৩৫৩৩

পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - মুরতাদ এবং গোলযোগ সৃষ্টিকারীকে হত্যা করা প্রসঙ্গে

৩৫৩৩-[১] ’ইকরিমাহ্ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন জনৈক নাস্তিককে ’আলী (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত করা হলো। তিনি তাদেরকে পুঁড়িয়ে ফেললেন (হত্যা করলেন)। এ সংবাদ যখন ইবনু ’আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট পৌঁছল তখন তিনি বললেন, আমি যদি তদস্থলে থাকতাম তাহলে তাদেরকে পোড়াতাম না। কেননা রসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে যে, তোমরা আল্লাহর শাস্তি (আগুন) দ্বারা কাউকে শাস্তি দিয়ো না। নিশ্চয় আমি তাদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাত অনুযায়ী হত্যা করতাম। এ কারণে যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যে তার দীনকে পরিবর্তন করে, তাকে হত্যা কর। (বুখারী)[1]

بَابُ قَتْلِ أَهْلِ الرِّدَّةِ وَالسُّعَاةِ بِالْفَسَادِ

عَنْ عِكْرِمَةَ قَالَ: أُتِيَ عَلِيٌّ بِزَنَادِقَةٍ فَأَحْرَقَهُمْ فَبَلَغَ ذَلِكَ ابْنَ عَبَّاسٍ فَقَالَ: لَوْ كُنْتُ أَنَا لَمْ أُحْرِقْهُمْ لِنَهْيِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تُعَذِّبُوا بِعَذَابِ اللَّهِ» وَلَقَتَلْتُهُمْ لِقَوْلِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ بَدَّلَ دِينَهُ فَاقْتُلُوهُ» . رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ

عن عكرمة قال اتي علي بزنادقة فاحرقهم فبلغ ذلك ابن عباس فقال لو كنت انا لم احرقهم لنهي رسول الله صلى الله عليه وسلم لا تعذبوا بعذاب الله ولقتلتهم لقول رسول الله صلى الله عليه وسلم من بدل دينه فاقتلوه رواه البخاري

ব্যাখ্যা: زَنَادِقَةٌ শব্দটি زيديق এর বহুবচন। আবূ হাতিম আর অন্য কেউ বলেনঃ زنديق শব্দটি ফারসী ও ‘আরবীকৃত, এটা মূলত ছিল زنده كرداي অর্থাৎ কালের স্থায়িত্ব। কেননা তার কর্ম ও জীবন অমর।

কেউ কেউ বলেনঃ সব বিষয়ে সূক্ষ্মদর্শীকে زنديق (যিনদীক) বলা হয়। সা‘লাব বলেন, ‘আরবী ভাষায় زنديق কোনো শব্দ নেই। বরং তারা অধিক ষড়যন্ত্রকারীকে زنديق বলেন।

শাফি‘ঈ ফাকীহদের একটি দল এবং আরো অন্যরা বলেন- যারা ইসলামকে প্রকাশ করে এবং কুফরীকে গোপন রাখে তাকে زنديق বলা হয়।

ইমাম নববী বলেনঃ যে দীনকে গ্রহণ করে না তাকে যিনদীক বলা হয়।

মুহাম্মাদ বিন মা‘ন বলেনঃ যিনদীক হলো দ্বৈতবাদী যারা যুগের স্থায়িত্ব ও একের পর আরেকটি আসার মতবাদে অর্থাৎ পুনর্জন্মে বিশ্বাসী।

শাফি‘ঈদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী যিনদীক হলো মুনাফিক। তবে যিনদীক ও মুনাফিক এক নয়। বরং প্রত্যেক যিনদীক হলো মুনাফিক, কিন্তু প্রত্যেক মুনাফিক যিনদীক নয়। কারণ কিতাব ও সুন্নাহ মোতাবেক মুনাফিক ইসলামকে প্রকাশ করে কিন্তু মূর্তিপূজা ও ইয়াহূদীবাদকে গোপন করে। আর দ্বৈতবাদীরা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে কেউ ইসলামকে প্রকাশ করতো না।

হাদীস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, কাউকে পুড়িয়ে হত্যা করা যাবে না। কারণ যে হাদীসে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছু নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে পুড়িয়ে হত্যা করতে বলেছিলেন সেই হাদীসে আছে : «إِنَّ النَّارَ لَا يُعَذِّبُ بِهَا إِلَّا اللّٰهُ» ‘‘আল্লাহই আগুন দ্বারা শাস্তি দিবেন।’’

আবূ দাঊদে ইবনু মাস্‘ঊদ-এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে : «أَنَّه لَا يَنْبَغِىْ أَنْ يُعَذِّبَ بِالنَّارِ إِلَّا رَبُّ النَّارِ»

অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতিরেকে আর কারো জন্য আগুন দ্বারা শাস্তি দেয়া উচিত নয়।

ইমাম আবূ দাঊদ ও ইমাম দারাকুত্বনী نهى-কে النهى التنزيهى বলে অভিহিত করেছেন। যেমন এ ব্যাপারে ইমামদের মাঝে মতভেদ রয়েছে। হাদীসের রক্ষণাবেক্ষণমূলক মত হলো যখন ইমাম এ ব্যাপারে কঠোরতা অবলম্বন করতে চাইবে তখন ইচ্ছা করলে এটা বাস্তবায়ন করতে পারবে। যা অন্যান্য হাদীসে ‘আলী -এর কথায় ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

হাদীসে মুরতাদকে হত্যা করার প্রমাণ পাওয়া যায়। আর মুরতাদ চাই পুরুষ হোক বা মহিলা হোক সে হত্যার যোগ্য। হানাফী মাযহাবের অনুসারীগণ শুধু পুরুষকে হত্যার সাথে খাস করেছেন। আর মহিলাদেরকে হত্যা করতে নিষেধ মর্মে মত পেশ করেছেন। তারা এর দলীল হিসেবে একটি হাদীসকে উল্লেখ করেন। যেমন তাতে বলা হয়েছে, مَا كَانَتْ هٰذِه لِتُقَاتِلَ অর্থাৎ নিহত মহিলাকে দেখে বললেন, একে হত্যা করতে হতো না। অতঃপর মহিলা নিষিদ্ধ হয়ে যায়। হানাফীরা আরো বলেন যে, নিশ্চয় «من» হরফে শর্তটি উপরোক্ত হাদীস থাকার কারণে ব্যাপকভাবে মহিলাকে শামিল করে না।

জুমহূর মুহাদ্দিসীন এই نهى (নিষেধাজ্ঞা)-কে প্রাথমিক মহিলা কাফির যারা হত্যার সাথে সম্পৃক্ত নয় এবং যুদ্ধেও জড়িয়ে পড়েনি তাদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছেন। আর মহিলা মুরতাদকে হত্যা করার বিষয়ে মু‘আয -এর হাদীসে রয়েছে, যখন তাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইয়ামানে পাঠালেন তাকে বললেনঃ أَيُّمَا امْرَأَةٍ ارْتَدَّتْ عَنِ الْإِسْلَامِ فَادْعُهَا فَإِنْ عَادَتْ وَإِلَّا فَاضْرِبْ عُنُقَهَا অর্থাৎ যে কোনো মহিলা ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করলে তাকে দা‘ওয়াত দাও, এতে যদি সে ফিরে আসে তাহলে আসলো। অন্যথায় তাকে হত্যা করো। হাদীসটির সানাদ হাসান পর্যায়ের। বিবদমান বিষয়ে এ হাদীসের গন্তব্যে প্রত্যাবর্তন করা ওয়াজিব। আর যিনা, চুরি, মদ্যপান, অপবাদের মতো প্রত্যেক শাস্তির ক্ষেত্রে মহিলা-পুরুষ যুক্ততা উপরোক্ত মহিলা মুরতাদকে হত্যার বিষয়টিকে আরো মজবুত করে দেয়।

আর বলা যায়, নিশ্চয় ইবনু ‘আব্বাস বলেন, মহিলা মুরতাদ হত্যাযোগ্য।

সকল সাহাবা (রাঃ) এবং আবূ বাকর স্বীয় খিলাফাতে মহিলা মুরতাদকে হত্যা করলে কেউ এটাকে মন্দ বলেননি। (ফাতহুল বারী ১২ তম খন্ড, হাঃ ৬৯২২)

আস্ সিনদী (রহঃ) বলেনঃ «مَنْ بَدَّلَ دِينَه» এর ব্যাপকতা পুরুষ-মহিলা উভয়কে শামিল করে। আর যারা যুদ্ধে মহিলা হত্যা নিষেধের কারণে এটাকে শুধু পুরুষের সাথে খাস করেছেন। তাদের এই খাসকরণে দুর্বলতার ইঙ্গিত স্পষ্ট। সুতরাং এ ব্যাপকতা মেনে নেয়া হাদীস পালনের অধিক নিকটতম পথ। আল্লাহই ভালো জানেন। (নাসায়ী ৪র্থ খন্ড, হাঃ ৪০৭১)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ ইকরিমা (রহঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৬: কিসাস (প্রতিশোধ) (كتاب القصاص)