২৮০৭

পরিচ্ছেদঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - সুদ

সকল মুসলিম এ বিষয়ে ঐকমত্য যে, সুদ হারাম। কেননা আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ ’’আল্লাহ সুদকে হারাম করেছেন এবং বেচা-কেনাকে করেছেন হালাল’’- (সূরা আল বাকারা ২ : ২৭৫)। আর এ বিষয়ে অসংখ্য প্রসিদ্ধ হাদীস রয়েছে যা সুদ হারাম হওয়ার অকাট্ট দলীল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছয়টি বিষয় উল্লেখ করেছেন যাতে সুদ হয়। আর তা হলো- সোনা, রূপা, গম, যব, খেজুর ও লবণ। আহলুয্ যাহিরদের মতে এ ছয়টি বস্তু ছাড়া আর অন্য কোনো বস্তুতে সুদ নেই। তাদের ব্যতীত অন্য সকল ’আলিমদের মতে ছয়টি দ্রব্যের মধ্যেই সুদ সীমাবদ্ধ নয়। বরং যে সকল বস্তুতে উল্লেখিত বস্তুর গুণাবলী পাওয়া যাবে তাতেও সুদ হবে। তবে গুণাবলী কি এ বিষয়ে ’আলিমদের মাঝে মতভেদ রয়েছে। ইমাম শাফি’ঈ ও ইমাম মালিক-এর মতে, সোনা ও রূপার মুদ্রা ছাড়াও যত ধরনের মুদ্রা রয়েছে তাতে সুদ হারাম। ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ)-এর মতে ওযনকৃত বস্তু হওয়ার কারণে সোনা-রূপাতে সুদ হারাম। অতএব সকল প্রকার ওযনকৃত দ্রব্যের মধ্যে সুদ হবে।

অন্য চারটি দ্রব্য, অর্থাৎ গম, যব, খেজুর ও লবণের মধ্যে সুদ হওয়ার কারণ ইমাম শাফি’ঈ-এর মতে তা খাদ্যদ্রব্য। অতএব সকল প্রকার খাদ্যদ্রব্যতেই সুদ হবে। আর ইমাম মালিক-এর মতে তা প্রধান খাদ্য এবং সংরক্ষিত বস্তু। অতএব সংরক্ষিত সকল প্রকার প্রধান খাদ্যশস্যের মধ্যেই সুদ হবে।

আর ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ)-এর মতে তা মাকীল অর্থাৎ পাত্র দ্বারা পরিমাপ করা বস্তু। অতএব পাত্র দ্বারা পরিমাপ করা হয় এমন সকল বস্তুতেই সুদ হবে। ’আলিমগণ এ বিষয়েও একমত যে, সুদ হয় এমন বস্তু কম বেশী করে এবং বাকীতেও বেচা-কেনা বৈধ যদি উভয় বস্তুর সুদের কারণ এক না হয় যেমন- সোনা ও গম। আর যদি একজাতীয় বস্তু হয় তাতে কমবেশী করা বৈধ নয় এবং বাকীতে বেচা-কেনাও বৈধ নয়। আর যদি একজাতীয় না হয়ে ভিন্ন জাতীয় হয় কিন্তু সুদ হওয়ার কারণ এক হয় তাহলে কমবেশী করা বৈধ কিন্তু বাকীতে বিক্রয় বৈধ নয়। যেমন সোনা ও রূপা এবং গম ও খেজুর। (শারহে মুসলিম ১১/১২ খন্ড, হাঃ ১৫৮৪)


২৮০৭-[১] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লা’নাত করেছেন, যে ব্যক্তি সুদ খায়, যে সুদ দেয়, যে সুদের কাগজপত্র লিখে, যে দু’জন সুদের সাক্ষী হয় তাদের সকলের ওপর। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো বলেছেন, (গুনাহের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকার কারণে) তারা সকলেই সমান। (মুসলিম)[1]

بَابُ الرِّبَا

عَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: لَعَنَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَكَلَ الرِّبَا وَمُوَكِلَهُ وَكَاتِبَهُ وَشَاهِدَيْهِ وَقَالَ: «هُمْ سَوَاءٌ» . رَوَاهُ مُسلم

عن جابر رضي الله عنه قال لعن رسول الله صلى الله عليه وسلم اكل الربا وموكله وكاتبه وشاهديه وقال هم سواء رواه مسلم

ব্যাখ্যা: هُمْ سَوَاءٌ ‘‘তারা সকলেই সমান’’ অর্থাৎ সুদগ্রহীতা, সুদদাতা, এর লেখক এবং সাক্ষী- এরা সকলেই পাপের সমান ভাগীদার। ‘আল্লামা নববী বলেনঃ এতে সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় যে, সুদ আদান প্রদান যেমন হারাম, অনুরূপভাবে সুদের চুক্তি লেখা এবং এর সাক্ষী দেয়া উভয়ই হারাম। (শারহে মুসলিম ১১/১২ খন্ড, হাঃ ১৫৯৯; মিরকাতুল মাফাতীহ)

হাদীসের শিক্ষা: সর্বপ্রকার হারাম কাজে সহযোগিতা করা হারাম। এতে হারাম কার্য সম্পাদনকারীর মতো সহযোগিতাকারীও পাপের সমান অংশীদার।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা) (كتاب البيوع)