পরিচ্ছেদঃ
১৩১৬। কিয়ামতের দিন অনির্দিষ্ট সংখ্যক মুসলিম পাহাড় সমতুল্য গুনাহ্ নিয়ে আগমন করবে। অতঃপর আল্লাহ্ তা’আলা তাদেরকে ক্ষমা করে দিবেন আর সে গুনাহগুলোকে ইয়াহুদী এবং খৃষ্টানদের উপর দিয়ে দিবেন।
হাদীসটি এ ভাষায় মুনকার।
এ ভাষায় হারমী ইবনু উমারাহ এককভাবে শাদ্দাদ ইবনু আবু ত্বলহাহ রাসেবী হতে, তিনি গায়লান ইবনু জারীর হতে, তিনি আবূ বুরদাহ হতে, তিনি তার পিতা আবু মূসা আশয়ারী (রাঃ) হতে, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেছেন। শেষে তিনি বলেছেনঃ আমার ধারণা মতে। আবু রাওহ বলেনঃ সন্দেহ কার থেকে ঘটেছে তা আমি জানি না।
হাদীসটি ইমাম মুসলিম (৮/১০৫-২৭৬৭) এ সূত্রে বর্ণনা করেছেন। তিনি (মুসলিম) ত্বলহাহ ইবনু ইয়াহইয়া, আউন ইবনু উৎবাহ এবং সাঈদ ইবনু আবী বুরদাহ সূত্রেও অনুরূপ ভাষায় ويضعها على اليهود والنصارى এ অংশ ছাড়া বর্ণনা করেছেন। ইমাম আহমাদ এভাবেই আউন ইবনু উৎবাহ এবং সাঈদ হতে বর্ণনা করেছেন। ইমাম আহমাদ বুরায়দাহ ইবনু আবদিল্লাহ ইবনে আবী বুরদাহ হতে, উমারাহ ও মুহাম্মাদ ইবনুল মুনকাদির হতে, মুয়াবিয়্যাহ্ ইবনু ইসহাক হতে এবং ত্বলহাহ ইবনু ইয়াহইয়া হতেও বর্ণনা করেছেন। তারা সকলে আবু বুরদাহ হতে অনুরূপভাবে ويضعها على اليهود والنصارى এ অংশ ছাড়া বর্ণনা করেছেন।
ইমাম মুসলিমের নিকট তাদের ভাষাগুলো নিম্নরূপঃ
إذا كان يوم القيامة دفع الله عز وجل إلى كل مسلم يهوديا أونصرانيا فيقول: هذا فكاكك من النار
কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা প্রত্যেক মুসলিমের নিকট একজন ইয়াহুদী অথবা একজন খৃষ্টান পাঠিয়ে বলবেনঃ এ ব্যক্তি জাহান্নাম থেকে তোমার মুক্তির মাধ্যম। (সহীহ মুসলিম (২৭৬৭)।
একদল বর্ণনাকারী আবু বুরদাহ হতে উপরে উল্লেখিত বর্ধিত অংশ ছাড়া এভাবেই বর্ণনা করেছেন। এ কারণে আমি (আলবানীর) নিকট সহীহ মুসলিমে হারমী ইবনু উমরাহ কর্তৃক বর্ণনাকৃত ويضعها على اليهود والنصارى এ অংশটুকু শায বরং মুনকার নিম্নোক্ত কারণেঃ
১। বর্ণনাকারী উক্ত শেষোক্ত বাক্যের ব্যাপারে সন্দেহ করেছেন। আমার নিকট সন্দেহকারী বর্ণনাকারী হচ্ছেন শাদ্দাদ আবূ ত্বলহাহ রাসেবী, অথবা তার থেকে বর্ণনাকারী হারামী ইবনু উমারাহ (আবু রাওহ)। কিন্তু এ আবু রাওহ বলেছেনঃ আমি জানি না কার থেকে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। অতএব রাসেবীই যে সন্দেহকারী তা নির্দিষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কারণ তার হেফযের ব্যাপারেই সমালোচনা করা হয়েছে যদিও তিনি নির্ভরযোগ্য। আর এ কারণেই হাফিয যাহাবী তাকে “আয-যুয়াফা” গ্রন্থে উল্লেখ করে বলেছেনঃ ইবনু আদী বলেনঃ তার হাদীসকে মুনকার হিসেবে দেখছি না। ওকায়লী বলেনঃ তার কতিপয় হাদীস রয়েছে যেগুলোর মুতাবায়াত করা হয়নি।
হাফিয ইবনু হাজার “আত-তাকরীব” গ্রন্থে বলেনঃ তিনি সত্যবাদী ভুলকারী। সহীহ মুসলিমের মধ্যে তার একমাত্র এ হাদীসটিই রয়েছে। হাফিয ইবনু হাজার “আত-তাহযীব” গ্রন্থে বলেনঃ তবে তিনি সাক্ষীমূলক বর্ণনার ক্ষেত্রেই (গ্রহণযোগ্য)।
২। তিনি যখন উক্ত অতিরিক্ত শেষোক্ত বাক্যটি এককভাবে বর্ণনা করেছেন যার অন্য কোন সূত্রে সাক্ষ্য মিলছে না, তখন বুঝা যাচ্ছে তার হেফযে যে ক্রটি ছিল সে কারণেই তা ঘটেছে। অতএব অতিরিক্ত শেষোক্ত অংশটি মুনকার।
৩। আবার এ অতিরিক্ত অংশটুকু কুরআনের আয়াত বিরোধীও করণ আল্লাহ তা’আলা কুরআনের মধ্যে বলেছেনঃ لَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَىٰ (সূরা ফাতিরঃ ১৮)। এ কারণেই ইমাম নাবাবী হাদীসটির ভাবাৰ্থ বর্ণনা করেছেন এভাবেঃ আল্লাহ তা’আলা মুসলিমদের গুনাহগুলোকে ক্ষমা করে দিবেন এবং সেগুলোকে তাদের থেকে মুছে ফেলবেন। আর ইয়াহুদ এবং খৃষ্টানদের উপর তাদের কুফরী এবং গুনাহের কারণে অনুরূপ গুনাহ চাপিয়ে দিবেন। অতঃপর তাদেরকে তাদের কৃত কর্মের কারণে (মুসলিমদের গুনাহের কারণে নয়) জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন ...।
আমি (আলবানী) ব্যাখ্যা করার অর্থই হচ্ছে হাদীসটিকে সহীহ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা। আর আমরা প্রমাণ করেছি যে, আলোচ্য হাদীসের শেষ বাক্যটি মুনকার। অতএব এরূপ ব্যাখ্যা করার কোনই অবকাশ নেই।
আর আবু হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসের মধ্যে যে এসেছেঃ প্রত্যেক ব্যক্তির জন্যই জান্নাতে একটি স্থান রয়েছে এবং জাহান্নামেও একটি স্থান রয়েছে। মু’মিন ব্যক্তি যখন জান্নাতে প্রবেশ করবে তখন তার পরেই কাফের ব্যক্তি জাহান্নামে প্রবেশ করবে, কুফরী করার কারণে সে তার হকদার হওয়ায়। আর হাদীসের মধ্যে যে বলা হয়েছেঃهذا فكاكك من النار “এ ইয়াহুদী অথবা খৃষ্টান ব্যক্তির জাহান্নামে যাওয়াই হচ্ছে তোমার জন্য জাহান্নাম থেকে মুক্তির কারণ” কারণ আল্লাহ তা’আলা জাহান্নামের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ জাহান্নামী নির্ধারণ করে রেখেছেন যাদের দ্বারা জাহান্নাম পরিপূর্ণ হয়ে যাবে। ফলে কাফেররা যখন তাদের গুনাহ এবং কুফরীর কারণে জাহান্নামে প্রবেশ করবে তখন তারা মুসলিমদের জাহান্নাম থেকে মুক্তির (কারণ এরূপ) ভাবার্থের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। আল্লাহই বেশী জানেন।
يجيء يوم القيامة ناس من المسلمين بذنوب أمثال الجبل، فيغفرها لهم، ويضعها على اليهود والنصارى
منكر بهذا اللفظ
-
تفرد به حرمي بن عمارة: حدثنا شداد أبو طلحة الراسبي عن غيلان بن جرير عن أبي بردة عن أبيه (يعني أبا موس الأشعري) عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: فذكره وزاد آخره: " فيما أحسب أنا. قال أبو روح: لا أدري ممن الشك
أخرجه مسلم (8/105) من هذا الوجه، وأخرجه من طريق طلحة بن يحيى وعون بن عتبة وسعيد بن أبي بردة نحوه دون قوله: " ويضعها.. " وكذلك أخرجه أحمد (4/391) عن عون وسعيد، و (4/402) عن بريد وهو ابن عبد الله بن أبي بردة، و (4/407) عن عمارة ومحمد بن المنكدر، و (4/408) عن معاوية بن إسحاق، و (4/410) عن طلحة بن يحيى أيضا، كلهم قالوا: عن أبي بردة به نحوه دون قوله: " ويضعها.. " ومن ألفاظهم عند مسلم:" إذا كان يوم القيامة دفع الله عز وجل إلى كل مسلم يهوديا أونصرانيا فيقول: هذا فكاكك من النار
هكذا رواه الجماعة عن أبي بردة دون تلك الزيادة، فهي عندي شاذة بل منكرة لوجوه
أولا: أن الراوي شك فيها، وهو عندي شداد أبو طلحة الراسبي، أوالراوي عنه حرمي بن عمارة، ولكن هذا قد قال - وهو أبو روح -: " لا أدري ممن الشك " فتعين أنه الراسبي، لأنه متكلم فيه من قبل حفظه، وإن كان ثقة في ذات نفسه، ولذلك أورده الذهبي في " الضعفاء " وقال: " قال ابن عدي: لم أر له حديثا منكرا. وقال العقيلي: له أحاديث لا يتابع
عليها
وقال الحافظ في " التقريب ": " صدوق يخطىء
وليس له في مسلم إلا هذا الحديث. قال الحافظ في " التهذيب ": " لكنه في الشواهد
ثانيا: ولما كان قد تفرد بهذه الزيادة التي ليس لها شاهد في الطرق السابقة، وكان فيه ما ذكرنا من الضعف في الحفظ، فالقواعد الحديثية تعطينا أنها زيادة منكرة، كما لا يخفى على المهرة
ثالثا: أن هذه الزيادة مخالفة للقرآن القائل في غير ما آية: " ولا تزر وازرة وزر أخرى " ولذلك اضطر النووي إلى تأويلها بقوله: " معناه: أن الله يغفر تلك الذنوب للمسلمين ويسقطها عنهم، ويضع على اليهود والنصارى مثلها بكفرهم وذنوبهم، فيدخلهم النار بأعمالهم لا بذنوب المسلمين، ولابد من هذا التأويل لقوله تعالى: " ولا تزر وازرة وزر أخرى "، وقوله: " ويضعها " مجاز، والمراد يضع عليهم مثلها بذنوبهم
وأقول: لكن التأويل فرع التصحيح، وقد أثبتنا بهذا التخريج والتحقيق أن الحديث بهذه الزيادة منكر، فلا مسوغ لمثل هذا التأويل
وليس كذلك أصل الحديث فإنه صحيح قطعا، ومعناه كما قال النووي: " ما جاء في حديث أبي هريرة: لكل أحد منزل في الجنة، ومنزل في النار، فالمؤمن إذا دخل الجنة خلفه الكافر في النار، لاستحقاقه ذلك بكفره، ومعنى (فكاكك من النار) أنك كنت معرضا لدخول النار، وهذا فكاكك، لأن الله تعالى قدر عددا يملؤها، فإذا دخلها الكفار بكفرهم وذنوبهم صاروا في معنى الفكاك للمسلمين ". والله أعلم