৩২৯৮

পরিচ্ছেদঃ ১২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - তিন তালাকপ্রাপ্তা রমণীর বর্ণনা

৩২৯৮-[৪] সুলায়মান ইবনু ইয়াসার (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দশাধিক সাহাবীর সাক্ষাৎ পেয়েছি; তাঁদের প্রত্যেকেই ঈলাকারীকে অপেক্ষা করতে বলেন।(শারহুস্ সুন্নাহ্)[1]

وَعَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ يَسَارٍ قَالَ: أَدْرَكْتُ بِضْعَةَ عَشَرَ مِنْ أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كُلُّهُمْ يَقُولُ: يُوقَفُ الْمُؤْلِي. رَوَاهُ فِي شرح السّنة

وعن سليمان بن يسار قال ادركت بضعة عشر من اصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم كلهم يقول يوقف المولي رواه في شرح السنة

ব্যাখ্যা: সুলায়মান ইবনু ইয়াসার। প্রখ্যাত তাবি‘ঈ এবং প্রসিদ্ধ সাত ফাকীহদের একজন।

(إيلاء) ‘ঈলা’ হচ্ছে কোনো ব্যক্তি চার মাস বা তার অধিক স্ত্রীর নিকট গমন না করার কসম করা। অতএব কোনো ব্যক্তি যদি স্ত্রীর সাথে ‘ঈলা’ করে তবে চার মাস পূর্বে তার নিকট গমন করবে না। গমন করলে সে কসম ভঙ্গকারী বলে গণ্য হবে এবং কসমের যে কাফফারা রয়েছে তাকে তা আদায় করতে হবে। এই অবস্থায় চার মাস পার হয়ে গেলে কি করবে- এ ব্যাপারে ‘আলিমদের মতানৈক্য রয়েছে। অধিকাংশ সাহাবীর মতে এভাবে চার মাস অতিক্রম করার কারণে স্ত্রীর ওপর তালাক পতিত হবে না। বরং তাদের বিষয়টি স্থগিত থাকবে। এমতাবস্থায় সে স্ত্রীকে গ্রহণ করে নিলে কাফফারা দিবে, গ্রহণের ইচ্ছা না থাকলে তালাক দিবে। স্ত্রীকে গ্রহণ করা বা তালাক দেয়া কোনটি না করলে কাযী এক ত্বলাকের মাধ্যমে তাদের বিবাহ বিচ্ছিন্ন করে দিবেন। ইমাম মালিক, ইমাম শাফি‘ঈ, ইমাম আহমাদ প্রমুখ (রহঃ) এই মত পোষণ করেন।
‘আলিমদের কারো কারো মতে চার মাসের ভিতর স্ত্রীকে গ্রহণ না করলে অটোমেটিক বা স্বয়ংক্রিয়ভাবে এক তালাক বায়্যিনাহ্ পতিত হয়ে যাবে। ইমাম সাওরী (রহঃ), ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) ও তাঁর অনুসারীরা এই মত পোষণ করেন। উভয়পক্ষই কুরআনে বর্ণিত ‘ঈলা’ সংক্রান্ত আয়াত দিয়ে দলীল পেশ করেন। ‘ঈলা’ সংক্রান্ত যে আয়াতটি কুরআনে বর্ণিত সেখানে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘যারা নিজেদের স্ত্রীদের নিকট গমন করবে না বলে কসম খেয়ে বসে তাদের জন্য চার মাসের অবকাশ রয়েছে, অতঃপর যদি পারস্পরিক সমঝোতা করে নেয়, তবে আল্লাহ ক্ষমাকারী দয়ালু। আর যদি তালাক দেয়ার সংকল্প করে নেয়, তাহলে নিশ্চয় আল্লাহ শ্রবণকারী ও জ্ঞানী।’’ (সূরা আল বাকারা ২ : ২২৭)

আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) ও তাঁর অনুসারীদের মতে, যদি বর্জনের সংকল্প করে অর্থাৎ চার মাসের ভিতর স্ত্রীকে গ্রহণ না করাই বর্জন বা ত্বলাকের সংকল্প। তাই চার মাসের ভিতর গ্রহণ না করলে চার মাস পার হতেই এক তালাক পতিত হয়ে বিবাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। ‘আবদুর রাযযাক এবং ইবনু আবূ শায়বাহ্ তাদের মুসান্নাফে ‘উসমান, ‘আলী, ইবনু মাস্‘ঊদ, ইবনু ‘আব্বাস প্রমুখ সহাবা (রাঃ) থেকে চার মাস পার হয়ে গেলে এক তালাক হয়ে যাওয়ার মতটি বর্ণনা করেন। (মুসান্নাফ ‘আব্দুর রাযযাক, অধ্যায় : তালাক, অনুচ্ছেদ : চার মাস অতিক্রম হওয়া, হাঃ ৬/৪৫৩; মুসান্নাফ ইবনু আবূ শায়বাহ্, অধ্যায় : তালাক, অনুচ্ছেদ : যে ঈলা করল তার সম্পর্কে তারা যা বলেন, হাঃ ৫/১৪৪)

আর যারা বলেন চার মাস পার হলে বিষয়টি স্থগিত থাকবে তাদের মতে আয়াতের ব্যাখ্যা হলো, যদি চার মাস পার হওয়ার পর তালাক দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ইমাম বুখারী ইবনু ‘উমার থেকে বর্ণনা করেন,

إِذَا مَضَتْ أَرْبَعَةُ أَشْهُرٍ يُوقَفُ حَتّٰى يُطَلِّقَ وَلَا يَقَعُ عَلَيْهِا الطَّلَاقُ حَتّٰى يُطَلِّقَ وَيُذْكَرُ ذٰلِكَ عَنْ عُثْمَانَ وَعَلِيٍّ وَأَبِي الدَّرْدَاءِ وَعَائِشَةَ وَاثْنَيْ عَشَرَ رَجُلًا مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ ﷺ

‘‘যখন চার মাস অতিক্রম করবে তালাক না দেয়া পর্যন্ত স্থগিত থাকবে। তালাক না দেয়া পর্যন্ত স্ত্রীর ওপর তালাক পতিত হবে না। ‘উসমান, ‘আলী, আবুদ্ দারদা, ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বারোজন সাহাবী থেকে এই মত বর্ণিত।’’ (সহীহুল বুখারী- অধ্যায় : তাফসীর, [لِّلَّذِينَ يُؤْلُونَ مِن نِّسَائِهِمْ] -এর ব্যাখ্যা অনুচ্ছেদ, হাঃ ৪৮৮১)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩: বিবাহ (كتاب النكاح)