২ . আল-বাকারা
২:২৪৪ وَ قَاتِلُوۡا فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ وَ اعۡلَمُوۡۤا اَنَّ اللّٰهَ سَمِیۡعٌ عَلِیۡمٌ ﴿۲۴۴﴾

আর তোমরা আল্লাহর রাস্তায় লড়াই কর এবং জেনে রাখ নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। আল-বায়ান

তোমরা আল্লাহর পথে যুদ্ধ কর এবং জেনে রেখ, আল্লাহ নিশ্চয়ই সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। তাইসিরুল

তোমরা আল্লাহর পথে সংগ্রাম কর এবং জেনে রেখ যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ হচ্ছেন সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাতা। মুজিবুর রহমান

And fight in the cause of Allah and know that Allah is Hearing and Knowing. Sahih International

২৪৪. আর তোমরা আল্লাহর পথে যুদ্ধ কর এবং জেনে রাখ, নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৪৪) তোমরা আল্লাহর পথে সংগ্রাম কর এবং জেনে রাখ যে, আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২ . আল-বাকারা
২:২৪৫ مَنۡ ذَا الَّذِیۡ یُقۡرِضُ اللّٰهَ قَرۡضًا حَسَنًا فَیُضٰعِفَهٗ لَهٗۤ اَضۡعَافًا كَثِیۡرَۃً ؕ وَ اللّٰهُ یَقۡبِضُ وَ یَبۡصُۜطُ ۪ وَ اِلَیۡهِ تُرۡجَعُوۡنَ ﴿۲۴۵﴾

কে আছে, যে আল্লাহকে উত্তম ঋণ দেবে, ফলে তিনি তার জন্য বহু গুণে বাড়িয়ে দেবেন? আর আল্লাহ সংকীর্ণ করেন ও প্রসারিত করেন এবং তাঁরই নিকট তোমাদেরকে ফিরানো হবে। আল-বায়ান

এমন ব্যক্তি কে আছে যে আল্লাহকে উত্তম কর্জ প্রদান করবে? তাহলে তার সেই কর্জকে তার জন্য আল্লাহ বহু গুণ বর্ধিত করে দেবেন এবং আল্লাহই সীমিত ও প্রসারিত ক’রে থাকেন এবং তাঁর দিকেই তোমরা ফিরে যাবে। তাইসিরুল

কে সে, যে আল্লাহকে উত্তম ঋণদান করে? অনন্তর তিনি তাকে দ্বিগুণ, বহুগুণ বর্ধিত করেন এবং আল্লাহই (মানুষের আর্থিক অবস্থাকে) কৃচ্ছ বা স্বচ্ছল করে থাকেন এবং তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। মুজিবুর রহমান

Who is it that would loan Allah a goodly loan so He may multiply it for him many times over? And it is Allah who withholds and grants abundance, and to Him you will be returned. Sahih International

২৪৫. কে সে, যে আল্লাহকে করযে হাসানা প্রদান করবে? তিনি তার জন্য তা বহুগুণ বৃদ্ধি করবেন(১)। আর আল্লাহ সংকুচিত ও সম্প্রসারিত করেন এবং তাঁর দিকেই তোমাদেরকে প্রত্যাবর্তিত করা হবে।

(১) কর্জ বা ঋণ দান করলে তার বৃদ্ধি করার কথা এক হাদীসে এসেছে যে, যে ব্যক্তি তার উত্তম সম্পদ থেকে খেজুর সমপরিমাণ সদকা করবে, আল্লাহ উত্তম সম্পদ ছাড়া কবুল করেন না, আল্লাহ সে সম্পদ ডান হাতে গ্রহণ করেন। অতঃপর সদকাকারীর জন্য তা রক্ষণাবেক্ষণ করতে থাকেন, যেমনি তোমাদের কেউ তার ঘোড়া শাবককে লালন-পালন করে পাহাড়সম বড় হওয়া পর্যন্ত। [বুখারীঃ ১৪১০] আল্লাহকে ঋণ দেয়ার এ অর্থও বলা হয়েছে যে, তার বান্দাদেরকে ঋণ দেয়া এবং তাদের অভাব পূরণ করা। তাই হাদীসে অভাবীদেরকে ঋণ দেয়ারও অনেক ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেনঃ কোন একজন মুসলিম অন্য মুসলিমকে দু’বার ঋণ দিলে এ ঋণদান আল্লাহর পথে সে পরিমাণ সম্পদ একবার সদকা করার সমতুল্য'। [ইবনে মাজাহঃ ২৪৩০] রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেনঃ “তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই উত্তম যে তার (ঋণের) হককে উত্তমরূপে পরিশোধ করে। তবে, যদি অতিরিক্ত দেয়ার শর্ত করা হয়, তাহলে তা সুদ এবং হারাম বলে গণ্য হবে। [বুখারীঃ ২৬০৬]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৪৫) কে সে, যে আল্লাহকে উত্তম ঋণ প্রদান করবে?[1] আল্লাহ তা তার জন্য বহুগুণে বৃদ্ধি করবেন। আল্লাহই জীবিকা সংকুচিত ও সম্প্রসারিত করেন। আর তোমরা তাঁরই নিকট প্রত্যানীত হবে।

[1] قَرْضٌ حَسَنٌ (উত্তম ঋণ) প্রদান করার অর্থ আল্লাহর পথে এবং জিহাদে মাল ব্যয় করা। অর্থাৎ, জানের মত মালের কুরবানী দিতেও দ্বিধা করো না। রুযীর প্রসারণ ও সংকোচনের এখতিয়ার কেবল আল্লাহরই হাতে। তিনি উভয়েরই মাধ্যমে তোমাদেরকে পরীক্ষা করে থাকেন; কখনো রুযী হ্রাস করে এবং কখনো তার প্রসার ঘটিয়ে। অতএব আল্লাহর পথে ব্যয় করলে কমে না, বরং মহান আল্লাহ এতে অনেক অনেক বৃদ্ধি দান করেন। কখনো বাহ্যিকভাবে, আবার কখনো অভ্যন্তরীণভাবে মালে বরকত দিয়ে। আর আখেরাতে যে বৃদ্ধি হবে তা অবশ্য অবশ্যই বিস্ময়কর হবে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২ . আল-বাকারা
২:২৪৬ اَلَمۡ تَرَ اِلَی الۡمَلَاِ مِنۡۢ بَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ مِنۡۢ بَعۡدِ مُوۡسٰی ۘ اِذۡ قَالُوۡا لِنَبِیٍّ لَّهُمُ ابۡعَثۡ لَنَا مَلِكًا نُّقَاتِلۡ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ ؕ قَالَ هَلۡ عَسَیۡتُمۡ اِنۡ كُتِبَ عَلَیۡكُمُ الۡقِتَالُ اَلَّا تُقَاتِلُوۡا ؕ قَالُوۡا وَ مَا لَنَاۤ اَلَّا نُقَاتِلَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ وَ قَدۡ اُخۡرِجۡنَا مِنۡ دِیَارِنَا وَ اَبۡنَآئِنَا ؕ فَلَمَّا كُتِبَ عَلَیۡهِمُ الۡقِتَالُ تَوَلَّوۡا اِلَّا قَلِیۡلًا مِّنۡهُمۡ ؕ وَ اللّٰهُ عَلِیۡمٌۢ بِالظّٰلِمِیۡنَ ﴿۲۴۶﴾

তুমি কি মূসার পর বনী ইসরাঈলের প্রধানদেরকে দেখনি? যখন তারা তাদের নবীকে বলেছিল, ‘আমাদের জন্য একজন রাজা পাঠান, তাহলে আমরা আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করব’। সে বলল, ‘এমন কি হবে যে, যদি তোমাদের উপর লড়াই আবশ্যক করা হয়, তোমরা লড়াই করবে না’? তারা বলল, আমাদের কী হয়েছে যে, আমরা আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করব না, অথচ আমাদেরকে আমাদের গৃহসমূহ থেকে বের করা হয়েছে এবং আমাদের সন্তানদের থেকে (বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে)’? অতঃপর যখন তাদের উপর লড়াই আবশ্যক করা হল, তখন তাদের মধ্য থেকে স্বল্প সংখ্যক ছাড়া তারা বিমুখ হল। আর আল্লাহ যালিমদের সম্পর্কে সম্যক অবগত। আল-বায়ান

তুমি কি মূসার পরবর্তী বানী ইসরাঈলের প্রধানদের প্রতি লক্ষ্য করনি? তারা তাদের নাবীকে বলেছিল, ‘আমাদের জন্য একজন বাদশাহ ঠিক করুন, যাতে আমরা আল্লাহর পথে জিহাদ করি’। নির্দেশ হল, ‘এমন সম্ভাবনা আছে কি যে, যদি তোমাদের প্রতি জিহাদের হুকুম দেয়া হয় তবে তোমরা জিহাদ করবে না’? তারা বলল, ‘আমরা কী ওজরে আল্লাহর পথে জিহাদ করব না, যখন আমরা আমাদের গৃহ ও সন্তানাদি হতে বহিস্কৃত হয়েছি’। অতঃপর যখন তাদের প্রতি জিহাদের হুকুম হল, তখন তাদের অল্প সংখ্যক লোক ছাড়া সকলেই ফিরে দাঁড়াল এবং আল্লাহ যালিমদেরকে খুব ভালভাবেই জানেন। তাইসিরুল

তুমি কি মূসার পরে ইসরাঈল বংশীয় প্রধানদের প্রতি লক্ষ্য করনি? নিজেদের এক নাবীকে যখন তারা বলেছিলঃ আমাদের জন্য একজন রাজা নিযুক্ত করে দাও (যেন) আমরা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করতে পারি। সে বলেছিলঃ এটা কি সম্ভবপর নয় যে, যখন তোমাদের উপর যুদ্ধ বিধিবদ্ধ হয়ে যাবে তখন তোমরা যুদ্ধ করবেনা? তারা বলেছিলঃ আমরা যুদ্ধ করবনা এটা কিরূপে (সম্ভব), অথচ নিজেদের আবাস হতে ও স্বজনদের নিকট হতে আমরা বহিস্কৃত হয়েছি? অনন্তর যখন তাদের উপর যুদ্ধ বিধিবদ্ধ হল তখন তাদের অল্প সংখ্যক ব্যতীত সবাই পশ্চাৎপদ হয়ে পড়ল এবং অত্যাচারীদেরকে আল্লাহ সম্যক রূপে অবগত আছেন। মুজিবুর রহমান

Have you not considered the assembly of the Children of Israel after [the time of] Moses when they said to a prophet of theirs, "Send to us a king, and we will fight in the way of Allah "? He said, "Would you perhaps refrain from fighting if fighting was prescribed for you?" They said, "And why should we not fight in the cause of Allah when we have been driven out from our homes and from our children?" But when fighting was prescribed for them, they turned away, except for a few of them. And Allah is Knowing of the wrongdoers. Sahih International

২৪৬. আপনি কি মূসার পরবর্তী ইসরাঈল-বংশীয় নেতাদের দেখেননি? তারা যখন তাদের নবীকে বলেছিল, আমাদের জন্য একজন রাজা নিযুক্ত কর যাতে আমরা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করতে পারি', তিনি বললেন, ‘এমন তো হবে না যে, তোমাদের প্রতি যুদ্ধের বিধান দেয়া হলে তখন আর তোমরা যুদ্ধ করবে না? তারা বলল, আমরা যখন নিজেদের আবাসভূমি ও স্বীয় সন্তান-সন্ততি হতে বহিস্কৃত হয়েছি, তখন আল্লাহর পথে কেন যুদ্ধ করবো না’? অতঃপর যখন তাদের প্রতি যুদ্ধের বিধান দেয়া হলো তখন তাদের কিছু সংখ্যক ছাড়া সবাই পৃষ্ঠ প্রদর্শন করল আর আল্লাহ যালিমদের সম্পর্কে সবিশেষ জ্ঞানী।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৪৬) তুমি কি মূসার পরবর্তী বনী-ইস্রাঈল প্রধানদের দেখনি?[1] যখন তারা নিজেদের নবীকে বলেছিল, ‘আমাদের জন্য একজন রাজা নিযুক্ত কর,[2] যাতে আমরা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করতে পারি।’ সে বলল, ‘বোধ হয় যদি তোমাদের প্রতি যুদ্ধের বিধান দেওয়া হয়, তাহলে তোমরা তা করবে না?’ তারা বলল, ‘আমরা যখন আপন ঘর-বাড়ি ও সন্তান-সন্ততি থেকে বহিষ্কৃত হয়েছি, তখন আল্লাহর পথে যুদ্ধ করব না কেন?’ অতঃপর যখন তাদেরকে যুদ্ধের বিধান দেওয়া হল, তখন তাদের স্বল্পসংখ্যক ব্যতীত অধিকাংশই পৃষ্ঠ প্রদর্শন করল। আর আল্লাহ অপরাধিগণ সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত।

[1] مَلأ কোন জাতির এমন সম্মানিত ও সম্ব্রান্ত লোকদেরকে বলা হয়, যারা বিশেষ উপদেষ্টা ও নেতা হন। যাদেরকে দেখলে চোখ ও অন্তর প্রতাপে ভরে যায়। مَلأ এর আভিধানিক অর্থ ভরে যাওয়া। (আইসারুত্ তাফাসীর) যে নবীর কথা (আয়াতে) উল্লেখ হয়েছে, তার নাম ‘শামবীল’ বলা হয়। ইবনে কাসীর ও অন্যান্য মুফাসসিরগণ যে ঘটনা বর্ণনা করেছেন তার সার কথা হল, বানী-ইস্রাঈল মূসা (আঃ)-এর পর কিছুকাল পর্যন্ত সঠিক পথেই ছিল। তারপর তাদের মধ্যে বিমুখতা এল। দ্বীনে নতুন নতুন বিদআত আবিষ্কার করল। এমন কি মূর্তিপূজাও আরম্ভ করে দিল। নবীগণ তাদেরকে বাধা দিলেন, কিন্তু তারা অবাধ্যতা ও শিরক থেকে বিরত হল না। ফলে আল্লাহ তাদের শত্রুদেরকে তাদের উপর আধিপত্য দান করলেন। তারা ওদের অঞ্চল ওদের কাছ থেকে কেড়ে নিল এবং ওদের মধ্য থেকে বহু সংখ্যক মানুষকে বন্দী করল। তাদের মধ্যে নবী আগমনের ধারাবাহিকতাও বন্ধ হয়ে গেল। শেষে কিছু লোকের দু’আয় শামবীল নবী (আঃ) জন্ম লাভ করলেন। তিনি দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ শুরু করলেন। তারা নবীর কাছে দাবী পেশ করল যে, আমাদের জন্য একজন বাদশাহ নির্বাচিত করে দিন; আমরা তার নেতৃত্বে শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব। নবী তাদের অতীত চরিত্রের আলোকে বললেন, তোমরা দাবী তো করছ, কিন্তু আমার অনুমান তোমরা তোমাদের কথার উপর অটল থাকবে না। সুতরাং সেই রকমই হল, যে রকম কুরআন বর্ণনা করেছে।

[2] নবী বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও রাজা নিযুক্ত করার দাবী পেশ করা, রাজতন্ত্র বৈধতার দলীল। কেননা, যদি রাজতন্ত্র বৈধ না হত, তাহলে মহান আল্লাহ তাদের দাবীকে প্রত্যাখ্যান করতেন। কিন্তু আল্লাহ তাদের দাবীকে প্রত্যাখ্যান করেননি, বরং ত্বালূতকে তাদের জন্য রাজা নিযুক্ত করে দিলেন; যাঁর কথা পরে আসছে। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, রাজা যদি লাগামহীন স্বেচ্ছাচারী না হয়ে আল্লাহর বিধি-বিধানের প্রতি যত্নবান এবং ন্যায়পরায়ণ হন, তাহলে তাঁর রাজত্ব কেবল বৈধই নয়, বরং কাম্য এবং বাঞ্ছনীয়ও। (অধিক জানার জন্য দ্রষ্টব্যঃ সূরা মায়েদা ২০নং আয়াতের টীকা)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২ . আল-বাকারা
২:২৪৭ وَ قَالَ لَهُمۡ نَبِیُّهُمۡ اِنَّ اللّٰهَ قَدۡ بَعَثَ لَكُمۡ طَالُوۡتَ مَلِكًا ؕ قَالُوۡۤا اَنّٰی یَكُوۡنُ لَهُ الۡمُلۡكُ عَلَیۡنَا وَ نَحۡنُ اَحَقُّ بِالۡمُلۡكِ مِنۡهُ وَ لَمۡ یُؤۡتَ سَعَۃً مِّنَ الۡمَالِ ؕ قَالَ اِنَّ اللّٰهَ اصۡطَفٰىهُ عَلَیۡكُمۡ وَ زَادَهٗ بَسۡطَۃً فِی الۡعِلۡمِ وَ الۡجِسۡمِ ؕ وَ اللّٰهُ یُؤۡتِیۡ مُلۡكَهٗ مَنۡ یَّشَآءُ ؕ وَ اللّٰهُ وَاسِعٌ عَلِیۡمٌ ﴿۲۴۷﴾

আর তাদেরকে তাদের নবী বলল, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের জন্য তালূতকে রাজারূপে পাঠিয়েছেন। তারা বলল, ‘আমাদের উপর কীভাবে তার রাজত্ব হবে, অথচ আমরা তার চেয়ে রাজত্বের অধিক হকদার? আর তাকে সম্পদের প্রাচুর্যও দেয়া হয়নি’। সে বলল, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাকে তোমাদের উপর মনোনীত করেছেন এবং তাকে জ্ঞানে ও দেহে অনেক বাড়িয়ে দিয়েছেন। আর আল্লাহ যাকে চান, তাকে তাঁর রাজত্ব দেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ’। আল-বায়ান

তাদেরকে তাদের নাবী বলল, আল্লাহ যথার্থই তালুতকে তোমাদের বাদশাহ ঠিক করেছেন। তারা বলল, ‘আমাদের উপর কী প্রকারে তার রাজক্ষমতা মিলতে পারে যখন তার চেয়ে আমরাই রাজশক্তির অধিক যোগ্যপাত্র আর তাকে আর্থিক স্বচ্ছলতাও প্রদান করা হয়নি’! নাবী বলল, আল্লাহ তাকেই তোমাদের উপর পছন্দ করেছেন এবং তাকে জ্ঞানে ও দেহে সমৃদ্ধ করেছেন, আল্লাহ যাকে ইচ্ছে নিজের রাজ্য দান করেন, বস্তুতঃ আল্লাহ পর্যাপ্ত দাতা ও প্রজ্ঞাময়। তাইসিরুল

এবং তাদের নাবী তাদেরকে বলেছিলঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তালূতকে তোমাদের জন্য রাজা রূপে নির্বাচিত করেছেন; তারা বললঃ আমাদের উপর তালূতের রাজত্ব কি রূপে (সঙ্গত) হতে পারে? রাজত্বে তার অপেক্ষা আমাদেরই স্বত্ব অধিক, পক্ষান্তরে যথেষ্ট আর্থিক স্বচ্ছলতাও তার নেই; তিনি বললেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের জন্য তাকেই মনোনীত করেছেন এবং তাকে প্রচুর জ্ঞান ও দৈহিক শক্তি দান করেছেন, আল্লাহ তাঁর রাজত্ব যাকে ইচ্ছা প্রদান করেন এবং আল্লাহ হচ্ছেন দানশীল, সর্বজ্ঞাতা। মুজিবুর রহমান

And their prophet said to them, "Indeed, Allah has sent to you Saul as a king." They said, "How can he have kingship over us while we are more worthy of kingship than him and he has not been given any measure of wealth?" He said, "Indeed, Allah has chosen him over you and has increased him abundantly in knowledge and stature. And Allah gives His sovereignty to whom He wills. And Allah is all-Encompassing [in favor] and Knowing." Sahih International

২৪৭. আর তাদের নবী তাদেরকে বলেছিলেন, ‘আল্লাহ অবশ্যই তালুতকে তোমাদের রাজা করে পাঠিয়েছেন। তারা বলল, আমাদের উপর তার রাজত্ব কিভাবে বেশী হকদার এবং তাকে প্রচুর ঐশ্বর্যও দেয়া হয়নি!' তিনি বললেন, আল্লাহ অবশ্যই তাকে তোমাদের জন্য মনোনীত করেছেন এবং তিনি তাকে জ্ঞানে ও দেহে সমৃদ্ধ করেছেন। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছে স্বীয় রাজত্ব দান করেন। আর আল্লাহ সর্বব্যাপী প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৪৭) তাদের নবী তাদেরকে বলেছিল, আল্লাহ তালূতকে তোমাদের রাজা নিযুক্ত করেছেন। তারা বলল, সে কিরূপে আমাদের উপর রাজা হতে পারে, অথচ রাজা হওয়ার (জন্য) আমরা তার চেয়ে অধিক হকদার; তাছাড়া তাকে আর্থিক সচ্ছলতাও দেওয়া হয়নি। নবী বলল, আল্লাহই তাকে মনোনীত করেছেন এবং তিনি তাকে (সকল প্রকার) জ্ঞানে এবং দেহে (পটুতায়) সমৃদ্ধ করেছেন।[1] বস্তুতঃ আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাঁর রাজত্ব দান করেন। আর আল্লাহ বিশাল অনুগ্রহশীল, প্রজ্ঞাময়।

[1] ত্বালূত সেই বংশের ছিলেন না, যে বংশ থেকে ধারাবাহিকতার সাথে বানী-ইস্রাঈলদের মধ্যে রাজাদের আগমন ঘটেছে। তিনি দরিদ্র ও সাধারণ একজন সৈনিক ছিলেন। তাই তারা অভিযোগ করল। নবী বললেন, এটা তো আমার নির্বাচন নয়, বরং মহান আল্লাহ তাঁকে নির্বাচন করেছেন। তাছাড়া নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব করার জন্য সম্পদের চেয়ে জ্ঞান-বুদ্ধি ও দৈহিক শক্তির প্রয়োজন বেশী এবং এতে (জ্ঞান-বুদ্ধি ও দৈহিক শক্তিতে) তিনি তোমাদের সবার ঊর্ধ্বে। আর এই কারণেই মহান আল্লাহ তাঁকে এই পদের জন্য মনোনীত করে নিয়েছেন। তিনি বড়ই অনুগ্রহশীল। তিনি যাকে ইচ্ছা স্বীয় দয়া ও অনুগ্রহদানে ধন্য করেন। তিনি সর্ব বিষয়ে অবগত। অর্থাৎ, তিনি জানেন যে, রাজত্ব পাওয়ার কে যোগ্য এবং কে অযোগ্য। (মনে হয় যখন তাদেরকে বলা হল যে, এই মনোনয়ন মহান আল্লাহ কর্তৃক, তখন তারা সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আরো কোন নিদর্শন কামনা করে, তাই পরের আয়াতে আরো একটি নিদর্শনের বর্ণনা এসেছে।)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২ . আল-বাকারা
২:২৪৮ وَ قَالَ لَهُمۡ نَبِیُّهُمۡ اِنَّ اٰیَۃَ مُلۡكِهٖۤ اَنۡ یَّاۡتِیَكُمُ التَّابُوۡتُ فِیۡهِ سَكِیۡنَۃٌ مِّنۡ رَّبِّكُمۡ وَ بَقِیَّۃٌ مِّمَّا تَرَكَ اٰلُ مُوۡسٰی وَ اٰلُ هٰرُوۡنَ تَحۡمِلُهُ الۡمَلٰٓئِكَۃُ ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِكَ لَاٰیَۃً لَّكُمۡ اِنۡ كُنۡتُمۡ مُّؤۡمِنِیۡنَ ﴿۲۴۸﴾

আর তাদেরকে তাদের নবী বলল, নিশ্চয় তার রাজত্বের নিদর্শন এই যে, তোমাদের নিকট তাবূত* আসবে, যাতে থাকবে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে প্রশান্তি এবং মূসার পরিবার ও হারূনের পরিবার যা রেখে গিয়েছে তার অবশিষ্ট, যা বহন করে আনবে ফেরেশতাগণ। নিশ্চয় তাতে রয়েছে তোমাদের জন্য নিদর্শন, যদি তোমরা মুমিন হও। আল-বায়ান

তাদের নাবী তাদেরকে বলল, তালুতের বাদশাহ হওয়ার নিদর্শন এই যে, তোমাদের নিকট সিন্দুক আসবে, যার মধ্যে তোমাদের প্রতিপালকের শান্তি বাণী রয়েছে এবং সেই অবশিষ্ট জিনিস, যা মূসা ও হারূন সম্প্রদায় রেখে গেছে, ওটা ফেরেশতাগণ উঠিয়ে আনবে, এতে তোমাদের জন্য নিদর্শন আছে যদি তোমরা মু’মিন হও। তাইসিরুল

এবং তাদের নাবী তাদের বলেছিলঃ তার রাজত্বের নিদর্শন এই যে, তোমাদের নিকট সিন্দুক সমাগত হবে, যাতে থাকবে তোমাদের রবের নিকট হতে শান্তি এবং মূসা ও হারুনের পরিবারের (পরিত্যক্ত) কিছু সামগ্রী, মালাইকা/ফেরেশতা ওটা বহন করে আনবে, তোমরা যদি বিশ্বাস স্থাপনকারী হও তাহলে ওর মধ্যে নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য নিদর্শন রয়েছে। মুজিবুর রহমান

And their prophet said to them, "Indeed, a sign of his kingship is that the chest will come to you in which is assurance from your Lord and a remnant of what the family of Moses and the family of Aaron had left, carried by the angels. Indeed in that is a sign for you, if you are believers." Sahih International

*অর্থ সিন্দুক। এতে বনী ইসরাঈলের কিছু নিদর্শন ছিল। তাই তারা এটিকে পবিত্র মনে করত এবং যুদ্ধের সময় সামনে রাখত।

২৪৮. আর তাদের নবী তাদেরকে বলেছিলেন, তার রাজত্বের নিদর্শন এই যে, তোমাদের নিকট তাবূত(১) আসবে যাতে তোমাদের রব-এর নিকট হতে প্রশান্তি এবং মুসা ও হারূন বংশীয়গণ যা পরিত্যাগ করেছে তার অবশিষ্টাংশ থাকবে; ফেরেশতাগণ তা বহন করে আনবে। তোমরা যদি মুমিন হও তবে নিশ্চয় তোমাদের জন্য এতে নিদর্শন রয়েছে।

(১) বনী ইসরাঈলদের মধ্যে একটি সিন্দুক পূর্ব থেকেই ছিল, তা বংশানুক্রমে চলে আসছিল। তাতে মূসা আলাইহিস সালাম ও অন্যান্য নবীগণের পরিত্যক্ত কিছু বরকতপূর্ণ বস্তুসামগ্রী রক্ষিত ছিল। বনী ইসরাঈলরা যুদ্ধের সময় এ সিন্দুকটিকে সামনে রাখত, আল্লাহ্ তা'আলা তাদেরকে বিজয়ী করতেন। জালুত ইসরাঈল-বংশধরদেরকে পরাজিত করে এ সিন্দুকটি নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আল্লাহ যখন এ সিন্দুক ফিরিয়ে দেয়ার ইচ্ছা করলেন, তখন অবস্থা দাঁড়ালো এই যে, কাফেররা যেখানেই সিন্দুকটি রাখে, সেখানেই দেখা দেয় মহামারী ও অন্যান্য বিপদাপদ। এমনিভাবে পাঁচটি শহর ধ্বংস হয়ে যায়। অবশেষে অতিষ্ঠ হয়ে দুটি গরুর উপর সেটি উঠিয়ে হাকিয়ে দিল। ফেরেশতাগণ গরুগুলোকে তাড়া করে এনে তালুতের দরজায় পৌছে দিলেন। ইসরাঈল-বংশধররা এ নিদর্শন দেখে তালুতের রাজত্বের প্রতি আস্থা স্থাপন করল এবং তালুত জালুতের উপর আক্রমণ পরিচালনা করলেন। [তাফসীরে বাগভী: ১/২৩০, আল-মুহাররারুল ওয়াজীয: ১/৩৩৩]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৪৮) তাদের নবী তাদেরকে আরও বলল, নিশ্চয় তাঁর রাজত্বের সুস্পষ্ট নিদর্শন এই যে, তোমাদের নিকট একটি সিন্দুক আসবে;[1] যাতে আছে তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য প্রশান্তি এবং কিছু পরিত্যক্ত জিনিস যা মূসা ও হারুনের বংশধরগণ রেখে গেছে; ফিরিশতাগণ সেটি বহন করে আনবে। নিশ্চয় এতে তোমাদের জন্য নিদর্শন রয়েছে, যদি তোমরা বিশ্বাসী হও।

[1] সিন্দুক অর্থাৎ, তাবূত বা শবাধার। تابوت শব্দটি توب ধাতু থেকে গঠিত। যার অর্থ হল, প্রত্যাবর্তন করা। যেহেতু বানী-ইস্রাঈল বরকত অর্জনের জন্য এর প্রতি প্রত্যাবর্তন করত, তাই এর নাম তাবূত রাখা হয়। (ফাতহুল ক্বাদীর) এই সিন্দুকে মূসা এবং হারূন (আলাইহিমাসসালাম)-এর বরকতময় কিছু জিনিস ছিল। এই সিন্দুকও তাঁদের শত্রুরা তাঁদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে গিয়েছিল। মহান আল্লাহ নিদর্শনস্বরূপ ফিরিশতাদের মাধ্যমে এই সিন্দুক ত্বালুতের দরজায় পৌঁছিয়ে দিলেন। তা দেখে বানী-ইস্রাঈল আনন্দিতও হল এবং মেনেও নিল যে, এটি ত্বালূতের রাজত্ব প্রমাণের জন্য আল্লাহ কর্তৃক নিদর্শন। অনুরূপ মহান আল্লাহ এটিকে তাদের জন্য একটি অলৌকিক নিদর্শন এবং বিজয় লাভের ও তাদের মনের প্রশান্তির উপকরণ করেন। মনের প্রশান্তির অর্থই হচ্ছে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর খাস বান্দাদের উপর এমন বিশেষ সাহায্যের অবতরণ, যার কারণে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ময়দানে যখন বড় বড় সিংহের মত বীরদের অন্তর কেঁপে ওঠে, তখন ঈমানদারদের অন্তর শত্রুর ভয় থেকে শূন্য এবং বিজয় ও সফলতা অর্জনের আশায় পরিপূর্ণ থাকে।

এই কাহিনী থেকে জানা যায় যে, আম্বিয়া ও সালেহীনদের বরকতময় জিনিসের মধ্যে নিঃসন্দেহে আল্লাহর অনুমতিক্রমে গুরুত্ব ও উপকারিতা আছে। তবে শর্ত হল এই যে, তা সত্যপক্ষেই বরকতময় (এবং নবীদের ব্যবহূত) হতে হবে; যেমন উক্ত তাবূতে নিঃসন্দেহে মূসা ও হারূন আলাইহিমাস সালামের কিছু বরকতময় জিনিস রাখা ছিল। বলা বাহুল্য, মিথ্যা দাবীর ফলে কোন জিনিস বরকতময় হয়ে যায় না। যেমন বর্তমানে বরকতময় জিনিসের নামে কয়েক জায়গায় বিভিন্ন জিনিস রাখা আছে, অথচ ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে তার সত্যতার কোন প্রমাণ মিলে না। অনুরূপ মনগড়াভাবে কোন জিনিসকে বরকতময় বানিয়ে নিলে, তাও কোন উপকারে আসে না। যেমন কিছু লোক মহানবী (সাঃ)-এর বরকতময় জুতার মূর্তি বানিয়ে নিজের পাশে রাখে অথবা বাড়ির দেওয়ালে টাঙিয়ে রাখে অথবা বিশেষ পদ্ধতিতে তা ব্যবহার করার মাধ্যমে নিজেদের প্রয়োজন পূর্ণ ও বিপদ দূর হবে বলে মনে করে থাকে। এইভাবে কবরে বুযুর্গদের নামে নিবেদিত নযর ও নিয়াযের জিনিসকে এবং তবরুকের খানাকে অনেকে বরকতময় মনে করে থাকে। অথচ এ হল গায়রুল্লাহর নামে নিবেদন ও অমূলক বিশ্বাস; যা শিরকের আওতাভুক্ত। এই শ্রেণীর খাবার খাওয়া নিঃসন্দেহে হারাম। কোন কোন কবরের গোসল দেওয়া হয় এবং তার পানিকে বরকতময় মনে করা হয়। অথচ কবরের গোসল দান কা’বাগৃহের গোসল দেওয়ার নকল; যা বৈধই নয়। পক্ষান্তরে গোসলে ব্যবহূত এ নোংরা পানি কিভাবে বরকতময় হতে পারে? বলাই বাহুল্য যে, এ শ্রেণীর অমূলক বিশ্বাস ও বরকত বা তবরুকের ধারণা ভ্রান্ত ও শিরক; ইসলামী শরীয়তে এর কোন ভিত্তি নেই।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২ . আল-বাকারা
২:২৪৯ فَلَمَّا فَصَلَ طَالُوۡتُ بِالۡجُنُوۡدِ ۙ قَالَ اِنَّ اللّٰهَ مُبۡتَلِیۡكُمۡ بِنَهَرٍ ۚ فَمَنۡ شَرِبَ مِنۡهُ فَلَیۡسَ مِنِّیۡ ۚ وَ مَنۡ لَّمۡ یَطۡعَمۡهُ فَاِنَّهٗ مِنِّیۡۤ اِلَّا مَنِ اغۡتَرَفَ غُرۡفَۃًۢ بِیَدِهٖ ۚ فَشَرِبُوۡا مِنۡهُ اِلَّا قَلِیۡلًا مِّنۡهُمۡ ؕ فَلَمَّا جَاوَزَهٗ هُوَ وَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا مَعَهٗ ۙ قَالُوۡا لَا طَاقَۃَ لَنَا الۡیَوۡمَ بِجَالُوۡتَ وَ جُنُوۡدِهٖ ؕ قَالَ الَّذِیۡنَ یَظُنُّوۡنَ اَنَّهُمۡ مُّلٰقُوا اللّٰهِ ۙ كَمۡ مِّنۡ فِئَۃٍ قَلِیۡلَۃٍ غَلَبَتۡ فِئَۃً كَثِیۡرَۃًۢ بِاِذۡنِ اللّٰهِ ؕ وَ اللّٰهُ مَعَ الصّٰبِرِیۡنَ ﴿۲۴۹﴾

অতঃপর যখন তালূত সৈন্যবাহিনী নিয়ে বের হল, তখন সে বলল, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে একটি নদী দ্বারা পরীক্ষা করবেন। অতএব, যে তা হতে পান করবে, সে আমার দলভুক্ত নয়। আর যে তা খাবে না, তাহলে নিশ্চয় সে আমার দলভুক্ত। তবে যে তার হাত দিয়ে এক আজলা পরিমাণ খাবে, সে ছাড়া; কিন্তু তাদের মধ্য থেকে স্বল্পসংখ্যক ছাড়া তা থেকে তারা পান করল। অতঃপর যখন সে ও তার সাথি মুমিনগণ তা অতিক্রম করল, তারা বলল, ‘আজ আমাদের জালূত ও তার সৈন্যবাহিনীর সাথে লড়াই করার ক্ষমতা নেই’। যারা দৃঢ় ধারণা রাখত যে, তারা আল্লাহর সাথে মিলিত হবে, তারা বলল, ‘কত ছোট দল আল্লাহর হুকুমে বড় দলকে পরাজিত করেছে’! আর আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন। আল-বায়ান

অতঃপর যখন তালুত সৈন্যসহ রওয়ানা হল, বলল, ‘আল্লাহ একটা নদী দ্বারা তোমাদের পরীক্ষা করবেন, মূলতঃ যে কেউ ওটার পানি পান করবে সে ব্যক্তি আমার দলভুক্ত নয় আর যে তা খাবে না, সে নিশ্চয়ই আমার দলভুক্ত হবে, কিন্তু যে এক অঞ্জলি পানি নিবে সেও (আমার দলভুক্ত)’। অতঃপর অতি অল্প সংখ্যক ছাড়া তারা সকলেই তাত্থেকে পান করল। এরপর তালুত এবং তার সাথী মু’মিনগণ নদী পার হয়ে বলল, ‘আজ জ্বালুত ও তার সৈন্যদের সাথে যুদ্ধ করার শক্তি আমাদের নেই। কিন্তু যাদের এ ধারণা ছিল যে, তাদেরকে আল্লাহর সামনে হাজির হতে হবে তারা বলল, ‘আল্লাহর হুকুমে বহু ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র দল বৃহৎ দলের উপর জয়যুক্ত হয়েছে’। আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন। তাইসিরুল

অনন্তর যখন তালূত সৈন্যদলসহ বহির্গত হয়েছিল তখন সে বলেছিল, নিশ্চয়ই আল্লাহ একটি নদী দ্বারা তোমাদেরকে পরীক্ষা করবেন, ওটা হতে যে পান করবে সে আমার দলভুক্ত নয় এবং যে স্বীয় হস্ত দ্বারা অঞ্জলি পূর্ণ করে নিবে এবং তদ্ব্যতীত সে আর আস্বাদন করবেনা সে নিশ্চয়ই আমার লোক; কিন্তু তাদের মধ্যে অল্প সংখ্যক ব্যতীত অন্য সবাই সেই নদীর পানি পান করল, অতঃপর যখন সে ও তার সঙ্গী বিশ্বাস স্থাপনকারীগণ নদী অতিক্রম করে গেল তখন তারা বললঃ জালুত ও তার সেনাবাহিনীর মুকাবিলা করার শক্তি আজ আমাদের নেই; পক্ষান্তরে যারা বিশ্বাস করত যে, তাদেরকে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করতে হবে তারা বললঃ আল্লাহর হুকুমে কত ক্ষুদ্র দল কত বৃহৎ দলকে পরাজিত করেছে; বস্তুতঃ ধৈর্যশীলদের সঙ্গী হচ্ছেন আল্লাহ! মুজিবুর রহমান

And when Saul went forth with the soldiers, he said, "Indeed, Allah will be testing you with a river. So whoever drinks from it is not of me, and whoever does not taste it is indeed of me, excepting one who takes [from it] in the hollow of his hand." But they drank from it, except a [very] few of them. Then when he had crossed it along with those who believed with him, they said, "There is no power for us today against Goliath and his soldiers." But those who were certain that they would meet Allah said, "How many a small company has overcome a large company by permission of Allah. And Allah is with the patient." Sahih International

২৪৯ তারপর তালুত যখন সেনাবাহিনীসহ বের হলো তখন সে বলল, আল্লাহ এক নদী দ্বারা তোমাদের পরীক্ষা করবেন। যে তা থেকে পানি পান করবে সে আমাদের দলভুক্ত নয়; আর যে তার স্বাদ গ্রহণ করবে না সে আমার দলভুক্ত; এছাড়া যে তার হাতে এক কোষ পানি গ্রহণ করবে সেও’। অতঃপর অল্প সংখ্যক ছাড়া তারা তা থেকে পানি পান করল(১)। সে এবং তার সংগী ঈমানদারগণ যখন তা অতিক্রম করল তখন তারা বলল, জালূত ও তার সেবাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার মত শক্তি আজ আমাদের নেই। কিন্তু যাদের প্রত্যয় ছিল আল্লাহ্‌র সাথে তাদের সাক্ষাৎ হবে তারা বলল, আল্লাহ্‌র হুকুমে কত ক্ষুদ্র দল কত বৃহৎ দলকে পরাভূত করেছে! আর আল্লাহ্‌ ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন।

(১) কোন কোন তাফসীরে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এতে তিন ধরণের লোক ছিল। একদল অসম্পূর্ণ ঈমানদার, যারা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি। দ্বিতীয় দল পূর্ণ ঈমানদার, যারা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু নিজেদের সংখ্যা কম বলে চিন্তা করেছে এবং তৃতীয় দল ছিল পরিপূর্ণ ঈমানদার, যারা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন এবং নিজেদের সংখ্যালঘিষ্টতার কথাও চিন্তা করেননি। [মা'আরিফুল কুরআন]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৪৯) অতঃপর তালূত যখন সৈন্যদলসহ বের হল, তখন সে বলল, ‘আল্লাহ একটি নদী দ্বারা তোমাদেরকে পরীক্ষা করবেন।[1] অতএব যে কেউ উক্ত নদী থেকে পানি পান করবে, সে আমার দলভুক্ত নয় এবং যে ঐ পানি পান করবে না, সে আমার দলভুক্ত। অবশ্য যে কেউ তার হাত দিয়ে এক আঁজলা পানি পান করবে সে-ও (আমার দলভুক্ত)।’ কিন্তু (যখন তারা নদীর কাছে হাজির হল, তখন) তাদের অল্প সংখ্যক ব্যতীত অধিকাংশ লোকই তা থেকে পানি পান করল।[2] অতঃপর যখন সে (ত্বালূত) ও তার প্রতি বিশ্বাসস্থাপনকারিগণ তা (নদী) অতিক্রম করল, তখন তারা বলল, ‘আমাদের শক্তি ও সাধ্য নেই যে, আজ জালূত ও তার সৈন্য-সামন্তের সাথে যুদ্ধ করি।’[3] কিন্তু যাদের প্রত্যয় ছিল যে, আল্লাহর সাথে তাদের সাক্ষাৎ ঘটবে, তারা বলল, ‘আল্লাহর ইচ্ছায় কত ক্ষুদ্র দল কত বৃহৎ দলকে পরাজিত করেছে! আর আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে রয়েছেন।’

[1] এই নদীটি জর্ডান ও প্যালেষ্টাইনের মধ্যবর্তী এলাকায় অবস্থিত।

[2] আমীরের আনুগত্য করা সর্বাবস্থায় জরুরী। আর শত্রুর সাথে যুদ্ধ করার সময় তো তার (আমীরের আনুগত্য করার) গুরুত্ব দ্বিগুণ নয়, বরং শতগুণ হয়ে যায়। দ্বিতীয়তঃ যুদ্ধে সফলতা অর্জনের জন্য জরুরী হল, সৈন্যের যুদ্ধকালীন সময়ের ক্ষুৎপিপাসা এবং অন্যান্য কষ্ট অতীব ধৈর্যের সাথে সহ্য করা। তাই এই দু’টি বিষয়ে তরবিয়াত এবং পরীক্ষার জন্য ত্বালুত বললেন, নদীতে তোমাদের প্রথম পরীক্ষা হবে। যে এই নদীর পানি পান করবে, তার সাথে আমার কোন সম্পর্ক থাকবে না। কিন্তু এই সতর্কতা সত্ত্বেও অধিকাংশ লোকেরাই পানি পান করে নেয়। তাদের সংখ্যার ব্যাপারে মুফাসসিরগণের বিভিন্ন উক্তি বর্ণিত হয়েছে। অনুরূপ যারা পান করেনি, তাদের সংখ্যা ৩১৩ বলা হয়েছে, যা ছিল বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারীদের সংখ্যা। আর আল্লাহই অধিক জানেন।

[3] এই ঈমানদাররাও যখন শুরুতে দেখল শত্রুর সংখ্যা অনেক, তখন তাদের সংখ্যা (শত্রুর তুলনায়) কম থাকায় তারা এই মত প্রকাশ করল। তখন তাদের আলেমগণ এবং যারা আল্লাহর সাহায্যে পূর্ণ বিশ্বাসী ছিলেন তাঁরা বললেন, সফলতা সংখ্যার আধিক্যের এবং অস্ত্র-শস্ত্রের প্রাচুর্যের উপর নির্ভরশীল নয়, বরং তা আল্লাহর ইচ্ছা এবং তাঁর নির্দেশের উপর নির্ভর করে। আর আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার জন্য জরুরী হল ধৈর্যের প্রতি যত্ন নেওয়া।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২ . আল-বাকারা
২:২৫০ وَ لَمَّا بَرَزُوۡا لِجَالُوۡتَ وَ جُنُوۡدِهٖ قَالُوۡا رَبَّنَاۤ اَفۡرِغۡ عَلَیۡنَا صَبۡرًا وَّ ثَبِّتۡ اَقۡدَامَنَا وَ انۡصُرۡنَا عَلَی الۡقَوۡمِ الۡكٰفِرِیۡنَ ﴿۲۵۰﴾ؕ

আর যখন তারা জালূত ও তার সৈন্যবাহিনীর মুখোমুখি হল, তখন তারা বলল, ‘হে আমাদের রব, আমাদের উপর ধৈর্য ঢেলে দিন, আমাদের পা স্থির রাখুন এবং আমাদেরকে কাফের জাতির বিরুদ্ধে সাহায্য করুন’। আল-বায়ান

যখন তারা জ্বালুত ও তার সৈন্যদের সম্মুখীন হল, তখন বলল, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে ধৈর্যধারণের শক্তি দান কর এবং আমাদের পদগুলো দৃঢ় রেখ এবং কাফির দলের উপর আমাদেরকে জয়যুক্ত কর’। তাইসিরুল

এবং যখন তারা জালুত ও তার সেনাবাহিনীর সম্মুখীন হল, বলতে লাগলঃ হে আমাদের রাব্ব! আমাদেরকে পূর্ণ সহিষ্ণুতা দান করুন, আর আমাদের চরণগুলি অটল রাখুন এবং কাফির জাতির উপর আমাদেরকে সাহায্য করুন! মুজিবুর রহমান

And when they went forth to [face] Goliath and his soldiers, they said, "Our Lord, pour upon us patience and plant firmly our feet and give us victory over the disbelieving people." Sahih International

২৫০. আর তারা যখন যুদ্ধার্থে জালূত ও তার সেনাবাহিনীর সম্মুখীন হলো তখন তারা বলল, হে আমাদের রব! আমাদের উপর ধৈর্য ঢেলে দিন, আমাদের পা অবিচলিত রাখুন এবং কাফের সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে জয়যুক্ত করুন।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৫০) তারা যখন (যুদ্ধার্থে) জালূত ও তার সৈন্যবাহিনীর সম্মুখীন হল, তখন বলল, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে ধৈর্য দান কর, আমাদেরকে অবিচলিত রাখ এবং অবিশ্বাসী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য দান কর।’[1]

[1] জালূত সেই শত্রুদলের সেনাপতি ও দলনেতা ছিল, যাদের সাথে ত্বালূত ও তাঁর সঙ্গীদের সংঘর্ষ ছিল। এরা ছিল আমালেক্বা জাতি। সেই সময়ে এই জাতি বড় দুর্ধর্ষ যুদ্ধ-বিশারদ এবং বীর নামে প্রসিদ্ধ ছিল। তাদের এই প্রসিদ্ধির কারণে ঠিক যুদ্ধের সময় ঈমানদারগণ আল্লাহর নিকট ধৈর্য ও সুদৃঢ় থাকার তওফীক চেয়ে এবং কুফরীর মোকাবেলায় ঈমানের সফলতার জন্য দু’আ করেন। অর্থাৎ, (যুদ্ধের) পার্থিব উপকরণাদি গ্রহণ করার সাথে সাথে ঈমানদারদের জন্য অত্যাবশ্যক হল, এ রকম পরিস্থিতিতে আল্লাহর নিকট বিশেষভাবে প্রার্থনা করা। যেমন, বদরের যুদ্ধে নবী করীম (সাঃ) অত্যধিক কাকুতি-মিনতির সাথে বিজয় ও সাহায্য চেয়ে দু’আ করেছিলেন। মহান আল্লাহ তাঁর সে দু’আ কবুল করেছিলেন। ফলে অতীব অল্প সংখ্যক মুসলিম দল অধিক সংখ্যক কাফের দলের উপর জয় লাভ করেছিল।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২ . আল-বাকারা
২:২৫১ فَهَزَمُوۡهُمۡ بِاِذۡنِ اللّٰهِ ۟ۙ وَ قَتَلَ دَاوٗدُ جَالُوۡتَ وَ اٰتٰىهُ اللّٰهُ الۡمُلۡكَ وَ الۡحِكۡمَۃَ وَ عَلَّمَهٗ مِمَّا یَشَآءُ ؕ وَ لَوۡ لَا دَفۡعُ اللّٰهِ النَّاسَ بَعۡضَهُمۡ بِبَعۡضٍ ۙ لَّفَسَدَتِ الۡاَرۡضُ وَ لٰكِنَّ اللّٰهَ ذُوۡ فَضۡلٍ عَلَی الۡعٰلَمِیۡنَ ﴿۲۵۱﴾

অতঃপর তারা আল্লাহর হুকুমে তাদেরকে পরাজিত করল এবং দাঊদ জালূতকে হত্যা করল। আর আল্লাহ দাঊদকে রাজত্ব ও প্রজ্ঞা দান করলেন এবং তাকে যা ইচ্ছা শিক্ষা দিলেন। আর আল্লাহ যদি মানুষের কতককে কতকের দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তবে অবশ্যই যমীন ফাসাদপূর্ণ হয়ে যেত। কিন্তু আল্লাহ বিশ্ববাসীর উপর অনুগ্রহশীল। আল-বায়ান

অতঃপর তারা আল্লাহর হুকুমে তাদেরকে (শত্রুদেরকে) পরাজিত করল এবং দাঊদ জ্বালুতকে কতল করল এবং আল্লাহ দাঊদকে রাজ্য ও হেকমত দান করলেন এবং তাকে শিক্ষা দিলেন যা ইচ্ছে। যদি আল্লাহ মানবজাতির একদলকে অন্যদল দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তাহলে পৃথিবী বিপর্যস্ত হয়ে যেত, কিন্তু আল্লাহ সর্বজগতের প্রতি কৃপালু। তাইসিরুল

তখন তারা আল্লাহর হুকুমে জালুতের সৈন্যদেরকে পরাজিত করল এবং দাঊদ জালুতকে হত্যা করল। এবং আল্লাহ দাউদকে রাজ্য ও প্রজ্ঞা দান করলেন এবং তাকে ইচ্ছানুযায়ী শিক্ষা দান করলেন; আর যদি আল্লাহ এক দলকে অপর দলের দ্বারা প্রদমিত না করতেন তাহলে নিশ্চয়ই পৃথিবী অশান্তিপূর্ণ হত, কিন্তু আল্লাহ বিশ্ব জগতের প্রতি অনুগ্রহকারী। মুজিবুর রহমান

So they defeated them by permission of Allah, and David killed Goliath, and Allah gave him the kingship and prophethood and taught him from that which He willed. And if it were not for Allah checking [some] people by means of others, the earth would have been corrupted, but Allah is full of bounty to the worlds. Sahih International

২৫১. অতঃপর তারা আল্লাহর হুকুমে তাদেরকে (কাফেরদেরকে) পরাভূত করল এবং দাউদ জালুতকে হত্যা করলেন। আর আল্লাহ্‌ তাকে রাজত্ব ও হেকমত দান করলেন এবং যা তিনি ইচ্ছে করলেন তা তাকে শিক্ষা দিলেন। আর আল্লাহ্‌ যদি মানুষের এক দলকে অন্য দল দ্বারা প্রতিহত না করতেন তবে পৃথিবী বিপর্যস্ত হয়ে যেত। কিন্তু আল্লাহ সৃষ্টিকুলের প্রতি অনুগ্রহশীল।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৫১) সুতরাং তখন তারা আল্লাহর ইচ্ছায় তাদেরকে পরাজিত করল এবং দাউদ জালূতকে হত্যা করল।[1] আল্লাহ তাকে রাজত্ব ও জ্ঞান-বিজ্ঞান দান করলেন[2] এবং তিনি ইচ্ছানুযায়ী তাকে শিক্ষা দান করলেন। আল্লাহ যদি মানব জাতির একদলকে অন্য দল দ্বারা দমন না করতেন, তাহলে নিশ্চয় পৃথিবী (অশান্তিপূর্ণ ও) ধ্বংস হয়ে যেত। কিন্তু আল্লাহ বিশ্বজগতের প্রতি অনুগ্রহশীল।[3]

[1] দাঊদ (আঃ) তখন না নবী ছিলেন, না রাজা। বরং ত্বালূতের সৈন্যদলের একজন সাধারণ সৈনিক ছিলেন। তাঁরই হাতে মহান আল্লাহ জালূতকে ধ্বংস করলেন এবং অল্প সংখ্যক ঈমানদার দ্বারা বিশাল এক জাতিকে জঘন্যভাবে পরাজিত করলেন।

[2] এর পর মহান আল্লাহ দাঊদ (আঃ)-কে রাজত্বও দিলেন এবং নবুঅতও। ‘হিকমত’ বলতে কেউ বলেছেন, নবুঅত। কেউ বলেছেন, লোহার কারিগরী এবং কেউ বলেছেন, যুদ্ধ সম্বন্ধীয় বিষয়ের এমন পারদর্শিতা, যা আল্লাহর ইচ্ছায় উক্ত স্থানে বড় নিষ্পত্তিকর সাব্যস্ত হয়েছিল।

[3] এখানে আল্লাহর এক নিয়মের কথা বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি একদল মানুষের মাধ্যমেই অপর একদল মানুষের যুলুম-অত্যাচার ও ক্ষমতা নিশ্চিহ্ন করে থাকেন। তিনি যদি এ রকম না করে কোন একই পক্ষকে সব সময়ের জন্য ক্ষমতা ও এখতিয়ার দিয়ে রাখতেন, তাহলে এ পৃথিবী যুলুম-অত্যাচারে পরিপূর্ণ হয়ে যেত। কাজেই আল্লাহর এই নিয়ম বিশ্ববাসীর জন্য তাঁর বিশেষ অনুগ্রহের একটি দৃষ্টান্ত। মহান আল্লাহ সূরা হজ্জের ৩৮ ও ৪০ নং আয়াতেও এ কথা উল্লেখ করেছেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২ . আল-বাকারা
২:২৫২ تِلۡكَ اٰیٰتُ اللّٰهِ نَتۡلُوۡهَا عَلَیۡكَ بِالۡحَقِّ ؕ وَ اِنَّكَ لَمِنَ الۡمُرۡسَلِیۡنَ ﴿۲۵۲﴾

এগুলো আল্লাহর আয়াত, যা আমি তোমার উপর যথাযথভাবে তিলাওয়াত করি। আর নিশ্চয় তুমি রাসূলগণের অন্তর্ভুক্ত। আল-বায়ান

এসব আল্লাহরই আয়াত, যা আমি সঠিকভাবে তোমাকে পড়িয়ে শুনাচ্ছি এবং নিশ্চয়ই তুমি রসূলদের অন্তর্ভুক্ত। তাইসিরুল

এগুলো আল্লাহর নিদর্শন - তোমার নিকট এগুলি সত্যরূপে উপস্থাপন করেছি এবং নিশ্চয়ই তুমি রাসূলগণের অন্তর্ভুক্ত। মুজিবুর রহমান

These are the verses of Allah which We recite to you, [O Muhammad], in truth. And indeed, you are from among the messengers. Sahih International

২৫২. এ সব আল্লাহর আয়াত, আমরা আপনার নিকট তা যথাযথভাবে তিলাওয়াত করছি। আর নিশ্চয়ই আপনি রাসূলগণের অন্তর্ভুক্ত।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৫২) এই সমস্ত আল্লাহর নিদর্শন; যা আমি যথাযথভাবেম তোমাকে পড়ে শুনাচ্ছি। আর নিশ্চয় তুমি রসূলগণের অন্যতম।[1]

[1] অতীতের যে ঘটনাগুলো রসূল (সাঃ)-এর উপর অবতীর্ণ কিতাবের মাধ্যমে বিশ্ববাসী জানতে পেরেছে, হে মুহাম্মাদ! অবশ্যই সে সমস্ত ঘটনাগুলো তোমার রিসালাত ও সত্যতার দলীল। কারণ, এগুলো না তুমি কোন কিতাবে পড়েছ, আর না কারো কাছ থেকে শুনেছ। আর এ থেকে এ কথাও পরিষ্কার হয়ে যায় যে, এগুলো সব অদৃশ্য জগতের (গায়বী) খবরাদি, যা মহান আল্লাহ কর্তৃক অহীর মাধ্যমে মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর উপর অবতীর্ণ করা হয়েছে। কুরআন কারীমের বহু স্থানে অতীত উম্মতের ঘটনাবলী রসূল (সাঃ)-এর সত্যতার প্রমাণস্বরূপ পেশ করা হয়েছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
২ . আল-বাকারা
২:২৫৩ تِلۡكَ الرُّسُلُ فَضَّلۡنَا بَعۡضَهُمۡ عَلٰی بَعۡضٍ ۘ مِنۡهُمۡ مَّنۡ كَلَّمَ اللّٰهُ وَ رَفَعَ بَعۡضَهُمۡ دَرَجٰتٍ ؕ وَ اٰتَیۡنَا عِیۡسَی ابۡنَ مَرۡیَمَ الۡبَیِّنٰتِ وَ اَیَّدۡنٰهُ بِرُوۡحِ الۡقُدُسِ ؕ وَ لَوۡ شَآءَ اللّٰهُ مَا اقۡتَتَلَ الَّذِیۡنَ مِنۡۢ بَعۡدِهِمۡ مِّنۡۢ بَعۡدِ مَا جَآءَتۡهُمُ الۡبَیِّنٰتُ وَ لٰكِنِ اخۡتَلَفُوۡا فَمِنۡهُمۡ مَّنۡ اٰمَنَ وَ مِنۡهُمۡ مَّنۡ كَفَرَ ؕ وَ لَوۡ شَآءَ اللّٰهُ مَا اقۡتَتَلُوۡا ۟ وَ لٰكِنَّ اللّٰهَ یَفۡعَلُ مَا یُرِیۡدُ ﴿۲۵۳﴾

ঐ রাসূলগণ, আমি তাদের কাউকে কারো উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি, তাদের মধ্যে কারো সাথে আল্লাহ কথা বলেছেন এবং কারো কারো মর্যাদা উঁচু করেছেন। আর আমি ঈসা ইবনে মারয়ামকে দিয়েছি সুস্পষ্ট প্রমাণাদি এবং আমি তাকে শক্তিশালী করেছি রূহুল কুদুস এর মাধ্যমে। আর যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন, তাদের পরবর্তীরা লড়াই করত না, তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণসমূহ আসার পর। কিন্তু তারা মতবিরোধ করেছে। ফলে তাদের মধ্যে কেউ ঈমান এনেছে, আর তাদের কেউ কুফরী করেছে। আর আল্লাহ যদি চাইতেন, তাহলে তারা লড়াই করত না। কিন্তু আল্লাহ যা চান, তা করেন। আল-বায়ান

এ রসূলগণ এরূপ যে, তাদের মধ্যে কাউকে অন্য কারও উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি। তাদের মধ্যে কেউ এমন আছে যে, তাদের সাথে আল্লাহ কথা বলেছেন এবং তাদের কাউকে পদমর্যাদায় উচ্চ করেছেন। আমি মারইয়ামের পুত্র ঈসাকে সুস্পষ্ট দলীলসমূহ প্রদান করেছি, রূহুল কুদুস (জিবরাঈল) দ্বারা সাহায্য করেছি এবং আল্লাহ যদি ইচ্ছে করতেন, তাহলে তাদের পরবর্তীরা তাদের নিকট সুস্পষ্ট দলীল পৌঁছার পর পরস্পর যুদ্ধ বিগ্রহ করত না, কিন্তু তারা পরস্পর মতভেদ সৃষ্টি করল, তাদের কেউ কেউ ঈমান আনল এবং কেউ কেউ কুফরী করল, আল্লাহ যদি ইচ্ছে করতেন, তাহলে তারা যুদ্ধবিগ্রহ করত না, কিন্তু আল্লাহ যা ইচ্ছে করেন, তা-ই করে থাকেন। তাইসিরুল

এই সকল রাসূল, আমি যাদের কারও উপর কেহকে মর্যাদা প্রদান করেছি, তাদের মধ্যে কারও সাথে আল্লাহ কথা বলেছেন এবং কেহকে পদমর্যাদায় সমুন্নত করেছেন, আর মারইয়াম নন্দন ঈসাকে প্রকাশ্য নিদর্শনাবলী দান করেছি এবং তাকে পবিত্র আত্মাযোগে সাহায্য করেছি, আর আল্লাহ ইচ্ছা করলে নাবীগণের পরবর্তী লোকেরা, তাদের নিকট স্পষ্ট প্রমাণপুঞ্জ সমাগত হওয়ার পর পরস্পরের সাথে যুদ্ধ বিগ্রহে লিপ্ত হতনা। কিন্তু তারা পরস্পর মতবিরোধ করেছিল; ফলে তাদের কতক হল মু’মিন, আর কতক হল কাফির। বস্ত্ততঃ আল্লাহ ইচ্ছা করলে তারা পরস্পর যুদ্ধ বিগ্রহে লিপ্ত হতনা, কিন্তু আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তা’ই সম্পন্ন করে থাকেন। মুজিবুর রহমান

Those messengers - some of them We caused to exceed others. Among them were those to whom Allah spoke, and He raised some of them in degree. And We gave Jesus, the Son of Mary, clear proofs, and We supported him with the Pure Spirit. If Allah had willed, those [generations] succeeding them would not have fought each other after the clear proofs had come to them. But they differed, and some of them believed and some of them disbelieved. And if Allah had willed, they would not have fought each other, but Allah does what He intends. Sahih International

২৫৩. সে রাসূলগণ, আমরা তাদের কাউকে অপর কারো উপর শ্ৰেষ্ঠত্ব দিয়েছি। তাদের মধ্যে এমন কেউ রয়েছেন যার সাথে আল্লাহ কথা বলেছেন(১), আবার কাউকে উচ্চ মর্যাদায় উন্নীত করেছেন। আর মারইয়াম-পুত্র ঈসাকে স্পষ্ট প্রমাণাদি প্রদান করেছি ও রুহুল কুদুস দ্বারা তাকে শক্তিশালী করেছি। আর আল্লাহ ইচ্ছে করলে তাদের পরবর্তীরা তাদের নিকট স্পষ্ট প্রমাণাদি সমাগত হওয়ার পরও পারস্পরিক যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত হত না; কিন্তু তারা মতভেদ করলো। ফলে তাদের কেউ কেউ ঈমান আনলো এবং কেউ কেউ কুফরী করল। আর আল্লাহ ইচ্ছে করলে তারা পারস্পরিক যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত হত না; কিন্তু আল্লাহ যা ইচ্ছে তা করেন।

(১) কথা বলা আল্লাহ তা'আলার একটি গুণ। তিনি যখন যেভাবে ইচ্ছা শ্রুত বাক্য দ্বারা কথা বলেন। কথা বলার এ গুণটির উপর কুরআন ও সুন্নাহর বহুদলীল রয়েছে। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “এবং মূসার সাথে আল্লাহ কথা বলেছিলেন”। [সূরা আন-নিসাঃ ১৬৪] আল্লাহ আরও বলেনঃ “আর মূসা যখন আমার নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হলেন এবং তার রব তার সাথে কথা বললেন, তখন মূসা বললেনঃ হে আমার রব! আমাকে দর্শন দান করুন, আমি আপনাকে দেখব”। [সূরা আল-আরাফঃ ১৪৩] আর সুন্নাহ হতে দলীল হলো, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আদম ও মূসা বাদানুবাদে লিপ্ত হলেন। মূসা আদমকে বললেন, হে আদম! আপনি আমাদের পিতা। আমাদেরকে নিরাশ করে আপনি আমাদেরকে জান্নাত থেকে বের করে নিয়ে এসেছেন। আদম তাকে বললেন, হে মূসা আল্লাহ আপনাকে কথপোকথন দ্বারা নির্বাচিত করেছেন এবং নিজ হস্তে আপনাকে তাওরাত লিখে দিয়েছেন......। [বুখারীঃ ৬৬১৪, মুসলিমঃ ২৬৫২]

তবে মূসা আলাইহিস সালাম-এর সাথে আল্লাহ্ তা'আলা ফেরেশতাদের মাধ্যম ব্যতীত কথা বললেও তা অন্তরালমুক্ত ছিল না। কেননা, সূরা শুরার (وَمَا كَانَ لِبَشَرٍ أَن يُكَلِّمَهُ اللَّهُ) (কোন মানুষের পক্ষে আল্লাহর সাথে কথা বলা বাস্তবসম্মত নয়) আয়াতে অন্তরালমুক্তভাবে আল্লাহ্ তা'আলার সাথে কথা বলার বিষয়টিকে নাকচ করা হয়েছে। অবশ্য মৃত্যুর পর কোন রকম অন্তরাল বা যবনিকা ছাড়াই কথাবার্তা হবে বলে প্রমাণিত হয়েছে। তাই সূরা আশ-শুরার সে আয়াতটি দুনিয়ার জীবনের সাথে সম্পৃক্ত।

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৫৩) এ রসূলগণ, তাদের মধ্যে কাউকে কারো উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি।[1] তাদের মধ্যে কারো সাথে আল্লাহ কথা বলেছেন, আর কাউকে উচ্চ-মর্যাদায় উন্নীত করেছেন। মারয়্যাম-পুত্র ঈসাকে আমি সুস্পষ্ট প্রমাণ প্রদান করেছি এবং তাকে পবিত্র আত্মা (জিবরীল ফিরিশতা) দ্বারা শক্তিশালী করেছি।[2] আর যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন, তাহলে তাদের (নবীদের) পরবর্তী লোকেরা -- তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পরে -- পারস্পরিক ঝগড়া-বিবাদ (যুদ্ধ) করত না। কিন্তু তারা মতভেদ ঘটালো, ফলে তাদের কিছু (লোক) বিশ্বাস করল এবং কিছু অবিশ্বাস করল। আর আল্লাহ ইচ্ছা করলে তারা যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত হতো না, [3] কিন্তু আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করে থাকেন।

[1] কুরআন অন্য আর এক স্থানেও এ কথা বর্ণনা করেছে।

{وَلَقَدْ فَضَّلْنَا بَعْضَ النَّبِيِّينَ عَلَى بَعْضٍ} ‘‘আমি তো কতক পয়গম্বরকে কতক পয়গম্বরের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি।’’ (বানী-ইস্রাঈল ৫৫) কাজেই এ প্রকৃতত্বের ব্যাপারে কোনই সন্দেহ নেই। তবে নবী করীম (সাঃ) যে বলেছেন, ‘‘তোমরা আমাকে নবীদের মাঝে শ্রেষ্ঠত্ব দিও না।’’ (বুখারী ৪৬৩৮, মুসলিম ২৩৭৩নং) এ থেকে একে অন্যের উপর শ্রেষ্ঠত্বের অস্বীকৃতি সাব্যস্ত হয় না, বরং এ থেকে উম্মতকে নবীদের ব্যাপারে আদব ও সম্মান দানের শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে যে, তোমরা যেহেতু সে সমূহ বৈশিষ্ট্য ও বিষয়াদি সম্পর্কে অবহিত নও, যার ভিত্তিতে তাঁদের কেউ অন্যের উপর শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী হয়েছেন, তাই তোমরা আমার শ্রেষ্ঠত্বও এমনভাবে বর্ণনা করো না, যাতে অন্য নবীদের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়। নবীদের পারস্পরিক শ্রেষ্ঠত্ব এবং সমস্ত নবীদের উপর সর্বশেষ নবী (সাঃ)-এর শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা তো সুসাব্যস্ত বিষয় এবং আহলে সুন্নাহর ঐকমত্যপূর্ণ বিশ্বাস; যা কুরআন ও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। (আরো বিস্তারিত জানার জন্য দ্রষ্টব্যঃ ফাতহুল ক্বাদীর)

[2] অর্থাৎ, সেই সব মু’জিযা যা ঈসা (আঃ)-কে দেওয়া হয়েছিল। যেমন, মৃতকে জীবিত করা ইত্যাদি। এর বিস্তারিত আলোচনা সূরা আলে-ইমরানে আসবে। ‘রূহুল ক্বুদুস’ থেকে জিবরীল (আঃ)-কে বুঝানো হয়েছে। আর এ কথা পূর্বেও অতিবাহিত হয়েছে।

[3] এই বিষয়টাকে মহান আল্লাহ কুরআনের কয়েক স্থানে বর্ণনা করেছেন। এর অর্থ এই নয় যে, আল্লাহর নাযিল করা দ্বীনে মতভেদ পছন্দনীয়। এটা তো আল্লাহর নিকট খুবই অপছন্দনীয়। তাঁর পছন্দনীয় ও সন্তোষজনক জিনিস হল, সমস্ত মানুষ তাঁর নাযিল করা শরীয়তকে অবলম্বন করে জাহান্নামের আগুন থেকে বেঁচে যাক। এই জন্যই তিনি গ্রন্থসমূহ অবতীর্ণ করেন, ক্রমাগতভাবে নবীদেরকে প্রেরণ করেন এবং নবী করীম (সাঃ)-কে প্রেরণ করে রিসালাতের ইতি টানেন। এর পরও খলীফাগণ, উলামা এবং দ্বীনের আহবায়কদের মাধ্যমে সত্যের প্রতি আহবান, ভাল কাজের আদেশ ও মন্দ কাজে বাধা প্রদানের ধারাবাহিকতা জারী রাখা হয় এবং তার গুরুত্বকে তুলে ধরে তার প্রতি তাকীদও করা হয়। এত ব্যবস্থা কেন? এই জন্যই যে, মানুষ যাতে আল্লাহর পছন্দনীয় পথকে অবলম্বন করে। কিন্তু যেহেতু তিনি হিদায়াত ও গুমরাহীর উভয় পথ প্রদর্শন করে দিয়ে মানুষকে কোন একটি পথ অবলম্বন করার জন্য বাধ্য করেননি, বরং পরীক্ষার জন্য তাকে (কোন একটি পথ) নির্বাচন করার ইচ্ছা ও স্বাধীনতা দিয়েছেন, সুতরাং কেউ এই এখতিয়ারের সদ্ব্যবহার করে মু’মিন হয়ে যায়, আবার কেউ এই এখতিয়ারের অসদ্ব্যবহার করে কাফের হয়ে যায়। অর্থাৎ, এটা তাঁর কৌশল ও ইচ্ছা সম্পর্কীয় বিষয়; যা তাঁর সন্তুষ্টি ও পছন্দ থেকে ভিন্ন জিনিস।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ ২৫১ থেকে ২৬০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৬২৩৬ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 · · · 23 24 25 26 27 · · · 621 622 623 624 পরের পাতা »