১৪. ইবরাহীম
১৪:৪১ رَبَّنَا اغۡفِرۡ لِیۡ وَ لِوَالِدَیَّ وَ لِلۡمُؤۡمِنِیۡنَ یَوۡمَ یَقُوۡمُ الۡحِسَابُ ﴿۴۱﴾

‘হে আমাদের রব, যেদিন হিসাব কায়েম হবে, সেদিন আপনি আমাকে, আমার পিতামাতাকে ও মুমিনদেরকে ক্ষমা করে দিবেন’। আল-বায়ান

হে আমাদের প্রতিপালক! হিসাব গ্রহণের দিন আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে আর মু’মিনদেরকে ক্ষমা করে দিও, তাইসিরুল

হে আমার রাব্ব! যেদিন হিসাব হবে সেদিন আমাকে, আমার মাতাপিতাকে এবং মু’মিনদেরকে ক্ষমা করুন। মুজিবুর রহমান

Our Lord, forgive me and my parents and the believers the Day the account is established." Sahih International

৪১. হে আমাদের রব যেদিন হিসেব অনুষ্ঠিত হবে সেদিন আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে এবং মুমিনদেরকে ক্ষমা করুন।(১)

(১) সবশেষে একটি ব্যাপক অর্থবোধক দোআ করলেন, ‘হে আমার রব! আমাকে আমার পিতা-মাতাকে এবং সব মুমিনকে ক্ষমা করুন ঐদিন, যেদিন হাশরের ময়দানে সারাজীবনের কাজকর্মের হিসাব নেয়া হবে। এতে তিনি মাতা-পিতার জন্যও মাগফেরাতের দোআ করেছেন। অথচ পিতা অর্থাৎ আযর যে কাফের ছিল, তা কুরআনুল কারীমেই উল্লেখিত রয়েছে। সম্ভবতঃ এ দোআটি তখন করেছেন, যখন ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-কে কাফেরদের জন্য দোআ করতে নিষেধ করা হয়নি। [ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪১) হে আমার প্রতিপালক! যেদিন হিসাব হবে সেদিন আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে[1] এবং বিশ্বাসীদেরকে ক্ষমা করো।’

[1] ইবরাহীম (আঃ) এই দু’আ তখন করেছিলেন যখন তাঁর কাছে স্বীয় পিতার ব্যাপারে আল্লাহর দুশমন হওয়ার কথা প্রকাশ পায়নি। যখন প্রকাশ পেয়ে গেল যে, তাঁর পিতা আল্লাহর দুশমন, তখন তিনি সম্পর্কছিন্নতা ব্যক্ত করলেন। কেননা যতই নিকটাত্মীয় হোক না কেন, মুশরিকদের জন্য (ক্ষমা প্রার্থনার) দু’আ করা বৈধ নয়।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৪. ইবরাহীম
১৪:৪২ وَ لَا تَحۡسَبَنَّ اللّٰهَ غَافِلًا عَمَّا یَعۡمَلُ الظّٰلِمُوۡنَ ۬ؕ اِنَّمَا یُؤَخِّرُهُمۡ لِیَوۡمٍ تَشۡخَصُ فِیۡهِ الۡاَبۡصَارُ ﴿ۙ۴۲﴾

আর যালিমরা যা করছে, আল্লাহকে তুমি সে বিষয়ে মোটেই গাফেল মনে করো না, আল্লাহ তো তাদের অবকাশ দিচ্ছেন, ঐ দিন পর্যন্ত যে দিন চোখ পলকহীন তাকিয়ে থাকবে। আল-বায়ান

যালিমরা যা করছে সে ব্যাপারে তোমরা আল্লাহকে কক্ষনো উদাসীন মনে কর না। তিনি তাদেরকে সেদিন পর্যন্ত ঢিল দিচ্ছেন যেদিন ভয়ে আতঙ্কে চক্ষু স্থির হয়ে যাবে। তাইসিরুল

তুমি কখনও মনে করনা যে, যালিমরা যা করে সে বিষয়ে আল্লাহ উদাসীন। তবে তিনি সেদিন পর্যন্ত তাদেরকে অবকাশ দেন যেদিন তাদের চক্ষু হবে স্থির। মুজিবুর রহমান

And never think that Allah is unaware of what the wrongdoers do. He only delays them for a Day when eyes will stare [in horror]. Sahih International

৪২. আর আপনি কখনো মনে করবেন না যে, যালিমরা যা করে সে বিষয়ে আল্লাহ গাফিল(১), তবে তিনি তাদেরকে সেদিন পর্যন্ত অবকাশ দেন যেদিন তাদের চক্ষু হবে স্থির।(২)

(১) অর্থাৎ কোন অবস্থাতেই তোমরা আল্লাহকে গাফেল মনে করো না। এখানে বাহ্যতঃ প্রত্যেক ঐ ব্যক্তিকে সম্বোধন করা হয়েছে, যাকে তার গাফলতি ও শয়তান এ ধোঁকায় ফেলে রেখেছে। [ফাতহুল কাদীর] পক্ষান্তরে যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে সম্বোধন করা হয়, তবে এর উদ্দেশ্য উম্মতের গাফেলদেরকে শোনানো এবং হুশিয়ার করা। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পক্ষ থেকে এরূপ সম্ভাবনাই নেই যে, তিনি আল্লাহ তা'আলাকে পরিস্থিতি সম্পর্কে বেখবর অথবা গাফেল মনে করতে পারেন।

(২) অর্থাৎ কিয়ামতের ভয়াবহ দৃশ্য তাদের সামনে হবে। বিস্ফারিত দৃষ্টিতে তারা তা দেখতে থাকবে যেন তাদের চোখের মনি স্থির হয়ে গেছে, পলক পড়ছে না। ঠায় এক দৃষ্টে তাকিয়ে থাকবে। অন্য আয়াতে আল্লাহ্ তা'আলা তা আরো ব্যাখ্যা করে বলেছেন যে, “অমোঘ প্রতিশ্রুত সময় আসন্ন হলে হঠাৎ কাফিরদের চোখ স্থির হয়ে যাবে, তারা বলবে, হায়, দুর্ভোগ আমাদের! আমরা তো ছিলাম এ বিষয়ে উদাসীন; না, আমরা সীমালংঘনকারীই ছিলাম।” [সূরা আল-আম্বিয়াঃ ৯৭]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪২) তুমি কখনো মনে করো না যে, সীমালংঘনকারীরা যা করে সে বিষয়ে আল্লাহ উদাসীন। আসলে তিনি সেদিন পর্যন্ত তাদেরকে অবকাশ দেন, যেদিন সকল চক্ষু স্থির হয়ে যাবে। [1]

[1] অর্থাৎ কিয়ামতের ভয়াবহতার কারণে। যদি মহান আল্লাহ পৃথিবীতে কাউকে বেশি অবকাশ দিয়ে আমরণ তাকে পাকড়াও না করেন, তাহলে কিয়ামতের দিন তাঁর পাকড়াও থেকে তো সে বাঁচতে পারবে না, যে দিন কাফেরদের জন্য এত ভয়ঙ্কর হবে যে, তাদের চক্ষু বিস্ফারিত ও স্থির হয়ে যাবে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৪. ইবরাহীম
১৪:৪৩ مُهۡطِعِیۡنَ مُقۡنِعِیۡ رُءُوۡسِهِمۡ لَا یَرۡتَدُّ اِلَیۡهِمۡ طَرۡفُهُمۡ ۚ وَ اَفۡـِٕدَتُهُمۡ هَوَآءٌ ﴿ؕ۴۳﴾

তারা মাথা তুলে দৌড়াতে থাকবে, তাদের দৃষ্টি নিজদের দিকে ফিরবে না এবং তাদের অন্তর হবে শূন্য। আল-বায়ান

আতঙ্কিত হয়ে মাথা তুলে পালাতে থাকবে, দৃষ্টি তাদের নিজেদের পানে ফিরে আসবে না, আর তাদের দিল উড়ে যাবে। তাইসিরুল

ভীতি বিহবল চিত্তে (আকাশের দিকে চেয়ে) ছুটাছুটি করবে। নিজেদের প্রতি তাদের দৃষ্টি ফিরবেনা এবং তাদের অন্তর হবে শূন্য। মুজিবুর রহমান

Racing ahead, their heads raised up, their glance does not come back to them, and their hearts are void. Sahih International

৪৩. ভীত-বিহ্বল চিত্তে উপরের দিকে তাকিয়ে তারা ছুটোছুটি করবে, নিজেদের প্রতি তাদের দৃষ্টি ফিরবে না এবং তাদের অন্তর হবে উদাস।(১)

(১) অর্থাৎ সেদিন চক্ষুসমূহ বিস্ফোরিত হয়ে থাকবে। (مُهْطِعِينَ مُقْنِعِي رُءُوسِهِمْ) অর্থাৎ লজ্জা, ভয় ও বিস্ময়ের কারণে মস্তক উপরে তুলে প্রাণপণ দৌড়াতে থাকবে। (لَا يَرْتَدُّ إِلَيْهِمْ طَرْفُهُمْ) অর্থাৎ অপলক নেত্রে চেয়ে থাকবে। (وَأَفْئِدَتُهُمْ هَوَاءٌ) অর্থাৎ ভয়ে তাদের অন্তর শূন্য, উদাস ও ব্যাকুল হবে। [কুরতুবী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪৩) ভীত-বিহব্বল চিত্তে আকাশের দিকে চেয়ে তারা ছুটাছুটি করবে[1] নিজেদের প্রতি তাদের দৃষ্টি ফিরবে না এবং তাদের অন্তর হবে (জ্ঞান) শূন্য। [2]

[1] مُهْطِعِيْنَ দ্রুত ছুটাছুটি করতে থাকবে। তিনি অন্যত্র বলেন, ﴿مُّهْطِعِينَ إِلَى الدَّاعِ﴾ অর্থাৎ, আহবানকারীর দিকে দৌড়বে। (সূরা ক্বামার : ৮) مُقْنِعِيْ رُءُوسِهِمْ ভয়-বিহব্বলতায় তাদের মাথা উপর দিকে উঠে থাকবে।

[2] যে ভয়াবহতা দর্শন তারা করবে এবং নিজেদের ব্যাপারে যে চিন্তা-ভাবনা ও ভয়-ভীতি হবে, তার কারণে তাদের চক্ষু ক্ষণেকের জন্যও নীচু হবে না এবং প্রচন্ড ভয়ের কারণে তাদের হৃদয় ভগ্ন ও শূন্য থাকবে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৪. ইবরাহীম
১৪:৪৪ وَ اَنۡذِرِ النَّاسَ یَوۡمَ یَاۡتِیۡهِمُ الۡعَذَابُ فَیَقُوۡلُ الَّذِیۡنَ ظَلَمُوۡا رَبَّنَاۤ اَخِّرۡنَاۤ اِلٰۤی اَجَلٍ قَرِیۡبٍ ۙ نُّجِبۡ دَعۡوَتَكَ وَ نَتَّبِعِ الرُّسُلَ ؕ اَوَ لَمۡ تَكُوۡنُوۡۤا اَقۡسَمۡتُمۡ مِّنۡ قَبۡلُ مَا لَكُمۡ مِّنۡ زَوَالٍ ﴿ۙ۴۴﴾

আর তুমি মানুষদেরকে সতর্ক কর, যেদিন তাদের উপর আযাব নেমে আসবে। অতঃপর তখন যারা যুলম করেছে তারা বলবে, ‘হে আমাদের রব, তুমি আমাদেরকে কিছু সময়ের জন্য অবকাশ দাও, আমরা তোমার ডাকে সাড়া দেব এবং রাসূলদের অনুসরণ করব’। ইতঃপূর্বে তোমরা কি কসম করনি যে, তোমাদের কোন পতন নেই? আল-বায়ান

কাজেই মানুষকে সতর্ক কর সেদিনের ব্যাপারে যেদিন তাদের উপর ‘আযাব আসবে। যারা যুলম করেছিল তারা তখন বলবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে অল্পদিনের জন্য সময় দাও, আমরা তোমার আহবানে সাড়া দিব আর রসূলদের কথা মেনে চলব।’ (তখন তাদেরকে বলা হবে) তোমরা কি পূর্বে শপথ করে বলনি যে, তোমাদের কক্ষনো পতন ঘটবে না? তাইসিরুল

যেদিন তাদের শাস্তি আসবে সেদিন সম্পর্কে তুমি মানুষকে সতর্ক কর। তখন যালিমরা বলবেঃ হে আমাদের রাব্ব! আমাদের কিছুকালের জন্য অবকাশ দিন, আমরা আপনার আহবানে সাড়া দিব এবং রাসূলদের অনুসরণ করবই। তোমরা কি পূর্বে শপথ করে বলতে না যে, তোমাদের পতন নেই? মুজিবুর রহমান

And, [O Muhammad], warn the people of a Day when the punishment will come to them and those who did wrong will say, "Our Lord, delay us for a short term; we will answer Your call and follow the messengers." [But it will be said], "Had you not sworn, before, that for you there would be no cessation? Sahih International

৪৪. আর যেদিন তাদের শাস্তি আসবে সেদিন সম্পর্কে আপনি মানুষকে সতর্ক করুন, তখন যারা যুলুম করেছে তারা বলবে, হে আমাদের রব! আপনি আমাদেরকে কিছু কালের জন্য অবকাশ দিন, আমরা আপনার ডাকে সাড়া দেব এবং রাসূলগণের অনুসরণ করব। তোমরা কি আগে শপথ করে বলতে না যে, তোমাদের পতন নেই।(১)

(১) এসব অবস্থা বর্ণনা করার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বলা হয়েছে যে, আপনি আপনার জাতিকে ঐ দিনের শাস্তির ভয় প্রদর্শন করুন, যেদিন যালিম ও অপরাধীরা অপারগ হয়ে বলবেঃ হে আমাদের রব! আমাদেরকে আরো কিছুদিন সময় দিন। অর্থাৎ দুনিয়াতে কয়েকদিনের জন্য পাঠিয়ে দিন, যাতে আমরা আপনার দাওয়াত কবুল করতে পারি এবং আপনার প্রেরিত নবীগণের অনুসরণ করে এ আযাব থেকে মুক্তি পেতে পারি। অন্য আয়াতেও আল্লাহ তা'আলা কাফেরদের এ অবস্থা বর্ণনা করে বলছেন, “আর আপনি যদি দেখতেন। যখন অপরাধীরা তাদের রবের নিকট অবনত মস্তকে বলবে, হে আমাদের রব! আমরা দেখলাম ও শুনলাম, সুতরাং আপনি আমাদেরকে ফেরত পাঠান, আমরা সৎকাজ করব, নিশ্চয় আমরা দৃঢ় বিশ্বাসী। [সূরা আস-সাজদাহঃ ১২]

আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে তাদের আবেদনের জবাবে বলা হবেঃ এখন তোমরা একথা বলছ কেন? তোমরা কি ইতিপূর্বে কসম খেয়ে বলনি যে, তোমাদের ধন-সম্পদ ও শান-শওকতের পতন হবে না এবং তোমরা সর্বদাই দুনিয়াতে এমনিভাবে বিলাস-ব্যসনে মত্ত থাকবে? তোমরা পুনর্জীবন ও আখেরাত অস্বীকার করে আসছিলে। অন্য আয়াতেও কাফেরদের এ আবদার ও তার জবাব বর্ণিত হয়েছে। বলা হয়েছে, “অবশেষে যখন তাদের কারো মৃত্যু আসে, সে বলে, হে আমার রব! আমাকে আবার ফেরত পাঠান, যাতে আমি সৎকাজ করতে পারি যা আমি আগে করিনি। না, এটা হবার নয়। এটা তো তার একটি বাক্য মাত্র যা সে বলবেই।” [সূরা আল-মুমিনুন: ৯৯–১০০]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪৪) সেদিন সম্পর্কে তুমি মানুষকে সতর্ক কর যেদিন তাদের শাস্তি আসবে, যখন সীমালংঘনকারীরা বলবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে কিছু কালের জন্য অবকাশ দাও; আমরা তোমার আহবানে সাড়া দিব এবং রসূলদের অনুসরণ করব।’ (তখন তাদেরকে বলা হবে,) ‘তোমরা কি পূর্বে শপথ করে বলতে না যে, তোমাদের কোন পতন নেই? [1]

[1] অর্থাৎ, পৃথিবীতে তোমরা কসম খেয়ে বলতে যে, কোন হিসাব-নিকাশ এবং জান্নাত-জাহান্নাম নেই এবং পুনর্বার কে জীবিত হবে?

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৪. ইবরাহীম
১৪:৪৫ وَّ سَكَنۡتُمۡ فِیۡ مَسٰكِنِ الَّذِیۡنَ ظَلَمُوۡۤا اَنۡفُسَهُمۡ وَ تَبَیَّنَ لَكُمۡ كَیۡفَ فَعَلۡنَا بِهِمۡ وَ ضَرَبۡنَا لَكُمُ الۡاَمۡثَالَ ﴿۴۵﴾

আর তোমরা বাস করছিলে সেসব লোকদের বাসস্থানে, যারা নিজদের উপর যুলম করত এবং তোমাদের নিকট স্পষ্ট হয়েছিল আমি তাদের সাথে কিরূপ করেছি এবং আমি তোমাদের জন্য উপমা বর্ণনা করেছি। আল-বায়ান

অথচ তোমরা সেই লোকগুলোর বাসভূমিতে বসবাস করছিলে যারা নিজেদের প্রতি যুলম করেছিল আর তোমাদেরকে স্পষ্ট করে দেখিয়ে দেয়া হয়েছিল আমি তাদের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করেছিলাম। আর আমি বহু উদাহরণ টেনে তোমাদেরকে বুঝিয়েও দিয়েছিলাম। তাইসিরুল

অথচ তোমরা বাস করতে তাদের বাসভূমিতে যারা নিজেদের প্রতি যুলম করেছিল এবং তাদের প্রতি আমি কি করেছিলাম তাও তোমাদের নিকট সুবিদিত ছিল এবং তোমাদের নিকট আমি তাদের দৃষ্টান্তও উপস্থিত করেছিলাম। মুজিবুর রহমান

And you lived among the dwellings of those who wronged themselves, and it had become clear to you how We dealt with them. And We presented for you [many] examples." Sahih International

৪৫. আর তোমরা বাস করেছিলে তাদের বাসভূমিতে, যারা নিজেদের প্রতি যুলুম করেছিল এবং তাদের সাথে আমরা কিরূপ (আচরণ) করেছিলাম তাও আমাদের কাছে স্পষ্ট ছিল। আর তোমাদের জন্য আমরা অনেক দৃষ্টান্তও উপস্থাপন করেছিলাম।(১)

(১) এতে তাদেরকে হুশিয়ার করা হয়েছে যে, অতীত জাতিসমূহের অবস্থা ও উত্থান-পতন তোমাদের জন্য সর্বোত্তম উপদেশ। আশ্চর্যের বিষয়, তোমরা এগুলো থেকে শিক্ষা গ্রহণ কর না। অথচ তোমরা এসব ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতির আবাসস্থলেই বসবাস ও চলাফেরা কর। কিছু অবস্থা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এবং কিছু সংবাদ পরস্পরের মাধ্যমে তোমরা একথাও জান যে, আল্লাহ তা'আলা অবাধ্যতার কারণে ওদেরকে কিরূপ কঠোর শাস্তি দিয়েছেন। এছাড়া আল্লাহ তাদেরকে সৎপথে আনার জন্য অনেক দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন কিন্তু এরপরও তাদের চৈতন্যোদয় হয়নি। আল্লাহ বলেন, “এটা পরিপূর্ণ হিকমত, কিন্তু ভীতিপ্রদর্শন তাদের কোন কাজে লাগেনি।” [সূরা আল-কামার: ৫] [ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪৫) তোমরা বাস করতে তাদের বাসভূমিতে যারা নিজেদের প্রতি যুলম করেছিল এবং তাদের প্রতি আমি কি করেছিলাম, তাও তোমাদের নিকট সুবিদিত ছিল এবং তোমাদের নিকট আমি দৃষ্টান্তও উপস্থিত করেছিলাম।’ [1]

[1] অর্থাৎ, উপদেশ গ্রহণ করার জন্য আমি তো পূর্ববর্তী সম্প্রদায়ের ঘটনা বর্ণনা করে দিয়েছি, যাদের বাড়ি-ঘরে এখন তোমরা বসবাস করছ এবং তাদের জীর্ণ বাড়ি-ঘরও তোমাদেরকে চিন্তা-ভাবনা করতে উদ্বুদ্ধ করছে। যদি তোমরা এ থেকে উপদেশ গ্রহণ না কর এবং তাদের পরিণাম থেকে বাঁচার জন্য চিন্তা-ভাবনা না কর, তাহলে তোমাদের মর্জি। সুতরাং তোমরাও অনুরূপ পরিণামের জন্য প্রস্তুত থাকো।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৪. ইবরাহীম
১৪:৪৬ وَ قَدۡ مَكَرُوۡا مَكۡرَهُمۡ وَ عِنۡدَ اللّٰهِ مَكۡرُهُمۡ ؕ وَ اِنۡ كَانَ مَكۡرُهُمۡ لِتَزُوۡلَ مِنۡهُ الۡجِبَالُ ﴿۴۶﴾

আর তারা তাদের ষড়যন্ত্র করেছিল, আর আল্লাহর কাছেই তাদের ষড়যন্ত্র, যদিও তাদের ষড়যন্ত্র এমন ছিল যা দ্বারা পাহাড় অপসারিত হয়ে যায়। আল-বায়ান

তারা যে চক্রান্ত করেছিল তা ছিল সত্যিই ভয়ানক, কিন্তু তাদের চক্রান্ত আল্লাহর দৃষ্টির ভিতরেই ছিল, যদিও তাদের চক্রান্তগুলো এমন ছিল না যে, তাতে পর্বতও টলে যেত। তাইসিরুল

তারা ভীষণ চক্রান্ত করেছিল, কিন্তু আল্লাহর নিকট তাদের চক্রান্ত রক্ষিত রয়েছে। তাদের চক্রান্ত এমন ছিলনা যাতে পর্বত টলে যেত। মুজিবুর রহমান

And they had planned their plan, but with Allah is [recorded] their plan, even if their plan had been [sufficient] to do away with the mountains. Sahih International

৪৬. আর তারা ভীষণ চক্রান্ত করেছিল, কিন্তু তাদের চক্রান্ত আল্লাহর কাছে রক্ষিত হয়েছে(১), তবে তাদের চক্রান্ত এমন ছিল না যে, পর্বত টলে যাবে।(২)

(১) অর্থাৎ তিনি তাদের যাবতীয় চক্রান্ত বেষ্টন করে আছেন। তিনি সেগুলোকে পুনরায় তাদের দিকে তাক করে দিয়েছেন। আবার তিনি সেগুলোর বিনিময়ে তাদের শাস্তি দিবেন।

(২) অধিকাংশ তাফসীরবিদ (وَإِنْ كَانَ مَكْرُهُمْ) বাক্যের إِن শব্দটি নেতিবাচক অব্যয় সাব্যস্ত করে অর্থ করেছেন যে, তারা যদিও অনেক কূটকৌশল ও চালবাজি করেছে, কিন্তু তাতে পাহাড়ের স্বস্থান থেকে হটে যাওয়া সম্ভবপর ছিল না। [ইবন কাসীর] অর্থাৎ তারা সত্যদ্বীনকে বিলুপ্ত করার লক্ষ্যে এবং সত্যের দাওয়াত কবুলকারী মুসলিমদের নিপীড়নের উদ্দেশ্যে সাধ্যমত কূটকৌশল করেছে। আল্লাহ্ তা'আলার কাছে তাদের সব গুপ্ত ও প্রকাশ্য কূটকৌশল বিদ্যমান রয়েছে। তিনি এগুলো সম্পর্কে ওয়াকিফহাল এবং এগুলোকে ব্যর্থ করে দিতে সক্ষম।

তাদের কুটকৌশল এমন বড় কিছু নয় যে, পাহাড় টলে যাবে। সে অনুসারে তাদের যাবতীয় কুটকৌশলের হীনতা ও দূর্বলতা বর্ণনা করাই এখানে উদ্দেশ্য। অন্য আয়াতে এ অর্থে বলা হয়েছে, “ভূপৃষ্ঠে দম্ভভরে বিচরণ করবেন না; আপনি তো কখনই পদভরে ভূপৃষ্ঠ বিদীর্ণ করতে পারবেন না এবং উচ্চতায় আপনি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবেন না।” [সূরা আল-ইসরাঃ ৩৭] [ইবন কাসীর]

আয়াতের দ্বিতীয় আরেকটি অর্থ হলো, “যদিও তাদের কূটকৌশল এমন মারাত্মক ও গুরুতর ছিল যে, এর মোকাবেলায় পাহাড়ও স্বস্থান থেকে অপসৃত হবে” [কুরতুবী] কিন্তু আল্লাহর অপার শক্তির সামনে এসব কূটকৌশল ব্যর্থ হয়ে গেছে। আয়াতে বর্ণিত শক্রতামূলক কূটকৌশলের অর্থ অতীতে ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতিসমূহের কূটকৌশলও হতে পারে। উদাহরণতঃ নমরূদ, ফিরআওন, কওমে-আদ, কওমে সামূদ ইত্যাদি। এটাও সম্ভব যে, এতে আরবের বর্তমান মুশরিকদের অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে যে, তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মোকাবেলায় অত্যন্ত গভীর ও সুদূরপ্রসারী চক্রান্ত ও কূটকৌশল করেছে। কিন্তু আল্লাহ্ তাআলা সব ব্যর্থ করে দিয়েছেন।

আয়াতে উল্লেখিত مكر শব্দের অর্থ কোন কোন মুফাসসিরের মতে, শির্ক ও রাসূলদের উপর মিথ্যারোপ। [কুরতুবী] অর্থাৎ তাদের শির্ক ও রাসূলের উপর মিথ্যারোপ মারাত্মক আকার ধারণ করলেও আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিফহাল। অন্য আয়াত থেকেও এ অর্থের সমর্থন পাওয়া যায়, অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, শির্ক করার কারণে আকাশ ফেটে যাওয়ার উপক্রম হয়। [সূরা মারইয়ামঃ ৯০] [ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪৬) তারা ভীষণ চক্রান্ত করেছিল, অথচ আল্লাহর নিকট তাদের চক্রান্ত (জানা) ছিল।[1] তাদের চক্রান্ত এমন ছিল না যাতে পর্বত টলে যেত।[2]

[1] এটা অবস্থা বর্ণনামূলক বাক্য। অর্থাৎ, আমি তাদের সাথে যা করলাম তা করলাম, অথচ অবস্থা এই যে, তারা বাতিলকে সাব্যস্ত এবং সত্যকে খন্ডন করার জন্য সর্বশক্তি ব্যয় পূর্বক কৌশল ও চক্রান্ত করল। আর আল্লাহর কাছে এসব চক্রান্তের জ্ঞান আছে; অর্থাৎ তাঁর কাছে লিপিবদ্ধ আছে যার শাস্তি তিনি তাদেরকে দেবেন।

[2] কেননা যদি পাহাড় টলে যেত, তাহলে তা স্বস্থানে থাকতো না, অথচ সমস্ত পাহাড় স্ব স্ব স্থানে অটল রয়েছে। এ হল إنْ নেতিবাচক مَا এর অর্থ। দ্বিতীয় অর্থ إنْ মূলতঃ إنَّ ছিল। অর্থাৎ নিশ্চয় তাদের চক্রান্ত এত বড় ছিল যে, তার ফলে পাহাড়ও স্বস্থান থেকে সরে যেত! তিনি তো মহান আল্লাহই যিনি তাদের চক্রান্তকে সফল হতে দেননি। যেমন মহান আল্লাহ কাফেরদের সম্বন্ধে বলেছেন, تَكَادُ السَّمَاوَاتُ يَتَفَطَّرْنَ مِنْهُ وَتَنشَقُّ الْأَرْضُ وَتَخِرُّ الْجِبَالُ هَدًّا. أَن دَعَوْا لِلرَّحْمَنِ وَلَدًا অর্থাৎ, এতে যেন আকাশ সমূহ বিদীর্ণ হয়ে যাবে, পৃথিবী খন্ড-বিখন্ড হবে ও পর্বতসমূহ চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে পড়বে। যেহেতু তারা পরম দয়াময়ের উপর সন্তান আরোপ করে। (সূরা মারয়্যাম ৯০-৯১)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৪. ইবরাহীম
১৪:৪৭ فَلَا تَحۡسَبَنَّ اللّٰهَ مُخۡلِفَ وَعۡدِهٖ رُسُلَهٗ ؕ اِنَّ اللّٰهَ عَزِیۡزٌ ذُو انۡتِقَامٍ ﴿ؕ۴۷﴾

সুতরাং তুমি কখনো আল্লাহকে তাঁর রাসূলদের দেয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী মনে করো না। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রতিশোধ গ্রহণকারী। আল-বায়ান

(অবস্থা যতই প্রতিকূল হোক না কেন) তুমি কক্ষনো মনে কর না যে, আল্লাহ তাঁর রসূলগণকে দেয়া ওয়াদা খেলাপ করবেন, আল্লাহ মহাপ্রতাপশালী, প্রবল প্রতিশোধ গ্রহণকারী। তাইসিরুল

তুমি কখনও মনে করনা যে, আল্লাহ তাঁর রাসূলদের প্রতি প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন; আল্লাহ পরাক্রমশালী, দন্ড বিধায়ক। মুজিবুর রহমান

So never think that Allah will fail in His promise to His messengers. Indeed, Allah is Exalted in Might and Owner of Retribution. Sahih International

৪৭. সুতরাং আপনি কখনো মনে করবেন না যে, আল্লাহ তার রাসূলগণকে দেয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রতিশোধ গ্রহণকারী।(১)

(১) এরপর উম্মতকে শোনানোর জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অথবা প্রত্যেক সম্বোধনযোগ্য ব্যক্তিকে হুশিয়ার করে বলা হয়েছেঃ “কেউ যেন এরূপ মনে না করে যে, আল্লাহ্ তা'আলা রাসূলগণের সাথে বিজয় ও সাফল্যের যে ওয়াদা করেছেন, তিনি তার খেলাফ করবেন। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা'আলা মহাপরাক্রান্ত এবং প্রতিশোধ গ্রহণকারী।” তিনি নবীগণের শক্রদের কাছ থেকে অবশ্যই প্রতিশোধ গ্রহণ করবেন এবং ওয়াদা পূর্ণ করবেন। [বাগভী; কুরতুবী]। তিনি তাদেরকে দুনিয়াতেও সাহায্য করবেন, আখেরাতেও যেদিন সাক্ষীরা সাক্ষ্য দিতে দাঁড়াবে সেদিনও তিনি তাদের সাহায্য করবেন। তিনি পরাক্রমশালী কোন কিছুই তার ক্ষমতার বাইরে নেই। তিনি যা ইচ্ছা করেন তা পূরণে কেউ বাধা সৃষ্টি করতে পারে না। [ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪৭) সুতরাং তুমি কখনো মনে করো না যে, আল্লাহ তাঁর রসূলদের প্রতি প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করবেন;[1] আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রতিশোধগ্রহণকারী। [2]

[1] অর্থাৎ, মহান আল্লাহ স্বীয় রসূলদের সাথে পৃথিবীতে সাহায্য করার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা অবশ্যই সত্য, তাঁর তরফ থেকে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ হওয়া অসম্ভব।

[2] অর্থাৎ স্বীয় বন্ধুদের জন্য স্বীয় শত্রুদের কাছ থেকে প্রতিশোধ গ্রহণকারী।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৪. ইবরাহীম
১৪:৪৮ یَوۡمَ تُبَدَّلُ الۡاَرۡضُ غَیۡرَ الۡاَرۡضِ وَ السَّمٰوٰتُ وَ بَرَزُوۡا لِلّٰهِ الۡوَاحِدِالۡقَهَّارِ ﴿۴۸﴾

যেদিন এ যমীন ভিন্ন যমীনে রূপান্তরিত হবে এবং আসমানসমূহও। আর তারা পরাক্রমশালী এক আল্লাহর সামনে হাযির হবে। আল-বায়ান

যেদিন এ পৃথিবী বদলে গিয়ে অন্য এক পৃথিবীতে রূপান্তরিত হবে আর আসমানসমূহও (বদলে যাবে), আর মানুষ সমুস্থাপিত হবে এক ও অপ্রতিরোধ্য আল্লাহর সম্মুখে। তাইসিরুল

যেদিন এই পৃথিবী পরিবর্তিত হয়ে অন্য পৃথিবী হবে এবং আকাশমন্ডলীও এবং মানুষ উপস্থিত হবে আল্লাহর সামনে, যিনি এক, পরাক্রমশালী। মুজিবুর রহমান

[It will be] on the Day the earth will be replaced by another earth, and the heavens [as well], and all creatures will come out before Allah, the One, the Prevailing. Sahih International

৪৮. যেদিন এ যমীন পরিবর্তিত হয়ে অন্য যমীন হবে এবং আসমানসমূহও(১) আর মানুষ উন্মুক্তভাবে উপস্থিত হবে এক, একচ্ছত্র অধিপতি আল্লাহর সামনে।

(১) এখানে কেয়ামতের ভয়াবহ অবস্থা ও ঘটনাবলী বর্ণনা করা হয়েছেঃ “কেয়ামতের দিন বর্তমান পৃথিবী পাল্টে দেয়া হবে এবং আকাশও। সবাই এক ও পরাক্রমশালী আল্লাহর সামনে হাজির হবে।” পৃথিবী ও আকাশ পাল্টে দেয়ার এরূপ অর্থও হতে পারে যে, তাদের আকার ও আকৃতি পাল্টে দেয়া হবে; যেমন কুরআনুল কারীমের অন্যান্য আয়াত ও হাদীসে আছে যে, সমগ্র ভূ-পৃষ্ঠকে একটি সমতল ভূমিতে পরিণত করে দেয়া হবে। এতে কোন গৃহের ও বৃক্ষের আড়াল থাকবে না এবং পাহাড়, টিলা, গর্ত, গভীরতা কিছুই থাকবে না।

এ অবস্থা বর্ণনা প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ (لَا تَرَىٰ فِيهَا عِوَجًا وَلَا أَمْتًا) [ত্বাহাঃ ১০৭] অর্থাৎ গৃহ ও পাহাড়ের কারণে বর্তমানে রাস্তা ও সড়ক বাক ঘুরে ঘুরে চলেছে। কোথাও উচ্চতা এবং কোথাও গভীরতা দেখা যায়। কেয়ামতের দিন এগুলো থাকবে না, বরং সব পরিস্কার ময়দান হয়ে যাবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ কেয়ামতের দিন ময়দার রুটির মত পরিস্কার ও সাদা পৃথিবীর বুকে মানবজাতিকে পুনরুত্থিত করা হবে। এতে কারো কোন চিহ্ন (গৃহ, উদ্যান, বৃক্ষ, পাহাড়, টিলা ইত্যাদি) থাকবে না। [বুখারীঃ ৬৫২১, মুসলিমঃ ২৭৯০]

অন্য এক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট এক ইয়াহুদী এসে প্রশ্ন করলঃ যেদিন পৃথিবী পরিবর্তন করা হবে, সেদিন মানুষ কোথায় থাকবে? তিনি বললেনঃ পুলসিরাতের নিকটে অন্ধকারে থাকবে। [মুসলিমঃ ৩১৫] অন্য বর্ণনায় আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে সেদিন মানুষ কোথায় থাকবে? তিনি বলেছিলেন, “সিরাতের উপর” [মুসলিম: ২৭৯১] এ থেকে জানা যায় যে, বর্তমান পৃথিবী থেকে পুলসিরাতের মাধ্যমে মানুষকে অন্যদিকে স্থানান্তর করা হবে। ইবনে জারীর স্বীয় তাফসীর গ্রন্থে এ মর্মে একাধিক সাহাবী ও তাবেয়ীর উক্তি বর্ণনা করেছেন। বাস্তব অবস্থা আল্লাহ তা'আলাই ভাল জানেন।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪৮) (স্মরণ কর,) যেদিন এই পৃথিবী পরিবর্তিত হয়ে অন্য পৃথিবী হবে এবং আকাশমন্ডলীও।[1] আর মানুষ (কবর থেকে) বের হবে একক প্রতাপশালী আল্লাহর জন্য।

[1] ইমাম শওকানী বলেন, আয়াতে দুটো সম্ভাবনাই রয়েছে যে, এই পরিবর্তন গুণগত দিক থেকেও হতে পারে এবং পদার্থগত দিক থেকেও হতে পারে। অর্থাৎ এই আকাশ ও পৃথিবী নিজ নিজ গুণগত দিক দিয়ে পরিবর্তিত হবে অথবা অনুরূপ পদার্থগত দিক থেকে তার পরিবর্তন আসবে, না এই পৃথিবী থাকবে আর না এ আকাশ। পৃথিবীও অন্য হবে এবং আকাশও অন্য। রসূল (সাঃ) বলেছেন, ‘‘কিয়ামতের দিন মানুষ সাদা ও লালচে সাদা রঙের ভূমিতে একত্রিত হবে, যা ময়দার রুটির মত হবে, তাতে কারো কোন (মালিকানার) চিহ্ন থাকবে না। (মুসলিম, সিফাতুল কিয়ামাহ) একদা আয়েশা (রাঃ)  জিজ্ঞাসা করলেন, যখন এই আকাশ ও পৃথিবী পরিবর্তন হবে, তখন সেই দিন লোকেরা কোথায় অবস্থান করবে? উত্তরে নবী (সাঃ) বললেন, পুল সিরাতের উপর। (সাবেক উদ্ধৃতি) এক ইহুদীর প্রশ্নের উত্তরে নবী (সাঃ) বলেছিলেন, ‘‘সেই দিন লোকেরা পুলের নিকট অন্ধকারে অবস্থান করবে। (মুসলিম, কিতাবুল হায়য)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৪. ইবরাহীম
১৪:৪৯ وَ تَـرَی الۡمُجۡرِمِیۡنَ یَوۡمَئِذٍ مُّقَرَّنِیۡنَ فِی الۡاَصۡفَادِ ﴿ۚ۴۹﴾

আর সে দিন তুমি অপরাধীদের দেখবে তারা শিকলে বাঁধা। আল-বায়ান

সেদিন তুমি অপরাধীদেরকে দেখবে শৃঙ্খলে তাদের হাত পা শক্ত করে বাঁধা। তাইসিরুল

সেদিন তুমি অপরাধীদেরকে দেখবে শৃংখলিত অবস্থায়। মুজিবুর রহমান

And you will see the criminals that Day bound together in shackles, Sahih International

৪৯. আর সেদিন আপনি অপরাধীদেরকে দেখেবেন পরস্পর শৃংখলিত অবস্থায়(১),

(১) অর্থাৎ যেদিন সমস্ত মানুষ মহান বিচারপতি আল্লাহর সামনে সম্পূর্ণরূপে প্রকাশিত হবে। তখন যদি আপনি অপরাধীদের দিকে দেখতেন যারা কুফরি ও ফাসাদ সৃষ্টি করে অপরাধ করে বেড়িয়েছে, তারা সেদিন শৃঙ্খলিত অবস্থায় থাকবে। [ইবন কাসীর] এখানে কয়েকটি অর্থ হতে পারে, একঃ কাফেরগণকে তাদের সমমনা সাথীদের সাথে একসাথে শৃংখলিত অবস্থায় রাখা হবে। [ইবন কাসীর] যেমন অন্য আয়াতে এসেছে, “(ফেরেশতাদেরকে বলা হবে,) একত্র কর যালিম ও তাদের সহচরদেরকে এবং তাদেরকে যাদের ইবাদাত করত তারা—” [সূরা আস-সাফফাত: ২২] আরও এসেছে, “আর যখন দেহে আত্মাসমূহ সংযোজিত হবে।” [সূরা আত-তাকওয়ীরঃ ৭] যাতে করে শাস্তি বেশী ভোগ করতে পারে। কেউ কারো থেকে পৃথক হবে না। পরস্পরকে কঠোর শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। দুইঃ তারা নিজেদের হাত ও পা শৃংখলিত অবস্থায় জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে থাকবে। [কুরতুবী] তিনঃ কাফের ও তাদের সাথে যে শয়তানগুলো আছে সেগুলোকে একসাথে শৃংখলিত করে রাখা হবে। [বাগভী; কুরতুবী] এমনও হতে পারে যে, সব কয়টি অর্থই এখানে উদ্দেশ্য।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪৯) সেদিন তুমি অপরাধীদেরকে দেখবে শিকল দ্বারা বাঁধা অবস্থায়।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৪. ইবরাহীম
১৪:৫০ سَرَابِیۡلُهُمۡ مِّنۡ قَطِرَانٍ وَّ تَغۡشٰی وُجُوۡهَهُمُ النَّارُ ﴿ۙ۵۰﴾

তাদের পোশাক হবে আলকাতরার* এবং আগুন তাদের চেহারাসমূহকে ঢেকে ফেলবে। আল-বায়ান

তাদের পোশাক হবে আলকাতরার আর আগুন তাদের মুখমণ্ডল আচ্ছন্ন করবে। তাইসিরুল

তাদের পোশাক হবে আলকাতরার এবং আগুন আচ্ছন্ন করবে তাদের মুখমণ্ডল। মুজিবুর রহমান

Their garments of liquid pitch and their faces covered by the Fire. Sahih International

* قطران হচ্ছে এমন আলকাতরা, যাতে দ্রুত আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠে।

৫০. তাদের জামা হবে আলকাতরার(১) এবং আগুন আচ্ছন্ন করবে তাদের চেহারাসমূহকে(২);

(১) কোন কোন ব্যাখ্যাকার বলেন, قطران এর অর্থ প্রচণ্ড গরম তামা। [ইবন কাসীর] কারও কারও নিকট “কাতেরান” শব্দটি আলকাতরা, গালা ইত্যাদির প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। যেগুলোতে সাধারণত আগুন বেশী প্রজ্জলিত হয়।

(২) এখানে বলা হচ্ছে যে, কাফেরদের মুখ আগুনে আচ্ছন্ন থাকবে। অন্যত্র আরো বলেছেনঃ “আগুন তাদের মুখমণ্ডল দগ্ধ করবে এবং তারা সেখানে থাকবে বীভৎস চেহারায়। [সূরা আল-মু'মিনূনঃ ১০৪] “হায়, যদি কাফিররা সে সময়ের কথা জানত যখন তারা তাদের মুখ ও পিছন দিক থেকে আগুন প্রতিরোধ করতে পারবে না এবং তাদেরকে সাহায্য করাও হবে না!” [সূরা আল-আম্বিয়াঃ ৩৯]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫০) তাদের জামা হবে আলকাতরার[1] এবং অগ্নি আচ্ছন্ন করবে তাদের মুখমন্ডল।

[1] যা দ্রুতদাহ্য; আগুনে সত্ত্বর জলে ওঠে। তা ছাড়া অগ্নি তাদের চেহারাকেও ঢেকে রাখবে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১০ পর্যন্ত, সর্বমোট ১২ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 পরের পাতা »