৫৭১৬

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির সূচনা ও নবী-রাসূলদের আলোচনা

৫৭১৬-[১৯] আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আমার মি’রাজের রাত্রিতে আমি মূসা আলায়হিস সালাম-এর সাক্ষাৎ পেয়েছি। বর্ণনাকারী বলেন, নবী (সা.) তার আকৃতি বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন, তিনি হালকা গড়নের কিছুটা কোঁকড়ানো চুলবিশিষ্ট, দেখতে যেন ’শানূয়াহ’ গোত্রের একজন লোক। তিনি আরো বলেছেন, আমি ’ঈসা আলায়হিস সালাম-এর সাক্ষাৎও পেয়েছি। তিনি ছিলেন মাঝারি গড়নের লালবর্ণবিশিষ্ট। মনে হয় যেন তিনি এইমাত্র হাম্মামখানা (গোসলখানা) হতে বের হয়েছেন। আর আমি ইবরাহীম আলায়হিস সালাম-কেও দেখেছি। তাঁর বংশধরদের মধ্যে আমিই সকলের তুলনায় বেশি তার সদৃশ। তিনি (সা.) বলেন, অতঃপর আমার সামনে দুটি পোয়ালা আনা হলো। একটিতে দুধ এবং অপরটিতে ছিল মদ। আমাকে বলা হলো, আপনি দুটির যেটি ইচ্ছা তুলে নিন। তখন আমি দুধের পেয়ালাটি তুলে নিলাম এবং তা পান করলাম। অতঃপর আমাকে বলা হলো, আপনাকে ফিতরাতের (সৃষ্ট স্বভাবের) পথ প্রদর্শন করা হয়েছে। জেনে রাখুন! আপনি যদি মদের পাত্রটি নিতেন, আপনার উম্মত পথভ্রষ্ট হয়ে যেত। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب بدءالخلق وَذِكْرِ الْأَنْبِيَاءِ عَلَيْهِمُ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ)

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَيْلَةً أُسْرِيَ بِي لَقِيتُ مُوسَى - فَنَعَتَهُ -: فَإِذَا رَجُلٌ مُضْطَرِبٌ رَجِلُ الشَّعْرِ كَأَنَّهُ مِنْ رِجَالِ شَنُوءَةَ وَلَقِيتُ عِيسَى رَبْعَةً أَحْمَرَ كَأَنَّمَا خَرَجَ مِنْ دِيمَاسٍ - يَعْنِي الْحَمَّامَ - وَرَأَيْتُ إِبْرَاهِيمَ وَأَنَا أَشْبَهُ وَلَدِهِ بِهِ قَالَ: فَأُتِيتُ بِإِنَاءَيْنِ: أَحَدُهُمَا لَبَنٌ وَالْآخَرُ فِيهِ خَمْرٌ. فَقِيلَ لِي: خُذْ أَيَّهُمَا شِئْتَ. فَأَخَذْتُ اللَّبَنَ فَشَرِبْتُهُ فَقِيلَ لِي: هُدِيتَ الْفِطْرَةَ أَمَا إِنَّكَ لَوْ أَخَذْتَ الْخَمْرَ غَوَتْ أمتك . مُتَّفق عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (3394) و مسلم (272 / 168)، (424) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

وعن ابي هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ليلة اسري بي لقيت موسى فنعته فاذا رجل مضطرب رجل الشعر كانه من رجال شنوءة ولقيت عيسى ربعة احمر كانما خرج من ديماس يعني الحمام ورايت ابراهيم وانا اشبه ولده به قال فاتيت باناءين احدهما لبن والاخر فيه خمر فقيل لي خذ ايهما شىت فاخذت اللبن فشربته فقيل لي هديت الفطرة اما انك لو اخذت الخمر غوت امتك متفق عليهمتفق علیہ رواہ البخاری 3394 و مسلم 272 168 424 ۔متفق عليه

ব্যাখ্যা: (دِيمَاسٍ) শব্দটির (د) হরফে যের এবং যবর দিয়ে পড়া যায়। অর্থ: গোসলখানা, গর্ত, চুলা। তবে এখানে শব্দটি গোসলখানা অর্থে এসেছে বলে বর্ণনাকারী নিজেই বলে দিয়েছেন। অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (সা.) এখানে ‘দীমাস’ বলে গোসলখানা উদ্দেশ্য নিয়েছেন। “গোসল থেকে বের হয়েছেন বলে মনে হচ্ছে” দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, চেহারার উজ্জ্বলতা ও সজীবতা। গোসল থেকে বের হলে যেমন চেহারায় পানি থাকে তেমনি ‘ঈসা আলায়হিস সালাম-এর চেহারা ঘামের কারণে ভিজা ছিল অথবা চেহারার সৌন্দর্য ও উজ্জ্বলতা পানি টপকানোর মতো ঝলমল করছি।
(وَأَنَا أَشْبَهُ وَلَدِهِ بِهِ) “তার সন্তানদের মাঝে আমি অধিক সাদৃশ্য”। অর্থাৎ ইবরাহীম আলায়হিস সালাম সন্তানাদির মাঝে যার সাথে তাঁর সর্বাধিক সাদৃশ্যতা রয়েছে তিনি আমি। এখানে ইবরাহীম আলায়হিস সালাম-এর সন্তানাদি বলে তাঁর পুত্র ইসমাঈল আলায়হিস সালাম-এর বংশধরের সন্তান অথবা যে কোন সন্তান হতে পারে। ইবরাহীম আলায়হিস সালাম-এর সাথে রাসূল (সা.)-এর সাদৃশ্যতা বাহ্যিক আকৃতি এবং আত্মিক উভয় দিক থেকে হতে পারে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)

(هُدِيتَ الْفِطْرَةَ) অর্থাৎ মালায়িকাহ্ (ফেরেশতারা) রাসূল (সা.) -কে বলেছেন, আল্লাহ আপনাকে স্বভাবজাতের দিকে পথপ্রদর্শন করেছেন। আবার বাক্যটি দু'আ অর্থে হতে পারে। অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা আপনাকে স্বভাবজাতের দিকে পথ নির্দেশ করুন।
কাযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, ফিতরাত দ্বারা উদ্দেশ্য হলো মানুষের ঐ মৌলিক স্বভাব যার ওপর আল্লাহ তাকে সৃষ্টি করেছেন। ফিতরাতের বৈশিষ্ট্য হলো ঐ সকল জিনিস থেকে বিমুখ থাকা যাতে ধ্বংস রয়েছে। যেমন মদ যা জ্ঞানকে বিপর্যস্ত করে। কল্যাণের দিকে আহ্বানকারী জ্ঞান নষ্ট করে এমন বস্তু পান করতে বারণ করা একটি স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য। সাথে সাথে যার মাঝে কল্যাণ রয়েছে এবং যা সর্বোত্তম খাদ্য তার দিকে ঝুকা স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য। স্বভাবজাত এই বৈশিষ্ট্যের আলোকে রাসূল (সা.) মদ গ্রহণ না করে দুধ গ্রহণ করেছেন।
(غَوَتْ أمتك) “তোমার উম্মাত ভ্রষ্ট হয়ে যেত” এটাও এক ধরনের ভ্রষ্টতা যা মদ পান করলে মানুষ সেই ভ্রষ্টতায় পতিত হয়। কেননা তিনি মদ পান করলে তার উম্মত মদ পান করত এবং এর ক্ষতির শিকার হত। “মদ গ্রহণ করলে আপনি ভ্রষ্ট হতেন”’ না বলে আপনার উম্মাত ভ্রষ্ট হয়ে যেত বলার কারণ হলো, তিনি মাসূম ও আল্লাহ তা'আলা কর্তৃক পরিচালিত। তাই তাঁর ভ্রষ্ট হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই এবং ভ্রষ্টতাকে তার দিকে সম্পৃক্ত করা মানায় না। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৮: সৃষ্টির সূচনা ও কিয়ামতের বিভিন্ন অবস্থা (كتاب أَحْوَال الْقِيَامَة وبدء الْخلق)