৩৫১৫

পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - যে সব অপরাধের ক্ষতিপূরণ (জরিমানা) নেই

৩৫১৫-[৬] সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরজার ছিদ্র দিয়ে উঁকি দিল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর (হাতে) একটি শলাকা ছিল, যা দিয়ে তিনি মাথা চুলকাচ্ছিলেন। এমতাবস্থায় তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমি যদি নিশ্চিতভাবে জানতাম যে, তুমি (সংগোপনে) আমার দিকে তাকাচ্ছ, তাহলে আমি এর দ্বারা (শলাকা দিয়ে) তোমার চোখ ফুঁড়ে দিতাম। কেননা অনুমতি নেয়ার বিধান এ চোখের কারণেই দেয়া হয়েছে (যাতে কেউ কিছু দেখতে না পায়)। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ مَا يُضْمَنُ مِنَ الْجِنَايَاتِ

وَعَن سهل بنِ سعد: أَنَّ رَجُلًا اطَّلَعَ فِي جُحْرٍ فِي بَابِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِدْرًى يَحُكُّ بِهِ رَأْسَهُ فَقَالَ: «لَوْ أَعْلَمُ أَنَّكَ تنظُرُني لطَعَنْتُ بهِ فِي عَيْنَيْكَ إِنَّمَا جُعِلَ الِاسْتِئْذَانُ مِنْ أَجْلِ الْبَصَرِ»

وعن سهل بن سعد ان رجلا اطلع في جحر في باب رسول الله صلى الله عليه وسلم ومع رسول الله صلى الله عليه وسلم مدرى يحك به راسه فقال لو اعلم انك تنظرني لطعنت به في عينيك انما جعل الاستىذان من اجل البصر

ব্যাখ্যা: مِدْرًى মীম বর্ণে যের ও দাল বর্ণে জযম যোগে। এটা একটা লৌহ খন্ড। যার দ্বারা চুল আঁচড়ানো হয়। কেউ বলেন এটি مِشْطٌ তথা চিরুনীর ন্যায়। কেউ বলেন এটি লোহার কতগুলো কাঠির সমষ্টি যা দেখতে চিরুনীর মতো। আবার কেউ বলেনঃ এটি একটি খড়ি বিশেষ যা দ্বারা মহিলাগণ চুলকে পরিপাটি করে থাকেন। এর বহুবচন مَدَارٰى যারা বলেন এটার অর্থ চিরুনী তাদের জন্য এটা দলীল। (শারহে মুসলিম ১৪ খন্ড, হাঃ ২১৫৬)

তুহফাতুল আহওয়াযীতে বলা হয়েছে, مِدْرٰى হচ্ছে খিলালের ন্যায় লোহা অথবা কাঠের খন্ড। আবার কেউ বলেনঃ এটা কাঠের তৈরি যা চিরুনীর দাঁতের ন্যায় ও যাতে একটি ডাটি বা বাহু রয়েছে। এটা সাধারণত মানুষ অধিকাংশ সময় শরীরের যেখানে তার হাত পৌঁছতে পারে না সেখানে এর দ্বারা চুলকায়। আর যার নিকটে চিরুনী না থাকে সে এর দ্বারা জমাট চুলকে পরিপাটি করে।

খত্বীব তাঁর كفاية গ্রন্থে উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন। যাতে রয়েছে مِدْرٰى ও مِشْطٌ এক জিনিস নয়। কারণ তাতে مِدْرٰى ও مِشْطٌ-কে আলাদা আলাদাভাবে উল্লেখ করেছেন। যেমন-

قَالَتْ خَمْسٌ لَمْ يَكُنِ النَّبِيُّ ﷺ يَدَعُهُنَّ فِي سَفَرٍ وَلَا حَضَرٍ الْمَرْأَةُ وَالْمُكْحُلَةُ وَالْمُشْطُ وَالْمِدْرٰى وَالسِّوَاكُ

অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফরে হোক কিংবা বড়িতে কখনো মহিলা, শুরমাদানী, চিরুনী, শলাকা কাঠি ও মিসওয়াক ছাড়া থাকতেন না। তবে হাদীসের সানাদে আবূ উসায়ইমাহ্ বিন ইয়া‘লা য‘ঈফ রাবী রয়েছেন।
(তুহফাতুল আহওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৭০৯)

হাদীসটি চিরুনী ব্যবহার ও চুল আঁচড়ানোর দলীল। ‘আলিমগণ বলেছেনঃ মহিলাদের জন্য চিরুনী করা মুস্তাহাব। তবে পুরুষদের জন্য শর্ত হলো যে, তারা প্রতিদিন অথবা প্রতি দুই দিনে অথবা এরূপ ঘন ঘন চিরুনী করবে না। বরং পূর্বের সিঁথি যখন মুছে যাবে বা মিটে যাবে তখন চিরুনী করবে। (শারহে মুসলিম ১৪ খন্ড, হাঃ ২১৫৬)

ইমাম নববী বলেনঃ الاستأذان অনুমতি প্রার্থনা শারী‘আত কর্তৃক নির্দেশিত হুকুম। এটা প্রবর্তন করার কারণ হলো যাতে দৃষ্টি কোনো নিষিদ্ধ বস্তুর উপর আপতিত না হয়। তাই কারো জন্য কোনো দরজার আস্থানায় ও সুরঙ্গ ফাঁকে বা ছিদ্রে তা দেয়া বৈধ নয়। যাতে সে অপরিচিত মহিলার ওপর দৃষ্টি আপতিত হওয়ার সম্মুখীন হয়।

হাফিয বলেনঃ প্রত্যেকের জন্য শারী‘আতে অনুমতি প্রার্থনার বিধান রয়েছে এমনকি মাহরাম ব্যক্তির ক্ষেত্রেও। যাতে গোপন বিষয় প্রকাশিত না হয়ে যায়। ইমাম বুখারী তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘আদাবুল মুফরাদ’-এ উল্লেখ করেছেন : ইবনু ‘উমার তার কোনো বালেগ সন্তানের নিকট বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করতেন না।

* ‘আলকামাহ্ এর বর্ণনায় রয়েছে : এক ব্যক্তি ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ)-এর নিকট এসে বলেনঃ আমি আমার মায়ের নিকটে প্রবেশের সময় অনুমতি প্রার্থনা করব? তিনি বললেন, তুমি তোমার মায়ের সর্বাবস্থা অবলোকন করতে পারবে না। অর্থাৎ উচিত নয়।

* মূসা বিন ত্বলহাহ্-এর বর্ণনায় রয়েছে : তিনি বলেন, আমি আমার পিতার সাথে মায়ের নিকটে প্রবেশ করতে চাইলাম। পিতা প্রবেশ করলে আমি আববার অনুসরণ করলাম। তখন আমার পিতা আমার বুকে ধাক্কা দিয়ে বললেন- তুমি অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করতে চাও!

* ‘আত্বা-এর রিওয়ায়াতে আছে- তিনি বলেনঃ আমি ইবনু ‘আব্বাস -কে জিজ্ঞেস করলাম, আমার বোনের নিকটেও অনুমতি চাইবো? তিনি বলেন, হ্যাঁ। রাবী বলেন, আমি বললাম সে আমার বাড়িতে থাকে। ইবনু ‘আব্বাস বলেনঃ তুমি কি তাকে উলঙ্গ অবস্থায় দেখতে চাও? এসব আসারের সানাদ সহীহ। (তুহফাতুল আহওয়াহী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৭০৯)

সহীহ মুসলিম-এর ভাষ্যকার বলেনঃ প্রথমে অনিচ্ছায় কারো নজর যদি কোনো অপরিচিত মানুষের ওপর পড়ে যায় তবে এতে কোনো গুনাহ হবে না। এখানে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়া তার জন্য ওয়াজিব। যদি সে দৃষ্টিকে অবনমিত করে তাহলে এতে কোনো পাপ নেই। আর যদি সে দৃষ্টি অব্যাহত রাখে তবে সে পাপী হবে। কেননা এক্ষেত্রে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নজরকে ফিরিয়ে নিতে আদেশ দিয়েছেন। আর কুরআনে বর্ণিত হয়েছে,

قُلْ لِلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوْا مِنْ أَبْصَارِهِم

‘‘মু’মিনদের বল তাদের দৃষ্টি অবনমিত করতে আর তাদের লজ্জাস্থান সংরক্ষণ করতে।’’ (সূরা আন্ নূর ২৪ : ৩০)

কাযী বলেনঃ ‘আলিমগণ বলেছেন অনাকাঙ্খিতভাবে নজর পড়ার হাদীসে রাস্তাতে মহিলাদের মুখমণ্ডল না ঢেকে রাখার দলীল রয়েছে। আসলে ঢেকে রাখা মুস্তাহাব সুন্নাত। শারী‘আত সঠিক কারণ ব্যতীত পুরুষদের দৃষ্টি অবনমিত রাখা ওয়াজিব। আর শারী‘আত সঠিক কারণগুলো হলো:

১. সাক্ষ্য প্রদানের ক্ষেত্রে। ২. চিকিৎসা নেয়ার ক্ষেত্রে। ৩. বিবাহ করার উদ্দেশে কাউকে দেখার ক্ষেত্রে। ৪. দাসী কেনার সময়। ৫. বেচা-কেনার লেনদেনের সময়।

আরো এরূপ শারী‘আত কারণে। তবে প্রয়োজনের অতিরিক্ত বৈধ নয়। (শারহে মুসলিম ১৪ খন্ড, হাঃ ২১৫৯)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ সাহল বিন সা'দ (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৬: কিসাস (প্রতিশোধ) (كتاب القصاص)