৫৬৯৪

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - জান্নাত ও জাহান্নামের সৃষ্টি

৫৬৯৪-[১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: জান্নাত ও জাহান্নাম উভয়ে (তাদের রবের কাছে) অভিযোগ করল। জাহান্নাম বলল, ব্যাপার কি? আমাকে শুধু অহংকারী ও স্বৈরাচারীদের জন্য ধার্য করা হয়েছে? আর জান্নাত বলল, ব্যাপার কি? আমার মধ্যে শুধুমাত্র দুর্বল, নিম্নস্তরের ও বোকা লোকেরাই প্রবেশ করবে? তখন আল্লাহ তা’আলা জান্নাতকে বললেন, তুমি আমার রহমতের বিকাশ। অতএব আমার বান্দাদের হতে যাকে চাই, আমি তোমার দ্বারা তার প্রতি অনুগ্রহ করব। আর জাহান্নামকে বললেন, তুমি আমার শাস্তির বিকাশ। অতএব আমার বান্দাদের যাকে চাই, আমি তোমার দ্বারা তাকে ’আযাব ও শাস্তি দেব এবং তোমাদের প্রত্যেককে পরিপূর্ণ করা হবে।
অবশ্য জাহান্নাম তখন পর্যন্ত পূর্ণ হবে না; যতক্ষণ না আল্লাহ তা’আলা তাঁর পবিত্র পা তার মধ্যে স্থাপন করবেন। তখন জাহান্নাম বলবে, যথেষ্ট, যথেষ্ট, যথেষ্ট হয়েছে। এ সময় জাহান্নাম পরিপূর্ণ হয়ে যাবে এবং তার এক অংশকে আরেক অংশের সাথে চাপিয়ে দেয়া হবে। মূলত আল্লাহ তা’আলা তাঁর সৃষ্টিজীবের কারো প্রতি সামান্য পরিমাণও অন্যায় করবেন না। আর জান্নাতের ব্যাপার হলো, তার (খালি অংশ পূরণের) জন্য আল্লাহ তা’আলা নতুন নতুন সৃষ্টজীব সৃষ্টি করবেন। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول ( بَاب خلق الْجنَّة وَالنَّار)

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: تَحَاجَّتِ الْجَنَّةُ وَالنَّارُ فَقَالَتِ النَّارُ: أُوثِرْتُ بِالْمُتَكَبِّرِينَ وَالْمُتَجَبِّرِينَ وَقَالَتِ الْجَنَّةُ: فَمَا لِي لَا يَدْخُلُنِي إِلَّا ضُعَفَاءُ النَّاسِ وَسَقَطُهُمْ وَغِرَّتُهُمْ. قَالَ اللَّهُ تَعَالَى لِلْجَنَّةِ: إِنَّمَا أَنْتِ رَحْمَتِي أَرْحَمُ بِكِ مَنْ أَشَاءُ مِنْ عِبَادِي وَقَالَ لِلنَّارِ: إِنَّمَا أَنْتِ عَذَابِي أُعَذِّبُ بِكِ مَنْ أَشَاءُ مِنْ عِبَادِي وَلِكُلِّ وَاحِدَةٍ مِنْكُمَا مِلْؤُهَا فَأَمَّا النَّارُ فَلَا تَمْتَلِئُ حَتَّى يَضَعَ اللَّهُ رِجْلَهُ. تَقُولُ: قَطْ قَطْ قَطْ فَهُنَالِكَ تَمْتَلِئُ وَيُزْوَى بَعْضُهَا إِلَى بَعْضٍ فَلَا يَظْلِمُ اللَّهُ مِنْ خَلْقِهِ أَحَدًا وَأَمَّا الْجَنَّةُ فإِنَّ اللَّهَ ينشئ لَهَا خلقا . مُتَّفق عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (4850) و مسلم (36 / 2846)، (7173 و 7175) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

عن ابي هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم تحاجت الجنة والنار فقالت النار اوثرت بالمتكبرين والمتجبرين وقالت الجنة فما لي لا يدخلني الا ضعفاء الناس وسقطهم وغرتهم قال الله تعالى للجنة انما انت رحمتي ارحم بك من اشاء من عبادي وقال للنار انما انت عذابي اعذب بك من اشاء من عبادي ولكل واحدة منكما ملوها فاما النار فلا تمتلى حتى يضع الله رجله تقول قط قط قط فهنالك تمتلى ويزوى بعضها الى بعض فلا يظلم الله من خلقه احدا واما الجنة فان الله ينشى لها خلقا متفق عليهمتفق علیہ رواہ البخاری 4850 و مسلم 36 2846 7173 و 7175 ۔متفق عليه

ব্যাখ্যা: এ অধ্যায়টি জান্নাত ও জাহান্নাম সৃষ্টি করা হয়েছে এই বিষয়ে হাদীস আনা হবে যেমনটিই আহলুস সুন্নাহর মাযহাব, যদিও এর বিপরীত মত পোষণ করে মু'তাযিলা এবং জাহমিয়ারা কিন্তু তাদের এ বিষয়ে কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই।

(تَحَاجَّتِ الْجَنَّةُ وَالنَّارُ) ‘আল্লামাহ্ ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন যে, জান্নাত জাহান্নামের এই ঝগড়া বাস্তবে সরাসরি হয়েছে, কেননা আল্লাহ তা'আলা সমস্ত জড়বস্তুকে কথা বলাতে সক্ষম এটা কোন উদাহরণস্বরূপ কথা নয়।
মুল্লা আলী ক্বারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন যে, অবশ্যই ত্বীবী ঠিক বলেছেন; কেননা দুনিয়ার সমস্ত বস্তুর কথা আল্লাহ তা'আলা বুঝেন যা আমরা বুঝি না। যেমন আল্লাহ কুরআনে বিভিন্ন স্থানে বলেছেন যে, দুনিয়ার সমস্ত জড়বস্তু ও জীব বস্তু যা আছে সকলেই তাসবীহ পড়ে, সালাত আদায় করে এবং তারা আল্লাহকে ভয় করে, যা তোমরা বুঝ না। অতএব এখানে এ রকম ব্যাখ্যা করার কোন দরকার নেই যে, এটা একটা উদাহরণমাত্র। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)।

(سَقَطُهُمْ) যারা নিম্ন শ্রেণির হয় এবং অগ্রহণযোগ্য তুচ্ছ মানুষের নজরে পড়ে যায় বা ছোট নজরে দেখা হয়, তবে এটা অধিকাংশ মানুষের চোখে তারা এমন নগণ্য হবে, কিন্তু আল্লাহর নিকটে তারাই সবচেয়ে বড় হবে।
(وَغِرَّتُهُمْ) এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো যাদের দুনিয়াবী বিষয়ে গাফিলতি রয়েছে এবং কোন অভিজ্ঞতা নেই এবং কোন গুরুত্বও নেই। যেমন হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, দুনিয়াবী বিষয়ে অধিকাংশ জান্নাতবাসীরা হবে বোকা হাবা। আর কাফিরদের ব্যপারে আল্লাহ বলেছেন, “তারা দুনিয়াবী জীবনের বাহ্যিকটা খুব ভালো জানে অথচ তারা আখিরাত থেকে গাফিল”- (সূরা আর রূম ৩০ : ৭)। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; তুহফাতুল আহওয়াযী হা. ২৫৬১, শারহুন নাবাবী হা, ২৮৪৬)

(كُلِّ وَاحِدَةٍ مِنْكُمَا مِلْؤُهَا) অর্থাৎ তোমাদের প্রত্যেকের জন্যই ভর্তি করে দেয়া হবে কিন্তু জাহান্নাম সে ক্ষান্ত হবে না বরং বলতে থাকবে আরো কিছু আছে? যখন আল্লাহ তার পা দিবেন তখন জাহান্নাম বলবে, ব্যস ব্যস হয়েছে হয়েছে।
শারহুস্ সুন্নাতে আছে যে, এ হাদীসে কদম পা যা কিছু উল্লেখ করা হলো সবই আল্লাহর সিফাত, যার কোন ব্যাখ্যা করা যাবে না, বিশ্বাস করতে হবে এবং অবস্থা বর্ণনা করা যাবে না। আবার আল্লাহ তা'আলার হাত, পা আঙ্গুল, চোখ, এগুলোর অস্তিত্বও অস্বীকার করা যাবে না। যেমনটি মু'তাযিলা এবং জাহমিয়্যারা করে। (মিরকাতুল মাফাতীহ, ফাতহুল বারী হা. ৪৮৫০)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৮: সৃষ্টির সূচনা ও কিয়ামতের বিভিন্ন অবস্থা (كتاب أَحْوَال الْقِيَامَة وبدء الْخلق)