যেমন, আপনি হয়ত ২ নং সূরার ২০ নং আয়াত এবং ১০ নং সূরার ৫ নং আয়াত এভাবে একসাথে আরো অন্য সূরার অন্য আয়াত সার্চ করতে চাইছেন, সেক্ষেত্রে আপনাকে উপরের সার্চ বক্সে
২:২০, ১০:৫ এভাবে অথবা ২/২০, ১০/৫ এভাবে লিখে সার্চ করতে হবে।
আপনি সূরা ও আয়াত নং বাংলা অথবা ইংরেজিতে লিখতে পারেন।
যেন তারা সেগুলোতে বসবাসই করেনি। জেনে রাখ, নিশ্চয় সামূদ জাতি তাদের রবের সাথে কুফরী করেছে। জেনে রাখ, সামূদ জাতির জন্য রয়েছে ধ্বংস। আল-বায়ান
যেন তারা সেখানে কোন দিনই বাস করেনি। জেনে রেখ, সামুদজাতি তাদের প্রতিপালককে অমান্য করেছিল। জেনে রেখ, সামূদকে (রহমাত থেকে) দূরে নিক্ষেপ করা হয়েছিল। তাইসিরুল
যেন তারা সেই গৃহগুলিতে কখনও বসবাস করেনি। ভাল রূপে জেনে রেখ! ছামূদ সম্প্রদায় নিজ রবের সাথে কুফরী করল। জেনে রেখ, ছামূদ সম্প্রদায় রাহমাত হতে দূরে ছিটকে পড়ল। মুজিবুর রহমান
As if they had never prospered therein. Unquestionably, Thamud denied their Lord; then, away with Thamud. Sahih International
৬৮. যেন তারা সেখানে কখনো বসবাস করেনি। জেনে রাখ! সামূদ সম্প্রদায় তো তাদের রবের সাথে কুফরী করেছিল। জেনে রাখ! ধ্বংসই হল সামূদ সম্প্রদায়ের পরিণাম।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৬৮) যেন তারা সেই গৃহগুলিতে কখনো বসবাস করেনি।[1] ভালরূপে জেনে রাখ! সামূদ সম্প্রদায় নিজ প্রতিপালককে অস্বীকার করল; জেনে রাখ! সামূদ সম্প্রদায় (তাঁর) করুণা হতে দূর হয়ে পড়ল ।
[1] তাদের গ্রামকে অথবা তাদেরকে অথবা উভয়কে মুদ্রিত ভুল অক্ষরের মত এমনভাবে মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে, ঠিক যেন তারা সেখানে কখনও বসবাস করেনি।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর অবশ্যই আমার ফেরেশতারা সুসংবাদ নিয়ে ইবরাহীমের কাছে আসল, তারা বলল, ‘সালাম’। সেও বলল, ‘সালাম’। বিলম্ব না করে সে একটি ভুনা গো বাছুর নিয়ে আসল। আল-বায়ান
আমার প্রেরিত ফেরেশতাগণ ইবরাহীমের কাছে সুসংবাদ নিয়ে এসেছিল। তারা এসে বলল ‘‘তোমার প্রতি সালাম! সেও বলল, ‘তোমাদের প্রতিও সালাম!’ অনতিবিলম্বে সে ভুনা করা বাছুর নিয়ে আসলো। তাইসিরুল
আর আমার প্রেরিত মালাইকা/ফেরেশতা ইবরাহীমের নিকট সুসংবাদ নিয়ে আগমন করল। (এবং) তারা বললঃ সালাম! ইবরাহীম বললঃ সালাম! অতঃপর অনতি বিলম্বে একটা ভাজা গো-বৎস আনয়ন করল। মুজিবুর রহমান
And certainly did Our messengers come to Abraham with good tidings; they said, "Peace." He said, "Peace," and did not delay in bringing [them] a roasted calf. Sahih International
৬৯. আর অবশ্যই আমাদের ফিরিশতাগণ সুসংবাদ নিয়ে ইবরাহীমের কাছে এসেছিল,(১) তারা বলল সালাম। তিনিও বললেন, সালাম।(২) অতঃপর বিলম্ব না করে তিনি এক কাবাবকৃত বাছুর নিয়ে আসলেন।
(১) এখানে ইবরাহীম খলিলুল্লাহ আলাইহিস সালামের একটি ঘটনা বর্ণিত হচ্ছে। আল্লাহ তা'আলা তাকে সন্তান লাভের সুসংবাদ দেয়ার জন্য তার কাছে কতিপয় ফেরেশেতাকে প্রেরণ করেছিলেন। কেননা ইবরাহীম আলাইহিস সালামের স্ত্রী সারা নিঃসন্তান ছিলেন। তিনি সন্তানের জন্য একান্ত উদগ্রীব ছিলেন কিন্তু উভয়ে বার্ধক্যের চরম সীমায় উপনীত হওয়ার কারণে দৃশ্যতঃ সন্তান লাভের কোন সম্ভাবনা ছিল না। এমতাবস্থায় আল্লাহ তা'আলা ফেরেশতার মাধ্যমে সুসংবাদ দান করলেন যে, তারা অচিরেই একটি পুত্র সন্তান লাভ করবেন। তার নামকরণ করা হল ইসহাক। আরো অবহিত করা হল যে, ইসহাক আলাইহিস সালাম দীর্ঘজীবি হবেন, সন্তান লাভ করবেন তার সন্তানের নাম হবে ইয়াকুব আলাইহিস সালাম। উভয়ে নবুওয়াতের মর্যাদায় অভিষিক্ত হবেন।
ফেরেশতাগণ মানবাকৃতিতে আগমন করায় ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তাদেরকে সাধারণ আগন্তুক মনে করে মেহমানদারীর আয়োজন করেন। ভূনা গোশত সামনে রাখলেন। কিন্তু তারা ছিলেন ফেরেশতা, পানাহারের উর্ধ্বে। কাজেই সম্মুখে আহার্য দেখেও তারা সেদিকে হাত বাড়ালেন না। এটা লক্ষ্য করে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম আতঙ্কিত হলেন যে, হয়ত এদের মনে কোন দুরভিসন্ধি রয়েছে।
ফেরেশতাগণ ইবরাহীম আলাইহিস সালামের অমূলক আশঙ্কা আন্দাজ করে তা দূর করার জন্য স্পষ্টভাবে জানালেন যে “আপনি শঙ্কিত হবেন না” আমরা আল্লাহর ফেরেশতা। আপনাকে একটি সুসংবাদ দান করে ও অন্য একটি বিশেষ কার্য সম্পাদনের জন্য আমরা প্রেরিত হয়েছি। তা হচ্ছে লুত আলাইহিস সালামের কাওমের উপর আযাব নাযিল করা। ইবরাহীম আলাইহিস সালামের স্ত্রী সারা’ পদার আড়ালে দাঁড়িয়ে কথাবার্তা শুনছিলেন। বৃদ্ধকালে সন্তান লাভের সুখবর শুনে হেসে ফেললেন এবং বললেন এহেন বৃদ্ধ বয়সে আমার গর্ভে সন্তান জন্ম হবে। আর আমার এ স্বামীও তো অতি বৃদ্ধ। ফেরেশতাগণ উত্তর দিলেন তুমি আল্লাহর ইচ্ছার প্রতি বিস্ময় প্রকাশ করছ? তার অসাধ্য কিছুই নেই। তোমাদের পরিবারের উপর আল্লাহ তা'আলার প্রভূত রহমত এবং অফুরন্ত বরকত রয়েছে।
(২) আলোচ্য আয়াত থেকে ইসলামী আচার-ব্যবহার সম্পর্কে কতিপয় গুরত্বপূর্ণ হেদায়াত পাওয়া যায়ঃ
১) “তারা সালাম বললেন, তিনি বললেনঃ সালাম।” এ দ্বারা বুঝা যায় যে, মুসলিমদের পারস্পারিক সাক্ষাৎ মোলাকাতের সময় পরস্পরকে সালাম করা কর্তব্য। আরো জানা গেল যে, আগন্তুক ব্যক্তি কথা বলার আগেই প্রথমে সালাম করবে। [সা’দী]
২) পারস্পরিক দেখা সাক্ষাতের বিশেষ কোন বাক্য উচ্চারণ করে একে অপরের প্রতি শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করার রীতি পৃথিবীর সকল জাতি ও ধর্মের মধ্যে দেখা যায়। তবে এ ব্যাপারেও ইসলামের শিক্ষা অনন্য ও সর্বোত্তম। কেননা, সালামের সুন্নাত সম্মত বাক্য السلام عليكم। এখানে সর্বপ্রথম আসসালাম আল্লাহর একটি গুণবাচক নাম হওয়ার কারণে আল্লাহর যিকির করা হল, সম্বোধিত ব্যক্তির জন্য সালামতি ও নিরাপত্তার দোআ করা হল, নিজের পক্ষ হতে জান মাল ইজ্জতের নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দেয়া হল। এর দ্বারা আরও প্রমাণিত হলো যে, সালাম দেয়ার এ নীতি ইবরাহীম আলাইহিস সালামের সময়েও ছিল। [সা'দী]
৩) এখানে পবিত্র কুরআনে ফেরেশতাদের পক্ষ হতে ‘সালাম’ এবং ইবরাহীম আলাইহিস সালামের তরফ হতে শুধু ‘সালাম’ শব্দ উল্লেখ করা হয়েছে। অবশ্য এখানে উভয়ক্ষেত্রে সুন্নত মোতাবেক সালামের জবাবের পূর্ণ বাক্যই বোঝানো হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও নিজের আচরণের মাধ্যমে সালামের পূর্ণ বাক্য শিক্ষা দান করেছেন অর্থাৎ প্রথম পক্ষ আসসালামু আলাইকুম বলবে তদুত্তরে দ্বিতীয় পক্ষ ‘ওয়া আলাইকুমুসসালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ বলবে। এ আয়াতেও প্রথম সালাম প্রদানের বাক্যটি ক্রিয়ামূলক বাক্য আর তার উত্তরে প্রদত্ত বাক্যটি বিশেষ্যমূলক বাক্য। বিশেষ্যমূলক বাক্য বেশী অর্থবহ। সেজন্য সালামের জওয়াব সালাম থেকেও বেশী থাকতে হয়। [সা'দী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৬৯) আর আমার প্রেরিত ফিরিশতারা ইব্রাহীমের নিকট সুসংবাদ[1] নিয়ে আগমন করে বলল, ‘সালাম।’[2] ইব্রাহীমও (উত্তরে) বলল, ‘সালাম।’[3] অতঃপর অনতিবিলম্বে একটা ভুনা বাছুর নিয়ে এল। [4]
[1] এটা আসলে লূত (আঃ) ও তাঁর সম্প্রদায়ের ঘটনার এক অংশ । লূত (আঃ) ইবরাহীম (আঃ)-এর চাচাতো ভাই ছিলেন। তাঁর গ্রাম মৃত সাগরের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত ছিল। আর ইবরাহীম (আঃ) ফিলিস্তীনে বসবাস করতেন। যখন লূত (আঃ)-এর সম্প্রদায়কে ধ্বংস করে দেওয়ার ফায়সালা করে নেওয়া হল, তখন তাদের নিকট ফিরিশতা পাঠানো হল। উক্ত ফিরিশতাগণ লূত (আঃ)-এর সম্প্রদায়ের নিকট যাওয়ার পথে ইবরাহীম (আঃ)-এর নিকট গিয়েছিলেন এবং তাঁকে পুত্র-সন্তানের সুসংবাদ দিয়েছিলেন।
[2] অর্থাৎ, سلمنا عليك سلامًا (আমরা আপনাকে সালাম দিচ্ছি।)
[3] যেরূপ প্রথম সালাম এক ঊহ্য ক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত ছিল, অনুরূপ এ سلامٌ ‘মুবতাদা’ অথবা ‘খবর’ হওয়ার কারণে পেশ অবস্থায় আছে। পূর্ণ বাক্য হবে, أمرُكٌمْ سَلاَمٌ يا عَلَيْكُمْ سَلامٌ
[4] ইবরাহীম (আঃ) বড় মেহমান-নেওয়ায ছিলেন। তিনি জানতে পারেননি যে, এঁরা ফিরিশতা মানুষের রূপধারণ করে এসেছেন এবং এঁদের পানাহারের কোন প্রয়োজন নেই। সুতরাং তিনি তাঁদেরকে (মানুষ) মেহমান মনে করেন এবং অবিলম্বে মেহমানদের খাতির করার জন্য বাছুরের ভুনা গোশত তাঁদের সম্মুখে উপস্থিত করলেন। এতে বুঝা যায় যে, মেহমানকে জিজ্ঞাসা করা জরুরী নয়; বরং ঘরে যা কিছু আছে তাই মেহমানের সামনে পেশ করা উচিত।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানঅতঃপর যখন সে দেখতে পেল, তাদের হাত এর প্রতি পৌঁছছে না, তখন তাদেরকে অস্বাভাবিক মনে করল এবং সে তাদের থেকে ভীতি অনুভব করল। তারা বলল, ‘ভয় করো না, নিশ্চয় আমরা লূতের কওমের কাছে প্রেরিত হয়েছি’। আল-বায়ান
যখন সে দেখল তাদের হাত তার (অর্থাৎ খাবারের) দিকে পৌঁছতেছে না, সে তাদের সম্পর্কে সন্দিগ্ধ হল আর তাদের ব্যাপারে ভীতি অনুভব করল। তারা বলল, ‘ভয় পেয়ো না, আমাদেরকে পাঠানো হয়েছে লূতের সম্প্রদায়ের প্রতি।’ তাইসিরুল
কিন্তু যখন সে দেখল যে, তাদের হাত সেই খাদ্যের দিকে অগ্রসর হচ্ছেনা তখন তাদেরকে অদ্ভুত ভাবতে লাগল এবং মনে মনে তাদের থেকে শংকিত হল। (এ দেখে) তারা বললঃ ভয় করবেননা, আমরা লূত সম্প্রদায়ের প্রতি প্রেরিত হয়েছি। মুজিবুর রহমান
But when he saw their hands not reaching for it, he distrusted them and felt from them apprehension. They said, "Fear not. We have been sent to the people of Lot." Sahih International
৭০. অতঃপর তিনি যখন দেখলেন তাদের হাত সেটার দিকে প্রসারিত হচ্ছে না, তখন তাদেরকে অবাঞ্ছিত মনে করলেন এবং তাদের সম্বন্ধে তার মনে ভীতি সঞ্চার হল।(১) তারা বলল, ভয় করবেন না, আমরা তো লুতের সম্প্রদায়ের প্রতি প্রেরিত হয়েছি।
(১) তাদেরকে ভয় পাবার কারণ সম্পর্কে কয়েকটি মত আছেঃ
একঃ কোন কোন মুফাসসিরের মতে এ ভয়ের কারণ ছিল এই যে, অপরিচিত নবাগতরা খেতে ইতস্তত করলে তাদের নিয়তের ব্যাপারে ইবরাহীমের মনে সন্দেহ জাগে এবং তারা কোন প্রকার শক্রতার উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছে কিনা-এ চিন্তা তাঁর মনকে আতংকিত করে তোলে। কারণ আরব দেশে কোন ব্যক্তি কারোর মেহমানদারীর জন্য আনা খাবার গ্রহণ না করলে মনে করা হতো সে মেহমান হিসেবে নয় বরং হত্যা ও লুটতরাজের উদ্দেশ্যে এসেছে। [বাগভী; কুরতুবী; ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর; সা’দী]
দুইঃ কথা বলার এ ধরণ থেকে পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে যে, খাবারের দিকে তাদের হাত এগিয়ে যেতে না দেখে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম বুঝতে পেরেছিলেন যে, তারা ফেরেশতা। আর যেহেতু ফেরেশতাদের প্রকাশ্যে মানুষের বেশে আসা অস্বাভাবিক অবস্থাতেই হয়ে থাকে, তাই ইবরাহীম মূলত যে বিষয়ে ভীত হয়েছিলেন তা ছিল এই যে, তাঁর পরিবারের সদস্যরা বা তাঁর জনপদের লোকেরা এমন কোন দোষ করে বসেনি তো যে ব্যাপারে পাকড়াও করার জন্য ফেরেশতাদের এই আকৃতিতে পাঠানো হয়েছে। [ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৭০) কিন্তু যখন সে দেখল যে, তাদের হাত সেই খাদ্যের দিকে অগ্রসর হচ্ছে না, তখন তাদেরকে অদ্ভুত ভাবতে লাগল এবং মনে মনে তাদের ব্যাপারে শঙ্কিত হল;[1] (এ দেখে) তারা বলল, ‘তুমি ভয় করবে না, আমরা লূত সম্প্রদায়ের প্রতি প্রেরিত হয়েছি।’ [2]
[1] ইবরাহীম (আঃ) যখন দেখলেন যে, তাঁরা খাবার খাচ্ছেন না, তখন তিনি ভয় পেয়ে গেলেন। বলা হয় যে, তাঁদের নিকট এটা প্রসিদ্ধ ছিল যে, কারো বাড়িতে আগত মেহমান যদি মেহমানি গ্রহণ না করে, তাহলে ভাবা হত যে, আগত মেহমান কোন ভাল উদ্দেশ্য নিয়ে আসেনি। এই ঘটনাতে এও বুঝা গেল যে, আল্লাহর পয়গম্বরগণ গায়বের খবর জানতেন না। ইবরাহীম (আঃ) যদি গায়বের খবর জানতেন, তাহলে তিনি বাছুরের ভুনা গোশত আনতেন না এবং তাঁদের ব্যাপারে ভীতি অনুভব করতেন না।
[2] তাঁর এই ভীতি ফিরিশতাগণ অনুভব করতে পেরেছিলেন, অথবা সেই চিহ্ন দ্বারা বুঝতে পেরেছিলেন যা এমতাবস্থায় মানুষের মুখমন্ডলে প্রকাশ পায়, অথবা ইবরাহীম (আঃ)-এর কথাবার্তার মাধ্যমে তা প্রকাশ পেয়েছিল, যেমন অন্য স্থানে পরিষ্কার বলা হয়েছে, {إِنَّا مِنكُمْ وَجِلُونَ} ‘‘আমরা তোমাদের আগমনে আতঙ্কিত।’’ (সূরা হিজর ৫২) সুতরাং ফিরিশতাগণ বললেন, আতঙ্কিত হবেন না, আপনি যা ভাবছেন আমরা তা নই। বরং আমরা আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত হয়েছি এবং আমরা লূত সম্প্রদায়ের নিকট যাচ্ছি।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর তার স্ত্রী দাঁড়ানো ছিল, সে হেসে উঠল। অতঃপর আমি তাকে সুসংবাদ দিলাম ইসহাকের ও ইসহাকের পরে ইয়া‘কূবের। আল-বায়ান
(ইবরাহীমের) স্ত্রী দাঁড়িয়েছিল, সে হেসে ফেলল। তখন আমি তাকে ইসহাকের আর ইসহাকের পর ইয়া‘কূবের সুসংবাদ দিলাম। তাইসিরুল
আর তার স্ত্রী দন্ডায়মান ছিল, সে হেসে উঠলো। তখন আমি তাকে (ইবরাহীমের স্ত্রীকে) সুসংবাদ দিলাম ইসহাকের এবং ইসহাকের পর ইয়াকূবের। মুজিবুর রহমান
And his Wife was standing, and she smiled. Then We gave her good tidings of Isaac and after Isaac, Jacob. Sahih International
৭১. আর তার স্ত্রী দাঁড়ানো ছিলেন, অতঃপর তিনি হেসে ফেললেন।(১) অতঃপর আমরা তাকে ইসহাকের ও ইসহাকের পরবর্তী ইয়াকুবের সুসংবাদ দিলাম।(২)
(১) এ থেকে বুঝা যায় ফেরেশতার মানুষের আকৃতিতে আসার খবর শুনেই পরিবারের সবাই পেরেশান হয়ে পড়েছিল। এ খবর শুনে ইবরাহীমের স্ত্রীও ভীত হয়েছিলেন। তারপর যখন তিনি শুনলেন, তাদের গৃহের বা পরিবারের ওপর কোন বিপদ আসছে না। তখনই তার ধড়ে প্রাণ এলো এবং তিনি আনন্দিত হলেন। [বাগভী; কুরতুবী] অথবা তিনি আযাব নাযিল হওয়া এবং কাওমে লুতের গাফিলতির ব্যাপারটি জেনে হেসে দিলেন [বাগভী] অথবা তিনি হেসেছিলেন সন্তানের সুসংবাদ শোনার পর। তখন অবশ্য আয়াতের শব্দের মধ্যে আগ-পিছ হয়েছে ধরে নিতে হবে। [বাগভী; কুরতুবী] অথবা তিনি ও তার স্বামী উভয়েই মেহমানের খিদমতে নিয়োজিত আছেন তারপরও তারা খাচ্ছেন না, এ কথাটি তিনি হেসে হেসেই বলেছিলেন। [ইবন কাসীর]
(২) ফেরেশতাদের ইবরাহীমের পরিবর্তে তাঁর স্ত্রী সারাকে এ খবর শুনাবার কারণ এই ছিল যে, ইতিপূর্বে ইবরাহীম একটি পুত্র সন্তান লাভ করেছিলেন। তার দ্বিতীয়া স্ত্রী হাজেরার গর্ভে সাইয়্যিদিনা ইসমাঈল আলাইহিস সালামের জন্ম হয়েছিল। কিন্তু এ পর্যন্ত সারা ছিলেন সন্তানহীনা। তাই তাঁর মনটিই ছিল বেশী বিষন্ন। তাঁর মনের এ বিষন্নতা দূর করার জন্য তাঁকে শুধু ইসহাকের মতো মহান গৌরবান্বিত পুত্রের জন্মের সুসংবাদ দিয়ে ক্ষান্ত হননি বরং এ সংগে এ সুসংবাদও দেন যে, এ পুত্রের পরে আসছে ইয়াকুবের মতো নাতি, যিনি হবেন বিপুল মর্যাদা সম্পন্ন পয়গম্বর। [কুরতুবী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৭১) সে সময় তার স্ত্রী দন্ডায়মান ছিল, সে হেসে উঠল।[1] তখন আমি তাকে (ইব্রাহীমের স্ত্রীকে) সুসংবাদ দিলাম ইসহাকের এবং ইসহাকের পর ইয়াকূবের।
[1] ইবরাহীম (আঃ)-এর স্ত্রী কেন হেসেছিলেন? অনেকে বলেন, লূত (আঃ)-এর সম্প্রদায়ের ফিতনা-ফাসাদ সম্পর্কে তিনিও অবগত ছিলেন, তাই তাদের ধ্বংসের সংবাদ শুনে তিনি আনন্দ অনুভব করেছিলেন। কেউ কেউ বলেন, এই জন্য হেসেছিলেন যে, দেখো! আকাশে তাদের ধ্বংসের ফায়সালা হয়ে গেছে, আর এই সম্প্রদায় এখনো বেখবর হয়ে বসে আছে। অনেকে বলেন, বাক্যটি অগ্র-পশ্চাৎ হয়ে আছে এবং হাসির সম্পর্ক সেই সুসংবাদের সাথে আছে, যে সুসংবাদ ফিরিশতাগণ উভয় বৃদ্ধকে দিয়েছিলেন। আর আল্লাহই অধিক জানেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানসে বলল, ‘হায়, কী আশ্চর্য! আমি সন্তান প্রসব করব, অথচ আমি বৃদ্ধা, আর এ আমার স্বামী, বৃদ্ধ? এটা তো অবশ্যই এক আশ্চর্যজনক ব্যাপার’! আল-বায়ান
সে বলল, ‘হায় আমার কপাল! সন্তান হবে আমার, আমি তো অতি বুড়ি আর আমার এই স্বামীও বৃদ্ধ, এতো এক আশ্চর্য ব্যাপার।’ তাইসিরুল
সে বললঃ হায় কপাল! এখন আমি সন্তান প্রসব করব বৃদ্ধা হয়ে! আর আমার এই স্বামী অতি বৃদ্ধ। বাস্তবিক এটাতো একটা বিস্ময়কর ব্যাপার! মুজিবুর রহমান
She said, "Woe to me! Shall I give birth while I am an old woman and this, my husband, is an old man? Indeed, this is an amazing thing!" Sahih International
৭২. তিনি বললেন, হায়, কি আশ্চর্য! সন্তানের জননী হব আমি, যখন আমি বৃদ্ধা এবং এ আমার স্বামী বৃদ্ধ! এটা অবশ্যই এক অদ্ভুত ব্যাপার।(১)
(১) (يَا وَيْلَتَىٰ) শব্দটি সাধারণত কোন দুর্ভোগে পড়লে মানুষ ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু এর মানে এ নয় যে, সারা এ খবর শুনে যথার্থই খুশী হবার পরিবর্তে উল্টো একে দুর্ভাগ্য মনে করেছিলেন। বরং আসলে এগুলো এমন ধরনের শব্দ ও বাক্য, যা মেয়েরা সাধারণত কোন ব্যাপারে অবাক হয়ে গেলে বলে থাকে। [কুরতুবী; ইবন কাসীর] এ ক্ষেত্রে নিছক বিস্ময় প্রকাশই উদ্দেশ্য হয়ে থাকে। [কুরতুবী; ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৭২) সে বলল, ‘হায় ভাগ্য! আমি কি সন্তান প্রসব করব অথচ আমি বৃদ্ধা এবং আমার এই স্বামীও বৃদ্ধ! বাস্তবিকই এটা তো একটা বিস্ময়কর ব্যাপার!’ [1]
[1] উক্ত স্ত্রী সারাহ ছিলেন। তিনি নিজে বৃদ্ধা ও তাঁর স্বামী ইবরাহীম (আঃ)ও বৃদ্ধ ছিলেন। এই জন্য বিস্মিত হওয়া স্বাভাবিক ছিল, আর তারই বহিঃপ্রকাশ তাঁর দ্বারা হয়েছিল।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতারা বলল, ‘আল্লাহর সিদ্ধান্তে তুমি আশ্চর্য হচ্ছ? হে নবী পরিবার, তোমাদের উপর আল্লাহর রহমত ও তাঁর বরকত। নিশ্চয় তিনি প্রশংসিত সম্মানিত’। আল-বায়ান
তারা বলল, ‘আল্লাহর কাজে তুমি আশ্চর্য হচ্ছ, ওহে (ইবরাহীমের) পরিবারবর্গ! তোমাদের উপর রয়েছে আল্লাহর দয়া ও বরকতসমূহ, তিনি বড়ই প্রশংসিত, বড়ই মহান।’ তাইসিরুল
তারা (মালাক) বললঃ আপনি কি আল্লাহর কাজে বিস্ময় বোধ করছেন? (হে) এই পরিবারের লোকেরা! আপনাদের প্রতি রয়েছে আল্লাহর রাহমাত ও বারাকাত; নিশ্চয়ই তিনি সমস্ত প্রশংসার যোগ্য, মহিমান্বিত। মুজিবুর রহমান
They said, "Are you amazed at the decree of Allah? May the mercy of Allah and His blessings be upon you, people of the house. Indeed, He is Praiseworthy and Honorable." Sahih International
৭৩. তারা বলল, আল্লাহর কাজে আপনি বিস্ময় বোধ করছেন? হে নবী পরিবার! আপনাদের প্রতি রয়েছে আল্লাহর অনুগ্রহ ও কল্যাণ।(১) তিনি তো প্রশংসার যোগ্য ও অত্যন্ত সম্মানিত।(২)
(১) এর মানে হচ্ছে, যদিও প্রকৃতিগত নিয়ম অনুযায়ী এ বয়সে মানুষের সন্তান হয় না তবুও আল্লাহর কুদরতে এমনটি হওয়া কোন অসম্ভব ব্যাপারও নয়। আর এ সুসংবাদ যখন তোমাকে আল্লাহর পক্ষ থেকে দেয়া হচ্ছে তখন তোমার মতো একজন মুমিনা মহিলার পক্ষে এ ব্যাপারে বিস্ময় প্রকাশ করার কোন কারণ নেই। [তাবারী; কুরতুবী] মুজাহিদ বলেন, তখন সারার বয়স ছিল ৯৯ বছর। আর ইবরাহীমের বয়স ছিল ১০০ বছর, সে হিসেবে ইবরাহীমের বয়স তার স্ত্রী অপেক্ষা ১ বছর বেশি। [বাগভী; কুরতুবী] ইবন ইসহাক বলেন, তার বয়স ১২০ বছর এবং তার স্ত্রীর ৯০ বছর। এতে আরও মতামত রয়েছে। [বাগভী; কুরতুবী]
(২) বরকত শব্দের অর্থ, বৃদ্ধি ও প্রাচুর্যতা। এখানে যে বরকতের কথা বলা হয়েছে তা হচ্ছে পরবর্তী সমস্ত নবী-রাসূল ইবরাহীমের বংশধরদের থেকেই হয়েছে। [কুরতুবী] এ আয়াতে বর্ণিত রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু থেকে ইবন আব্বাস মত নিয়েছেন যে, সালামের সর্বশেষ শব্দ হবে, বারাকাতুহু। [মুয়াত্তা মালিক: ২/৯৫৯; কুরতুবী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৭৩) তারা বলল, ‘তুমি কি আল্লাহর কাজে বিস্ময়বোধ করছ?[1] (হে নবীর) পরিবার! তোমাদের প্রতি তো আল্লাহর (বিশেষ) করুণা ও তাঁর বরকতসমূহ রয়েছে।[2] নিশ্চয় তিনি প্রশংসার যোগ্য মহিমান্বিত।’
[1] এটা অস্বীকৃতিসূচক প্রশ্ন। অর্থাৎ তুমি আল্লাহ তাআলার ফায়সালা ও ভাগ্যের উপর বিস্ময়বোধ করছ? অথচ তাঁর জন্য কোন বস্তুই দুষ্কর নয়। আর না তিনি প্রয়োজনীয় উপকরণের মুখাপেক্ষী, তিনি যা চান, তা كن (হও) শব্দ দ্বারা তৈরী করতে পারেন।
[2] ইবরাহীম (আঃ)-এর স্ত্রীকে এখানে ফিরিশতাগণ ‘আহলে বায়ত’ বলে সম্বোধন করেছেন এবং তার জন্য বহুবচন (আপনাদের) শব্দ ব্যবহার করেছেন। যাতে প্রথমতঃ এই কথা প্রমাণ হয় যে, স্ত্রী সর্বপ্রথম আহলে বায়তের অন্তর্ভুক্ত। দ্বিতীয়তঃ এ প্রমাণ হয় যে, ‘আহলে বায়তের’ জন্য বহুবচন পুংলিঙ্গ শব্দ ব্যবহার করাও ঠিক। যেমন সূরা আহযাবের ৩৩নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা নবী (সাঃ)-এর পবিত্রা স্ত্রীগণকেও ‘আহলে বায়ত’ বলেছেন এবং তাঁদেরকেও বহুবচন পুংলিঙ্গ শব্দ দ্বারা সম্বোধন করেছেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানঅতঃপর যখন ইবরাহীম থেকে ভয় দূর হল এবং তার কাছে সুসংবাদ এল, তখন সে লূতের কওম সম্পর্কে আমার সাথে বাদানুবাদ করতে লাগল। আল-বায়ান
পরে যখন ইবরাহীমের আতঙ্ক দূর হল, আর তার কাছে সুসংবাদ আসল, তখন সে লূত জাতির ব্যাপারে আমার সাথে ঝগড়া করল। তাইসিরুল
অতঃপর যখন ইবরাহীমের সেই ভয় দূর হয়ে গেল এবং সে সুসংবাদ প্রাপ্ত হল তখন আমার প্রেরিত মালাইকার সাথে লূতের কাওম সম্বন্ধে তর্ক-বিতর্ক (জোর সুপারিশ) করতে শুরু করল। মুজিবুর রহমান
And when the fright had left Abraham and the good tidings had reached him, he began to argue with Us concerning the people of Lot. Sahih International
৭৪. অতঃপর যখন ইবরাহীমের ভীতি দূরীভূত হল এবং তার কাছে সুসংবাদ আসল তখন তিনি লুতের সম্প্রদায় সম্বন্ধে আমাদের সাথে বাদানুবাদ করতে লাগলেন।(১)
(১) ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ফেরেশতাদের সাথে কি নিয়ে ঝগড়া করলেন তা অবশ্য আয়াতে উল্লেখ করা হয়নি। তবে সূরা আল-আনকাবৃতের ৩১–৩২ নং আয়াতে বলা হয়েছে, “যখন আমার প্রেরিত ফিরিশতাগণ সুসংবাদসহ ইবরাহীমের কাছে আসল, তারা বলেছিল, আমরা এ জনপদবাসীকে ধ্বংস করব, এর অধিবাসীরা তো যালিম।” ইবরাহীম বললেন, এ জনপদে তো লুত রয়েছে। তারা বলল, সেখানে কারা আছে, তা আমরা ভাল জানি, আমরা তো লূতকে ও তাঁর পরিজনবর্গকে রক্ষা করবই, তাঁর স্ত্রীকে ছাড়া; সে তো পিছনে অবস্থানকারীদের অন্তর্ভুক্ত। এর দ্বারা বুঝা গেল যে, ইবরাহীম আলাইহিস সালামের ঝগড়ার বিষয় ছিল যে, যদি কাওমে লুতকে ধ্বংস করা হয় তবে লুতের কি অবস্থা হবে? সে তো মুমিন, তাকে কিভাবে বাঁচানো যায়? তখন ফেরেশতাগণ ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে আশ্বস্ত করলেন যে, আপনার ঘাবড়াবার কারণ নেই। আমরা তাকে ও ঈমানদারদের রক্ষা করবই।
তাফসীরে জাকারিয়া(৭৪) অতঃপর যখন ইব্রাহীমের সেই ভয় দূর হয়ে গেল এবং সে সুসংবাদ প্রাপ্ত হল, তখন আমার (প্রেরিত ফিরিশতাদের) সাথে লূত-সম্প্রদায় সম্বন্ধে তর্ক-বিতর্ক করতে শুরু করে দিল। [1]
[1] এই তর্ক-বিতর্কের অর্থ হল, ইবরাহীম (আঃ) ফিরিশতাগণকে বললেন যে, আপনারা যে গ্রামকে ধ্বংস করতে যাচ্ছেন, সেখানে লূত বর্তমানে উপস্থিত আছে। এর উত্তরে ফিরিশতাগণ বললেন ‘‘আমরা জানি যে, সেখানে লূত বসবাস করেন। কিন্তু আমরা তাঁর স্ত্রী ছাড়া তাঁকে ও তাঁর বাড়ির লোকদেরকে বাঁচিয়ে নেব।’’ (আনকাবূত ৩২)
তাফসীরে আহসানুল বায়াননিশ্চয় ইবরাহীম অত্যন্ত সহনশীল, অধিক অনুনয় বিনয়কারী, আল্লাহমুখী। আল-বায়ান
অবশ্যই ইবরাহীম ছিল বড়ই সহিষ্ণু, কোমল হৃদয় আর আল্লাহমুখী। তাইসিরুল
বাস্তবিক ইবরাহীম ছিল বড় সহিষ্ণু প্রকৃতির, দয়ালু স্বভাব, কোমল হৃদয়। মুজিবুর রহমান
Indeed, Abraham was forbearing, grieving and [frequently] returning [to Allah]. Sahih International
৭৫. নিশ্চয় ইবরাহীম অত্যন্ত সহনশীল, কোমল হৃদয়(১), সর্বদা আল্লাহ অভিমুখী।
(১) সূরা আত-তাওবার ১১৪ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় এর বিস্তারিত আলোচনা চলে গেছে।
তাফসীরে জাকারিয়া(৭৫) নিশ্চয় ইব্রাহীম ছিল বড় সহিষ্ণু প্রকৃতির, কোমল হৃদয়ের, আল্লাহ অভিমুখী।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ানহে ইবরাহীম, তুমি এ থেকে বিরত হও। নিশ্চয় তোমার রবের সিদ্ধান্ত এসে গেছে এবং নিশ্চয় তাদের উপর আসবে আযাব, যা প্রতিহত হবার নয়। আল-বায়ান
‘হে ইবরাহীম! এথেকে তুমি নিবৃত্ত হও, তোমার প্রতিপালকের নির্দেশ এসে গেছে, তাদের প্রতি শাস্তি আসবেই যা রদ হবার নয়। তাইসিরুল
হে ইবরাহীম! এ কথা ছেড়ে দাও, তোমার রবের আদেশ এসে গেছে এবং তাদের উপর এমন এক শাস্তি আসছে যা কিছুতেই প্রতিহত করার নয়। মুজিবুর রহমান
[The angels said], "O Abraham, give up this [plea]. Indeed, the command of your Lord has come, and indeed, there will reach them a punishment that cannot be repelled." Sahih International
৭৬. হে ইবরাহীম! আপনি এটা থেকে বিরত হোন(১); নিশ্চয় আপনার রবের বিধান এসে পড়েছে; আর নিশ্চয় তাদের প্রতি আসবে শাস্তি যা অনিবার্য।
(১) অর্থাৎ লুতের কাওমের ব্যাপারে আপনার বিবাদ পরিত্যাগ করুন। [কুরতুবী] কারণ, তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেয়া হয়ে গেছে। [ইবন কাসীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(৭৬) হে ইব্রাহীম! এ (তর্ক) হতে বিরত হও। তোমার প্রতিপালকের নির্দেশ এসে গেছে এবং তাদের উপর এমন এক শাস্তি আসছে যা কিছুতেই টলবার নয়। [1]
[1] ফিরিশতাগণ ইবরাহীম (আঃ)-কে বললেন, এখন এই তর্ক-বিতর্ক করে কোন লাভ নেই, তর্ক-বিতর্ক বাদ দিন! তাদের ধ্বংসের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলার সেই আদেশ এসে গেছে, যা তাঁর নিকট তাদের জন্য নির্ধারিত ছিল এবং উক্ত আযাব এখন না কারো তর্ক-বিতর্কে বন্ধ হবে, আর না কারোর দু’আতে স্থগিত হবে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআর যখন লূতের কাছে আমার ফেরেশতা আসল, তখন তাদের (আগমনের) কারণে তার অস্বস্তিবোধ হল এবং তার অন্তর খুব সঙ্কুচিত হয়ে গেল। আর সে বলল, ‘এ তো কঠিন দিন’। আল-বায়ান
আমার প্রেরিত বার্তাবাহকগণ যখন লূতের কাছে আসলো, তাদের আগমনে সে ঘাবড়ে গেল। (তাদেরকে রক্ষায়) নিজেকে অসমর্থ মনে করল, আর বলল, ‘আজ বড়ই বিপদের দিন। তাইসিরুল
আর যখন আমার ঐ মালাইকাগণ লূতের নিকট উপস্থিত হল তখন সে তাদের জন্য চিন্তিত হয়ে পড়ল এবং সেই কারণে অন্তর সংকুচিত হল, আর বললঃ আজকের দিনটি অতি কঠিন। মুজিবুর রহমান
And when Our messengers, [the angels], came to Lot, he was anguished for them and felt for them great discomfort and said, "This is a trying day." Sahih International
৭৭. আর যখন আমাদের প্রেরিত ফিরিশতাগণ লুতের কাছে আসল তখন তাদের আগমনে তিনি বিষন্ন হলেন এবং নিজকে তাদের রক্ষায় অসমর্থ মনে করলেন এবং বললেন, এটা বড়ই বিপদের দিন।(১)
(১) আলোচ্য আয়াতসমূহে লুত আলাইহিস সালাম ও তার দেশবাসীর অবস্থা ও দেশবাসীর উপর কঠিন আযাবের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। লুত আলাইহিস সালামের কাওম একে তো কাফের ছিল অধিকন্তু এমন এক জঘন্য অপকর্ম ও লজ্জাকর অনাচারে লিপ্ত ছিল যা পূর্বে কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর মধ্যে পাওয়া যায়নি, বন্য পশুরাও যা ঘৃনা করে। অর্থাৎ পুরুষ কর্তৃক অন্য পুরুষের মৈথুন করা। ব্যাভিচারের চেয়েও ইহা জঘন্য অপরাধ। এ জন্যই তাদের উপর এমন কঠিন আযাব নাযিল হয়েছে যা অন্য কোন অপকর্মকারীদের উপর কখনো নাযিল হয়নি।
লুত আলাইহিস সালামের ঘটনা যা আলোচ্য আয়াতসমূহে বর্ণিত হয়েছে তা হচ্ছে এই যে, আল্লাহ তা'আলা জিবরীল আলাইহিস সালাম সহ কতিপয় ফেরেশতাকে কওমে লুতের উপর আযাব নাযিল করার জন্য প্রেরণ করেন। যাত্রাপথে তারা ফিলিস্তানে প্রথমে ইবরাহীম আলাইহিস সালামের সমীপে উপস্থিত হন। আল্লাহ তা'আলা যখন কোন জাতিকে আযাব দ্বারা ধ্বংস করেন তখন তাদের কার্যকলাপের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ আযাবই নাযিল করে থাকেন। এ ক্ষেত্রেও ফেরেশতাগণকে নওজোয়ানরূপে প্রেরণ করেন।
লুত আলাইহিস সালাম ও তাদেরকে মানুষ মনে করে তাদের নিরাপত্তার জন্য উদ্বিগ্ন হলেন। কারণ মেহমানের আতিথেয়তা নবীর নৈতিক দায়িত্ব। পক্ষান্তরে দেশবাসীর কু-স্বভাব তার অজানা ছিল না। উভয় সংকটে পড়ে তিনি স্বগতোক্তি করলেন “আজেকের দিনটি বড় সংকটময়।” লুত আলাইহিস সালামের স্ত্রী নবীর বিরুদ্ধাচারন করে কাফেরদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করত। সম্মানিত ফেরেশতাগণ সুদৰ্শন নওজোয়ান আকৃতিতে যখন লুত আলাইহিস সালামের গৃহে উপনীত হলেন তখন তার স্ত্রী সমাজের দুষ্ট লোকদের খবর দিল যে আজ আমাদের গৃহে এরূপ মেহমান আগমন করেছেন। [কুরতুবী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৭৭) আর যখন আমার ফিরিশতারা লূতের নিকট উপস্থিত হল, তখন সে তাদের ব্যাপারে চিন্তাবৃত হল এবং তাদের কারণে তার হৃদয় সঙ্কুচিত হয়ে গেল। আর বলল, ‘আজকের দিনটি অতি কঠিন।’ [1]
[1] লূত (আঃ)-এর অস্থিরতার কারণ তফসীরবিদগণ এই লিখেছেন যে, উক্ত ফিরিশতাগণ দাঁড়িবিহীন তরুণের আকৃতিতে এসেছিলেন, ফলে লূত (আঃ) নিজ সম্প্রদায়ের নোংরা স্বভাবের কারণে এই পরিস্থিতিকে বড় সংকটজনক ভাবছিলেন। কারণ তিনি জানতেন না যে, আগত উক্ত তরুণগুলি, (মানুষ) মেহমান নয়; বরং আল্লাহর প্রেরিত ফিরিশতা, যাঁরা এই সম্প্রদায়কে ধ্বংস করার জন্যই এসেছেন।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান