সূরাঃ আল-আ'রাফ | Al-A'raf | سورة الأعراف - আয়াত নং - ১২ - মাক্কী

৭ : ১২ قَالَ مَا مَنَعَکَ اَلَّا تَسۡجُدَ اِذۡ اَمَرۡتُکَ ؕ قَالَ اَنَا خَیۡرٌ مِّنۡهُ ۚ خَلَقۡتَنِیۡ مِنۡ نَّارٍ وَّ خَلَقۡتَهٗ مِنۡ طِیۡنٍ ﴿۱۲﴾

তিনি বললেন, ‘কিসে তোমাকে বাধা দিয়েছে যে, সিজদা করছ না, যখন আমি তোমাকে নির্দেশ দিয়েছি’? সে বলল, ‘আমি তার চেয়ে উত্তম। আপনি আমাকে আগুন থেকে সৃষ্টি করেছেন, আর তাকে সৃষ্টি করেছেন কাদামাটি থেকে’। আল-বায়ান

(আল্লাহ) বললেন, ‘আমি নির্দেশ দেয়ার পরেও কিসে তোকে সাজদাহ থেকে নিবৃত্ত রাখল?’ সে বলল, ‘আমি তার চেয়ে উত্তম, আমাকে সৃষ্টি করেছ আগুন থেকে আর তাকে সৃষ্টি করেছ কাদা থেকে।’ তাইসিরুল

তিনি (আল্লাহ) তাকে (ইবলীসকে) জিজ্ঞেস করলেনঃ আমি যখন তোকে সাজদাহ (আদমকে) করতে আদেশ করলাম তখন কোন বস্তু তোকে নত শির হতে নিবৃত্ত করল? সে উত্তরে বললঃ আমি তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ, আপনি আমাকে আগুন দ্বারা সৃষ্টি করেছেন, আর তাকে সৃষ্টি করেছেন কাদামাটি দ্বারা। মুজিবুর রহমান

[Allah] said, "What prevented you from prostrating when I commanded you?" [Satan] said, "I am better than him. You created me from fire and created him from clay." Sahih International

১২. তিনি বললেন, আমি যখন তোমাকে আদেশ দিলাম তখন কি তোমাকে নিবৃত্ত করল যে, তুমি সিজদা করলে না? সে বলল, আমি তার চেয়ে শ্ৰেষ্ঠ; আপনি আমাকে আগুন দিয়ে সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে কাদামাটি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন।(১)

(১) এ আয়াত থেকে প্রমাণিত হচ্ছে যে, ইবলীসকে আল্লাহ্ তা'আলা আগুন থেকে সৃষ্টি করেছেন। আর যদি ইবলীসকে সমস্ত জিন জাতির পিতা বলা হয়, তখন তো এ ব্যাপারে আর কোন কথাই থাকে না। কারণ অন্যান্য আয়াতেও জিন জাতিকে আগুন থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। আল্লাহ বলেন, “আর এর আগে আমরা সৃষ্টি করেছি জিনদেরকে অতি উষ্ণ নিধুম আগুন থেকে।” [সূরা আল-হিজর: ২৭] তাছাড়া অন্যত্র আরও স্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে, জিন জাতিকে ‘মারেজ’ থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর ‘মারেজ’ হচ্ছে, নিধুম অগ্নিশিখা। আল্লাহ বলেন, “এবং জিনকে সৃষ্টি করেছেন নিধুম আগুনের শিখা হতে।” [সূরা আর-রহমানঃ ১৫] [আদওয়াউল বায়ান]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১২) তিনি বললেন, ‘আমি যখন তোমাকে আদেশ দিলাম, তখন কিসে তোমাকে নিবৃত্ত করল যে, তুমি সিজদাহ করলে না?’[1] সে বলল, ‘আমি ওর (আদম) চেয়ে শ্রেষ্ঠ, তুমি আমাকে আগুন দ্বারা সৃষ্টি করেছ এবং ওকে সৃষ্টি করেছ কাদামাটি দ্বারা।’ [2]

[1] أَلاَّ تَسْجُدَ তে لا অতিরিক্ত। অর্থাৎ, أَنْ تَسْجُدَ (সিজদা করতে তোমাকে বাধা কে দিল?) অথবা কিছু শব্দ ঊহ্য আছে। অর্থাৎ, ‘‘কোন্ জিনিস তোমাকে বাধ্য করল সিজদা না করতে?’’ (ইবনে কাসীর, ফাতহুল ক্বাদীর) শয়তান ফিরিশতাদের জাতিভুক্ত ছিল না। বরং স্বয়ং কুরআনের বিবৃতি অনুযায়ী সে ছিল জ্বিন জাতির একজন। (সূরা কাহা্ফ ৫০) তবে আসমানে ফিরিশতাদের সাথে থাকার কারণে সেও আল্লাহর সিজদা করতে বলার সেই আদেশের আওতাভুক্ত ছিল, যা তিনি ফিরিশতাদেরকে করেছিলেন। আর এই কারণেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং তিরস্কারও করা হয়েছে। যদি সে এই আদেশে শামিল না থাকত, তাহলে না তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হত, আর না সে (আল্লাহর দরবার থেকে) বিতাড়িত হত।

[2] শয়তানের এই ওজর আরো অপরাধমূলক। যেমন, বলা হয় যে, পাপের জন্য ওজর পেশ করা আরো বড় পাপ। প্রথমতঃ তার এই ধারণাই ভুল যে, অধিক শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারীকে তার থেকে কম শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী ব্যক্তির সম্মান প্রদান করার নির্দেশ দেওয়া যেতে পারে না। কারণ, প্রকৃত জিনিস হল আল্লাহর নির্দেশ পালন। তাঁর নির্দেশের সামনে কে শ্রেষ্ঠ আর কে শ্রেষ্ঠ নয় এ প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা করাই হল তাঁর অবাধ্যতা। দ্বিতীয়তঃ সে উত্তম হওয়ার দলীল এটাই দিল যে, আমি আগুন থেকে সৃষ্ট, আর সে মাটি থেকে। কিন্তু সে এই মর্যাদা ও সম্মানের প্রতি ভ্রূক্ষেপও করল না যে, তাঁকে আল্লাহ তাঁর নিজ হাত দিয়ে সৃষ্টি করেছেন এবং নিজের পক্ষ থেকে তাঁর মধ্যে আত্মা দান করেছেন। দুনিয়ার কোন জিনিস কি এই সম্মানের মোকাবেলা করতে পারে? তৃতীয়তঃ স্পষ্ট উক্তির মোকাবেলায় সে কিয়াস (অনুমিতি) করল, যা কোন আল্লাহভীরু বান্দার কাজ হতে পারে না। এ ছাড়াও তার কিয়াস (অনুমিতি)ও বাতিল। আগুন মাটি থেকে কিভাবে উত্তম? আগুনের মধ্যে তেজি, উত্তাপ এবং দহন ক্ষমতা ছাড়া আর কি আছে? পক্ষান্তরে মাটির মধ্যে আছে স্থিরতা, দৃঢ়তা। এর মধ্যে আছে উদ্ভিদ-বৃদ্ধি, উৎপাদন এবং বস্তু পরিশুদ্ধ করণের যোগ্যতা। আর এ গুণগুলো আগুনের চেয়ে অবশ্যই উত্তম এবং বেশী উপকারীও। এই আয়াত থেকে জানা গেল যে, শয়তান সৃষ্টি হয়েছে আগুন থেকে। যেমন, হাদীসেও এসেছে যে, ‘‘ফেরেশতাকুল নূর থেকে, ইবলীস অগ্নিশিখা থেকে এবং আদম (আঃ)-কে মাটি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে।’’ (সহীহ মুসলিম, যুহ্দ অধ্যায়)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান