৫৫৭২

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - হাওযে কাওসার ও শাফাআতের বর্ণনা

৫৫৭২-[৭] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী (সা.) বলেছেন: কিয়ামতের দিন ঈমানদারদেরকে (হাশরের ময়দানে) আটক করে রাখা হবে। এমনকি তাতে তারা ভীষণ চিন্তাযুক্ত ও অস্থির হয়ে বলবে, যদি আমরা আমাদের প্রভুর কাছে কারো দ্বারা সুপারিশ করাই তাহলে হয়তো আমাদের বর্তমান অবস্থা থেকে মুক্তি লাভ করে আরাম পেতে পারি। তাই তারা আদম আলায়হিস সালাম-এর কাছে গিয়ে বলবে, আপনি সমস্ত মানবমণ্ডলীর পিতা। আল্লাহ স্বীয় হাতে আপনাকে সৃষ্টি করেছেন ও জান্নাতে বসবাস করতে দিয়েছিলেন, মালায়িকার (ফেরেশতাদের) দিয়ে সিজদাহ্ করিয়েছিলেন এবং সমস্ত জিনিসের নাম আপনাকে শিখিয়েছিলেন, আপনি আমাদের জন্য আপনার প্রভুর কাছে সুপারিশ করুন, যাতে তিনি আমাদেরকে এ কষ্টদায়ক স্থান হতে মুক্ত করে প্রশান্তি দান করেন। তখন আদম আলায়হিস সালাম বলবেন, আমি তোমাদের এ কাজের যোগ্য নই। নবী (সা.) বলেন, তখন তিনি গাছ থেকে (ফল) খাওয়ার গুনাহের কথা যা থেকে তাঁকে বারণ করা হয়েছিল, স্মরণ করবেন। (তিনি বলবেন,) বরং তোমরা পৃথিবীবাসীর জন্য প্রেরিত আল্লাহ তা’আলা সর্বপ্রথম নবী নূহ আলায়হিস সালাম-এর কাছে যাও।
অতএব তারা সকলে নূহ আলায়হিস সালাম-এর কাছে গেলে তিনি তাদেরকে বলবেন, আমি তোমাদের এ কাজের উপযুক্ত নই এবং সাথে সাথে তিনি তার ঐ গুনাহের কথা স্মরণ করবেন, অজ্ঞতাবশত নিজের ছেলেকে পানিতে না ডুবানোর জন্য স্বীয় প্রভুর কাছে যে প্রার্থনা করেছিলেন। তখন তিনি বলবেন, বরং তোমরা আল্লাহর খলীল ইবরাহীম আলায়হিস সালাম-এর কাছে যাও।

তিনি (সা.) বলেন, এবার তারা ইবরাহীম আলায়হিস সালাম-এর কাছে আসবে তখন তিনি বলবেন, আমি তোমাদের এ কাজের উপযুক্ত নই এবং তিনি তাঁর তিনটি মিথ্যা উক্তির কথা স্মরণ করে বলবেন, বরং তোমরা মূসা আলায়হিস সালাম-এর কাছে যাও। তিনি আল্লাহ তা’আলার এমন এক বান্দা যাকে আল্লাহ তাওরাত কিতাব দিয়েছেন। তার সাথে কথা বলেছেন এবং তাঁকে নৈকট্য দান করে হিকমার অধিকারী বানিয়েছেন। নবী (সা) বলেন, তখন সকলে মূসা (আঃ) -এর কাছে আসলে তিনি বলবেন, আমি তোমাদের এ কাজের উপযুক্ত নই। তিনি তখন সেই প্রাণনাশের গুনাহের স্মরণ করবেন, যা তার হাতে ঘটেছিল, বরং তোমরা আল্লাহর বান্দা ও রাসূল এবং তার কালিমাহ ও রূহ ’ঈসা আলায়হিস সালাম-এর কাছে যাও।

তিনি (সা.) বলেন, তখন তারা সকলে ’ঈসা আলায়হিস সালাম-এর কাছে আসবে। তিনি বলবেন, আমি তোমাদের এ কাজের উপযুক্ত নই। তোমরা বরং মুহাম্মাদ (সা.) -এর কাছে যাও। তিনি আল্লাহর এমন এক বান্দা, যাকে আল্লাহ তা’আলা তার আগের ও পরের সকল গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন। তিনি (সা.) বলেন, তারা আমার কাছে আসবে, তখন আমি আমার রবের কাছে তাঁর নিকট উপস্থিত হওয়ার অনুমতি প্রার্থনা করব, আমাকে তাঁর কাছে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হবে। আমি যখন তাকে দেখব, তখনই তাঁর উদ্দেশ্যে সিজদায় পড়ে যাব, আল্লাহ তা’আলা যতক্ষণ আমাকে চাবেন এ অবস্থায় রাখবেন। তারপর বলবেন, হে মুহাম্মাদ! মাথা উঠাও। আর বল, তোমার কথা শুনা হবে। তুমি সুপারিশ কর, তা গ্রহণ করা হবে। আর প্রার্থনা কর, যা চাবে দেয়া হবে।
তিনি (সা.) বলেন, তখন আমি মাথা উঠাব এবং আমার প্রভুর এমনভাবে প্রশংসা-স্তুতি বর্ণনা করব, যা তিনি সেই সময় আমাকে শিখিয়ে দেবেন। অতঃপর আমি শাফা’আত করব, কিন্তু এ ব্যাপারে আমার জন্য একটি সীমা নির্দিষ্ট করে দেয়া হবে। আমি তখন আল্লাহর কাছ থেকে উঠে আসব এবং ঐ নির্দিষ্ট সীমার লোকদেরকে জাহান্নামে থেকে বের করে জান্নাতে প্রবেশ করাব। তারপর আমি পুনরায় ফিরে এসে আমার রবের দরবারে তাঁর কাছে হাজির হওয়ার অনুমতি চাব, আমাকে অনুমতি দেয়া হবে। যখন আমি তাকে দেখব, তখনই তার উদ্দেশে সিজদায় পড়ে যাব এবং আল্লাহ তা’আলা যতক্ষণ চাইবেন আমাকে এ অবস্থায় থাকতে দেবেন।
তারপর বলবেন, হে মুহাম্মাদ! মাথা উঠাও। আর বল, তোমার কথা শুনা হবে। সুপারিশ কর, গ্রহণ করা হবে। আর তুমি প্রার্থনা কর, যাই চাবে, তা দেয়া হবে। তখন আমি মাথা উঠাব এবং আমার প্রভুর এমন প্রশংসা ও স্তুতি বর্ণনা করব, যা আমাকে তখন শিখিয়ে দেয়া হবে। এরপর আমি শাফা’আত করব, কিন্তু আমার জন্য এ ক্ষেত্রে একটি সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হবে। তখন আমি আমার প্রভুর নিকট থেকে বের হয়ে আসব এবং ঐ নির্দিষ্ট লোকগুলোকে জাহান্নাম হতে বের করে জান্নাতে প্রবেশ করাব।
তারপর তৃতীয়বার ফিরে এসে আমার প্রভুর কাছে উপস্থিত হওয়ার অনুমতি চাব। আমাকে তার কাছে উপস্থিত হওয়ার অনুমতি দেয়া হবে। যখন আমি তাকে (রবকে) দেখব, তখনই সিজদায় পড়ে যাব। আল্লাহর যতক্ষণ ইচ্ছা আমাকে এ অবস্থায় রেখে দেবেন। তারপর বলবেন, হে মুহাম্মাদ! মাথা উঠাও। বল, যা বলবে তা শুনা হবে। শাফা’আত কর, তোমার শাফা’আত গ্রহণ করা হবে। আর প্রার্থনা কর, যা প্রার্থনা করবে তা দেয়া হবে। তিনি (সা.) বলেন, তখন আমি মাথা তুলব এবং আমার প্রভুর এমন প্রশংসা-গুণকীর্তন করব, যা তিনি আমাকে সে সময় শিখিয়ে দেবেন। তিনি (সা.) বলেন, তারপর আমি শাফা’আত করব। এ ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলা আমার জন্য একটা সীমা নির্দিষ্ট করে দেবেন। তখন আমি সেই সান্নিধ্য থেকে বাইরে আসব এবং তথায় যেয়ে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে জান্নাতে প্রবেশ করাব। অবশেষে কুরআন যাদেরকে আটকে রাখবে অর্থাৎ যাদের জন্য কুরআনের ঘোষণা অনুযায়ী চিরস্থায়ী জাহান্নামবাসী নির্ধারিত হয়ে গেছে তারা ছাড়া আর কেউই জাহান্নামে থাকবে না।
বর্ণনাকারী আনাস (রাঃ) বলেন, অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কুরআনের এ আয়াত (عَسٰۤی اَنۡ یَّبۡعَثَکَ رَبُّکَ مَقَامًا مَّحۡمُوۡدًا) “আপনার প্রভু শীঘ্রই আপনাকে ’মাকামে মাহমূদে পৌছিয়ে দেবেন”- (সূরাহ্ বানী ইসরাঈল ১৭: ৭৯); তিলাওয়াত করে বললেন, এটাই সেই ’মাকামে মাহমূদ তোমাদের নবীকে যার অঙ্গীকার দেয়া হয়েছে। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب الْحَوْض والشفاعة )

وَعَنْ أَنَسٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: يُحْبَسُ الْمُؤْمِنُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حَتَّى يُهَمُّوا بِذَلِكَ فَيَقُولُونَ: لَوِ اسْتَشْفَعْنَا إِلَى رَبِّنَا فَيُرِيحَنَا مِنْ مَكَانِنَا فَيَأْتُونَ آدَمَ فَيَقُولُونَ: أَنْتَ آدَمُ أَبُو النَّاسِ خَلَقَكَ اللَّهُ بِيَدِهِ وَأَسْكَنَكَ جَنَّتَهُ وَأَسْجَدَ لَكَ مَلَائِكَتَهُ وَعَلَّمَكَ أَسْمَاءَ كُلِّ شَيْءٍ اشْفَعْ لَنَا عِنْدَ رَبِّكَ حَتَّى يُرِيحَنَا مِنْ مَكَانِنَا هَذَا. فَيَقُولُ: لَسْتُ هُنَاكُمْ. وَيَذْكُرُ خَطِيئَتَهُ الَّتِي أَصَابَ: أَكْلَهُ مِنَ الشَّجَرَةِ وَقَدْ نُهِيَ عَنْهَا - وَلَكِنِ ائْتُوا نُوحًا أَوَّلَ نَبِيٍّ بَعَثَهُ اللَّهُ إِلَى أَهْلِ الْأَرْضِ فَيَأْتُونَ نُوحًا فَيَقُولُ: لَسْتُ هُنَاكُمْ - وَيَذْكُرُ خَطِيئَتَهُ الَّتِي أَصَابَ: سُؤَالَهُ رَبَّهُ بِغَيْرِ عِلْمٍ - وَلَكِنِ ائْتُوا إِبْرَاهِيمَ خَلِيلَ الرَّحْمَنِ. قَالَ: فَيَأْتُونَ إِبْرَاهِيمَ فَيَقُولُ: إِنِّي لَسْتُ هُنَاكُمْ - وَيَذْكُرُ ثَلَاثَ كِذْبَاتٍ كَذَبَهُنَّ - وَلَكِنِ ائْتُوا مُوسَى عَبْدًا آتَاهُ اللَّهُ التَّوْرَاةَ وَكَلَّمَهُ وَقَرَّبَهُ نَجِيًّا. قَالَ: فَيَأْتُونَ مُوسَى فَيَقُولُ: إِنِّي لَسْتُ هُنَاكُمْ - وَيَذْكُرُ خَطِيئَتَهُ الَّتِي أَصَابَ قَتْلَهُ النَّفْسَ - وَلَكِنِ ائْتُوا عِيسَى عَبْدَ اللَّهِ وَرَسُولَهُ وَرُوحَ اللَّهِ وَكَلِمَتَهُ قَالَ: فَيَأْتُونَ عِيسَى فَيَقُولُ: لَسْتُ هُنَاكُمْ وَلَكِنِ ائْتُوا مُحَمَّدًا عبدا غفر اللَّهُ لَهُ ماتقدم مِنْ ذَنْبِهِ وَمَا تَأَخَّرَ . قَالَ: فَيَأْتُونِي فَأَسْتَأْذِنُ عَلَى رَبِّي فِي دَارِهِ فَيُؤْذَنُ لِي عَلَيْهِ فَإِذَا رَأَيْتُهُ وَقَعْتُ سَاجِدًا فَيَدَعُنِي مَا شَاءَ اللَّهُ أَنْ يَدَعَنِي فَيَقُولُ: ارْفَعْ مُحَمَّدُ وَقُلْ تُسْمَعْ وَاشْفَعْ تُشَفَّعْ وَسَلْ تُعْطَهْ . قَالَ: فَأَرْفَعُ رَأْسِي فأثني على رَبِّي بثناء تحميد يُعَلِّمُنِيهِ ثُمَّ أَشْفَعُ فَيَحُدُّ لِي حَدًّا فَأَخْرُجُ فَأُخْرِجُهُمْ مِنَ النَّارِ وَأُدْخِلُهُمُ الْجَنَّةَ ثُمَّ أَعُودُ الثَّانِيَةَ فَأَسْتَأْذِنُ عَلَى رَبِّي فِي دَارِهِ. فَيُؤْذَنُ لِي عَلَيْهِ فَإِذَا رَأَيْتُهُ وَقَعْتُ سَاجِدًا. فَيَدَعُنِي مَا شَاءَ اللَّهُ أَنْ يَدَعَنِي ثُمَّ يَقُولُ: ارْفَعْ مُحَمَّدُ وَقُلْ تُسْمَعْ وَاشْفَعْ تُشَفَّعْ وَسَلْ تُعْطَهْ. قَالَ: فَأَرْفَعُ رَأْسِي فَأُثْنِي عَلَى رَبِّي بِثَنَاءٍ وَتَحْمِيدٍ يُعَلِّمُنِيهِ ثُمَّ أَشْفَعُ فَيَحُدُّ لِي حَدًّا فَأَخْرُجُ فَأُخْرِجُهُمْ مِنَ النَّارِ وَأُدْخِلُهُمُ الْجَنَّةَ ثُمَّ أَعُودُ الثَّالِثَةَ فَأَسْتَأْذِنُ عَلَى رَبِّي فِي دَاره فيؤذي لِي عَلَيْهِ فَإِذَا رَأَيْتُهُ وَقَعْتُ سَاجِدًا فَيَدَعُنِي مَا شَاءَ اللَّهُ أَنْ يَدَعَنِي ثُمَّ يَقُولُ: ارْفَعْ مُحَمَّدُ وَقُلْ تُسْمَعْ وَاشْفَعْ تُشَفَّعْ وَسَلْ تُعْطَهْ . قَالَ: «فَأَرْفَعُ رَأْسِي فَأُثْنِي عَلَى رَبِّي بثناءوتحميد يُعَلِّمُنِيهِ ثُمَّ أَشْفَعُ فَيَحُدُّ لِي حَدًّا فَأَخْرُجُ فَأُخْرِجُهُمْ مِنَ النَّارِ وَأُدْخِلُهُمُ الْجَنَّةَ حَتَّى مَا يَبْقَى فِي النَّارِ إِلَّا مَنْ قَدْ حَبَسَهُ الْقُرْآنُ» أَيْ وَجَبَ عَلَيْهِ الْخُلُودُ ثُمَّ تَلَا هَذِه الْآيَة (عَسى أَن يَبْعَثك الله مقَاما مَحْمُودًا) قَالَ: «وَهَذَا الْمقَام المحمود الَّذِي وعده نَبِيكُم» مُتَّفق عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (6565) و مسلم (322 / 193)، (475) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)

وعن انس ان النبي صلى الله عليه وسلم قال يحبس المومنون يوم القيامة حتى يهموا بذلك فيقولون لو استشفعنا الى ربنا فيريحنا من مكاننا فياتون ادم فيقولون انت ادم ابو الناس خلقك الله بيده واسكنك جنته واسجد لك ملاىكته وعلمك اسماء كل شيء اشفع لنا عند ربك حتى يريحنا من مكاننا هذا فيقول لست هناكم ويذكر خطيىته التي اصاب اكله من الشجرة وقد نهي عنها ولكن اىتوا نوحا اول نبي بعثه الله الى اهل الارض فياتون نوحا فيقول لست هناكم ويذكر خطيىته التي اصاب سواله ربه بغير علم ولكن اىتوا ابراهيم خليل الرحمن قال فياتون ابراهيم فيقول اني لست هناكم ويذكر ثلاث كذبات كذبهن ولكن اىتوا موسى عبدا اتاه الله التوراة وكلمه وقربه نجيا قال فياتون موسى فيقول اني لست هناكم ويذكر خطيىته التي اصاب قتله النفس ولكن اىتوا عيسى عبد الله ورسوله وروح الله وكلمته قال فياتون عيسى فيقول لست هناكم ولكن اىتوا محمدا عبدا غفر الله له ماتقدم من ذنبه وما تاخر قال فياتوني فاستاذن على ربي في داره فيوذن لي عليه فاذا رايته وقعت ساجدا فيدعني ما شاء الله ان يدعني فيقول ارفع محمد وقل تسمع واشفع تشفع وسل تعطه قال فارفع راسي فاثني على ربي بثناء تحميد يعلمنيه ثم اشفع فيحد لي حدا فاخرج فاخرجهم من النار وادخلهم الجنة ثم اعود الثانية فاستاذن على ربي في داره فيوذن لي عليه فاذا رايته وقعت ساجدا فيدعني ما شاء الله ان يدعني ثم يقول ارفع محمد وقل تسمع واشفع تشفع وسل تعطه قال فارفع راسي فاثني على ربي بثناء وتحميد يعلمنيه ثم اشفع فيحد لي حدا فاخرج فاخرجهم من النار وادخلهم الجنة ثم اعود الثالثة فاستاذن على ربي في داره فيوذي لي عليه فاذا رايته وقعت ساجدا فيدعني ما شاء الله ان يدعني ثم يقول ارفع محمد وقل تسمع واشفع تشفع وسل تعطه قال فارفع راسي فاثني على ربي بثناءوتحميد يعلمنيه ثم اشفع فيحد لي حدا فاخرج فاخرجهم من النار وادخلهم الجنة حتى ما يبقى في النار الا من قد حبسه القران اي وجب عليه الخلود ثم تلا هذه الاية عسى ان يبعثك الله مقاما محمودا قال وهذا المقام المحمود الذي وعده نبيكم متفق عليهمتفق علیہ رواہ البخاری 6565 و مسلم 322 193 475 ۔متفق عليه

ব্যাখ্যা: আল্লাহ তা'আলা প্রত্যেক নবীকে দুনিয়াতে একটি করে দু'আ কবুলের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সেই সুযোগে প্রত্যেকেই নিজ নিজ সুবিধা ও চাহিদা মোতাবেক তা পূরণ করে নিয়েছেন; আমাদের নবী মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন, আমি আমার সেই সুযোগটি কিয়ামতের জন্য রেখে দিয়েছি সেটি হলো তার উম্মতের জন্য “শাফাআত”। কিয়ামতের দিন তিনি তা ব্যবহার করবেন, আল্লাহ তা'আলা তার সেই শাফাআত কবুল করবেন।
কিয়ামতের দিন কোন নবীই আল্লাহর কাছে যাওয়া, তার সাথে কথা বলা এবং উম্মাহর জন্য শাফাআতের সাহস করবেন না। কেবলমাত্র আমাদের নবীই আল্লাহর সাথে কথা বলবেন এবং শাফাআত করবেন, আর তার শাফা'আত কবুলও করা হবে।
প্রথমেই লোকেরা আদি পিতা আদম-এর কাছে যাবে, কেননা আল্লাহর কাছে তার বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। লোকেরা সেই মর্যাদাগুলো উল্লেখ করে তাকে আল্লাহর সাথে কথা বলা এবং তাদের জন্য সুপারিশের অনুরোধ করবে, কিন্তু তিনি আল্লাহ তা'আলার একটি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার কারণে এত ভীত এবং লজ্জিত হবেন যে, আল্লাহর কাছে যেতেই সাহস করবেন না। তিনি তার পরবর্তী নবীর নাম নিয়ে বলবেন, তোমরা তার নিকটে যাও। লোকেরা পর্যায়ক্রমে হাদীসে বর্ণিত নবীগণের নিকট যাবে কিন্তু প্রত্যেক নবীই ওযর পেশ করবেন, অতঃপর আমাদের নবীর নিকট বলার সাথে সাথে তিনি সম্মত হবেন এবং শাফা'আতের নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত আল্লাহর সমীপে সিজদায় পড়ে থাকবেন। এই সিজদায় পড়ে থাকার সময় হবে দীর্ঘ। হাদীসের ভাষায় রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন: (فَإِذَا رَأَيْتُهُ وَقَعْتُ سَاجِدًا فَيَدَعُنِي مَا شَاءَ اللَّهُ أَنْ يَدَعَنِي) “আমি যখন আল্লাহ তা'আলাকে দেখব তখন সিজদায় পড়ে যাব, তিনি আমাকে (এই সিজদার মধ্যে) যতক্ষণ ইচ্ছা ফেলে রাখবেন।"
এই দীর্ঘ সময় আল্লাহ তা'আলা তার সাথে কথাও বলবেন না এবং সিজদাহ্ থেকে মাথাও উঠাতে বলবেন না। সে দীর্ঘ সময় যে কত দীর্ঘ হবে তার কোন ইয়ত্তা নেই।
এরপর আল্লাহ তা'আলা তাকে মাথা উঠাতে বলবেন এবং তার চাওয়া পূরণের ও শাফা'আত গ্রহণের ওয়াদা দিবেন। সে মতে নবী (সা.) শাফা'আত করবেন এবং আল্লাহ তা'আলার দেয়া নির্দিষ্ট সংখ্যক জাহান্নামীকে জাহান্নাম থেকে উঠিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। এভাবে তিনি তিনবার আল্লাহর নিকট গিয়ে সিজদায পড়বেন এবং পূর্বের ন্যায় আল্লাহ তা'আলার অনুমতিসাপেক্ষে শাফা'আত করবেন। এ শাফা'আতে কেউ আর জাহান্নামে অবশিষ্ট থাকবে না কেবল কুরআন যাদের আটকিয়ে রেখেছে তারা ছাড়া অর্থাৎ যারা চিরস্থায়ী জাহান্নামী হিসেবে পূর্ব থেকে নির্ধারিত হয়ে গেছে। তারা ছাড়া জাহান্নামে আর কোন লোক বাকী থাকবে না, তারা হলো কাফির ও মুশরিক।

রাসুসুল্লাহ (সা.) -এর বাণী: “কিন্তু কুরআন কাদের আটকিয়ে রাখবে”-এর ব্যাখ্যা এটাও যে, আল কুরআন কিয়ামতের দিন আল্লাহর দরবারে বান্দার পক্ষে অথবা বিপক্ষে সাক্ষ্য দান করবে, সে সাক্ষ্যের ভিত্তিতে বান্দার জান্নাত ও জাহান্নাম নির্ভর করবে।
নবী (সা.) -এর শাফা'আতের এই একক মর্যাদাকেই আল্লাহ তা'আলার প্রতিশ্রুত মাকামে মাহমূদ নামে অভিহিত করা হয়। যেমন আল্লাহর বাণী, “সত্বর আপনার প্রতিপালক আপনাকে মাকামে মাহমূদ তথা প্রশংসিত স্থানে পৌছাবেন” (সূরা বানী ইসরাঈল ১৭:৭৯)
(মিরক্বাতুল মাফাতীহ, ফাতহুল বারী ১১খণ্ড, ৪৮৮ পৃ., হা. ৬৫৬৫, ইবনু মাজাহ ৩য় খণ্ড, ৫৪১ পৃ., হা. ৪৩১২) |


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৮: সৃষ্টির সূচনা ও কিয়ামতের বিভিন্ন অবস্থা (كتاب أَحْوَال الْقِيَامَة وبدء الْخلق)