২৬৭৮

পরিচ্ছেদঃ ১১. প্রথম অনুচ্ছেদ - ইহরাম অবস্থায় যা থেকে বেঁচে থাকতে হবে

২৬৭৮-[১] ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। জনৈক লোক রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এসে জিজ্ঞেস করলো, মুহরিম কোন্ ধরনের পোশাক পরবে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, জামা, পাগড়ি, পাজামা, টুপী, মোজা পরবে না। তবে যে লোকের জুতা নেই সে মোজা পরতে পারবে কিন্তু পায়ের গোড়ালির নিচ হতে মোজাদ্বয়কে কেটে দিবে। এমন কোন কাপড়ও পরবে না যাতে জা’ফারানের ও ওয়ার্‌স-এর রং রয়েছে। (বুখারী, মুসলিম; বুখারীর এক বর্ণনায় আরো একটু বেশি আছে- মুহরিম নারী বোরকা পরবে না, হাত মোজাও পরবে না।)[1]

بَابُ مَا يَجْتَنِبُهُ الْمُحْرِمُ

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ: أَنَّ رَجُلًا سَأَلَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَا يلبس مِنَ الثِّيَابِ؟ فَقَالَ: «لَا تَلْبَسُوا الْقُمُصَ وَلَا الْعَمَائِمَ وَلَا السَّرَاوِيلَاتِ وَلَا الْبَرَانِسَ وَلَا الْخِفَافَ إِلَّا أَحَدٌ لَا يَجِدُ نَعْلَيْنِ فَيَلْبَسُ خُفَّيْنِ وليقطعهما أَسْفَل الْكَعْبَيْنِ وَلَا تَلْبَسُوا مِنَ الثِّيَابِ شَيْئًا مَسَّهُ زَعْفَرَانٌ وَلَا وَرْسٌ» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ وَزَادَ الْبُخَارِيُّ فِي رِوَايَةٍ: «وَلَا تَنْتَقِبُ الْمَرْأَةُ الْمُحْرِمَةُ وَلَا تلبس القفازين»

عن عبد الله بن عمر ان رجلا سال رسول الله صلى الله عليه وسلم ما يلبس من الثياب فقال لا تلبسوا القمص ولا العماىم ولا السراويلات ولا البرانس ولا الخفاف الا احد لا يجد نعلين فيلبس خفين وليقطعهما اسفل الكعبين ولا تلبسوا من الثياب شيىا مسه زعفران ولا ورس متفق عليه وزاد البخاري في رواية ولا تنتقب المراة المحرمة ولا تلبس القفازين

ব্যাখ্যা: (عَنْ عَبْدِ اللّٰهِ بْنِ عُمَرَ: أَنَّ رَجُلًا) হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেন, কোন সনদেই এ লোকটির নাম খুঁজে পাইনি।

(سَأَلَ رَسُوْلَ اللّٰهِ ﷺ: مَا يَلْبِسُ) এখানে ما টি হরফে ইসতিফহাম তথা প্রশ্নবোধক অব্যয় অথবা মায়ে মাওসূলাহ্ অথবা سأل ক্রিয়ার দ্বিতীয় (مفعول) কর্ম- এই তিন পদ্ধতির প্রয়োগ হতে পারে। আর لبس এ শব্দটি যখন سَمِعَ يَسْمَعُ বাব থেকে ব্যবহৃত হয় তখন এর অর্থ পরিধান করা আর যদি (ضَرَبَ يَضْرِبُ) থেকে আসে তাহলে সন্দেহ, সংমিশ্রণ ঘটা এ ধরনের অর্থ হয়।

(الْمُحْرِمُ) হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেন, সমস্ত ‘আলিম এ ব্যাপারে একমত যে, এখানে المحرم দ্বারা পুরুষই উদ্দেশ্য মহিলা এখানে অন্তর্ভুক্ত হবে না। ‘আল্লামা ইবনুল মুনযির (রহঃ) বলেন, হজ্জের ক্ষেত্রে পুরুষ মহিলার কাপড় একই হবে শুধুমাত্র জা‘ফারান ও ওয়ারস্ মিশ্রিত কাপড়ের ক্ষেত্রে একটু পার্থক্য থাকে।

(مِنَ الثِّيَابِ) এখানে বলা হচ্ছে কোন্ প্রকার কাপড় পরবে? এ কথা আর মুসনাদে আহমাদ (২য় খণ্ড পৃষ্ঠা ৫৪) ‘উবায়দুল্লাহর সনদে এবং পৃষ্ঠা ৬৫ টি তে আইয়ূব থেকে, তবে দু’টি সানাদই মিলেছে নাফি‘-এর নিকট গিয়ে। আর এ বর্ণনাটি থেকে বুঝা যায় এ প্রশ্ন তিনি ইহরাম বাঁধার পূর্বেই করেছিলেন। ইমাম বায়হাক্বী (রহঃ)-এর বর্ণনায় ‘আবদুল্লাহ বিন ‘আওন তিনি নাফি' থেকে, তিনি ইবনু ‘উমার থেকে এ সূত্রে বর্ণিত হাদীসে আছে, ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেন, ‘‘মদীনার মসজিদের কোন এক দরজায় দাঁড়িয়ে একটি লোক বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! ما يلبس المحرم؟ তথা মুহরিম কি কি কাপড় পরিধান করবেন? বায়হাক্বী (রহঃ)-এর অন্য বর্ণনায় আইয়ূব, তিনি নাফি' থেকে, তিনি ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে نادى رجل رسول الله صلى الله عليه وسلم তথা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুৎবা দিচ্ছিলেন এই স্থানে তথা মসজিদে নাবাবীর সম্মুখভাগে দাঁড়িয়ে। সুতরাং এ বর্ণনা থেকে বুঝা যায় প্রশ্নটি তিনি করেছিলেন মদীনায়।

আর রাবীর কথা (ما يلبس المحرم من الثياب) এটাই এ ক্ষেত্রে প্রসিদ্ধ বর্ণনা যা বর্ণিত হয়েছে নাফি‘ ইবনু ‘উমার -এর সূত্রে এবং এটাকে আবূ ‘আওয়ানাহ্ ইবনু জুরায়জ-এর সূত্রে নাফি‘ থেকে যে শব্দে বর্ণনা করেছেন তা হলো (ما يترك المحرم) তথা মুহরিম কি কি কাপড় পরিধান থেকে বিরত থাকবেন। তবে ইমাম ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) বর্ণনাটি শায বলেছেন।

এ ক্ষেত্রে মতবিরোধ মূলত ইবনু জুরায়জকে নিয়ে নাফি'-কে নিয়ে নয়।

(لَا تَلْبَسُوا) বুখারী (রহঃ)-এর অন্য বর্ণনায় لا يلبس শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। এ উত্তরটি এ বিষয়ে বর্ণিত দু’ধরনের প্রশ্নের একটির সাথে সামঞ্জস্য হয় সে প্রশ্নটি হলো, ما يترك المحرم অথবা ما يجتنبى المحرم؟ তবে অধিকাংশ এবং সর্বাধিক সহীহ বর্ণনায় যে প্রশ্নটি এসেছে তা হলো (ما يلبس المحرم؟) তথা মুহরিম কি কি পরিধান করবে? আর এ প্রশ্নের উত্তর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দিয়েছেন পরিধানে নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ উল্লেখ করে, অর্থাৎ- এখানে প্রশ্ন হয়েছে কি কি পরিধান করবে উত্তরও সে অনুপাতে এটা পরবে ওটা পরবে এমন হওয়া দরকার ছিল কিন্তু তা না হয়ে হয়েছে এমন যে শুধু বলা হয়েছে সেগুলোর নাম যা পরিধান নিষেধ। এর রহস্য পরিধান বর্ণনা করতে গিয়ে ‘উলামায়ে কিরাম বলেন, মুহরিমের জন্য নিষিদ্ধ বিষয়ের সংখ্যা কমগুলো উল্লেখ করে বেশিগুলোকে জায়িয বলা হয়েছে। কারণ, যেগুলো নিষিদ্ধ তা ব্যতীত অন্যান্যগুলো বৈধ।

আর যদি বৈধগুলোর নাম উল্লেখ করা হতো তখন কথা বেশি হতো। এখান থেকে আরো বুঝা যায় যে, প্রশ্নকর্তা প্রশ্ন ঠিক মতো করতে পারেননি। কারণ তার উচিত ছিল নিষিদ্ধগুলো সম্পর্কে প্রশ্ন করা। অলংকার শাস্ত্রের কিছু বিদ্বান এ ধরনের প্রশ্নে এ ধরনের উত্তরকে اسلوب الحكيم বলে আখ্যা দিয়েছেন। এ জাতীয় ব্যবহার কুরআনে কারীমেও লক্ষ্য করা যায় যেমন, মহান আল্লাহ বলেন,

يَسْأَلُونَكَ مَاذَا يُنْفِقُوْنَ قُلْ مَا أَنْفَقْتُمْ مِنْ خَيْرٍ فَلِلْوَالِدَيْنِ

অর্থাৎ- ‘‘তারা তোমাকে জিজ্ঞেস করে তারা কি খরচ করবে তুমি বলে দাও যা খরচ করবে তা পিতা-মাতার জন্য।’’ (সূরা আল বাক্বারাহ্ ২ : ২১৫)

অত্র আয়াতে জিজ্ঞেস করা হয়েছে খরচের বিষয়বস্ত্ত সম্পর্কে আর উত্তর দেয়া হয়েছে খরচের স্থান সম্পর্কে। কেননা, এখানে প্রশ্নকর্তাকে বুঝানো হচ্ছে খরচের বিষয়বস্ত্তর চেয়ে খরচের স্থান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা বেশি প্রয়োজন ছিল।

(الْقُمُصَ) এটা এক ধরনের কাপড় যা বর্ম হিসেবে পরিচিত। ইবনুল হুমাম তার ফাতহুল কাদীরের ‘‘খরচ’’ অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন ‘‘درع’’ তথা বর্ম ও قمص (জামা) প্রায় একই বিষয়, কেবল পার্থক্য হলো জামার ক্ষেত্রে কাঁধের নিকট আর বর্মের ক্ষেত্রে বক্ষের নিকট পকেট লাগানো থাকে। অত্র হাদীস قميص তথা জামা এবং পরবর্তী سروايلات তথা পায়জামার কথা উল্লেখ করে মূলত এ ধরনের সব পোশাক যা শরীরকে বেষ্টন করে রাখে অথবা যা সেলাই করা যেমনঃ জুব্বা, জামা, আলখেল্লা, ট্রাউজার ও হাতমোজা থেকে নিষেধ করা হয়েছে।

‘আল্লামা ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন,

قال العلماء : الحكمة فى تحريم اللباس المذكور فى الحديث على المحرم ولباسة الازار والرداء ان يبعد عن الترفه ويتصف بصفة الخاشع الذليل..........الخ

অর্থাৎ- ‘উলামায়ে কিরাম বলেন, হাদীসে উল্লেখিত পোশাকগুলো হারাম করে মুহরিমের জন্য শুধুমাত্র লুঙ্গী ও চাদর পরিধানের কথার রহস্য হলো যাতে করে মুহরিম আনন্দ থেকে নিজেকে গুটিয়ে রেখে ভয়ভীতি সহকারে আল্লাহকে স্মরণ করে বেশি বেশি যিকরে লিপ্ত থাকতে পারে, মৃত্যুর কথা স্মরণ করতে পারে কাফনের কাপড়ের কথা এবং কাল ক্বিয়ামতের দিন খালি গাঁয়ে খালি পায়ে আল্লাহর দরবারে হাজির হতে হবে- এ কথা স্মরণ করতে পারে। অপরদিকে সুগন্ধি ও স্ত্রী ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞার কারণ হলো, যাতে করে সে দুনিয়াবী চাকচিক্য পরিত্যাগ করতে পারে আর যেহেতু সুগন্ধি ব্যবহারে স্ত্রী সহবাসের চাহিদা জাগে যা হাজীদের জন্য নিষেধ। সুতরাং ঐ মুহূর্তটিতে কেবলই পরকালের চিন্তাই যেন করতে পারে, তাই উল্লেখিত বিষয়গুলো মুহরিমের জন্য হারাম করা হয়েছে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك)