, এরূপ কেন হল? আর তারা মনে করবে যে, বড় মূর্তিই বোধ হয় নিজের আত্মসম্মানবোধের কারণে ছোট ছোট মূর্তিগুলোকে ভেঙ্গে ফেলেছে। [কুরতুবী; ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৫৮) অতঃপর সে তাদের বড় মূর্তিটি ছাড়া অন্যগুলিকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিল; যাতে তারা তার দিকে ফিরে আসে।[1]
[1] যখন তারা সকলেই তাদের ঈদ বা কোন অনুষ্ঠানের দিন বাইরে চলে গেল, তখন ইবরাহীম (আঃ) এই সুযোগে সকল মূর্তিগুলোকে ভেঙ্গে ফেললেন। শুধু বড় মূর্তিটিকে রেখে দিলেন। কেউ বলেন, কুড়ুল তার হাতে ধরিয়ে দিলেন, যাতে তারা তাকে জিজ্ঞেস করে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতারা বলল, ‘আমাদের দেবদেবীগুলোর সাথে কে এমনটি করল? নিশ্চয় সে যালিম’। আল-বায়ান
তারা বলল, ‘আমাদের মূর্তিগুলোর সাথে এমনটা কে করল? সে অবশ্যই যালিম।’ তাইসিরুল
তারা বললঃ আমাদের উপাস্যগুলির প্রতি এরূপ করল কে? সে নিশ্চয়ই সীমালংঘনকারী। মুজিবুর রহমান
They said, "Who has done this to our gods? Indeed, he is of the wrongdoers." Sahih International
৫৯. তারা বলল, আমাদের মা’বুদগুলোর প্ৰতি এরূপ করল কে? সে নিশ্চয়ই অন্যতম যালেম।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৫৯) তারা বলল, ‘আমাদের উপাস্যগুলির প্রতি এরূপ আচরণ কে করল? সে নিশ্চয়ই সীমালংঘনকারী।’ [1]
[1] যখন তারা অনুষ্ঠান সেরে ফিরে এল, তখন তারা দেখল মূর্তিগুলো সব ভেঙ্গে পড়ে রয়েছে। তারা বলতে লাগল যে, এ কোন বড় অত্যাচারী লোকেরই কাজ।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতাদের কেউ কেউ বলল, ‘আমরা শুনেছি এক যুবক এই মূর্তিগুলোর সমালোচনা করে। তাকে বলা হয় ইবরাহীম’। আল-বায়ান
কেউ কেউ বলল, ‘এক যুবককে এদের সম্পর্কে বলতে শুনেছি, তাকে ইবরাহীম বলা হয়।’ তাইসিরুল
কেহ কেহ বললঃ আমরা এক যুবককে ওদের সমালোচনা করতে শুনেছি, তাকে বলা হয় ইবরাহীম। মুজিবুর রহমান
They said, "We heard a young man mention them who is called Abraham." Sahih International
৬০. লোকেরা বলল, আমরা এক যুবককে ওদের সমালোচনা করতে শুনেছি; তাকে বলা হয় ইবরাহীম।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৬০) কেউ কেউ বলল, ‘আমরা এক যুবককে ওদের সমালোচনা করতে শুনেছি, তার নাম ইব্রাহীম।’ [1]
[1] ওদের মধ্যে কেউ কেউ বলল, ইবরাহীম নামে এক যুবক আছে না, সে কিন্তু আমাদের দেব-দেবীর বিরুদ্ধে কথা বলে, বোধ হয় এটি তারই কাজ।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতারা বলল, ‘তাহলে তাকে লোকজনের সামনে নিয়ে এসো, যাতে তারা দেখতে পারে’। আল-বায়ান
তারা বলল, ‘তাকে নিয়ে এসো লোকজনের সামনে যাতে তারা সাক্ষী হতে পারে।’ তাইসিরুল
তারা বললঃ তাকে উপস্থিত কর লোক সম্মুখে, যাতে তারা সাক্ষ্য দিতে পারে। মুজিবুর রহমান
They said, "Then bring him before the eyes of the people that they may testify." Sahih International
৬১. তারা বলল, তাহলে তাকে জনসমক্ষে উপস্থিত কর, যাতে তারা সাক্ষ্য হয়।(১)
(১) এভাবে ইবরাহীমের মনের আশাই যেন পূরণ হলো। কারণ তিনি এটাই চাচ্ছিলেন। ব্যাপারটিকে তিনি শুধু পুরোহিত ও পূজারীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চাচ্ছিলেন না। বরং তিনি চাচ্ছিলেন, ব্যাপারটা সাধারণ মানুষের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ুক। তারাও আসুক, দেখে নিক এই যে মূর্তিগুলোকে তাদের অভাব পূরণকারী হিসেবে রাখা হয়েছে এরা কতটা অসহায় এবং স্বয়ং পুরোহিতরাই এদের সম্পর্কে কি ধারণা পোষণ করে। [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৬১) তারা বলল, ‘তাকে লোক সম্মুখে উপস্থিত কর, যাতে তারা সাক্ষ্য দিতে পারে।’ [1]
[1] অর্থাৎ, যাতে তারা তার শাস্তি প্রত্যক্ষ করতে পারে; যাতে ভবিষ্যতে এ কাজ করতে কেউ সাহস না পায়। অথবা এর অর্থঃ যাতে লোকেরা সাক্ষী দিতে পারে যে, তারা তাকে মূর্তিগুলো ভাঙ্গতে দেখেছে বা ওদের বিরুদ্ধে কথা বলতে শুনেছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতারা বলল, ‘হে ইবরাহীম, তুমিই কি আমাদের দেবদেবীগুলোর সাথে এরূপ করেছ’? আল-বায়ান
তারা বলল, ‘ওহে ইবরাহীম! আমাদের উপাস্যদের সাথে তুমিই কি এমনটি করেছ?’ তাইসিরুল
তারা বললঃ ইবরাহীম! তুমিই কি আমাদের উপাস্যগুলির উপর এরূপ করেছ? মুজিবুর রহমান
They said, "Have you done this to our gods, O Abraham?" Sahih International
৬২. তারা বলল, হে ইবরাহীম! তুমিই কি আমাদের মা’বুদগুলোর প্রতি এরূপ করেছ?
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৬২) তারা বলল, ‘হে ইব্রাহীম! তুমিই কি আমাদের উপাস্যগুলির প্রতি এরূপ আচরণ করেছ?’
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ানসে বলল, ‘বরং তাদের এ বড়টিই একাজ করেছে। তাই এদেরকেই জিজ্ঞাসা কর, যদি এরা কথা বলতে পারে’। আল-বায়ান
সে বলল, ‘না, তাদের এই বড়টাই এ সব করেছে, তারা যদি কথা বলতে পারে তবে তাদেরকে জিজ্ঞেস কর।’ তাইসিরুল
সে বললঃ সে’ই তো এটা করেছে, এইতো এদের প্রধান। এদেরকে জিজ্ঞেস কর যদি এরা কথা বলতে পারে। মুজিবুর রহমান
He said, "Rather, this - the largest of them - did it, so ask them, if they should [be able to] speak." Sahih International
৬৩. তিনি বললেন, বরং এদের এ প্রধান-ই তো এটা করেছে(১), সুতরাং এদেরকে জিজ্ঞেস কর যদি এরা কথা বলতে পারে।
(১) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তিন জায়গা ব্যতীত কোন দিন মিথ্যা কথা বলেননি। তন্মধ্যে দুটি খাস আল্লাহর জন্যে বলা হয়েছে। একটি (بَلْ فَعَلَهُ كَبِيرُهُمْ) (বরং তাদের প্রধানই তো এটা করেছে) বলা। দ্বিতীয়টি ঈদের দিনে সম্প্রদায়ের কাছে ওযর পেশ করে (إِنِّي سَقِيمٌ) (আমি অসুস্থ) বলা এবং তৃতীয়টি স্ত্রী সারাহ সহ সফরে এক জনপদের নিকট দিয়ে গমন করেছিলেন। জনপদের প্রধান ছিল যালেম ও ব্যভিচারী। কোন ব্যক্তির সাথে তার স্ত্রীকে দেখলে সে স্বামীকে হত্যা করত ও তার স্ত্রীকে পাকড়াও করত এবং তার সাথে ব্যভিচার করত। কিন্তু কোন কন্যা পিতার সাথে কিংবা ভগিনী ভাইয়ের সাথে থাকলে সেই এরূপ করত না।
ইবরাহীম আলাইহিস সালামের স্ত্রীসহ এই জনপদে পৌছার খবর কেউ এই যালেম ব্যভিচারীর কাছে পৌঁছে দিলে সে সারাহকে গ্রেফতার করিয়ে আনল। গ্রেফতারকারীরা ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে জিজ্ঞেস করলঃ এই মহিলা সাথে তোমার আত্মীয়তার সম্পর্ক কি? ইবরাহীম আলাইহিস সালাম যালেমের কবল থেকে আত্মরক্ষার জন্য বলে দিলেন: সে আমার ভগিনী। (এটা হাদীসে বর্ণিত তৃতীয় মিথ্যা)। [বুখারীঃ ৩১৭৯, ৪৪৩৫। মুসলিমঃ ২৩৭১]
এই হাদীসে ইবরাহীম আলাইহিস সালামের দিকে পরিষ্কারভাবে তিনটি মিথ্যার সম্বন্ধ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে কোন কোন আলেমের ব্যাখ্যা হলো যে, তিনটির মধ্যে একটিও সত্যিকার অর্থে মিথ্যা ছিল না। বরং এটা ছিল অলংকার শাস্ত্রের পরিভাষায় “তাওরিয়া”। এর অর্থ দ্ব্যৰ্থবোধক ভাষা ব্যবহার করা এবং শ্ৰোতা কর্তৃক এক অর্থ বোঝা ও বক্তার নিয়তে অন্য অর্থ থাকা। যুলুম থেকে আত্মরক্ষার জন্যে ফিকাহবিদগণের সর্বসম্মত মতে এই কৌশল অবলম্বন করা জায়েয ও হালাল। এটা মিথ্যার অন্তর্ভুক্ত নয়। উল্লেখিত হাদীসে এর প্রমাণ এই যে, ইবরাহীম আলাইহিস সালাম নিজেই সারাহকে বলেছিলেন আমি তোমাকে ভগিনী বলেছি। তোমাকে জিজ্ঞেস করা হলে তুমি ও আমাকে ভাই বলো। ভগিনী বলার কারণও তিনি বলে দিয়েছেন যে আমরা উভয় ইসলামী সম্পর্কের দিক দিয়ে ভ্রাতা-ভগিনী। বলাবাহুল্য এটাই “তাওরিয়া”।
হুবহু এমনি ধরনের কারণ প্রথমোক্ত দুই জায়গায় বলা যায় যে, অসুস্থ শব্দটি যেমন শারীরিক অসুস্থতার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়, তেমনি মানসিক অসুস্থতা অর্থাৎ চিন্তান্বিত ও অবসাদগ্ৰস্ত হওয়ার অর্থেও ব্যবহৃত হয়। ইবরাহীম আলাইহিস সালাম দ্বিতীয় অর্থেই “আমি অসুস্থ” বলেছিলেন, কিন্তু শ্রোতারা একে শারীরিক অসুস্থতার অর্থে বোঝেছিলেন। মূর্তি ভাঙ্গার কাজটিতে তিনি যে ভাঙ্গার কাজটি বড় মূর্তির দিকে সম্পর্কযুক্ত করেছিলেন এ ব্যাপারে আলেমগণ নানা সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেছেন:
১. ইবরাহীম আলাইহিস সালামের এ উক্তি ধরে নেয়ার পর্যায়ে ছিল; অথাৎ তোমরা একথা ধরেই নাও না কেন যে, একাজ প্রধান মুর্তিই করে থাকবে। ধরে নেয়ার পর্যায়ে বাস্তববিরোধী কথা বলা মিথ্যার আওতায় পড়ে না। [ফাতহুল কাদীর]
২. কোন কোন মুফাসসিরের মতে, মূলতঃ প্রধান মূর্তিটি ইইবরাহীম আলাইহিস সালামকে একাজ করতে উদ্ধৃদ্ধ করেছিল। তার সম্প্রদায় এই মুর্তির প্রতি সর্বাধিক সম্মান প্রদর্শন করত। সম্ভবত এ কারণেই বিশেষভাবে এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। [ফাতহুল কাদীর]
তবে এ ব্যাপারে আলেমগণ একমত যে, নবী-রাসূলগণ কখনো নবুওয়ত ও তাবলীগ বা প্রচার-প্রসার সংক্রান্ত ব্যাপারে মিথ্যার আশ্রয় নেননি। তারা জগতশ্রেষ্ঠ সত্যবাদী লোক ছিলেন। [ইবন তাইমিয়্যাহ, আল-জাওয়াবুস সহীহ ১/৪৪৬]
তাফসীরে জাকারিয়া(৬৩) সে বলল, ‘বরং ওদের মধ্যে এই বড়টিই এরূপ করেছে। সুতরাং তোমরা ওদেরকেই জিজ্ঞেস কর; যদি ওরা কথা বলতে পারে।’ [1]
[1] সুতরাং ইবরাহীম (আঃ)-কে জনসমক্ষে আনা হল এবং জিজ্ঞাসা করা হল। ইবরাহীম (আঃ) উত্তর দিলেন যে, এ কাজ তো বড় মূর্তিটিই করেছে। যদি এই ভাঙ্গা মূর্তিগুলো কথা বলতে পারে, তাহলে এদেরকেই জিজ্ঞেস কর। তাদের জন্য এ বক্রোক্তি আভাসে তিরস্কারস্বরূপ ব্যবহার করেছিলেন, যাতে তারা জানতে পারে যে, যারা কথা বলার ক্ষমতা রাখে না, বা কোন জিনিস সম্পর্কে কোন খবর রাখে না, তারা মাবূদ হতে পারে না; তাদেরকে সঠিক অর্থে ‘উপাস্য’ বলাই সঠিক নয়।। একটি সহীহ হাদীসে ইবরাহীম (আঃ)-এর ‘বরং ওদের মধ্যে এই বড়টিই এরূপ করেছে’ উক্তিটিকে তাঁর মিথ্যা বলে বর্ণনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, তিনি তিনটি মিথ্যা বলেছিলেন; দু’টি আল্লাহর জন্য এবং একটি নিজের জন্য। প্রথমঃ তাঁর কথা, আমি অসুস্থ। (অথচ তিনি অসুস্থ ছিলেন না।) দ্বিতীয়ঃ ‘বরং ওদের মধ্যে এই বড়টিই এরূপ করেছে।’ আর তৃতীয়ঃ আপন স্ত্রী সারাকে বোন বলা। (সহীহ বুখারী, আম্বিয়া অধ্যায়) সম্প্রতিকালের কিছু ব্যাখ্যাকারিগণ এই সহীহ হাদীসটিকে কুরআন-বিরোধী মনে করে অস্বীকার করেছেন এবং সহীহ মানার ব্যাপারে তাকীদ করলে তাঁরা সেটাকে অতিরঞ্জন ও বর্ণনার উপর অন্ধবিশ্বাস বলে মনে করেন। কিন্তু তাদের এ অভিমত সঠিক নয়।
নিঃসন্দেহে বাস্তবিকতার দিক দিয়ে এগুলিকে যেরূপ মিথ্যা বলা যায় না, ঠিক অনুরূপই বাহ্যিকভাবে এগুলিকে মিথ্যা থেকে খারিজ করাও যায় না। কারণ এগুলি আল্লাহর জন্যই বলা হয়েছিল। আর কোন পাপ কাজ আল্লাহর জন্য হতে পারে না। অবশ্য এটা তখনই সম্ভব যখন এগুলি বাহ্যিক দৃষ্টিতে মিথ্যা হলেও প্রকৃতপক্ষে মিথ্যা নয় বলে মেনে নেওয়া যায়। যেমন আদম (আঃ)-এর ব্যাপারে বলা হয়েছে যে, ‘আদম তার প্রতিপালকের অবাধ্য হল; ফলে সে পথভ্রষ্ট হয়ে গেল।’ অথচ তাঁর নিষিদ্ধ গাছ খাওয়ার কাজকে তাঁর ভুলে যাওয়া বা ইচ্ছাশক্তির দুর্বলতার পরিণতিও বলা হয়েছে। যার পরিষ্কার অর্থ হল, প্রত্যেক কাজের দু’টি দিক থাকতে পারে; একদিক ভালো এবং অপরদিক মন্দ। ইবরাহীম (আঃ)-এর উক্ত কথাগুলি একদিক দিয়ে বাহ্যিকরূপে মিথ্যা ছিল। কারণ তা ছিল বাস্তব ও সত্যের বিপরীত। মূর্তিগুলি তিনি নিজেই ভেঙ্গেছিলেন, কিন্তু ভাঙ্গার সম্পর্ক বড় মূর্তিটির দিকে জুড়লেন। কিন্তু যেহেতু তাঁর উদ্দেশ্য ছিল, (এই কাজের মাধ্যমে তাদেরকে জ্ঞান দেওয়া,) তাদেরকে তিরস্কার করা এবং তওহীদ সাব্যস্ত করা, সেহেতু বাস্তবতার দিক দিয়ে আমরা তা মিথ্যা না বলে, প্রমাণের পূর্ণতা দানের একটি কৌশল এবং মুশরিকদের মূর্খতা প্রতিপাদন ও প্রকাশ করার একটি যুক্তিময় পদ্ধতি বলব। এ ছাড়া হাদীসের মধ্যে এসব উক্তিকে মিথ্যা বলে আখ্যায়ন যে পরিস্থিতিতে করা হয়েছে তাও বিবেচ্য। আর তা হল হাশরের ময়দানে মহান আল্লাহর সামনে সুপারিশ করা হতে নিজেকে দূরে রাখা। যেহেতু পার্থিব জীবনে তিন জায়গায় তার ত্রুটি হয়ে গিয়েছিল। যদিও লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও বাস্তবতার দিক দিয়ে তা মিথ্যা (ত্রুটি) নয়। কিন্তু তিনি আল্লাহর মাহাত্ম্য ও প্রতাপের জন্য এত ভীত হবেন যে, এ কথাগুলির মিথ্যার সাথে বাহ্যিক সাদৃশ্য থাকার কারণে পাকড়াও যোগ্য মনে করবেন। অতএব হাদীসের উদ্দেশ্য ইবরাহীম (আঃ)-কে মিথ্যা সাব্যস্ত করা কখনই নয়; বরং উদ্দেশ্য হল, ঐ অবস্থার বিবরণ, যা কিয়ামতের দিন আল্লাহর ভয়ে তাঁর ঘটবে।
তখন তারা নিজদের দিকে ফিরে গেল* এবং একে অন্যকে বলতে লাগল, ‘তোমরাই তো যালিম’। আল-বায়ান
তখন তারা বিষয়টি নিয়ে মনে মনে চিন্তা করল এবং পরস্পর বলাবলি করল- তোমরা নিজেরাই তো অন্যায়কারী। তাইসিরুল
তখন তারা মনে মনে চিন্তা করে দেখল এবং একে অপরকে বলতে লাগলঃ তোমরাইতো সীমালংঘনকারী। মুজিবুর রহমান
So they returned to [blaming] themselves and said [to each other], "Indeed, you are the wrongdoers." Sahih International
* এ বাক্যের অর্থ ‘তারা মনে মনে চিন্তা করল তারা বিবেক বুদ্ধি খাটাল’ ও হতে পারে।
৬৪. তখন তারা নিজেরা পূনর্বিবেচনা করে দেখল এবং একে অন্যকে বলতে লাগল, তোমরাই তো যালেম৷
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৬৪) তখন তারা মনে মনে চিন্তা করে দেখল এবং একে অপরকে বলতে লাগল, ‘তোমরাই তো সীমালংঘনকারী।’[1]
[1] ইবরাহীম (আঃ)-এর এই উত্তরে তারা চিন্তায় পড়ল ও কোন উত্তর খুঁজে না পেয়ে একে অপরকে বলতে লাগল, আসলে তোমরাই তো সীমালংঘনকারী। যারা নিজেদের জীবন রক্ষা করতে ও ক্ষতি সাধনকারীর প্রতিরোধ করতে পারে না, তারা ইবাদতের যোগ্য কিভাবে হতে পারে? কেউ কেউ এই অর্থ বর্ণনা করেছেন যে, মূর্তিদের রক্ষা না করতে পারায় একে অপরকে ভৎর্সনা করল ও রক্ষা না করতে পারায় একে অপরকে অত্যাচারী বলল।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানঅতঃপর তাদের মাথা অবনত হয়ে গেল এবং বলল, ‘তুমি তো জানই যে, এরা কথা বলতে পারে না’। আল-বায়ান
তাদের মাথা হেঁট হয়ে গেল। (তখন তারা বলল) ‘তুমি তো জানই ওরা কথা বলতে পারে না।’ তাইসিরুল
অতঃপর তাদের মাথা নত হয়ে গেল এবং তারা বললঃ তুমিতো জানই যে, এরা কথা বলেনা। মুজিবুর রহমান
Then they reversed themselves, [saying], "You have already known that these do not speak!" Sahih International
৬৫. তারপর তাদের মাথা নত হয়ে গেল এবং তারা বলল, তুমি তো জানই যে, এরা কথা বলে না।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৬৫) অতঃপর তাদের মস্তক অবনত হয়ে গেল (এবং তারা বলল), ‘তুমি তো জানই যে, ওরা কথা বলতে পারে না।’[1]
[1] হে ইবরাহীম! তুমি আমাদেরকে কেন বলছ যে, ওদেরকে জিজ্ঞাসা কর; যদি ওরা বলতে পারে। অথচ তুমি ভালভাবেই জান যে,ওরা বলতে সক্ষম নয়।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানসে (ইবরাহীম) বলল, ‘তাহলে কি তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুর ইবাদাত কর, যা তোমাদের কোন উপকার করতে পারে না এবং কোন ক্ষতিও করতে পারে না’? আল-বায়ান
সে বলল, ‘তাহলে তোমরা কি আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুর ‘ইবাদাত কর যা না পারে তোমাদের কোন উপকার করতে, আর না পারে তোমাদের ক্ষতি করতে? তাইসিরুল
সে বললঃ তাহলে কি তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুর ইবাদাত কর যারা তোমাদের কোন উপকার করতে পারেনা, ক্ষতিও করতে পারেনা? মুজিবুর রহমান
He said, "Then do you worship instead of Allah that which does not benefit you at all or harm you? Sahih International
৬৬. ইবরাহীম বললেন, তবে কি তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুর ইবাদত কর যা তোমাদের কোন উপকার করতে পারে না এবং অপকারও করতে পারে না?
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৬৬) সে বলল, ‘তবে কি তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুর উপাসনা কর, যারা তোমাদের কোন উপকার করতে পারে না এবং ক্ষতিও করতে পারে না?
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ান‘ধিক তোমাদেরকে এবং আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যাদের ইবাদাত কর তাদেরকে! ‘তবুও কি তোমরা বুঝবে না’? আল-বায়ান
ধিক তোমাদের প্রতি আর আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যাদের ‘ইবাদাত কর তাদেরও প্রতি। এরপরও কি তোমরা বুঝবে না। তাইসিরুল
ধিক তোমাদেরকে এবং আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যাদের ইবাদাত কর তাদেরকে! তোমরা কি বুঝবেনা? মুজিবুর রহমান
Uff to you and to what you worship instead of Allah. Then will you not use reason?" Sahih International
৬৭. ধিক তোমাদের জন্য এবং আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যাদের ইবাদত কর তাদের জন্য! তবুও কি তোমরা অনুধাবন করবে না?
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৬৭) ধিক্ তোমাদেরকে এবং আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যাদের উপাসনা কর তাদেরকে! তবে কি তোমরা বুঝবে না।’[1]
[1] যখন তারা তাদের অক্ষমতার কথা স্বীকার করতে বাধ্য হল, তখন ইবরাহীম (আঃ) তাদের অজ্ঞতার উপর আফসোস করে বললেন, তোমরা আল্লাহকে ছেড়ে এমন অক্ষমদের ইবাদত কর?
তাফসীরে আহসানুল বায়ান