২৭২৬

পরিচ্ছেদঃ ১৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মক্কার হারামকে আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক সংরক্ষণ প্রসঙ্গে

২৭২৬-[১২] আবূ শুরাইহ আল ’আদাবী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি ’আমর ইবনু সা’ঈদ-কে বললেন, যখন আমীর মক্কায় সেনাবাহিনী পাঠাচ্ছিলেন (’আব্দুল্লাহ ইবনুয্ যুবায়র-এর বিরুদ্ধে এমন সময় বললেন), হে আমীর! আমাকে অনুমতি দিন, আমি আপনাকে একটি কথা বলব যা মক্কা বিজয়ের দিন সকালে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভাষণ দানকালে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন- এমন কথা যা আমার এই দুই কান শুনেছে, অন্তর মনে রেখেছে এবং দুই চোখ দেখেছে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন ভাষণ দান শুরু করলেন, তখন প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা স্বরূপ শুকরিয়া আদায় করলেন, এরপর বললেন, আল্লাহ মক্কাকে হারাম করেছেন। কোন মানুষ তা হারাম করেনি। তাই আল্লাহ তা’আলা ও পরকালে বিশ্বাসী এমন কোন লোকের পক্ষে মক্কায় রক্তপাত ঘটানো এবং এর গাছ কাটা হালাল হবে না।

যদি কেউ মক্কায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুদ্ধের অজুহাত দেখিয়ে অনুমতি আছে মনে করে, তবে তাকে বলবে- আল্লাহ তাঁর রসূলকে অনুমতি দিয়েছেন, তোমাকে অনুমতি দেননি। আল্লাহ তা’আলা আমাকে (রসূলকে) দিনের খুব অল্প সময়ের জন্য অনুমতি দিয়েছিলেন। অতঃপর তার পবিত্রতা পুনরায় ফিরে এসেছে, যেমন গতকাল ছিল। প্রত্যেক উপস্থিত ব্যক্তিই আমার এ কথা যেন অনুপস্থিত ব্যক্তিকে পৌঁছিয়ে দেয়। তারপর আবূ শুরাইহ-কে জিজ্ঞেস করা হলো, এ কথা শুনে ’আমর আপনাকে কি উত্তর দিয়েছিলেন? তিনি (আবূ শুরাইহ্) বললেন, জবাবে তখন তিনি বললেন, এ কথা আমি আপনার চেয়েও বেশি জানি। (মক্কার) হারাম কোন অপরাধীকে আশ্রয় দেয় না এবং রক্তপাত করে এমন পলাতককেও আশ্রয় দেয় না। অথবা আশ্রয় দেয় না তাকে যে অপরাধ করে মক্কায় পালিয়েছে (এমন ব্যক্তিকে)। (বুখারী, মুসলিম)[1]

عَن أبي شُريَحٍ العَدوِيِّ أَنَّهُ قَالَ لِعَمْرِو بْنِ سَعِيدٍ وَهُوَ يَبْعَثُ الْبُعُوثَ إِلَى مَكَّةَ: ائْذَنْ لِي أَيُّهَا الْأَمِيرُ أُحَدِّثْكَ قَوْلًا قَامَ بِهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الغدَ مِنْ يَوْمِ الْفَتْحِ سَمِعَتْهُ أُذُنَايَ وَوَعَاهُ قَلْبِي وَأَبْصَرَتْهُ عَيْنَايَ حِينَ تَكَلَّمَ بِهِ: حَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ ثُمَّ قَالَ: إِنَّ مَكَّةَ حَرَّمَهَا اللَّهُ وَلَمْ يُحَرِّمْهَا النَّاسُ فَلَا يَحِلُّ لِامْرِئٍ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ أَنْ يَسْفِكَ بِهَا دَمًا وَلَا يَعْضِدَ بِهَا شَجَرَةً فَإِنْ أَحَدٌ تَرَخَّصَ بِقِتَالِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِيهَا فَقُولُوا لَهُ: إِنَّ اللَّهَ قَدْ أَذِنَ لرَسُوله وَلم يَأْذَن لِرَسُولِهِ وَلَمْ يَأْذَنْ لَكُمْ وَإِنَّمَا أُذِنَ لِي فِيهَا سَاعَة نَهَارٍ وَقَدْ عَادَتْ حُرْمَتُهَا الْيَوْمَ كَحُرْمَتِهَا بِالْأَمْسِ وَلْيُبْلِغِ الشَّاهِدُ الْغَائِبَ . فَقِيلَ لِأَبِي شُرَيْحٍ: مَا قَالُ لَكَ عَمْرٌو؟ قَالَ: قَالَ: أَنَا أَعْلَمُ بِذَلِكَ مِنْكَ يَا أَبَا شُرَيْحٍ أَنَّ الْحَرَمَ لَا يُعِيذُ عَاصِيًا وَلَا فَارًّا بِدَمٍ وَلَا فَارًّا بِخَرْبَةٍ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ. وَفِي الْبُخَارِيِّ: الْخَرْبَةُ: الْجِنَايَة

عن ابي شريح العدوي انه قال لعمرو بن سعيد وهو يبعث البعوث الى مكة اىذن لي ايها الامير احدثك قولا قام به رسول الله صلى الله عليه وسلم الغد من يوم الفتح سمعته اذناي ووعاه قلبي وابصرته عيناي حين تكلم به حمد الله واثنى عليه ثم قال ان مكة حرمها الله ولم يحرمها الناس فلا يحل لامرى يومن بالله واليوم الاخر ان يسفك بها دما ولا يعضد بها شجرة فان احد ترخص بقتال رسول الله صلى الله عليه وسلم فيها فقولوا له ان الله قد اذن لرسوله ولم ياذن لرسوله ولم ياذن لكم وانما اذن لي فيها ساعة نهار وقد عادت حرمتها اليوم كحرمتها بالامس وليبلغ الشاهد الغاىب فقيل لابي شريح ما قال لك عمرو قال قال انا اعلم بذلك منك يا ابا شريح ان الحرم لا يعيذ عاصيا ولا فارا بدم ولا فارا بخربة متفق عليه وفي البخاري الخربة الجناية

ব্যাখ্যা: (وَهُوَ يَبْعَثُ الْبُعُوْثَ إِلٰى مَكَّةَ) ‘‘তিনি (‘আমর ইবনু সা‘ঈদ) মক্কাতে সৈন্যদল প্ররণ করছিলেন।’’ যে কারণে সৈন্যদল প্রেরণ করছিলেন তার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা এরূপ, মু‘আবিয়াহ্ (রাঃ) তাঁর জীবদ্দশায় তাঁর অন্তর্ধানের পর স্বীয় পুত্র ইয়াযীদ কে খলীফাহ্ মনোনীত করেন। হুসায়ন ইবনু ‘আলী  এবং ‘আব্দুল্লাহ ইবনুয্ যুবায়র ব্যতীত মদীনার সকলেই তার নিকট আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করেন। হুসায়ন ইবনু ‘আলী (রাঃ) কূফার লোকেদের আহবানে সাড়া দিয়ে তিনি সেখানে গমন করেন এবং এটি তাঁর মৃত্যুর কারণ ঘটে। ‘আব্দুল্লাহ ইবনুয্ যুবায়র মক্কায় গিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করে এবং মক্কার নেতৃত্ব তাঁর হাতে চলে আসে।

ফলে ইয়াযীদ ইবনু মু‘আবিয়াহ্ মদীনার গভর্নর ‘আমর ইবনু সা‘ঈদকে ‘আব্দুল্লাহ ইবনুয্ যুবায়র (রাঃ)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য সৈন্য প্রেরণ করার নির্দেশ দেন। ‘আমর ইবনু সা‘ঈদ ‘আমর ইবনুয্ যুবায়রকে তার নিযুক্ত সৈন্য বাহিনীর প্রধান নিযুক্ত করেন। অতঃপর তাকে তাঁর ভাই ‘আব্দুল্লাহ ইবনুয্ যুবায়র-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্রেরণ করেন, কেননা তার ভাই ‘আব্দুল্লাহর সাথে ‘আমর-এর শত্রুতা ছিল। ইত্যবসরে আবূ শুরাইহ্ এসে ‘আমর ইবনু সা‘ঈদের সাথে তার অনুমতিক্রমে এ বিষয়ে আলোচনা করেন যা অত্র হাদীসে বিবৃত্ত হয়েছে।

(إِنَّمَا أُذِنَ لِىْ فِيهَا سَاعَةًمِنْ نَهَارٍ) ‘‘আমাকে শুধুমাত্র কিছু সময়ের জন্য সেখানে লড়াই করার অনুমতি দেয়া হয়েছিল।’’ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, এ সময়ের পরিমাণ ঐ দিনের সূর্যোদয়ের পর থেকে ‘আসরের সময় হওয়া পর্যন্ত।

(وَقَدْ عَادَتْ حُرْمَتُهَا الْيَوْمَ كَحُرْمَتِهَا بِالْأَمْسِ) ‘‘পূর্বের মতই আজকে তার নিষিদ্ধতা পুনরায় ফিরে এসেছে।’’ অর্থাৎ- মক্কা বিজয়ের পূর্বের দিন সেখানে যেরূপ যুদ্ধ-বিগ্রহ হারাম ছিল এখন থেকে সে নিষিদ্ধতা পুনর্বহাল হয়েছে।

অত্র হাদীসের শিক্ষাঃ

(১) আমীরের সাথে কথা বলার পূর্বে অনুমতি নেয়া

(২) আমীরের সাথে উত্তম পন্থায় কথা বলার চেষ্টা করা

(৩) মক্কায় রক্ত প্রবাহিত করা হারাম, অর্থাৎ- অন্যায়ভাবে যুদ্ধ-বিগ্রহ করা হারাম।

(৪) মক্কার গাছ কাটা নিষেধ।

(৫) নিষ্ঠাবান কোন এক ব্যক্তির সংবাদ গ্রহণ করা বৈধ।

(أَنَّ الْحَرَمَ لَا يُعِيْذُ عَاصِيًا) ‘‘হারাম এলাকা কোন অপরাধীকে আশ্রয় দেয় না।’’ ‘আমর ইবনু সা‘ঈদ মনে করতেন যেহেতু মু‘আবিয়াহ্ (রাঃ) স্বীয় পুত্রকে খলীফাহ্ মনোনীত করেছেন। আর ইয়াযীদ (রাঃ) ইবনুয্ যুবায়র (রাঃ)-কে তার নিকট এসে আনুগত্যের শপথ গ্রহণের আদেশ দিয়েছিলেন, তাই ইবনুয্ যুবায়র-এর কর্তব্য হলো ইয়াযীদের নির্দেশ পালন করা। কিন্তু তিনি তার নির্দেশ পালন না করে অবাধ্য হয়েছিলেন, তাই তিনি তাকে অপরাধী মনে করতেন। এজন্য তিনি আবূ শু‘বাহ্-এর জওয়াবে এ কথা বলেছিলেন।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك)