৩৫৪৭

পরিচ্ছেদঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মুরতাদ এবং গোলযোগ সৃষ্টিকারীকে হত্যা করা প্রসঙ্গে

৩৫৪৭-[১৫] জারীর ইবনু ’আব্দুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খস্’আম সম্প্রদায়ের মুকাবিলায় একটি ক্ষুদ্র বাহিনী পাঠালেন। অতঃপর উক্ত সম্প্রদায়ের কিছু সংখ্যক লোক আত্মরক্ষার জন্য সাজদারত হলো, কিন্তু দ্রুতবেগে তাদেরকে হত্যা করা হলো। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এ সংবাদ পৌঁছল। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মৃত ব্যক্তির উত্তারাধিকারীদেরকে অর্ধেক দিয়াত (রক্তপণ) পরিশোধ করার জন্য হুকুম দিয়ে বললেন, যে সকল মুসলিমরা মুশরিকদের মাঝে বসবাস করে, আমার ওপর তাদের কোনো দায়-দায়িত্ব নেই। সাহাবীগণ জানতে চাইলেন, হে আল্লাহর রসূল, এরূপ কেন? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, কেননা তাদের উচিত ছিল অনতিদূরে অবস্থান করা, যাতে একে অপরের আগুন পর্যন্ত দৃষ্টিপাত না হয়। (আবূ দাঊদ)[1]

وَعَنْ جَرِيرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ قَالَ: بَعَثَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَرِيَّةً إِلَى خَثْعَمَ فَاعْتَصَمَ نَاسٌ مِنْهُمْ بِالسُّجُودِ فَأَسْرَعَ فِيهِمُ الْقَتْلَ فَبَلَغَ ذَلِكَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَمَرَ لَهُمْ بِنِصْفِ الْعَقْلِ وَقَالَ: «أَنَا بَرِيءٌ مِنْ كُلِّ مُسْلِمٍ مُقِيمٍ بَيْنَ أَظْهُرِ الْمُشْرِكِينَ» قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ لِمَ؟ قَالَ: «لَا تَتَرَاءَى نَارَاهُمَا» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ

وعن جرير بن عبد الله قال بعث رسول الله صلى الله عليه وسلم سرية الى خثعم فاعتصم ناس منهم بالسجود فاسرع فيهم القتل فبلغ ذلك النبي صلى الله عليه وسلم فامر لهم بنصف العقل وقال انا بريء من كل مسلم مقيم بين اظهر المشركين قالوا يا رسول الله لم قال لا تتراءى ناراهما رواه ابو داود

ব্যাখ্যা: খত্ত্বাবী বলেনঃ তাদের ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন জানতে পারলেন তখন তাদের ওপর অর্ধ দিয়াত দিতে বলেন। এর কারণ ‘‘ফাতহুল ওয়াদূদ’’-এ উল্লেখ আছে যে, এর কারণ হলো তারা নিজেদেরকে কাফিরদের মাঝে রাখার জন্য নিজেরা সহযোগিতা করেছে। এরা যেন এমন লোকের মতো যারা নিজের কর্মের কারণে অথবা অন্যের কারণে ধ্বংস হয়। তাই তাদের অপরাধের অংশ বাদ হয়ে গেছে।

নিহায়াহ্ গ্রন্থে উল্লেখ আছে- মুসলিমদেরকে মুশরিকদের বাসস্থান থেকে দূরে থাকা জরুরী ওয়াজিব।

আর এমন স্থানে অবতরণ না করে যেখানে তাদের গৃহে অগ্নি প্রজ্জ্বলন করলে মুশরিকদের চিহ্ন আরো স্পষ্ট হয়। কিন্তু সে মুসলিমের সাথে রাত্রে অবতরণ করবে। এই হাদীসটির দ্বারা হিজরতের জন্য উৎসাহ দেয়া হয়েছে।

تَرَاءَى শব্দটি বাবে تفاعل থেকে এসেছে। এর অর্থ হলো কেউ কাউকে দেখা। تَرَاءَى-কে نار-এর সাথে সম্বন্ধ করা হয়েছে। এটা ‘আরবদের রূপক কথা। এর অর্থ হচ্ছে মুখোমুখী থাকা। نَارَاهُمَا تَخْتَلِفَانِ অর্থাৎ এটা আহবান করে আল্লাহর দিকে আর এটা আহবান করে শায়ত্বনের দিকে।

খত্ত্বাবী বলেনঃ এর তিন ধরনের অর্থ আছে- ১. কেউ বলেন, এর অর্থ হলো দু’টির বিধান সমান নয়।

২. কেউ বলেন, এর অর্থ আল্লাহ দারুল ইসলাম ও দারুল কুফ্রকে আলাদা করেছেন। সুতরাং কাফিরদের এলাকায় মুসলিমদের বসবাস করা জায়িয নয়।

৩. কেউ বলেন, এর অর্থ হলো মুসলিম যেন মুশরিকের আদর্শ-বৈশিষ্ট্যে বৈশিষ্ট্যম--ত না হয়। আর তাদের চরিত্র ও আকার-আকৃতির সাথে মিলে না যায়।

হাফিয শামসুদ্দীন ইবনুল কইয়্যিম (রহ.) বলেনঃ «لَا تَتَرَاءَى نَارَاهُمَا» বাক্যটি সাবলীল যথার্থ বিশুদ্ধ যাতে সংক্ষিপ্ত বর্ণনায় অধিক গুরুত্বপূর্ণ অর্থ নিহিত থাকে। তিনি বলেন, হাদীসের অর্থ আগুন হলো কোনো গোত্রের অবতরণের চিহ্ন স্বরূপ। এটা তাদের দিকে আহবান করে। অতএব মুশরিকদের আগুন শায়ত্বনের পথে এবং জাহান্নামের আগুনের প্রতি আহবান করে। কেননা তা আল্লাহর অবাধ্যতার জন্য জ্বালানো হয়েছে। আর মু’মিনের আগুন আল্লাহর প্রতি, তার আনুগত্যের প্রতি ও দীনের সম্মানের প্রতি। এই যখন অবস্থা তখন দুই আগুন কিভাবে একই হয়।

সুনানে নাসায়ীতে রয়েছে- «لَا يَقْبَلُ اللّٰهُ عَزَّ وَجَلَّ مِنْ مُشْرِكٍ بَعْدَمَا أَسْلَمَ عَمَلًا، أَوْ يُفَارِقَ الْمُشْرِكِينَ إِلَى الْمُسْلِمِينَ» অর্থাৎ ‘‘কোনো মুশরিক ইসলাম গ্রহণ করার পর মুশরিকদের পরিত্যাগ করে মুসলিমের নিকটে না আসা পর্যন্ত আল্লাহ কোন ‘আমল কবুল করেন না।’’ আবূ দাঊদে সামুরাহ্ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করে, যে ব্যক্তি মুশরিকের সাথে মিলেমিশে বসবাস করে সে তাদের মতই। আবূ দাঊদ-এর মারাসীলে উল্লেখ আছে।

মাকহূল (রহঃ) রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করে বলেন, তোমরা সন্তানদেরকে শত্রুর পাশে রেখো না। (‘আওনুল মা‘বূদ ৫ম খন্ড, হাঃ ২৬৪২)


হাদিসের মানঃ সহিহ/যঈফ [মিশ্রিত]
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৬: কিসাস (প্রতিশোধ) (كتاب القصاص)