২৫৫৭

পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - বিদায় হজের বৃত্তান্তের বিবরণ

২৫৫৭-[৩] ’আব্দুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজে হজের সাথে ’উমরা মিলিয়ে হজে তামাত্তু’ আদায় করেছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ’যুলহুলায়ফাহ্’ হতে কুরবানীর পশু সাথে নিয়েছিলেন এবং কাজের শুরুতে ’উমরার তালবিয়াহ্ পাঠ করলেন, তারপর হজের তালবিয়াহ্ পাঠ করলেন। তাই লোকেরাও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে হজের সাথে ’উমরা মিলিয়ে হজে তামাত্তু’ করলেন। তাদের কেউ কুরবানীর পশু সাথে নিয়ে এসেছে, আর কেউ সাথে আনেনি। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় পৌঁছে লোকদেরকে বললেন, তোমাদের মধ্যে যারা কুরবানীর পশু সাথে করে এনেছে সে যেন এমন কোন বিষয়কে হালাল মনে না করে যা ইহরামের কারণে তার ওপর হারাম হয়ে গিয়েছে যে পর্যন্ত সে নিজের হজ্জ/হজ সম্পন্ন না করে। আর তোমাদের মধ্যে যারা কুরবানীর পশু সাথে নিয়ে আসেনি, সে যেন বায়তুল্লাহর তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়ার সা’ঈ করে এবং মাথার চুল ছেটে হালাল হয়ে যায়। এরপর হজের জন্যে পুনরায় ইহরাম বাঁধে ও কুরবানীর পশু নেয়। আর যে কুরবানীর পশু সাথে নিতে পারলো না, তাহলে সে যেন তিনদিন হজের সময়েই সওম পালন করে এবং বাড়ীতে ফিরে আসার পর সাতদিন সওম রাখে।

অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মক্কায় পৌঁছে প্রথমে (’উমরার জন্য বায়তুল্লাহর) তাওয়াফ করলেন ও হাজারে আসওয়াদে চুম্বন করলেন। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সজোরে তিনবার তাওয়াফ করলেন আর চারবার স্বাভাবিক হাঁটলেন। বায়তুল্লাহর তাওয়াফ শেষে মাকামে ইব্রাহীমের নিকট দাঁড়িয়ে দু’ রাক্’আত সালাত (সালাত/নামাজ/নামায) আদায় করলেন, তারপর সালাম ফিরালেন। তারপর সেখান থেকে সাফা মারওয়ায় ফিরে গেলেন। তারপর সাফা ও মারওয়ায় গিয়ে সাতবার সা’ঈ করলেন। এরপরও তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (ইহরামের কারণে) যা তার ওপর হারাম ছিল তা নিজের হজ্জ/হজ সম্পন্ন না করা পর্যন্ত হালাল করলেন না। কুরবানীর তারিখে কুরবানীর পশু যাবাহ করলেন এবং (মিনা হতে) মক্কায় গিয়ে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করলেন। তারপর ইহরামের কারণে যা তার প্রতি হারাম ছিল তা হতে তিনি পূর্ণ হালাল হয়ে গেলেন। আর লোকেদের মধ্যে যারা কুরবানীর পশু সাথে নিয়ে এসেছিল তারাও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেরূপ করেছিলেন সেরূপ করেছেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ قِصَّةِ حَجَّةِ الْوَدَاعِ

وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: تَمَتَّعَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي حَجَّةِ الْوَدَاعِ بِالْعُمْرَةِ إِلَى الْحَجِّ فَسَاقَ مَعَهُ الْهَدْيَ مِنْ ذِي الْحُلَيْفَةِ وَبَدَأَ فَأَهَلَّ بِالْعُمْرَةِ ثُمَّ أَهَلَّ بِالْحَجِّ فَتَمَتَّعَ النَّاسُ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْعُمْرَةِ إِلَى الْحَجِّ فَكَانَ مِنَ النَّاسِ مَنْ أَهْدَى وَمِنْهُمْ مَنْ لَمْ يُهْدِ فَلَمَّا قَدِمَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَكَّةَ قَالَ لِلنَّاسِ: «مَنْ كَانَ مِنْكُمْ أَهْدَى فَإِنَّهُ لَا يَحِلُّ مِنْ شَيْءٍ حَرُمَ مِنْهُ حَتَّى يَقْضِيَ حَجَّهُ وَمَنْ لَمْ يَكُنْ مِنْكُمْ أَهْدَى فَلْيَطُفْ بِالْبَيْتِ وَبِالصَّفَا وَالْمَرْوَةِ وَلْيُقَصِّرْ وَلْيَحْلِلْ ثُمَّ لِيُهِلَّ بِالْحَجِّ وليُهد فمنْ لم يجدْ هَديا فيلصم ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ فِي الْحَجِّ وَسَبْعَةً إِذَا رَجَعَ إِلَى أَهْلِهِ» فَطَافَ حِينَ قَدِمَ مَكَّةَ وَاسْتَلَمَ الرُّكْنَ أَوَّلَ شَيْءٍ ثُمَّ خَبَّ ثَلَاثَةَ أَطْوَافٍ وَمَشَى أَرْبَعًا فَرَكَعَ حِينَ قَضَى طَوَافَهُ بِالْبَيْتِ عِنْدَ الْمَقَامِ رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ سَلَّمَ فَانْصَرَفَ فَأَتَى الصَّفَا فَطَافَ بِالصَّفَا وَالْمَرْوَةِ سَبْعَةَ أَطْوَافٍ ثُمَّ لَمْ يَحِلَّ مِنْ شَيْءٍ حَرُمَ مِنْهُ حَتَّى قَضَى حَجَّهُ وَنَحَرَ هَدْيَهُ يَوْمَ النَّحْرِ وَأَفَاضَ فَطَافَ بِالْبَيْتِ ثُمَّ حَلَّ مِنْ كُلِّ شَيْءٍ حَرُمَ مِنْهُ وَفَعَلَ مِثْلَ مَا فَعَلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ سَاقَ الْهَدْي من النَّاس

وعن عبد الله بن عمر رضي الله عنهما قال: تمتع رسول الله صلى الله عليه وسلم في حجة الوداع بالعمرة إلى الحج فساق معه الهدي من ذي الحليفة وبدأ فأهل بالعمرة ثم أهل بالحج فتمتع الناس مع النبي صلى الله عليه وسلم بالعمرة إلى الحج فكان من الناس من أهدى ومنهم من لم يهد فلما قدم النبي صلى الله عليه وسلم مكة قال للناس: «من كان منكم أهدى فإنه لا يحل من شيء حرم منه حتى يقضي حجه ومن لم يكن منكم أهدى فليطف بالبيت وبالصفا والمروة وليقصر وليحلل ثم ليهل بالحج وليهد فمن لم يجد هديا فيلصم ثلاثة أيام في الحج وسبعة إذا رجع إلى أهله» فطاف حين قدم مكة واستلم الركن أول شيء ثم خب ثلاثة أطواف ومشى أربعا فركع حين قضى طوافه بالبيت عند المقام ركعتين ثم سلم فانصرف فأتى الصفا فطاف بالصفا والمروة سبعة أطواف ثم لم يحل من شيء حرم منه حتى قضى حجه ونحر هديه يوم النحر وأفاض فطاف بالبيت ثم حل من كل شيء حرم منه وفعل مثل ما فعل رسول الله صلى الله عليه وسلم من ساق الهدي من الناس

ব্যাখ্যা: (تَمَتَّعَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ فِىْ حَجَّةِ الْوَدَاعِ بِالْعُمْرَةِ إِلَى الْحَجِّ) ‘‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজ্জ ‘উমরা ও হজ্জে একত্রে সম্পাদন করে তামাত্তু' করেছেন।’’ এখানে তামাত্তু' শব্দটি আভিধানিক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ- তিনি হজে কিরানের মধ্যে ‘উমরা-এর উপকারিতা অর্জন করেছেন। কেননা তিনি হজ্জের কাজসমূহ একবার সম্পাদন করেই দু’টি ‘ইবাদাতের তথা হজ্জ/হজ ও ‘উমরা-এর সাওয়াব অর্জন করেছেন। আর নিঃসন্দেহে এ কাজ দ্বারা বড় ধরনের একটি উপকারিতা লাভ করেছেন।

(فَسَاقَ مَعَهُ الْهَدْىَ مِنْ ذِى الْحُلَيْفَةِ) ‘‘তিনি যুলহুলায়ফাহ্ থেকে কুরবানীর পশু সঙ্গে নিয়েছেন।’’ এতে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, মীকাত থেকে কুরবানীর পশু সাথে নিয়ে যাওয়া মুস্তাহাব।

(مَنْ كَانَ مِنْكُمْ أَهْدٰى فَإِنَّه لَا يَحِلُّ مِنْ شَىْءٍ حَرُمَ مِنْهُ حَتّٰى يَقْضِىَ حَجَّه) ‘‘যে ব্যক্তি কুরবানীর পশু সাথে নিয়ে এসেছে সে হজ্জ/হজ সম্পাদন না করা পর্যন্ত তার জন্য কোন কিছুই হালাল হবে না যা তার জন্য হারাম হয়েছে।’’ এতে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, কুরবানীর পশু সাথে নিয়ে আসাই হালাল না হওয়ার কারণ।

(وَلْيُهْدِ) ‘‘সে যেন কুরবানী করে।’’ অর্থাৎ- তামাত্তু' হজ্জ/হজ সম্পাদনকারী কুরবানীর দিন জামারাতে ‘আক্বাবাতে পাথর নিক্ষেপের পর কুরবানী করবে।

(فَمَنْ لَمْ يَجِدْ هَدْيًا فَلْيَصُمْ ثَلَاثَةَ) যে ব্যক্তি কুরবানী করতে সামর্থ্য না রাখে সে যেন হজ্জের সময় তিনদিন সিয়াম পালন করে এবং বাড়ীতে ফিরে এসে আরো সাতটি সওম পালন করে। হজ্জের দিনসমূহ বলতে হজ্জের মাসে ইয়াওমুন্ নাহরের পূর্বে তিনটি সিয়াম পালন করবে ইহরাম অবস্থায়। তবে উত্তম হলো এর সর্বশেষ সিয়াম ‘আরাফার দিনে সম্পাদন করা। আর সাতটি সওম আইয়্যামে তাশরীক্ব বাদে যে কোন সময় পালন করতে পারে। তবে উত্তম হলো নিজ পরিবারে ফিরে এসে তা পালন করা।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك)