৭. আল-আ'রাফ
৭:১৩৬ فَانۡتَقَمۡنَا مِنۡهُمۡ فَاَغۡرَقۡنٰهُمۡ فِی الۡیَمِّ بِاَنَّهُمۡ کَذَّبُوۡا بِاٰیٰتِنَا وَ کَانُوۡا عَنۡهَا غٰفِلِیۡنَ ﴿۱۳۶﴾

অতঃপর আমি তাদের থেকে প্রতিশোধ নিলাম, ফলে তাদেরকে সমুদ্রে ডুবিয়ে দিলাম। কারণ তারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে এবং এ সম্পর্কে তারা ছিল গাফেল । আল-বায়ান

তখন আমি তাদের উপর প্রতিশোধ নিলাম আর তাদেরকে সমুদ্রে ডুবিয়ে মারলাম কেননা তারা আমার নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করেছিল আর এ ব্যাপারে তারা ছিল চিন্তা-ভাবনাহীন। তাইসিরুল

সুতরাং আমি তাদের হতে প্রতিশোধ নিলাম এবং তাদেরকে অতল সমুদ্রে ডুবিয়ে মারলাম, কেননা তারা আমার নিদর্শনসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে, আর এই ব্যাপারে তারা ছিল সম্পূর্ণ গাফিল বা উদাসীন। মুজিবুর রহমান

So We took retribution from them, and We drowned them in the sea because they denied Our signs and were heedless of them. Sahih International

১৩৬. কাজেই আমরা তাদের থেকে প্রতিশোধ নিয়েছি এবং তাদেরকে অতল সাগরে ডুবিয়ে দিয়েছি। কারণ তারা আমাদের নিদর্শনকে অস্বীকার করত এবং এ সম্বন্ধে তারা ছিল গাফেল।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৩৬) সুতরাং আমি তাদের প্রতিশোধ নিলাম এবং তাদেরকে অতল সমুদ্রে নিমজ্জিত করলাম, কারণ তারা আমার নিদর্শনসমূহকে মিথ্যা মনে করত এবং এ সম্বন্ধে তারা ঔদাস্য প্রকাশ করত। [1]

[1] এত বড় বড় নিদর্শন দেখা সত্ত্বেও তারা ঈমান আনার জন্য ও গাফিলতির ঘুম হতে জাগার জন্য প্রস্তুত হল না। শেষ পর্যন্ত তাদেরকে সমুদ্রে ডুবিয়ে মারা হল। যার বিস্তারিত বর্ণনা কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় এসেছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৭. আল-আ'রাফ
৭:১৩৭ وَ اَوۡرَثۡنَا الۡقَوۡمَ الَّذِیۡنَ کَانُوۡا یُسۡتَضۡعَفُوۡنَ مَشَارِقَ الۡاَرۡضِ وَ مَغَارِبَهَا الَّتِیۡ بٰرَکۡنَا فِیۡهَا ؕ وَ تَمَّتۡ کَلِمَتُ رَبِّکَ الۡحُسۡنٰی عَلٰی بَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ ۬ۙ بِمَا صَبَرُوۡا ؕ وَ دَمَّرۡنَا مَا کَانَ یَصۡنَعُ فِرۡعَوۡنُ وَ قَوۡمُهٗ وَ مَا کَانُوۡا یَعۡرِشُوۡنَ ﴿۱۳۷﴾

আর যে জাতিকে দুর্বল মনে করা হত আমি তাদেরকে যমীনের পূর্ব ও তার পশ্চিমের উত্তরাধিকারী বানালাম, যেখানে আমি বরকত দিয়েছি এবং বনী ইসরাঈলের উপর তোমার রবের উত্তম বাণী পরিপূর্ণ হল। কারণ তারা ধৈর্য ধারণ করেছে। আর ধ্বংস করে দিলাম যা কিছু তৈরি করেছিল ফির‘আউন ও তার কওম এবং তারা যা নির্মাণ করেছিল। আল-বায়ান

আর আমি দুর্বল করে রাখা লোকেদেরকে সেই যমীনের পূর্বের আর পশ্চিমের উত্তরাধিকারী বানিয়ে দিলাম যাতে আমি কল্যাণ নিহিত রেখেছি। এভাবে বানী ইসরাঈলের ব্যাপারে তাদের ধৈর্য ধারণের কারণে তোমার প্রতিপালকের কল্যাণময় অঙ্গীকার পূর্ণ হল আর ফির‘আওন ও তার লোকজনের গৌরবময় কাজ ও সুন্দর প্রাসাদগুলোকে ধ্বংস করে দিলাম। তাইসিরুল

যে জাতিকে দুর্বল ও দীনহীন ভাবা হত আমি তাদেরকে আমার কল্যাণ প্রাপ্ত রাজ্যের পূর্ব ও পশ্চিমের উত্তরাধিকারী বানাই, আর বানী ইসরাঈল জাতি সম্পর্কে তোমার রবের শুভ ও কল্যাণময় বাণী (প্রতিশ্রুতি) পূর্ণ হল যেহেতু তারা ধৈর্য ধারণ করেছিল। আর ফির‘আউন ও তার সম্প্রদায়ের কীর্তিকলাপ ও উচ্চ প্রাসাদসমূহকে আমি ধ্বংসস্তুপে পরিণত করেছি। মুজিবুর রহমান

And We caused the people who had been oppressed to inherit the eastern regions of the land and the western ones, which We had blessed. And the good word of your Lord was fulfilled for the Children of Israel because of what they had patiently endured. And We destroyed [all] that Pharaoh and his people were producing and what they had been building. Sahih International

১৩৭. যে সম্প্রদায়কে দুর্বল মনে করা হত তাদেরকে আমরা আমাদের কল্যাণপ্রাপ্ত রাজ্যের পূর্ব ও পশ্চিমের উত্তরাধিকারী করি(১); এবং বনী ইসরাঈল সম্বন্ধে আপনার রবের শুভ বাণী সত্যে পরিণত হল, যেহেতু তারা ধৈর্য ধরেছিল, আর ফিরআউন ও তার সম্প্রদায়ের শিল্প এবং যেসব প্রাসাদ তারা নির্মাণ করেছিল তা ধ্বংস করেছি।

(১) বলা হয়েছেঃ “যে জাতিকে দুর্বল ও হীন বলে মনে করা হত, তাদেরকে আমি সে ভূমির উদয়াচল ও অস্তাচলের অধিপতি বানিয়ে দিয়েছি, যাতে আমি রেখেছি বরকত বা আশীৰ্বাদ।” কুরআনের শব্দগুলো লক্ষ্য করলে দেখা যায়, এতে “যে জাতিকে ফিরআউনের সম্প্রদায় দুর্বল ও হীন মনে করেছিল” বলা হয়েছে। এ কথা বলা হয়নি যে, “যে জাতি দুর্বল ও হীন ছিল” এতে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, আল্লাহ্ তা'আলা যে জাতির সহায়তায় থাকেন প্রকৃতপক্ষে তারা কখনো দুর্বল হয় না। যদিও কোন সময় তাদের বাহ্যিক অবস্থা দেখে অন্যান্য লোক ধোঁকায় পড়ে যায় এবং তাদেরকে দুর্বল বলে মনে করে বসে। কিন্তু শেষ পরিণতির ক্ষেত্রে সবাই দেখতে পায় যে, তারা মোটেই দুর্বল ও হীন ছিল না। কারণ, প্রকৃত শক্তি ও মর্যাদা সম্পূর্ণভাবে আল্লাহরই হাতে।

আর যমীনের মালিক বানিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে وَأَوْرَثْنَا শব্দটি ব্যবহার করে বলেছেন যে, তাদেরকে উত্তরাধিকারী বানিয়েছি। مَشَارِقَ শব্দটি مَشْرِقٌ এর বহুবচন। আর مَغَارِب হচ্ছে مَغْرِبٌ এর বহুবচন। শীত ও গ্রীষ্মের বিভিন্ন ঋতুতে যেহেতু সূর্যের উদয়াস্ত পরিবর্তিত হয়ে থাকে, সেহেতু এখানে মশারিক বা উদয়াচলসমূহ এবং মাগারিব বা অস্তাচলসমূহ বহুবচন জ্ঞাপক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। আর ভূমি ও যমীন বলতে এক্ষেত্রে অধিকাংশ মুফাসসিরনের মতে শাম বা সিরিয়া ও মিসর ভূমিকেই উদ্দেশ্য করা হয়েছে- যাতে আল্লাহ তা'আলা কওমে-ফিরআউন ও কওমে-আমালেকাকে ধ্বংস করার পর বনী-ইসরাঈলকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন এবং শাসনক্ষমতা দান করেছিলেন। [ইবন কাসীর; সা’দী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৩৭) এবং যে সম্প্রদায়কে দুর্বল গণ্য করা হত, তাদেরকে[1] আমি আমার কল্যাণপ্রাপ্ত রাজ্যের পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তের উত্তরাধিকারী করলাম[2] এবং বনী-ইস্রাইল সম্বন্ধে তোমার প্রতিপালকের শুভবাণী সত্যে পরিণত হল;[3] যেহেতু তারা ধৈর্য ধারণ করেছিল। আর ফিরআউন ও তার সম্প্রদায়ের নির্মিত শিল্প এবং যে সব প্রাসাদ তারা নির্মাণ করেছিল, তা ধ্বংস করে দিলাম। [4]

[1] অর্থাৎ, বানী ইস্রাঈল; যাদেরকে ফিরআউন দাস বানিয়ে রেখেছিল এবং যাদের উপর নানাভাবে যুলুম করত। এই দিক দিয়ে বাস্তবে মিসরে তাদেরকে দুর্বল মনে করা হত। কেন না তারা ছিল পরাভূত ও পরাধীন দাস। কিন্তু আল্লাহ যখন ইচ্ছা করলেন, তখন সেই পরাভূত ও দাস জাতিকে সেই ফিরআউনী রাজ্যের উত্তরাধিকারী বানালেন। যেহেতু তিনি যাকে ইচ্ছা রাজত্ব দান করেন এবং যার নিকট থেকে ইচ্ছা রাজত্ব কেড়ে নেন, যাকে ইচ্ছা সম্মানিত করেন এবং যাকে ইচ্ছা অপমানিত করেন। (সূরা আলে ইমরান ২৬ আয়াত)

[2] রাজ্য বা দেশ বলতে শাম দেশের এলাকা ফিলিস্তীনকে বুঝানো হয়েছে। সেখানে মহান আল্লাহ আমালেকাদের পর বানী ইস্রাঈলকে বিজয়ী করেন। মূসা (আঃ) ও হারূন (আঃ)-এর ইন্তিকালের পর বানী ইস্রাঈলরা শাম দেশে তখন গেলেন, যখন ইউশা’ বিন নূন আমালেকাদেরকে পরাজিত করে বানী ইস্রাঈলদের জন্য রাস্তা সহজ করে দিলেন। আর দেশের ঐ অংশকে বরকত ও কল্যাণময় করলেন। অর্থাৎ, শাম (সিরিয়া ও ফিলিস্তীন) এলাকা; যেখানে অধিকাংশ নবীদের বাসস্থান ও সমাধিক্ষেত্র ছিল এবং বাহ্যিক সুন্দর শস্য-শ্যামলতাও আছে। অর্থাৎ বাহির ও ভিতর দুই দিক দিয়েই এই এলাকা ছিল সম্পদশালী। مشارق শব্দটি مشرق এর বহুবচন, অনুরূপ مغارب হল مغرب এর বহুবচন। যদিও পূর্ব-পশ্চিম একটিই হয়। বহুবচন পূর্ব ও পশ্চিমসমূহ থেকে উদ্দিষ্ট, দেশের বরকতময় পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্ত।

[3] এই শুভবাণী বা প্রতিশ্রুতি তাই, যা ইতিপূর্বে মূসা (আঃ) প্রমুখাৎ ১২৮-১২৯নং আয়াতে দেওয়া হয়েছে। যেমন সূরা ক্বাস্বাসেবও বলা হয়েছে, {وَنُرِيدُ أَن نَّمُنَّ عَلَى الَّذِينَ اسْتُضْعِفُوا فِي الْأَرْضِ وَنَجْعَلَهُمْ أَئِمَّةً وَنَجْعَلَهُمُ الْوَارِثِينَ، وَنُمَكِّنَ لَهُمْ فِي الْأَرْضِ وَنُرِي فِرْعَوْنَ وَهَامَانَ وَجُنُودَهُمَا مِنْهُم مَّا كَانُوا يَحْذَرُونَ} (সূরা কাসাস ৫-৬ আয়াত) ‘‘সে দেশে যাদেরকে হীনবল করা হয়েছিল, আমি তাদের প্রতি অনুগ্রহ করতে, তাদেরকে নেতা ও দেশের উত্তরাধিকারী করতে ইচ্ছা করলাম। ইচ্ছা করলাম দেশে তাদেরকে ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত করতে এবং ফিরআউন, হামান ও তাদের বাহিনীকে তা দেখিয়ে দিতে, যা তাদের নিকট হতে ওরা আশঙ্কা করত।’’ আর এই সম্মান ও অনুগ্রহ সেই ধৈর্যের বিনিময়ে লাভ করেছিল, যা তারা ফিরআউনের অত্যাচারের মুকাবিলায় প্রদর্শন করেছিল।

[4] ‘নির্মিত শিল্প’ বলতে কারখানা, ইমারত ও অস্ত্রশস্ত্র ইত্যাদি। يعرشون (যা তারা উঁচু করত) বলতে উঁচু উঁচু প্রাসাদও হতে পারে, আবার আঙ্গুর ইত্যাদির বাগানও হতে পারে, যা মাচানের উপর ছড়ানো থাকে। অর্থ এই যে আমি তাদের শহরের বড় বড় প্রাসাদ, তাদের অস্ত্রশস্ত্র ও অন্যান্য সামগ্রী ধ্বংস করেছি এবং তাদের বাগানসমূহও।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৭. আল-আ'রাফ
৭:১৩৮ وَ جٰوَزۡنَا بِبَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ الۡبَحۡرَ فَاَتَوۡا عَلٰی قَوۡمٍ یَّعۡکُفُوۡنَ عَلٰۤی اَصۡنَامٍ لَّهُمۡ ۚ قَالُوۡا یٰمُوۡسَی اجۡعَلۡ لَّنَاۤ اِلٰـهًا کَمَا لَهُمۡ اٰلِـهَۃٌ ؕ قَالَ اِنَّکُمۡ قَوۡمٌ تَجۡهَلُوۡنَ ﴿۱۳۸﴾

আর বনী ইসরাঈলকে আমি সমুদ্র পার করিয়ে দিলাম। অতঃপর তারা আসল এমন এক কওমের কাছে যারা নিজদের মূর্তিগুলোর পূজায় রত ছিল। তারা বলল, ‘হে মূসা, তাদের যেমন উপাস্য আছে আমাদের জন্য তেমনি উপাস্য নির্ধারণ করে দাও। সে বলল, ‘নিশ্চয় তোমরা এমন এক কওম যারা মূর্খ’। আল-বায়ান

বানী ইসরাঈলকে আমি সমুদ্র পার করিয়ে দিলাম, অতঃপর তারা এমন এক জাতির নিকট এলো যারা ছিল প্রতিমা পূজারী। মূসার লোকজন বলল, হে মূসা! আমাদের জন্যও ‘কোন দেবতা বানিয়ে দাও যেমন তাদের দেবতা আছে। মূসা বলল, তোমরা হলে এমন এক সম্প্রদায় যারা মূর্খদের মতো আচরণ করে।’ তাইসিরুল

আমি বানী ইসরাঈলকে সমুদ্র পার করিয়ে দিলাম, অতঃপর তারা মূর্তি পূজারত এক জাতির সংস্পর্শে এল। তারা বললঃ হে মূসা! তাদের যেরূপ মা‘বূদ রয়েছে, আমাদের জন্যও ঐরূপ মা‘বূদ বানিয়ে দাও। সে বললঃ তোমরা একটি মূর্খ সম্প্রদায়। মুজিবুর রহমান

And We took the Children of Israel across the sea; then they came upon a people intent in devotion to [some] idols of theirs. They said, "O Moses, make for us a god just as they have gods." He said, "Indeed, you are a people behaving ignorantly. Sahih International

১৩৮. আর আমরা বনী ইসরাঈলকে সাগর পার করিয়ে দেই; তারপর তারা মূর্তিপূজায় রত এক জাতির কাছে উপস্থিত হয়। তারা বলল, হে মূসা! তাদের মা’বুদদের ন্যায় আমাদের জন্যও একজন মা’বুদ স্থির করে দাও(১)। তিনি বললেন, তোমরা তো এক জাহিল সম্প্রদায়।

(১) বনী ইসরাঈলদের মত অবস্থা এ উম্মতের মধ্যে ঘটেছে এবং নিত্য ঘটছে। এ উম্মাতের মধ্যেও কিছু না বুঝে না শুনে অন্যান্য জাতির অনুকরণে শির্ক ও কুফরী করার মানসিকতা রয়ে গেছে। আবু ওয়াকিদ আল-লাইসি বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এক হাদীসে এসেছে, আবু ওয়াকিদ বলেনঃ আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে হুনাইনের দিকে এক যুদ্ধে বের হলাম। আমরা একটা বরই গাছের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। তখন আমি বললামঃ হে আল্লাহর নবী! আমাদের জন্য এ গাছটিকে লটকানোর জন্য নির্ধারিত করে দিন যেমনটি নির্ধারিত রয়েছে কাফেরদের জন্য।

কারণ কাফেরদের একটি বরই গাছ ছিল যাতে তারা তাদের হাতিয়ার লটকিয়ে রাখত এবং তার চতুষ্পার্শ ঘিরে বসত। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আল্লাহু আকবার! এটা তো এমন যেমন বনী ইসরাঈল মূসাকে বলেছিলঃ “তাদের যেমন অনেক উপাস্য রয়েছে আমাদের জন্যও তেমন উপাস্য নির্ধারিত করে দিন”। অবশ্যই তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তীদের রীতিনীতির অনুসরণ করবে। [তিরমিযীঃ ২১৮০ মুসনাদে আহমাদঃ ৫/২১৮, ইবন হিব্বানঃ ৬৭০২]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৩৮) আর বনী-ইস্রাঈলকে আমি সমুদ্র পার করিয়ে দিলাম, অতঃপর তারা প্রতিমা পূজায় রত এক জাতির সংস্পর্শে এল। তারা বলল, ‘হে মূসা! ওদের যেমন বহু দেবতা রয়েছে, তেমনি আমাদের জন্যও একটি দেবতা বানিয়ে দিন। সে বলল, তোমরা তো এক মূর্খ জাতি।’ [1]

[1] এর থেকে বড় মূর্খতা ও বোকামি আর কি হতে পারে যে, যে মহান আল্লাহ ফিরআউনের মত বড় শত্রুর হাত হতে তাদেরকে শুধু পরিত্রাণ দেননি; বরং তাদেরই চোখের সামনে তাকে তার সৈন্য সামন্তসহ ডুবিয়ে মারলেন এবং তাদেরকে অলৌকিকভাবে সমূদ্র পার করিয়ে দিলেন, সেই আল্লাহকেই তারা সমুদ্র পার হয়েই ভুলে গিয়ে নিজ হাতে গড়া পাথরের মূর্তির খোঁজ শুরু করে। বলা হয় যে, তাদের ঐ মূর্তিগুলো গাভীর আকারে পাথরের তৈরী ছিল।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৭. আল-আ'রাফ
৭:১৩৯ اِنَّ هٰۤؤُلَآءِ مُتَبَّرٌ مَّا هُمۡ فِیۡهِ وَ بٰطِلٌ مَّا کَانُوۡا یَعۡمَلُوۡنَ ﴿۱۳۹﴾

নিশ্চয় এরা যাতে আছে, তা ধ্বংসশীল এবং তারা যা করত তা বাতিল। আল-বায়ান

এসব লোক যাতে মত্ত আছে তা ধ্বংস হয়ে যাবে আর তারা যে সব কাজ করছে তা সব বাতিল। তাইসিরুল

এ সব লোক যে কাজে লিপ্ত রয়েছে তাতো ধ্বংস করা হবে, আর তারা যা করছে তা অমূলক ও বাতিল বিষয়। মুজিবুর রহমান

Indeed, those [worshippers] - destroyed is that in which they are [engaged], and worthless is whatever they were doing." Sahih International

১৩৯. এসব লোক যাতে লিপ্ত রয়েছে তা তো বিধ্বস্ত করা হবে এবং তারা য করছে তাও অমূলক।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৩৯) এসব লোক যাতে লিপ্ত রয়েছে, তা তো ধ্বংস করা হবে এবং তারা যা করছে, তাও অমূলক।[1]

[1] অর্থাৎ, এই সব মূর্তিপূজারী যাদের অবস্থা তোমাদেরকে ধোঁকায় ফেলেছে, তাদের ভাগ্যই হল ধ্বংস হওয়া ও তাদের এই কর্ম বাতিল ও ক্ষতিকর।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৭. আল-আ'রাফ
৭:১৪০ قَالَ اَغَیۡرَ اللّٰهِ اَبۡغِیۡکُمۡ اِلٰـهًا وَّ هُوَ فَضَّلَکُمۡ عَلَی الۡعٰلَمِیۡنَ ﴿۱۴۰﴾

সে বলল, ‘আল্লাহ ছাড়া আমি কি তোমাদের জন্য অন্য ইলাহ সন্ধান করব অথচ তিনি তোমাদেরকে সকল সৃষ্টির উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন?’ আল-বায়ান

সে বলল, ‘আমি কি আল্লাহ ছাড়া তোমাদের জন্য অন্য ইলাহ খুঁজব অথচ তিনি তোমাদেরকে বিশ্বজগতের উপর প্রাধান্য দিয়েছেন?’ তাইসিরুল

সে বললঃ আমি কি আল্লাহকে ছেড়ে তোমাদের জন্য অন্য মা‘বূদের সন্ধান করব? অথচ তিনিই হলেন একমাত্র আল্লাহ যিনি তোমাদেরকে বিশ্ব জগতে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন! মুজিবুর রহমান

He said, "Is it other than Allah I should desire for you as a god while He has preferred you over the worlds?" Sahih International

১৪০. তিনি আরো বললেন, আল্লাহ ছাড়া তোমাদের জন্য আমি কি অন্য ইলাহ খোঁজ করব অথচ তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টিকুলের উপর শ্ৰেষ্ঠত্ব দিয়েছেন?

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৪০) সে আরো বলল, ‘আমি কী আল্লাহকে ছেড়ে তোমাদের জন্য অন্য উপাস্য খুঁজব, অথচ তিনি তোমাদেরকে বিশ্ব জগতের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন?’ [1]

[1] যে মহান আল্লাহ তোমাদের উপর এত অনুগ্রহ করেছেন যে, সারা বিশ্বে তোমাদেরকে সম্মানিত করেছেন, তাঁকে ছেড়ে তোমাদের জন্য পাথর বা কাঠের তৈরী মূর্তি খুঁজে দেব? অর্থাৎ, এই অকৃতজ্ঞতা ও নিমকহারামির কাজ কেমন করে করতে পারি? পরবর্তী আয়াতে আল্লাহর আরো কিছু অনুগ্রহের কথা বর্ণনা হচ্ছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৭. আল-আ'রাফ
৭:১৪১ وَ اِذۡ اَنۡجَیۡنٰکُمۡ مِّنۡ اٰلِ فِرۡعَوۡنَ یَسُوۡمُوۡنَکُمۡ سُوۡٓءَ الۡعَذَابِ ۚ یُقَتِّلُوۡنَ اَبۡنَآءَکُمۡ وَ یَسۡتَحۡیُوۡنَ نِسَآءَکُمۡ ؕ وَ فِیۡ ذٰلِکُمۡ بَلَآءٌ مِّنۡ رَّبِّکُمۡ عَظِیۡمٌ ﴿۱۴۱﴾

আর স্মরণ কর, যখন আমি ফির‘আউনের লোকদের থেকে তোমাদেরকে রক্ষা করলাম, যারা তোমাদের নিকৃষ্ট শাস্তি দিত। যারা তোমাদের ছেলেদের হত্যা করত এবং নারীদের জীবিত রাখত। এতে ছিল তোমাদের রবের পক্ষ থেকে এক মহাপরীক্ষা। আল-বায়ান

স্মরণ কর, আমি তোমাদেরকে ফির‘আওনী গোষ্ঠী থেকে রক্ষা করেছি যারা তোমাদেরকে কঠিন আযাবে ডুবিয়ে রেখেছিল, যারা তোমাদের ছেলে সন্তানগুলোকে হত্যা করছিল আর তোমাদের নারীদেরকে জীবিত রাখছিল, এতে তোমাদের জন্য ছিল তোমাদের রবেবর পক্ষ হতে এক কঠিন পরীক্ষা। তাইসিরুল

স্মরণ কর সেই সময়টির কথা, যখন আমি তোমাদেরকে ফির‘আউনের অনুসারীদের দাসত্ব হতে মুক্তি দিয়েছি, যারা তোমাদেরকে অতিশয় মর্মান্তিক, কষ্টদায়ক ও ন্যাক্কারজনক শাস্তি দিত, তোমাদের পুত্রদেরকে হত্যা করত এবং নারীদেরকে জীবিত রাখত। এটা ছিল তোমাদের জন্য তোমাদের রবের পক্ষ থেকে বিরাট পরীক্ষা। মুজিবুর রহমান

And [recall, O Children of Israel], when We saved you from the people of Pharaoh, [who were] afflicting you with the worst torment - killing your sons and keeping your women alive. And in that was a great trial from your Lord. Sahih International

১৪১. আর স্মরণ কর, যখন আমরা তোমাদেরকে ফিরআউনের অনুসারীদের হাত থেকে উদ্ধার করেছি যারা তোমাদেরকে নিকৃষ্ট শাস্তি দিত। তারা তোমাদের পুত্র-সন্তানদেরকে হত্যা করত এবং তোমাদের নারীদেরকে জীবিত রাখত; এতে ছিল তোমাদের রবের এক মহাপরীক্ষা।(১)

(১) অর্থাৎ আমরা বনী-ইসরাঈলকে সাগর পার করে দিয়েছি। ফিরআউন সম্প্রদায়ের মোকাবেলায় বনী-ইসরাঈলের যে অলৌকিক কৃতকার্যতা ও প্রশান্তি লাভ হয়, তার সে প্রতিক্রিয়াই হয়েছে যা সাধারণতঃ প্রাচুর্য আসার পর বস্তুবাদী জনগোষ্ঠীর মধ্যে সৃষ্টি হয়ে থাকে। অর্থাৎ তারাও ভোগবিলাসের প্রতি আকৃষ্ট হতে শুরু করল। ঘটনাটি হল এই যে, এই জাতি মূসা আলাইহিস সালামের মু'জিযা বলে সদ্য লোহিত সাগর পাড়ি দিয়ে এসেছিল এবং গোটা ফিরআউন সম্প্রদায়ের সাগরে ডুবে মরার দৃশ্য স্বচক্ষে দেখে নিয়েছিল, কিন্তু তা সত্বেও একটু অগ্রসর হতেই তারা এমন এক মানব গোষ্ঠীর বাসভূমির উপর দিয়ে অতিক্রম করল, যারা বিভিন্ন মূর্তির পূজায় লিপ্ত ছিল।

এই দেখে বনী ইসরাঈলেরও তাদের সেসব রীতি-নীতি পছন্দ হতে লাগল। তাই মূসা আলাইহিস সালামের নিকট আবেদন জানাল, এসব লোকের যেমন বহু উপাস্য রয়েছে, আপনি আমাদের জন্যও এমনি ধরণের কোন একটা উপাস্য নির্ধারণ করে দিন, যাতে আমরা একটা দৃষ্ট বস্তুকে সামনে রেখে ইবাদাত করতে পারি, আল্লাহর সত্তা তো আর সামনে আসে না।

মূসা আলাইহিস সালাম বললেন, “তোমাদের মধ্যে বড়ই মূর্খতা রয়েছে।” যাদের রীতি-নীতি তোমরা পছন্দ করছ, তাদের সমস্ত আমল তো বিনষ্ট ও বরবাদ হয়ে গেছে। এরা মিথ্যার অনুগামী। তাদের এসব ভ্রান্ত রীতি-নীতির প্রতি আকৃষ্ট হওয়া তোমাদের পক্ষে উচিত নয়। আল্লাহকে বাদ দিয়ে আমি কি তোমাদের জন্য অন্য কোন উপাস্য বানিয়ে দেব? অথচ তিনিই তোমাদেরকে দুনিয়াবাসীর উপর বিশিষ্টতা দান করেছেন। অর্থাৎ তৎকালীন বিশ্ববাসীর উপর মর্যাদাসম্পন্ন করেছেন। কারণ, তখন মূসা আলাইহিস সালামের উপর যারা ঈমান এনেছিল, তারাই ছিল অন্যান্য লোক অপেক্ষা বেশী মর্যাদাসম্পন্ন ও উত্তম।

অতঃপর বনী-ইস্রাঈলকে তাদের বিগত অবস্থা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলা হয়েছে যে, ফিরআউনের কওমের হাতে তারা এমনই নির্যাতিত ও দুর্দশাগ্রস্ত ছিল যে, তাদের ছেলেদেরকে হত্যা করে নারীদেরকে অব্যাহতি দেয়া হত সেবাদাসী বানিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে। আল্লাহ মূসা 'আলাইহিস সালামের বদৌলতে এবং তার দোআর বরকতে তাদেরকে সে আযাব থেকে মুক্তি দিয়েছেন। এই অনুগ্রহের প্রভাব কি এই হওয়া উচিত যে, তোমরা সেই রাব্বুল আলামীনের সাথে দুনিয়ার নিকৃষ্টতম পাথরকে অংশীদার সাব্যস্ত করবে। এযে মহা যুলুম। এই থেকে তাওবাহ কর।

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৪১) আর স্মরণ কর, আমি তোমাদেরকে ফিরআউন বংশীয়দের হাত হতে উদ্ধার করেছি, যারা তোমাদেরকে মর্মান্তিক শাস্তি দিত; তারা তোমাদের পুত্র-সন্তানদেরকে হত্যা করত এবং তোমাদের নারীদেরকে জীবিত রাখত। আর এতে তোমাদের জন্য তোমার প্রতিপালকের মহাপরীক্ষা ছিল।[1]

[1] এসব ঐ সকল পরীক্ষা, যার কথা সূরা বাক্বারাহ ৪৯নং আয়াত ও সূরা ইবরাহীম ৬নং আয়াতে আলোচিত হয়েছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ৬ পর্যন্ত, সর্বমোট ৬ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে