৫৪১০

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - যুদ্ধবিগ্রহ সম্পৰ্কীয়

৫৪১০-[১] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: কিয়ামত সংঘটিত হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত দুটি বৃহৎ দল পরস্পরে মারাত্মক যুদ্ধে লিপ্ত না হবে। এ উভয় দলের মধ্যে ভীষণ যুদ্ধ সংঘটিত হবে, অথচ তাদের মূল দাবি হবে এক অভিন্ন। আর যতক্ষণ পর্যন্ত প্রায় ত্রিশজন মিথ্যাবাদী দাজ্জালের আগমন না ঘটবে, যাদের প্রত্যেকেই নিজেকে আল্লাহর নবী বলে দাবি করবে। আর যতক্ষণ পর্যন্ত (দীনী) বিদ্যা উঠিয়ে নেয়া হবে। ভূমিকম্পের সংখ্যা বা পরিমাণ বেড়ে যাবে। সময়ের (পরিধি) নিকটবর্তী হয়ে আসবে। ফিতনার সূচনা ঘটবে। খুন-খারাবি বেড়ে যাবে। আর এমনকি তোমাদের মধ্যে ধন-সম্পদের এমন প্রাচুর্য দেখা দেবে যে, সম্পদশালী লোক ও ধন-সম্পদের মালিক চিন্তিত ও হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়বে এজন্য যে, কে তার সাদাকা গ্রহণ করবে? এমনকি যার কাছেই তা পেশ করা হবে বলে উঠবে, আমার এই সম্পদের কোন প্রয়োজন নেই।
আর যতক্ষণ না লোকজন সুউচ্চ দালান নির্মাণকার্যে একে অপরের প্রতিযোগিতা করবে। যতক্ষণ না এক ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির কবরের কাছ দিয়ে গমনকালে বলবে, হায়! আমি যদি এ স্থানে থাকতাম। আর যতক্ষণ না পশ্চিমদিক হতে সূর্য উদিত হবে। অতঃপর সূর্য যখন (পশ্চিমদিক হতে) উদিত হবে, তখন লোকেরা তা দেখার পর সকলেই ঈমান আনবে। কিন্তু সে সময় এমন হবে যে, তখনকার ঈমান কোন লোকের কাজে আসবে না। সে ব্যক্তি ইতোপূর্বে ঈমান গ্রহণ করেনি কিংবা ঈমানদার অবস্থায় কোন ভালো কাজ করেনি। আর কিয়ামত এমন অবস্থায় সংঘটিত হবে যে, দু’ ব্যক্তি (ক্রয়-বিক্রয়ের উদ্দেশে) একে অন্যের সম্মুখে কাপড় খুলবে, কিন্তু সে কাপড় ক্রয়-বিক্রয় করার কিংবা গুটিয়ে নেয়ারও সুযোগ পাবে না। আর কিয়ামত অবশ্যই সংঘটিত হবে এমতাবস্থায় যে, এক ব্যক্তি তার উষ্ট্রী দোহন করে দুগ্ধ নিয়ে আসবে, কিন্তু তা পান করারও সময় পাবে না। আর কিয়ামত অবশ্যই এমন অবস্থায় সংঘটিত হবে যে, এক ব্যক্তি তার চৌবাচ্চা ঠিকঠাক বা নির্মাণ করতে থাকবে, কিন্তু তাতে সে পানি পান করার সময় পাবে না। আর কিয়ামত এমন পরিস্থিতি ও পরিবেশে অবশ্যই সংঘটিত হবে যে, এক ব্যক্তি খাদ্যের লোকমা বা গ্রাস তার মুখ পর্যন্ত উত্তোলন করবে, কিন্তু সে তা খাওয়ার সুযোগ পাবে না। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب الْمَلَاحِمِ)

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم قا ل: لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تَقْتَتِلَ فِئَتَانِ عَظِيمَتَانِ تَكُونُ بَيْنَهُمَا مَقْتَلَةٌ عَظِيمَةٌ دَعَوَاهُمَا وَاحِدَةٌ وَحَتَّى يبْعَث دجالون كذابون قريب مِنْ ثَلَاثِينَ كُلُّهُمْ يَزْعُمُ أَنَّهُ رَسُولُ اللَّهِ وَحَتَّى يُقْبَضَ الْعِلْمُ وَتَكْثُرَ الزَّلَازِلُ وَيَتَقَارَبَ الزَّمَانُ وَيظْهر الْفِتَنُ وَيَكْثُرَ الْهَرْجُ وَهُوَ الْقَتْلُ وَحَتَّى يَكْثُرَ فِيكُمُ الْمَالُ فَيَفِيضَ حَتَّى يُهِمَّ رَبَّ الْمَالِ مَنْ يَقْبَلُ صَدَقَتَهُ وَحَتَّى يَعْرِضَهُ فَيَقُولُ الَّذِي يعرضه عَلَيْهِ: لَا أَرَبَ لِي بِهِ وَحَتَّى يَتَطَاوَلَ النَّاسُ فِي الْبُنْيَانِ وَحَتَّى يَمُرَّ الرَّجُلُ بِقَبْرِ الرَّجُلِ فَيَقُولُ: يَا لَيْتَنِي مَكَانَهُ وَحَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ مِنْ مَغْرِبِهَا فَإِذَا طَلَعَتْ وَرَآهَا النَّاسُ آمَنُوا أَجْمَعُونَ فَذَلِكَ حِينَ (لَا يَنْفَعُ نَفْسًا إِيمَانُهَا لَمْ تَكُنْ آمَنَتْ مِنْ قَبْلُ أَوْ كَسَبَتْ فِي إِيمَانِهَا خَيْرًا) وَلَتَقُومَنَّ السَّاعَةُ وَقَدْ نَشَرَ الرَّجُلَانِ ثَوْبَهُمَا بَيْنَهُمَا فَلَا يَتَبَايَعَانِهِ وَلَا يَطْوِيَانِهِ وَلَتَقُومَنَّ السَّاعَةُ وَقَدِ انْصَرَفَ الرَّجُلُ بِلَبَنِ لِقْحَتِهِ فَلَا يَطْعَمُهُ وَلَتَقُومَنَّ السَّاعَةُ وَهُوَ يُلِيطُ حَوْضَهُ فَلَا يَسْقِي فِيهِ وَلَتَقُومَنَّ السَّاعَةُ وَقَدْ رَفَعَ أُكْلَتَهُ إِلَى فِيهِ فَلَا يطْعمهَا . مُتَّفق عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (7121) و مسلم (248 / 157)، (396 و 2340 و 7256 و 7302) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)

عن ابي هريرة ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قا ل لا تقوم الساعة حتى تقتتل فىتان عظيمتان تكون بينهما مقتلة عظيمة دعواهما واحدة وحتى يبعث دجالون كذابون قريب من ثلاثين كلهم يزعم انه رسول الله وحتى يقبض العلم وتكثر الزلازل ويتقارب الزمان ويظهر الفتن ويكثر الهرج وهو القتل وحتى يكثر فيكم المال فيفيض حتى يهم رب المال من يقبل صدقته وحتى يعرضه فيقول الذي يعرضه عليه لا ارب لي به وحتى يتطاول الناس في البنيان وحتى يمر الرجل بقبر الرجل فيقول يا ليتني مكانه وحتى تطلع الشمس من مغربها فاذا طلعت وراها الناس امنوا اجمعون فذلك حين لا ينفع نفسا ايمانها لم تكن امنت من قبل او كسبت في ايمانها خيرا ولتقومن الساعة وقد نشر الرجلان ثوبهما بينهما فلا يتبايعانه ولا يطويانه ولتقومن الساعة وقد انصرف الرجل بلبن لقحته فلا يطعمه ولتقومن الساعة وهو يليط حوضه فلا يسقي فيه ولتقومن الساعة وقد رفع اكلته الى فيه فلا يطعمها متفق عليهمتفق علیہ رواہ البخاری 7121 و مسلم 248 157 396 و 2340 و 7256 و 7302 ۔متفق عليه

ব্যাখ্যা : বাযযার (রহিমাহুল্লাহ) বিশুদ্ধ সনদে যায়দ ইবনু ওয়াহ্ (রহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আমরা হুযায়ফাহ্ (রাঃ)-এর কাছে ছিলাম। তিনি বললেন, তোমরা কেমন আছ! তোমাদের দীনের অনুসারীরাই তো পরস্পর যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে। তারা তখন বলেন, আপনি আমাদেরকে এ ব্যাপারে কি আদেশ প্রদান করছেন? অতঃপর তিনি বললেন, তোমরা তাদের দিকে লক্ষ্য কর যারা ‘আলী (রাঃ)-এর খিলাফতের দিকে আহ্বান করছে। অতঃপর উক্ত দলের আনুগত্য গ্রহণ কর, কারণ ওটা হকের উপর রয়েছে।

ইয়াহইয়া ইবনু সুলায়মান আল জু'ফী (রহিমাহুল্লাহ) যিনি ইমাম বুখারী (রহিমাহুল্লাহ)-এর একজন উস্তায ছিলেন, তিনি তার প্রণীত কিতাব “কিতাবুস সিফফীন” নামক গ্রন্থে গ্রহণযোগ্য সনদে আবূ মুসলিম আল খওলানী (রহিমাহুল্লাহ) থেকে বর্ণনা করেছেন। নিশ্চয় তিনি (আবূ মুসলিম আল খওলানী (রহিমাহুল্লাহ)] মু'আবিয়াহ (রাঃ)-কে লক্ষ্য করে বললেন, আপনি তো খিলাফতের বিষয়ে ‘আলী (রাঃ)-এর সাথে বিবাদে জড়িয়ে পড়েছেন, আপনি কি তার সমকক্ষ? তিনি বললেন : না, আমি এটা অবশ্যই জানি যে, নিশ্চয় তিনি আমার চেয়ে অনেক শ্ৰেষ্ঠ ও খিলাফতের সর্বাধিক হকদার। কিন্তু তোমরা কি এটা জান না যে, নিশ্চয় ‘উসমান (রাঃ) নির্যাতিত অবস্থায় অত্যন্ত নির্মমভাবে খুন হয়েছেন? অথচ আমি তাঁর চাচাত ভাই, আমি তার রক্তের বিনিময় চাই। তোমরা ‘আলী (রাঃ)-এর কাছে যাও এবং তাকে বল তিনি যেন ‘উসমান (রাঃ) -এর হত্যাকারীকে আমাদের হাতে তুলে দেন। অতঃপর তারা আমীরুল মু'মিনীন ‘আলী (রাঃ)-এর কাছে এ বিষয়টি উল্লেখ করলে তিনি [আলী (রাঃ)] বললেন, সে খিলাফতের বায়'আতে প্রবেশ করেছে এবং তাদের বিচারের দায়িত্ব আমার। অতঃপর ‘আলী (রাঃ) ‘ইরাক থেকে সৈন্যবাহিনী নিয়ে সিফফীনে অবতরণ করেন অন্যদিকে মুআবিয়াহ (রাঃ) সৈন্যবাহিনী নিয়ে সিফফীনে অবতরণ করলেন। আর এটা সংঘটিত হয়েছিল ৩০ হিজরীর যিলহজ্জ মাসে।
মুসনাদে আহমাদে হাবীব ইবনু আবূ সাবিত (রাঃ) হতে বর্ণিত রয়েছে, তিনি বলেন, আমরা সিফফীনে থাকা অবস্থায় ‘আমর (রাঃ) মু'আবিয়াহ্ (রাঃ)-কে বললেন, আপনি একটি মুসহাফ (কুরআন) আলী (রাঃ) এর কাছে পাঠিয়ে দিন এবং তাকে আল্লাহর কিতাবের ফায়সালার দিকে আহ্বান করুন, কেননা তিনি 'আলী (রাঃ)] আপনার এ প্রস্তাব কোনক্রমেই অস্বীকার করতে পারবেন না।

অতঃপর এক লোক মুসহাব নিয়ে এসে বলল: আমাদের ও আপনাদের মাঝে বিবাদ নিরসন করবে আল্লাহর কিতাব। অর্থাৎ কিতাবুল্লাহর ফায়সালা আমরা উভয়পক্ষ মেনে নেব। আল্লাহ তা'আলার বাণী : “আপনি কি তাদেরকে দেখেননি যাদেরকে কিতাবের অংশবিশেষ প্রদান করা হয়েছিল? তাদেরকে আল্লাহর কিতাবের দিকে আহ্বান করা হয়েছিল যাতে তা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেয়, তারপর তাদের একদল ফিরে যায় বিমুখ হয়ে।” (সূরাহ্ আ-লি ইমরান ৩: ৩)
অতঃপর ‘আলী (রাঃ) বলেন, “হ্যাঁ, আমি এ ব্যাপারে সর্বাধিক অগ্রগামী। অতঃপর ‘আলী (রাঃ)-এর পক্ষ অবলম্বনকারী একদল যারা পরবর্তীতে খাওয়ারিজ হয়েছিল তারা বলল, হে আমীরুল মু'মিনীন! এ সম্প্রদায়ের ব্যাপারে আপনি কি ভাবছেন, আমরা কি তরবারি নিয়ে তাদের সঙ্গে ততক্ষণ যুদ্ধ করব না যতক্ষণ না আল্লাহ তা'আলার পক্ষ হতে ফায়সালা এসে যায়? অতঃপর সাহল ইবনু হুনায়দ (রাঃ) বললেন, হে লোকসকল! তোমরা সংযত হও অবশ্যই আমরা তো হুদায়বিয়ার দিন দেখেছি। অতঃপর তিনি মুশরিকদের সাথে করা নবী (সাঃ) -এর সন্ধিচুক্তির ঘটনা বর্ণনা করলেন।

আলোচ্য হাদীসে নবী (সা.) প্রায় ৩০ জন মিথ্যা নবীর আবির্ভাবের কথাও বলেছেন।
ইবনু যুবায়র কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে রয়েছে যে, নিশ্চয় কিয়ামতের পূর্বক্ষণে ৩০ জন মিথ্যুক নবীর আবির্ভাব ঘটবে, তন্মধ্যে একজন সান’আর অধিবাসী আল আসওয়াদ আল আনাসী এবং ইয়ামামার অধিবাসী মুসায়লামাহ্। আহমাদ-এর শব্দে রয়েছে, আবূ ইয়া'লা ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, কিয়ামতের পূর্বক্ষণে ৩০ জন মিথ্যুকের আগমন ঘটবে। আমি বললাম, (আবূ ইয়া'লা) তাদের আলামত কি? তিনি বললেন, তারা এমন কিছু পদ্ধতি নিয়ে আসবে তোমরা ইতোপূর্বে কখনও ছিলে না। যখন তোমরা তাদেরকে দেখবে অবশ্যই তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে। (ফাতহুল বারী ১৩/১০০ পৃ.)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৭: ফিতনাহ (كتاب الْفِتَن)