৫২৫৩

পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - গরীবদের ফযীলত ও নবী (সা.) -এর জীবন-যাপন

৫২৫৩-[২৩] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আল্লাহর রাস্তায় (দীনের প্রচারে) আমাকে যে পরিমাণ ভয় দেখানো হয়েছে, আর কাউকেও সে পরিমাণ ভয় দেখানো হয়নি। আর আল্লাহর রাস্তায় আমাকে (যেভাবে) কষ্ট দেয়া হয়েছে, আর কাউকেও (এভাবে) কষ্ট দেয়া হয়নি এবং আমার ওপর ত্রিশটি দিবারাত্র এ অবস্থায় অতিবাহিত হয়েছে যে, আমার ও বিলালের জন্য এমন খাদ্যবস্তু ছিল না যা কোন প্রাণী খেতে পারে। শুধু এ পরিমাণ কিছু ছিল যা বিলালের বগল গোপন করে রাখত। (তিরমিযী)

তিনি [ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ)] হাদীসটির অর্থে বলেছেন যে, যখন নবী (সা.) কাফিরদের অত্যাচারে আত্মরক্ষার উদ্দেশে) মক্কা হতে বের হয়ে চলে গেলেন এবং বিলাল তার সাথে ছিলেন, এটা সে সময়ের ঘটনা। মূলত এ সময় বিলালের সঙ্গে এ পরিমাণ খাদ্যবস্তু ছিল যা তিনি স্বীয় বগলের নীচে দাবিয়ে রাখতেন।

اَلْفصْلُ الثَّنِفْ - (بَابُ فَضْلِ الْفُقَرَاءِ وَمَا كَانَ مِنْ عَيْشِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ)

وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَقَدْ أُخِفْتُ فِي اللَّهِ وَمَا يُخَافُ أَحَدٌ وَلَقَدْ أُوذِيتُ فِي اللَّهِ وَمَا يُؤْذَى أَحَدٌ وَلَقَدْ أَتَتْ عَلَيَّ ثَلَاثُونَ مِنْ بَيْنِ لَيْلَةٍ وَيَوْمٍ وَمَا لِي وَلِبِلَالٍ طَعَامٌ يَأْكُلُهُ ذُو كَبِدٍ إِلَّا شَيْءٌ يُوَارِيهِ إِبْطُ بِلَالٍ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ قَالَ: وَمَعْنَى هَذَا الْحَدِيثِ: حِينَ خَرَجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هَارِبًا مِنْ مَكَّةَ وَمَعَهُ بِلَالٌ إِنَّمَا كَانَ مَعَ بِلَالٍ مِنَ الطَّعَامِ مَا يَحْمِلُ تحتَ إبطه

اسنادہ صحیح ، رواہ الترمذی (2472) ۔
(صَحِيح)

وعن انس قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لقد اخفت في الله وما يخاف احد ولقد اوذيت في الله وما يوذى احد ولقد اتت علي ثلاثون من بين ليلة ويوم وما لي ولبلال طعام ياكله ذو كبد الا شيء يواريه ابط بلال رواه الترمذي قال ومعنى هذا الحديث حين خرج النبي صلى الله عليه وسلم هاربا من مكة ومعه بلال انما كان مع بلال من الطعام ما يحمل تحت ابطهاسنادہ صحیح رواہ الترمذی 2472 ۔صحيح

ব্যাখ্যা : নবী-রসূলগণ সর্বকালেই আল্লাহর রাস্তায় কাফির মুশরিক দ্বারা অত্যাচারিত হয়েছেন। এক্ষেত্রে আমাদের নবী সবচেয়ে বেশি ভীতিপ্রাপ্ত হয়েছেন এবং কষ্ট পেয়েছেন। ক্ষুধা বা খাদ্যাভাব ছিল জীবনের এক প্রকট সমস্যা। মাসের পর মাস বাড়ীতে রান্নার চুলা জ্বলত না। এমনই এক বিষয় এখানে বিবৃত হয়েছে। তিনি (সা.) বলেছেন, ত্রিশদিন আমাদের ওপর দিয়ে একাধারে অতিবাহিত হয়ে যেত কোন প্রাণীর খাদ্যযোগ্য খাবার আমার এবং বিলাল-এর ভাগ্যে জুটত না; যা জুটত তা ছিল খুবই নগণ্য, এমনকি তা বিলাল-এর বগলের নীচেই লুকিয়ে রাখা যেত। এখানে বিলাল-এর নাম এজন্য বলা হয়েছে যে, এই দুঃসময়ে বিলাল রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সাথেই ছিলেন।

কখন এ ঘটনা ঘটেছিল তা নিয়ে অনেকে কথা বলেছেন। ইমাম তিরমিযী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন : (وَمَعْنٰى هٰذَا الْحَدِيثِ حِينَ خَرَخَ النَّتِيُّ صلى الله عليه وسلم هَارِبٍامِنْ مكَّةَ) অর্থাৎ এ হাদীসের ঘটনা ঐ সময় ঘটেছিল যখন নবী (সা.) ও কাফির মুশরিকদের অত্যাচারে মক্কা থেকে পলায়ন করেছিলেন। বর্ণিত আছে, তিনি ত্বায়িফের ‘আবদে ইয়ালীলে গমন করেছিলেন যাতে তারা তাকে মক্কার কাফিরদের হাত থেকে রক্ষা করেন এবং আশ্রয় দান করেন; আর তিনিও তার রবের রিসালাতের দাওয়াত পৌছে দিতে পারেন। কিন্তু বাস্তবতা অতীব দুর্ভাগ্যজনক এবং হৃদয় বিদারক, তারা তাদের বখাটে উচ্ছৃঙ্খল বালকদের নবী (সা.) -এর পিছনে লেলিয়ে দিল, তারা তাকে পাথর নিক্ষেপ করে রক্তাক্ত এবং ক্ষত-বিক্ষত করে দিল। এমনকি শরীর থেকে রক্ত ঝরে পায়ের জুতা পর্যন্ত গড়িয়ে পড়ল এবং পা জুতায় আটকে গেল।

‘মাওয়াহিবুল লা দুনিয়্যাহ' গ্রন্থে উল্লেখ আছে- রাসূলুল্লাহ (সা.) ত্বায়িফের উদ্দেশে এ সফরটি ছিল খাদীজার মৃত্যুর তিন মাস অতিবাহিত হওয়ার কয়েকদিন আগে। এটা নুবুওয়্যাতের দশম বর্ষে ঘটেছিল এবং চাচা আবু ত্বালিব-এর ইন্তিকালের পরের ঘটনা। রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর এ সফরে যায়দ ইবনু হারিসাহ্ সফরসঙ্গী ছিলেন। ত্বায়িফে তিনি (সা.) এক মাস অবস্থান করেন এবং সাকীফ গোত্রের সম্ভ্রান্ত ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদেরকে আল্লাহর দিকে আহ্বান করলেন। হায়! তারা তাঁর আহ্বানে সাড়া তো দিলই না বরং তাদের নির্বোধ এবং গোলামদের রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর বিরুদ্ধে প্ররোচনা দিয়ে উত্তেজিত করে তুলল। ফলে তারা রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ করতে লাগল।

মূসা ইবনু উকবাহ্ (রাঃ) বলেন, তারা তার পিছন থেকে পাথর মেরে হাঁটুর নীচের মাংসপেশী ক্ষতবিক্ষত করে ফেলল। রক্ত বয়ে বয়ে পায়ের জুতা ভরে গেল, অতঃপর তা জমাট বেঁধে পা দুটি জুতায় আটকে গেল। এক পর্যায়ে তিনি মাটিতে বসে পড়লেন। কিছুক্ষণ পর তারা এসে দু বাহু ধরে নবী (সা.) -কে দাঁড় করালে তিনি হাঁটতে লাগলেন, যখনই চলা শুরু করলেন অমনি পাথর নিক্ষেপ! এ দৃশ্য দেখে অন্যেরা অট্টহাসিতে ভেঙ্গে পড়তে লাগল। যায়দ (রা.) তাঁকে প্রাণপণে রক্ষা করতে লাগলেন, এতে তারও মাথায় একাধিক যখম হয়ে গেল।

সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিম উম্মুল মু'মিনীন ‘আয়িশাহ (রাঃ) প্রমুখাৎ বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল! উহুদ যুদ্ধের দিনের চেয়েও কি কোন কঠিন দিন আপনার সামনে এসেছিল? রাসূলুল্লাহ (সা.) ত্বায়িফের ঘটনা উল্লেখ করে বললেন যে, এটা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে কষ্টের দিন। এ সময় আল্লাহ তা'আলা জিবরীলসহ পাহাড়ের মালাক (ফেরেশতা) প্রেরণ করেছিলেন, তারা পাহাড় চাপা দিয়ে ত্বায়িফবাসীকে ধ্বংস করার অনুমতি চেয়েছিল। কিন্তু আল্লাহর নবী (সা.) প্রতিশোধ এবং ধ্বংসের অনুমতি প্রদান করেননি। বরং তিনি (সা.) বলেছিলেন: আমি আশা করি তাদের বংশ থেকে এমন মানুষের জন্ম হবে যারা এক আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তার সাথে আর কাউকে শরীক করবে না। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ; তুহফাতুল আহওয়াযী ৫ম খণ্ড, হা. ২৪৭২)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৬: মন-গলানো উপদেশমালা (كتاب الرقَاق)