৪৯৪৯

পরিচ্ছেদঃ ১৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ

৪৯৪৯-[৩] উক্ত রাবী [’আয়িশাহ্ সিদ্দিকা (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন জনৈকা মহিলা আমার কাছে এলো। তার সাথে তার দু’ কন্যা ছিল। সে আমার কাছে কিছু ভিক্ষা চাইল। তখন আমার কাছে একটি মাত্র খেজুর ছাড়া কিছুই ছিল না। আমি সেটাই তাকে দিয়ে দিলাম। সে খেজুরটিকে তার দু’ কন্যার মধ্যে ভাগ করে দিলো, তা থেকে নিজে তিনি কিছুই খেলো না। অতঃপর সে উঠে চলে গেল। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে প্রবেশ করলেন, আমি ঘটনাটি তাঁর কাছে বললাম। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ যে ব্যক্তি এ কন্যাদের দ্বারা পরীক্ষিত হবে এবং সে কন্যাদের সাথে উত্তম আচরণ করবে, তবে এ কন্যারাই তার জন্য জাহান্নামের আগুনের মাঝে অন্তরায় হবে (অর্থাৎ- তাকে জাহান্নামের প্রতিবন্ধক হবে)। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الشَّفَقَةِ وَالرَّحْمَةِ عَلَى الْخَلْقِ

وَعَنْهَا قَالَتْ: جَاءَتْنِي امْرَأَةٌ وَمَعَهَا ابْنَتَانِ لَهَا تَسْأَلُنِي فَلَمْ تَجِدْ عِنْدِي غَيْرَ تَمْرَةٍ وَاحِدَةٍ فَأَعْطَيْتُهَا إِيَّاهَا فَقَسَمَتْهَا بَيْنَ ابْنَتَيْهَا وَلَمْ تَأْكُلْ مِنْهَا ثُمَّ قَامَتْ فَخَرَجَتْ. فَدَخَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَحَدَّثْتُهُ فَقَالَ: «مَنِ ابْتُلِيَ مِنْ هَذِهِ الْبَنَاتِ بِشَيْءٍ فَأَحْسَنَ إِلَيْهِنَّ كُنَّ لَهُ سِتْرًا مِنَ النَّارِ» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ

وعنها قالت جاءتني امراة ومعها ابنتان لها تسالني فلم تجد عندي غير تمرة واحدة فاعطيتها اياها فقسمتها بين ابنتيها ولم تاكل منها ثم قامت فخرجت فدخل النبي صلى الله عليه وسلم فحدثته فقال من ابتلي من هذه البنات بشيء فاحسن اليهن كن له سترا من النار متفق عليه

ব্যাখ্যাঃ অপর এক বর্ণনায় এসেছে, তিনি তাকে তিনটি খেজুর দিলেন। তিনটির ভিতরে তার দুই কন্যাকে একটি একটি করে দিয়ে দিলেন। তৃতীয় খেজুরটি মুখে নিলেন তিনি খাওয়ার জন্য, কিন্তু তার দুই কন্যা ঐ খেজুরটিও খেতে চাইলে তিনি সে ঐ খেজুরটিও ভাগ করে তাদেরকে দিয়ে দিলেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, ব্যক্তিকে দু’টি কন্যা দ্বারা পরীক্ষা করা হবে। এখানে পরীক্ষা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো তাদের লালন পালনের ব্যয়ভার ইত্যাদি বিষয়গুলো। এখানে অনেকগুলো হাদীসের বর্ণনা এসেছে, যে কন্যা সন্তানের প্রতি ইহসান করবে ভালো ব্যবহার করবে। অপর বর্ণনায় এসেছে, যে দু’টি কন্যা সন্তানকে লালন পালন করবে। উম্মু সালামাহ্-এর হাদীসে, যে ব্যক্তি দু’টি কন্যা অথবা দু’টি বোন অথবা দু’জন নিকটাত্মীয় মেয়ের প্রতি খরচ করবে।

ইবনু ‘আব্বাস-এর হাদীস এসেছে, তাদেরকে সুন্দরভাবে আদব শিখাবে। জাবির -এর হাদীস এসেছে, তাদেরকে আশ্রয় দিবে, তাদের প্রতি রহম করবে, তাদেরকে লালন পালন করবে। ত্ববারী একটু বেশি বর্ণনা করে বলেছেন, তাদেরকে বিবাহ দিবে। ‘আদাবুল মুফরাদ’-এর একটি বর্ণনা আবূ সা‘ঈদ আল খুদরী থেকে এভাবে এসেছে যে, তাদের ভালো সাথী দিয়ে দিবে এবং তাদের বিষয়ে আল্লাহকে ভয় করবে। এগুলো সব হচ্ছে ‘ইহসান’ শব্দের অন্তর্ভুক্ত। হাদীসে এসেছে, এ সাওয়াব সেও পাবে যে একজন মেয়ের প্রতিও এ রকম ইহসান করবে।

ইবনু বাত্ত্বল (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ অত্র হাদীসে গরীব মানুষ কারো কাছে চাইতে পারবে এটার প্রমাণ পাওয়া যায় এবং চাইলে দিতে হবে এটারও প্রমাণ পাওয়া যায়, যেহেতু ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) একটি খেজুর পেয়েছিলেন সে একটি খেজুরই তাকে দান করেছিলেন। আর শিক্ষণীয় যে কম বলে তাকে তুচ্ছ মনে করে দান করা থেকে বিরত থাকা উচিত নয় বরং কম থাকলে কম দিবে বেশি থাকলে বেশি দিবে। এ হাদীস থেকে আরো বুঝা যায় যে, কল্যাণকর কাজ উল্লেখ করা জায়িয যদি সেটা অহংকার বা খোঁটা দেয়া উদ্দেশ্য না হয়ে থাকে। ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) ইবনু বাত্ত্বল-এর অনুসারী হয়ে বলেনঃ এখানে কন্যা সন্তানদের লালন পালনের বিষয়টিকে পরীক্ষা শব্দ দ্বারা উল্লেখ্য করার কারণ হলো মানুষ কন্যা সন্তানদের অপছন্দ করেন, তাই এটাকে পরীক্ষা শব্দ দ্বারা উল্লেখ্য করা হয়েছে। কন্যা সন্তানদের অধিকার আদায়ের ব্যাপারে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বাত্মক গুরুত্বারোপ করেছেন এবং তাদের ক্ষেত্রে দায়িত্বকে অবহেলা করা কোনভাবেই উচিত নয়, এটা ইসলামী আইন দ্বারা সাব্যস্ত। (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৫৯৯৫)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)