১০ . ইউনুস
১০:১৭ فَمَنۡ اَظۡلَمُ مِمَّنِ افۡتَرٰی عَلَی اللّٰهِ كَذِبًا اَوۡ كَذَّبَ بِاٰیٰتِهٖ ؕ اِنَّهٗ لَا یُفۡلِحُ الۡمُجۡرِمُوۡنَ ﴿۱۷﴾

অতএব যে আল্লাহর উপর মিথ্যা রটনা করে অথবা তাঁর আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলে, তার চেয়ে বড় যালিম কে ? নিশ্চয় অপরাধীরা সফল হবে না। আল-বায়ান

তার চেয়ে বড় যালিম আর কে হতে পারে যে মিথ্যা রচনা ক’রে আল্লাহর নামে চালিয়ে দেয় অথবা আল্লাহর আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলে ঘোষণা করে; নিশ্চিতই অপরাধীরা সাফল্য লাভ করতে পারে না। তাইসিরুল

অতএব সেই ব্যক্তির চেয়ে অধিক অত্যাচারী (যালিম) কে যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে অথবা তাঁর আয়াতসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে? নিঃসন্দেহে এমন পাপাচারীদের কিছুতেই মঙ্গল হবেনা। মুজিবুর রহমান

So who is more unjust than he who invents a lie about Allah or denies His signs? Indeed, the criminals will not succeed Sahih International

১৭. অতএব যে ব্যক্তি আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা রচনা বা আল্লাহর আয়াতসমূহে মিথ্যারোপ করে তার চেয়ে বড় যালিম আর কে?(১) নিশ্চয় অপরাধীরা সফলকাম হবে না।(২)

(১) অর্থাৎ তার চাইতে বড় যালেম আর কেউ নেই যে আল্লাহর উপর মিথ্যা রটনা করে এবং তাঁর বাণী পরিবর্তন করে। আর তিনি যা নাযিল করেছেন তার সাথে কোন কিছু যোগ করে দেয়। অনুরূপভাবে তোমাদের থেকে বড় যালেমও আর কেউ হবে না যদি তোমরা কুরআনকে অস্বীকার কর এবং আল্লাহর উপর মিথ্যা অপবাদ দাও এবং বল যে, এটা আল্লাহর কালাম নয়। এটাই আল্লাহ তা'আলা তার রাসূলকে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তিনি তাদেরকে এটা জানিয়ে দেন। [কুরতুবী]

(২) অর্থাৎ যারা আল্লাহর উপর মিথ্যাচার করে তারা কখনো সফলকাম হবে না। তাদের কর্মকাণ্ড মানুষের কাছে মিথ্যা হিসেবে বিবেচিত হবেই। মূলত: নবী সত্য বা মিথ্যা এটা জানার বিভিন্ন পদ্ধতি বিদ্যমান। তন্মধ্যে সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, দু'জনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, কথাবার্তা, চাল-চলন ইত্যাদি তুলনা করা। বিবেকবান মাত্রই এ কাজটি সহজে করতে পারে। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে মুসাইলামা কাযযাবের কোন তুলনা কি চলে? আমর ইবনে আস একবার মুসাইলামার কাছে গেল। মুসাইলামা তার পুরাতন বন্ধু ছিল। আমর তখনও ইসলাম গ্রহণ করেনি। তখন মুসাইলামা তাকে জিজ্ঞাসা করলঃ হে আমর! তোমাদের লোকের (অর্থাৎ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর) উপর এ সময়ে কি নাযিল হয়েছে? আমর ইবনে আস জবাবে বললঃ আমি তার সাথীদের একটি সূরা পড়তে শুনেছি।

মুসাইলামা বললঃ সেটা কি? আমর বললঃ (وَالْعَصْرِ ٭ إِنَّ الْإِنْسَانَ لَفِي خُسْرٍ ٭ إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ) সূরাটি শুনে মুসাইলামা কিছুক্ষণ চিন্তা করতে থাকলো, তারপর বললোঃ আমার উপরও অনুরূপ নাযিল করা হয়েছে। আমর বললোঃ সেটা কি? সে বললঃ يَاوَبَرَ إنَّهَا أنْتَ أُذْنَانِ وَصَدَرُ وَسَائِرُكَ حَقْرٌ نَقْرٌ তারপর মুসাইলামা বাহাদুরী নেয়ার আশায় আমরের দিকে তাকিয়ে বললোঃ আমর! কেমন লাগলো? তখন আমর বললোঃ আল্লাহর শপথ করে বলছি, তুমি অবশ্যই এটা জানো যে, আমি জানি, তুমি মিথ্যা বলছ। [ইবন কাসীর; ইবন রাজাব, জামেউল উলুম ওয়াল হিকাম: ১১২] এটাই যদি একজন কাফেরের বিশ্লেষণ তাহলে মুমিন কত সহজেই সত্য নবী ও মিথ্যা নবীর মধ্যে পার্থক্য করতে পারবে তা বলাই বাহুল্য।

অপরদিকে আমরা সত্য নবীর ব্যাপারেও তার সততার সাক্ষ্য খুব সহজভাবেই দেখতে পাই। আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম বলেনঃ “যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় আগমণ করলেন তখন লোকেরা চতুর্দিক থেকে ধেয়ে আসলো। আমিও তাদের সাথে আসার পর যখন আমি তাকে দেখলাম তখনি বুঝতে পারলাম যে, তার চেহারা কোন মিথ্যুক লোকের চেহারা নয়। তখন আমি প্রথম যে কথা কয়টি শুনেছিলাম তা হলোঃ হে মানব সম্প্রদায়! সালামের প্রসার কর, খাবার খাওয়াও, আত্মীয়তার সম্পর্ক ঠিক রাখো এবং রাতে মানুষেরা যখন ঘুমন্ত থাকে তখন সালাত আদায় কর, ফলে তোমরা প্রশান্তির সাথে বা সালামের সাথে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে”। [মুস্তাদরাকে হাকেমঃ ৪২৮৩]।

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৭) অতএব সে ব্যক্তির চেয়ে অধিক অত্যাচারী কে হবে, যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে অথবা তাঁর আয়াতসমূহকে মিথ্যা মনে করে? নিঃসন্দেহে এমন অপরাধিগণ সফলকাম হবে না।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১০ . ইউনুস
১০:১৮ وَ یَعۡبُدُوۡنَ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ مَا لَا یَضُرُّهُمۡ وَ لَا یَنۡفَعُهُمۡ وَ یَقُوۡلُوۡنَ هٰۤؤُلَآءِ شُفَعَآؤُنَا عِنۡدَ اللّٰهِ ؕ قُلۡ اَتُنَبِّـُٔوۡنَ اللّٰهَ بِمَا لَا یَعۡلَمُ فِی السَّمٰوٰتِ وَ لَا فِی الۡاَرۡضِ ؕ سُبۡحٰنَهٗ وَ تَعٰلٰی عَمَّا یُشۡرِكُوۡنَ ﴿۱۸﴾

আর তারা আল্লাহ ছাড়া এমন কিছুর ইবাদত করছে, যা তাদের ক্ষতি করতে পারে না এবং উপকারও করতে পারে না। আর তারা বলে, ‘এরা আল্লাহর নিকট আমাদের সুপারিশকারী’। বল, ‘তোমরা কি আল্লাহকে আসমানসমূহ ও যমীনে থাকা এমন বিষয়ে সংবাদ দিচ্ছ যা তিনি অবগত নন’? তিনি পবিত্র মহান এবং তারা যা শরীক করে, তা থেকে তিনি অনেক ঊর্ধ্বে। আল-বায়ান

আর তারা আল্লাহকে ছেড়ে ‘ইবাদাত করে এমন কিছুর যা না পারে তাদের কোন ক্ষতি করতে, আর না পারে কোন উপকার করতে। আর তারা বলে, ‘‘ওগুলো আমাদের জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশকারী’’। বল, ‘‘তোমরা কি আল্লাহকে এমন কিছুর সংবাদ দিতে চাও, যা তিনি অবগত নন, না আকাশমন্ডলীতে আর না যমীনে? মহান পবিত্র তিনি, তোমরা যা কিছুকে তাঁর শরীক গণ্য কর তাত্থেকে তিনি বহু ঊর্ধ্বে। তাইসিরুল

আর তারা আল্লাহ ছাড়া এমন বস্তুসমূহের ইবাদাত করে যারা তাদের কোন অপকার করতে পারেনা এবং তাদের কোন উপকারও করতে পারেনা। আর তারা বলে, এরা হচ্ছে আল্লাহর নিকট আমাদের সুপারিশকারী। তুমি বলে দাওঃ তোমরা কি আল্লাহকে এমন বিষয়ের সংবাদ দিচ্ছ যা তিনি অবগত নন, না আসমানে, আর না যমীনে? তিনি পবিত্র এবং তাদের মুশরিকী কার্যকলাপ হতে তিনি অনেক উর্ধ্বে। মুজিবুর রহমান

And they worship other than Allah that which neither harms them nor benefits them, and they say, "These are our intercessors with Allah " Say, "Do you inform Allah of something He does not know in the heavens or on the earth?" Exalted is He and high above what they associate with Him Sahih International

১৮. আর তারা আল্লাহ ছাড়া এমন কিছুর ইবাদাত করছে যা তাদের ক্ষতিও করতে পারে না, উপকারও করতে পারে না। আর তারা বলে, এগুলো আল্লাহর কাছে আমাদের সুপারিশকারী। বলুন, তোমরা কি এমন কিছুর সংবাদ দেবে যা তিনি জানেন না?(১) তিনি মহান, পবিত্র এবং তারা যাকে শরীক করে তা থেকে তিনি অনেক ঊর্ধ্বে।

(১) অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলাই সর্বজ্ঞানী। আসমান ও যমীনে যা আছে তার জ্ঞান সেটাকে ঘিরে আছে। তিনি তোমাদের জানাচ্ছেন যে, তার কোন শরীক নেই, তার সাথে কোন ইলাহ নেই। আর হে মুশরিক সম্প্রদায়! তোমরা মনে করছ যে, তাঁর শরীক পাওয়া যায়? তোমরা কি তাকে এমন বিষয়ের সংবাদ দিচ্ছ যা তার কাছে গোপন রয়েছে এবং তোমরা জেনে নিয়েছ? এটা নিঃসন্দেহে বড় অসার কথা। এ মূৰ্খ লোকগুলো কি রাব্বুল আলামীনের চেয়ে বেশী জানে? এ বিষয়টি সম্পর্কে সামান্য চিন্তা করলেই এর অসারতা ধরা পড়ে। [সা’দী]

কারণ, কোন জিনিসের আল্লাহর জ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত না হওয়ার মানেই হচ্ছে এই যে, সেটির কোন অস্তিত্বই নেই। কারণ, যা কিছুর অস্তিত্ব আছে সবই আল্লাহর জ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত। কাজেই আল্লাহ তো জানেন না আকাশে ও পৃথিবীতে তার কোন শরীক আছে। অনুরূপভাবে তিনি জানেন না তোমাদের জন্য আল্লাহর কাছে কোন সুপারিশকারী আছে, এটি সুপারিশকারীদের অস্তিত্বহীনতার ব্যাপারে একটি চমৎকার বর্ণনা পদ্ধতি। অর্থাৎ আকাশ ও পৃথিবীতে যখন কোন সুপারিশকারী আছে বলে আল্লাহর জানা নেই এখন তোমরা কোন সুপারিশকারীদের কথা বলছ? [ফাতহুল কাদীর] অন্য আয়াতেও আল্লাহ্ তা'আলা এ কথাটি বলেছেন। তিনি বলেন, “আর তারা আল্লাহর বহু শরীক সাব্যস্ত করেছে। বলুন, তাদের পরিচয় দাও। নাকি তোমরা যমীনের মধ্যে এমন কিছুর সংবাদ দিতে চাও যা তিনি জানেন না?” [সূরা আর-রাদ: ৩৩]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৮) আর তারা আল্লাহ ছাড়া এমন কিছুর উপাসনা করে[1] যা তাদের কোন অপকারও করতে পারে না এবং কোন উপকারও করতে পারে না।[2] অথচ তারা বলে, এরা হচ্ছে আল্লাহর নিকট আমাদের সুপারিশকারী।[3] তুমি বলে দাও, ‘তোমরা কি আল্লাহকে এমন বিষয়ের সংবাদ দিচ্ছ যা তিনি অবগত নন, না আকাশসমূহে, আর না পৃথিবীতে?[4] তিনি পবিত্র এবং তারা যে অংশী করে, তা হতে তিনি ঊর্ধ্বে।’ [5]

[1] অর্থাৎ, আল্লাহর ইবাদত অতিক্রম করে, পূর্ণভাবে আল্লাহর ইবাদত বর্জন করে নয়। কারণ মুশরিকরা আল্লাহর ইবাদত করত এবং তার সাথে সাথে গায়রুল্লাহরও ইবাদত করত।

[2] অথচ প্রকৃত উপাস্যের যোগ্যতা এই থাকবে যে, তিনি তাঁর অনুগতদেরকে উত্তম প্রতিদান এবং তাঁর অবাধ্যদেরকে শাস্তি প্রদানে ক্ষমতাবান হবেন।

[3] অর্থাৎ, তাদের সুপারিশে আল্লাহ তাআলা আমাদের প্রয়োজন পূরণ করেন। আমাদের দুরবস্থা দূর করে দেন এবং শত্রুদের সুখ নষ্ট করে দেন। অর্থাৎ, মুশরিকরা আল্লাহ ব্যতীত যাদের উপাসনা করত, তাদেরকে উপকার ও অপকারে স্বেচ্ছাধীন (এবং স্বতন্ত্র উপাস্য) ভাবত না, বরং আল্লাহ ও নিজেদের মাঝে মাধ্যম বা অসীলা ভাবত।

[4] অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা জানেন না যে, তাঁর কেউ অংশীদার আছে, বা তাঁর দরবারে সুপারিশকারীও হবে? ঠিক যেন মুশরিকরা আল্লাহ তাআলাকে জানাতে চায় যে, তুমি জান না। আমরা তোমাকে জানাচ্ছি যে, তোমার অংশীদারও আছে এবং এমন সুপারিশকারীও আছে, যারা তার বিশ্বাসীদের জন্য সুপারিশ করবে!

[5] আল্লাহ তাআলা বলেন, মুশরিকদের এসব কথা ভিত্তিহীন, আল্লাহ তাআলা এ সকল কথা থেকে পবিত্র এবং বহু ঊর্ধ্বে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১০ . ইউনুস
১০:১৯ وَ مَا كَانَ النَّاسُ اِلَّاۤ اُمَّۃً وَّاحِدَۃً فَاخۡتَلَفُوۡا ؕ وَ لَوۡ لَا كَلِمَۃٌ سَبَقَتۡ مِنۡ رَّبِّكَ لَقُضِیَ بَیۡنَهُمۡ فِیۡمَا فِیۡهِ یَخۡتَلِفُوۡنَ ﴿۱۹﴾

আর মানুষ তো এক উম্মতই ছিল। পরে তারা বিভক্ত হয়ে পড়ল। আর তোমার রবের পক্ষ থেকে বাণী বিগত না হলে তাদের মধ্যে মীমাংসা হয়ে যেত, যা নিয়ে তারা মতবিরোধ করে। আল-বায়ান

মানুষ ছিল এক উম্মতভুক্ত। পরে তারা মতভেদ সৃষ্টি করল। তোমার প্রতিপালক পূর্বেই যদি সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করতেন, তাহলে যে বিষয়ে তারা মতভেদ করছে তার মীমাংসা অবশ্যই করে দেয়া হত। তাইসিরুল

আর সমস্ত মানুষ (প্রথম) এক উম্মাতই ছিল, অতঃপর তারা মতভেদ সৃষ্টি করল। আর যদি তোমার রবের পক্ষ হতে এক নির্দেশ বাণী প্রথমে সাব্যস্ত হয়ে না থাকত তাহলে যে বিষয়ে তারা মতভেদ করছে তার চূড়ান্ত মীমাংসা হয়ে যেত। মুজিবুর রহমান

And mankind was not but one community [united in religion], but [then] they differed. And if not for a word that preceded from your Lord, it would have been judged between them [immediately] concerning that over which they differ. Sahih International

১৯. আর মানুষ ছিল একই উম্মত, পরে তারা মতভেদ সৃষ্টি করে(১)। আর আপনার রবের পূর্ব ঘোষণা না থাকলে তারা যে বিষয়ে মতভেদ ঘটায় তার মীমাংসা তো হয়েই যেত।(২)

(১) অর্থাৎ সমস্ত আদম সন্তান প্রথমে একত্ববাদে বিশ্বাসী একই উম্মত ও একই জাতি ছিল। শির্ক ও কুফরের নামও ছিল না। পরে একত্ববাদে মতবিরোধ সৃষ্টি করে বিভিন্ন জাতি ও বিভিন্ন সম্পপ্রদায়ে বিভক্ত হয়ে যায়। একই উম্মত এবং সবার মুসলিম থাকার সময়কাল কতদিন এবং কবে ছিল তা বিভিন্ন বর্ণনা দ্বারা জানা যায়, নূহ আলাইহিস সালাম-এর যুগ পর্যন্ত এমনি অবস্থা ছিল।

ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, আদম ও নৃহের মধ্যে দশ প্রজন্ম ছিল যারা তাওহীদের উপর ছিল। [তাবারী; ইবন কাসীর]। এরপর মানুষের মধ্যে মতভেদ সৃষ্টি হয় এবং ঈমানের বিরুদ্ধে কুফর ও শির্কী বিস্তার লাভ করে, তখন আল্লাহ্ তা'আলা তার নবী-রাসূলদেরকে ভীতিপ্রদর্শনকারী ও সুসংবাদদানকারী হিসেবে কিতাবসহ প্রেরণ করেন। “যাতে যে কেউ ধ্বংস হবে সে যেন সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়ার পর ধ্বংস হয় এবং যে জীবিত থাকবে সে যেন সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়ার পর জীবিত থাকে।” [সূরা আল-আনফাল ৪২] [ইবন কাসীর]

(২) কোন কোন মুফাসসির বলেন, সে কলেমাটি হচ্ছে এই যে, তিনি এ উম্মতকে সবশেষে আনবেন এবং তাদেরকে দুনিয়াতে আযাব না দিয়ে কিয়ামত পর্যন্ত অবকাশ দিবেন। যদি এ অবকাশ না থাকত তবে অবশ্যই তাদের আযাব দিয়ে শেষ করে দেয়া হতো অথবা কিয়ামত অনুষ্ঠিত হয়ে যেত। [কুরতুবী] কোন কোন তাফসীরবিদ বলেন, এখানে ‘কালেমা’ বলে এটাই বোঝানো হয়েছে যে, তিনি কাউকে দলীল-প্রমাণাদি ছাড়া পাকড়াও করবেন না। আর সেটা হচ্ছে, রাসূল প্রেরণ। যেমন অন্য আয়াতে বলেছেন, “আর আমরা রাসূল না পাঠানো পর্যন্ত শাস্তি প্রদানকারী নই।” [সূরা আল-ইসরাঃ ১৫]

কারও কারও মতে, এখানে কালেমা বলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীসে বর্ণিত একটি কালেমাকে বোঝানো হয়েছে, যেখানে এসেছে, আমার রহমত আমার ক্রোধের উপর প্রাধান্য পাবে’। [বুখারী: ৭৫৫৩; মুসলিম: ২৭৫১] যদি তা না হতো তবে তিনি অপরাধীদেরকে তাওবার সময় দিতেন না। [কুরতুবী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৯) সমস্ত মানুষ (প্রথমে) এক জাতিই ছিল, অতঃপর তারা মতভেদ সৃষ্টি করল।[1] যদি তোমার প্রতিপালকের পক্ষ হতে পূর্ব-ঘোষণা না থাকত, তাহলে যে বিষয়ে তারা মতভেদ করছে, তার চূড়ান্ত মীমাংসা হয়ে যেত। [2]

[1] অর্থাৎ শিরক হল মানুষের নিজেদের মনগড়া কর্ম। কেননা, প্রথমে এর কোন অস্তিতত্ত্বই ছিল না। সকল মানুষ একই দ্বীন ও একই পথের পথিক ছিল। আর সে পথ হল ইসলামের পথ, যার আসল ভিত্তি হল তাওহীদ। নূহ (আঃ) পর্যন্ত মানুষ সেই তাওহীদের উপর অটল ছিল। পরবর্তীতে তাদের মাঝে একতত্ত্ববাদে মতবিরোধ সৃষ্টি হয় এবং কিছু মানুষ আল্লাহর সাথে, অন্যদেরকেও উপাস্য, প্রয়োজন পূরণকারী এবং দুঃখ-কষ্ট মোচনকারী ভাবতে আরম্ভ করে।

[2] অর্থাৎ যদি আল্লাহর এই ফায়সালা না হত যে, ‘‘পূর্ণ প্রমাণ সাব্যস্ত হওয়ার পূর্বে কাউকে শাস্তি দিব না’’, অনুরূপ তিনি সৃষ্টি-জগতের (হিসাব-নিকাশের) জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারিত না করে থাকতেন, তাহলে অবশ্যই তিনি তাদের মাঝে ঘটিত মতবিরোধের ফায়সালা করে দিতেন এবং মু’মিনদেরকে বড় সুখী ও কাফেরদেরকে শাস্তি ও কষ্টের সম্মুখীন করতেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১০ . ইউনুস
১০:২০ وَ یَقُوۡلُوۡنَ لَوۡ لَاۤ اُنۡزِلَ عَلَیۡهِ اٰیَۃٌ مِّنۡ رَّبِّهٖ ۚ فَقُلۡ اِنَّمَا الۡغَیۡبُ لِلّٰهِ فَانۡتَظِرُوۡا ۚ اِنِّیۡ مَعَكُمۡ مِّنَ الۡمُنۡتَظِرِیۡنَ ﴿۲۰﴾

আর তারা বলে, ‘তাঁর রবের পক্ষ থেকে তার উপর কোন নিদর্শন কেন নাযিল করা হয় না’? বল, ‘গায়েবের জ্ঞান তো কেবল আল্লাহরই। অতএব তোমরা অপেক্ষা কর, আমিও তোমাদের সাথে অপেক্ষায় রয়েছি’। আল-বায়ান

তারা বলে, ‘‘তাঁর প্রতিপালকের পক্ষ থেকে তাঁর কাছে কোন নিদর্শন অবতীর্ণ হয় না কেন?’’ এদের জবাবে বলে দাও, ‘‘অদৃশ্য জগতের একচ্ছত্র মালিক হলেন আল্লাহ, কাজেই তোমরা অপেক্ষা কর (এবং ভবিষ্যতে কী হয় দেখ), আমিও তোমাদের সাথে অপেক্ষমান থাকলাম। তাইসিরুল

আর তারা বলেঃ তার প্রতি তার রবের পক্ষ হতে কোন মু’জিযা কেন নাযিল হলনা? তুমি বলে দাওঃ গাইবের খবর শুধুমাত্র আল্লাহই জানেন। অতএব তোমরা প্রতীক্ষায় থাক, আমিও তোমাদের সাথে প্রতীক্ষায় থাকলাম। মুজিবুর রহমান

And they say, "Why is a sign not sent down to him from his Lord?" So say, "The unseen is only for Allah [to administer], so wait; indeed, I am with you among those who wait." Sahih International

২০. আর তারা বলে, ‘তার রবের কাছ থেকে তার কাছে কোন নিদর্শন নাযিল হয় না কেন?(১) বলুন, গায়েবের জ্ঞান তো শুধু আল্লাহরই আছে। কাজেই তোমরা প্রতীক্ষা কর, আমিও তোমাদের সাথে প্রতীক্ষা করছি।(২)

(১) অর্থাৎ এ ব্যাপারে নিদর্শন যে, তিনি যথার্থই সত্য নবী এবং যা কিছু তিনি পেশ করছেন তা পুরোপুরি ঠিক। এ প্রসঙ্গে একটি কথা মনে রাখতে হবে। সেটি হচ্ছে, নিদর্শন পেশ করার দাবী তারা এ জন্য করেনি যে, তারা সাচ্চা দিলে সত্যের দাওয়াত গ্রহণ করতে প্রস্তুত ছিল। আসলে নিদর্শনের এ দাবী শুধুমাত্র ঈমান না আনার জন্য একটি বাহানা হিসেবে পেশ করা হচ্ছিল। তাদেরকে যাই কিছু দেখানো হতো তা দেখার পরও তারা একথাই বলতো, আমাদের কোন নিদর্শনই দেখানো হয়নি। কারণ তারা ঈমান আনতে চাচ্ছিল না। আল্লাহ বলেনঃ “কত মহান তিনি যিনি ইচ্ছে করলে আপনাকে দিতে পারেন এর চেয়ে উৎকৃষ্ট বস্তু-উদ্যানসমূহ যার নিম্নদেশে নদী-নালা প্রবাহিত এবং তিনি দিতে পারেন আপনাকে প্রাসাদসমূহ! কিন্তু তারা কিয়ামতকে অস্বীকার করেছে এবং যে কিয়ামতকে অস্বীকার করে তার জন্য আমি প্রস্তুত রেখেছি জ্বলন্ত আগুন। [সূরা আল-ফুরকানঃ ১০] অন্য আয়াতে বলেনঃ “পূর্ববর্তীগণের নিদর্শন অস্বীকার করাই আমাকে নিদর্শন পাঠান থেকে বিরত রাখে।” [সূরা আল-ইসরাঃ ৫৯l

কারণ, তাদের চাহিদা মোতাবেক নিদর্শন পাঠানোর পর যদি ঈমান না আনে তাহলে তাদের ধ্বংস অনিবার্য। কারণ, আল্লাহর নিয়ম হচ্ছে যে, সুনির্দিষ্ট কোন নিদর্শন চাওয়া হলে সেটা দেয়ার পর যদি ঈমান না আনে তবে তাদের ধ্বংস করা হয়। আর এ জন্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে যখন নিদর্শন দেয়া ও অবকাশ না দেয়া আর নিদর্শন না দিয়ে অবকাশ দেয়ার মধ্যে কোন একটি গ্রহণ করার অধিকার প্রদান করলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দ্বিতীয়টি গ্রহণ করেছিলেন [ইবন কাসীর] কিন্তু এর অর্থ এ নয় যে, আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে মোটেই কোন নিদর্শন দেখাননি। তাদেরকে অনেক বড় নিদর্শন দেখিয়েছেন। যেমন তাদের চাহিদা মোতাবেক চাঁদকে এমনভাবে দ্বিখণ্ডিত করে দেখিয়েছেন যে, কাফেরগন দুখণ্ডের মাঝে পাহাড় দেখতে পেয়েছিল। [বুখারীঃ ৩৬৩৬, মুসলিমঃ ২৮০০] কিন্তু তারপরও তারা ঈমান আনেনি। বরং আরো বেশী নিদর্শন দাবী করতে লাগল। আসলে তাদের উদ্দেশ্য ঈমান আনা নয়, তাদের উদ্দেশ্য হঠকারিতা। আল্লাহ বলেনঃ “তারা যত নিদর্শনই দেখুক না কেন ঈমান আনবে না”। [সূরা আল-আনআমঃ ২৫] আরো বলেনঃ “তারা যাবতীয় নিদর্শন দেখলেও ঈমান আনবে না”। [সূরা আল-আরাফঃ ১৪৬]

আরো বলেনঃ “নিশ্চয়ই যাদের বিরুদ্ধে আপনার প্রতিপালকের বাক্য সাব্যস্ত হয়ে গেছে, তারা ঈমান আনবে না। যদিও তাদের কাছে সবগুলো নিদর্শন আসে, যতক্ষন পর্যন্ত না তারা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দেখতে পাবে”। [সূরা ইউনুসঃ ৯৬–৯৭] অন্য আয়াতে বলেনঃ “আমরা তাদের কাছে ফিরিশতা পাঠালেও, মৃতেরা তাদের সাথে কথা বললেও এবং সকল বস্তুকে তাদের সামনে হাজির করলেও তারা কখনো ঈমান আনবে না; তবে যদি আল্লাহর ইচ্ছে হয়।” [সূরা আল-আনআমঃ ১১১]।

অহংকার ও সত্যকে অস্বীকার করা তাদের মজ্জাগত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা সুস্পষ্ট বিষয়কেও জেনে বুঝে অস্বীকার করতে দ্বিধা করে না। আল্লাহ বলেনঃ “যদি তাদের জন্য আকাশের দরজা খুলে দেই এবং তারা সারাদিন তাতে আরোহন করতে থাকে, তবুও তারা বলবে,আমাদের দৃষ্টি সম্মোহিত করা হয়েছে; না, বরং আমরা এক জাদুগ্ৰস্ত সম্প্রদায়।” [সূরা আল-হিজরঃ ১৪–১৫] আরো বলেনঃ “তারা আকাশের কোন খন্ড ভেংগে পড়তে দেখলে বলবে, এটা তো এক পুঞ্জিভূত মেঘ। [সূরা আত-তূরঃ ৪৪] আল্লাহ আরো বলেনঃ “আমরা যদি আপনার প্রতি কাগজে লিখিত কিতাবও নাযিল করতাম আর তারা যদি সেটা হাত দিয়ে স্পর্শও করত তবুও কাফিররা বলত, এটা স্পষ্ট জাদু ছাড়া আর কিছু নয়।” [সূরা আল-আনআমঃ ৭]

(২) অর্থাৎ আয়াত নাযিল করা একান্ত গায়েবী বিষয়। [কুরতুবী] আল্লাহ যা কিছু নাযিল করেছেন তা আমি পেশ করে দিয়েছি। আর যা তিনি নাযিল করেননি তা আমার ও তোমাদের জন্য “গায়েবী বিষয়” এর ওপর আল্লাহ ছাড়া আর কারো ইখতিয়ার নেই। তিনি চাইলে তা নাযিল করতে পারেন। এখন আল্লাহ যা কিছু নাযিল করেননি তা আগে তিনি নাযিল করুন—একথার ওপর যদি তোমাদের ঈমান আনার বিষয়টি আটকে থাকে তাহলে তোমরা তার অপেক্ষায় বসে থাকো। [কুরতুবী] অথবা আয়াতের অর্থ, তোমরা আমাদের আল্লাহর ফয়সালার অপেক্ষা কর। তিনি হককে অবশ্যই বাতিলের উপর প্রকাশ করে দিবেন। [বাগভী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২০) তারা বলে, ‘তাঁর প্রতি তাঁর প্রতিপালকের পক্ষ হতে কোন নিদর্শন অবতীর্ণ করা হয়নি কেন?’[1] সুতরাং তুমি বলে দাও, ‘অদৃশ্যের খবর শুধুমাত্র আল্লাহই জানেন।[2] অতএব তোমরা প্রতীক্ষায় থাক, আমিও তোমাদের সাথে প্রতীক্ষায় থাকলাম।’

[1] এদের উদ্দেশ্য হল, কোন বড় ও স্পষ্ট নিদর্শন বা মু’জিযাহ; যেমন সামুদ জাতির জন্য উটনী প্রকাশ করা হয়েছিল। অনুরূপ তাদের দাবী ছিল, এ (মক্কার কাফের)-দের জন্য সাফা পাহাড়কে সোনার পাহাড়ে পরিবর্তন করে অথবা মক্কার সমস্ত পর্বতমালা দূর করে তার স্থলে নদী ও বাগান তৈরী করে অথবা অনুরূপ কোন মু’জিযাহ (অলৌকিক বস্তু) প্রকাশ করে দেখানো হোক।

[2] অর্থাৎ আল্লাহ যদি চান, তবে তাদের চাহিদা অনুযায়ী মু’জিযা প্রকাশ করে দেখাতে পারেন। কিন্তু তার পরেও যদি তারা ঈমান না আনে, তবে আল্লাহর নীতি এই যে, এরূপ জাতিকে তিনি অতি সতত্ত্বর ধ্বংস করে দেন। ফলে একমাত্র তিনিই জানেন যে, কোন জাতির জন্য তাদের চাহিদা মত মু’জিযা প্রকাশ করে দেওয়া তাদের জন্য মঙ্গল হবে, না অমঙ্গল। অনুরূপ এটাও একমাত্র তিনিই জানেন যে, যদি তাদের চাহিদা মত মু’জিযা না দেখানো হয়, তাহলে তাদেরকে কতটা অবকাশ দেওয়া হবে? যার ফলে আয়াতের শেষাংশে বলেছেন, "তোমরা অপেক্ষা কর, আমিও তোমাদের সাথে অপেক্ষায় রইলাম।"

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১০ . ইউনুস
১০:২১ وَ اِذَاۤ اَذَقۡنَا النَّاسَ رَحۡمَۃً مِّنۡۢ بَعۡدِ ضَرَّآءَ مَسَّتۡهُمۡ اِذَا لَهُمۡ مَّكۡرٌ فِیۡۤ اٰیَاتِنَا ؕ قُلِ اللّٰهُ اَسۡرَعُ مَكۡرًا ؕ اِنَّ رُسُلَنَا یَكۡتُبُوۡنَ مَا تَمۡكُرُوۡنَ ﴿۲۱﴾

আর যখন আমি মানুষকে দুঃখ-দুর্দশা স্পর্শ করার পর রহমতের স্বাদ আস্বাদন করাই, তখন তারা আমার আয়াতসমূহের ব্যাপারে কূট-কৌশলের আশ্রয় নেয়। বল, ‘আল্লাহ কৌশলকারী হিসেবে অধিক দ্রুত’। নিশ্চয় আমার ফেরেশতারা তোমাদের কুট-কৌশল লিখে রাখে। আল-বায়ান

দুঃখ কষ্ট মানুষকে স্পর্শ করার পর আমি যখন তাদেরকে অনুগ্রহ আস্বাদন করতে দেই, তখন তারা আমার নিদর্শনগুলোর ব্যাপারে কুট কৌশলের আশ্রয় নেয়। বল, ‘কৌশল গ্রহণে আল্লাহ হলেন ক্ষিপ্রগতিসম্পন্ন, তোমরা যে সব কূটচাল গ্রহণ কর আমার ফেরেশতাগণ তা লিপিবদ্ধ করে রাখে।’ তাইসিরুল

আর যখন আমি মানুষকে কোন নি‘আমাতের স্বাদ উপভোগ করাই তাদের উপর কোন বিপদ পতিত হওয়ার পর, তখনই তারা আমার আয়াতসমূহ সম্বন্ধে দুরভিসন্ধি করতে থাকে। তুমি বলে দাওঃ আল্লাহ অতি দ্রুত কলাকৌশল তৈরী করতে পারেন। নিশ্চয়ই আমার মালাইকা/ফেরেশতাগণ তোমাদের সকল দুরভিসন্ধি লিপিবদ্ধ করছে। মুজিবুর রহমান

And when We give the people a taste of mercy after adversity has touched them, at once they conspire against Our verses. Say, "Allah is swifter in strategy." Indeed, Our messengers record that which you conspire Sahih International

২১. আর দুঃখ-দৈন্য তাদেরকে স্পর্শ করার পর যখন আমরা মানুষকে অনুগ্রহের আস্বাদন করাই তারা তখনই আমাদের আয়াতসমূহের বিরুদ্ধে অপকৌশল করে।(১) বলুন, আল্লাহ কৌশল অবলম্বনে আরো বেশী দ্রুততর।(২) নিশ্চয় তোমরা যে অপকৌশল কর তা আমাদের ফিরিশতারা লিখে রাখে।

(১) অর্থাৎ যখনই আল্লাহর রহমতে তোমাদের বিপদ দূরীভূত হয়েছে তখনই তোমরা এ বিপদ আসার ও দূরীভূত হবার হাজারটা ব্যাখ্যা (চালাকি) করতে শুরু করে থাকো। এখানে বিপদ বলে সার্বিক বিপদ হলেও কোন কোন মুফাসসিরের মতে, অনাবৃষ্টির পরে বৃষ্টি, খরার পরে সতেজতা আসা। [কুরতুবী; ইবন কাসীর] এটা যে আমার নিদর্শন সেটা স্বীকার করতে চাও না। বরং তোমরা আমাদের নিদর্শন নিয়ে ঠাট্টাবিদ্রুপ করে থাক। [কুরতুবী] তারা তখন হককে প্রতিহত করার জন্য বাতিল নিয়ে আসে। [সা’দী] এভাবে তারা তাওহীদকে মেনে নেয়া থেকে নিস্কৃতি পেতে এবং নিজেদের শির্কের ওপর অবিচল থাকতে চায়।

(২) আয়াতে আল্লাহর ক্ষেত্রেও مكر শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। আরবী অভিধান অনুসারে مَكْر বলা হয় গোপন পরিকল্পনাকে, যা ভালও হতে পারে এবং মন্দও হতে পারে। এ ব্যাপারে সূরা বাকারার ১৫ নং আয়াতে বিস্তারিত টিকা দেয়া হয়েছে। এর বাইরেও তোমরা যা কিছু করবে আল্লাহর ফেরেশতারা তা লিখে নিতে থাকবেন। এভাবে এক সময় অকস্মাৎ মৃত্যুর পয়গাম এসে যাবে। তখন নিজেদের কৃতকর্মের হিসাব দেবার জন্য তোমাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হবে। তখন তিনি তোমাদের ছোট বড় সবকিছুর প্রতিদান দিবেন। [ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২১) মানুষকে কোন বিপদ স্পর্শ করার পর যখন আমি তাদেরকে কোন নিয়ামতের স্বাদ উপভোগ করাই,[1] তখনই তারা আমার আয়াতসমূহ সম্বন্ধে দূরভিসন্ধি (কুমতলব) করতে থাকে।[2] তুমি বলে দাও, ‘আল্লাহ দুরভিসন্ধিতে অধিক তৎপর।’[3] নিশ্চয়ই আমার ফিরিশতাগণ তোমাদের সকল দুরভিসন্ধি লিপিবদ্ধ করছে।

[1] মসীবতের পর নিয়ামত উপভোগ করার অর্থ হল, অভাব-অনটন, দুর্ভিক্ষ এবং কষ্ট ও মসীবতের পর পর্যাপ্ত পরিমাণে রুযী পাওয়া, জীবন-উপকরণের আতিশয্য ইত্যাদি।

[2] এর অর্থ এই যে, তারা আমার ঐ সকল নিয়ামতের কদর ও তার উপর আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপন করে না; বরং কুফরী ও শিরক করে। অর্থাৎ এটা তাদের নোংরা ষড়যন্ত্র যা তারা আল্লাহর নিয়ামতের পরিবর্তে বেছে নেয়।

[3] অর্থাৎ, আল্লাহ যে কৌশল অবলম্বন করেন, তা তাদের থেকে অনেক বেশি ত্রিুয়াশীল। আর তা এই যে, তিনি তাদেরকে পাকড়াও করার ক্ষমতা রাখেন, তিনি চাইলে অবিলম্বে তাদেরকে পাকড়াও করতে পারেন। আর যদি তাঁর হিকমতে বিলম্ব করার প্রয়োজন হয়, তবে বিলম্বে পাকড়াও করেন। আরবী ভাষায় مكر গুপ্ত ষড়যন্ত্র ও কৌশলের সাথে কাজ করাকে বলে; তা ভালও হতে পারে, আবার মন্দও হতে পারে। এখানে আল্লাহর (আচমকা) শাস্তি ও পাকড়াওকে ‘দুরভিসন্ধি বা ষড়যন্ত্র’ বলা হয়েছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১০ . ইউনুস
১০:২২ هُوَ الَّذِیۡ یُسَیِّرُكُمۡ فِی الۡبَرِّ وَ الۡبَحۡرِ ؕ حَتّٰۤی اِذَا كُنۡتُمۡ فِی الۡفُلۡكِ ۚ وَ جَرَیۡنَ بِهِمۡ بِرِیۡحٍ طَیِّبَۃٍ وَّ فَرِحُوۡا بِهَا جَآءَتۡهَا رِیۡحٌ عَاصِفٌ وَّ جَآءَهُمُ الۡمَوۡجُ مِنۡ كُلِّ مَكَانٍ وَّ ظَنُّوۡۤا اَنَّهُمۡ اُحِیۡطَ بِهِمۡ ۙ دَعَوُا اللّٰهَ مُخۡلِصِیۡنَ لَهُ الدِّیۡنَ ۬ۚ لَئِنۡ اَنۡجَیۡتَنَا مِنۡ هٰذِهٖ لَنَكُوۡنَنَّ مِنَ الشّٰكِرِیۡنَ ﴿۲۲﴾

তিনিই তোমাদেরকে স্থলে ও সমুদ্রে ভ্রমণ করান। এমনকি যখন তোমরা নৌকায় থাক, আর তা তাদেরকে নিয়ে চলতে থাকে অনুকুল হাওয়ায় এবং তারা তা নিয়ে আনন্দিত হয়, (এ সময়) তাকে পেয়ে বসে ঝড়ো হাওয়া, আর চারদিক থেকে ধেয়ে আসে তরঙ্গ এবং তাদের নিশ্চিত ধারণা হয় যে, তাদেরকে পরিবেষ্টন করা হয়েছে। তখন তারা আল্লাহকে ডাকতে থাকে তাঁর জন্য দীনকে একনিষ্ঠ করে, ‘যদি আপনি এ থেকে আমাদেরকে নাজাত দেন, তাহলে আমরা অবশ্যই কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হব’। আল-বায়ান

তিনি তোমাদেরকে জলে ও স্থলে ভ্রমণ করান। এমনকি যখন তোমরা নৌকায় আরোহণ করে অনুকূল হাওয়ার তালে আমোদ আহলাদে সফর করতে থাক, তখন ঝড়ো হাওয়া আঘাত হানে আর চারদিক থেকে তরঙ্গ ধেয়ে আসে, আর তারা মনে করে যে, তারা তরঙ্গমালায় পরিবেষ্টিত হয়ে পড়েছে। তখন তারা বিশুদ্ধ আনুগত্যে আল্লাহকে ডেকে বলে, ‘তুমি যদি এত্থেকে আমাদেরকে পরিত্রাণ দাও তাহলে অবশ্য অবশ্যই আমরা শুকরগুজার বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব।’ তাইসিরুল

তিনি এমন, যিনি তোমাদেরকে স্থলভাগে ও পানি পথে পরিভ্রমণ করান; যখন তোমরা নৌকায় অবস্থান কর, আর সেই নৌকাগুলি লোকদেরকে নিয়ে অনুকূল বায়ুর সাহায্যে চলতে থাকে, আর তারা তাতে আনন্দিত হয়, (হঠাৎ) তাদের উপর এক প্রচন্ড (প্রতিকূল) বায়ু এসে পড়ে এবং প্রত্যেক দিক হতে তাদের উপর তরঙ্গমালা ধেয়ে আসে, আর তারা মনে করে যে, তারা (বিপদে) বেষ্টিত হয়ে পড়েছে, (তখন) সকলে খাঁটি বিশ্বাসের সাথে আল্লাহকেই ডাকতে থাকেঃ (হে আল্লাহ!) আপনি যদি আমাদেরকে এটা হতে রক্ষা করেন তাহলে আমরা অবশ্যই কৃতজ্ঞ হয়ে যাব। মুজিবুর রহমান

It is He who enables you to travel on land and sea until, when you are in ships and they sail with them by a good wind and they rejoice therein, there comes a storm wind and the waves come upon them from everywhere and they assume that they are surrounded, supplicating Allah, sincere to Him in religion, "If You should save us from this, we will surely be among the thankful." Sahih International

২২. তিনিই তোমাদেরকে জলে-স্থলে ভ্রমণ করান। এমনকি তোমরা যখন নৌযানে আরোহন কর এবং সেগুলো আরোহী নিয়ে অনুকূল বাতাসে বেরিয়ে এবং তারা তাতে আনন্দিত হয়, তারপর যখন দমকা হাওয়া বইতে শুরু করে এবং চারদিক থেকে উত্তাল তরঙ্গমালা ধেয়ে আসে, আর তারা নিশ্চিত ধারণা করে যে, এবার তারা ঘেরাও হয়ে পড়েছে, তখন তারা আল্লাহ্‌কে তার জন্য দ্বীনকে একনিষ্ঠ করে ডেকে বলেঃ আপনি আমাদেরকে এ থেকে বাঁচালে আমরা অবশ্যই কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হব।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(২২) তিনিই (সেই মহান সত্তা), যিনি তোমাদেরকে স্থলভাগে ও জলভাগে ভ্রমণ করান;[1] এমন কি যখন তোমরা নৌকায় অবস্থান কর, আর সেই নৌকাগুলো লোকদের নিয়ে অনুকূল বায়ুর সাহায্যে চলতে থাকে, আর তারা তাতে আনন্দিত হয়। (হঠাৎ) তাদের উপর এক প্রচন্ড (প্রতিকূল) বায়ু এসে পড়ে এবং প্রত্যেক দিক হতে তাদের উপর তরঙ্গমালা ধেয়ে আসে, আর তারা মনে করে যে, তারা (বিপদে) বেষ্টিত হয়ে পড়েছে,[2] (তখন) সকলে আল্লাহর আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে আল্লাহকেই ডাকতে থাকে,[3] ‘(হে আল্লাহ!) যদি তুমি আমাদেরকে এ হতে রক্ষা কর, তাহলে আমরা অবশ্যই কৃতজ্ঞ হয়ে যাব।’

[1] يُسَيِّرُكُمْ তিনি তোমাদেরকে ভ্রমণ করান বা চলা-ফেরা ও ভ্রমণ করার তওফীক দেন। ‘স্থলভাগে’ অর্থাৎ তিনি তোমাদেরকে পা দান করেছেন যার দ্বারা তোমরা চলাফেরা কর, যানবাহনের ব্যবস্থা করেছেন, যার উপর অরোহণ করে দূর-দূরান্তে ভ্রমণ কর। ‘জলভাগে’ অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে নৌকা ও জলজাহাজ তৈরী করার জ্ঞান দান করেছেন, তোমরা তা তৈরী করে তার মাধ্যমে সাগরে ভ্রমণ কর। (যে বস্তু দ্বারা তোমরা নৌযান তৈরী কর, তাকে পানির উপর ভাসার প্রকৃতি দান করেছেন।)

[2] أُحِيْطَ بِهِمْ এর অর্থ হল, যেরূপ শত্রু কোন সম্প্রদায় বা কোন শহরকে বেষ্টন করে বা ঘিরে ফেলে এবং সেই সম্প্রদায় শত্রুর দয়ার উপর নির্ভরশীল থাকে, অনুরূপ যখন তারা তুফান ও বড় বড় তরঙ্গের মাঝে বেষ্টিত হয়, তখন তারা মৃত্যুকে তাদের সম্মুখে দেখতে পায়।

[3] অর্থাৎ তখন তারা দু’আতে গায়রুল্লাহকে শরীক করে না, যেমন তারা স্বাভাবিক অবস্থায় করে থাকে। স্বাভাবিক অবস্থায় তারা বলে যে, এই বুযুর্গ ব্যক্তিরাও আল্লাহর খাস বান্দা, আল্লাহ তাআলা তাঁদেরকেও এখতিয়ার দিয়ে রেখেছেন এবং তাঁদের দ্বারা আমরা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে চাই। কিন্তু যখন এই রূপ বালা-মসীবতে পড়ে, তখন ঐ সকল শয়তানী যুক্তি ভুলে যায় এবং শুধু আল্লাহকে স্মরণ করে ও একমাত্র তাঁকেই ডাকে। এতে প্রথমতঃ এই কথা বুঝা যায় যে, মানুষের প্রকৃতিতে এক আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়ার প্রবণতা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। মানুষ পরিবেশে প্রভাবিত হয়ে সেই প্রবণতা বা প্রকৃতিকে চাপা দিয়ে ফেলে; কিন্তু মসীবতের সময় উক্ত প্রবণতা মানব মনে স্বতঃ বিকাশ লাভ করে বা উক্ত তওহীদী প্রকৃতি ফিরে আসে। আরো বুঝা গেল যে, তওহীদ মানুষের প্রকৃতিগত মৌলিক বস্তু, যা থেকে মানুষের বিচ্যুত হওয়া উচিত নয়। কারণ তওহীদ থেকে বিচ্যুত থাকা, সহজাত প্রকৃতি থেকে বিচ্যুত থাকার নামান্তর; যা সরাসরি ভ্রষ্টতা। দ্বিতীয়তঃ এই কথা বুঝা যায় যে, মুশরিকরা যখন এরূপ মসীবতের সম্মুখীন হত, তখন তারা তাদের তৈরী করা উপাস্যদেরকে ছেড়ে একমাত্র আল্লাহকেই ডাকত। সুতরাং ইকরামা বিন আবু জাহল সর্ম্পকে পাওয়া যায় যে, মক্কা বিজয়ের পর তিনি মক্কা থেকে (কাফের অবস্থায়) পালিয়ে যান। তিনি হাবশাহ যাওয়ার জন্য এক নৌকায় বসেন। নৌকা সামুদ্রিক ঝড়ের মুখে পড়লে নৌকার মাঝি যাত্রীগণকে বলল যে, এখন এক আল্লাহর নিকট দু’আ কর, কারণ তোমাদেরকে তিনি ছাড়া এই তুফান থেকে পরিত্রাণ দানকারী আর কেউ নেই। ইকরামা বলেন, আমি মনে মনে ভাবলাম, যদি সমুদ্রের মাঝে পরিত্রাণ দাতা একমাত্র আল্লাহ হন, তাহলে অবশ্যই স্থলভাগেও পরিত্রাণ দাতা একমাত্র তিনিই হবেন। আর মুহাম্মাদ তো সেই কথাই বলেন। সুতরাং তিনি স্থির করে নিলেন, যদি আমি এখান থেকে বেঁচে জীবিত ফিরে যেতে পারি, তাহলে মক্কা ফিরে গিয়ে ইসলাম গ্রহণ করব। সুতরাং তিনি নবী (সাঃ)-এর খিদমতে উপস্থিত হয়ে মুসলমান হয়ে যান। (নাসাঈ, আবু দাউদ ২৬৮৩নং) কিন্তু পরিতাপের বিষয়! উম্মতে মুহাম্মাদীর কিছু মানুষ এমনভাবে শির্কে ফেঁসে আছে যে, বালা-মসীবত ও কষ্টের সময়েও তারা আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়া বাদ দিয়ে মৃত বুযুর্গ ব্যক্তিদেরকেই ত্রাণকর্তা মনে করে এবং তাঁদেরকেই সাহায্যের জন্য আহবান করে! সুতরাং ইন্না লিল্লাহি অইন্না ইলাইহি রা-জিঊন। فليبك على الإسلام من كان باكيًا।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১০ . ইউনুস
১০:২৩ فَلَمَّاۤ اَنۡجٰهُمۡ اِذَا هُمۡ یَبۡغُوۡنَ فِی الۡاَرۡضِ بِغَیۡرِ الۡحَقِّ ؕ یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ اِنَّمَا بَغۡیُكُمۡ عَلٰۤی اَنۡفُسِكُمۡ ۙ مَّتَاعَ الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا ۫ ثُمَّ اِلَیۡنَا مَرۡجِعُكُمۡ فَنُنَبِّئُكُمۡ بِمَا كُنۡتُمۡ تَعۡمَلُوۡنَ ﴿۲۳﴾

অতঃপর যখন তিনি তাদেরকে নাজাত দেন, তখন তারা অন্যায়ভাবে যমীনে সীমালঙ্ঘন করে। হে মানুষ, তোমাদের সীমালঙ্ঘন তোমাদের বিরুদ্ধেই, এ সব কিছু দুনিয়ার ভোগ। অতঃপর আমার নিকটই তোমাদের প্রত্যাবর্তন। সুতরাং তখন আমি তোমাদেরকে তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে জানাব। আল-বায়ান

অতঃপর যেমনই তিনি তাদেরকে বাঁচিয়ে দেন, তখন তারা অন্যায়ভাবে যমীনে বিদ্রোহী আচরণ শুরু করে দেয়। ওহে মানুষ! তোমাদের এ বিদ্রোহ তো (প্রকৃতপক্ষে) তোমাদের নিজেদেরই বিপক্ষে, অস্থায়ী দুনিয়ার আনন্দ সামগ্রী মাত্র। অতঃপর আমার কাছেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন হবে, তখন আমি তোমাদেরকে জানিয়ে দেব তোমরা যা কিছু করছিলে। তাইসিরুল

অতঃপর যখনই মা‘বূদ তাদেরকে উদ্ধার করেন তখনই তারা ভূপৃষ্ঠে অন্যায়ভাবে বিদ্রোহাচরণ করতে থাকে। হে লোক সকল! (শুনে রেখ), তোমাদের বিদ্রোহাচরণ তোমাদেরই (প্রাণের) জন্য বিপদ হবে, পার্থিব জীবনে (এটা দ্বারা কিছু ফল) ভোগ করে নাও, অতঃপর আমারই কাছে তোমাদেরকে ফিরে আসতে হবে, অতঃপর আমি তোমাদের যাবতীয় কৃতকর্ম তোমাদেরকে জানিয়ে দিব। মুজিবুর রহমান

But when He saves them, at once they commit injustice upon the earth without right. O mankind, your injustice is only against yourselves, [being merely] the enjoyment of worldly life. Then to Us is your return, and We will inform you of what you used to do. Sahih International

২৩. অতঃপর তিনি যখন তাদেরকে বিপদমুক্ত করেন তখন তারা যমীনে অন্যায়ভাবে সীমালঙ্ঘন করতে থাকে(১)। হে মানুষ! তোমাদের সীমালঙ্ঘন কেবলমাত্র তোমাদের নিজেদের প্রতিই হয়ে থাকে(২); দুনিয়ার জীবনের সুখ ভোগ করে নাও(৩), পরে আমাদেরই কাছে তোমাদের প্রত্যাবর্তন। তখন আমরা তোমাদেরকে জানিয়ে দেব তোমরা যা করতে।

(১) এর সমার্থে আরো আয়াত দেখুন, সূরা আল-ইসরাঃ ৬৭।

(২) অর্থাৎ তোমাদের অন্যায়-অনাচারের বিপদ তোমাদেরই উপর পড়ছে। এতে বুঝা যাচ্ছে, যুলুমের কারণে বিপদ অবশ্যম্ভাবী এবং দুনিয়াতেও তা ভোগ করতে হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ অন্যায়-অনাচার ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার শাস্তি আখেরাতের পূর্বে দুনিয়াতেই আল্লাহর পক্ষ থেকেই প্রাপ্ত হওয়া উপযুক্ত। তদুপরি আখেরাতে তার শাস্তি তো রয়েছেই। [আবু দাউদঃ ৪৯০২, তিরমিযীঃ ২৫১১, ইবনে মাজাহঃ ৪২১১] অন্য এক হাদীসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ দুটি গোনাহর শাস্তি তাড়াতাড়ি দেয়া হয়, দেরী করা হয় না। অন্যায়-অনাচার ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা। [মুসনাদে আহমাদঃ ৫/৩৬, বুখারী আদাবুল মুফরাদঃ ৮৯৫, হাকেম মুস্তাদরাকঃ ৪/১৭৭]

তাছাড়া হাদীসে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “সীমালঙ্ঘন বা যুলুম করো না, আল্লাহ যুলুমকারীকে পছন্দ করেন না। আল্লাহ বলেনঃ তোমাদের যুলুম তো তোমাদের নিজের নফস বা আত্মার উপরই।” [মুস্তাদরাকে হাকেমঃ ২/৩৩৮]

(৩) এর কয়েকটি অর্থ হতে পারে। এক. তোমাদের সীমালঙ্ঘন তো দুনিয়ার ভোগ অর্জনের জন্যই। দুই. সীমালঙ্ঘন করে তোমরা দুনিয়ার ভোগ অর্জন করতে পারবে। তিন. তোমাদের সীমালঙ্ঘনের মাধ্যমে কেবল দুনিয়ার জীবনের সময়টুকুতেই উপকৃত হতে পারবে। চার. তোমরা যে সীমালঙ্ঘন করছ তার উদাহরণ হচ্ছে দুনিয়ার জীবনে ভোগ অর্জনের মত। [ফাতহুল কাদীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৩) অতঃপর যখনই আল্লাহ তাদেরকে উদ্ধার করেন, তখনই তারা ভূ-পৃষ্ঠে অন্যায়ভাবে বিদ্রোহাচরণ করতে থাকে।[1] হে লোক সকল! (শুনে রাখ) তোমাদের বিদ্রোহাচরণ তোমাদেরই (জন্য ক্ষতিকর) হবে,[2] (এ হল) পার্থিব জীবনের উপভোগ্য, তারপর আমারই দিকে তোমাদেরকে ফিরে আসতে হবে। অতঃপর আমি তোমাদেরকে তোমাদের যাবতীয় কৃতকর্ম জানিয়ে দেব।

[1] এটা মানুষের সেই অকৃতজ্ঞ (নিমকহারাম) স্বভাবের বর্ণনা, যা ১২নং আয়াতে উল্লিখিত হয়েছে। তাছাড়া কুরআনের আরো বিভিন্ন স্থানে আল্লাহ তাআলা এর বর্ণনা দিয়েছেন।

[2] আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমরা অকৃতজ্ঞতা ও বিদ্রোহাচরণ করে নাও। তোমরা ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীর জীবন উপভোগ করে পরিশেষে তোমাদেরকে আমার নিকটেই ফিরে আসতে হবে, তখন আমি তোমাদেরকে তোমাদের কৃতকর্মের দস্ত্তরমত শাস্তি দেব।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১০ . ইউনুস
১০:২৪ اِنَّمَا مَثَلُ الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا كَمَآءٍ اَنۡزَلۡنٰهُ مِنَ السَّمَآءِ فَاخۡتَلَطَ بِهٖ نَبَاتُ الۡاَرۡضِ مِمَّا یَاۡكُلُ النَّاسُ وَ الۡاَنۡعَامُ ؕ حَتّٰۤی اِذَاۤ اَخَذَتِ الۡاَرۡضُ زُخۡرُفَهَا وَ ازَّیَّنَتۡ وَ ظَنَّ اَهۡلُهَاۤ اَنَّهُمۡ قٰدِرُوۡنَ عَلَیۡهَاۤ ۙ اَتٰهَاۤ اَمۡرُنَا لَیۡلًا اَوۡ نَهَارًا فَجَعَلۡنٰهَا حَصِیۡدًا كَاَنۡ لَّمۡ تَغۡنَ بِالۡاَمۡسِ ؕ كَذٰلِكَ نُفَصِّلُ الۡاٰیٰتِ لِقَوۡمٍ یَّتَفَكَّرُوۡنَ ﴿۲۴﴾

নিশ্চয় দুনিয়ার জীবনের তুলনা তো পানির ন্যায় যা আমি আকাশ থেকে নাযিল করি, অতঃপর তার সাথে যমীনের উদ্ভিদের মিশ্রণ ঘটে, যা মানুষ ও চতুষ্পদ জন্তু ভোগ করে। অবশেষে যখন যমীন শোভিত ও সজ্জিত হয় এবং তার অধিবাসীরা মনে করে যমীনে উৎপন্ন ফসল করায়ত্ব করতে তারা সক্ষম, তখন তাতে রাতে কিংবা দিনে আমার আদেশ চলে আসে। অতঃপর আমি সেগুলোকে বানিয়ে দেই কর্তিত ফসল, মনে হয় গতকালও এখানে কিছু ছিল না। এভাবে আমি চিন্তাশীল লোকদের জন্য নিদর্শনসমূহ বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করি। আল-বায়ান

দুনিয়ার জীবনের দৃষ্টান্ত হচ্ছে যেমন আকাশ থেকে আমি পানি বর্ষণ করি যার সংস্পর্শে ঘন সন্নিবিষ্ট ভূমি জাত উদ্ভিদ উৎপন্ন হয়। যাত্থেকে ভক্ষণ করে মানুষ আর জীবজন্তু। অবশেষে যমীন যখন সোনালীরূপ ধারণ করে আর শোভামন্ডিত হয়, আর তার মালিকগণ ভাবতে থাকে যে, ওগুলো তাদের হাতের মুঠোয় তখন রাত্রিকালে কিংবা দিনের বেলা আমার নির্দেশ এসে পড়ে আর আমি ওগুলো এমনভাবে ধ্বংস করে দেই মনে হয় যেন গতকাল সেখানে কোন কিছুই ছিল না। এভাবে আমি আমার নিদর্শনগুলোকে বিশদভাবে বর্ণনা করি ঐ সম্প্রদায়ের জন্য যারা চিন্তাভাবনা করে বুঝতে চেষ্টা করে। তাইসিরুল

বস্তুতঃ পার্থিব জীবনের অবস্থাতো এরূপ, যেমন আমি আসমান হতে পানি বর্ষণ করলাম, অতঃপর তা দ্বারা উৎপন্ন হয় যমীনের উদ্ভিদগুলি অতিশয় ঘন হয়ে, যা মানুষ ও পশুরা আহার করে; এমন কি, যখন সেই যমীন নিজের সুদৃশ্যতার পূর্ণ রূপ ধারণ করল এবং তা শোভনীয় হয়ে উঠল, আর ওর মালিকরা মনে করল যে, তারা এখন ওর পূর্ণ অধিকারী হয়েছে, তখন দিনে অথবা রাতে ওর উপর আমার পক্ষ হতে কোন আপদ এসে পড়ল। সুতরাং আমি ওকে এমন নিশ্চিহ্ন করে দিলাম, যেন গতকাল ওর অস্তিত্বই ছিলনা। এরূপেই আয়াতগুলিতে আমি বিশদ রূপে বর্ণনা করি এমন লোকদের জন্য যারা চিন্তা ভাবনা করে। মুজিবুর রহমান

The example of [this] worldly life is but like rain which We have sent down from the sky that the plants of the earth absorb - [those] from which men and livestock eat - until, when the earth has taken on its adornment and is beautified and its people suppose that they have capability over it, there comes to it Our command by night or by day, and We make it as a harvest, as if it had not flourished yesterday. Thus do We explain in detail the signs for a people who give thought. Sahih International

২৪. দুনিয়ার জীবনের দৃষ্টান্ত তো এরূপঃ যেমন আমরা আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করি যা দ্বারা ভূমিজ উদ্ভিদ ঘন সন্নিবিষ্ট হয়ে উদগত হয়, যা থেকে মানুষ ও জীব-জন্তু খেয়ে থাকে। তারপর যখন ভূমি তার শোভা ধারণ করে ও নয়নাভিরাম হয় এবং তার অধিকারিগণ মনে করে সেটা তাদের আয়ত্তাধীন, তখন দিনে বা রাতে আমাদের নির্দেশ এসে পড়ে তারপর আমরা তা এমনভাবে নির্মুল করে দেই, যেন গতকালও সেটার অস্তিত্ব ছিল না।(১) এভাবে আমরা আয়াতসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করি এমন সম্প্রদায়ের জন্য যারা চিন্তা করে।(২)

(১) অর্থাৎ দুনিয়ার যাবতীয় বস্তু এতই ক্ষনস্থায়ী যে, সেটা হস্তচ্যুত হয়ে গেলে এমন মনে হয় যেন তা কোনদিনই তার ছিল না। পক্ষান্তরে আখেরাতের নেয়ামত এমন হবে যে, তার তুলনায় দুনিয়ার সব দুঃখ কষ্ট মানুষ বেমালুম ভুলে যাবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারে বলেনঃ “দুনিয়ার সবচেয়ে বেশী নেয়ামতের অধিকারীকে কিয়ামতের দ্বীন নিয়ে আসা হবে তারপর তাকে জাহান্নামের আগুনে একবার ঢুকিয়ে আনার পর জিজ্ঞাসা করা হবে তুমি কি তোমার দুনিয়ার জীবনে কোন ভাল বা কল্যাণ কিছু পেয়েছিলে? তুমি কি কোন নেয়ামত পেয়েছিলে? সে বলবেঃ না। অপরপক্ষে, দুনিয়াতে সবচেয়ে কঠিন কষ্টের মধ্যে ছিল এমন লোককে নিয়ে আসা হবে তারপর তাকে জান্নাতে ঢুকিয়ে জিজ্ঞাসা করা হবে, তুমি কি কখনো দুঃখ কষ্ট দেখেছিলে? সে বলবেঃ না।” [মুসলিমঃ ২৮০৭]

(২) কারণ চিন্তাশীল মাত্রই বুঝতে পারে যে, দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী। শুধু তাই নয় ধোঁকাবাজও। দুনিয়ার চরিত্রই হলো এমন যে, যারা এর পিছনে ছুটে সে তাদের থেকে দূরে ছুটে যায় আর যারা তার থেকে দূরে থাকতে চায় সে তাদের পিছু নেয়। দুনিয়ার উদাহরণ হিসেবে আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে যমীনের মধ্যে উৎপন্ন উদ্ভিদ বলে উল্লেখ করেছেন। [ইবন কাসীর] যেমন, “তাদের কাছে পেশ কর উপমা দুনিয়ার জীবনের: এটা পানির ন্যায় যা আমরা বর্ষণ করি আকাশ থেকে, যা দ্বারা ভূমিজ উদ্ভিদ ঘন সন্নিবিষ্ট হয়ে উদগত হয়, তারপর তা বিশুষ্ক হয়ে এমন চূর্ণ-বিচূর্ণ হয় যে, বাতাস তাকে উড়িয়ে নিয়ে যায়। আল্লাহ্ সব কিছুর উপর শক্তিমান” [সূরা আল-কাহফ: ৪৫] অনুরূপ আয়াত আরও এসেছে সূরা আয-যুমার ও সূরা আল-হাদীদে। [ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৪) বস্তুতঃ পার্থিব জীবনের দৃষ্টান্ত তো বৃষ্টির মত, যা আমি আসমান হতে বর্ষণ করি। অতঃপর তার দ্বারা উৎপন্ন হয় ভূপৃষ্ঠের উদ্ভিদগুলো অতিশয় ঘন হয়ে, যা হতে মানুষ ও পশুরা ভক্ষণ করে। অতঃপর যখন ভূমি তার শোভা ধারণ করে ও নয়নাভিরাম হয়ে ওঠে এবং তার মালিকরা মনে করে যে, তারা এখন তার পূর্ণ অধিকারী, তখন দিনে অথবা রাতে তার উপর আমার (আযাবের) আদেশ এসে পড়ে, সুতরাং আমি তা এমনভাবে নিশ্চিহ্ন করে দিই,[1] যেন গতকাল তার অস্তিত্বই ছিল না। এরূপেই আয়াতগুলোকে আমি চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য বিশদরূপে বর্ণনা করে থাকি।

[1] حَصِيدًا - فعيل - مفعول অর্থে। أي محصودًا অর্থাৎ এমন ফসল যা কেটে এক জায়গায় স্তূপ করে রাখা হয় এবং ক্ষেত পরিষ্কার হয়ে যায়। পার্থিব্য জীবনকে এইরূপ ক্ষেতের সাথে তুলনা করে তা যে ক্ষণস্থায়ী; চিরস্থায়ী নয়, তা পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে। ফসলও বৃষ্টির পানি দ্বারা বড় এবং সবুজ ও সতেজ হয়, কিন্তু পরে তা কেটে-শুকিয়ে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১০ . ইউনুস
১০:২৫ وَ اللّٰهُ یَدۡعُوۡۤا اِلٰی دَارِ السَّلٰمِ ؕ وَ یَهۡدِیۡ مَنۡ یَّشَآءُ اِلٰی صِرَاطٍ مُّسۡتَقِیۡمٍ ﴿۲۵﴾

আর আল্লাহ শান্তির আবাসের দিকে আহবান করেন এবং যাকে ইচ্ছা হিদায়াত দেন সরল পথের দিকে। আল-বায়ান

আল্লাহ তোমাদেরকে শান্তির কেন্দ্রভূমির দিকে আহবান জানান আর যাকে তিনি চান সঠিক পথে পরিচালিত করেন। তাইসিরুল

আর আল্লাহ তোমাদেরকে শান্তির নিবাসের দিকে আহবান করেন; এবং যাকে ইচ্ছা সরল পথে চলার ক্ষমতা দান করেন। মুজিবুর রহমান

And Allah invites to the Home of Peace and guides whom He wills to a straight path Sahih International

২৫. আর আল্লাহ শান্তির আবাসের দিকে আহবান করেন(১) এবং যাকে ইচ্ছে সরল পথে পরিচালিত করেন(২)।

(১) অর্থাৎ আল্লাহ্ তা'আলা মানুষকে শান্তির আলয়ের দিকে আহবান করেন। অর্থাৎ দুনিয়ায় জীবন যাপন করার এমন পদ্ধতির দিকে তোমাদের আহবান জানান, যা আখেরাতের জীবনে তোমাদের দারুস সালাম বা শান্তির ভবনের অধিকারী করে। যে শান্তি ভবনে রয়েছে সর্ববিধ নিরাপত্তা ও শান্তি। না আছে তাতে কোন রকম দুঃখকষ্ট, না আছে ব্যাথা-বেদনা, না আছে রোগ-তাপের ভয়, আর না আছে ধ্বংস। এখানে السَّلَامِ শব্দ দিয়ে কি বোঝানো হয়েছে, এ ব্যাপারে কয়েকটি মত রয়েছেঃ

একঃ ‘দারুসসালাম’-এর মর্মার্থ হলো জান্নাত। একে ‘দারুসসালাম’ বলার কারণ হলো এই যে, প্রত্যেকেই এখানে সর্বপ্রকার নিরাপত্তা ও প্রশান্তি লাভ করবে। [বাগভী; ইবন কাসীর]

দুইঃ কোন কোন মুফাসসির বলেনঃ এখানে সালাম অর্থ সম্ভাষণ, সালাম যা পরস্পরের মধ্যে আদান-প্রদান হয়। সে হিসেবে ‘দারুসসালাম’ এ জন্য নামকরণ করা হয়েছে যে, এতে বসবাসকারীদের প্রতি সার্বক্ষণিকভাবে আল্লাহ্ তা'আলার পক্ষ থেকে এবং ফিরিশতাদের পক্ষ থেকেও সালাম পৌছতে থাকবে। অনুরূপভাবে তারাও একে অন্যের সাথে সালাম বিনিময় করতে থাকবে। [কুরতুবী]

তিনঃ হাসান ও কাতাদাহ বলেনঃ ‘আসসালাম’ যেহেতু আল্লাহর নাম, সেহেতু তার ঘর হলো জান্নাত, সে হিসেবে ‘দারুসসালাম’ অর্থ আল্লাহর ঘর। আর আল্লাহ তার ঘরের দিকে আহবানের ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বিভিন্ন হাদীস বর্ণিত হয়েছে। এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ আমি স্বপ্নে দেখলাম, মনে হলো জিবরীল আমার মাথার কাছে, আর মীকাঈল পায়ের কাছে অবস্থান করছে, তাদের একজন অন্যজনকে বলছেঃ এর একটা উদাহরণ দাও।

অপরজন তার উত্তরে বললঃ শুনুন! আমার কান শুনছে, অনুধাবন করুন, আপনার হৃদয় অনুধাবন করছে। আপনার এবং আপনার উম্মতের উদাহরণ হলো এমন বাদশাহর মত যিনি একটি বাড়ী নির্মাণ করে তাতে একটি ঘর বানালেন, তারপর সেখানে তিনি মেহমানদারীর জন্য খাবারের ব্যবস্থা করলেন, তারপর সেখানে খাবার খাওয়ার জন্য তার পক্ষ থেকে দূত প্রেরণ করলেন। দাওয়াতকৃতদের মধ্যে কেউ কেউ তার দাওয়াত গ্রহণ করে নিল। আবার তাদের মধ্যে কেউ কেউ তা বর্জন করল। এখানে আল্লাহ হলেন বাদশাহ, তার বাড়ী হলো ইসলাম, তার ঘর হলো জান্নাত আর হে মুহাম্মাদ! আপনি হলেন দূত। যে আপনার দাওয়াত কবুল করল সে ইসলামে প্রবেশ করল, আর যে ইসলামে প্রবেশ করল সে জান্নাতে প্রবেশ করল, আর যে জান্নাতে প্রবেশ করল সে তা থেকে খাওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করল। [তাবারীঃ ১৭৬২৪, মুসতাদরাকঃ ৩/৩৩৮-৩৩৯]

অন্য এক হাদীসে এসেছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ প্রতিদিন সূর্য উদিত হওয়ার সাথে সাথে তার দু’পার্শ্বে দু'জন ফিরিশতা ডাকতে থাকে, যা মানুষ ও জিন ব্যতীত সবাই শোনে। তারা বলতে থাকেঃ হে লোকসকল! তোমরা তোমাদের প্রভূর কাছে আস...”। [তাবারীঃ ১৭৬২৩, ইবনে হিব্বানঃ ২৪৭৬, আহমাদঃ ৫/১৯৭]

(২) অর্থাৎ আল্লাহ্ তা'আলা যাকে ইচ্ছা সরল পথে পৌছে দেন। এখানে ‘সিরাতুল মুস্তাকীম’-এর অর্থ কোন কোন মুফাসসিরের মতে, কুরআন। কুরতুবী কাতাদা ও মুজাহিদ বলেন, এর অর্থ- হক, সত্য ও ন্যায়। আবুল আলীয়া ও হাসান বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার দুই সাথী আবু বকর ও উমর। [তাবারী] আবার কারও কারও মতে, ইসলাম। এর মর্মার্থ হলো এই যে, আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে দারুসসালামের দাওয়াত সমগ্র মানবজাতির জন্যই ব্যাপক। এ অর্থের পরিপ্রেক্ষিতে হেদায়াতও ব্যাপক। কিন্তু হেদায়াতের বিশেষ প্রকার- সরলসোজা পথে তুলে দেয়া এবং তাতে চলার তাওফীক বিশেষ বিশেষ লোকদের ভাগ্যেই জোটে। আর তারা হলেন ঐ সমস্ত ভাগ্যবান ব্যক্তিবর্গ যারা ইসলাম গ্রহণ করেছে। [বাগভী; কুরতুবী]

সিরাত' এর তাফসীর ইসলাম দ্বারা করলে সমস্ত অর্থের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করা হয়। তাছাড়া এটি এক হাদীস দ্বারা সমর্থিত। যেখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সিরাতে মুস্তাকীমের জন্য একটি উদাহরণ পেশ করেছেন। তিনি একটি সোজা রাস্তা দেখালেন, যার দু' পাশে দুটি দেয়াল রয়েছে, যাতে রয়েছে অনেকগুলো খোলা দরজা। যে দরজাগুলোতে আবার ঢিলে করে কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। আর পথের উপর একজন আহবানকারী রয়েছেন। তিনি বলছেন, হে লোকসকল, তোমরা সকলে পথে প্রবেশ কর। বাঁকা পথে চলো না। (অথবা বাঁকা পথের দিকে তাকিয়ে আনন্দ নিতে চেষ্টা করো না) আর একজন ডাকছে রাস্তার মাঝখান থেকে। তারপর যখনই কেউ কোন দরজা খুলতে চেষ্টা করে, তখনি সে বলতে থাকে, তোমার জন্য আফসোস! তুমি এটা খুলো না, কেননা, তুমি এটা খুললে তাতে প্রবেশ করে বসবে। আর সে পথটি হচ্ছে ইসলাম। তার দু' পাশের দুটি দেয়াল হচ্ছে আল্লাহর নির্ধারিত সীমানা। আর খোলা দরজাগুলো হচ্ছে, আল্লাহর হারামকৃত বিষয়াদি। আর পথের মাথা থেকে যে ডাকছে সে হচ্ছে আল্লাহর কিতাব। আর যে রাস্তার উপর বা মাঝখান থেকে ডাকছে সে হচ্ছে, প্রতিটি মুসলিমের অন্তরে আল্লাহর নসীহতকারী। [মুসনাদে আহমাদ: ৪/১৮২]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৫) আল্লাহ (মানুষ)কে শান্তির আবাসের দিকে আহবান করেন এবং যাকে ইচ্ছা সরল পথ প্রদর্শন করেন।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১০ . ইউনুস
১০:২৬ لِلَّذِیۡنَ اَحۡسَنُوا الۡحُسۡنٰی وَ زِیَادَۃٌ ؕ وَ لَا یَرۡهَقُ وُجُوۡهَهُمۡ قَتَرٌ وَّ لَا ذِلَّۃٌ ؕ اُولٰٓئِكَ اَصۡحٰبُ الۡجَنَّۃِ ۚ هُمۡ فِیۡهَا خٰلِدُوۡنَ ﴿۲۶﴾

যারা ভালো কাজ করে তাদের জন্য রয়েছে শুভ পরিণাম (জান্নাত) এবং আরও বেশি। আর ধূলোমলিনতা ও লাঞ্ছনা তাদের চেহারাগুলোকে আচ্ছন্ন করবে না। তারাই জান্নাতবাসী। তারা তাতে স্থায়ী হবে। আল-বায়ান

যারা কল্যাণকর কাজ করে তাদের জন্য রয়েছে কল্যাণ এবং আরো অতিরিক্ত (পুরস্কার), কলংক ও লাঞ্ছনা তাদের মুখমণ্ডলকে মলিন করবে না, তারাই হল জান্নাতের অধিবাসী, সেখানে তারা থাকবে চিরকাল। তাইসিরুল

যারা সৎ কাজ করেছে তাদের জন্য উত্তম বস্তু (জান্নাত) রয়েছে; এবং অতিরিক্ত কিছুও বটে; আর না তাদের মুখমণ্ডলকে মলিনতা আচ্ছন্ন করবে, আর না অপমান; তারাই হচ্ছে জান্নাতের অধিবাসী, তারা ওর মধ্যে অনন্তকাল থাকবে। মুজিবুর রহমান

For them who have done good is the best [reward] and extra. No darkness will cover their faces, nor humiliation. Those are companions of Paradise; they will abide therein eternally Sahih International

২৬. যারা ইহসানের সাথে আমল করে (উত্তমরূপে কাজ করে) তাদের জন্য আছে জান্নাত এবং আরো বেশী(১)। কালিমা ও হীনতা তাদের মুখমন্ডলকে আচ্ছন্ন করবে না(২)। তারাই জান্নাতের অধিবাসী, সেখানে তারা স্থায়ী হবে।

(১) এ আয়াতে أَحْسَنُوا বলে বুঝানো হয়েছে ঐ সমস্ত লোকদেরকে যারা ইহসানের সাথে তাদের সৎকাজ করেছে। আর ইহসানের অর্থ যা হাদীসে এসেছে তা হলো, এমনভাবে আল্লাহর ইবাদাত করা যেন সে আল্লাহকে দেখছে, যদি তা সম্ভব না হয় তবে এটা যেন বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ তো তাকে দেখছেন। সুতরাং যারা ইহসানের সাথে তাদের ইবাদাত সম্পাদন করেছে তারা হলো পরিপূর্ণ তাওহীদ বাস্তবায়নকারী। তাদের জন্য দুটি পুরস্কারের ঘোষণা রয়েছে- (১) الْحُسْنَىٰ যার অর্থ জান্নাত। (২) زِيَادَةٌ যার অর্থ বাড়তি পাওনা। এর অর্থ এও হতে পারে যে, তাদেরকে শুধু তাদের কাজ অনুসারেই প্রতিফল দেয়া হবে না বরং তাদের আমলের সওয়াব দশগুণ ও ততোধিক বহুগুণ যেমন সত্তরগুণে বর্ধিত করে দেয়া হবে। এ ছাড়া তাদের জন্য সেখানে অট্টালিকা, উদ্যান ও সুন্দর সুন্দর স্ত্রীসমূহ থাকবে। [ইবন কাসীর]

তাছাড়া আরো থাকবে আল্লাহর দীদার। এ সম্পর্কে হাদীসে এসেছে যে, যখন জান্নাতবাসীগণ জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং জাহান্নামবাসীগণ জাহান্নামে প্রবেশ করবে তখন একজন আহবানকারী ডেকে বলবেঃ হে জান্নাতবাসীগণ! তোমাদের সাথে আল্লাহর একটি ওয়াদা রয়েছে যা তিনি পূরণ করতে চান। তারা বলবেঃ সেটা কি? তিনি কি আমাদের মীযানের পাল্লা ভারী করে দেননি? আমাদের চেহারা শুভ্র করে দেন নি? আমাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করান নি? আমাদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন নি? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তারপর তাদের জন্য তাঁর পর্দা খুলে দেয়া হবে ফলে তারা তার দিকে তাকাবে। আল্লাহর শপথ করে বলছিঃ আল্লাহ তাদেরকে তাঁর দিকে তাকানোর চেয়ে প্রিয় এবং চক্ষু শীতলকারী আর কোন জিনিস দেননি। [সহীহ মুসলিমঃ ১৮১, তিরমিযীঃ ২৫৫২, মুসনাদে আহমাদ ৪/৩৩৩] সুতরাং বুঝা যাচ্ছে যে, এখানে زِيَادَةٌ বা বাড়তি পাওনার মধ্যে আল্লাহর দীদার তথা তার চেহারা মুবারকের দিকে তাকানো ও আল্লাহ্ তা'আলাকে দেখার সৌভাগ্যও শামিল। সাহাবা, তাবেয়ীন, তাবে-তাবেয়ীন, মুজতাহেদীনসহ পূর্ববর্তী ও পরবর্তী অনেক আলেম থেকে এ তাফসীর বর্ণিত হয়েছে। [তাবারী; বাগভী; কুরতুবী ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]

(২) বরং তাদের চেহারা হবে শুভ্ৰ, মন হবে আনন্দে উদ্বেলিত। যেমনটি সূরা আল ইনসানের ১১ নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে।

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৬) যারা কল্যাণকর কাজ করে, তাদের জন্য রয়েছে কল্যাণ (জান্নাত) এবং আরো অধিক (আল্লাহর দীদার)।[1] তাদের মুখমন্ডলকে মলিনতা আচ্ছন্ন করবে না এবং লাঞ্ছনাও না; তারাই হচ্ছে জান্নাতের অধিবাসী, তারা ওর মধ্যে অনন্তকাল বাস করবে।

[1] এই زِيَادَةٌ -‘অধিক’এর কয়েকটি অর্থ বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু হাদীসে এর ব্যাখ্যা আল্লাহ তাআলার দীদার বা দর্শনসুখ বর্ণনা করা হয়েছে। জান্নাতীদেরকে জান্নাত ও জান্নাতের সকল নিয়ামত দান করার পর এই দীদার দ্বারা সম্মানিত করা হবে। (মুসলিম)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ ১৩৮১ থেকে ১৩৯০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৬২৩৬ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 · · · 136 137 138 139 140 · · · 621 622 623 624 পরের পাতা »