২৯৭২

পরিচ্ছেদঃ ১৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - বাগান ও জমিনের বর্গা (পরস্পর সেচকার্য করা ও ভাগে কৃষিকাজ, বর্গাচাষ করা)

২৯৭২-[১] ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বারের খেজুর বাগান ও জমিন খায়বারের ইয়াহূদীদেরকে দিয়েছিলেন। তারা নিজেদের অর্থায়নে তাতে চাষাবাদ করবে; আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ফল ও ফসলের অর্ধেক পাবেন। (মুসলিম)[1]

বুখারীর বর্ণনায় রয়েছে, অবশ্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বারকে ইয়াহূদীদের দিয়েছিলেন, তারা তাতে পরিশ্রম করবে ও শস্য ফলাবে, আর তারা উৎপাদনের অর্ধেকের অধিকারী হবে।

بَابُ الْمُسَاقَاةِ وَالْمُزَارَعَةِ

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَفَعَ إِلَى يَهُودِ خَيْبَرَ نَخْلَ خَيْبَرَ وَأَرْضَهَا عَلَى أَنْ يَعْتَمِلُوهَا مِنْ أَمْوَالِهِمْ وَلِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَطْرُ ثَمَرِهَا. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
وَفِي رِوَايَةِ الْبُخَارِيِّ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَعْطَى خَيْبَرَ الْيَهُودَ أَنْ يَعْمَلُوهَا ويزرعوها وَلَهُم شطر مَا يخرج مِنْهَا

عن عبد الله بن عمر ان رسول الله صلى الله عليه وسلم دفع الى يهود خيبر نخل خيبر وارضها على ان يعتملوها من اموالهم ولرسول الله صلى الله عليه وسلم شطر ثمرها رواه مسلموفي رواية البخاري ان رسول الله صلى الله عليه وسلم اعطى خيبر اليهود ان يعملوها ويزرعوها ولهم شطر ما يخرج منها

ব্যাখ্যা: (المساقة) বলতে কোনো বৃক্ষের ব্যাপারে কোনো লোককে এভাবে কর্মী নিয়োগ করা যে, সে পানি দেয়া ও লালন-পালনের মাধ্যমে বৃক্ষের রক্ষনাবেক্ষণ করবে এ শর্তের উপর যে, আল্লাহ তা‘আলা যে ফল দান করবেন বর্গাদাতা ও গ্রহীতার মাঝে নির্দিষ্ট অংশ বণ্টন হবে, যেমনটি আবাদী জমির ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)

শারহে মুসলিমে আছে,

أَنَّ رَسُولَ اللّٰهِ ﷺ عَامَلَ أَهْلَ خَيْبَرَ بِشَطْرِ مَا يَخْرُجُ مِنْهَا مِنْ ثَمَرٍ أَوْ زَرْعٍ وَفِي رِوَايَةٍ عَلٰى أَنْ يَعْتَمِلُوهَا مِنْ أَمْوَالِهِمْ وَلِرَسُولِ اللّٰهِ ﷺ شَطْرُ ثَمَرِهَا.

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বারের ভূমিকে তার অধিবাসীদের নিকট বর্গা দিয়েছেন, তাতে উৎপন্ন ফল ও ফসলের অর্ধেকের বিনিময়ে। অপর বর্ণনায় রয়েছে, খায়বারের অধিবাসীদের সুযোগ দিয়েছেন এ শর্তে যে, তারা নিজ ব্যয়ে চাষ করবে এবং উৎপাদিত ফলের অর্ধেক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রদান করবে।

এ হাদীসগুলোতে বর্গা দেয়ার বৈধতা রয়েছে- এ ব্যাপারে মত পেশ করেছেন মালিক, সাওরী, লায়স, শাফি‘ঈ, আহমাদ; মুহাদ্দিসদের মাঝে সমস্ত ফাকীহগণ, আহলুয্ যাহির ও জুমহূর বিদ্বানগণ। আবূ হানীফাহ্ বলেন, বর্গা দেয়া বৈধ হবে না এবং তিনি এ হাদীসগুলোর ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে যে, খায়বারকে বলপূর্বক বিজয় দান করা হয়েছে, তার অধিবাসীরা ছিল আল্লাহর রসূলের দাস। সুতরাং তিনি যা গ্রহণ করেছেন, তা তারই এবং যা ছেড়ে দিয়েছেন তা তারই।

জুমহূর এ হাদীসগুলোর বাহ্যিক দৃষ্টিভঙ্গি ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর (أُقِرُّكُمْ مَا أَقَرَّكُمْ اللّٰهُ) ‘‘আল্লাহ তোমাদের যতক্ষণ পর্যন্ত স্বীকৃতি দান করবে আমি তোমাদেরকে স্বীকৃতি দান করব।’’ এ উক্তির মাধ্যমে দলীল গ্রহণ করেছেন। এটা ঐ ব্যাপারে স্পষ্ট যে, নিশ্চয় এরা দাস ছিল না। কাযী বলেনঃ খায়বারের ক্ষেত্রে তারা মতানৈক্য করেছে তাকে বলপূর্বকভাবে, নাকি সন্ধির মাধ্যমে, নাকি যুদ্ধ ছাড়া সেখান থেকে তার অধিবাসীদেরকে বিতাড়নের মাধ্যমে বিজয় হয়েছে? নাকি তার কিছু অংশের সাথে সন্ধি করে এবং কিছু অংশকে বলপূর্বকভাবে? তিনি এমন বলেন, সর্বশেষ উক্তিটি বর্ণিত উক্তিসমূহের মাঝে সর্বাধিক বিশুদ্ধ মত। আর তা মালিক এবং তার অনুসারীদের বর্ণনা, ইবনু ‘উয়ায়নাহ্ মত পেশ করেছেন। তিনি বলেন, প্রতিটি উক্তির পক্ষেই দলীল বর্ণিত হয়েছে।

মুসলিম-এর এক বর্ণনাতে আছে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন খায়বারের উপর বিজয় লাভ করলেন, তখন সেখান হতে ইয়াহূদীদের বের করে দেয়ার ইচ্ছা করলেন, কেননা তখন তা আল্লাহ, তাঁর রসূল এবং মুসলিমদের। এটা ঐ ব্যক্তির পক্ষে প্রমাণ বহন করছে যে ব্যক্তি বলেছে বলপূর্বকভাবে খায়বার বিজয় হয়েছে। কেননা মুসলিমদের হক প্রতিষ্ঠিত হয় কেবলমাত্র বলপূর্বক বিজয়ের ক্ষেত্রে। যে ব্যক্তি বলেছে ‘সন্ধির মাধ্যমে’ তার কথার বাহ্যিক দিক হলো, নিশ্চয় ভূমিটি মুসলিমদের হওয়ার ব্যাপারে তাদের সাথে সন্ধি করা হয়েছে। আর আল্লাহ সর্বাধিক জ্ঞাত।

আর যে বৃক্ষ বর্গা দেয়া বৈধ হবে সেক্ষেত্রে তারা মতানৈক্য করেছে। দাঊদ (রহঃ) বলেনঃ বিশেষ করে খেজুর বৃক্ষের ব্যাপারে বৈধ হবে। শাফি‘ঈ বলেনঃ বিশেষভাবে খেজুর ও আঙ্গুর বৃক্ষের ব্যাপারে বৈধ হবে। মালিক বলেনঃ সকল বৃক্ষের ব্যাপারে বৈধ হবে, এ মতের পক্ষে শাফি‘ঈ (রহঃ)-এরও একটি উক্তি রয়েছে। আর আল্লাহই সর্বাধিক জ্ঞাত।

‘‘ফল বা ফসল’’ অর্থাৎ যেমন ফলের গাছ বর্গা দেয়া বৈধ, তেমনি ফসলের ক্ষেতও বর্গা দেয়া বৈধ। ইবনু আবূ লায়লা, আবূ ইউসুফ, মুহাম্মাদ ও সকল সুফীগণ, মুহাদ্দিসদের মাঝে যারা ফাকীহ তারা আহমাদ, ইবনু খুযায়মাহ্, ইবনু শুরায়হ ও অন্যান্যগণ বলেন, ফলের বৃক্ষ বর্গা দেয়া এবং শস্যক্ষেত্র বর্গা দেয়া একত্রে বৈধ এবং এদের হতে প্রতিটি আলাদাভাবেও বৈধ। (শারহে মুসলিম ৯/১০ম খন্ড, হাঃ ১৫৫১)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع)