৫৭০৪

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির সূচনা ও নবী-রাসূলদের আলোচনা

৫৭০৪-[৭] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: ইবরাহীম আলায়হিস সালাম তিনবার ছাড়া আর কখনো মিথ্যা বলেননি। এর মধ্যে দু’বার ছিল শুধু আল্লাহ তা’আলার (সত্তার ক্ষেত্রে) জন্য। যেমন- তিনি বলেছেন, ’আমি অসুস্থ’ এবং তার অপর কথাটি হলো, বরং তাদের এই বড় মূর্তিটিই এটা করেছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, একদিন ইবরাহীম আলায়হিস সালাম ও তাঁর স্ত্রী সারা এক অত্যাচারী শাসনকর্তার এলাকায় (মিসরে) এসে পৌছলেন। শাসনকর্তাকে খবর দেয়া হলো যে, এখানে একজন লোক এসেছে, তার সাথে আছে অতি সুন্দরী এক রমণী। রাজা তখন ইবরাহীম আলায়হিস সালাম -এর কাছে (লোক) পাঠাল। সে তাঁকে প্রশ্ন করল, এই মহিলাটি কে? ইবরাহীম আলায়হিস সালাম জবাব দিলেন, আমার দীনী ভগ্নি। অতঃপর ইবরাহীম আলায়হিস সালাম সারার কাছে এসে বললেন, হে সারা! যদি এই যালিম জানতে পারে যে, তুমি আমার স্ত্রী তাহলে সে তোমাকে আমার কাছে থেকে বলপূর্বক ছিনিয়ে নেবে। অতএব যদি সে তোমাকে প্রশ্ন করে, তখন বলে দেবে তুমি আমার বোন। মূলত তুমি আমার দীনী বোন। প্রকৃত আমি এবং তুমি ছাড়া এই জমিনের উপর আর কোন মুমিন নেই। রাজা এবার সারা’র নিকট (তাকে আনার জন্য) লোক পাঠাল। তাকে উপস্থিত করা হলো। অন্যদিকে ইবরাহীম আলায়হিস সালাম সালাত আদায় করার জন্য দাঁড়িয়ে গেলেন। অতঃপর সারা যখন তার কাছে প্রবেশ করলেন তখন রাজা তাকে ধরার জন্য হাত বাড়াল, তখনই সে আল্লাহর ক্রোধে পাকড়াও হলো। অন্য বর্ণনায় রয়েছে- তার দম বন্ধ হয়ে গেল, এমনকি জমিনে পা মারতে লাগল। অত্যাচারী (অবস্থা বেগতিক দেখে সারাকে) বলল, আমার জন্য আল্লাহর কাছে দু’আ কর, আমি তোমার ক্ষতি করব না। তখন সারা (তার জন্য) আল্লাহর কাছে দু’আ করলেন। ফলে সে মুক্তি পেল। অতঃপর সে দ্বিতীয়বার তাঁকে ধরার জন্য হাত বাড়াল। তখন সে আগের মতো কিংবা আরো কঠিনভাবে পাকড়াও হলো। এবারও সে বলল, আমার জন্য আল্লাহর কাছে দু’আ কর, আমি তোমার কোন অকল্যাণ করব না। অতএব সারা আবারও আল্লাহর কাছে দু’আ করলেন। ফলে সে মুক্তি পেয়ে গেল। তখন সে রাজা তার একজন দারোয়ানকে ডেকে বলল, তোমরা তো আমার কাছে কোন মানুষকে আননি; বরং তোমরা আমার কাছে এনেছ একজন শয়তানকে। এরপর সে সারার সেবার জন্য ’হাজেরা (নামে একটি রমণী)-কে দান করল। অতঃপর সারা ইবরাহীম আলায়হিস সালাম -এর কাছে ফিরে আসলেন, তখনো তিনি দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছিলেন। (সালাতের মধ্যেই) হাতের ইশারায় সারাকে প্রশ্ন করলেন, ঘটনা কি হলো? সারা বললেন, আল্লাহ তা’আলা কাফিরের চক্রান্ত তারই বক্ষে পাল্টা নিক্ষেপ (নস্যাৎ) করেছেন। আর সে আমার সেবার জন্য ’হাজেরা’কে দান করেছে। আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হাদীসটি বর্ণনা করে বললেন, হে আকাশের পানির সন্তান! অর্থাৎ হে ’আরববাসীগণ! এই ’হাজেরাই তোমাদের আদি মাতা। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب بدءالخلق وَذِكْرِ الْأَنْبِيَاءِ عَلَيْهِمُ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ)

وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَمْ يَكْذِبْ إِبْرَاهِيمُ إِلَّا فِي ثَلَاثَ كَذَبَاتٍ: ثِنْتَيْنِ مِنْهُنَّ فِي ذَاتِ اللَّهِ قولُه (إِني سَقيمٌ) وقولُه (بلْ فعلَه كبيرُهم هَذَا) وَقَالَ: بَيْنَا هُوَ ذَاتَ يَوْمٍ وَسَارَةُ إِذْ أَتَى عَلَى جَبَّارٍ مِنَ الْجَبَابِرَةِ فَقِيلَ لَهُ: إِن هَهُنَا رَجُلًا مَعَهُ امْرَأَةٌ مِنْ أَحْسَنِ النَّاسِ فَأَرْسَلَ إِلَيْهِ فَسَأَلَهُ عَنْهَا: مَنْ هَذِهِ؟ قَالَ: أُخْتِي فَأَتَى سَارَةَ فَقَالَ لَهَا: إِنَّ هَذَا الْجَبَّارَ إِنْ يَعْلَمْ أَنَّكِ امْرَأَتِي يَغْلِبُنِي عَلَيْكِ فَإِنْ سألكِ فأخبِريهِ أنَّكِ أُختي فإِنكِ أُخْتِي فِي الْإِسْلَامِ لَيْسَ عَلَى وَجْهِ الْأَرْضِ مُؤْمِنٌ غَيْرِي وَغَيْرُكِ فَأَرْسَلَ إِلَيْهَا فَأُتِيَ بِهَا قَامَ إِبْرَاهِيمُ يُصَلِّي فَلَمَّا دَخَلَتْ عَلَيْهِ ذَهَبَ يَتَنَاوَلُهَا بِيَدِهِ. فَأُخِذَ - وَيُرْوَى فَغُطَّ - حَتَّى رَكَضَ بِرِجْلِهِ فَقَالَ: ادْعِي اللَّهَ لِي وَلَا أَضُرُّكِ فَدَعَتِ اللَّهَ فَأُطْلِقَ ثُمَّ تَنَاوَلَهَا الثَّانِيَةَ فَأُخِذَ مِثْلَهَا أَوْ أَشَدُّ فَقَالَ: ادْعِي اللَّهَ لِي وَلَا أَضُرُّكِ فَدَعَتِ اللَّهَ فَأُطْلِقَ فَدَعَا بَعْضَ حجَبتِه فَقَالَ: إِنَّكَ لم تأتِني بِإِنْسَانٍ إِنَّمَا أَتَيْتَنِي بِشَيْطَانٍ فَأَخْدَمَهَا هَاجَرَ فَأَتَتْهُ وَهُوَ قائمٌ يُصلي فأوْمأَ بيدِه مَهْيَمْ؟ قَالَتْ: رَدَّ اللَّهُ كَيْدَ الْكَافِرِ فِي نَحْرِهِ وَأَخْدَمَ هَاجَرَ قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ: تِلْكَ أُمُّكُمْ يَا بَنِي مَاءِ السَّمَاءِ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (2213 ، 3358) و مسلم (154 / 2371)، (6145) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

وعنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لم يكذب ابراهيم الا في ثلاث كذبات ثنتين منهن في ذات الله قوله اني سقيم وقوله بل فعله كبيرهم هذا وقال بينا هو ذات يوم وسارة اذ اتى على جبار من الجبابرة فقيل له ان ههنا رجلا معه امراة من احسن الناس فارسل اليه فساله عنها من هذه قال اختي فاتى سارة فقال لها ان هذا الجبار ان يعلم انك امراتي يغلبني عليك فان سالك فاخبريه انك اختي فانك اختي في الاسلام ليس على وجه الارض مومن غيري وغيرك فارسل اليها فاتي بها قام ابراهيم يصلي فلما دخلت عليه ذهب يتناولها بيده فاخذ ويروى فغط حتى ركض برجله فقال ادعي الله لي ولا اضرك فدعت الله فاطلق ثم تناولها الثانية فاخذ مثلها او اشد فقال ادعي الله لي ولا اضرك فدعت الله فاطلق فدعا بعض حجبته فقال انك لم تاتني بانسان انما اتيتني بشيطان فاخدمها هاجر فاتته وهو قاىم يصلي فاوما بيده مهيم قالت رد الله كيد الكافر في نحره واخدم هاجر قال ابو هريرة تلك امكم يا بني ماء السماء متفق عليهمتفق علیہ رواہ البخاری 2213 3358 و مسلم 154 2371 6145 ۔متفق عليه

ব্যাখ্যা: (لَمْ يَكْذِبْ إِبْرَاهِيمُ إِلَّا ثَلَاثَ) “ইবরাহীম আলায়হিস সালাম কেবল তিনটি মাত্র মিথ্যা বলেছেন।” আলাহ তা'আলার বিধান উম্মাতের কাছে পৌছানোর ক্ষেত্রে নবীরা কম বেশ সকল মিথ্যা থেকে পবিত্র। এ ব্যাপারে তারা কখনো মিথ্যার আশ্রয় নিতে পারেন না এবং কোন ধরনের মিথ্যা বলা তাদের জন্য সম্ভব নয় বলে সবাই একমত। তবে দুনিয়ার সাথে জড়িত অন্যান্য তুচ্ছ বিষয়ে মিথ্যা বলতে পারেন, নাকি তারা মিথ্যা থেকে মুক্ত; এ ব্যাপারে পূর্ববর্তী পরবর্তী ‘আলিমদের মাঝে প্রসিদ্ধ দু'টি মত রয়েছে।
কাযী ‘ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, বিশুদ্ধ মত হলো, আল্লাহ তা'আলার বিধানে তাবলীগের ক্ষেত্রে নবীদের থেকে মিথ্যা সংঘটিত হওয়া কল্পনা করা যায় না। আমরা নবীদের বেলায় তাদের থেকে সগীরাহ গুনাহ সংঘটিত হওয়া অসম্ভব বা সম্ভব যে মতেরই প্রবক্তা হই না কেন, তাবলীগের ক্ষেত্রে তারা কখনো মিথ্যা বলতে পারেন না। চাই মিথ্যা কম হোক বা বেশি। কেননা নুবুওয়্যাতের মর্যাদা এ সব কিছুর উর্ধ্বে। আর নবীদের বেলায় মিথ্যার সম্ভাবনা মানেই তাদের কথার উপর থেকে আস্থা হারিয়ে যাওয়া। কিন্তু এখানে নবী (সা.) -এর উক্তি “ইবরাহীম কেবল তিনটি মিথ্যা বলেছেন। দু’টি আল্লাহ তা'আলার সত্তার ক্ষেত্রে আর একটি তার স্ত্রী সারার ক্ষেত্রে” এর অর্থ হলো, উল্লেখিত মিথ্যা সম্বোধিত ব্যক্তি ও শ্রোতার বুঝার উপর নির্ভর করে। কেননা শ্রোতার কাছে এগুলো সাধারণত মিথ্যা। কিন্তু বাস্তবতার আলোকে এগুলো নিন্দিত মিথ্যার আওতায় পড়ে না। এগুলো নিন্দিত মিথ্যা না হওয়ার দুটি কারণ:
এক: এগুলো ইঙ্গিতবহ বাক্য যা একটি বলে অন্যদিকে ইঙ্গিত করা হয়। অতএব তিনি সারা ইসলামের দিক থেকে বোন বলেছেন এবং এটা বিশুদ্ধ।
দুই: যদি এটি তাওরিয়াহ বা ইঙ্গিতবহ কথা না হয়ে মিথ্যা হয় তবুও তা বৈধ; কেননা এটা যালিমের যুলম প্রতিহত করার কারণে ছিল। আর ফুকাহায়ে কিরাম এই ব্যাপারে একমত যে, কোন যালিম এসে যদি কোন গোপন লোকের সন্ধান করে তাকে হত্যা বা তার মাল ছিনিয়ে নিতে চায়; এমতাবস্থায় যার কাছে সন্ধান চেয়েছে তার জন্য ওয়াজিব হলো সেই লোকের খবর গোপন রাখা এবং তার সন্ধান জানা আছে বলে অস্বীকার করা। এই মিথ্যা বৈধ। এমনকি এমতাবস্থায় মিথ্যা বলা ওয়াজিব। অতএব নবী (সা.) মূলত এখানে এই সতর্ক করছেন যে, এগুলো ঢালাওভাবে নিন্দিত মিথ্যার অন্তর্ভুক্ত নয়।

মাযিরী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, কেউ কেউ এই বাক্যগুলোর ব্যাখ্যা দিয়েছেন এবং এগুলো মিথ্যা হওয়া থেকে বের করেছেন। অথচ রাসূলুল্লাহ (সা.) যে বাক্যগুলোর বেলায় মিথ্যা শব্দের ব্যবহার করেছেন সেগুলোকে মিথ্যা বলতে বারণ করার কোন অর্থ নেই। আমি [ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ)] বলি, এই বাক্যগুলোর উপর মিথ্যার প্রয়োগ করতে বারণ করা যাবে না; কেননা এগুলোর ব্যাপারে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে এবং হাদীসে এগুলোকে মিথ্যা বলা হয়েছে। তবে এগুলোর ব্যাখ্যা দেয়াও শুদ্ধ, ব্যাখ্যা করতে কোন বাধা নেই।

‘উলামাগণ বলেন, যে মিথ্যা ‘সারার’ বেলায় বলা হয়েছে সেটি আল্লাহ তা'আলার মর্যাদা রক্ষার ক্ষেত্রেও বিবেচ্য; কেননা এই মিথ্যা এক যালিম কাফিরের যুলম ও অশ্লীলতা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বলা হয়েছে। সহীহ মুসলিম ছাড়া অন্যান্য হাদীসের কিতাবে দীর্ঘ ব্যাখ্যাসহ এসেছে। তবে কেবল প্রথম দু'টিকে আল্লাহ তা'আলার জন্য বলার কারণ হলো, তৃতীয়টি আল্লাহ তা'আলার জন্য তারপরও এখানে নিজেরও কিছু লাভের অংশ রয়েছে। আর উলামায়ে কিরাম ইবরাহীম আলায়হিস সালাম -এর উক্তি (إِني سَقيمٌ) “আমি অসুস্থ”-এর ব্যাখ্যায় বলেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, আমি অসুস্থ হয়ে পড়ব। আর মানুষ সর্বদা অসুস্থতার সম্মুখীন। তাই এটা বলে তিনি তাদের সাথে তাদের মেলায় না যাওয়া এবং তাদের বাতিল ও কুফরী কাজে উপস্থিত না হওয়ার একটি ওযর পেশ করেছেন। কেউ কেউ বলেন, সে সময় তিনি কিছুটা জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন।

আর ইবরাহীম আলায়হিস সালাম -এর উক্তি (بلْ فعلَه كبيرُهم) “বরং তাদের বড়জন এটি করেছে।” এর ব্যাখ্যায় কুতায়বাহ্ (রহিমাহুল্লাহ) ও একদল ‘আলিম বলেন, এখানে বড় করেছে এটাকে একটি কাজের শর্তসহ উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ তারা কথা বলতে পারলে তাদের বড় জন এটি করেছে। অতএব প্রকৃতপক্ষে এগুলো ঢালাও মিথ্যা নয়। তারপরও বাহ্যত দৃষ্টিতে মিথ্যা বলে মনে হয়, তাই রাসূল (সা.) এগুলো মিথ্যা বলে আখ্যা দিয়েছেন যা পূর্বে বলা হয়েছে। (ইমাম নবাবীর ব্যাখ্যাগ্রন্থ)

(فإِنكِ أُخْتِي فِي الْإِسْلَامِ) “নিশ্চয় ইসলামে তুমি আমার বোন”। এটা বলে নিশ্চয় ইবরাহীম আলায়হিস সালাম তাকে বুঝিয়ে দিলেন যে, তুমি আমার বোন বলা মিথ্যা নয়। আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এখানে (اِنَّمَا الۡمُؤۡمِنُوۡنَ اِخۡوَۃٌ) আয়াতের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে, অর্থাৎ “নিশ্চয় মু'মিনরা তো পরস্পর ভাই ভাই”- (সূরা আল হুজুরাত ৪৯ : ১০)। অর্থাৎ ঈমানের বন্ধন আমাকে আর তোমাকে ভ্রাতৃত্বে আবদ্ধ করেছে। ভ্রাতৃত্বের এই বন্ধনে পৃথিবীর বুকে এখন আমি ও তুমি ছাড়া কেউ নেই। কেননা এখন ভূখণ্ডে আমি আর তুমি ছাড়া কোন ঈমানদার নেই।
এখানে একটি আপত্তি এই যে, লূত আলায়হিস সালাম তখন ছিলেন এবং তিনি তাদের সাথে ঈমানে শরীক ছিলেন। এর উত্তর এই দেয়া যেতে পারে যে, ইবরাহীম-এর কথা ‘এখন ভূখণ্ডে’ এর দ্বারা পৃথিবী উদ্দেশ্য নয়। বরং কেবল তার এলাকা। আর এই ঘটনার সময় লুত আলায়হিস সালাম সেখানে ছিলেন না।

(قَامَ إِبْرَاهِيمُ يُصَلِّي) অর্থাৎ ইবরাহীম আলায়হিস সালাম সালাত আদায় করতে দাঁড়িয়ে গেলেন। কেননা বিপদের সময় ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলার সাহায্য চাওয়ার কথা বলা হয়েছে। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেন (وَ اسۡتَعِیۡنُوۡا بِالصَّبۡرِ وَ الصَّلٰوۃِ ؕ) “তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য কামনা করো”- (সূরাহ আল-বাকারা ২ : ৪৫)।
রাসূলুল্লাহ (সা.) -ও কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তার সামনে আসলে তিনি সালাতের আশ্রয় নিতেন। (সুনানু আবূ দাউদ হা. ১১২৪)
(ذَهَبَ يَتَنَاوَلُهَا بِيَدِهِ. فَأُخِذَ) অর্থাৎ যালিম যখন তাকে হাত দিয়ে স্পর্শ করতে গেল তখন আটকে পড়ল বা তার হাত বা পুরো শরীর অবশ হয়ে গেল। তাই সে তার কোন ধরনের সম্ভ্রমহানী করতে পারল না।
(وَيُرْوَى فَغُطَّ) অর্থাৎ কোন বর্ণনায় (أُخِذَ) শব্দের স্থলে (غط) শব্দ রয়েছে। ইবনু হাজার (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, অর্থাৎ তার শ্বাসরুদ্ধ হয়ে গেল। শাসরুদ্ধ হয়ে সে মাটিতে আছাড় খেয়ে পড়ল এবং তার ‘গাতীত’ তথা নাকডাক আরম্ভ হলো। (ফাতহুল বারী হা. ৬/৩৯৩)
(ادْعِي اللَّهَ لِي وَلَا أَضُرُّكِ) “আল্লাহর কাছে আমার জন্য দু'আ করো আমি তোমার ক্ষতি করব না” অর্থাৎ আমার মুক্তির জন্য দু'আ করো।
(إِنَّكَ لم تأتِني بِإِنْسَانٍ إِنَّمَا أَتَيْتَنِي بِشَيْطَانٍ) কেননা আমি তার সাথে পেরে উঠছি না। বার বার সে আমাকে আছাড় মারছে এবং আমাকে মেরে ফেলতে চাচ্ছে। অতএব নিশ্চয় এটি শয়তান। সে মানব হলে আমি তার সাথে পেরে উঠতাম।
ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, শয়তান বলে তার উদ্দেশ্য হলো অবাধ্য জিন্। কেননা তারা জিনকে কঠিন ভয় করত এবং জিনের বিষয় খুব বড় করে দেখত। অস্বাভাবিক কিছু দেখলেই তারা এগুলোকে জিনের কারসাজি মনে করত।
(فَأَخْدَمَهَا هَاجَرَ) “তার সেবায় হাজেরা (রমণী) দিয়ে দিলো।” আপত্তিকর কর্মে ব্যর্থ আবার এমন পরিস্থিতির শিকার হওয়ার পর হাজেরাকে উপঢৌকন হিসেবে দেয়ার কারণ হলো, সারাকে ধরতে গিয়ে এমন
পরিস্থিতির শিকার হওয়ায় সে সারার বিষয়টিকে বড় করে দেখেছে এবং তাকে সম্মানিত এবং আল্লাহর কাছে সে একজন প্রিয় বলে বুঝতে পেরেছে। অথবা সারার শ্লীনতাহানীর চেষ্টা করার কারণে তার অন্তরে ভয়ের সঞ্চার হলে এর ক্ষতিপূরণ স্বরূপ হাজেরাকে দিয়েছে, যাতে তার মন রক্ষা করতে পারে এবং সারা তার কোন ক্ষতি না করেন। (ফাতহুল বারী হা, ৬/৩৯৩, মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
(فأوْمأَ بيدِه مَهْيَمْ) অর্থাৎ তিনি সালাতের ভিতর হাতের ইশারায় তাকে বললেন, (مَهْيَمْ) অর্থাৎ- কী অবস্থা? শব্দটি মূল ইয়ামানী। এর দ্বারা কারো অবস্থা জানতে প্রশ্ন করা হয়। (মিরকাতুল মাফাতীহ)।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৮: সৃষ্টির সূচনা ও কিয়ামতের বিভিন্ন অবস্থা (كتاب أَحْوَال الْقِيَامَة وبدء الْخلق)