৫৪৭৬

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - কিয়ামতের পূর্বলক্ষণসমূহ এবং দাজ্জালের বর্ণনা

৫৪৭৬-[১৩] আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: এমন সময় দাজ্জালের আগমন ঘটবে যখন একজন মর্দে মুসলিম তার সামনে যাওয়ার জন্য রওয়ানা হবে। তখন অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত একদল লোক অর্থাৎ দাজ্জালের বাহিনীর সাথে তার সাক্ষাৎ ঘটবে। তারা প্রশ্ন করবে, তুমি কোথায় যেতে ইচ্ছা করছ? সে বলবে, ঐ ব্যক্তির নিকট যেতে চাই যে বের হয়েছে। তিনি (সা.) বলেন, তখন তারা লোকটিকে বলবে, তুমি কি আমাদের রবের (দাজ্জালের) প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করনি? সে বলবে, আমাদের প্রকৃত রব তো অজানা নন। তখন তারা বলবে, এ লোকটিকে হত্যা করে ফেল। তখন তারা পরস্পর বলবে, তোমাদের রব (দাজ্জালের) কি এই বলে নিষেধ করেনি যে, তার সামনে উপস্থিত না করা ছাড়া যেন কাউকে তোমরা হত্যা না কর? তখন তারা লোকটিকে দাজ্জালের কাছে নিয়ে আসবে। যখন সে মর্দে মুমিন দাজ্জালকে দেখবে, তখনই সে লোকেদেরকে উদ্দেশ্য করে বলবে, হে লোকসকল! এই তো সেই দাজ্জাল, যার সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) এ বলেছিলেন। তিনি (সা.) বলেন, এ কথা শুনে দাজ্জাল ঐ লোকটিকে মারাত্মক সাজা দেয়ার নির্দেশ করে বলবে, এটাকে শক্ত করে ধর এবং তার মাথায় জোরে আঘাত কর। তখন লোকটিকে এমনভাবে প্রহার করা হবে যে, তার পিঠ ও পেট চ্যাপ্টা হয়ে যাবে। তিনি (সা.) বলেন, তখন দাজ্জাল বলবে, তুমি কি এখনো আমার প্রতি ঈমান আনবে না? উত্তরে লোকটি বলবে, ’তুমিই তো মিথ্যুক মাসীহ! এবার দাজ্জাল লোটিকে করাত দ্বারা কর্তনের নির্দেশ দিবে। তখন সে মর্দে মু’মিনের মাথা হতে কর্তিত হবে, এমনকি তার পদদ্বয় পর্যন্ত দ্বিখণ্ডিত করা হবে। অতঃপর দাজ্জাল সে খণ্ডিত দুই টুকরার মাঝখান দিয়ে হেঁটে যাবে তারপর সে উক্ত খণ্ডকে লক্ষ্য করে বলবে, “তুমি দাঁড়িয়ে যাও’। এবার লোকটি জীবিত হয়ে সোজাভাবে দাঁড়িয়ে যাবে। অতঃপর দাজ্জাল তাকে বলবে, এখন কি তুমি আমার প্রতি ঈমান আনবে? উত্তরে সেই মর্দে মুমিন বলবে, এখন তো আমার বিশ্বাসের দৃঢ়তাই বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি (সা.) বলেন, অতঃপর সে মর্দে মু’মিন লোকেদেরকে আহ্বান করে বলবে, হে লোক সকল! তোমরা জেনে রাখ! এ দাজ্জাল এ যাবৎ আমার সাথে যা কিছু করেছে, আমার পরে আর কোন মানুষের সাথে তা করতে সক্ষম হবে না। তিনি (সা.) বলেন, এবার দাজ্জাল তাকে আবার যবাহ করতে উদ্যত হবে। কিন্তু লোকটির গর্দান ও বুকের মধ্যবর্তী স্থান তামায় পরিণত করে দেয়া হবে, ফলে সে তাকে হত্যা করতে সক্ষম হবে না। তিনি (সা.) বলেন, এবার দাজ্জাল তার হাত পা বেঁধে ফেলবে এবং তাকে আগুনের মধ্যে নিক্ষেপ করবে। উপস্থিত লোকেরা ধারণা করবে, দাজ্জাল তাকে আগুনের মধ্যে নিক্ষেপ করেছে, অথচ প্রকৃতপক্ষে তাকে জান্নাতের মধ্যে নিক্ষেপ করা হয়েছে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, এ মর্দে মু’মিনই হবে রাব্বুল আলামীনের কাছে সবচেয়ে বড় শহীদ ব্যক্তি। (মুসলিম)

الفصل الاول (بَابُ الْعَلَامَاتِ بَيْنَ يَدَيِ السَّاعَةِ وَذِكْرِ الدَّجَّالِ)

وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَخْرُجُ الدَّجَّالُ فَيَتَوَّجُهُ قِبَلَهُ رَجُلٌ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ فَيَلْقَاهُ الْمَسَالِحُ مَسَالِحُ الدَّجَّالِ. فَيَقُولُونَ لَهُ: أَيْنَ تَعْمِدُ؟ فَيَقُولُ: أَعْمِدُ إِلَى هَذَا الَّذِي خَرَجَ. قَالَ: فَيَقُولُونَ لَهُ: أَو مَا تبَارك وَتَعَالَى ؤمن بِرَبِّنَا؟ فَيَقُولُ: مَا بِرَبِّنَا خَفَاءٌ. فَيَقُولُونَ: اقْتُلُوهُ. فَيَقُولُ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ: أَلَيْسَ قَدْ نَهَاكُمْ رَبُّكُمْ أَنْ تَقْتُلُوا أَحَدًا دُونَهُ . قَالَ: فَيَنْطَلِقُونَ بِهِ إِلَى الدَّجَّالِ فَإِذَا رَآهُ الْمُؤْمِنُ قَالَ: يَا أَيُّهَا النَّاسُ هَذَا الدَّجَّالُ الَّذِي ذَكَرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ . قَالَ: فَيَأْمُرُ الدَّجَّال بِهِ فَيُشَبَّحُ. فَيَقُولُ: خُذُوهُ وَشُجُّوهُ فَيُوسَعُ ظَهْرُهُ وَبَطْنُهُ ضَرْبًا . قَالَ: فَيَقُول: أَوَ مَا تُؤْمِنُ بِي؟ قَالَ: فَيَقُولُ: أَنْتَ الْمَسِيحُ الْكَذَّابُ . قَالَ: «فيؤْمر بِهِ فَيْؤشَرُ بالمنشارِ مِنْ مَفْرِقِهِ حَتَى يُفَرَّقَ بَيْنَ رِجْلَيْهِ» . قَالَ: ثُمَّ يَمْشِي الدَّجَّالُ بَيْنَ الْقِطْعَتَيْنِ ثُمَّ يَقُولُ لَهُ: أتؤمنُ بِي؟ فَيَقُول: مَا ازْدَدْتُ إِلَّا بَصِيرَةً . قَالَ: ثُمَّ يَقُولُ: يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّهُ لَا يَفْعَلُ بَعْدِي بِأَحَدٍ مِنَ النَّاسِ . قَالَ: «فَيَأْخُذُهُ الدَّجَّالُ لِيَذْبَحَهُ فَيُجْعَلُ مَا بَيْنَ رَقَبَتِهِ إِلَى تَرْقُوَتِهِ نُحَاسًا فَلَا يَسْتَطِيع إِليه سَبِيلا» قَالَ: «فَيَأْخذهُ بِيَدَيْهِ وَرِجْلَيْهِ فَيَقْذِفُ بِهِ فَيَحْسِبُ النَّاسُ أَنَّمَا قَذَفَهُ إِلَى النَّارِ وَإِنَّمَا أُلْقِيَ فِي الْجَنَّةُ» فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «هَذَا أَعْظَمُ النَّاسِ شَهَادَةً عِنْدَ رَبِّ الْعَالَمِينَ» . رَوَاهُ مُسلم

رواہ مسلم (113 / 2938)، (7377) ۔
(صَحِيح)

وعن ابي سعيد الخدري قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يخرج الدجال فيتوجه قبله رجل من المومنين فيلقاه المسالح مسالح الدجال فيقولون له اين تعمد فيقول اعمد الى هذا الذي خرج قال فيقولون له او ما تبارك وتعالى ومن بربنا فيقول ما بربنا خفاء فيقولون اقتلوه فيقول بعضهم لبعض اليس قد نهاكم ربكم ان تقتلوا احدا دونه قال فينطلقون به الى الدجال فاذا راه المومن قال يا ايها الناس هذا الدجال الذي ذكر رسول الله صلى الله عليه وسلم قال فيامر الدجال به فيشبح فيقول خذوه وشجوه فيوسع ظهره وبطنه ضربا قال فيقول او ما تومن بي قال فيقول انت المسيح الكذاب قال فيومر به فيوشر بالمنشار من مفرقه حتى يفرق بين رجليه قال ثم يمشي الدجال بين القطعتين ثم يقول له اتومن بي فيقول ما ازددت الا بصيرة قال ثم يقول يا ايها الناس انه لا يفعل بعدي باحد من الناس قال فياخذه الدجال ليذبحه فيجعل ما بين رقبته الى ترقوته نحاسا فلا يستطيع اليه سبيلا قال فياخذه بيديه ورجليه فيقذف به فيحسب الناس انما قذفه الى النار وانما القي في الجنة فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم هذا اعظم الناس شهادة عند رب العالمين رواه مسلمرواہ مسلم 113 2938 7377 ۔صحيح

ব্যাখ্যা: (فَيَلْقَاهُ الْمَسَالِحُ) অতঃপর তার সাথে সাক্ষাৎ করবে একদল অস্ত্রধারী যুবক যারা সীমান্ত পাহারায় নিয়োজিত। তারা হবে দাজ্জালের সৈনিক।
(مَا بِرَبِّنَا خَفَاءٌ) অর্থাৎ সে তোমাদের ও আমাদের কারো সত্যিকার রব নয়। অথবা হে মু'মিন। সম্প্রদায়! সে তোমাদের রব্ নয়। এখানে অব্যয়টি না-বোধক অর্থাৎ তিনি ব্যতীত আমাদের নিকট আমাদের রবের কোন এমন গুণাবলি গোপন নেই, যেন আমরা তাকে বাদ দিয়ে তার নিকট যাব ও তার ওপর নির্ভর করব। সে রব না হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ হলো সে মাখলুক। আর কোন মাখলুকের মধ্যে রুবুবিয়্যাহ্ অথবা উলুহিয়্যার গুণ থাকতে পারে না। তাছাড়া সে হচ্ছে ত্রুটিযুক্ত এক চোখ অন্ধ আর আমাদের রবের কোন ত্রুটি নেই।
(فَيَأْخذهُ بِيَدَيْهِ وَرِجْلَيْهِ فَيَقْذِفُ بِهِ فَيَحْسِبُ النَّاسُ) অতঃপর দাজ্জাল তার উভয় হাত এবং পা ধরে ছুঁড়ে ফেলে দিবে তখন মানুষেরা ধারণা করবে তাকে জাহান্নামে ফেলে দিয়েছে। মূলত তাকে জান্নাতে ফেলা হবে। ভাষ্যকার বলেন, হয়তো তাকে দুনিয়ার কোন উদ্যানে ফেলা হবে। অথবা তাকে দাজ্জালের নিকট সংরক্ষিত জাহান্নামেই ফেলা হবে কিন্তু আল্লাহ সেটাকে জান্নাতে রূপান্তর করে দিবেন। যেমনভাবে অতীতে ইবরাহীম আলায়হিস সালাম-এর জন্য আগুনকে শীতল ও নিরাপদ শান্তিদায়ক করে দিয়েছিলেন। যেটাই ধরা হোক না কেন, উল্লেখিত প্রথমবার ছাড়া তার হাতে আর মৃত্যু সংঘটিত হবে না। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ হা. ৫৪৭৬, শারহুন নাবাবী ১৮/২৯৩৮)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৭: ফিতনাহ (كتاب الْفِتَن)