৫৫৬৬

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - হাওযে কাওসার ও শাফাআতের বর্ণনা

কুরতুবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর দুটি হাওয থাকবে। একটি পুলসিরাতের পূর্বে অবস্থানের জায়গায়, অন্যটি থাকবে জান্নাতে। উভয় হাওযের নাম কাওসার। তাদের ভাষায় কাওসার অর্থ অধিক কল্যাণ। সঠিক কথা হলো হাওযের ব্যবস্থা হবে মীযানের পূর্বে। কারণ মানুষেরা কবর থেকে পিপাসার্ত হয়ে বের হবে। অতঃপর তারা নবীদের অবস্থানস্থলে হাওয থাকবে। আমি বলি, জামি’তে রয়েছে, হে নবী (সা.) আপনার জন্য হাওযে কাওসার রয়েছে। তারা গর্ব করে বলবে যে, কারা বেশি আগমন করেছে? আমি আশা করি যে, আমি তাদের মাঝে সর্বাধিক সংখ্যা নিয়ে আগমনকারী হব।
রাগিব (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, (الشَّفْعُ) বলা হয় কোন জিনিসকে অনুরূপ জিনিসের সাথে যুক্ত করা এখান থেকে (الشَّفَاعَةُ) নির্গত হয়েছে। আর তা বলা হয় অন্যকে সাহায্য করার জন্য তার সাথে যোগদান করা তার থেকে গোপন হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সাধারণের তুলনায় বেশি মর্যাদাবান ব্যক্তির যুক্ত হওয়া তার চাইতে কম মর্যাদার লোকের সাথে শাফা’আত সংঘটিত হবে কিয়ামতে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)



৫৫৬৬-[১] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: (মি’রাজের রাত্রে) জান্নাত ভ্রমণকালে অকস্মাৎ আমি একটি নহরের কাছে উপস্থিত হলাম, যার উভয় পার্শ্বে শূন্যগর্ভ মুক্তার গুম্বুজ সাজানো রয়েছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে জিবরীল! এটা কী? তিনি বললেন, এটাই সেই কাওসার যা আপনার প্রভু আপনাকে দান করেছেন। তার মাটি মিশকের মতো সুগন্ধময়। (বুখারী)

الفصل الاول (بَاب الْحَوْض والشفاعة )

عَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: بَيْنَا أَنَا أَسِيرُ فِي الجنَّةِ إِذا أَنا بنهر حافتاه الدُّرِّ الْمُجَوَّفِ قُلْتُ: مَا هَذَا يَا جِبْرِيلُ؟ قَالَ: الْكَوْثَرُ الَّذِي أَعْطَاكَ رَبُّكَ فَإِذَا طِينُهُ مِسْكٌ أذفر . رَوَاهُ البُخَارِيّ

رواہ البخاری (6581) ۔
(صَحِيح)

عن انس قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم بينا انا اسير في الجنة اذا انا بنهر حافتاه الدر المجوف قلت ما هذا يا جبريل قال الكوثر الذي اعطاك ربك فاذا طينه مسك اذفر رواه البخاريرواہ البخاری 6581 ۔صحيح

ব্যাখ্যা: রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর এই ভ্রমণ ছিল মি'রাজের রজনীতে যা সহীহুল বুখারীতে সূরাহ্ আল কাওসার-এর তাফসীরে বিদ্যমান রয়েছে। অবশ্য ইমাম দাউদী (রহিমাহুল্লাহ)-এর ধারণা এটা কিয়ামতে সংঘটিত হবে। তিনি বলেন, যদি এটা ঠিক হয় তবে বুঝা যাচ্ছে যে, নিশ্চয় হাওয এমন যাকে মানুষেরা জান্নাতে থাকা নদী ব্যতীত অন্য হাওযকে ছেড়ে আসবে। অথবা তারা জান্নাতের বাহিরে থেকে ভিতরে নহরকে দেখতে পাবে।
এ ব্যাখ্যা বিনা প্রয়োজনে অদ্ভুত কষ্টের নামান্তর। এটা বাদ দিয়ে বলা যায় যে, জান্নাতের বাহিরে থাকা হাওযটা বিস্তৃত হয়ে এসেছে জান্নাতের অভ্যন্তর থেকে। তাহলে এতে কোন জটিলতা থাকবে না।
শূন্যগর্ভ মোতির গম্বুজ পরিবেষ্টিত নহর দেখে রাসূলুল্লাহ (সা.) জিবরীল-কে জিজ্ঞেস করলেন, এটা কি?
আল্লাহ তা'আলা রাসূলুল্লাহ (সা.)- কে যে হাওযে কাওসার দান করেছেন যা সূরায়ে কাওসারে উল্লেখ হয়েছে জিবরীল সেদিকে ইশারা করে বললেন, এটা সেই নহর। আল্লাহ তা'আলা বলেন, “নিশ্চয় আমি আপনাকে কাওসার দান করেছি....।” (সূরাহ আল কাওসার)
‘কাওসার’ হলো প্রভূত কল্যাণ, এ কল্যাণ রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর বিশেষ মর্যাদা। রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর প্রতি আল্লাহ তা'আলার বিশেষ মর্যাদা হলো আল কুরআন, নুবুওয়্যাত ও রিসালাত, উম্মতের আধিক্যতা এবং অন্যান্য উচ্চ মর্যাদাসমূহ। যেমন মাকামে মাহমূদ, প্রশংসার দীর্ঘ পতাকা এবং হাওয, এসবই কাওসার শব্দের অন্তর্ভুক্ত।

এখানে উল্লেখ আছে, (فَإِذَا طِينُهُ مِسْكٌ أذفر) তার মাটি মিশকের ন্যায় সুঘ্রাণযুক্ত। কোন কোন বর্ণনায় (طِيبه)-এর পরিবর্তে (طِيبه) 'তার সুগন্ধি মিশকের ন্যায় উল্লেখ রয়েছে। ইমাম বায়হাকী (রহিমাহুল্লাহ) 'আবদুল্লাহ ইবনু মুসলিম তিনি আনাস (রাঃ)-এর সূত্রে (طِينُه)-এর পরিবর্তে (تُرَابُهُ) 'তার ধুলা উল্লেখ করেছেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ, ফাতহুল বারী ১১খণ্ড, ৫৩৩ পৃ., হা, ৬৫৮১)


(فَإِذَاطِيبُهُ) হুদবাহ সন্দেহে পড়েছেন সেটা (طِيب) হবে না (طِين) হবে? কিন্তু আবূল ওয়ালীদ সন্দেহাতীতভাবে বলেছেন যে, সেটা নূন সহকারে অর্থাৎ (طِين) হবে, এটাই নির্ভরযোগ্য। (ফাতহুল বারী হা. ৬৫৮১)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৮: সৃষ্টির সূচনা ও কিয়ামতের বিভিন্ন অবস্থা (كتاب أَحْوَال الْقِيَامَة وبدء الْخلق)