৮ . আল-আনফাল
৮:২১ وَ لَا تَكُوۡنُوۡا كَالَّذِیۡنَ قَالُوۡا سَمِعۡنَا وَ هُمۡ لَا یَسۡمَعُوۡنَ ﴿۲۱﴾

আর তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা বলে আমরা শুনেছি অথচ তারা শুনে না। আল-বায়ান

তোমরা তাদের মত হয়ো না যারা বলেছিল, ‘আমরা শুনলাম’; প্রকৃতপক্ষে তারা শোনেনি। তাইসিরুল

তোমরা ঐ সব লোকের মত হয়োনা, যারা বলে - আমরা আপনাদের কথা শুনলাম, কার্যতঃ তারা কিছুই শোনেনা। মুজিবুর রহমান

And do not be like those who say, "We have heard," while they do not hear. Sahih International

২১. আর তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা বলে, ‘শুনলাম’ আসলে তারা শুনে না।(১)

(১) অর্থাৎ তোমরা তাদের মত হয়ো না যারা মুখে এ কথা বলে সত্য যে, আমরা শুনে নিয়েছি, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কিছুই শোনেনি। কাজেই তাদের এই শ্রবণ না শোনারই শামিল। মুসলিমদেরকে এদের অনুরূপ হতে বারণ করা হয়েছে। কারণ, ঈমান দাবীর নাম নয়, ঈমান হচ্ছে যা অন্তরে প্রবেশ করে এবং যা সত্য হওয়ার উপর বান্দার আমল প্রমাণ বহন করে। [সা’দী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২১) আর তোমরা তাদের মত হয়ো না যারা বলে, ‘শ্রবণ করলাম’ অথচ তারা শ্রবণ করে না।[1]

[1] অর্থাৎ, শোনার পরও আমল না করা, এটি কাফেরদের অভ্যাস। এই শ্রেণীর অভ্যাস থেকে তোমরা বিরত থাক। পরবর্তী আয়াতে তাদেরকে কালা, বোবা, বিবেকহীন ও নিকৃষ্টতম জীব বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। دَوَاب শব্দটি دَابَّة এর বহুবচন। পৃথিবীতে চলাফেরা করে এ রকম প্রত্যেক জীবকেই دابة বলা হয়। এখানে সৃষ্টিজগতকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, এরা সকল জীব হতে নিকৃষ্ট, যারা সত্যের ব্যাপারে কালা, বোবা ও বিবেকহীন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৮ . আল-আনফাল
৮:২২ اِنَّ شَرَّ الدَّوَآبِّ عِنۡدَ اللّٰهِ الصُّمُّ الۡبُكۡمُ الَّذِیۡنَ لَا یَعۡقِلُوۡنَ ﴿۲۲﴾

নিশ্চয় আল্লাহর নিকট নিকৃষ্টতম বিচরণশীল প্রাণী হচ্ছে বধির, বোবা, যারা বুঝে না। আল-বায়ান

আল্লাহর নিকট সবচেয়ে নিকৃষ্ট জীব হচ্ছে যারা (হক্ব কথা শুনার ব্যাপারে) বধির এবং (হক্ব কথা বলার ব্যাপারে) বোবা, যারা কিছুই বোঝে না। তাইসিরুল

আল্লাহর কাছে নিকৃষ্টতম জীব হচ্ছে ঐ সব মূক ও বধির লোক, যারা কিছুই বুঝেনা (অর্থাৎ বিবেক বুদ্ধিকে কাজে লাগায়না)। মুজিবুর রহমান

Indeed, the worst of living creatures in the sight of Allah are the deaf and dumb who do not use reason. Sahih International

২২. নিশ্চয় আল্লাহর কাছে নিকৃষ্টতম বিচরণশীল জীব হচ্ছে বধির, বোবা, যারা বুঝে না।(১)

(১) الدَّوَابِّ শব্দটি دابة এর বহুবচন। অভিধান অনুযায়ী যমীনের উপর বিচরণকারী প্রতিটি জীবকেই دابة বলা হয়। [কাশশাফ] কিন্তু সাধারণ প্রচলন ও পরিভাষায় دابة বলা হয় শুধুমাত্র চতুষ্পদ জন্তুকে। সুতরাং আয়াতের অর্থ দাঁড়ায় এই যে, আল্লাহর নিকট সে সমস্ত লোকই সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট ও চতুষ্পদ জীবতুল্য যারা সত্য ও ন্যায়ের শ্রবণের ব্যাপারে বধির এবং তা গ্রহণ করার ব্যাপারে মুক। কারণ আল্লাহ্ তা'আলা তাদেরকে হক জানা ও সে পথে চলার জন্য চোখ ও কান দিয়েছিলেন, কিন্তু তারা সেটা না করে সেগুলোকে ভিন্ন পথে পরিচালিত করেছে। [সা'দী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২২) নিশ্চয় আল্লাহর নিকট নিকৃষ্টতম জীব কালা ও বোবা; যারা কিছুই বোঝে না।[1]

[1] এই কথাটিকেই কুরআনের অন্যত্র এভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে।{لَهُمْ قُلُوبٌ لاَّ يَفْقَهُونَ بِهَا وَلَهُمْ أَعْيُنٌ لاَّ يُبْصِرُونَ بِهَا وَلَهُمْ آذَانٌ لاَّ يَسْمَعُونَ بِهَا أُوْلَئِكَ كَالأَنْعَامِ بَلْ هُمْ أَضَلُّ أُوْلَئِكَ هُمُ الْغَافِلُونَ} অর্থাৎ, তাদের হৃদয় আছে, কিন্তু তা দিয়ে তারা উপলব্ধি করে না, তাদের চক্ষু আছে, কিন্তু তা দিয়ে তারা দর্শন করে না এবং তাদের কর্ণ আছে, কিন্তু তা দিয়ে তারা শ্রবণ করে না। এরা চতুষ্পদ জন্তুর ন্যায়; বরং তা অপেক্ষাও অধিক বিভ্রান্ত! তারাই হল উদাসীন। (সূরা আ’রাফ ১৭৯ আয়াত)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৮ . আল-আনফাল
৮:২৩ وَ لَوۡ عَلِمَ اللّٰهُ فِیۡهِمۡ خَیۡرًا لَّاَسۡمَعَهُمۡ ؕ وَ لَوۡ اَسۡمَعَهُمۡ لَتَوَلَّوۡا وَّ هُمۡ مُّعۡرِضُوۡنَ ﴿۲۳﴾

আর আল্লাহ যদি তাদের মধ্যে কোন কল্যাণ জানতেন তাহলে অবশ্যই তাদেরকে শুনাতেন। আর যদি শুনাতেন তাহলেও তারা মুখ ফিরিয়ে নিত, এমতাবস্থায় যে, তারা উপেক্ষাকারী। আল-বায়ান

আল্লাহ যদি দেখতেন যে, তাদের মধ্যে কোন ভাল গুণ নিহিত আছে তবে তিনি তাদেরকে শুনবার তাওফীক দিতেন। আর (গুণ না থাকা অবস্থায়) তিনি যদি তাদেরকে শুনতে দিতেন তাহলে তারা উপেক্ষা করে মুখ ফিরিয়ে নিত। তাইসিরুল

আল্লাহ যদি জানতেন যে, তাদের মধ্যে কল্যাণকর কিছু নিহিত রয়েছে তাহলে অবশ্যই তিনি তাদেরকে শোনার তাওফীক দিতেন, তিনি যদি তাদেরকে শোনাতেন তাহলেও তারা উপেক্ষা করে মুখ ফিরিয়ে অন্য দিকে চলে যেত। মুজিবুর রহমান

Had Allah known any good in them, He would have made them hear. And if He had made them hear, they would [still] have turned away, while they were refusing. Sahih International

২৩. আর আল্লাহ যদি তাদের মধ্যে ভাল কিছু আছে জানতেন তবে তিনি তাদেরকে শুনাতেন। কিন্তু তিনি তাদেরকে শুনালেও তারা উপেক্ষা করে মুখ ফিরিয়ে নিত।(১)

(১) অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা যদি তাদের মধ্যে সামান্যতম কল্যাণকর দিক তথা সৎচিন্তা দেখতেন, তবে তাদের বিশ্বাস সহকারে শোনার সামর্থ্য দান করতেন কিন্তু বর্তমান সত্যানুরাগ না থাকা অবস্থায় যদি আল্লাহ তা'আলা সত্য ও ন্যায় কথা তাদেরকে শুনিয়ে দেন, তাহলে তারা অনীহাভরে তা থেকে বিমুখতা অবলম্বন করবে। তাদের এ বিমুখতা এ কারণে হবে না যে, তারা দ্বীনের মধ্যে কোন আপত্তিকর বিষয় দেখতে পেয়েছে, সে জন্যই তা গ্রহণ করেনি; বরং প্রকৃতপক্ষে তারা সত্যের বিষয়ে কোন লক্ষ্যই করেনি। এর দ্বারা বোঝা গেল যে, আল্লাহ্ তা'আলা শুধু তাকেই ঈমান থেকে বঞ্চিত করেন যার মধ্যে কোন কল্যাণ অবশিষ্ট নেই, যে পবিত্র হতে চায় না, যার কোন ভাল কথা কোন ফল দেয় না। আর এতে রয়েছে বিরাট হিকমত ও রহস্য। [সা’দী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৩) আল্লাহ যদি তাদের মধ্যে ভাল কিছু জানতেন, তাহলে তিনি তাদেরকে শোনাতেন।[1] কিন্তু তিনি তাদেরকে শোনালেও তারা উপেক্ষা করে মুখ ফেরাত। [2]

[1] অর্থাৎ, তাদের শোনাকে ফলপ্রসূ করে তাদেরকে সঠিক বুঝ দান করতেন, যাতে তারা সত্য গ্রহণ করে নিত। কিন্তু যেহেতু তাদের মধ্যে কল্যাণ অর্থাৎ, সত্যের সন্ধানই নেই, সেহেতু তারা সঠিক বুঝ হতে বঞ্চিত।

[2] প্রথম শোনা হতে লাভদায়ক শোনা (অর্থাৎ, মানা), আর দ্বিতীয় শোনা হতে কেবল সাধারণ শোনা বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, মহান আল্লাহ যদি সত্য কথা শুনিয়েও থাকেন, তবুও যেহেতু তাদের মধ্যে সত্যের অনুসন্ধান নেই, সেহেতু তারা পুনরায় তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৮ . আল-আনফাল
৮:২৪ یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اسۡتَجِیۡبُوۡا لِلّٰهِ وَ لِلرَّسُوۡلِ اِذَا دَعَاكُمۡ لِمَا یُحۡیِیۡكُمۡ ۚ وَ اعۡلَمُوۡۤا اَنَّ اللّٰهَ یَحُوۡلُ بَیۡنَ الۡمَرۡءِ وَ قَلۡبِهٖ وَ اَنَّهٗۤ اِلَیۡهِ تُحۡشَرُوۡنَ ﴿۲۴﴾

হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের ডাকে সাড়া দাও; যখন সে তোমাদেরকে আহবান করে তার প্রতি, যা তোমাদেরকে জীবন দান করে। জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ মানুষ ও তার হৃদয়ের মাঝে অন্তরায় হন। আর নিশ্চয় তাঁর নিকট তোমাদেরকে সমবেত করা হবে। আল-বায়ান

ওহে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের ডাকে সাড়া দাও যখন তোমাদেরকে ডাকা হয় (এমন বিষয়ের দিকে) যা তোমাদের মাঝে জীবন সঞ্চার করে, আর জেনে রেখ যে আল্লাহ মানুষ ও তার অন্তরের মাঝে প্রতিবন্ধক হয়ে যান আর তোমাদেরকে তাঁর কাছেই একত্রিত করা হবে। তাইসিরুল

হে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ডাকে সাড়া দাও যখন তিনি তোমাদেরকে তোমাদের জীবন সঞ্চারক বস্তুর দিকে আহবান করেন। আর জেনে রেখ, আল্লাহ মানুষ ও তার অন্তরের অন্তরালে থাকেন, পরিশেষে তাঁর কাছেই তোমাদেরকে সমবেত করা হবে। মুজিবুর রহমান

O you who have believed, respond to Allah and to the Messenger when he calls you to that which gives you life. And know that Allah intervenes between a man and his heart and that to Him you will be gathered. Sahih International

২৪. হে ঈমানদারগণ রাসূল যখন তোমাদেরকে এমন কিছুর দিকে ডাকে যা তোমাদেরকে প্রাণবন্ত করে তখন তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূলের ডাকে সাড়া দেবে এবং জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ মানুষ ও তার হৃদয়ের মাঝে অন্তরায় হন(১)। আর নিশ্চয় তারই দিকে তোমাদেরকে একত্রিত করা হবে।

(১) অর্থাৎ আল্লাহ্ তা'আলা মানুষের এবং তার অন্তরের মাঝে অন্তরায় হয়ে থাকেন। এ বাক্যটির বিভিন্ন অর্থ হতে পারে।

(এক) একটি অর্থ হতে পারে যে, যখনই কোন সৎকাজ করার কিংবা পাপ থেকে বিরত থাকার সুযোগ আসে, তখন সঙ্গে সঙ্গে তা করে ফেল; এতটুকু বিলম্ব করো না এবং অবকাশকে গনীমত জ্ঞান কর। কারণ, যে কোন সময় মানুষের রোগ-শোক, মৃত্যু কিংবা এমন কোন কাজ উপস্থিত হয়ে যেতে পারে, যাতে সে কাজ করার আর অবকাশ থাকে না। সুতরাং মানুষের কর্তব্য হলো আয়ু এবং সময়ের অবকাশকে গনীমত মনে করা। আজকের কাজ কালকের জন্য ফেলে না রাখা। কারণ, এ কথা কারোরই জানা নেই যে, কাল কি হবে। পরবর্তীতে ভাল কাজ করতে চাইলে সক্ষম নাও হতে পার। [সা'দী]

(দুই) এ বাক্যের দ্বিতীয় মর্ম এও হতে পারে যে, এতে আল্লাহ্ তা'আলা যে বান্দার অতি সন্নিকটে তাই বলে দেয়া হয়েছে। প্রতিটি মানুষ আল্লাহর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, যখনই তিনি কোন বান্দাকে অকল্যাণ থেকে রক্ষা করতে চান, তখন তিনি তার অন্তর ও পাপের মাঝে অন্তরায় সৃষ্টি করে দেন। আবার যখন কারো ভাগ্যে অমঙ্গল থাকে, তখন তার অন্তর ও সৎকর্মের মাঝে অন্তরায় সৃষ্টি করে দেয়া হয়। সে কারণেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিকাংশ সময় এই দোআ করতেন-  অর্থাৎ, হে অন্তরসমূহের বিবর্তনকারী! আমার অন্তরকে আপনার দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখুন। [তিরমিযীঃ ২১৪১] [ইবন কাসীর]

(তিন) ইবনে অববাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, এর অর্থ আল্লাহ কাফেরের ঈমান ও মুমিনের কুফরীর মাঝে অন্তরায় হয়ে যান। [মুসানদে আহমাদ ৩/১১২ [ইবন কাসীর]

(চার) কেউ কেউ বলেনঃ আয়াতটি যেহেতু বদর যুদ্ধের সাথে সংশ্লিষ্ট সেহেতু তার অর্থ হবে- জেনে রাখ, আল্লাহ তার নেক বান্দাদের ভাগ্যকে নিরাপত্তায় রূপান্তরিত করেন। আর কাফেরদের প্রশান্ত অন্তরে অশান্তি ও ভয়ে পরিবর্তন করে দেবেন। আবার তিনি ইচ্ছে করলে মুসলিমদের নিরাপদ অবস্থাকে ভীত অবস্থায় রুপান্তরিত করতে পারেন। [ফাতহুল কাদীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৪) হে বিশ্বাসীগণ! রসূল যখন তোমাদেরকে এমন কিছুর দিকে আহবান করে, যা তোমাদেরকে প্রাণবন্ত করে,[1] তখন আল্লাহ ও রসূলের আহবানে সাড়া দাও এবং জেনে রাখ যে, আল্লাহ মানুষ ও তার হৃদয়ের মাঝে অন্তরায় হন[2] এবং তাঁরই নিকট তোমাদেরকে একত্রিত করা হবে।

[1] لِمَا يُحْيِيكُم এর অর্থঃ এমন বস্তুর দিকে যা তোমাদেরকে জীবন দান করে। কেউ কেউ বলেন, এ থেকে জিহাদ বুঝানো হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে বিজয়ীর জীবন। আবার কেউ কুরআনের আদেশ-নিষেধ, শরীয়তের বিধান অর্থ নিয়েছেন, এর মধ্যে জিহাদও রয়েছে। সারকথা হল যে, কেবল আল্লাহ ও তাঁর রসূলের কথা মানো, তার উপর আমল কর। এতেই রয়েছে তোমাদের জীবন।

[2] অর্থ মৃত্যুদান করে, যার স্বাদ সকলকেই গ্রহণ করতে হবে। অর্থাৎ, তোমাদের মৃত্যু আসার পূর্বে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের কথা মেনে নিয়ে তার উপর আমল কর। কেউ কেউ বলেন, মহান আল্লাহ মানুষের হৃদয়ের এত নিকটে যে, তারই উপমা এখানে দেওয়া হয়েছে। যার অর্থ তিনি মানুষের মনের গোপন কথাও জানেন, তাঁর কাছে কোন জিনিসই লুক্কায়িত নয়। ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) এর অর্থ বলেছেন যে, তিনি যখন চান মানুষ ও তার অন্তরের মাঝে অন্তরায় হয়ে যান। এমনকি মানুষ তাঁর ইচ্ছা ব্যতিরেকে কিছুই পেতে পারে না। আবার কেউ কেউ একে বদরের যুদ্ধের সাথে সম্পৃক্ত বলেছেন; মুসলিমগণ শত্রুদের সংখ্যাধিক্যে ভীত ছিলেন, মহান আল্লাহ তাঁদের অন্তরে অন্তরায় হয়ে ভয়কে অভয়ে বদলে দেন। ইমাম শাওকানী বলেন, আয়াতের উক্ত সকল অর্থই হতে পারে। (ফাতহুল কাদীর) ইমাম ইবনে জারীরের বর্ণিত অর্থের সমর্থন ঐ সকল হাদীস দ্বারা হয়, যাতে দ্বীনের উপর অবিচল থাকার দু’আ করতে তাকীদ করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ একটি হাদীসে নবী (সাঃ) বলেছেন, ‘‘আদম সন্তানের অন্তরসমূহ একটি অন্তরের ন্যায় রহমানের (আল্লাহর) দুই আঙ্গুলের মাঝে রয়েছে। তিনি যেভাবে চান তা ঘুরিয়ে থাকেন। তারপর তিনি এই দু’আ পাঠ করেন। হে অন্তর ফিরানোর মালিক! আমাদের অন্তরকে তোমার আনুগত্যের দিকে ফিরিয়ে দাও।’’ (মুসলিমঃ তকদীর অধ্যায়) অন্য বর্ণনায় আছে, ‘‘হে হৃদয় পরিবর্তনকারী! তুমি আমার অন্তরকে তোমার দ্বীনে অবিচল রাখ।’’ (তিরমিযী, তাকদীর পরিচ্ছেদ)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৮ . আল-আনফাল
৮:২৫ وَ اتَّقُوۡا فِتۡنَۃً لَّا تُصِیۡبَنَّ الَّذِیۡنَ ظَلَمُوۡا مِنۡكُمۡ خَآصَّۃً ۚ وَ اعۡلَمُوۡۤا اَنَّ اللّٰهَ شَدِیۡدُ الۡعِقَابِ ﴿۲۵﴾

আর তোমরা ভয় কর ফিতনাকে* যা তোমাদের মধ্য থেকে বিশেষভাবে শুধু যালিমদের উপরই আপতিত হবে না। আর জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ আযাব প্রদানে কঠোর। আল-বায়ান

সতর্ক থাক সেই শাস্তি হতে যা বিশেষভাবে তোমাদের যালিম লোকেদেরকেই আক্রমন করবে না। আর জেনে রেখ যে আল্লাহ শাস্তিদানে খুবই কঠোর। তাইসিরুল

তোমরা সেই ফিতনাকে ভয় কর যা তোমাদের মধ্যকার শুধুমাত্র যালিম ও পাপিষ্ঠদেরকেই বিশেষভাবে ক্লিষ্ট করবেনা। তোমরা জেনে রেখ, নিশ্চয়ই আল্লাহ শাস্তি দানে খুবই কঠোর। মুজিবুর রহমান

And fear a trial which will not strike those who have wronged among you exclusively, and know that Allah is severe in penalty. Sahih International

* ফিতনা (فتنة)একটি ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ; যা বিপদ, কষ্ট, পরীক্ষা, গযব, আযাব, দাঙ্গা, গোলযোগ, সম্মোহন, আকর্ষণ, শির্ক, কুফর, নির্যাতন ইত্যাদি অর্থে ব্যবহৃত হয়।

২৫. আর তোমরা ফেৎনা থেকে বেঁচে থাক যা বিশেষ করে তোমাদের মধ্যে যারা যালিম শুধু তাদের উপরই আপতিত হবে না। আর জেনে রাখ যে, নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি দানে কঠোর।(১)

(১) এ আয়াতে কিছু পাপ থেকে বেঁচে থাকার জন্য বিশেষভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কারণ, পাপের আযাব শুধু পাপীদের পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং পাপ করেনি এমন লোকও তাতে জড়িয়ে পড়ে। সে পাপ যে কি, সে সম্পর্কে মুফাসসিরীন ওলামায়ে কেরামের বিভিন্ন মত রয়েছে। কেউ কেউ বলেনঃ এখানে ফেতনা বলতে সে সব সামাজিক সামগ্রিক ফেতনা বুঝানো হয়েছে, যা এক সংক্রামক ব্যাধির মত জন-সমাজে ছড়িয়ে পড়ে, যাতে কেবল গোনাহগার লোকরাই নিপতিত হয় না, সে লোকেরাও এতে পড়ে মার খায়, যারা গোনাহগার সমাজে বসবাস করাকে বরদাশত করে থাকে। [ইবন কাসীর]

মুতাররিফ বলেন, আমি আব্দুল্লাহ ইবন যুবাইরকে জিজ্ঞেস করলাম, হে আবু আবদিল্লাহ! আপনারা কী জন্য এসেছেন? আপনারা এক খলীফা (উসমান) কে নিঃশেষ করে দিয়েছেন। তারপর তার রক্তের দাবী নিয়ে এসেছেন। তখন আব্দুল্লাহ ইবন যুবাইর বললেন, আমরা (وَاتَّقُوا فِتْنَةً) ... এ আয়াতটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আবু বকর, উমর ও উসমানের সময় পড়েছিলাম, কিন্তু আমরা মনে করেনি যে, আমরাই এর দ্বারা উদ্দিষ্ট। শেষ পর্যন্ত তা আমাদের মধ্যেই যেভাবে ঘটার ঘটে গেল। [মুসনাদে আহমাদ: ১/১৬৫] [ইবন কাসীর]

কোন কোন মুফাসসির বলেনঃ আমর বিল মা’রূফ তথা সৎকাজের নির্দেশ দান এবং নাহী আনিল মুনকার অর্থাৎ অসৎকাজ থেকে মানুষকে বিরত রাখার চেষ্টা পরিহার করাই হল এই পাপ। [ইবন কাসীর] আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেনঃ আল্লাহ মানুষকে নির্দেশ দিয়েছেন যেন তারা নিজের এলাকায় কোন অপরাধ ও পাপানুষ্ঠান হতে না দেয়। কারণ, যদি তারা এমন না করে, অর্থাৎ সামর্থ্য থাকা সত্বেও অপরাধ ও পাপকৰ্ম অনুষ্ঠিত হতে দেখে তা থেকে বারণ না করে, তবে আল্লাহ স্বীয় আযাব সবার উপরই ব্যাপক করে দেন। [তাবারী] তখন তা থেকে না বাঁচতে পারে কোন গোনাহগার, আর না বাচতে পারে নিরপরাধ।

এখানে নিরপরাধ বলতে সেসব লোককেই বোঝানো হচ্ছে যারা মূল পাপে পাপীদের সাথে অংশগ্রহণ করেনি, কিন্তু তারাও আমর বিল মা’রূফ বর্জন করার পাপে পাপী। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যখন কোন জাতির এমন অবস্থার উদ্ভব হয় যে, সে নিজের এলাকায় পাপকৰ্ম অনুষ্ঠিত হতে দেখে বাধা দানের ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তাতে বাধা দেয় না, তখন আল্লাহর আযাব সবাইকে ঘিরে ফেলে। [আবু দাউদঃ ৩৭৭৬, ইবন মাজাহঃ ৩৯৯৯]

আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু তার এক ভাষণে বলেছেন যে, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন যে, মানুষ যখন কোন অত্যাচারীকে দেখেও অত্যাচার থেকে তার হাতকে প্রতিরোধ করবে না, শীঘ্রই আল্লাহ তাদের সবার উপর ব্যাপক আযাব নাযিল করবেন। [আবু দাউদঃ ৩৭৭৫, তিরমিযীঃ ২০৯৪]

নুমান ইবন বশীর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যারা আল্লাহর কানুনের সীমালংঘনকারী গোনাহগার এবং যারা তাদের দেখেও মৌনতা অবলম্বন করে, অর্থাৎ সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও তাদেরকে সেই পাপানুষ্ঠান থেকে বাধা দান করে না, এতদুভয় শ্রেণীর উদাহরণ এমন একটি সামুদ্রিক জাহাজের মত যাতে দুটি শ্রেণী রয়েছে এবং নীচের শ্রেণীর লোকেরা উপরে উঠে এসে নিজেদের প্রয়োজনে পানি নিয়ে যায়, যাতে উপরের লোকেরা কষ্ট অনুভব করে। নীচের লোকেরা বলে বসে যে, যদি আমরা জাহাজের তলায় ছিদ্র করে নিজেদের কাজের জন্য পানি সংগ্রহ করতে শুরু করি, তবে আমরা আমাদের উপরের লোকদের কষ্ট দেয়া থেকে অব্যাহতি পাব। এখন যদি নিচের লোকদেরকে এ কাজ করতে দেয়া হয় এবং বাধা না দেয়া হয়, তবে বলাবাহুল্য যে, গোটা জাহাজেই পানি ঢুকে পড়বে। আর তাতে নীচের লোকেরা যখন ডুবে মরবে, তখন উপরের লোকেরাও বাঁচতে পারবে না’। [সহীহ আল-বুখারীঃ ২৪৯৩]

এসব বর্ণনার ভিত্তিতে অনেক মুফাসসির মনীষী সাব্যস্ত করেছেন যে, এ আয়াতে فتنة (ফিত্‌নাহ) বলতে এই পাপ অর্থাৎ সৎকাজের নির্দেশ দান ও অসৎ কাজে বাধা দান বর্জনকেই বোঝানো হয়েছে।

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৫) তোমরা সেই ফিতনাকে ভয় কর, যা বিশেষ করে তোমাদের মধ্যে যারা অত্যাচারী কেবল তাদেরই ক্লিষ্ট করবে না[1] এবং জেনে রাখ যে, আল্লাহ শাস্তিদানে কঠোর।

[1] অর্থাৎ, দোষী-নির্দোষ সকলকেই করবে। এই ফিতনা থেকে উদ্দেশ্য, মানুষের এক অপরের উপর ক্ষমতার অধিকারী হয়ে নির্বিচারে সকলের উপর অত্যাচার করে। অথবা ব্যাপক আযাব বা শাস্তি, যেমন অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, বন্যা ইত্যাদি, যা আকাশ ও পৃথিবী হতে প্রাকৃতিক দুর্যোগরূপে নেমে আসে, যাতে সৎ-অসৎ সবাই প্রভাবিত হয়। অথবা কিছু হাদীসে সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজে বাধাদান ছেড়ে দিলে যে শাস্তির সতর্কবাণী শোনানো হয়েছে, এখানে তাকেই ‘ফিতনা’ বলে ব্যক্ত করা হয়েছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৮ . আল-আনফাল
৮:২৬ وَ اذۡكُرُوۡۤا اِذۡ اَنۡتُمۡ قَلِیۡلٌ مُّسۡتَضۡعَفُوۡنَ فِی الۡاَرۡضِ تَخَافُوۡنَ اَنۡ یَّتَخَطَّفَكُمُ النَّاسُ فَاٰوٰىكُمۡ وَ اَیَّدَكُمۡ بِنَصۡرِهٖ وَ رَزَقَكُمۡ مِّنَ الطَّیِّبٰتِ لَعَلَّكُمۡ تَشۡكُرُوۡنَ ﴿۲۶﴾

আর স্মরণ কর, যখন তোমরা ছিলে অল্প, তোমাদেরকে দুর্বল মনে করা হত যমীনে। তোমরা আশঙ্কা করতে যে, লোকেরা তোমাদেরকে ছোঁ মেরে তুলে নিয়ে যাবে। অতঃপর তিনি তোমাদেরকে আশ্রয় দিয়েছেন, নিজ সাহায্য দ্বারা তোমাদেরকে শক্তিশালী করেছেন এবং তোমাদেরকে পবিত্র রিয্ক দান করেছেন। যাতে তোমরা শুকরিয়া আদায় কর। আল-বায়ান

স্মরণ কর সে সময়ের কথা যখন তোমরা ছিলে সংখ্যায় অল্প, দুনিয়াতে তোমাদেরকে দুর্বল হিসেবে গণ্য করা হত। তোমরা আশঙ্কা করতে যে, মানুষেরা তোমাদের কখন না হঠাৎ ধরে নিয়ে যায়। এমন অবস্থায় তিনি তোমাদেরকে আশ্রয় দিলেন, তাঁর সাহায্য দিয়ে তোমাদেরকে শক্তিশালী করলেন, উত্তম জীবিকা দান করলেন যাতে তোমরা (তাঁর নির্দেশ পালনের মাধ্যমে) কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। তাইসিরুল

স্মরণ কর, যখন তোমরা ভূ-পৃষ্ঠে খুব দুর্বলরূপে পরিগণিত হতে, আর তোমরা এই শংকায় নিপতিত থাকতে যে, লোকেরা অকস্মাৎ তোমাদেরকে ধরে নিয়ে যাবে। (এই অবস্থায়) আল্লাহই তোমাদেরকে (মাদীনায়) আশ্রয় দেন এবং স্বীয় সাহায্য দ্বারা তোমাদেরকে শক্তিশালী করেন, আর পবিত্র বস্তু দ্বারা তোমাদের জীবিকা দান করেন যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। মুজিবুর রহমান

And remember when you were few and oppressed in the land, fearing that people might abduct you, but He sheltered you, supported you with His victory, and provided you with good things - that you might be grateful. Sahih International

২৬. আর স্মরণ কর, যখন তোমরা ছিলে স্বল্প সংখ্যক, যমীনে তোমরা দুর্বল হিসেবে গণ্য হতে। তোমরা আশংকা করতে যে, লোকেরা তোমাদেরকে হঠাৎ এসে ধরে নিয়ে যাবে। অতঃপর তিনি তোমাদেরকে আশ্রয় দেন, নিজের সাহায্য দিয়ে তোমাদেরকে শক্তিশালী করেন এবং তোমাদেরকে উত্তম জিনিষগুলো জীবিকারূপে দান করেন যাতে তোমরা কৃতজ্ঞ হও।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৬) স্মরণ কর, যখন তোমরা ছিলে স্বল্পসংখ্যক, পৃথিবীতে তোমরা দুর্বলরূপে পরিগণিত হতে। তোমরা আশংকা করতে যে লোকেরা তোমাদেরকে অপহরণ করবে, অতঃপর তিনি তোমাদেরকে আশ্রয় দেন, স্বীয় সাহায্য দ্বারা তোমাদেরকে শক্তিশালী করেন এবং তোমাদেরকে উত্তম বস্তুসমূহ দান করেন; যাতে তোমরা কৃতজ্ঞ হও। [1]

[1] আলোচ্য আয়াতে মক্কী জীবনের কষ্ট ও বিপদের বর্ণনা এবং তারপরে মাদানী জীবনে আল্লাহর অনুগ্রহে যে সুখ-শান্তি ও সচ্ছলতা মুসলিমগণ লাভ করেছিলেন তার বর্ণনা রয়েছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৮ . আল-আনফাল
৮:২৭ یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَخُوۡنُوا اللّٰهَ وَ الرَّسُوۡلَ وَ تَخُوۡنُوۡۤا اَمٰنٰتِكُمۡ وَ اَنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ ﴿۲۷﴾

হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের খিয়ানত করো না। আর খিয়ানত করো না নিজদের আমানতসমূহের, অথচ তোমরা জান। আল-বায়ান

হে মু’মিনগণ! তোমরা জেনে বুঝে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করো না, আর যে বিষয়ে তোমরা আমানাত প্রাপ্ত হয়েছ তাতেও বিশ্বাস ভঙ্গ করো না। তাইসিরুল

হে মু’মিনগণ! তোমরা জেনে শুনে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করনা এবং তোমাদের পরস্পরের আমানত সম্পর্কেও বিশ্বাস ভঙ্গ করনা। মুজিবুর রহমান

O you who have believed, do not betray Allah and the Messenger or betray your trusts while you know [the consequence]. Sahih International

২৭. হে ঈমানদারগণ! জেনে-বুঝে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের খেয়ানত করো না(১) এবং তোমাদের পরস্পরের আমানতেরও(২) খেয়ানত করো না(৩);

(১) আল্লাহর আমানত বলতে অধিকাংশের মতে যাবতীয় ফরয কাজ বুঝানো হয়েছে। আর রাসূলের আমানত বলতে তার সুন্নাত ও নির্দেশ বুঝানো হয়েছে। সে হিসাবে খেয়ানত হলো সেগুলো না মানা। [ফাতহুল কাদীর]

(২) নিজেদের আমানত বলতে সে সব দায়িত্ব বুঝানো হয়েছে, যা কারো প্রতি আস্থা স্থাপন করে তার উপর ন্যস্ত করা হয়। তা ওয়াদা পূরনের দায়িত্ব হতে পারে, সামগ্রিক সামাজিক চুক্তি হতে পারে, কোন সংস্থার আভ্যন্তরীণ গোপন তথ্য হতে পারে, ব্যক্তিগত বা সমষ্টিগত ধন-সম্পদ হতে পারে। কারো প্রতি বিশ্বাস করে জনসমাজ যদি তাকে কোন দায়িত্বপূর্ণ পদে নিযুক্ত করে তবে তাও এর মধ্যে শামিল মনে করতে হবে। বিস্তারিত জানার জন্য সূরা আন- নিসার ৫৮ নং আয়াতের ব্যাখ্যা দেখুন।

(৩) আয়াতের দুটি অর্থ হতে পারে, প্রথম অর্থ যা উপরে করা হয়েছে। অর্থাৎ তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে খেয়ানত করো না এবং তোমাদের আমানতসমূহেরও খেয়ানত করো না। [তাবারী; ইবন কাসীর] দ্বিতীয় অর্থ, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে খেয়ানত করো না কারণ এতে করে তোমরা তোমাদের উপর অর্পিত আমানতেরই খেয়ানত করে বসবে। [তাবারী; বাগভী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৭) হে বিশ্বাসীগণ! জেনে-শুনে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সাথে বিশ্বাস ভঙ্গ করো না এবং তোমাদের পরস্পরের আমানত (গচ্ছিত দ্রব্য) সম্পর্কেও নয়। [1]

[1] আল্লাহ ও তাঁর রসূলের অধিকারে খিয়ানত (বিশ্বাসঘাতকতা) এই যে, জনসমাজে আল্লাহর ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করা তথা নির্জনে তার বিপরীত পাপে লিপ্ত হওয়া। অনুরূপভাবে এটিও খিয়ানত যে, ফারায়েযের মধ্যে কোন ফরয ছেড়ে দেওয়া ও নিষিদ্ধ জিনিষের মধ্যে কোন কিছু করা। পরস্পরের আমানতে খিয়ানত করতেও নিষেধ করা হয়েছে। নবী (সাঃ)ও আমানত রক্ষার ব্যাপারে খুব বেশি তাকীদ করেছেন। হাদীসে এসেছে যে, নবী (সাঃ) প্রায় খুতবায় এ কথাটি অবশ্যই বলতেন, ‘‘যে আমানত রক্ষা করে না তার ঈমান নেই, যে চুক্তি রক্ষা করে না, তার দ্বীন নেই।’’ (আহমাদ)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৮ . আল-আনফাল
৮:২৮ وَ اعۡلَمُوۡۤا اَنَّمَاۤ اَمۡوَالُكُمۡ وَ اَوۡلَادُكُمۡ فِتۡنَۃٌ ۙ وَّ اَنَّ اللّٰهَ عِنۡدَهٗۤ اَجۡرٌ عَظِیۡمٌ ﴿۲۸﴾

আর জেনে রাখ, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তো ফিতনা। আর নিশ্চয় আল্লাহ, তাঁর নিকট আছে মহা পুরস্কার। আল-বায়ান

জেনে রেখ, তোমাদের ধন-সম্পদ আর সন্তান- সন্ততি হচ্ছে পরীক্ষার সামগ্রী মাত্র। (এ পরীক্ষায় যারা উত্তীর্ণ হবে তাদের জন্য) আল্লাহর নিকট রয়েছে মহাপুরস্কার। তাইসিরুল

আর তোমরা জেনে রেখ যে, তোমাদের ধন সম্পদ ও সন্তান সন্ততি প্রকৃত পক্ষে পরীক্ষার সামগ্রী মাত্র, আর আল্লাহর নিকট মহাপুরস্কার রয়েছে। মুজিবুর রহমান

And know that your properties and your children are but a trial and that Allah has with Him a great reward. Sahih International

২৮. আর জেনে রাখ, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তো এক পরিক্ষা। আর নিশ্চয় আল্লাহ্‌, তাঁরই কাছে রয়েছে মহাপুরস্কার।(১)

(১) যেহেতু আল্লাহ ও বান্দার হকসমূহ আদায় করার ক্ষেত্রে গাফেলতী ও শৈথিল্যের কারণ সাধারণতঃ মানুষের ধন-দৌলত ও সন্তান-সন্ততিই হয়ে থাকে, কাজেই সে সম্পর্কে সতর্ক করার উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে, “আর জেনে রেখো যে, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তোমাদের জন্য ফেৎনা।” [সা’দী] ‘ফেৎনা’ শব্দের অর্থ পরীক্ষাও হয়; আবার আযাবও হয়। তাছাড়াএমন সববিষয়কেও ফেৎনা বলা হয় যা আযাবের কারণ হয়ে থাকে। কুরআনুল কারীমের বিভিন্ন আয়াতে এই তিনটি অর্থেই ফেৎনা শব্দের ব্যবহার হয়েছে। বস্তুতঃ এখানে তিনটি অর্থেরই সুযোগ রয়েছে।

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৮) আর জেনে রাখ যে, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তো পরীক্ষার বস্তু[1] এবং নিশ্চয় আল্লাহর নিকটে রয়েছে মহা পুরস্কার।।

[1] সাধারণতঃ সন্তান ও সম্পদ মানুষকে খিয়ানত করতে এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলের অবাধ্য হতে বাধ্য করে। সেই জন্য সে দুটিকে ফিতনা (পরীক্ষা) বলা হয়েছে। অর্থাৎ এর দ্বারা মানুষের পরীক্ষা নেওয়া হয়ে থাকে যে, তাদের ভালবাসায় আমানত ও আনুগত্যের হক পূর্ণরূপে আদায় করে কি না? যদি সে তা পূর্ণরূপে আদায় করে, তাহলে সে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়, অন্যথা সে অনুত্তীর্ণ ও অসফল বলে গণ্য হয়। এই অবস্থায় এই সম্পদ ও সন্তান তাঁর জন্য আল্লাহর শাস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৮ . আল-আনফাল
৮:২৯ یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِنۡ تَتَّقُوا اللّٰهَ یَجۡعَلۡ لَّكُمۡ فُرۡقَانًا وَّ یُكَفِّرۡ عَنۡكُمۡ سَیِّاٰتِكُمۡ وَ یَغۡفِرۡ لَكُمۡ ؕ وَ اللّٰهُ ذُو الۡفَضۡلِ الۡعَظِیۡمِ ﴿۲۹﴾

হে মুমিনগণ, যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর তাহলে তিনি তোমাদের জন্য ফুরকান* প্রদান করবেন, তোমাদের থেকে তোমাদের পাপসমূহ দূর করবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আর আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল। আল-বায়ান

ওহে ঈমানদারগণ! তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় কর তাহলে তিনি তোমাদেরকে ভাল ও মন্দের মধ্যে পার্থক্য করার শক্তি প্রদান করবেন, তোমাদের দোষ-ত্রুটি দূর করে দিবেন, তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন, আল্লাহ বড়ই অনুগ্রহশীল। তাইসিরুল

হে মু’মিনগণ! তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় কর তাহলে তিনি তোমাদেরকে ন্যায়-অন্যায় পার্থক্য করার একটি মান নির্ণয়ক শক্তি দান করবেন, আর তোমাদের দোষক্রটি তোমাদের হতে দূর করবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন, আল্লাহ বড়ই অনুগ্রহশীল ও মঙ্গলময়। মুজিবুর রহমান

O you who have believed, if you fear Allah, He will grant you a criterion and will remove from you your misdeeds and forgive you. And Allah is the possessor of great bounty. Sahih International

* অর্থাৎ তিনি তোমাদের মধ্যে আন্তরিক দৃঢ়তা, বিচক্ষণ ক্ষমতা ও সুন্দর হিদায়াত সৃষ্টি করে দেবেন যার মাধ্যমে তোমরা হক ও বাতিলের পার্থক্য করতে পারবে। (যুবদাতুত-তাফসীর)

২৯. হে ঈমানদারগণ! যদি তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর তবে তিনি তোমাদেরকে ফুরকান(১) তথা ন্যায়-অন্যায় পার্থক্য করার শক্তি দেবেন, তোমাদের পাপ মোচন করবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন(২) এবং আল্লাহ্ মহাকল্যাণের অধিকারী।(৩)

(১) আলোচ্য আয়াতে বলা হয়েছে, যে লোক বিবেককে স্বভাবের উপর প্রবল রেখে এই পরীক্ষায় দৃঢ়তা অবলম্বন করবে এবং আল্লাহর আনুগত্য ও মহব্বতকে সবকিছুর উর্ধ্বে স্থাপন করবে-যাকে কুরআন ও শরীআতের পরিভাষায় ‘তাকওয়া’ বলা হয়-তাহলে সে এর বিনিময়ে কয়েকটি প্রতিদান লাভ করবে। (এক) ফুরকান, (দুই) পাপের প্রায়শ্চিত্ত ও (তিন) মাগফেরাত বা পরিত্রাণ। (চার) জান্নাত। [সা'দী; আইসারুত তাফসীর]

فرقان ও فرق দুটি ধাতুর সমার্থক। পরিভাষাগতভাবে فرقان (ফুরকান)এমন সববস্তু বা বিষয়কে বলা হয় যা দুটি বস্তুর মাঝে প্রকৃষ্ট পার্থক্য ও দূরত্ব সূচিত করে দেয়। [কুরতুবী] সেজন্যই কোন বিষয়ের মীমাংসাকে ফুরকান বলা হয়। কারণ তা হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্য সুস্পষ্ট করে দেয়। তাছাড়া আল্লাহ তা'আলার সাহায্যকেও ফুরকান বলা হয়। কারণ, এর দ্বারাও সত্যপন্থীদের বিজয় এবং তাদের প্রতিপক্ষের পরাজয় সূচিত হওয়ার মাধ্যমে সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য সুস্পষ্ট হয়ে যায়। সে জন্যই কুরআনুল কারীমে বদরের যুদ্ধকে ‘ইয়াওমুল ফুরকান’ তথা পার্থক্যসূচক দিন বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

এ আয়াতে বর্ণিত তাকওয়া অবলম্বনকারীদের প্রতি ফুরকান দান করা হবে- কথাটির মর্ম অধিকাংশ মুফাসসিরের মতে এই যে, তাদের প্রতি আল্লাহ তা'আলার সাহায্য ও সহায়তা থাকে এবং তিনি তাদের হেফাজত করেন। কোন শক্র তাদের ক্ষতি সাধন করতে পারে না। যাবতীয় উদ্দেশ্যে তারা সাফল্য লাভে সমর্থ হন এবং যে কোন বিপদ থেকে উদ্ধার পান। [ইবন কাসীর]

কোন কোন মুফাসসির বলেন, এ আয়াতে ফুরকান বলতে সেসব আলো বা জ্ঞানবুদ্ধিকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে যার মাধ্যমে সত্য-মিথ্যা ও খাঁটি-মেকীর মাঝে পার্থক্য করা সহজ হয়ে যায়। [আইসারুত তাফসীর; সাদী] অতএব, মর্ম দাঁড়ায় এই যে, যারা ‘তাকওয়া’ অবলম্বন করেন, আল্লাহ তাদেরকে এমন জ্ঞান ও অন্তদৃষ্টি দান করেন যাতে তাদের পক্ষে ভাল-মন্দ পার্থক্য করা সহজ হয়ে যায়।

ইবনে ওয়াহাব বলেন, আমি ইমাম মালেককে প্রশ্ন করেছি এখানে ফুরকান অর্থ কি? তিনি বললেন, এখানে ফুরকান অর্থ, উত্তরণের পথ। তারপর তিনি দলীল হিসেবে সূরা আত-তালাকের এই আয়াত পাঠ করলেন, “আর যে কেউ আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করে আল্লাহ তার জন্য (উত্তরণের) পথ করে দেবেন।” [সূরা আত-তালাক: ২] কারও কারও মতে, এখানে ‘ফুরকান’ দ্বারা আখেরাতে মুমিনদেরকে জান্নাত এবং কাফেরদেরকে জাহান্নামে দেয়া বোঝানো হয়েছে। [কুরতুবী]

(২)  দ্বিতীয়তঃ তাকওয়ার বিনিময়ে যা লাভ হয়, তা হলো পাপের মোচন। অর্থাৎ পার্থিব ও বদলার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। এমন সৎকর্ম সম্পাদনের তৌফিক তার হয়, যা তার সমুদয় ক্রটি-বিচ্যুতির উপর প্রাধান্য লাভ করে। তাকওয়ার বিনিময়ে তৃতীয় যে জিনিষটি লাভ হয়, তা হচ্ছে, আখেরাতে মুক্তি ও যাবতীয় পাপের ক্ষমা লাভ। পাপের মোচন এবং মাগফিরাত দুটি সমার্থবোধক শব্দ হলেও একত্রে ব্যবহার হলে দুটির অর্থ ভিন্ন হয়। তখন পাপ মোচন দ্বারা ছোট গোনাহের ক্ষমা, আর মাগফিরাত দ্বারা বড় গোনাহের ক্ষমা উদ্দেশ্য হয়। [সা’দী]

(৩) অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা বড়ই অনুগ্রহশীল ও করুণাময়। তিনি বিরাট অনুগ্রহ ও ইহসানের অধিকারী। তার দান ও দয়া কোন পরিমাপের গণ্ডিতে আবদ্ধ নয় এবং তার দান ও ইহসানের অনুমান করাও কারো পক্ষে সম্ভব নয়। কাজেই তাকওয়া অবলম্বনকারীদের জন্য তিনটি নির্ধারিত প্রতিদান ছাড়াও আল্লাহ তা'আলার নিকট থেকে আরো বহু দান ও অনুগ্রহ লাভের আশা রাখা কর্তব্য। তবে শর্ত হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টিকে নিজের প্রবৃত্তির চাহিদার উপর স্থান দিতে হবে। [সা’দী] কেউ কেউ এটাকে জান্নাত দ্বারা তাফসীর করেছেন। [আইসারুত তাফসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৯) হে বিশ্বাসীগণ! যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তাহলে তিনি তোমাদেরকে ন্যায়-অন্যায় পার্থক্যকারী শক্তি দেবেন, তোমাদের পাপ মোচন করবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আর আল্লাহ অতিশয় অনুগ্রহশীল।[1]

[1] ‘তাকওয়া’ অর্থ হল আল্লাহর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ ও তাঁর নিষিদ্ধ কর্ম হতে বিরত থাকা। فُرقَان এর কয়েকটি অর্থ বলা হয়েছে; যেমন এমন বিবেক বা অন্তর যা হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করে। অর্থ এই যে, তাকওয়ার কারণে অন্তর দৃঢ়, দৃষ্টি তীক্ষ্ণ ও হিদায়াতের রাস্তা স্পষ্ট হয়ে যায়। সাধারণ মানুষ যখন দ্বিধা ও সন্দেহের মরুভূমিতে ঘুরপাক খায়, তখন সে সঠিক পথের সন্ধান পায়। এ ছাড়াও فُرقَان এর অর্থঃ সাহায্য, পরিত্রাণ, বিজয় সমস্যার সমাধানও করা হয়েছে। আর এ সকল অর্থই এখানে উদ্দিষ্ট হতে পারে। কারণ তাকওয়ার কারণে এই সব উপকার হয়ে থাকে। বরং তার সাথে সাথে গোনাহের কাফফারা, পাপ থেকে ক্ষমালাভ এবং মহা পুরস্কার লাভও হয়।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৮ . আল-আনফাল
৮:৩০ وَ اِذۡ یَمۡكُرُ بِكَ الَّذِیۡنَ كَفَرُوۡا لِیُثۡبِتُوۡكَ اَوۡ یَقۡتُلُوۡكَ اَوۡ یُخۡرِجُوۡكَ ؕ وَ یَمۡكُرُوۡنَ وَ یَمۡكُرُ اللّٰهُ ؕ وَ اللّٰهُ خَیۡرُ الۡمٰكِرِیۡنَ ﴿۳۰﴾

আর যখন কাফিররা তোমাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করছিল, তোমাকে বন্দী করতে অথবা তোমাকে হত্যা করতে কিংবা তোমাকে বের করে দিতে। আর তারা ষড়যন্ত্র করে এবং আল্লাহও ষড়যন্ত্র করেন। আর আল্লাহ হচ্ছেন ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যে উত্তম। আল-বায়ান

স্মরণ কর, সেই সময়ের কথা যখন কাফিরগণ তোমাকে বন্দী করার কিংবা হত্যা করার কিংবা দেশ থেকে বের করে দেয়ার জন্য ষড়যন্ত্র করে। তারা চক্রান্ত করে আর আল্লাহও কৌশল করেন। আল্লাহই হচ্ছেন সর্বশ্রেষ্ঠ কৌশলী। তাইসিরুল

আর স্মরণ কর, যখন কাফিরেরা তোমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিল, তোমাকে বন্দী করবে অথবা হত্যা করবে কিংবা নির্বাসিত করবে। তারাও ষড়যন্ত্র করতে থাকুক এবং আল্লাহও (স্বীয় নাবীকে বাঁচানোর) কৌশল করতে থাকেন, আল্লাহ হচ্ছেন শ্রেষ্ঠ কৌশলী। মুজিবুর রহমান

And [remember, O Muhammad], when those who disbelieved plotted against you to restrain you or kill you or evict you [from Makkah]. But they plan, and Allah plans. And Allah is the best of planners. Sahih International

৩০. আর স্মরণ করুন, যখন কাফেররা আপনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে আপনাকে বন্দী করার জন্য, বা হত্যা করার অথবা নির্বাসিত করার জন্য। আর তারা ষড়যন্ত্র করে এবং আল্লাহও (তাদের ষড়যন্ত্রের বিপক্ষে) ষড়যন্ত্র করেন; আর আল্লাহ্‌ সর্বশ্রেষ্ঠ কৌশলী।(১)

(১) হিজরত-পূর্বকালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কাফের পরিবেষ্টিত ছিলেন এবং তারা তাকে হত্যা কিংবা বন্দী করার ব্যাপারে সলা-পরামর্শ করছিল, তখন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাদের এ অপবিত্র হীন চক্রান্তকে ধূলিস্মাৎ করে দেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিরাপদে মদীনায় পৌছে দেন। ঘটনা এই যে, মদীনা থেকে আগত আনসারদের মুসলিম হওয়ার বিষয়টি যখন মক্কায় জানাজানি হয়ে যায়, তখন মক্কার কুরাইশরা চিন্তান্বিত হয়ে পড়ে যে, এ পর্যন্ত তো তার ব্যাপারটি মক্কার ভেতরেই সীমিত ছিল, যেখানে সর্বপ্রকার ক্ষমতাই ছিল আমাদের হাতে। কিন্তু এখন যখন মদীনাতেও ইসলাম বিস্তার লাভ করছে এবং বহু সাহাবী হিজরত করে মদীনায় চলে গেছেন, তখন এদের একটি কেন্দ্র মদীনাতেও স্থাপিত হয়েছে। এমতাবস্থায় এরা যেকোন রকম শক্তি আমাদের বিরুদ্ধে সংগ্রহ করতে পারে এবং শেষ পর্যন্ত আমাদের উপর আক্রমণও করে বসতে পারে।

সঙ্গে সঙ্গে তারা এ কথাও উপলব্ধি করতে পারে যে, এ পর্যন্ত সামান্য কিছু সাহাবীই হিজরত করে মদীনায় গিয়েছেন, কিন্তু এখন প্রবল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে যে, স্বয়ং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও সেখানে চলে যেতে পারেন। সে কারণেই মক্কার নেতৃবর্গ এ বিষয়ে সলা-পরামর্শ করার উদ্দেশ্যে মসজিদুল হারাম সংলগ্ন দারুন-নাদওয়াতে এক বিশেষ বৈঠকের আয়োজন করে। যাতে আবু জাহল, নযর ইবন হারেস, উমাইয়া ইবন খালফ, আবু সুফিয়ান প্রমূখসহ সমগ্র বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিত্ব অংশগ্রহণ করেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও ইসলামের ক্রমবর্ধমান শক্তির মোকাবেলার উপায় ও ব্যবস্থা সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা করা হয়। এখানে বসেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়। [এর জন্য দেখুনঃ মুসনাদে আহমাদঃ ১/৩৪৮]

পরামর্শ অনুযায়ী কাফেররা সন্ধ্যা থেকেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাড়ীটি অবরোধ করে ফেলে। আল্লাহর নির্দেশক্রমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একমুঠো মাটি হাতে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসেন এবং তিনি তা সবার দিকে লক্ষ্য করে ছিটিয়ে দিয়ে তাদের বেষ্টনী থেকে বেরিয়ে আসেন। [সা’দী] কুরাইশ সর্দারদের পরামর্শে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক যে তিনটি মত উপস্থাপিত হয়েছিল সে সবকটিই কুরআনের এ আয়াতে উল্লেখ করে বলা হয়েছে “সে সময়টি স্মরণ করুন, যখন কাফেররা আপনার বিরুদ্ধে নানা রকম ব্যবস্থা নেয়ার বিষয় চিন্তাভাবনা করছিল যে, আপনাকে বন্দী করে রাখবে না হত্যা করবে, নাকি দেশ থেকে বের করে দেবে। কিন্তু আল্লাহ তাদের সমস্ত পরিকল্পনা ধূলিস্মাৎ করে দিয়েছেন। সুতরাং আয়াতের শেষাংশে বলা হয়েছে (وَاللَّهُ خَيْرُ الْمَاكِرِينَ) অর্থাৎ আল্লাহ্ তাআলা সবচাইতে উত্তম ব্যবস্থাপক, যা যাবতীয় ব্যবস্থা ও পরিকল্পনাকে চাপিয়ে যায়। যেমনটি এ ঘটনার সাথে পরিলক্ষিত হয়েছে।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩০) স্মরণ কর, যখন অবিশ্বাসীরা তোমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তোমাকে বন্দী করার জন্য, হত্যা অথবা নির্বাসিত করার জন্য।[1] তারা ষড়যন্ত্র করে এবং আল্লাহও ষড়যন্ত্র করেন। আর ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যে আল্লাহ শ্রেষ্ঠ।[2]

[1] এটি সেই ষড়যন্ত্রের বর্ণনা যা মক্কার নেতারা এক রাত্রে ‘দারুন নাদ্ওয়া’য় বসে করেছিল। আর শেষ পর্যন্ত তারা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিল যে, বিভিন্ন গোত্রের যুবকদেরকে মহানবী (সাঃ)-কে হত্যার জন্য নিযুক্ত করা হোক। যাতে তাঁর খুনের বদলে কোন একজনকে হত্যা না করা হয়; বরং মুক্তিপণ দিয়ে বাঁচা যায়।

[2] সুতরাং সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এক রাতে যুবকগণ তাঁর বাড়ির সামনে এমন প্রস্তুতি নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে যে, তিনি বের হলেই মেরে ফেলা হবে। আল্লাহ তাআলা উক্ত ষড়যন্ত্রের সংবাদ নবী (সাঃ)-কে পৌঁছে দিলেন এবং তিনি এক মুঠো বালি নিয়ে তাদের মাথায় ছড়িয়ে দিয়ে বের হয়ে গেলেন। কেউ নবী (সাঃ)-এর বের হওয়ার টের পর্যন্তও পায়নি। অতঃপর তিনি সওর গিরিগুহায় গিয়ে আশ্রয় নিলেন। এটিই ছিল মহান আল্লাহর কাফেরদের বিরুদ্ধে কৌশল বা ষড়যন্ত্র। আর তাঁর থেকে উত্তম ষড়যন্ত্র আর কেউ করতে পারে না। مكر এর অর্থ দেখার জন্য আল ইমরানের ৫৪নং আয়াতের টীকা দ্রষ্টব্য।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ ১১৮১ থেকে ১১৯০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৬২৩৬ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ « আগের পাতা 1 2 3 4 · · · 116 117 118 119 120 · · · 621 622 623 624 পরের পাতা »