৪৪২৩

পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - চুল আঁচড়ানো

৪৪২৩-[৫] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইয়াহূদী এবং নাসারাগণ দাড়ি চুলে খিযাব লাগায় না। সুতরাং তোমরা তাদের বিপরীত করো (অর্থাৎ- খিযাব লাগাও)। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ التَّرَجُّلِ

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِنَّ الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى لَا يَصبِغون فخالفوهم»

وعن ابي هريرة ان النبي صلى الله عليه وسلم قال ان اليهود والنصارى لا يصبغون فخالفوهم

ব্যাখ্যাঃ (لا يصبغون) আরবী শব্দ صِبْغٌ صَبْغٌ থেকে নির্গত। যার অর্থ রঙ করা বা খিযাব লাগানো। তারা রঙ করে না। অর্থাৎ তারা তাদের দাড়িতে খিযাব ব্যবহার করে না। অতএব তোমরা তাদের বিরোধিতা করো অর্থাৎ মেহেদীর খিযাব ব্যবহার করো। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

দাড়ি সাদা হয়ে গেলে খিযাব তথা রঙ দিয়ে তা পরিবর্তন করতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উৎসাহিত করেছেন। ফাতহুল বারীতে ইমাম আহমাদ-এর বরাতে হাসান সনদে আবূ উমামাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন- ‘‘রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন আনসারী কিছু বৃদ্ধ লোকের সামনে বের হন, যাদের দাড়ি সাদা হয়ে গিয়েছিল। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বলেন, হে আনসারের দল! তোমরা দাড়িকে লাল করো, হলুদ করো এবং আহলে কিতাবদের বিরোধিতা করো’’। ইমাম ত্ববারানী তাঁর ‘আওসাত্ব’ কিতাবে আনাস (রাঃ) থেকে এমন হাদীস বর্ণনা করেন। আর ‘কাবীরে’ ‘উতবাহ্ ইবনু ‘আবদুল মালিক থেকে বর্ণনা করেন- ‘‘রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনারবদের বিরোধিতা করতে চুল পরিবর্তন করার নির্দেশ দেন। (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৫৮৯৯)

বর্ণিত হাদীসসমূহের আলোকে আমরা দেখছি যে, চুল বা দাঁড়িতে শুভ্রতা প্রকাশ পেলে খিযাব বা রঙ দ্বারা তা পরিবর্তন করতে উৎসাহিত করেছেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তবে খিযাবের ক্ষেত্রে যে কোন রঙের খিযাব ব্যবহার বৈধ নাকি এর মাঝে কিছুটা ব্যতিক্রম রয়েছে- এ নিয়ে ‘উলামায়ে কিরাম দ্বিমত পোষণ করেন। উপরোক্ত হাদীসসমূহে খিযাবের কোন ধরণকে পৃথক করা হয়নি। এসব হাদীসের আলোকে যে কোন খিযাবই বৈধ বলে মত প্রকাশ করেছেন একদল ‘আলিম। ‘আল্লামা ইবনু হাজার (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ যারা কালো খিযাব ব্যবহারের অনুমতি দেন তারা এ হাদীসগুলো দলীল হিসেবে গ্রহণ করেন। (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৫৮৯৯)

পরবর্তী হাদীসে আমরা দেখতে পাই যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খিযাব দ্বারা চুল বা দাড়িকে পরিবর্তন করতে বলেছেন, যা কালো খিযাব পরিহার করতে বলেছেন। তাই ‘উলামায়ে কিরামের অনেকেই মনে করেন, চুলে কালো খিযাব ছাড়া অন্য খিযাব ব্যবহার করা বৈধ। কালো খিযাব ব্যবহার করা বৈধ নয়। যেসব হাদীসে খিযাব ব্যবহারের প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে বা অনুমতি প্রদান করা হয়েছে তা কালো ছাড়া অন্য রঙের বেলায়। ‘আল্লামা ইবনু হাজার (রহিমাহুল্লাহ) উপরের হাদীসের ব্যাখ্যায় লিখেন, ‘‘খিযাব ব্যবহারের অনুমোদন কালো ছাড়া অন্য রঙের বেলায় নির্ধারিত। কেননা ইমাম মুসলিম জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তোমরা তা পরিবর্তন করো তবে কালো পরিহার করো’’। এছাড়াও আবূ দাঊদে ইবনু ‘আব্বাস থেকে মারফূ‘ সনদে বর্ণিত, যা ইবনু হিব্বান সহীহ বলেছেন,

يكون قوم في آخر الزمان يخضبون بالسواد كحواصل الحمام لا يريحون رائحة الجنة  

‘‘শেষ যামানায় এমন এক সম্প্রদায় হবে, যারা কবুতরের বুকের ন্যায় (কালো) খিযাব ব্যবহার করবে, তারা জান্নাতের ঘ্রাণ পাবে না’’। হাদীসের সানাদ শক্তিশালী। তবে হাদীসটি মারফূ‘ নাকি মাওক্বূফ- এ নিয়ে ইখতিলাফ রয়েছে। মাওক্বুফ হওয়াকে প্রাধান্য দিলেও তা মারফূ‘ এর হুকুমে; কেননা যুক্তির আলোকে এসব কথা বলা যায় না। তাই ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) কালো খিযাব ব্যবহার মাকরূহ তাহরীমী হওয়ার মতকে পছন্দ করেন।’’ (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৫৮৯৯)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২২: পোশাক-পরিচ্ছদ (كتاب اللباس )