২৫৪০

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - ইহরাম ও তালবিয়াহ্

’আল্লামা আলক্বারী বলেনঃ ইহরামের প্রকৃত অর্থ হলো সম্মানিত স্থানে বা কাজে প্রবেশ করা। এর দ্বারা উদ্দেশ্য বিশেষ সম্মানিত কাজ। শারী’আতে হজের জন্য এ ধরনের ইহরাম শর্ত। তবে তা নিয়্যাত ও তালবিয়াহ্ ব্যতীত বাস্তবায়ন হয় না। অতএব ইহরামের উপর তালবিয়ার ’আত্ফটি ’আম-এর উপর খাসে ’আত্ফ।

গুনিয়্যাতুন্ নাসিক-এর লেখক বলেনঃ ইহরামের শাব্দিক অর্থ হলো- হুরসাত তথা সম্মানিত কাজে প্রবেশ করা।

শারী’আতের পরিভাষায় নির্দিষ্ট সম্মানিত কাজে প্রবেশ করা এবং তার ওপর অটল থাকাকে ইহরাম বলে। তবে এ অটল থাকা নিয়্যাত এবং নির্দিষ্ট যিকির ব্যতীত বাস্তবায়িত হয় না। সুস্পষ্ট মুতাওয়াতির বর্ণনা দ্বারা সাব্যস্ত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুলহুলায়ফাহ্ নামক স্থানে পৌঁছে ইহরাম বেঁধেছেন এবং ইহরামের সময় নির্দিষ্ট, ইফরাদ, কিরান বা তামাত্তু’ হজের উল্লেখ করেছেন।

এটাও সাব্যস্ত আছে যে, ইহরাম বাঁধার সময় প্রথম তালবিয়াহ্ হতেই তিনি তা নির্দিষ্ট করেছেন এবং এ সময় তিনি তালবিয়াহ্ পাঠ করেছেন। অতএব যিনি হজ্জ/হজ অথবা ’উমরা এর উদ্দেশে মীকাতে পৌঁছাবেন, তিনি ইহরামের নিয়্যাতে বলবেন (যদি ’উমরার ইচ্ছা করেন) ’’লাব্বায়কা ’উমরাতান’’ অথবা ’’আল্লা-হুম্মা লাব্বায়কা ’উমরাতান’’। হজের নিয়্যাত থাকলে বলবেন ’’লাব্বায়কা হাজ্জান’’ অথবা বলবেন ’’আল্লা-হুম্মা লাব্বায়কা হাজ্জান’’। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাই করেছেন।


২৫৪০-[১] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তাঁর ইহরামের জন্য ইহরাম বাঁধার পূর্বে এবং ইহরাম খোলার জন্যে (দশ তারিখে) বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করার পূর্বে সুগন্ধি লাগাতাম, এমন সুগন্ধি যাতে মিস্‌ক থাকতো। আমি যেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সিঁথিতে এখনো সুগন্ধি দ্রব্যের উজ্জ্বলতা দেখতে পাচ্ছি অথচ তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইহরাম অবস্থায় ছিলেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْإِحْرَامِ وَالتَّلْبِيَةِ

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ: كُنْتُ أُطَيِّبُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِإِحْرَامِهِ قَبْلَ أَنْ يُحْرِمَ وَلِحِلِّهِ قَبْلَ أَنْ يَطُوفَ بِالْبَيْتِ بِطِيبٍ فِيهِ مِسْكٌ كَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَى وَبِيصِ الطِّيبِ فِي مَفَارِقِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ مُحْرِمٌ

عن عاىشة رضي الله عنها قالت كنت اطيب رسول الله صلى الله عليه وسلم لاحرامه قبل ان يحرم ولحله قبل ان يطوف بالبيت بطيب فيه مسك كاني انظر الى وبيص الطيب في مفارق رسول الله صلى الله عليه وسلم وهو محرم

ব্যাখ্যা: كُنْتُ أُطَيِّبُ رَسُوْلَ اللّٰهِ ﷺ لِإِحْرَامِه قَبْلَ أَنْ يُحْرِمَ ‘‘ইহরাম বাঁধার পূর্বে ইহরামের উদ্দেশে আমি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সুগন্ধি লাগিয়ে দিতাম’’। হাদীসের এ অংশ প্রমাণ করে যে, ইহরাম বাঁধার উদ্দেশে ইহরাম বাঁধার পূর্বে সুগন্ধি লাগানো মুস্তাহাব। ইহরাম বাঁধার পরও ঐ সুগন্ধি ক্ষতির কোন কারণ নয়। সুগন্ধির ঘ্রাণ ও তার রং শরীরে লেগে থাকাও কোন ক্ষতির কারণ নয়। তবে ইহরাম পরে নতুন করে সুগন্ধি লাগানো হারাম। এ মতের প্রবক্তা হলেন ইমাম শাফি‘ঈ, আবূ হানীফা, আবূ ইউসুফ, আহমাদ ইবনু হাম্বল। সা‘দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস, ইবনুয্ যুবায়র, ইবনু ‘আব্বাস, ইসহাক ও আবূ সাওর থেকে ইবনুল মুনযির এ অভিমত বর্ণনা করেছেন। ইবনু ‘আব্বাস আবূ সা‘ঈদ খুদরী, ‘আব্দুল্লাহ ইবনু জা‘ফার, ‘আয়িশাহ্, উম্মু হাবীবাহ্ (রাঃ), ‘উরওয়াহ্ ইবনুয্ যুবায়র, কাসিম ইবনু মুহাম্মাদ, শা‘বী, নাসায়ী, খারিজাহ্ ইবনু যায়দ প্রমুখ মনিষীগণ হতেও এ অভিমত বর্ণনা করেছেন।

পক্ষান্তরে একদল ‘উলামা বলেনঃ ইহরামের উদ্দেশে ইহরাম বাঁধার পূর্বে সুগন্ধি ব্যবহার করা বৈধ নয়। যদি কেউ তা লাগিয়ে থাকে অবশ্যই তা ধুয়ে ফেলতে হবে যাতে তার রং ও ঘ্রাণ কিছুই না থাকে। ইমাম মালিক-এর এটিই অভিমত। ইমাম যুহরী ও মুহাম্মাদ ইবনুল হাসানও এ মতের প্রবক্তা।

যারা তা বৈধ মনে করেন ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বর্ণিত অত্র হাদীস তাদের দলীল।

পক্ষান্তরে যারা তা বৈধ নয় বলেন তাদের দলীল ইয়া‘লা ইবনু ‘উমাইয়্যাহ্ বর্ণিত হাদীস তাতে আছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রশ্নকারীকে সুগন্ধি ধুয়ে ফেলার নির্দেশ দিলেন। এতে সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় যে, যিনি ইহরামের পূর্বে সুগন্ধি লাগাবেন তা অব্যাহতভাবে রাখার সুযোগ নেই বরং ইহরাম বাঁধার পূর্বেই তা ধুয়ে পরিষ্কার করতে হবে। জমহূর ইয়া‘লা বর্ণিত হাদীসের জওয়াবে বলেনঃ

(১) ইয়া‘লা বর্ণিত ঘটনা ঘটেছিল অষ্টম হিজরীতে জি‘রানাতে। আর ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বর্ণিত হাদীসের ঘটনা ১০ম হিজরীতে বিদায় হজের ঘটনা। আর সর্বশেষ বিষয়টি দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য।

(২) ইয়া‘লা বর্ণিত হাদীসে নির্দিষ্ট সুগন্ধি ধোয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে আর তা হলো খালূক। যে কোন সুগন্ধি ধোয়ার নির্দেশ দেয়া হয়নি। সম্ভবতঃ খালূক জা‘ফরান মিশ্রিত থাকার কারণে এ নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যা সুগন্ধির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। কেননা পুরুষের জন্য কোন অবস্থাতেই জা‘ফরান ব্যবহার করা বৈধ নয়।

‘আল্লামা শানক্বীত্বী বলেনঃ আমার দৃষ্টিতে জমহূরের অভিমত তথা ইহরাম বাঁধার পূর্বে সুগন্ধি ব্যবহার বৈধ অধিক স্পষ্ট বলে প্রতীয়মান হয়।

(وَلِحِلِّه قَبْلَ أَنْ يَطُوفَ بِالْبَيْتِ) অর্থাৎ- তাওয়াফে ইফাযার পূর্বে রামী জামারাহ্ এবং মাথা মুন্ডানোর পরে তাকে সুগন্ধি লাগিয়েছি। হাদীসের এ অংশ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, রমী জামারার পর ইহরাম অবস্থায় হারামকৃত সবকিছুই হালাল হয়ে যায়। শুধুমাত্র স্ত্রীর সাথে মিলন এবং এর সাথে সম্পৃক্ত কার্যাবলী তাওয়াফ ইফাযাহ্ পর্যন্ত হারাম থাকে।

এ হাদীসটি এও প্রমাণ করে যে, হাজীর জন্য দু’টি হালাল অবস্থা রয়েছে। একটি জামরাতে পাথর নিক্ষেপ ও মাথা মুন্ডানোর পর। আরেকটি তাওয়াফে ইফাযার পর।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك)