৫০১৮

পরিচ্ছেদঃ ১৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - আল্লাহ তা‘আলার প্রতি ভালোবাসা এবং আল্লাহ তা‘আলার জন্য বান্দার প্রতি ভালোবাসা

৫০১৮-[১৬] আবূ সা’ঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন, তিনি বলেন, মু’মিন ব্যতীত অন্য কাউকে বন্ধু বানাবে না এবং তোমার খাদ্য আল্লাহভীরু লোক ছাড়া যেন অন্য কেউ না খায়। (তিরমিযী, আবূ দাঊদ ও দারিমী)[1]

وَعَن
أبي سعيد أَنَّهُ سَمِعَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «لَا تُصَاحِبْ إِلَّا مُؤْمِنًا وَلَا يَأْكُلْ طَعَامَكَ إِلَّا تَقِيٌّ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ والدارمي

وعنابي سعيد انه سمع النبي صلى الله عليه وسلم يقول لا تصاحب الا مومنا ولا ياكل طعامك الا تقي رواه الترمذي وابو داود والدارمي

ব্যাখ্যাঃ (لَا تُصَاحِبْ إِلَّا مُؤْمِنًا) অর্থাৎ পূর্ণ ঈমানদার ছাড়া তুমি কাউকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে না। কারো সাথে চলবে না। এ কথার উদ্দেশ্য হলো তুমি কোন কাফির বা মুনাফিকের সাথে বন্ধুত্ব রাখবে না। কেননা তাদের সাথে বন্ধুত্ব রাখলে দীনের ক্ষতি হয়। তারা মুসলিমের দীনের ক্ষতি করে, বিশেষ করে মুনাফিক ব্যক্তি দীনের ক্ষতি সাধনে মারাত্মক ভূমিকা রাখে। অত্র হাদীসে মু’মিন দ্বারা মুসলিম জাতি উদ্দেশ্য।

(وَلَا يَأْكُلْ طَعَامَكَ إِلَّا تَقِيٌّ) অর্থাৎ আল্লাহভীরু তাকওয়াবান লোক ব্যতীত তোমার খাবার যেন কেউ না খায়। আল্লাহভীরুকে ছাড়া তুমি কাউকে খেতে দিবে না। যাতে সে তোমার খাবার খেয়ে যে শক্তি যোগায় তা যেন আল্লাহর ‘ইবাদাতে ব্যয় করতে পারে। পক্ষান্তরে কোন কাফির বা মুনাফিক তোমার দেয়া খাবার খেয়ে যেন শক্তি যুগিয়ে তা আল্লাহর অবাধ্যতার কাজে ব্যয় না করতে পারে। অত্র হাদীসে মুত্তাক্বীকে খাবার খাওয়ানোর কথা বললেও বাহ্যিকভাবে বুঝা যায় যে, যিনি খাবার খাওয়াবেন তাকেও মুত্তাক্বী হওয়ার নির্দেশ প্রদান করছে। কারণ মুত্তাক্বী ব্যক্তির বন্ধুত্ব মুত্তাক্বী ছাড়া অন্য কারো সাথে হতে পারে না। আরো একটি বিষয় হাদীসটি হতে বুঝা যায় তা হলো, মুত্তাক্বী ছাড়া কাউকে খাবার খাওয়াবে না। এটা দা‘ওয়াত খাওয়ানো ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। প্রয়োজনের খাবারের জন্য প্রযোজ্য নয়। এ দিকে ইঙ্গিত করে মহান আল্লাহ বলেন, وَيُطْعِمُونَ الطَّعَامَ عَلٰى حُبِّه# مِسْكِينًا وَّيَتِيمًا وَّأَسِيرًا ‘‘তারা আল্লাহ ভালোবাসায় অভাবগ্রস্ত, ইয়াতীম ও বন্দীকে আহার্য দান করে’’- (সূরাহ্ ইনসান ৭৬ : ৮)। এ আয়াতটি প্রমাণ করে যে, বন্দী হয়ে যারা আসত তারা সবাই ছিল কাফির, মু’মিন নয়। অথচ প্রয়োজনের কারণে তাদের খাবার খাওয়ানোকে আল্লাহ প্রশংসা করেছেন। এখান থেকে বুঝা গেল, অমুসলিমরা অভাবী হলে তাদেরকে খাওয়ানো দোষের কিছু নয়। কিন্তু অমুসলিমদের সাথে বন্ধুত্ব হারাম।

‘আল্লামা ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ অত্র হাদীসটিতে মুত্তাক্বী ব্যক্তি ছাড়া অন্যকে খাবার খাওয়াতে নিষেধ করা হয়নি বরং হাদীস দ্বারা উদ্দেশ্য হলো তুমি সেই খাবার থেকে দূরে থাকবে যা মুক্তাক্বী ব্যক্তি হারাম হওয়ার ভয়ে না খায়। অর্থাৎ তুমি হারাম খাবার খাওয়াবে না যা মুত্তাক্বীরা খায় না। আর মুত্তাক্বীরা যাদের থেকে দূরে থাকে তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে না। এর অর্থ হলো- لَا تُصَاحِبْ إِلَّا مُطِيْعًا وَلَا تُخَالِلْ إِلَّا تَقِيًّا তুমি অনুগত বান্দা ব্যতীত কারো সাথে বন্ধত্ব করো না, আর তুমি মুত্তাক্বী ব্যতীত কারো সাথে অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব করো না।

(তুহফাতুল আহওয়াযী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ২৩৯৫; ‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৮২৪; মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)