২৬৬২

পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - কুরবানীর দিনের ভাষণ, আইয়্যামে তাশরীক্বে পাথর মারা ও বিদায়ী তাওয়াফ করা

২৬৬২-[৪] ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ’আব্বাস ইবনু ’আবদুল মুত্ত্বালিব লোকদেরকে পানি পান করানোর জন্য মিনার রাতগুলো মক্কায় থাকার জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে অনুমতি চাইলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে অনুমতি দিলেন। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابٌ خُطْبَةُ يَوْمِ النَّحْرِ وَرَمْىِ أَيَّامِ التَّشْرِيْقِ وَالتَّوْدِيْعِ

وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: اسْتَأْذَنَ الْعَبَّاسُ بْنُ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يَبِيتَ بِمَكَّةَ لَيَالِيَ منى من أجلِ سِقايتِهِ فَأذن لَهُ

وعن ابن عمر قال استاذن العباس بن عبد المطلب رسول الله صلى الله عليه وسلم ان يبيت بمكة ليالي منى من اجل سقايته فاذن له

ব্যাখ্যা: (اسْتَأْذَنَ الْعَبَّاسُ بْنُ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ) এর দ্বারা তথা অত্র হাদীসটি দ্বারা ১১, ১২ ও ১৩ তারিখের রাতগুলো উদ্দেশ্য।

(مِنْ أَجْلِ سِقَايَتِه) ‘আল্লামা মুল্লা ‘আলী কারী হানাফী (রহঃ)-এর ব্যাখ্যায় বলেন, পানি পান করানোর দায়িত্ব থাকার কারণে অর্থাৎ- মাসজিদুল হারামে যেখানে যমযম কূপের পানি দ্বারা ভরপুর আর হাজীদের জন্য সেখান থেকে পানি পান করা ‘‘মানদূব’’ এবং তা পান করতে হয় তাওয়াফে ইফাযাহ্-এর পরপরই। আর অন্যান্য তাওয়াফের পরও তা পান করা যায় এবং প্রচন্ড ভীড় থাকার কারণে এ কূপ থেকে পানি পান করা কঠিন হয়ে পড়ে এবং যমযম কূপের পানি বারাকাতপূর্ণ এবং এ কূপটি প্রাথমিককালে কুসাই-এর তত্ত্বাবধানে, অতঃপর তার মৃত্যুর পর তারই পুত্র ‘আব্‌দ মানাফ-এর তত্ত্বাবধানে, অতঃপর তার মৃত্যুর পর তার পুত্র হাশিম-এর তত্ত্বাবধানে, তার মৃত্যুর পর তারই পুত্র ‘আবদুল মুত্ত্বালিব-এর তত্ত্বাবধানে, অতঃপর তার মৃত্যুর পর তারই পুত্র ‘আবদুল্লাহ এর নিকটে, অতঃপর তার মৃত্যুর পর তারই পুত্রের তত্ত্বাবধানে, এভাবে পর্যায়ক্রমে আজ পর্যন্ত এর ধারাবাহিকতা চলছে।

আল ফাকিহী (রহঃ) ‘আত্বা (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন, ‘আত্বা (রহঃ)-এর ব্যাখ্যায় বলেন, এখানে পানীয় দ্বারা উদ্দেশ্য হলো হাজীদের যমযম কূপের পানি পান করানো।

আযরাক্বী (রহঃ) বলেন, ‘আব্‌দ মানাফ মশকে করে যমযম কূপের পানি মক্কায় নিয়ে যেতেন এবং তা চামড়ার পাত্রে পান করার জন্য কা‘বার আঙ্গিনায় হাজীদের জন্য ঢেলে দিতেন। তারপর তার মৃত্যুর পর তার ছেলে হাশিম, তারপর ‘আব্দুল মুত্ত্বালিব এ দায়িত্ব পালন করেন। অতঃপর যমযম কূপ খনন করা হলে যাবীব (আঙ্গুর) কিনে তা যমযম কূপের পানিতে দিয়ে ‘নাবীয’ তৈরি করে তা মানুষের জন্য পরিবেশন করতেন।

ঐতিহাসিক ইবনু ইসহাক বলেন, কুসাই বিন কিলাব কাবা ঘরের দায়িত্বে অধিষ্ঠিত হলো তখন তারই দায়িত্ব ছিল কা‘বার গিলাফ পরানোর দায়িত্ব থেকে শুরু করে হাজীদের পানি পান করানো, ঝাণ্ডা ধরা, দারুণ নাদওয়ার দায়িত্ব সবই তার দায়িত্বে ছিল তার মৃত্যুর পর তার ছেলেরা পরস্পর পরামর্শক্রমে পানি পান করানো ও কা‘বার রক্ষণাবেক্ষণ করার দায়িত্ব ‘আব্দ মানাফকে আর বাকী দায়িত্ব অন্যান্য ভাইদের ওপর ন্যাস্ত ছিল। তারপরের বর্ণনাটি আগের মতই উল্লেখ করেছেন এবং একটু বর্ধিত করে বলেছেন,

ثم ولى السقاية من بعد عبد المطلب ولده العباس وهو يومئذ من أحدث اخدثه سنا فلم نزل بيده حتى اقام الاسلام وهي بيده فاقرها رسول الله ﷺ معه فهى اليوم إلى بنى العباس كذا فى الفتح-

অর্থাৎ- অতঃপর ‘আবদুল মুত্ত্বালিব-এর মৃত্যুর পর তদীয় পুত্র ‘আব্বাস (রাঃ) যিনি ছিলেন বয়সে নবীন তার হাতে এ মহান দায়িত্ব ন্যাস্ত হয় এবং ইসলাম ক্বায়িম হওয়া অবধি তা তারই হাতে থাকে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটাকে সমর্থন জানান আর এখন তা ‘আব্বাস (রাঃ)-এর বংশধরের হাতে রয়েছে। এমনটাই হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ)-এর ফাতহুল বারীতে আছে।

(فَأذِنَ لَه) অত্র হাদীস থেকে বুঝা যায়, আইয়্যামে তাশরীক্বের রাতগুলোতে মিনায় কাটানো শারী‘আতসম্মত। আর হাজীদের পানি পান করানোর উদ্দেশ্য যদি কেউ সেখানে রাত না কাটায় তাহলে তার কোন অসুবিধা নেই। এ ব্যাপারে সকল ‘উলামায়ে কিরামের ঐকমত্য রয়েছে। তবে মিনায় রাত কাটানো কি ওয়াজিব না সুন্নাহ- এ ব্যাপারে যথেষ্ট মতভেদ রয়েছে।

ইমাম মালিক ও তার ছাত্ররা বলেছেন ওয়াজিব। তিন রাতের এক রাত হলেও সেখানে কাটাতে হবে। আর সেখানে অবস্থান না করার প্রেক্ষিতে ‘আবদুল্লাহ বিন ‘আব্বাস (রাঃ)-এর কথানুপাতে কাফফারাও দেয়া প্রয়োজন। সে কথাটি হলো, (من نسى من نسكه شيئا اوتركه فليهرق دما- أخرجه البيهقى) অর্থাৎ- হজ্জের কোন কাজ কেউ ইচ্ছা করে ছেড়ে দিলে বা ভুলে গেলে তার অবশ্যই কাফফারাহ্ দিতে হবে। ইমাম বায়হাক্বী (রহঃ) কথাটি বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম মালিক (রহঃ) এ ব্যাপারে তার মুয়াত্ত্বাতে নাফি‘ ইবনু ‘উমার, ‘উমার বিন খাত্ত্বাব (রাঃ) থেকে একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন, সেটি হলো ‘উমার  বলেছেন, (لا يتبين احد من الحاج ليالى منى من واء العقبة) অর্থাৎ- হাজীদের কেউ যেন অবস্থানকালীন রাতগুলোকে ‘আক্বাবার পিছনে অবস্থান না করে।

এ ব্যাপারে ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ)-এর মাযহাব হলো, মিনায় অবস্থানের রাতগুলো মিনা ব্যতীত অন্যত্র অবস্থান করা ‘‘মাকরূহ’’, কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিনাতে অবস্থান করেছেন। তবে ইমাম আবূ হানীফা ও তার ছাত্রদের নিকট যদি কোন ব্যক্তি ইচ্ছা করেই মিনার রাতগুলোতে মিনা ব্যতীত অন্য কোথাও রাত কাটায় তাহলে তার কোন কাফফারাহ্ দিতে হবে না। কেননা তারা মনে করেন, এ রাতগুলোতে মিনায় অবস্থান করার কথা এজন্য বলা হয়েছে যাতে করে ঐ দিনগুলোতে কংকর নিক্ষেপ করা সহজ হয়। তাই কেউ যদি ঐ রাতগুলোতে সেখানে অবস্থান না করেও কংকর নিক্ষেপ করতে পারে তাহলে তা তার জন্য বৈধ হবে।

এ মাসআলাটিকে কেন্দ্র করে ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ)-এর দু’ধরনের কথা রয়েছে সর্বাধিক সহীহ হচ্ছে ওয়াজিব। কেউ কেউ বলেন, সুন্নাহ। সুতরাং প্রথম কথা অনুযায়ী মিনায় অবস্থান করা যদি ওয়াজিবই হয় তাহলে তাঁরা তা না করলে তাদের ওপর এ ভুলের কাফফারাহ্ বর্তাবে ওয়াজিব হিসেবে আর দ্বিতীয় কথানুযায়ী কাফফারা দেয়া সুন্নাহ হবে।

শাফি‘ঈ মাযহাব অবলম্বীদের নিকট কাফফারাহ্ দেয়া আবশ্যক হবে শুধু তার জন্য যিনি তিন রাতের কোন রাতেই মিনায় রাত যাপন করেনি। আর যদি কোন ব্যক্তি তিন রাতের কোন এক রাত মিনায় যাপন না করে তাহলে সে ব্যাপারে ঐ কথাগুলোই প্রণিধানযোগ্য যা বলা হয়েছে কংকর নিক্ষেপ করার বিষয়ে (যদি কেউ সাতটি কংকরের একটি না করে) ঐ কথাগুলোর সর্বাধিক সহীহ কথা হলো প্রথম রাত যাপন না করলে সে জন্য এক মুদ পরিমাণ সাদাকা দিতে হবে। আর দ্বিতীয় রাত না করলে এক দিরহাম। আর তৃতীয় রাত যদি না করে তাহলে ثلث دم তথা তিন ভাগের একভাগ কাফফারাহ্ দিতে হবে। আর তাদের নিকট রাত যাপন অর্থ হলো রাতের বেশি সময় অবস্থান করা কারণ রাত যাপন কথাটি হাদীসের مطابق তথা সাধারণভাবে বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং পূর্ণরাত মিনা থাকা আবশ্যক না।

فاقبح المعظم مقام الكل أي للأكثر حكم الكل

এ ক্ষেত্রে রাতের প্রথমাংশ বা শেষাংশের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।

এ মাসআলাতে ইমাম আহমাদ (রহঃ)-এর মতামত হচ্ছে। মিনায় রাত্রিগুলোতে মিনায় অবস্থান করা واجب (ওয়াজিব)। সুতরাং যে কেউ তিন রাতের মধ্যে একটিও যদি সেখানে অবস্থান না করে তাহলে তার ওপর কাফফারাহ্ আবশ্যক। তার থেকে-এর বর্ণিত আছে সে কিছু সাদাকা করে দিবে। অন্য বর্ণনায় এসেছে সাদাকা দেয়া লাগবে না। ইমাম আহমাদ (রহঃ)-এর সর্বাধিক স্পষ্ট দলীল হচ্ছে, মিনার দিনগুলোতে মিনায় রাত যাপন করা এটি হচ্ছে হজ্জের কাজসমূহের একটি অন্যতম কাজ। আর ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন,

(من نسى من نسكه شيئا أو تركه فليهرق دما) অর্থাৎ- যে কেউ হজ্জের কোন কাজ ভুলে গেলে একটি কুরবানী দিবে।

মিনায় রাত যাপনের মোটামুটি তিনটি দলীল হতে পারে,

১. নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে রাত যাপন করেছেন আর তিনি বলেছেন, (خذوا عنى مناسككم) তোমরা আমার নিকট থেকে তোমাদের হজ্জের কাজ শিখে ‘আমল কর। সুতরাং আমাদের নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে অনুসরণ করে মিনাতে রাত যাপন করতে হবে।

২. অত্র হাদীসে ‘আব্বাস (রাঃ)-কে সুযোগ দেয়ার কারণ প্রসঙ্গে হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেন, এ হাদীসটিও মিনায় রাত্রি যাপনের ওয়াজিবের দলীল, কারণ ‘আব্বাস (রাঃ)-কে সুযোগ দেয়ার একটি কারণ ছিল। আর যদি সে কারণ না থাকে তাহলে তো আর কেউ সুযোগ পাবে না। জমহূর ‘উলামায়ে কিরামের মতে মিনায় রাত যাপন করা ওয়াজিব।

৩. ‘উমার বিন খাত্ত্বাব (রাঃ) যিনি খুলাফায়ে রাশিদীনের অন্যতম যাদের অনুসরণ করতে আমরা আদিষ্ট তিনি মিনার দিনগুলোতে হাজীদেরকে মিনার বাইরে থাকতে নিষেধ করেছেন এবং যারা বাহিরে আছে তাদেরকে লোক পাঠিয়ে মিনার ভিতরে নিয়ে আসতে বলেছেন।

সুতরাং মোট কথা হলো, যদি কেউ উযরের কারণে মিনায় রাত যাপন করতে না পারে তাহলে তার কোন কাফফারাহ্ আবশ্যক হবে না। অন্যথায় আবশ্যক হবে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك)