২৭৪৫

পরিচ্ছেদঃ ১৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - মদীনার হারামকে আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক সংরক্ষণ প্রসঙ্গে

২৭৪৫-[১৮] উক্ত রাবী [আনাস (রাঃ)] হতে এ হাদীসটিও বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উহুদ পাহাড় দৃষ্টিগোচর হলো। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তা দেখে বললেন, এ পাহাড় আমাদেরকে ভালবাসে, আর আমরাও এ পাহাড়কে ভালবাসি। হে আল্লাহ! ইব্রাহীম (আঃ) মক্কাকে সম্মানিত করেছেন, আর আমি মদীনার দু’ সীমানার মধ্যবর্তী স্থানকে সম্মানিত করলাম। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ حَرَمِ الْمَدِيْنَةِ حَرَسَهَا اللّٰهُ تَعَالٰى

وَعَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ طَلَعَ لَهُ أُحُدٌ فَقَالَ: «هَذَا جَبَلٌ يُحِبُّنَا وَنُحِبُّهُ اللَّهُمَّ إِنَّ إِبْرَاهِيمَ حَرَّمَ مَكَّةَ وَإِنِّي أحرم مَا بَين لابتيها»

وعنه ان النبي صلى الله عليه وسلم طلع له احد فقال هذا جبل يحبنا ونحبه اللهم ان ابراهيم حرم مكة واني احرم ما بين لابتيها

ব্যাখ্যা: উহুদ পাহাড়ের নামকরণের কারণ বলতে গিয়ে ‘আল্লামা সুহায়লী (রহঃ) বলেন, (أُحُدٌ) ‘‘উহুদ’’ শব্দটি (أَحَدٌ) ‘‘আহাদুন’’ থেকে, অর্থ একক, একাকী; এটা অন্যান্য পাহাড় থেকে একাকি বা এককভাবে দাঁড়িয়ে আছে, এজন্য তার নাম উহুদ রাখা হয়েছে।

অথবা তার উপরের আরোহীগণই কিংবা আহলে উহুদগণই তাওহীদের সাহায্য করেছে এবং তার জন্য যুদ্ধ করেছে, এ কারণে এর নাম রাখা হয়েছে উহুদ।

নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ্জের সফর থেকে ফেরার সময় উহুদ পাহাড় দর্শন করে সেটার দিকে ইশারা করে বলেছিলেন, এ পাহাড়কে আমরা ভালবাসী সেও আমাদের ভালবাসে। সহীহুল বুখারীতে কিতাবুল জিহাদে আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত এক হাদীসের মাধ্যমে জানাযায় যে, এটা খায়বার যুদ্ধ থেকে ফেরার সময়ের ঘটনা। সহীহুল বুখারীতে আবূ হুমায়দ-এর অন্য এক বর্ণনায় তাবূক যুদ্ধ থেকে ফেরার সময়ের ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে।

এ সকল বিভিন্ন সময়ের ঘটনার ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে ইবনু হাজার আল আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, মূলত উপরে বর্ণিত প্রত্যেক সফর থেকে ফেরার সময়ই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কথাটি পুনরাবৃত্তি করেছিলেন।

উক্ত বাক্যটি নিয়ে ‘উলামাগণের মাঝে আরেক বক্তব্য রয়েছে, তা হলো একদলের মতে পাহাড়কে লক্ষ্য করে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণীঃ ‘‘আমরা সেটাকে ভালোবাসী’’ এর মনে হলো আহলে উহুদকে ভালোবাসী, আর আহলে উহুদ হলো আনসারগণ, এরা ছিলেন উহুদের প্রতিবেশী। দ্বিতীয় আরেকদল ‘আলিম বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনন্দের আতিশয্যে কথার কথায় বলে ফেলেছেন। ভালোবাসার ক্ষেত্রটা এরূপ হয়ে থাকে। তৃতীয় আরেকদলের মতে উহুদ পাহাড় যেহেতু জান্নাতের একটি পাহাড়, যেমন- হাদীসে এসেছে, সুতরাং তার প্রতি ভালোবাসার অভিব্যক্তি ব্যক্ত করা হয়েছে মানে জান্নাতের প্রতি ভালোবাসার কথা ব্যক্ত করা হয়েছে।

পাহাড় একটি জড়বস্ত্ত সে কিভাবে মানুষকে ভালোবাসতে পারে? এ ব্যাপারেও নানা জন নানা কথা বলেছেন। সবগুলো বক্তব্য তুলে ধরে ‘আল্লামা নাবাবী (রহঃ) বলেন, সবচেয়ে বিশুদ্ধ এবং পছন্দনীয় কথা হলো ‘‘উহুদ আমাদের ভালোবাসে’’ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ কথার অর্থ প্রকৃত অর্থেই ভালোবাসা (কোন রূপক অর্থে নয়)। আল্লাহ তা‘আলা তার মধ্যে ভাল-মন্দ তামীয করার মতো একটি শক্তি ও যোগ্যতা দান করেছেন যার মাধ্যমে সে ভালোবাসে। যেমন- আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ ‘‘অনেক পাথরই আল্লাহর ভয়ে (পাহাড় থেকে) পড়ে যায়’’- (সূরা আল বাক্বারাহ্ ২ : ৭৪)। অনুরূপ শুকনো কাঠ (আল্লাহর নাবীর সামনে) ক্রন্দন করেছিল, কংকর তাসবীহ পাঠ করেছিল, অনুরূপ পাথর মূসা (আঃ)-এর কাপড় নিয়ে দৌড়িয়ে পালাচ্ছিল ইত্যাদি, এগুলো প্রকৃতির ব্যতিক্রম কিছু ঘটনার দৃষ্টান্ত যা আল্লাহ তা‘আলা ঐ বস্ত্তগুলোর দ্বারা সংঘটিত করিয়েছেন। ইব্রাহীম (আঃ)-এর মক্কাকে হারাম ঘোষণার ব্যাখ্যা ইতিপূর্বে হয়েছে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك)