৩৭১২

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ

৩৭১২-[৫২] জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ আমি আমার উম্মাতের ওপর তিনটি বিষয়ে শঙ্কিত থাকি- তা হলো, চাঁদ বা তারকার কক্ষপথে অতিক্রম করার হিসাব অনুযায়ী বৃষ্টি কামনা করা এবং আমীর বা শাসকের জুলুম-অত্যাচার ও তাকদীদের প্রতি অবিশ্বাস করা। (আহমাদ)[1]

اَلْفَصْلُ الثَّالِثُ

وَعَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم يَقُول: ثلاثةٌ أَخَافُ عَلَى أُمَّتِي: الِاسْتِسْقَاءُ بِالْأَنْوَاءِ وَحَيْفُ السُّلْطَانِ وَتَكْذيب الْقدر

وعن جابر بن سمرة قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول ثلاثة اخاف على امتي الاستسقاء بالانواء وحيف السلطان وتكذيب القدر

ব্যাখ্যা: এখানে তিনটি কর্ম বা তিনটি বৈশিষ্ট্যের কথা বলা হয়েছে, অথবা তিন প্রকারের মানুষের কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ তিনটি কর্মের বা বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে আমার উম্মাত পথভ্রষ্ট হয়ে যায় কিনা আমি সেই আশংকা করি।

প্রথমতঃ যারা তারকা অথবা চন্দ্রের কক্ষপথের মাধ্যমে বৃষ্টি বা পানি কামনা করে থাকে। চন্দ্রের ঊনত্রিশটি কক্ষ পথ রয়েছে, প্রত্যহ এক একটি কক্ষ পথে সে পরিভ্রমণ করে থাকে।

অনুরূপ তারকার রয়েছে নির্দিষ্ট কক্ষপথ, এই কক্ষপথেই তারা পরিভ্রমণ করে থাকে। আরবের মুশরিকগণ চন্দ্র অথবা তারকার উদয় অথবা কক্ষপথের মাধ্যমে বৃষ্টি প্রার্থনা করতো। অথবা ধারণা করতো যে, অমুক নক্ষত্রের কারণেই আমরা বৃষ্টিপ্রাপ্ত হয়েছি। এটা মুসলিম ‘আক্বীদার সম্পূর্ণ পরিপন্থী।

সহীহুল বুখারীতে (হাঃ ৪১৪৭) যায়দ ইবনু খালিদ (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুদায়বিয়ার বছর আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে বের হলোম। একরাতে খুব বৃষ্টি হলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিয়ে ফজরের সালাত আদায় করলেন। এরপর আমাদের দিকে ফিরে বসলেন, অতঃপর বললেনঃ তোমরা জানো কি, তোমাদের রব কি বলেছেন? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রসূলই অধিক জানেন। তখন তিনি বললেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেনঃ আমার কতিপয় বান্দা আমার প্রতি ঈমান এনেছে, আর কতিপয় আমার প্রতি কুফরী করেছে। যারা বলেছে আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়ায় আমরা বৃষ্টিপ্রাপ্ত হয়েছি তারা আমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপনকারী মু’মিন, আর নক্ষত্রের (প্রভাবের) প্রতি অস্বীকারকারী। আর যারা বলেছে যে, অমুক তারকার কারণে বৃষ্টি হয়েছে তারা তারকার প্রতি ঈমান এনেছে এবং আমাকে অস্বীকারকারী কাফির হয়েছে।

আল্লাহ বৃষ্টিদানের একচ্ছত্র কর্তৃত্বের অধিকারী মেনে নিয়ে আল্লাহ প্রদত্ত প্রকৃতির স্বভাব মোতাবেক অমাবস্যা অথবা পূর্ণিমার সময় জোয়ার ভাটা অথবা সম্ভাবনার বৃষ্টিপাতের কথা বলা দোষণীয় নয়।

দ্বিতীয়তঃ বাদশাহ বা শাসকের জুলুমও অত্যাচার। অর্থাৎ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মাতের শাসকদের জুলুমের আশংকা করেছেন। (এ আশংকা আজ কতই না সত্যে পরিণত হয়েছে) [সম্পাদক]

তৃতীয়তঃ তাকদীর বা ভাগ্যকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা। ভাগ্যের ভালো-মন্দ, মিষ্টতা-তিক্ততা সবই আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়, এটা ইসলামী ‘আক্বীদার অন্যতম একটি বিষয়। কিন্তু উম্মাতের এক দল লোক এই তাকদীরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে, ফলে তারা ঈমানহারা হয়ে যাবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের ওপর সেই আশংকা ব্যক্ত করেছেন।

‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেছেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনটি বৈশিষ্ট্যের ব্যাপারে আশংকা করেছেন। কেননা যারা আসবাব বা উপকরণকেই মৌলিক কারণ ও যথার্থ বলে বিশ্বাস করে এবং উপকরণের স্রষ্টাকে বাদ দেয় তারা মূলতঃ শির্কের মধ্যে আরেক শির্কে পতিত হয়েছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ যঈফ (Dai'f)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৮: প্রশাসন ও বিচারকার্য (كتاب الإمارة والقضاء)