১৫ . আল-হিজর
১৫:৯ اِنَّا نَحۡنُ نَزَّلۡنَا الذِّكۡرَ وَ اِنَّا لَهٗ لَحٰفِظُوۡنَ ﴿۹﴾

নিশ্চয় আমি কুরআন* নাযিল করেছি, আর আমিই তার হেফাযতকারী। আল-বায়ান

নিশ্চয় আমিই কুরআন নাযিল করেছি আর অবশ্যই আমি তার সংরক্ষক। তাইসিরুল

আমিই জিকর (কুরআন) অবতীর্ণ করেছি এবং আমিই উহার সংরক্ষক। মুজিবুর রহমান

Indeed, it is We who sent down the Qur'an and indeed, We will be its guardian. Sahih International

* الذكر দ্বারা উদ্দেশ্য কুরআন।

৯. নিশ্চয় আমরাই কুরআন নাযিল করেছি এবং আমরা অবশ্যই তার সংরক্ষক।(১)

(১) অর্থাৎ এই বাণী, যার বাহক সম্পর্কে তোমরা খারাপ মন্তব্য করছ, আল্লাহ নিজেই তা অবতীর্ণ করেছেন। তিনি একে কোন প্রকার বাড়তি বা কমতি, পরিবর্তন বা পরিবর্ধন হওয়া থেকে হেফাযত করবেন। অন্যত্র আল্লাহ বলেছেন, “বাতিল এতে অনুপ্রবেশ করতে পারে না—সামনে থেকেও না, পিছন থেকেও না। এটা প্রজ্ঞাময়, স্বপ্রশংসিতের কাছ থেকে নাযিলকৃত।” [সূরা ফুসসিলাত: ৪২] আরও বলেছেন, “নিশ্চয় এর সংরক্ষণ ও পাঠ করাবার দায়িত্ব আমাদেরই। কাজেই যখন আমরা তা পাঠ করি আপনি সে পাঠের অনুসরণ করুন, তারপর তার বর্ণনার দায়িত্ব নিশ্চিতভাবে আমাদেরই।” [সূরা আল-কিয়ামাহঃ ১৭–১৯]। সুতরাং একে বিকৃত বা এর মধ্যে পরিবর্তন সাধন করার সুযোগও তোমরা কেউ কোনদিন পাবে না। আল্লাহ্ তাআলা স্বয়ং এর হেফাযত করার কারণে শক্ররা হাজারো চেষ্টা সত্বেও এর মধ্যে কোন পরিবর্তন আনতে পারেনি।

রিসালাত আমলের পর আজ চৌদ্দশ’ বছর অতীত হয়ে গেছে। দ্বীনি ব্যাপারাদীতে মুসলিমদের ক্রটি ও অমনোযোগিতা সত্বেও কুরআনুল কারীম মুখস্ত করার ধারা বিশ্বের সর্বত্র পূর্ববৎ অব্যাহত রয়েছে। প্রতি যুগেই লাখো লাখো বরং কোটি কোটি মুসলিম যুবক-বৃদ্ধ এবং বালক ও বালিকা এমন বিদ্যমান থাকা, যাদের বক্ষ-পাজরে আগাগোড়া কুরআন সংরক্ষিত রয়েছে। কোন বড় থেকে বড় আলেমের সাধ্য নেই যে, এক অক্ষর ভুল পাঠ করে। তৎক্ষনাৎ বালক-বৃদ্ধ নির্বিশেষে অনেক লোক তার ভুল ধরে ফেলবে।

প্রখ্যাত আলেম সুফিয়ান ইবন ওয়াইনা এর কারণ বর্ণনা করে বলেন, কুরআনুল কারীম যেখানে তাওরাত ও ইঞ্জীলের আলোচনা করেছে, সেখানে বলেছেঃ (بِمَا اسْتُحْفِظُوا مِنْ كِتَابِ اللَّهِ) [সূরা আল-মায়েদাঃ ৪৪] অর্থাৎ ইয়াহুদী ও নাসারাদেরকে আল্লাহর গ্রন্থ তাওরাত ও ইঞ্জীলের হেফাযতের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। এ কারণেই যখন ইয়াহুদী ও নাসারাগণ হেফাযতের কর্তব্য পালন করেনি, তখন এ গ্রন্থদ্বয় বিকৃত ও পরিবর্তিত হয়ে বিনষ্ট হয়ে গেল। পক্ষান্তরে কুরআনুল কারীম সম্পর্কে আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ (وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ) অর্থাৎ “আমিই এর সংরক্ষক” [সূরা আল-হিজরঃ ৯]। সুতরাং এটি কখনও অসংরক্ষিত হওয়ার সুযোগ নেই। কুরতুবী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৯) নিশ্চয় আমিই কুরআন অবতীর্ণ করেছি এবং আমিই ওর সংরক্ষক।[1]

[1] অর্থাৎ কুরআনে অবৈধ হস্তক্ষেপ, বিকৃতি সাধন ও পরিবর্তন-পরিবর্ধন হতে রক্ষা করা আমার দায়িত্ব। অতএব কুরআন সেইভাবেই আজও সুরক্ষিত আছে, যেভাবে তা অবতীর্ণ হয়েছিল। ভ্রষ্ট ফির্কাগুলো নিজ নিজ আকীদার সর্মথনে কুরআনের আয়াতের আর্থিক বিকৃতি ঘটিয়েছে এবং আজও ঘটাচ্ছে। তবে শাব্দিক বিকৃতি ও পরিবর্তন হতে তা এখনও সুরক্ষিত। এ ছাড়াও সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত একটি দল আর্থিক বিকৃতির পর্দা ছিঁড়ে ফেলার জন্য সর্বকালেই বিদ্যমান, যারা তাদের আকীদার ও তাদের ভুল দলীল-প্রমাণাদির অসারতা প্রমাণ করেছেন এবং আজও তাঁরা সেই কাজে সচেষ্ট। তাছাড়া কুরআনকে এখানে যিকর (উপদেশ) বলে ব্যক্ত করা হয়েছে, যাতে বুঝা যায় যে, নবী (সাঃ)-এর স্বর্ণোজ্জ্বল জীবনাদর্শ ও তাঁর অমিয় বাণীকে সুরক্ষিত করে কুরআন কারীমের বিশ্ববাসীর জন্য উপদেশ হওয়ার দিকটাকে কিয়ামত পর্যন্ত সুরক্ষিত করা হয়েছে। অতএব কুরআন কারীম ও নবী (সাঃ)-এর জীবনাদর্শ দ্বারা বিশ্ববাসীকে ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার পথ সর্বকালের জন্য খোলা রয়েছে। উক্ত মর্যাদা ও সুরক্ষার বৈশিষ্ট্য পূর্বের কোন নবী বা কিতাবকে দেওয়া হয়নি।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৫ . আল-হিজর
১৫:১০ وَ لَقَدۡ اَرۡسَلۡنَا مِنۡ قَبۡلِكَ فِیۡ شِیَعِ الۡاَوَّلِیۡنَ ﴿۱۰﴾

আর আমি তোমার পূর্বে অতীত সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে রাসূল প্রেরণ করেছি। আল-বায়ান

তোমার পূর্ববর্তী জাতিগুলোর কাছেও আমি রসূল পাঠিয়েছিলাম। তাইসিরুল

তোমার পূর্বে আমি পূর্বের অনেক সম্প্রদায়ের নিকট রাসূল পাঠিয়েছি। মুজিবুর রহমান

And We had certainly sent [messengers] before you, [O Muhammad], among the sects of the former peoples. Sahih International

১০. আর অবশ্যই আপনার আগে আমরা আগেকার অনেক সম্প্রদায়ের কাছে রাসূল পাঠিয়েছিলাম।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১০) অবশ্যই তোমার পূর্বে আমি অনেক সম্প্রদায়ের নিকট রসূল পাঠিয়েছিলাম।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৫ . আল-হিজর
১৫:১১ وَ مَا یَاۡتِیۡهِمۡ مِّنۡ رَّسُوۡلٍ اِلَّا كَانُوۡا بِهٖ یَسۡتَهۡزِءُوۡنَ ﴿۱۱﴾

আর যখনই তাদের নিকট কোন রাসূল আসত তারা তাকে নিয়ে উপহাস করত। আল-বায়ান

তাদের কাছে এমন কোন রসূল আসেনি যাকে তারা ঠাট্টা-বিদ্রূপ করেনি। তাইসিরুল

তাদের নিকট এমন কোন রাসূল আসেনি যাকে তারা ঠাট্টা বিদ্রুপ করতনা। মুজিবুর রহমান

And no messenger would come to them except that they ridiculed him. Sahih International

১১. আর তাদের কাছে এমন কোন রাসূল আসেনি যাকে তারা ঠাট্টা-বিদ্রুপ করত না।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১১) তাদের নিকট এমন কোন রসূল আসেনি, যাকে তারা ঠাট্টা-বিদ্রূপ করত না। [1]

[1] এখানে নবী (সাঃ)-কে সান্তনা দেওয়া হচ্ছে যে, এরা শুধু তোমাকেই মিথ্যাবাদী বলছে তা নয়; বরং প্রত্যেক নবীর সাথেই এরূপ আচরণ করা হয়েছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৫ . আল-হিজর
১৫:১২ كَذٰلِكَ نَسۡلُكُهٗ فِیۡ قُلُوۡبِ الۡمُجۡرِمِیۡنَ ﴿ۙ۱۲﴾

এমনিভাবে আমি তা অপরাধীদের অন্তরে সঞ্চার করি। আল-বায়ান

এভাবে আমি এ রকম আচরণ পাপীদের অন্তরে বদ্ধমূল করে দেই। তাইসিরুল

এভাবে আমি অপরাধীদের অন্তরে তা সঞ্চার করি। মুজিবুর রহমান

Thus do We insert denial into the hearts of the criminals. Sahih International

১২. এভাবেই আমরা অপরাধীদের অন্তরে তা সঞ্চার করি(১),

(১) সাধারণত অনুবাদক ও তাফসীরকারগণ এর অর্থ করেছেন: আমি তাকে প্রবেশ করাই বা চালাই। এর মধ্যকার (ه) সর্বনামটিকে বিদ্রুপ এর সাথে এবং (তারা এর প্রতি ঈমান আনে না) এর মধ্যকার সর্বনামটিকে এর সাথে সংযুক্ত করেছেন। তারা এর অর্থ এভাবে বর্ণনা করেছেনঃ “আমি এভাবে এ বিদ্রপকে অপরাধীদের অন্তরে প্রবেশ করিয়ে দেই এবং তারা এ বাণীর প্রতি ঈমান আনে না।” [সা’দী] যদিও ব্যাকরণের নিয়ম অনুযায়ী এতে কোন ক্রটি নেই, তবুও ব্যাকরণের নিয়ম অনুযায়ী উভয় সর্বনামই “যিকির” বা বাণীর সাথে সংযুক্ত হওয়াই বেশী নির্ভুল বলে মনে হয়। [ফাতহুল কাদীর]

আরবী ভাষায় (سلك) শব্দের অর্থ হচ্ছে কোন জিনিসকে অন্য জিনিসের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়া অনুপ্রবেশ করানো, চালিয়ে দেয়া বা গলিয়ে দেয়া। যেমন সুইয়ের ছিদ্রে সূতো গলিয়ে দেয়া হয়। [কুরতুবী] কাজেই এ হিসেবে আয়াতের অর্থ, ঈমানদারদের মধ্যে তো এই “বাণী” হৃদয়ের শীতলতা ও আত্মার খাদ্য হয়ে প্রবেশ করে। কিন্তু অপরাধীদের অন্তরে তা বারুদের মত আঘাত করে এবং তা শুনে তাদের মনে এমন আগুন জ্বলে ওঠে যেন মনে হয় একটি গরম শলাকা তাদের বুকে বিদ্ধ হয়ে এফোড় ওফোড় করে দিয়েছে। তাদের অন্তরে এ কুরআন ঢুকলেও তা সেখানে স্থান পায় না। সেখান থেকে শুধু মিথ্যারোপই বের হয়। [দেখুন, কুরতুবী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১২) এভাবে আমি অপরাধীদের অন্তরে তা সঞ্চার করি। [1]

[1] অর্থাৎ, কুফরী ও রসুলদেরকে বিদ্রূপ করা আমি তাদের অন্তরে প্রক্ষিপ্ত করে দিয়েছি। এখানে এই কর্মের সম্পর্ক মহান আল্লাহ নিজের দিকে করেছেন যেহেতু প্রত্যেক জিনিসের সৃষ্টিকর্তা তিনিই। অতএব তাদের এই কর্ম তাদের ক্রমাগত পাপের পরিণতিতে মহান আল্লাহর ইচ্ছায় প্রকাশ পেয়েছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৫ . আল-হিজর
১৫:১৩ لَا یُؤۡمِنُوۡنَ بِهٖ وَ قَدۡ خَلَتۡ سُنَّۃُ الۡاَوَّلِیۡنَ ﴿۱۳﴾

তারা এতে ঈমান আনবে না, আর পূর্ববর্তীদের (ব্যাপারে আল্লাহর) রীতি তো বিগত হয়েছে। আল-বায়ান

তারা এর প্রতি ঈমান আনবে না, পূর্ববর্তী লোকেদেরও এ নিয়ম-নীতি চলে এসেছে। তাইসিরুল

তারা কুরআনে বিশ্বাস করবেনা এবং অতীতে পূর্ববর্তীদেরও এই আচরণ ছিল। মুজিবুর রহমান

They will not believe in it, while there has already occurred the precedent of the former peoples. Sahih International

১৩. এরা কুরআনের প্রতি ঈমান আনবে না, আর অবশ্যই গত হয়েছে পূর্ববর্তীদের রীতি।(১)

(১) অর্থাৎ পূর্ববর্তীদের রীতি চলে গেছে যে, তারা ঈমান আনেনি। আর আল্লাহও তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। তাদের উপর আযাব নাযিল করেছেন। সুতরাং বর্তমানকালের কাফের সম্প্রদায়ের অবস্থাও তদ্রুপ হবে, তারা ঈমান আনবে না, আর আল্লাহ তাদেরকে শাস্তি দেবেন। [জালালাইন, আইসারুত তাফসীর, মুয়াসসার]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৩) তারা কুরআনে বিশ্বাস করবে না। আর অবশ্যই পূর্ববর্তিগণের রীতি গত হয়েছে। [1]

[1] অর্থাৎ, তাদেরকে ধ্বংস করার রীতি তাই, যা মহান আল্লাহ প্রথম থেকেই নির্ধারিত করে রেখেছেন, আর তা হল মিথ্যাজ্ঞান ও বিদ্রূপ করার পর তাদেরকে ধ্বংস করা।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৫ . আল-হিজর
১৫:১৪ وَ لَوۡ فَتَحۡنَا عَلَیۡهِمۡ بَابًا مِّنَ السَّمَآءِ فَظَلُّوۡا فِیۡهِ یَعۡرُجُوۡنَ ﴿ۙ۱۴﴾

আর যদি আমি তাদের জন্য আসমানের কোন দরজা খুলে দিতাম, অতঃপর তারা তাতে আরোহণ করতে থাকত । আল-বায়ান

যদি তাদের জন্য আকাশের দরজা খুলে দেয়া হত, আর তারা তাতে উঠতে থাকত, তাইসিরুল

যদি তাদের জন্য আমি আকাশের দরযা খুলে দিই এবং তারা সারাদিন তাতে আরোহণ করতে থাকে । মুজিবুর রহমান

And [even] if We opened to them a gate from the heaven and they continued therein to ascend, Sahih International

১৪. আর যদি আমরা তাদের জন্য আকাশের দরজা খুলে দেই অতঃপর তারা তাতে আরোহন করতে থাকে,

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৪) যদি তাদের জন্য আমি আকাশের কোন দুয়ার খুলে দিই এবং তারা তাতে চড়তেও থাকে।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৫ . আল-হিজর
১৫:১৫ لَقَالُوۡۤا اِنَّمَا سُكِّرَتۡ اَبۡصَارُنَا بَلۡ نَحۡنُ قَوۡمٌ مَّسۡحُوۡرُوۡنَ ﴿۱۵﴾

তবুও তারা বলত, নিশ্চয় আমাদের দৃষ্টি কেড়ে নেয়া হয়েছে, বরং আমরা তো যাদুগ্রস্ত সম্প্রদায়। আল-বায়ান

তারা অবশ্যই বলত, ‘আমাদের চোখকে বাঁধিয়ে দেয়া হয়েছে, বরং আমাদের উপর যাদু করা হয়েছে।’ তাইসিরুল

তবুও তারা বলবেঃ আমাদের দৃষ্টি সম্মোহিত করা হয়েছে; না, বরং আমরা এক যাদুগ্রস্ত সম্প্রদায়। মুজিবুর রহমান

They would say, "Our eyes have only been dazzled. Rather, we are a people affected by magic." Sahih International

১৫. তবুও তারা বলবে, আমাদের দৃষ্টি সম্মোহিত করা হয়েছে; না, বরং আমরা এক জাদুগ্রস্ত সম্প্রদায়।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৫) তবুও তারা বলবে, ‘আমাদের দৃষ্টিভ্রম ঘটানো হয়েছে; বরং আমরা এক যাদুগ্রস্ত সম্প্রদায়।’ [1]

[1] তাদের কুফরী ও বিরুদ্ধাচরণ এমন পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল যে, ফিরিশতা অবতীর্ণ হওয়া তো দূরের কথা, যদি তাদের জন্য আকাশের দরজা খুলে দেওয়া হয় এবং তারা সেই দরজা দিয়ে আকাশে যাওয়া-আসা শুরু করে, তবুও তাদের চক্ষুতে বিশ্বাস হবে না এবং রসূলগণকে সত্যবাদী বলে মেনে নেবে না। বরং তারা বলবে, আমাদের চোখে বা আমাদের উপর যাদু করা হয়েছে, যার কারণে আমাদেরকে এরকম মনে হচ্ছে যে, আমরা আকাশে আসা যাওয়া করছি; অথচ এমনটি নয়!

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৫ . আল-হিজর
১৫:১৬ وَ لَقَدۡ جَعَلۡنَا فِی السَّمَآءِ بُرُوۡجًا وَّ زَیَّنّٰهَا لِلنّٰظِرِیۡنَ ﴿ۙ۱۶﴾

আর আমি আসমানে স্থাপন করেছি কক্ষপথসমূহ এবং তাকে সৌন্দর্যমন্ডিত করেছি দর্শকদের জন্য। আল-বায়ান

আমি আকাশে গ্রহ-নক্ষত্র সৃষ্টি করেছি আর দর্শকদের জন্য তা সুসজ্জিত করে দিয়েছি। তাইসিরুল

আকাশে আমি গ্রহ নক্ষত্র সৃষ্টি করেছি এবং ওকে করেছি সুশোভিত, দর্শকদের জন্য। মুজিবুর রহমান

And We have placed within the heaven great stars and have beautified it for the observers. Sahih International

১৬. আর অবশ্যই আমরা আকাশে বুরুজসমূহ সৃষ্টি করেছি(১) এবং দর্শকদের জন্য সেগুলোকে সুশোভিত করেছি(২);

(১) بروج শব্দটি برج এর বহুবচন। এটি বৃহৎ প্রাসাদ, দুর্গ ও মজবুত ইমারত ইত্যাদি অর্থে ব্যবহৃত হয়। মুজাহিদ, কাতাদাহ, প্রমুখ তাফসীরবিদগণ এখানে بروج এর তাফসীরে বৃহৎ নক্ষত্র উল্লেখ করেছেন। [তাবারী] সে হিসেবে আয়াতের অর্থ, আমি আকাশে বৃহৎ নক্ষত্র সৃষ্টি করেছি। সাধারণত: সূর্যের পরিভ্রমণ পথকে যে বারটি স্তরে বিভক্ত করা হয়ে থাকে, বুরুজ শব্দটি দ্বারা এখানে তা উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে বলে কোন কোন মুফাসসির মনে করেছেন। হাসান বসরী ও কাতাদা এটিকে গ্রহ-নক্ষত্র অর্থে গ্রহণ করেছেন। [ফাতহুল কাদীর]

(২) অন্য এক স্থানে আকাশকে তারকারাজির সাহায্যে সৌন্দর্যমণ্ডিত করার কথা বলেছেন। যেমনঃ “আমি কাছের আকাশকে নক্ষত্ররাজির সুষমা দ্বারা সুশোভিত করেছি, [সূরা আস-সাফফাতঃ ৬] “আমি নিকটবর্তী আকাশকে সুশোভিত করেছি প্রদীপমালা দ্বারা।” [সূরা আল-মুলকঃ ৫]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৬) আকাশে আমি গ্রহ-নক্ষত্র সৃষ্টি করেছি[1] এবং ওকে করেছি দর্শকদের জন্য সুশোভিত।

[1] بروج শব্দটি برج এর বহুবচন। যার অর্থ প্রকাশ হওয়া। আর এর থেকেই تبرج শব্দের উৎপত্তি; যার অর্থ মহিলাদের সৌন্দর্য প্রকাশ করা। এখানে আকাশের গ্রহ-নক্ষত্রকে بروج বলা হয়েছে, কারণ সেগুলি বড় উঁচুতে প্রকাশমান। কেউ কেউ বলেন, بروج বলতে সূর্য, চন্দ্র ও অন্যান্য গ্রহের কক্ষপথসমূহকে বুঝানো হয়েছে যা তাদের জন্য নির্দিষ্ট। আর তা হল বারটি; মেষরাশি, বৃষরাশি, মিথুনরাশি, কর্কটরাশি, সিংহরাশি, কন্যারাশি, তুলারাশি, বৃশ্চিকরাশি, ধনুঃরাশি, মকররাশি, কুম্ভরাশি ও মীনরাশি। আরবের লোকেরা এই সকল রাশিচক্র দ্বারা আবহাওয়ার অবস্থা জানার চেষ্টা করত। অবশ্য এতে কোন দোষ নেই, দোষ হল তার দ্বারা কোন পরিবর্তমান সংঘটিতব্য ঘটনা জানার দাবি করা, যেমন আজকাল কিছু অজ্ঞ মানুষদের মধ্যে তার প্রচলন রয়েছে; যাদের মাধ্যমে অনেকে নিজেদের ভূত-ভবিষ্যৎ ও ভাগ্য পরীক্ষা করে ও জেনে থাকে। অথচ পৃথিবীতে সংঘটিতব্য ঘটনা ও মঙ্গলামঙ্গলের সাথে এ সবের কোন সম্পর্ক নেই। যা কিছু হয় তা একমাত্র মহান আল্লাহর ইচ্ছায় হয়। এখানে মহান আল্লাহ ঐ সকল গ্রহ-নক্ষত্রের কথা উল্লেখ নিজ অসীম ক্ষমতা ও অনন্য সৃষ্টিকৌশল প্রকাশ করার জন্য করেছেন। এ ছাড়া তিনি এ কথাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, এ সকল আকাশের সৌন্দর্য স্বরূপ সৃষ্ট।

(আরো দ্রষ্টব্য সূরা ফুরক্বানের ৬১নং আয়াতের টীকা)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৫ . আল-হিজর
১৫:১৭ وَ حَفِظۡنٰهَا مِنۡ كُلِّ شَیۡطٰنٍ رَّجِیۡمٍ ﴿ۙ۱۷﴾

আর আমি তাকে সুরক্ষিত করেছি প্রত্যেক বিতাড়িত শয়তান থেকে। আল-বায়ান

আর প্রত্যেক অভিশপ্ত শয়ত্বান থেকে সেগুলোকে সুরক্ষিত করে দিয়েছি। তাইসিরুল

প্রত্যেক অভিশপ্ত শাইতান হতে আমি ওকে রক্ষা করি। মুজিবুর রহমান

And We have protected it from every devil expelled [from the mercy of Allah] Sahih International

১৭. এবং প্রত্যেক অভিশপ্ত শয়তান হতে আমরা সেগুলোকে সুরক্ষিত করেছি;

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৭) প্রত্যেক বিতাড়িত শয়তান হতে আমি ওকে নিরাপদ রেখেছি। [1]

[1] رجيم শব্দটি مرجوم এর অর্থে ব্যবহার হয়েছে। رجم (রজম) এর অর্থ পাথর ছুঁড়ে মারা। শয়তানকে ‘রাজীম’ এই জন্য বলা হয় যে, সে যখন আকাশের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে, তখন তাকে আকাশ থেকে জ্বলন্ত শিখা (উল্কা) ছুঁড়ে মারা হয়। রাজীম অভিশপ্ত ও বিতাড়িত অর্থেও ব্যবহার হয়। কারণ যাকে পাথর ছুঁড়ে মারা হয় তাকে চতুর্দিক থেকে অভিসম্পাত করা হয়। এখানে মহান আল্লাহ এ কথাই বলেছেন যে, আমি আকাশকে প্রত্যেক অভিশপ্ত শয়তান হতে রক্ষা করে থাকি ঐ সকল গ্রহ-নক্ষত্র দ্বারা, যা আঘাত হেনে শয়তানকে পালাতে বাধ্য করে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৫ . আল-হিজর
১৫:১৮ اِلَّا مَنِ اسۡتَرَقَ السَّمۡعَ فَاَتۡبَعَهٗ شِهَابٌ مُّبِیۡنٌ ﴿۱۸﴾

তবে যে গোপনে শোনে, তৎক্ষণাৎ সুস্পষ্ট জ্বলন্ত অগ্নিশিখা তার পিছু নেয়। আল-বায়ান

কিন্তু কেউ চুরি করে (খবর) শুনতে চাইলে উজ্জ্বল অগ্নিশিখা তার পশ্চাদ্ধাবণ করে। তাইসিরুল

আর কেহ চুরি করে সংবাদ শুনতে চাইলে ওর পশ্চাদ্ধাবন করে প্রদীপ্ত শিখা। মুজিবুর রহমান

Except one who steals a hearing and is pursued by a clear burning flame. Sahih International

১৮. কিন্তু কেউ চুরি করে(১) শুনতে চাইলে(২) প্রদীপ্ত শিখা(৩) তার পশ্চাদ্ধাবন করে।

(১) অর্থাৎ যেসব শয়তান তাদের বন্ধু ও পৃষ্ঠপোষকদেরকে গায়েবের খবর এনে দেবার চেষ্টা করে থাকে, যাদের সাহায্যে অনেক জ্যোতিষী, গণক ও ফকির বেশধারী বহুরূপী অদৃশ্য জ্ঞানের ভড়ং দেখিয়ে থাকে, গায়েবের খবর জানার কোন একটি উপায়-উপকরণও আসলে তাদের আয়ত্বে নেই। তারা চুরি-চামারি করে কিছু শুনে নেবার চেষ্টা অবশ্যি করে থাকে।

(২) হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “মাঝে মাঝে ফিরিশতারা আকাশের নীচে মেঘমালার স্তর পর্যন্ত অবতরণ করত এবং আসমানের সংবাদাদী নিয়ে পরস্পর আলোচনা করত। শয়তানরা শূন্যে আত্মগোপন করে এসব সংবাদ শুনত এবং গণকদের কাছে তা গোপনে পৌছিয়ে দিত। গণকরা এগুলোর সাথে শত মিথ্যা নিজেদের পক্ষ থেকে জুড়ে দিয়ে তা বলে বেড়ায়।” [বুখারীঃ ৩২১০, ২২২৮] পরে উল্কাপাতের মাধ্যমে তা বন্ধ করে দেয়া হয়। অন্য এক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ যখন আসমানে কোন বিষয়ের ফয়সালা করেন তখন ফেরেশতাগণ তার নির্দেশের আনুগত্য স্বরূপ তাদের ডানাগুলোকে মারতে থাকে তাতে পাথরের উপর জিঞ্জির পড়ার মত শব্দ অনুভূত হয়। তারপর যখন তাদের অন্তর থেকে ভয়ভীতি দূর হয় তখন তারা বলতে থাকেঃ তোমাদের প্রভু কি বলেছেন? তারাই আবার বলেঃ হক্ক বলেছেন, তিনি বড়, মহান। কান লাগিয়ে কথাচোরগণ এ কথোপকথন শুনতে পায়।

আর এসব কান লাগিয়ে শ্রবণকারীগণ একটির উপর একটি থাকে। বর্ণনাকারী সুফিয়ান তার হাত দিয়ে ইঙ্গিত করে দেখিয়ে দিলেন। তিনি তার ডান হাতের আঙ্গুলগুলোকে ফাঁক করলেন এবং একটির উপর আর একটি স্থাপন করলেন। তারপর কখনো কখনো উজ্জল আলোর শিখা সে কান লাগিয়ে শ্রবণকারীকে তার সাথীর কাছে কথা পৌছানোর পূর্বেই আঘাতে করে জালিয়ে দেয়। আবার কখনো কখনো আলোর শিখা তার কাছে পৌঁছার আগেই সে তার নীচের সাথীকে তা পৌঁছিয়ে দেয়। এভাবে পৌছাতে পৌছাতে যমীন পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। তারপর যাদুকর বা গণকের মুখে রেখে দেয়। তখন সে যাদুকর তথা গণক সে সংবাদের সাথে শতটি মিথ্যা মিশ্রিত করে বর্ণনা করে। আর এভাবেই তার কোন কোন কথা সত্যে পরিণত হয়। তারপর লোকেরা বলতে থাকেঃ সে কি আমাদেরকে বলেনি যে, অমুক অমুক দিন এই সেই হবে, তারপর আমরা কি সঠিক পাইনি? আসলে সেটা ছিল ঐ বাক্য যা আসমান থেকে শোনা গিয়েছিল। [বুখারীঃ ৪৭০১]

(৩) شهاب এর আভিধানিক অর্থ উজ্জ্বল আগুনের শিখা। এখানে বলা হয়েছে, (شِهَابٌ مُبِينٌ) কুরআনের অন্য জায়গায় এজন্য (شِهَابٌ ثَاقِبٌ) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। [সূরা আস-সাফফাতঃ ১০] আবার কোথায়ও বলা হয়েছে, (شِهَابًا رَصَدًا) [সূরা আলজিনঃ ৯] আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের এক সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন। ইতিমধ্যে আকাশে তারকা খসে পড়ল। তিনি সাহাবীদেরকে জিজ্ঞেস করলেনঃ জাহেলিয়াত যুগে অর্থাৎ ইসলাম-পূর্বকালে তোমরা তারকা খসে যাওয়াকে কি মনে করতে? তারা বললেনঃ আমরা মনে করতাম যে, বিশ্বে কোন ধরণের অঘটন ঘটবে অথবা কোন মহান ব্যক্তি মৃত্যুবরণ কিংবা জন্মগ্রহণ করবেন। তিনি বললেনঃ এটা অর্থহীন ধারণা। কারো জন্ম-মৃত্যুর সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। এসব জ্বলন্ত অঙ্গার শয়তানদেরকে বিতাড়নের জন্য নিক্ষেপ করা হয়। [মুসলিমঃ ২২২৯]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৮) আর কেউ চুরি করে সংবাদ শুনতে চাইলে ওর পশ্চাদ্ধাবন করে প্রদীপ্ত উল্কা। [1]

[1] এর অর্থ এই যে, শয়তানেরা আকাশে কথা শোনার জন্য যাওয়ার চেষ্টা করে। যার ফলে তাদের উপর জলন্ত উল্কা এসে পড়ে। যার কারণে কেউ মারা যায়, কেউ পালাতে সক্ষম হয়, আবার কেউ কিছু শুনে ফেলে। এর ব্যাখ্যা হাদীসে এভাবে এসেছে; নবী (সাঃ) বলেছেন, যখন মহান আল্লাহ আকাশে কোন কিছুর ফায়সালা করেন, তখন তা শুনে ফিরিশতাগণ অক্ষমতা ও দুর্বলতা প্রকাশ স্বরূপ ডানা নাড়তে শুরু করেন, যেন তা লোহার শিকল দ্বারা কোন পাথরের উপর মারার শব্দ। অতপর যখন তাদের মন থেকে আল্লাহর ভয় কিছুটা কমে আসে তখন তারা একে অপরকে জিজ্ঞাসা করে যে, তোমাদের প্রভু কি বললেন? তাঁরা বলেন, তিনি যা বলেছেন সত্য বলেছেন এবং তিনি সুমহান ও সুউচ্চ। তারপর সেই ফায়সালার কথা ঊর্ধ্ব থেকে নিম্ন আসমান পর্যন্ত ফিরিশতাবর্গ পরস্পর শোনাশুনি করেন। এই সময় শয়তানরাও তা শোনার জন্য চুপি চুপি গিয়ে কান পাতে এবং তারাও এক অপরের একটু দূরে থেকে তা শোনার চেষ্টা করে এবং কেউ কেউ এক আধটি শব্দ শুনে ফেলে ও পরে তা কোন গণকের কানে পৌঁছে দেয়। গণক সেই কথার সাথে আরও একশত মিথ্যা কথা মিলিয়ে মানুষের কাছে বর্ণনা করে। (সংক্ষেপে সহীহ বুখারী, তাফসীর সূরা হিজর)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ ১৮১১ থেকে ১৮২০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৬২৩৬ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 · · · 179 180 181 182 183 · · · 621 622 623 624 পরের পাতা »