৩২৫৯

পরিচ্ছেদঃ ১০. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার এবং তাদের প্রত্যেকের (স্বামী-স্ত্রীর) পারস্পরিক হক ও অধিকার সংক্রান্ত

৩২৫৯-[২২] হাকীম ইবনু মু’আবিয়াহ্ আল কুশায়রী (রহঃ) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, হে আল্লাহর রসূল! স্ত্রীগণ আমাদের ওপর কি অধিকার রাখে? উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি যখন খাও, তখন তাকেও খাওয়াও; তুমি পরলে তাকেও পরিধান করাও, (প্রয়োজনে মারতে হলে) মুখমণ্ডলে আঘাত করো না, তাকে গালি দিও না, (প্রয়োজনে তাকে ঘরে বিছানা পৃথক করতে পার), কিন্তু একাকিনী অবস্থায় রাখবে না। (আহমাদ, আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ)[1]

وَعَنْ حَكِيمِ بْنِ مُعَاوِيَةَ الْقُشَيْرِيِّ عَنْ أَبِيهِ قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا حَقُّ زَوْجَةِ أَحَدِنَا عَلَيْهِ؟ قَالَ: «أَنْ تُطْعِمَهَا إِذَا طَعِمْتَ وَتَكْسُوَهَا إِذَا اكْتَسَيْتَ وَلَا تَضْرِبِ الْوَجْهَ وَلَا تُقَبِّحْ وَلَا تَهْجُرْ إِلَّا فِي الْبَيْتِ» . رَوَاهُ أَحْمد وَأَبُو دَاوُد وَابْن مَاجَه

وعن حكيم بن معاوية القشيري عن أبيه قال: قلت: يا رسول الله ما حق زوجة أحدنا عليه؟ قال: «أن تطعمها إذا طعمت وتكسوها إذا اكتسيت ولا تضرب الوجه ولا تقبح ولا تهجر إلا في البيت» . رواه أحمد وأبو داود وابن ماجه

ব্যাখ্যা: স্বামী-স্ত্রী পরস্পর একে অপরের প্রতি কতিপয় হক বা কর্তব্য রয়েছে। স্ত্রীর প্রতি স্বামীর অবশ্য পালনীয় কর্তব্য জানতে চাওয়ায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেন, তুমি যখন খাবে তাকেও খাওয়াবে, তুমি যখন পরিধান করবে তাকেও পরিধান করাবে। অর্থাৎ প্রত্যেক স্বামীর জন্য ওয়াজিব হলো তার সাধ্যমতো স্ত্রীকে ভরণ-পোষণ করা। স্বামীর সাধ্যের বাইরে যেমন স্ত্রী উন্নত খাদ্য, উন্নত বস্ত্র পাবে না ঠিক তদ্রূপ স্বামীর সাধ্য থাকতে নিজে খেয়ে স্ত্রীকে উপোস রাখতে এবং বস্ত্রহীন করে রাখতে পারবে না। এমনকি ছিন্ন বস্ত্র অথবা খুব অল্প মূল্যের বস্ত্রও দিবে না। বরং সাধ্যের মধ্যে মানসম্পন্ন এবং ভারসাম্যপূর্ণ বস্ত্র তাকে দিবে।

স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য জীবন একটি মধুময় জীবন। সুতরাং এই মধুময় সম্পর্কের কেউই চির ধরাবে না। স্বামী স্ত্রীকে অহেতুক মারধর করবে না। স্ত্রী শারী‘আতের কোনো বিধি-বিধান লঙ্ঘনের কারণে একান্তই যদি তার ওপর শাসনমূলক কোনো ব্যবস্থা নিতে হয় তাহলে আল্লাহর এ বাণী লক্ষ্য করবে :

‘‘আর যদি তোমরা (স্ত্রীদের নিকট থেকে) অবাধ্যতার আশঙ্কা করো তাহলে তাদের নাসীহাত করো, (তাতে যদি ফল না হয় তাহলে) তাদের বিছানা পৃথক করে দাও, (যাতে তোমার সঙ্গ না পেয়ে অনুতপ্ত হয়ে তোমার আনুগত্যে ফিরে আসতে পারে)। এতেও যদি সে সংশোধন না হয় তবে তাদের (হালকা) প্রহার করো।’’ (সূরা আন্ নিসা ৪ : ৩৫)

এই প্রহারের ক্ষেত্রে নির্দেশনা হলোঃ তুমি তার মুখমণ্ডলে আঘাত করবে না। কেননা মুখমণ্ডল হলো মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ এবং প্রকাশ্য অঙ্গ। শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোর মধ্যে মুখমণ্ডল হলো অধিক সম্মানিত এবং স্পর্শকাতর, তাই সেখানে আঘাত করা নিষেধ।

স্ত্রী ছাড়া অন্য কাউকেও প্রহার করার প্রয়োজন হলে তাকেও মুখমণ্ডলে প্রহার করা এ হাদীসের দ্বারাই নিষিদ্ধ প্রমাণিত; কেননা এ হাদীসে যে মুখমন্ডলীর কথা বলা হয়েছে তা শুধু স্ত্রীর মুখের কথা বলা হয়নি বরং ‘আম্ বা ব্যাপকার্থে সকলের মুখেই প্রহার নিষেধ করা হয়েছে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো তার স্ত্রীদের মার-ধর করেননি। হাদীসে যে প্রহারের কথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন তা উপরে উল্লেখিত সূরা আন্ নিসা-এর ঐ আয়াতের ভিত্তিতেই বলেছেন। ফাকীহগণ ঐ প্রহারের একটি দৃষ্টান্ত পেশ করেছেন যে, ঐ প্রহার হবে মিসওয়াক বা মিসওয়াক জাতীয় কাঠ দ্বারা আঘাত করা। মূলতঃ এটি প্রহার নয় বরং প্রতীকী প্রহার, যাতে স্ত্রী সংশোধিত হয়।

‘ফতোয়া’-এ কাযী খান চার কারণে স্ত্রীকে প্রহার বৈধ করেছেন।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তাকে গালি দিও না। অর্থাৎ তাকে অশ্লীল ও খারাপ ভাষায় গালি গালাজ করো না। অথবা ‘‘আল্লাহ তোমাকে খারাপ বানিয়ে দিক’’ এ জাতীয় কথাও বলো না। আর তাকে বাড়ি ছাড়া করে তাকে অন্যত্রও ফেলে রাখবে না যাতে সে নিরাপত্তাহীনতায় পড়ে যায়। বরং আল কুরআনের নির্দেশ মতো ভিন্ন বিছানায় রাখবে যাতে সে তোমার বিরহ বেদনায় বিনীত হয়ে তোমার আনুগত্যে ফিরে আসে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৪র্থ খন্ড, হাঃ ২১৪২; মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩: বিবাহ (كتاب النكاح)