৪৬৯৫

পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - দণ্ডায়মান হওয়া

الْقيام এর পরিচিতি : الْقيام শব্দটি বাবে نَصَرَ এর মাসদার শাব্দিক অর্থ : দণ্ডায়মান হওয়া, দাঁড়ানো।

পারিভাষিক অর্থ : কারো সম্মানার্থে দাঁড়ানো তথা ঐ সম্মানিত ব্যক্তি যতক্ষণ বসে থাকবে, ততক্ষণ ঐ স্থানে দাঁড়িয়ে থাকাকে ক্বিয়াম বলা হয়।


৪৬৯৫-[১] আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, বানূ ক্বুরায়যাহ্ সম্প্রদায় যখন সা’দ (রাঃ)-এর ঘোষিত রায় মেনে নেয়ার শর্তে দূর্গ হতে অবতরণ করল, তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সা’দকে ডেকে পাঠালেন। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটবর্তী ছিলেন। সা’দ (রাঃ) যখন গাধার পিঠে আরোহণ করে মসজিদে নাবাবীর নিকটবর্তী হলেন, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসারগণকে বললেনঃ তোমরা তোমাদের নেতার সাহায্যের জন্য দাঁড়িয়ে যাও। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

এ হাদীসের বিস্তারিত বর্ণনা بَابِ حِكَمِ الْإِسْرَاءِ ’’মি’রাজের ঘটনাবলী অধ্যায়ে’’ হয়েছে।

بَابُ الْقِيَامِ

عَن أبي سعيد الْخُدْرِيّ قَالَ: لَمَّا نَزَلَتْ بَنُو قُرَيْظَةَ عَلَى حُكْمِ سَعْدٍ بَعَثَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَيْهِ وَكَانَ قَرِيبًا مِنْهُ فَجَاءَ عَلَى حِمَارٍ فَلَمَّا دَنَا مِنَ الْمَسْجِدِ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِلْأَنْصَارِ: «قُومُوا إِلَى سيِّدكم» . مُتَّفق عَلَيْهِ. وَمَضَى الْحَدِيثُ بِطُولِهِ فِي «بَابِ حِكَمِ الْإِسْرَاءِ»

عن ابي سعيد الخدري قال لما نزلت بنو قريظة على حكم سعد بعث رسول الله صلى الله عليه وسلم اليه وكان قريبا منه فجاء على حمار فلما دنا من المسجد قال رسول الله صلى الله عليه وسلم للانصار قوموا الى سيدكم متفق عليه ومضى الحديث بطوله في باب حكم الاسراء

ব্যাখ্যাঃ (عَلٰى حُكْمِ سَعْدٍ) যে ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে তা হলো এই যে, মদীনার ইয়াহূদী গোত্র বানূ ‘‘কুরায়যার সাথে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। শর্ত ছিল তারা মুসলিমদের স্বার্থের পরিপন্থী কাজ করবে না। অথচ ৫ম হিজরীতে সংঘটিত খন্দাক যুদ্ধে প্রায় প্রকাশ্যেই তারা মক্কার কাফিরদেরকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে সহযোগিতা করে, ফলে যুদ্ধের পর মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্ব-সৈন্যে বানূ কুরায়যাকে অবরোধ করেন। উপায়ন্তর না দেখে বানূ কুরায়যার লোকেরা আবূ লুবাবাকে ডাকল। আবূ লুবাবাহ্ তাদের শাস্তি স্বরূপ হত্যার ইঙ্গিত দিলেন। পরিশেষে তারা তাদের গোত্রীয় মুসলিম সাহাবী সা‘দ -এর ফায়সালা মেনে নিতে রাজি হয়।

ফলে সা‘দ  নারী ও শিশুকে ব্যতীত সকলকে হত্যার নির্দেশ দেন। এ নির্দেশ শুনে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সা‘দ তাঁর রবের ইচ্ছামত নির্দেশ প্রদান করেছে।

(فَلَمَّا دَنَا مِنَ الْمَسْجِدِ) দ্বারা উদ্দেশ্য : বলা হয় মসজিদ দ্বারা বুঝানো হয়েছে ঐ স্থানকে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বানূ কুরায়যার অবস্থানকালে যে স্থানটিকে সালাত আদায় করার জন্য নির্ধারণ করেছিলেন। পরবর্তীতে মানুষেরা সেখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। এটা দ্বারা মদীনার মসজিদে নাবাবী উদ্দেশ্য নয়।

কিন্তু ইবনু ইসহক (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ এটা দ্বারা উদ্দেশ্য মসজিদে মদীনাহ্। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সা‘দ (রাঃ)-কে বানূ কুরায়যায় নিকট পাঠিয়ে ছিলেন তাদের বিচার-ফায়সালা করার জন্য। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সা‘দ (রাঃ)-এর জন্য মসজিদে নাবাবীতে তাবু তৈরি করা হয়েছিল। সেখানে একজন মহিলা তাঁর আঘাতপ্রাপ্ত স্থানের সেবা করতেন।

فلما خرج إلى بني قريظة এটা দ্বারা উদ্দেশ্য নিশ্চয় সা‘দ  মসজিদে মদীনায় ছিলেন। (ফাতহুল বারী ৭ম খন্ড, হাঃ ৪১২১)

ক্বিয়ামের প্রকারভেদ ও হুকুমসমূহ :

* কারো সম্মানার্থে দাঁড়ানো। যেমন : পিতামাতা, নেতৃস্থানীয় লোকেদের সম্মানার্থে দাঁড়ানো- এটা জায়িয।

* শুভেচ্ছা জ্ঞাপন বা অভ্যর্থনা জ্ঞাপনার্থে দাঁড়ানো জায়িয।

* কাউকে সহযোগিতা করার জন্য দাঁড়ানো- এটা জায়িয ও পুণ্যের কাজ।

* অহংকারী ব্যক্তির জন্য দাঁড়ানো- এটা হারাম।

* কবর যিয়ারতের জন্য দাঁড়ানো- এটা জায়িয।

* মৃতের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য দাঁড়ানো- এটা বিদ্‘আত।

(قُومُوا إِلٰى سيِّدكم) বলা হয় : কারো সম্মানার্থে দাঁড়ানো, এটা দ্বারা প্রমাণিত হয় দাঁড়ানো অপছন্দনীয় নয়। কারো জন্য দাঁড়ানো মুস্তাহাব।

বলা হয় : তোমাদের নেতাকে গাধা হতে নামানোর জন্য দাঁড়াও। কেননা যখন খন্দাক যুদ্ধে সা‘দ  আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে তাঁর হাতের রগ কাটা গিয়েছিল। তাই তার গাধা থেকে নামার জন্য যেন কষ্ট না হয় সে জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন তোমরা নেতার জন্য দাঁড়াও।

ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ সম্মানিত ব্যক্তিদের জন্য দাঁড়ানো মুস্তাহাব। এ ব্যাপারে সহীহ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তবে নিষেধ সম্পর্কে স্পষ্ট হাদীস নেই। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

الْقيام শব্দের صلة যখন إلى আসে তখন সাহায্য-সহযোগিতা অর্থ হয়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)