৩৩১২

পরিচ্ছেদঃ ১৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - লি‘আন

৩৩১২-[৯] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কুরায়শ নেতা ’উতবাহ্ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (উহুদ যুদ্ধে কাফির অবস্থায় যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দন্ত মুবারক শহীদ করেছিল) সে তার ভাই সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ)-এর নিকট মৃত্যুর পূর্বে ওয়াসিয়্যাত করে যায় যে, কুরায়শ নেতা যাম্’আহ্-এর দাসীর গর্ভজাত সন্তান আমার ঔরসের, তুমি তাকে (স্বীয় ভাইয়ের পুত্ররূপে) নিয়ে এসো। তিনি [’আয়িশাহ্ (রাঃ)] বলেন, মক্কা বিজয়ের সময়ে সা’দ তাকে গ্রহণ করে বলল, এ আমার ভাইয়ের পুত্র। এদিকে যাম্’আহ্-এর পুত্র ’আব্দ (অস্বীকৃতি জানিয়ে বাধা সৃষ্টি করল), এ তো আমার ভাই। অতঃপর উভয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত হলো।

সা’দ বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমার ভাই একে গ্রহণ করার জন্য আমাকে ওয়াসিয়্যাত করেছে। এর প্রতিবাদে ’আব্দ ইবনু যাম্’আহ্ বলল, আমার ভাই, আমার পিতার দাসীর গর্ভের সন্তান, আমার পিতার শয্যাসঙ্গিনীর উৎসে জন্মেছে। এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে ’আবদ ইবনু যাম্’আহ্! সে তোমারই অংশিদারিত্ব হবে। শয্যা যার সন্তান তার আর ব্যভিচারীর জন্য পাথর (অর্থাৎ- বঞ্চিত হওয়া)। অতঃপর তিনি স্বীয় সহধর্মিণী সাওদাহ্ বিনতু যাম্’আহ্ (রাঃ)-কে সম্বোধন করে বললেন, তুমি ঐ সন্তান হতে পর্দা করবে, সে তোমার ভাই নয়। কারণ তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পুত্রটির মাঝে ’উত্বার গঠন-প্রকৃতির সাদৃশ্য দেখতে পান। অতঃপর ছেলেটি মৃত্যু পর্যন্ত সাওদার সামনে আসেনি। অপর এক বর্ণনায় আছে- হে ’আব্দ ইবনু যাম্’আহ্! ঐ ছেলেটি তোমার ভাই, কেননা সে তার পিতার শয্যাসঙ্গিনীর উৎসে জন্মগ্রহণ করেছে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ اللِّعَانِ

وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: كَانَ عُتْبَةُ بْنُ أَبِي وَقَّاصٍ عَهِدَ إِلَى أَخِيهِ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ: أَنَّ ابْنَ وَلِيدَةِ زَمْعَةَ مِنِّي فَاقْبِضْهُ إِلَيْكَ فَلَمَّا كَانَ عَامُ الْفَتْحِ أَخَذَهُ سَعْدٌ فَقَالَ: إِنَّهُ ابْنُ أَخِي وَقَالَ عَبْدُ بْنُ زَمْعَةَ: أَخِي فَتَسَاوَقَا إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ سَعْدٌ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ أَخِي كَانَ عَهِدَ إِلَيَّ فِيهِ وَقَالَ عَبْدُ بْنُ زَمْعَةَ: أَخِي وَابْن وليدة أبي وُلِدَ على فرَاشه فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «هُوَ لَكَ يَا عَبْدُ بْنَ زَمْعَةَ الْوَلَدُ لِلْفِرَاشِ وَلِلْعَاهِرِ الْحَجَرُ» ثُمَّ قَالَ لِسَوْدَةَ بِنْتِ زَمْعَةَ: «احْتَجِبِي مِنْهُ» لِمَا رَأَى مِنْ شَبَهِهِ بِعُتْبَةَ فَمَا رَآهَا حَتَّى لَقِيَ اللَّهَ وَفِي رِوَايَةٍ: قَالَ: «هُوَ أَخُوكَ يَا عَبْدُ بْنَ زَمَعَةَ مِنْ أَجْلِ أَنَّهُ وُلِدَ عَلَى فِرَاشِ أَبِيهِ»

وعن عاىشة قالت كان عتبة بن ابي وقاص عهد الى اخيه سعد بن ابي وقاص ان ابن وليدة زمعة مني فاقبضه اليك فلما كان عام الفتح اخذه سعد فقال انه ابن اخي وقال عبد بن زمعة اخي فتساوقا الى رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال سعد يا رسول الله ان اخي كان عهد الي فيه وقال عبد بن زمعة اخي وابن وليدة ابي ولد على فراشه فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم هو لك يا عبد بن زمعة الولد للفراش وللعاهر الحجر ثم قال لسودة بنت زمعة احتجبي منه لما راى من شبهه بعتبة فما راها حتى لقي الله وفي رواية قال هو اخوك يا عبد بن زمعة من اجل انه ولد على فراش ابيه

ব্যাখ্যা: (الْوَلَدُ لِلْفِرَاشِ) ‘‘শয্যা যার সন্তান তার’’ অর্থাৎ যদি কোনো ব্যক্তির স্ত্রী থাকে বা তার মালিকানাধীন দাসী থাকে যাকে সে শয্যায় নিয়েছে, তবে সম্ভাবনাময় সময়ের ভিতর মেয়েটি বাচ্চা জন্ম দিলে সেই বাচ্চার বংশ উক্ত ব্যক্তির দিকে সম্পৃক্ত হবে, আর পিতা ও বাচ্চার মাঝে মীরাসের বিধান এবং পিতা পুত্রের অন্যান্য বিধান কার্যকর হবে। চাই বাচ্চা বর্ণ বা সাদৃশ্যে পিতার মতো হোক বা না হোক।

মহিলা কারো ফিরাশ বা শয্যা কেবল বিবাহের ‘আকদের মাধ্যমে হয়ে যায়। ‘আলিমগণ এ বিষয়ে ইজমা বা ঐকমত্য বর্ণনা করেন। তবে তারা শর্ত করেন যে, শয্যা প্রমাণিত হওয়ার পর সহবাসের সম্ভাবনা থাকতে হবে। যদি সহবাসের কোনো সম্ভাবনা না থাকে যেমন পশ্চিমা কোনো ব্যক্তি প্রাচ্য কোনো নারীকে বিবাহ করল কিন্তু তাদের কেউই কোনো সময় তাদের দেশ ত্যাগ করেনি, এমতাবস্থায় মেয়ে যদি সম্ভাবনাময় সময় তথা বিয়ের ছয় মাস পরেও বাচ্চা জন্ম দেয় তবে বাচ্চাটি ঐ ব্যক্তির হবে না। কেননা এটা তার হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। এটা হচ্ছে ইমাম মালিক, শাফি‘ঈ এবং সমস্ত ‘আলিমদের মত। তবে ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) সম্ভাবনার শর্ত করেননি। কেবল বিবাহের ‘আকদের মাধমে তার নিকট বাচ্চার বংশ প্রমাণ হয়ে যাবে যদি ঐ ব্যক্তি বাচ্চাকে তার বলে অস্বীকার না করে।

ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) বাচ্চার বংশ প্রমাণে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনে এই মত পোষণ করেছেন। অর্থাৎ একটি বাচ্চাকে জারজ না বলার সর্বোচ্চ উপায় খুঁজতে হবে। একান্ত নিরুপায় না হলে চেষ্টা করতে হবে তার বংশ প্রমাণের। এখানে বিয়েটাকেই একটি উপায় হিসেবে ধরে নেয়া হয়েছে। তাই অসম্ভবের ক্ষেত্রেও লোকটি যদি বাচ্চাকে তার বলে গ্রহণ করে নেয় তবে তাকে জারজ বলে সমাজে আখ্যায়িত করে বংশ জড় কাটার চেয়ে ভালো।
এ হলো স্ত্রীর ক্ষেত্রে শয্যা প্রমাণিত হওয়া। তবে দাসীর ক্ষেত্রে শয্যা কেবল সহবাস দ্বার প্রমাণিত হবে। কোনো দাসী কারো মালিকানায় আসলে সে তার শয্যা বলে গণ্য হবে না যতক্ষণ না উক্ত ব্যক্তি তার সাথে সহবাস করেছে।

(وَلِلْعَاهِرِ الْحَجَرُ) ‘‘আর ব্যভিচারী বঞ্চিত’’ বাক্যটির শাব্দিক অর্থ হলো যিনাকারীর জন্য পাথর। অর্থাৎ তার জন্য ব্যর্থতা ও বঞ্চিত হওয়া ছাড়া কিছু নেই। বাচ্চার বেলায় তার কোনো অধিকার নেই। ‘আরবরা তার জন্য পাথর এবং তার মুখে মাটি বলে উদ্দেশ্য করেন, তার জন্য ব্যর্থতা ও বঞ্চিত হওয়া ছাড়া কিছু নেই। কেউ কেউ বলেন, তার জন্য পাথর অর্থাৎ তার ওপর রজমের দণ্ডবিধি প্রয়োগ হবে। ইমাম নববী এই মত উল্লেখের পর বলেন, এটি দুর্বল; কেননা যে কোনো যিনাকারীকে রজম করা যায় না। রজম কেবল শারী‘আতে বিবাহিতা ব্যক্তির ওপর প্রয়োগ হয়। এছাড়া কেবল বাচ্চা নাকচের দ্বারা রজমের বিধান জারী হয় না। অথচ হাদীসটি বাচ্চা নাকচের বেলায় বর্ণিত হয়েছে। (শারহে মুসলিম ৯/১০ খন্ড, হাঃ ১৪৫৭)

(احْتَجِبِىْ مِنْهُ) ‘‘তুমি তার থেকে পর্দা করো’’ এই হুকুমটি সতর্কতামূলক। কেননা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাচ্চাকে ‘আব্দ বিন যাম্‘আহ্-এর বলে সাব্যস্ত করেছেন। এই হিসেবে সে সাওদার ভাই। কিন্তু মূল উসূলের ভিত্তিতে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছেলেটিকে ‘আব্দ বিন যাম্‘আহ্-এর জন্য সাব্যস্ত করলেও সাদৃশ্যের ভিত্তিতে রসূলের পূর্ণ অনুমান ছিল ছেলেটি সা‘দ এর ভাইয়ের। তাই সাওদাকে পর্দা করতে বলেন।

এখানে আবারো প্রমাণিত হলো যে, সাদৃশ্যের ভিত্তিতে কোনো কিছু অনুমান করা যেতে পারে। কিন্তু এর ভিত্তিতে কোনো হুকুম প্রদান করা যাবে না। এখানে ছেলেটি সা‘দ এর ভাইয়ের বলে প্রবল ধারণায় না পৌঁছলে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওদাকে পর্দা করার হুকুম দিতেন না। কিন্তু ছেলেকে সা‘দ-এর ভাইয়ের বলার দৃঢ় কোনো দলীল না থাকায় শয্যার দলীলের ভিত্তিতে ছেলেকে ‘আব্দ বিন যাম‘আহ্-এর জন্য সাব্যস্ত করলেন। অপরদিকে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুমানে ছেলেটি সা‘দ এর ভাইয়ের হওয়ায় সাওদাকে পর্দা করতে বলেন।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩: বিবাহ (كتاب النكاح)